প্রিয়ন্তিকা পর্ব -১৩+১৪

#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৩|

আজ শান্ত মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায় অনুষ্ঠান। প্রিয়ন্তি-মাহতিমের ব্যাচ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানাবে। প্রিয়ন্তি শাড়ি পরেছে আজ। নীল রঙের শাড়ির গা, সোনালী রঙের শাড়ির বর্ডার। বেশ সুন্দর একটি শাড়ি। মুখে সাধারণ সাজসজ্জা। কেবল চোখে কাজল, দু ভ্রুয়ের মাঝখানে একটি কালো টিপ, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। এই সাধারণ সাজেও যেন প্রিয়ন্তিকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। প্রিয়ন্তি তৈরি হবার পরপরই মাহতিমের কল এসেছে। প্রিয়ন্তি কল ধরে।
ওপাশ হতে মাহতিম বেশ হন্তদন্ত হয়ে সুধায়,

‘ এই, কখন আসছ? অলরেডি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ‘

প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে বলে,

‘ আরে আসছি রে বাবা। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করো। ‘

‘ ওহ, হ্যাঁ। আসার পথে এক ডালা ফুল নিয়ে এসো। লাগবে এখানে। ফুলের ঘাটতি আছে। ‘

‘ আচ্ছা, আনব। ‘

মাহতিম কিছুক্ষণ থেমে থাকে। প্রিয়ন্তি শুনে, মাহতিমের বেপরোয়া নিঃশ্বাসের চঞ্চলতা। খানিক পর মাহতিমের কণ্ঠ কেপে উঠে। প্রিয়ন্তি শুনে,

‘ দ্রুত আসো। সবাই খুঁজছে তোমাকে। আর আম..আমিও অপেক্ষা করছি। ‘

প্রিয়ন্তির ভ্রু কুঁচকে যায়। কিছু একটা বলবে তার আগেই মাহতিম কল কেটে দেয়। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঘনঘন নিঃশ্বাসের বহর ত্যাগ করে ভাবে, মাহতিম মুখে যত বলুক সে প্রিয়ন্তিকে বন্ধু মনে করবে, মনেমনে ভালোবাসবে, ভালোবাসা প্রকাশ করে প্রিয়ন্তিকে অপ্রস্তুত করবে না। কিন্তু মাহতিম এসবের একটা শর্তও মেনে চলতে পারছে না। প্রিয়ন্তি বুঝে, মাহতিম পারবেও না কখনো। যতই কঠিন হোক না কেন প্রিয়ন্তির মন, প্রিয়ন্তি জানে মাহতিম প্রিয়ন্তিকে পাগলের মত ভালোবাসে। কেন বাসে? এই যে প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসার বদলে সারাজীবন লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে এসেছে। এসব অনুধাবন করে প্রিয়ন্তির বুক জ্বলে যায়, বুকের ভেতরটায় অপরাধবোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে।

ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পাওয়ার বিড়ম্বনা বোধহয় জগতের আর কিছুতে নেই। না সওয়া যায়, না বলা যায়। শুধু পুড়েই যায় সবকিছু। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তবুও ওপাশের মানুষকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করে না। বরং সেই মানুষটা আড়চোখে তোমার দিকে তাকালেই তুমি শেষ হয়ে যাও, বুকের ভেতর ধরফর করে। হায়রে ভালোবাসা!

প্রিয়ন্তি মন থেকে চাইবে, যেন মাহতিমের কপালে এক ভালো মেয়ে জটুক। যে মাহতিমের ভালোবাসার বদলে আসমান সমান ভালোবাসা দিক!

প্রিয়ন্তি আর দেরি করে না। মাহতিমের মেসেজ আসছে বারবার। কখন পৌঁছাবে, দ্রুত পৌঁছায় যেন, আসছে না কেন এখনো, এসব মেসেজ ইতিমধ্যে ২০ টা এসে জমা হয়েছে আনরিড মেসেজ বারে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। শাড়ির কুচি সামলে মা’কে বলে বেরিয়ে পরে।

ঝরা ফুলের ডালা কিনেছে প্রিয়ন্তি। অনেক রকমের ফুলের পাঁপড়ি কেটে ঝোঁপ করে রাখা আছে ডালাতে। প্রিয়ন্তি একহাতে ডালা নিয়ে ওপর হাতে পার্স নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আবার মাহতিমের কল আসে। প্রিয়ন্তি ফোন বের মক কানে ধরে,

