প্রিয়ংবদা পর্ব ১২

#প্রিয়ংবদা
#দ্বাদশ_পর্ব
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়

ঐ বৃষ্টিদিনের পরে, আরো সাতটা দিন পেরোলো যেন নিমেষেই, একদম চোখে পলকে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর মতো, খুব দ্রুত!

হৃদিতা এই সাতদিনে, একটিবারের জন্যও বাড়ির বাইরে পা রাখেনি। পাছে কোথাও আদৃতের সাথে দেখা হয়ে যায়! পাছে আদৃতের সেই ধারালো দৃষ্টি শরীরে আগুন জ্বালায়, সেই ভয়ে তটস্থ থেকেই পেরিয়ে গেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা,দিনের পর দিন!

টাপুর দেবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, কলেজে না যাবার কারণ। হৃদিতা বেশি কিছু বলেনি। শুধু ছোট করে উত্তর দিয়েছে” ভালো লাগছে না।”
টাপুর দেবী ভেবে নিয়েছেন, হয়তো আবার কেউ কিছু বলেছে, এ তো নতুন না। আগে প্রায়ই হতো। মেয়েটা কালো বলে প্রায় রোজই কোন না কোন ভাবে কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতো। তারপর আর সপ্তাহ পেরোলেও স্কুলে যেত না। তবে বড় হবার পর থেকে ওসবে আর কান দিত না। যে যাই বলুক, নিজের মতো খুশি থাকতো ঠিকই।
সেই মেয়েই যখন আজ এত বছর পরে আবার এমন গুম মেরে বসে আছে, তখন নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু হয়েছে বলেই মনে হলো তার। নিজ থেকে আর জিজ্ঞেসও করলেন না। মেয়েটা সেসব মনে করে আবার কষ্ট পাবে তা তিনি চান না!

হৃদিতা এতেই স্বস্তি পেল। মাকে তো সব সত্যি বলা যাবে না। আবার প্রশ্ন করলে তার উত্তরে মিথ্যে বলতেও পারবে না। কেমন একটা বাঁধে!

ঐদিন বৃষ্টিতে ভিজে যখন আদৃতের থেকে নিজেকে জোড় করে ছাড়িয়ে প্রায় পালিয়ে বাড়ি ফিরেছিল, সেদিন মা কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়েছিল তার দিকে। কি না কি ভেবেছিল কে জানে! হৃদিতার ভাবলেই খারাপ লাগে।
দিদার কথা বলে সেদিন মাকে এড়িয়ে গেলেও পরের দিনগুলোতে আর বাইরে বেরোনোর সাহস হয়নি।

ঘরবন্দী জীবনটাকে আবার আগের মতো বাবা-মায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে সেজন্যই।
.
গেল শনিবার যে কাদম্বিনী দেবীর সাথে কথা হলো, তারপরে আর ওনার সাথেও কথা হয়ে ওঠেনি। হৃদিতার একবার জানতে ইচ্ছে হলো, কেমন আছেন দিদা, ঠিক আছেন তো! দিদার কি তার কথা একটুও মনে পড়ে না?একটুও না? তবে জানা হলো না। আশ্রমের নাম্বার হৃদিতার কাছে নেই। রোজ রোজ দেখা হয় বলেই নেয়া হয়নি। কিন্তু কে জানতো, কারো দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকতেই নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে হবে!
পরক্ষণেই প্রবল অভিমাণে ভারী হলো হৃদিতার মন। দিদার নাম্বার তার কাছে নেই কিন্তু দিদার কাছে তো তার নাম্বার আছে। সে নিজে দিয়ে এসছে। তবে? দিদার কি একটাবারও তার কথা মনে পড়েনি?
হৃদিতার হঠাৎ মনে হলো,দিদা, তাকে ভালোইবাসেনি, একটুও না। চোখদুটো কেমন জ্বলে উঠলো। ঝাপসা হয়ে এলো চোখের মণি! হৃদিতা মায়ের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। মা রাঁধছিল তাই দেখছিল মন দিয়ে।
পাছে মা তার চোখের জল দেখে ফেলে, তাই দ্রুত উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে রইলো। কায়দা করে মুছে নিল অশ্রুকণা।
তখনই হঠাৎ বাজখাই শব্দে বেজে উঠল হৃদিতার মোবাইলটা। টাপুর দেবী কড়াইতে মাছ উল্টে দিতে দিতে মেয়েকে বললেন,
“ফোনটা ধর হৃদ!বেজে যাচ্ছে! ”

