প্রিয়ংবদা পর্ব ১৩

#প্রিয়ংবদা
#ত্রয়োদশ_পর্ব
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়

সিটি হসপিটাল। নিউরো মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের একটা কেবিনের সামনেই বসে আছেন, আশুতোষবাবু, সাথে হৃদিতাও।ফিনাইলের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধটা বারবার নাকে এসে বারি খাচ্ছে। কেবিনের ভেতরেই আছেন কাদম্বিনী দেবী। এ হসপিটালের খুবই সনামধন্য একজন নিউরোলজিস্ট পরীক্ষা করছেন ওনাকে।
আর কেবিনের বাইরে বসা মানুষ দুটো!তাদের অবস্থাও অনুকুল নয়। দুজনেই ছটফট করে যাচ্ছে প্রিয়জনের সুস্থ হয়ে ওঠার খবরটা পেতে, মনে মনে নিজেদের যথাসাধ্য আশা দিয়ে রাখছেন, কিছু হবে না, সব ঠিক থাকবে, কিন্তু তবুও!কোথায় যেন একটা অজানা ভয় বীভৎস ভাবে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বুকের ভেতরটা। কেমন একটা চাপা অস্থিরতা, দমবন্ধ করা অনুভূতি কাজ করে যাচ্ছে!
হৃদিতা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আশুতোষবাবু দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে বসে আছেন, কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট! হৃদিতা চোখ সরিয়ে নেয়। ফিনাইলের গন্ধটা আরো কেমন গাঢ় হলো! কাছেপিঠেই হয়তো ব্যবহার করলো কেউ।
হৃদিতার মাথা ঝিমঝিমিয়ে ওঠে, এ গন্ধটা একদমই সহ্য হয়না কেন জানি!কেমন একটা গা গুলিয়ে যায়!

মিনিট ঘুরতেই ডক্টর বেরিয়ে এলেন। পাশেই একজন নার্স!উনি আস্তে করে ডাকলেন,
“শুনুন!”
হৃদিতা ক্লান্ত আঁখিজোড়া মেলে চাইলো, সেই চোখে দিদার সুস্থতার বার্তা শোনবার প্রবল ইচ্ছে!
আশুতোষবাবু চোখ মেললেন, উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার ছেড়ে।ভীষণ চিন্তা নিয়ে শুধালেন,
“কেমন দেখলেন ডক্টর?ঠিক আছে?”

ডক্টর নার্সের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করেই উত্তর দিলেন,
“দেখুন, ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন উনি! আপনাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান আই মিন টু সে, ডক্টর বোস ঠিকই ধরেছেন। তবে এখন আমাদের চিন্তার বিষয় হলো, স্ট্রোকটা ঠিক কোন ধরণের।যদি বিষয়টা ইস্কেমিক স্ট্রোকের হয়, তবে পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা এবং মেডিসিনে কাজ হবার কথা! হয়ও সচরাচর। তবে যদি হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়, তবে বিষয়টা চিন্তার। ম্যাক্সিমাম স্ট্রোক ডেথ এর জন্যই হয়। আমরা ওনাকে সিটিস্ক্যান করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি। রেজাল্টটা আসলেই বোঝা যাবে এক্সাক্টলি হোয়াট হ্যাস হ্যাপেন্ড টু হার!”

নার্স ততক্ষণে একজন ওয়ার্ডবয়কে স্ট্রেচার সমেত ডেকে পাঠিয়েছেন! কাদম্বিনী দেবীকে স্ট্রেচারে শিফট করেই তাকে নিয়ে যাওয়া হলো আশুতোষবাবু আর হৃদিতার সামন দিয়েই! আশুতোষবাবু আবার বসে পড়লেন। দুহাতে মাথার আধপাকা চুলগুলো খামচে ধরে নিজের মনেই বিবৃত করলেন,
“তোমাকে একা ছাড়াটা আমার উচিতই হয়নি কৃষ্ণকায়া। একদমই না। কিন্তু তোমার জেদের কাছে যে আমিও নিরুপায় ছিলাম! ”

আশুতোষবাবু থামলেন, হৃদিতা একবার আড়চোখে তাকে দেখে নিল। চিন্তাগ্রস্ত শুণ্য মস্তিষ্কে খেলে গেল একটি প্রশ্ন,”দিদার জেদ মানে? বৃদ্ধাশ্রমে আসার জন্যও কেউ জেদ করে নাকি?”