‘ আর কত দেরি করবে? আমি কি নিতে আসব? গাড়ি পেয়েছ নাকি হেঁটে আসছ আবার? ‘

প্রিয়ন্তি এবার একটু কঠোর হবার চেষ্টা করে। বলে,

‘ আর একবার ফোন করলে আমি কিন্ত ফোনের মধ্যেই চড় মেরে বসব, মাহতিম। ‘

প্রিয়ন্তি রেগে যাচ্ছে দেখে মাহতিম দমে যায়। মুখ ভার করে বলে,

‘ ঠিকাছে, ঠিকাছে। কুল, রাগছ কেন? এসো আস্তে ধীরে। ‘

প্রিয়ন্তি কল কেটে দেয়। প্রিয়ন্তি লক্ষ্য করে না, কথার ফাঁকে ফাঁকে কখন যে রাস্তার পাশে এসে পরেছে। প্রিয়ন্তি মাথা ঝুঁকে ফোন পার্সে রাখবে তার আগেই একটা গাড়ি এসে প্রিয়ন্তির পায়ে এসে ধাক্কা দেয়। আচমকা ধাক্কায় প্রিয়ন্তি টাল সামলাতে পারে না। ফুলের ডালা সহ মাটিতে হোঁচট খেয়ে পরে। ডালা থেকে ঝরা ফুলের পাঁপড়ি সব বের হয়ে এদিক সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। প্রিয়ন্তি পায়ে হালকা ব্যথা পায়। ভীষন রেগে মাথা তুলে গাড়ির দিকে তাকায়। তাৎক্ষণিক গাড়ি থেকে ফরমাল লুকে এক লম্বাটে, সুদর্শন ছেলে নেমে আসে। নাম তার অনুরাগ। প্রিয়ন্তির পাশে হাঁটুগেড়ে বসে অনুরাগ ভীষন অনুতপ্তের স্বরে বলে,

‘ আম সো সরি। আপনাকে হর্ন দিচ্ছিলাম, শুনেন নি। ব্যথা পেয়েছেন? ওহ, সরি। ফুলগুলো সব নষ্ট হল। ‘

প্রিয়ন্তি ভীষন বিরক্ত হয়। ব্যথা দিয়ে, ব্যথা পেয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করছে। গর্দভ একটা। সাধের ফুল নষ্ট হয়েছে। ইশ! খারাপ লাগছে। প্রিয়ন্তি উঠে দাঁড়াল। শাড়ি থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,

‘ আমি ব্যথা পাইনি, আপনি এখন যেতে পারেন। ‘

প্রিয়ন্তি কথা বলে আর তাকায় নি অনুরাগের দিকে। বরং ফুলগুলো কুড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে। অনুরাগ বেশ অবাক চোখে প্রিয়ন্তিকে আগাগোড়া দেখে। ভারী মিষ্টি মেয়ে। প্রিয়ন্তিকে ফুল কুড়াতে দেখে সে দ্রুত বলে,

‘ আমি তুলে দিচ্ছি ফুল। আপনি দাঁড়ান। ‘

প্রিয়ন্তি এবার বেশ কঠোর চোখে অনুরাগের দিকে চায়। বেশ স্পষ্ট কণ্ঠে সুধায়,

‘ আমি পারব। আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। ‘

অনুরাগকে একপ্রকার অগ্রাহ্য করে প্রিয়ন্তি ফুল সব কুড়িয়ে ডালাতে পুড়ে নেয়। দোকানের মত করে ডালায় ফিতে লাগিয়ে অনুরাগের দিকে চায়। বলে,

‘ হর্ন না শুনলে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করবেন। কেউ নিশ্চয়ই যেচে পরে গাড়ির ধাক্কা খেতে চাইবে না। ‘

অনুরাগ এখনও চোখ বড়বড় করে প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তি এমন চাওনি দেখে ভ্রু চপাট করে কুচকে ফেললে সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয় সে। নম্র ভঙ্গিতে সুধায়,

‘ জি, অবশ্যই। আপনিও ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখানে এসে যাবেন না। কেউ নিশ্চয়ই যেচে পরে কাউকে গাড়ি দিয়ে মেরে ফেলে জেলে যেতে চাইবে না। ‘

প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে সোজা চলে যায় সামনে। অনুরাগ পেছনে স্থির দেহে দাড়িয়ে চেয়ে থাকে প্রিয়ন্তির যাবার পানে। অতঃপর বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘ অদ্ভুত মেয়ে তো! ‘
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৪|

