#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৯
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
চারিদিকে বাতাস বইছে, ভোরের আলো ছড়াচ্ছে ধরণীতে। ফট করে চোখ খুলে তাকালো তীব্র। কাল রাত দুজন দুজনকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। দীবার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে তীব্রের কাছে। ঘুমন্ত মানুষকে এতো সুন্দর লাগে সেটা সে দীবানিকে না দেখলে বুঝতে পারতো না। আস্তে আস্তে দীবাকে ডাক দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- জান, উঠো। সকাল হয়ে গেছে। কেউ তোমাকে আমাকে এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে।
হালকা নড়ে ছড়ে আবারো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে দীবা। তীব্র হতাশ শ্বাস ছাড়ে। দীবার মাথা চেয়ারে হেলান দিয়ে রেখে উঠে দাড়ায়। তারপর দীবাকে কোলে নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কপালে গাঢ় ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বেলকনির দিকে চলে যেতে নিবে, তখনি দীবা হাত টেনে ধরে টান দেয়। তাল সামলাতে না পেরে দীবার উপরে গিয়ে পড়ে তীব্র। দীবা তো ঘুম বাদ দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আমতা আমতা করে বললো- আমি তো শুধু আপনাকে আটকাতে চেয়েছিলাম, বুঝিনি এমন হয়ে যাবে, হে হে করে হাসার চেষ্টা করলো দীবা।
তীব্র ঠোঁট কামড়ে হেঁসে, দীবার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। কেঁপে উঠে দীবা তীব্রের শার্ট খামচে ধরে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে- ক কি করছেন আপনি?
মুখ তুলে তীব্র দীবার দিকে থাকায়, আদুরে ভঙ্গিতে বলে- এখন একটু অল্প আদর করলে কি খুব ক্ষতি হবে জান? বেশিনা, অল্পই করবো,
এমন আবদার দীবা ফেলতে পারবে কি করে, কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে তীব্রকে। নিজের থেকে দীবাকে ছাড়িয়ে দীবার দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে তীব্র। দীবানি মাথা নিচু করে আছে।
-তাকাও আমার দিকে।
দীবা তবুও মাথা না তুলে আরো নুইয়ে যায়।
তীব্র মুচকি হেসে দীবার গলায় আবারো মুখ ডুবিয়ে দেয় কেপে উঠে দীবা তীব্রের শার্ট ও চুল খামচে ধরে। গাঢ় চুম্বন দিয়ে মুখ তুলে দীবার দিকে থাকায় তীব্র। দীবা এবার তার দিকেই তাকিয়ে আছে। দেরি না করে দুজনের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয় তীব্র। দীবা প্রথমে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর নিজেও তাল মিলাতে থাকে। হঠাৎ করেই তীব্র ছেড়ে দেয় দীবাকে, কিন্তু দীবা ছাড়েনি, তীব্রকে কাছে টেনে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয় মিলিত করে দেয়। এটাই তো চেয়েছিলো তীব্র।
অনেকক্ষণ পরে দীবা ছেড়ে দেয়, দুজনেই জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। দীবা লজ্জায় তীব্রের বুকে মুখ লুকায়। হালকা হেসে তীব্র বলে- এবার তো ছাড়ো জান, আমাকে তো যেতে হবে।
দীবা ছেড়ে দেয়, তীব্র আবারো দীবার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয়। দীবা দেরি না করে নিজেও তীব্রের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। প্রাপ্তির হাসি হেসে তীব্র বেলকনি দিয়ে চলে যায়।
বালিশে মুখ লুকায় দীবা, তখনই তার ফোন বেজে উঠে। তাহি কল করেছে। কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলো। মূলত তাহি কল করেছিলো- আজ তারা সবাই বিকালের দিকে ঘুরতে বেরোবে, সবাই বলতে- নিষ্প্রভ, তাহি, দীবা, তীব্র, আয়াত আর কেউ থাকবে কিনা সেটা আপাতত জানা নেই। সময় আসলে দেখা যাবে কে কে যায়।