হৃদিতা নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিল,
“আমার এখন ইচ্ছে করছে না মা। তুমি দেখ না কে?কল সেন্টার থেকে হয়তো। কেটে দাও। আমাকে কে ফোন দেবে? ”

টাপুর দেবী কথা বাড়ালেন না। ডানহাতে খুন্তি নাড়তে নাড়তেই বাঁহাতে তুলে নিলেন ফোনটা। আননোন নাম্বার!রিসিভ করে কানে নিতেই উল্টো দিক থেকে কোন নারীকন্ঠ ভীষণ উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“হ্যালো!হৃদিতা বলছেন?আপনি কই,আপনাকে খুব দরকার!”

টাপুর দেবী কিছুক্ষণ নিস্পৃহ হয়ে রইলেন। তার মেয়েকে কারো কিসের এত দরকার? আর ভদ্রমহিলার কন্ঠে এত উদ্বেগ কেন?
তারপরে হঠাৎ মনে হলো, এখন তো এসব ভাবার সময় না। কোন বিপদ হয়েছে হয়তো। মেয়েটাকে চাইছে যখন, নিশ্চয়ই দরকার!
আর ভাবলেন না।হৃদিতাকে আস্তে করে ডেকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোকে চাইছে হৃদ। কোন মহিলা। খুব চিন্তিত মনে হলো। কথা বল!”

হৃদিতা বেশ অবাক হয়েই ফোনটা নিল মায়ের হাত থেকে। কানে ধরে বললো,
“হ্যাঁ!আমি হৃদিতা রায়। কি বলবেন বলুন?”

অপর দিকের মহিলাটি পূর্বাপেক্ষা উদ্বেগ নিয়ে বললেন,
“হৃদিতা,আমি ” জীবণকথা” বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি!কাদম্বিনী দেবী আপনার দিদা হয় তাই না? একটু আসবেন প্লিজ। উনি কেমন যেন করছেন, ওনার বাড়ির কাউকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না একদম। বাড়ির নাম্বারটা বেজেই যাচ্ছে সেই কখন থেকে, কিন্তু কেউ তুলছে না। আর ওনার নাতির নাম্বারটা বন্ধ! আপনি জলদি আসুন না! আমরা একা সামলাতে পারছি না!”

হৃদিতার পৃথিবীটা থমকালো হঠাৎই। যে মানুষটার নামে এতক্ষণ অভিযোগের মালা গেঁথে যাচ্ছিল, সেই মানুষটা অসুস্থ! হৃদিতার কন্ঠ কেঁপে গেল, কাঁপা স্বরেই প্রত্ত্যুত্তর করলো,
“দঁদদদদদাড়ান একটু!আমি আআআআসছি!”

হঠাৎ মেয়ের এমন অস্থিরতা দেখে টাপুর দেবী জিজ্ঞাসু নয়নে তাকালেন। প্রশ্ন ছোড়ার আগেই জবাব মিলল,
“দিদার যেন কি হয়েছে মা। কেমন একটা নাকি করছে। বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমি যাচ্ছি মা। ”

টাপুর দেবী বাঁধা দেন না। মাথা দুলিয়ে সায় জানাতেই হৃদিতা ছুটে বেরিয়ে যায়। উনি পেছন থেকেই চেঁচিয়ে ওঠেন,
“কোন দরকার হলে বাবাকে জানাস হৃদ!”
.
পিচঢালা রাস্তার ঠিক বিপরীতেই একটা ঝা চকচকে দোতলা বাড়ি। বিশাল লোহার গেটের ফাঁক গেলেই তা দৃষ্টিগোচর হয় সকলের।
গেটের সামনে একটা সাদা দেয়ালের ওপর কালো টাইলস বসানো। তাতে খোঁদাই করা “মেঘকুঞ্জ”!
গেটের ভেতরে ঢুকলেই চোখ পড়ে দুদিকে সারে সারে ফুঁটে ওঠা রঙ-বেরঙের ফুলের ওপরে। গোলাপ, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপ, শিউলি, টগর, গন্ধরাজ, মাধবীলতা, রঙ্গনের মতো কতশত রঙের বাহারে সজ্জিত। কি নেই তাতে!