প্রিয়ন্তি অনুষ্ঠানে এসেছে কিছুক্ষণ হল। তার চোখ মাহতিমকে খুঁজে যাচ্ছে। পেয়েও গেল ক্ষনিকেই। ওই তো দূরে মাহতিম ওয়াহিদের সঙ্গে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে এগিয়ে যায় মাহতিমের দিকে। পেছন থেকে মাহতিমের কাধে চাপড় দিয়ে বলে,

‘ হ্যাই। ‘

প্রিয়ন্তির কন্ঠ শুনে মাহতিম চমকে পেছনে তাকায়। প্রিয়ন্তি হাস্যোজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে মাহতিমের দিকে। প্রিয়ন্তিকে দেখে মাহতিমের চোখ আটকে গেছে। সম্পূর্ন শরীর আচমকা কেঁপে উঠছে। আগাগোড়া প্রিয়ন্তিকে দেখল মাহতিম। মাথা ঝিমঝিম করে উঠল তার। সে চোখ বুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত থাকার চেষ্টা করল। প্রিয়ন্তি নিজেকে একপল দেখে আবার মাহতিমের দিকে চেয়ে সুধাল,

‘ আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে? আসলে তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়েছি। তুমি বারবার ফোন করে পাগল করে দিচ্ছিলে। তাই সময় পাইনি ভালো করে তৈরি হবার। ‘

মাহতিম এখনো ভালো করে কথা বলতে পারছে না। চোখের ভেতরটা জ্বলছে। ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে আশপাশ। মাহতিম কথা বলছে না দেখে প্রিয়ন্তি মাহতিমের কাঁধে হাত রেখে ডাকে,

‘ এই মাহতিম? ‘

মাহতিম শুনে প্রিয়ন্তির ডাক। সঙ্গেসঙ্গে চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রিয়ন্তি কেন তার হয় নি? আজ যে প্রিয়ন্তিকে অধিক সুন্দর দেখাচ্ছে, চোখ ধাঁধানো রূপে ঝলসে দিচ্ছে বুকের ভেতর, মাহতিমের ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির নরম গালে দুই সেকেন্ডের জন্যে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে তওবা করে নিতে। তবে এই অবাধ্য ইচ্ছে দমাল মাহতিম। দুই চোখে আস্ত আদরের সমুদ্রে নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে চাইল। মৃদু স্বরে বলল,

‘ প্রিয়ন্তি…প্রিয়ন্তিকা… তোমাকে.. আজ..’

মাহতিমের কণ্ঠ কথা বলার ফাঁকে কাঁপছে। প্রিয়ন্তি বলল,

‘ আমাকে কি? খারাপ লাগছে দেখতে? ‘

মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে বলে উঠল,

‘ না। ‘

‘ তাহলে? ‘

‘ তোমাকে…আজ…পাগল করা সুন্দর লাগছে। ‘

প্রিয়ন্তি শুনে। মাহতিমের আচমকা এমন কথায় সর্বাঙ্গ যেন অস্বস্তিতে জমে উঠে। অবাধ্য চুল কানের পেছনে গুঁজে মাথা নত করে ফেলে প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হয়েছে, মাহতিম বুঝতে পেরেছে। সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তির বন্ধুত্বের শর্তের কথা মনে পরে। মাহতিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘ সরি উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্যে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। এসো। ‘

মাহতিমের চোখে স্পষ্ট বাঁধভাঙা কষ্ট দেখতে পারছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু প্রিয়ন্তির হাতে কিছু করার নেই। সে চাইলেও মাহতিমকে নিজের মন দিতে পারছে না। কোথাও যেন একটা সংকোচ থেকে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি মাহতিমে পাশে হাঁটছে। আচমকা প্রিয়ন্তি বলল,

‘ তোমাকে যে মেয়ে পাবে, সে মেয়ে অনেক ভাগ্যবতী হবে, মাহতিম।’

‘ সে মেয়ে তুমিও হতে পারতে। ‘

মাহতিমের কণ্ঠে তাচ্ছিল্য। কণ্ঠে কষ্টের তীব্রতা অনুভব হতে প্রিয়ন্তির বুকের ভেতরটা কষ্টে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হচ্ছে দেখে মাহতিম হেসে উঠে বলে,