___________
বিকাল ৫টা, নিষ্প্রভের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে দাড়িয়ে আছে দীবা, মূলত তারা আর বাকি জনদের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই এলে একসাথে হালকা নাস্তা করে তারপর ঘুরবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তীব্রের বাইক এসে থামলো। বাইকের পিছনে আয়াত আছে। বাইক থামিয়ে নেমে এগিয়ে এলো তারা। আজ ছেলেরা সবাই কালো পড়েছে। নিষ্প্রভ কালো শার্ট কালো প্যান্ট, আয়াত ও তীব্র একই। দীবা কালো ও সাদার মধ্যে শাড়ি পড়েছে, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। তীব্র তো চোখই ফিরাতে পারছে না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে দীবা, আয়াতের কথায় তীব্রের ধ্যান ভাঙে। সে দীবার দিকে তবুও তাকিয়ে আছে।
– হালকা হেসে দীবা উত্তর দেয়- ধন্যবাদ ভাইয়া।
আয়াত সৌজন্যমূলক হেসে নিষ্প্রভের পাশে গিয়ে দাড়ায়।
তীব্র একটু দীবার দিকে গা গেসে দাড়ায়, দীবার হাত ধরে সবার সামনেই লুকিয়ে চুমু দেয় হাতের পাতায়। কেউ না দেখলে ও আয়াত ঠিকই দেখে নেয়। সে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কারণ সে আগেই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো। হালকা হেসে নিষ্প্রভের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
– তোমাকে শাড়ি পড়তে কে বলেছে?
তীব্রের কথায় মন খারাপ হয় দীবার, মুখ গোমড়া করে বলে-, কেনো সুন্দর লাগছে না?
– সুন্দর লাগছে না মানে, আমার তো ইচ্ছে করছে তোমাকে একনই তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতে। আমাকে পাগল করার জন্য এমন করেছো তাই না?
– হ্যা, আপনাকে পাগল করার জন্যই শাড়ি পড়েছি, যাতে আর কোনো মেয়ের দিকে কখনো না থাকান। আপনার চোখ সবসময় আমার দিকেই থাকবে৷ অন্য কারো দিকে তাকাবেন তো খুন করে ফেলবো।
ফিসফিস করে তীব্র ও দীবা কথা বলে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহির এন্ট্রি হয়। বাইক নিয়ে এসে নিষ্প্রভদের সামনে থামায়। চারদিকের মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে। তাহি’র বাইক থেকে নামার স্টাইল জোশ। ঠোঁট কামড়ে হাসে নিষ্প্রভ, ততক্ষণে তাহি ওদের সামনে এসে দাড়িয়েছে। এসেই দীবার দিকে এগিয়ে যায়। তাহিকে দেখেই দীবা মুখ গোমড়া করে নেয়।
তাহিও কালো পড়েছে, এ আবার নতুন কি সবসময়ই তো কালো পড়ে। শ্যামলা রঙের হলেও কালো খুব মানায় তাহিকে। কালো শার্ট কালো প্যান্ট উপরে জ্যাকেট। ব্লাক সু, সানগ্লাস গলায় ঝুলানো। ঠিক যেমন – নিষ্প্রভ, তীব্র, ও আয়াত পড়েছে।
দীবার মুখ গোমড়া করতে দেখে হালকা হাসে তাহি। দীবা বলেছিলো শাড়ি পড়তে, কিন্তু তাহি তো তাহিই,
দীবার গোমড়া মুখে হাসি ফুটানোে জন্য তাহি প্রথমেই জড়িয়ে ধরে দীবাকে।কিন্তু তবুও দীবা মুখ গোমড়া করেই আছে। দীবার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে তাহি বলে- আমি কিন্তু জানি তুই আর তীব্র ভাই যে তলে তলে হেলিকপ্টার চালাস।
ফিসফিস করে বললে ও তীব্র পাশে থাকায় শুনে ফেলে। তীব্র দীবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। দীবা ও ঠোঁট কামড়ে হেঁসে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়।
সরে এসে তাহি বলে- যাক মহারানীর মুখে হাসি ফুটেছে।
নিষ্প্রভের পাশে গিয়ে দাড়ায় তাহি, না তাকিয়েই বলে- কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব, আপনি এতো চুপচাপ। মৌনতার জন্য ডিগ্রি করবেন নাকি? অবশ্য আপনি চাইলে আমি নোবেল দিতে পারি। নিবেন?