তবে এবাড়িরই বাইরেটা যতটা সুন্দর, ভেতরটা ঠিক ততটাই মলিন,ফ্যাঁকাসে।
গাদা গাদা কর্মচারীর ভীরেও এতবড় বাড়িটা ভীষণই শুণ্য,নিস্তব্ধ!

কারো সাথে কারো কথা নেই,পরিবারের কোন বন্ধন নেই, অযথাই নিছক আয়োজনের বহরে সাজানো সংসারের ছদ্মবেশে থাকা একটা ইট-পাথরের দালান!

এই বাড়ির ভেতরেই ড্রয়িংয়ের ল্যান্ডলাইনটা বেজে যাচ্ছে টানা, বিরতিহীন! কম করে হলেও ১০-১৫ বার তো হবেই।
তবে ধরার নাম নিচ্ছে না কেউই! সবাই নিজের নিজের মতো করে ব্যস্ত!
হঠাৎ গটগট শব্দ তুলে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন একজন মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা। বয়স এই কত হবে,পঞ্চাশের এপাশ-ওপাশ! তবে বয়সের ছাপ আচড় কাটতে পারেনি ব্যক্তিত্বে। কেমন দৃঢ়তা চোখের দৃষ্টিতে, মুখের হাসিতে আর চলনে!
ফোন বাজার আওয়াজ শুনেই নিচে নেমে আসা তার। বাড়ির কর্মচারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে, কেউ যেন কল রিসিভ না করে, সেজন্যই এত দেরি। ভদ্রমহিলা ধীরপায়ে ল্যান্ড লাইনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই বন্ধ হয়ে যায় শব্দ।
একটু থামেন। আবার বাজবে নিশ্চয়ই, এতবার যখন কল করলো তখন আরেকবারও করবে না কি?তিনি অপেক্ষা করেন।
তবে আর কল আসে না, বেজে ওঠেনা টেলিফোন। ভদ্রমহিলা হতাশ চোখে তাকায়। মনে মনে শঙ্কা হয়, না জানে কে কোন বিপদে পড়ে এতবার কল করছিল!কারো কিছু হলো না তো!
.
বৃদ্ধাশ্রমে কাদম্বিনী দেবীর ঠিক পাশটাতেই বসে আছে হৃদিতা। কাদম্বিনী দেবী ছটফট করছেন। হৃদিতা পাশে দাঁড়ানো মহিলাটির দিকে তাকালো। ইনিই হয়তো ফোন করেছিলেন।জিজ্ঞাসা করলো,
“কি হয়েছিল দিদার। খুলে বলুন। আমি আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান কে কল করেছি, উনি আসছেন। তার আগে কি কি সমস্যা হচ্ছে তা জানা দরকার। দিদাকে তো এখন জিজ্ঞেস করা যাবে না। আরো স্ট্রেস বাড়বে। আপনিই বলুন।”