‘ ওয়াহিদকে দেখেছ? আসার পর থেকেই নিপার পেছনে ঘরঘুর করছে। আমাকে প্রেম করবি না করবি না বলে, নিজেই প্রেমে পাগল। ‘

প্রিয়ন্তি অবাক হয়। অদূরে ওয়াহিদ এবং নিপা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি সেদিকে চেয়ে বলে,

‘ নিপাকে ওয়াহিদ ভালোবাসে? আমি জানতাম না। ‘

‘ কেন জানবে? সারাক্ষণ মাথায় পড়াশোনা ঘুরলে এসব প্রেম পিরিতির খবর মাথায় ঢুকবে? ‘

প্রিয়ন্তি রাগ নিয়ে তাকায় মাহতিমের দিকে। মাহতিম এক ভ্রু উঁচু করে প্রিয়ন্তিকে দেখে। মাহতিমের মুখের এমন হাস্যকর অভিব্যক্তি দেখে প্রিয়ন্তি হেসে ফেলে। মাহতিমের মাথাটা আবার যেন ঝিম ধরে বসে। মেয়েটা এমন করে হাসে কেন? হাসলে যেন শুভ্র চোখের ভেতরটাও হেসে উঠে। ঠোঁটের কোণে সুন্দর এক ভাঁজ পরে। চারপাশ চমকাতে থাকে। মাহতিমের দু চোখে প্রিয়ন্তির হাসি প্রজাপতির ন্যায় ঝলমল করতে থাকে। মাহতিমের ইচ্ছে করে ওই বুক ধড়ফড় করা হাসির পানে আজীবন চেয়ে থাকতে। আজীবন!
______________________________
বেশ কয়েকদিন পরের কথা। প্রিয়ন্তি নিপার সঙ্গে একটা লাইব্রেরিতে এসেছে। বই কেনার উদ্দেশ্যে। প্রিয়ন্তি বই কিনে বের হয়েছে। নিপা বলল,

‘ প্রিয়, একটু শপে যাবি আমার সঙ্গে। কিছু ইন্টার্নাল কাপড় কিনতে হবে। ‘

প্রিয়ন্তি সম্মতি দেয়। নিপার সঙ্গে কাছের একটা নারী শপে প্রবেশ করে। নিপা তার প্রয়োজনীয় কাপড় কিনে নেয়। তার কেন শেষ হলে প্রিয়ন্তিকে জিজ্ঞেস করে,

‘ তুই কিছু কিনবি? ‘

প্রিয়ন্তি মানা করে। নিপা বিল মেটায়। তারপর দুইজনেই বেরিয়ে আসে দোকান থেকে।

বাসায় যাবার জন্য রিকশা খুঁজছে দুজনেই। হঠাৎ প্রিয়ন্তি বলে,

‘ তোর সঙ্গে ওয়াহিদের রিলেশন চলছে, নিপা? ‘

নিপা চমকে যায়। কেমন যেন করে উঠে। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে,

‘ না তো। কেন এই কথা জিজ্ঞেস করলি? ‘

প্রিয়ন্তি বেশ রয়েসয়ে জবাব দিল,

‘ মাহতিম বলেছে। ‘

নিপা কিছুক্ষণ থামে। ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুধায়,

‘ আমাদের মধ্যে কখনও কিছু হবার নয়। ওয়াহিদ ওয়েল সেটেল্ড না। মা বাবা কখনোই একটা বেকার ছেলের হাতে আমাকে তুলে দেবে না। আর আমি পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারব না। কিন্তু ওয়াহিদ এই বাস্তবতাটুকু মেনে নিতে পারছে না। খামোকা পাগলামি করছে। বুঝতে পারছি না সবদিক কিভাবে সামলাব। ‘

প্রিয়ন্তি হাসে। বলে,

‘ তুই ওকে ভালোবাসিস? ‘

নিপা মৃদু কন্ঠে বলে,

‘ হ্যাঁ। ‘

‘ তাহলে চিন্তা করছিস কেন? ওয়াহিদকে কিছুদিন সময় দে। অনার্স শেষ করেছে। মাহতিম বলল, ওয়াহিদ নাকি ছোটখাটো জব খুঁজছে। জব পেয়েও যাবে কদিনের মধ্যে। তুই একবার হাত বাড়িয়েই দেখ না। ওয়াহিদ হাত লুফে নিবে, ছেড়ে দেবে না। আমার ওর উপর পুরো বিশ্বাস আছে! ‘