তাহি এমনকরে বলেছে যে নিষ্প্রভ ছাড়া সবাই হেসে দিয়েছে। শুধু নিষ্প্রভই হাসে নি। কটমট করে তাহির দিকে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভের রাগ কে পাত্তা না দিয়ে তাহি বললো- এভাবে কি দেখছেন, আমাকে কি আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে?
নিষ্প্রভ কিছু না বলে চুপচাপ গোমড়া মুখ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভের এমন করার কারণ হলো, দীবার মতো সে ও তাহিকে শাড়ি পড়তে বলেছে। কিন্তু তাহি শাড়ি পড়েনি।
তাহি নিষ্প্রভের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। কিছু বলবে তখনই ‘উর্মিলা’ এসে তাদের সামনে দাড়ায়। উর্মিলা এসে কিছুক্ষণ নিষ্প্রভের সাথে কথা বলে বুঝতে পারে তারা ঘুরবে, আর উর্মিলাও ঘুরতে বেরিয়েছিলো। তাই নিষ্প্রভ তাদের সাথে ঘুরার জন্য উর্মিলাকে অফার দেয়। উর্মিলা ও রাজি হয়ে যায়।
এদিকে তাহির রাগ সপ্তম আসমানে। চোখ দিয়েই উর্মিলা ও নিষ্প্রভ কে ভস্ম করে দিবে এমন।
– তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে উর্মিলা,
উর্মিলা নিষ্প্রভের কথায় হালকা হেসে ধন্যবাদ দেয়।
এদিকে তাহির রাগ দ্বিগুণ বাড়ানোর জন্য নিষ্প্রভের উর্মিলাকে উদ্দেশ্য করে প্রশংসা করা কথাটায় যথেষ্ট ছিলো।
রাগে তাহি নিষ্প্রভের হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিষ্প্রভকে ধাক্কা মারে। তাতে নিষ্প্রভ উর্মিলাকে নিয়ে একটুর জন্য পড়ে যেতো, কিন্তু আয়াত ধরে নেয়।
রাগে নিষ্প্রভ তাহিকে সবার সামনে থাপ্পড় মারে। এতে সবাই অবাক হয়ে যায়, সাথে নিষ্প্রভ নিজেও। সে এটা কি করলো!
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১০
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
নিষ্প্রভের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো তাহি। বাইকের কাছে গিয়ে হেলমেট হাতে নিয়ে পড়ে নিলো। এর কারণটা কেউ বুঝেনি, তবে নিষ্প্রভ বুঝেছে। তাহি কাউকে চোখের পানি দেখাতে চায়না। এই মেয়েটা এতো স্ট্রং। নিজের অনুভুতি কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে৷ আর সে কি না নিজেই তার পাখিটাকে কষ্ট দিলো। নিজেকে নিজের খুন করতে ইচ্ছে করছে নিষ্প্রভের।
-চলো সবাই রেস্টুরেন্টের ভিতরে, হালকা নাস্তা করে রওনা দিতে হবে তো। আয়াতের কথায় সবাই রেস্টুরেন্টের ভিতরে ডুকে যায়।
তাহি গিয়ে এক কোণায় বসে পড়ে, ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। নিষ্প্রভ অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাহির দিকে। সবাই হালকা নাস্তা করে বেড়িয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।
কে কার বাইক দিয়ে যাবে সেটা সবাই ভাবছে। সুযোগ বুঝে নিষ্প্রভ বলে- শুন আয়াত তুই উর্মিলা কে নিয়ে আমার বাইক এ, আর তীব্র তুই দীবা কে নিয়ে তোর বাইক দিয়ে আয়।
আর তুই কিসে আসবি?