মহিলাটি একপলক কাদম্বিনী দেবীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
“সকাল থেকেই খুব মাথা ব্যাথা করছে বলছিলেন, আমি বললাম একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসলে ভালো লাগবে। উনি শুনলেন। আমিও গেলাম সাথে। কয়েক মিনিট বাদেই চোখ মুখ গুলো কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল,মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেলেন!ধরে ফেললাম ভাগ্যিস। আরো ক’জন স্টাফ ডেকে রুমে এনে শুঁইয়ে দিতেই দেখি, হাত-পা গুলো কেমন একটা কাঁপছে, আঙুল -গুলো টেনে টেনে ধরছে, বাঁকা হয়ে যাচ্ছে কেমন যেন। একটু বাদেই পরপর তিনবার বমি করলেন! ভয় হল আমার। তখনই ওনার বাড়িতে ফোন করি, তবে কেউ ধরে না। তারপরে ওনার নাতিকে কল করতেই নাম্বার বন্ধ দেখায়। আমি তো অকুল পাথারে পড়ি। অগত্যা ওনার ডায়েরীর থেকে আপনার নাম্বারটা পাই, লিখে দিয়ে গেছিলেন হয়তো!”
হৃদিতা মাথা নাড়ায়। চোখে মুখে শঙ্কা! কি হলো হঠাৎ। এই ক’দিন আগেই না ভালো মানুষটাকে রেখে গেল!
ভাবনার মাঝেই ডক্টর আসে! হৃদিতা ব্যস্ত হয় উঠে দাঁড়ায়। কাঁপা স্বরে বলে ওঠে,
“ডক্টর আঙ্কেল, দেখ না দিদার কি হয়েছে, সকাল থেকেই নাকি মাথা ব্যথা করছিল, মাথা ঘুরে পড়েও গেছে, আবার বমিও করেছে, হালকা খিঁচুনিও হচ্ছে। দেখে বলো না কি হয়েছে?”

ডক্টর বোস, ভালো করে পরীক্ষা করলেন। স্টেথোস্কোপটা কান থেকে নামিয়ে এবার হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“মে বি ওনার ব্রেইন স্ট্রোক করেছে হৃদ! ইমিডিয়েটলি হসপিটালাইজড করতে হবে। নয়তো পেশেন্টের লাইফ রিস্ক হতে পারে।”
হৃদিতা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়। দিশেহারা হয়ে পড়ে চিন্তারা। ভালো -মন্দ কিছু হয়ে গেলে!আর ভাবতে পারে না। সাহস হয়না। ভয়মাখা কন্ঠে ডক্টর আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করে,
” দিদা ভালো হয়ে যাবে তো আঙ্কেল? কিছু হবে না তো?”

ডক্টর বোস নরম স্বরে বলে,
“ভয় পেওনা মা। আই হোপ কিছু হবে না। তুমি এক কাজ করো, ওনার তো ঘন ঘন সেন্স আসা যাওয়া করছে, পরের বার জ্ঞান ফিরলে একটু ধীরে, শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করো, ওনার গার্ডিয়ান,আই মিন টু সে, হাজবেন্ডের নাম কি। হসপিটালে অ্যাডমিট করাতে লাগবে।আমি অ্যাম্বুলেন্সে কল করে দিয়েছি।এলেই ওনাকে নিয়ে সিটি হসপিটালে চলে এসো। আমি ওদিকে সব রকমের ব্যবস্থা করছি!”

হৃদিতা জলেভেজা চোখে মাথা নাড়ে। চলে যান ডক্টর বোস।হৃদিতার কেমন যেন একটা অজানা ভয়ে সারা শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে। দিদার কিছু হবে নাতো! পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়। মনকে বোঝায়, “না কিছুই হবে না!”

কাদম্বিনী দেবী তখন জ্ঞান -অজ্ঞানের মাঝে আবদ্ধ, এই চোখ মেলছেন, তো এই ডুব লাগাচ্ছেন অন্ধকারে। হৃদিতা হালকা করে ডাকলো এবার,
“দিদা!”
জ্ঞান ছিল হয়তো, চোখ মেলে তাকালেন। হৃদিতার মাথার ওপরে নিজের হাতটা রাখার চেষ্টা করলেন, তবে পারলেন না। হাত কেঁপে উঠে পড়ে গেল ধপ করে। হৃদিতার গাল বেয়ে গড়ালো অশ্রু।তবুও যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
“দাদুর নাম কি দিদা!বল না প্লিজ!”

কাদম্বিনী দেবীর ঠোঁটদুটো নড়ে উঠলো, তবে স্পষ্ট করে বোঝা গেলনা কিছুই।হৃদিতা আবার জিজ্ঞেস করলো, এবারে কান পাতলো মুখের কাছে। তখনই হালকা কন্ঠে কানে এসে ধাক্কা খেল সেই নাম,যা চমকে দিল তাকে।
“আশুতোষ সেন!”