ফাঁকা মাথায় উত্তর এলো না। হৃদিতা ভাবার চেষ্টাটুকুও করলো না। বদলে মন-মস্তিষ্ক সবটা দিয়ে কেবল একটা প্রার্থনাই করে গেল,
“দিদাকে সুস্থ করে দাও ভগবান!দয়া করো!”
প্রার্থনার মধ্যপথেই হৃদিতার কানে এসে বাজলো, আশুতোষবাবুর কথা,
“হ্যাঁ,দাদুভাই?কোথায় তুই?ফোন বন্ধ কেন তোর?”

ওপাশ থেকে কি উত্তর এল ঠিক শোনা গেলনা। পরক্ষণেই আশুতোষ বাবু আবার বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
“তোর ঠাম্মির স্ট্রোক করেছে দাদুভাই। আমি এখন সিটি হসপিটালে। ডক্টর নিয়ে গেছেন সিটি স্ক্যান করাতে। তুই একবার আসবি?”

আশুতোষবাবু হয়তো সন্তোষজনক জবাবই পেলেন, অন্ততঃ ওনার কন্ঠ তো তাই বললো, সন্তোষের স্বরে,
“আচ্ছা, আমি অপেক্ষা করছি, তুই আয়! ”
বলেই ফোনটা কাটলো!
হৃদিতা বুঝে গেল, আদৃত আসছে! হঠাৎই তার মনে হলো ঐ মানুষটার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে টুকুও তার করছে না। কেমন একটা চাপা রাগ আর ক্ষোভে অন্তারাত্মা বিচলিত হচ্ছে।
হৃদিতা একবার ভাবলো, থাকবেনা আর, চলে যাবে। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পড়লো, দিদার হাসি মাখা মুখটা। ইশশ!কি মিষ্টিই না দেখতে।ঐ যে সেদিন হাসছিল খিলখিলিয়ে!
হৃদিতার ইচ্ছে হলো সেই চোখ বন্দী থাকা মুহুর্তটা যদি চোখের বাইরে এনে ফ্রেমে বন্দী করে রাখা যেত?তখন?দাদু নিশ্চই আরেকবার নতুন করে দিদার প্রেমে পড়ে যেতেন! পড়তেন না? সে মেয়ে হয়েই যদি অত মুগ্ধ হয়,তবে দাদু কি তার প্রণয়িনীর অমন স্নিগ্ধ রুপের মাধুরীতে আরো বেশি মুগ্ধ হতেন না? নিশ্চয়ই হতেন।
হৃদিতা আপনমনেই হেসে ফেলে। সিদ্ধান্ত নেয়, কারো উপস্থিতি এড়াতে সে কিছুতেই দিদাকে রেখে নড়বেনা, একটুও না। ঘৃণার পাত্রকে এড়াতে ভালোবাসার মানুষগুলোর প্রতি অবহেলা করার তো কোন মানে হয়না। একটুও না!
.
প্রায় এক ঘন্টা পরেই ক্স্যান রিপোর্ট হাতে বেরিয়ে আসেন ডক্টর! ওনার চোখে মুখে খানিক স্থিরতা দেখতে পেতেই কোন একটা সুসংবাদের আভাসে চোখজোড়া চকচক করে ওঠে হৃদিতার! ডক্টরকে দেখতে পেয়েই আশুতোষবাবু হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
“ডক্টর? কি বুঝলেন? কোন ধরণের স্ট্রোক করেছে ও?ঠিক হবে না?”

ডক্টর আশুতোষবাবুর দুশ্চিন্তা বুঝতে পেরে তাকে আস্বস্ত করে বললেন,
“মিস্টার সেন!রিল্যাক্স! গুড লাক!ইস্কেমিক স্ট্রোক ছিল। অ্যাকচুয়ালি ওনার প্রেশারটা বেশ অনেকটাই হাই দেখলাম তো! সম্ভবত বেশ ক’দিন ধরেই ব্লাড প্রেশারটা ইনক্রিস করছিল। আর মোস্ট প্রোবাবলি, সেই কারণেই হঠাৎ করেই ব্রেনের ওপরে বেশি চাপ পড়ায় একটা অংশে ব্লাড জমাট বেঁধে গেছিলো। এটাই স্ট্রোকের কারণ।
তবে টেনশন নেবার দরকার নেই। ওনার স্ট্রোকটা কোয়াইট ইজি ফর কিওর! জাস্ট কিছু মেডিসিনস দেব, সেসব রেগুলার খেলে ব্লাড ক্লটগুলো গলে যেতে পারে, আর খানিকটা দেখে রাখতে হবে, একটু নিয়মমাফিক চলাফেরা যেমন, সকাল-বিকেল হাটা, বেশি অয়েলি আর লিপিড জাতীয় খাবার না খেতে দেয়া, বয়স হচ্ছে তো, সেজন্য একটু ঘনঘন চেকআপ করিয়ে নেবেন, হাই বিপির পেশেন্ট তো! এই, আর তেমন কিছু না!
আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। স্ট্রোকটা বেশ ছোট ছিল বলেই রক্ষা মিস্টার সেন।নয়তো এমন সাধারণ স্ট্রোকের জন্যও মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। তবে ওনার ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি!সি ইজ লাকি!”