তীব্রের কথায় নিষ্প্রভ হালকা হেসে বলে- তাহির বাইক দিয়ে তাহির সাথে যাবো।
আয়াত আর উর্মিলা, সবার আগে চলে যায়। তারপর তীব্রের বাইক উঠে বসে দীবা, দুহাত দিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে। হালকা হেসে তীব্র বাইক স্টার্ট দিয়ে আয়াতকে ফলো করে চলে যায়। অবশেষে নিষ্প্রভ গিয়ে তাহির বাইকে তাহির পিছনে বসে পড়ে। পিছন থেকে তাহির কোমড় জড়িয়ে ধরে।
– ছাড়ুন,
– না, ছাড়বো না।
– দেখুন,
– দেখাও,
কটমট করে তাহি পিছন ফিরে নিষ্প্রভের দিকে তাকায়।
সেই সুযোগে নিষ্প্রভ তাহির দুই গাল ধরে বলে- ক্ষমা করে দাও জান, আ’ম স্যরি। আমি তোমাকে তখন চড় মারতে চাই নি। তুমি ধাক্কা দেওয়ায় আমি উর্মিলার উপর পড়ে যেতাম। তাই আমার রাগ উঠেছিলো। প্লিজ পাখিটা রাগ করে থেকো না, এই দেখো কান ধরছি। আর কখনো কোনো মেয়ের প্রশংসা করবো না।
-কোনো কথা না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তাহি।
নিষ্প্রভ আবার বলে- প্লিজ সোনা, কথা বলো। এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না।
– একটা কথা কি জানেন ডাক্তার সাহেব?কিছু কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে গেলে সবাই ভাবে সেই জিনিসটা তো আমারই থাকবে, যাই হয়ে যাক না কেনো, সেটা আমার আমারই থাকবে। তবে কেউ এটা চিন্তা করে না, সব কিছুরই মেয়াদ আছে। যেমন একটা মানুষের ও সহ্যশক্তি, কষ্ট আছে।
নিষ্প্রভ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে, সে কতোটা কষ্ট দিয়েছে তাহি কে। কোনে কিছু না ভেবেই তাহিকে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে নিষ্প্রভ।
– প্লিজ পাখি, তুমি কষ্ট পেও না।আমি খুবই স্যরি। আর কখনো এমন হবে না।
– আমি চড় মারাতে কষ্ট পাইনি ডাক্তার সাহেব, আপনি আমার সামনে অন্য কারো প্রশংসা করেছেন। সেটা আমার কলিজায় গিয়ে লেগেছে।
– আর হবে না সোনা। প্লিজ স্যরি তো। আর হবে না। তোমাকে আমি কখনো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু পড়তে বলবো না। তোমার যেটাতে কমফোর্ট ফিল হয়, সেটা পড়ো।
তাহি আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয়। নিষ্প্রভ বুঝতে পারে, তার পাখির অভিমান কমেনি এখনো।
‘
‘
‘
জঙ্গলের মতো জায়গাটা, একসাইটে পাহাড়। সেই পাহারেই উঠছে সবাই। পাহারের উপরে উঠে সূয্যিমামার ডুবে যাওয়া দেখছে সবাই। কি সুন্দর সেই দৃশ্য। ইতিমধ্যেই দীবা অনেক পিক তুলে ফেলেছে, সাথে তীব্রর সাথেও কাঁপল পিক তো আছেই। দীবার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তীব্র। এই মেয়েটাকে একসময় কতো কষ্ট দিয়েছে সে, কতো অবহেলা করেছে। আচমকা দীবাকে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তীব্র। হকচকিয়ে তাকায় দীবা। ফিসফিস করে বলে- আরে কি করছেন, সবাই আছে তো, দেখে ফেললে কি ভাববে?