হৃদিতা কিছুক্ষণ বিহ্বল আঁখি জোড়া মেলে চাইলো এদিকে,সেদিকে!মেলাবার চেষ্টা করলো কিছু একটা!মিলেও গেল।সেই যে প্রথম দিন আদৃত কাদম্বিনী দেবীর সাথে দেখা করার জন্য তাকে সন্দেহ করে তুলে নিয়ে গেছিল! তার কারণ তবে এই! নিজের ঠাম্মি কিনা! তাকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাননি।
হৃদিতা আর ভাবে না। আদৃতের প্রতি জমা ছোট ছোট মিষ্টি অনুভূতি গুলো সব মুহুর্তেই রুপ নেয় তীব্র ঘৃণায়! এতবড় সত্যিটা লুকালো, কতগুলো ঠুনকো মিথ্যের আড়ালে! ছি! এমনটা না করলেও পারতো!
তবে এসব নিয়ে বেশি ভেবে কাজ নেই। এখন দিদার শরীর,সুস্থ হয়ে ওঠাটাই মুখ্য।
হৃদিতা বাবার নাম্বার ডায়াল করে, চারবার রিং হবার পরেই রিসিভ করেন ঋতমবাবু,
“হ্যাঁ, হৃদ বল! দিদা কেমন আছে এখন?তোর মা জানালো উনি নাকি অসুস্থ! কি হয়েছে?কোন কিছু লাগবে কি তোর?ডক্টর আঙ্কেল গেছিলো না?”

হৃদিতা এতসব প্রশ্নের সবটাই এড়িয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনরকম ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করে,
“তোমার কাছে কি আদৃতবাবু, আর আশুতোষ বাবুর নাম্বার আছে বাবা?থাকলে একটু দাও না প্লিজ। খুব দরকার! ”

ঋতমবাবু মেয়ের কন্ঠের কাতরতা উপলব্ধি করতে পেরে উত্তর দেন,
“দাঁড়া,টেক্সট করে দিচ্ছি! ”

হৃদিতা ফোন নামিয়ে নেয় কান থেকে। মিনিট তিনেক পড়েই “টুং” করে আওয়াজ হয়! হৃদিতা মোবাইল স্ক্রিনে তাকায়। প্রথমে কল করে আদৃতের নাম্বারে। স্ক্রিনে কেমন জ্বলজ্বল করছে নাম্বারটা। তবে রিং হয় না। তার আগেই বিপরীত পাশে থেকে শোনা যায়,
” Sorry, the number you have dialed is currently unreachable! ”

হৃদিতা হতাশ শ্বাস ছাড়ে। এটাই হবার কথা। আদৃতের নাম্বার যে বন্ধ তা তো তাকে আগেই জানানো হয়েছে। এবারে গাল ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে ডায়াল করে আশুতোষবাবুর নাম্বারে। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করে, রিং হবার। এবারটায় অপেক্ষা সফলও হয়। পরপর তিন বার রিং হবার পরেই রিসিভ হয় কল। হৃদিতা চোখ খিঁচে দম আটকে থাকে। ফোনটা যেন দাদুই ধরেন!ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করে,
“হ্যালো, কে বলছেন?”
হৃদিতা চোখ মেলে, কাঙ্ক্ষিত কন্ঠস্বর। সে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে ওঠে,
“আমি কে তা জানার প্রয়োজন নেই মিস্টার সেন! জলদি সিটি হসপিটালে চলে আসুন। আপনার স্ত্রী কাদম্বিনী দেবী অসুস্থ। ডক্টর আশঙ্কা করছেন, ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন উনি। তাই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে অ্যাডমিট করতে হবে, আর সেখানে ভর্তির ফরমালিটিস পূরণের জন্য আপনাকে দরকার। সো, কাইন্ডলি প্লিজ, তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমরা রোগীকে নিয়ে রওনা হচ্ছি!”

আশুতোষ বাবুর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়, চাপা আর্তনাদ করে বলে ওঠেন,
“কৃষ্ণকায়া!কিছু হবে না তোমার। কিছু হতে দেব না আমি। আমি আসছি, একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি!”

#চলবে!

[রি-চেইক করা হয়নি! ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here