নিপা হয়ত ভাবনায় পরে গেল। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা মনে পড়ায় সে ভাবনার তাল কেটে গেল। আচমকা নিপা বলে উঠল,

‘ তাহলে তোর মাহতিমের সঙ্গে কি সমস্যা? বন্ধু হতে পেরেছিস আর প্রেমিকা হতে পারবি না? সেও তোকে পাগলের মত ভালোবাসে। তোর একবার হাত বাড়ানোর অপেক্ষায় সে চাতক পাখির ন্যায় বসে। মাহতিমকে কেন একটা সুযোগ দিচ্ছিস না? ‘

প্রিয়ন্তি মৃদু কন্ঠে উত্তর দেয়,

‘ কারণ আমি তাকে ভালোবাসি না। তুই ওয়াহিদকে ভালোবাসিস আর ওয়াহিদ তোকে। তাই দুজনের মধ্যে সমস্যার সমাধান সহজে বলা গেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কি আছে জানিস? একপাক্ষিক ভালোবাসা। এমন নয় যে আমি মাহতিমকে ভালোবাসার চেষ্টা করিনি। প্রচন্ড চেষ্টা করেছি। কিন্তু দিনশেষে কেন যেন ওর কথা ভাবতে আমার ভালো লাগতো না, ওর পাগল কথা বার্তায় লজ্জা পেতাম না উল্টো রাগ হত। আমি মনকে বুঝিয়েছে ভালোবাসার জন্যে। কিন্তু মন শুনেনি। তুই বল, এটা কি আমার দোষ? মাহতিম আমাকে ভালোবেসেছে, সেটাও কি আমার দোষ? আমি ওকে বলেছি ভালোবাসতে? ভালোবেসে এখন খামোকা কষ্ট পাচ্ছে। অথচ এই কষ্টের বদলে আমি সহানুভূতি ব্যতীত আর কিছুই দিতে পারছি না। কেউ আমাকে বুঝে না নিপা। সবাই নিজের দিকটায় দেখে। আমার দিকে আমি কি দিয়ে যাচ্ছি সেটা কেউ দেখতে চায় না। আমারও মন আছে। আমিও ভালোবাসতে চাই কাউকে। কিন্তু নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নয়। ‘

নিপার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে পরে। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে মাহতিমের নাম। নিপা অনেকদিন ধরে চেয়েছিল প্রিয়ন্তির মুখ থেকে মাহতিমকে ভালো না বাসার কারণ বের করবে। আজ সেই চেষ্টাই করেছে সে। তাই প্রিয়ন্তি কথা বলার আগে মাহতিমকে কল করেছে সে। এতক্ষণ প্রিয়ন্তি যা যা বলেছে, সবই মাহতিম শুনেছে। কলের উপরের বারে ওয়াহিদের মেসেজ ভাসছে,,
‘ তুমি কেন প্রিয়ন্তির সব কথা মাহতিমকে শুনালে? মাহতিমকে কেমন যেন লাগছে। ফোন কাটো দ্রুত। ‘

ওয়াহিদের মেসেজ দেখে নিপা দ্রুত ফোন কেটে দেয়। প্রিয়ন্তির কাঁধে হাত রেখে সুধায়,

‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু নিজের মনকে বোঝার চেষ্টা কর। ‘

‘ সেটা করেছি বলেই আজ মাহতিমের চোখে আমি কঠোর, খারাপ একটা মেয়ে। ‘

নিপা বলে,

‘ মাহতিমের চোখে তুই কখনোই খারাপ ছিলি না, প্রিয়। খামোকা নিজেকে খারাপ মনে করিস না। ‘

প্রিয়ন্তি উত্তর দেয় না। বরং মলিন চোখে খুঁজে চলে রিকশা। একের পর এক খালি রিকশা তাদের পেরিয়ে চলে যায়। প্রিয়ন্তি দেখে না। কেমন যেন নির্জীব হয়ে আছে তার মন। মনের মধ্যে হাজার খানেক মাকড়সার জালের ন্যায় পেঁচানো দ্বন্ধ! অথচ সেসবের কোনো সমাধান মিলছে না। কেন মিলছে না? মেলা উচিৎ! প্রিয়ন্তিকে এই দমবন্ধ করা কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার জন্যে এই দ্বন্দ্বের সমাধান মেলা উচিৎ!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here