– যাই ভাবুক, আমার এখন প্রেম পাচ্ছে, আমি এখন তোমার সাথে প্রেম করবো।
– কিহ! তাই বলে এখন? আরে এখানে আমার নিজের বড় ভাই আছে। মান সম্মান কিছু থাকবে না।
জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় দীবা। মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে রয় তীব্র। সে বুঝতে পারছে, তাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে। এভাবে আর কতোদিন লুকিয়ে প্রেম করবে। দীবা ঠিকই বলেছে নিষ্প্রভ দেখলে মান সম্মান থাকবে না। আর তীব্রই বা কি জবাব দিবে। বন্ধুর বোনের সাথে যেহেতু প্রেম করছে, খুব তারাতারি বিয়ে করতেই হবে। নাহলে পাছে নিষ্প্রভ জেনে গেলে ভুল বুঝবে। এতে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।
আচমকা দীবা হাত ধরে টানায় ভাবনা থেকে বের হয় তীব্র। হালকা হেসে আবারো দীবাকে পিক তুলে দিতে থাকে। তার হবু বউ এখন তাকে ক্যামেরা ম্যান বানিয়েছে।
এক দৃষ্টিতে সন্ধ্যার আকাশ দেখতে ব্যস্ত ছিলো উর্মিলা, তখনই আয়াত তার পাশে এসে বলে- মিস উর্মিলা, আপনি চাইলে আমি আপনার ক্যামেরা ম্যান হতে পারি।
-ধন্যবাদ, দিয়ে নিজের ফোন আয়াতের দিকে এগিয়ে দেয় উর্মিলা, তারাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছবি তুলতে।
দুহাত পকেটে গুজে দাড়িয়ে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে ছেয়ে আছে তাহি।
নিস্প্রভ তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে। মূলত অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাহি তো তাহিই। আচমকা নিষ্প্রভ তাহির হাত দুটো প্যাকেট থেকে টান দিয়ে বের করে মেলে ধরে। সাথে নিজের হাত ও। পিছন থেকে তাহির সাথে একেবারে মিশে হাত মেলে দাড়িয়ে থাকে। ছবি তুলতে থাকা আয়াতকে ইশারা দিয়ে বুঝায় তাদের এই মুহুর্তের ছবি তুলতে। আয়াত ও বন্ধুর ইশারা বুঝতে পেরে ছবি তুলে নেয়।
-, আর কতো অভিমান করে থাকবে, আমার দস্যি রানী।
– আমি অভিমান করে নেই, ছাড়ুন আমাকে সবাই দেখছে।
– দেখুক, তুমি যদি এবার না হাসো তো আমি সবার সামনে তোমাকে কিস করবো। তাও আমাদের ফাস্ট কিস হবে এটা।
চোখ বড়ো বড়ো করে থাকায় তাহি। কটমট করে বলে- চুপ করুন অসভ্য ডাক্তার। মুখে লাগাম টানুন।
– না আমি চুপ করবো না, তুমি যদি না হাসো, তাহলে আমি সত্যিই কিস করবো।
‘
কি হলো হাসবে না তো? ঠিক আছে আমি তোমাকে এখন সবার সামনে কিস করবো। তাও আমাদের ফাস্ট কিস। যদিও আমি চাইনি বিয়ের আগে এসব কিস টিস করতে। বলেই নিষ্প্রভ নিজের মুখ এগিয়ে নিতে থাকে তাহির দিকে,
তৎক্ষনাৎ তাহি নিষ্প্রভকে জড়িয়ে ধরে। প্রাপ্তির হাসি হাসে নিষ্প্রভ।
– কি তোমাকে বলেছি হাসতে, আর তুমি জড়িয়ে ধরেছো। নট ব্যাড, তবে হাসতে ও হবে। দেখি হাসো তো একটু।
ঠোঁট কামড়ে হাসে তাহি, সেই হাসি দেখে নিষ্প্রভ বুকে হাত দিয়ে বলে- হায় মে মার জাওয়া!
এবার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে তাহি। নিষ্প্রভ ও হেসে তাহির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। যদিও তাদের হাসির শব্দ নেই, যাকে বলে নিঃশব্দের হাসি।
– ভালোবাসি তাহি পাখি।
– হু,
– কি হু?
-হু
– কি হু, তুমি ও বলো,
– কি বলবো?
– ভালোবাসি বলো,
– আপনি আমার সব অপূর্ণতার মাঝে পূর্ণতা ডাক্তার সাহেব, আপনি আমার সব অপ্রাপ্তির মধ্যে সেরা প্রাপ্তি।
– তবুও বলবে না ভালোবাসি?
– ভালোবাসি নিষ্প্রভ! ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব, খুব ভালোবাসি।
মুগ্ধ হয় নিষ্প্রভ, তাহির মুখে প্রথম বার নিজের নাম ও ভালোবাসি শুনে। ইশশ নিষ্প্রভের তো ইচ্ছে করছে সব বাধা নিয়ম ভেঙে তাহিকে নিয়ে অজানাতে পাড়ি জমাতে। কোনো দূর অজানায় হারিয়ে যেতে।
চলবে,
চলবে,,
[