আশুতোষ বাবুর চিন্তা তবুও কমলো না। উনি আবারও সংশয়ী কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“ডক্টর, নিয়মমতো চললে, আর ঠিকমতো মিডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে তো? মানে আবার এমন কিছু…?”

ডক্টর থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“ডোন্ট ওয়ারি, আমি বললাম তো, আশা করা যায় উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে তবুও যদি না হন, তবে মেকানিকাল থ্রম্বেক্টমি আছেই। সো রিল্যাক্স!”

হৃদিতা এবারটায় ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
“মেকানিকাল থ্রম্বেক্টমি কি?কোন অপারেশন?”

ডক্টর হালকা হেসে বরলেন,
“এক্সাক্টলি নট সো, বাট খানিকটা তেমনই!এটি মূলত রক্তনালীর ভেতরে জমাটবাধা রক্ত অপসারণের চিকিৎসা।যাতে করে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা অব্যাহত থাকে এবং মস্তিষ্কের যেসকল অঞ্চলে রক্ত জমাট বেধে সেসকল কোষে রক্ত ঠিকমতো সঞ্চালিত হতে পারেনা সেসব জমাট বেধে থাকা ব্লাড ক্লটকে সরিয়ে নেয়া!
আগে আমাদের দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন ছিলনা। তবে এখন আছে। তাই চিন্তার কারণ নেই! শি উইল বি অলরাইট।
আর সবচেয়ে বড় কথা, বাঁচা-মরা সবটাই আল্লাহর ওপরে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। উনি করুণা করবেন অবশ্যই!”

আশুতোষ বাবু খানিকটা স্বস্তি পায়। হৃদিতাও আর কথা বাড়ায়না। ডক্টর চলে যাবার আগে শুধু জিজ্ঞেস করে,
“দিদাকে কবে রিলিজ করবেন ডক্টর?আজ?”

ডক্টর যেতে যেতেই হাসিমুখে প্রত্ত্যুত্তর করেন,
“আজ না মা! আজ একটু আমাদের অবজারভেশনে থাকুক। কাল বিকেল নাগাদ রিলিজ করে দেব!”

হৃদিতা হালকা হেসে মাথা নাড়ায়। আশুতোষবাবু পুনরায় বসতে যাবেন তার আগেই হঠাৎ শুনতে পান,
“দাদু!”

উনি ফিরে তাকান!আদৃত এসছে। সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন। হৃদিতা মুখ ফিরিয়ে নেয়। আদৃত তাকে খেয়াল না করেই দাদুর কাছে চলে আসে। উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন ছোড়ে,
“দাদু, ঠাম্মি?কেমন আছে এখন?”

আশুতোষবাবু নাতিকে ধরে বসিয়ে দেন। তারপরে মাথায় হাত রেখে বলেন,
“ঠিক আছে। মারাত্মক কিছু হয়ে যায়নি। ডক্টররা অবজারভেশনে রেখেছেন,বললেন তো তেমন রিস্ক নেই। কিছু মেডিসিন নিলে আর একটু সাবধানে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে!”

আদৃত কিছুটা শান্ত হলো। ঠাম্মি অসুস্থ শুনে যে কিসের ওপর এখানে এসছে সেটা ওই জানে!

হঠাৎ চোখ তুলে সামনেটায় তাকাতেই চমকে ওঠে আদৃত। এতক্ষণে হৃদিতাকে খেয়াল করে সে। হৃদিতা এখনো আগের মতোই, নির্লিপ্ত, নিচের দিকে চোখ নামানো। আদৃতের বুঝতে অসুবিধা হয়না, হৃদিতা সবটা জানে, জেনে গেছে। জেনে গেছে বলেই এই নির্লিপ্ততা। খুব সহজ উপায় কাউকে এড়িয়ে যাবার।আদৃতের উপস্থিতি যে তাকে একটুও ভাবাচ্ছে না, একদম অপরিচিতের মতো তার উপস্থিতিতে কোন প্রভাব পড়ছে না, এটাই তার লক্ষণ!
আদৃত দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তার খুব সাজানো মিথ্যে গুলো যে খুব বিশ্রীভাবে হৃদিতার সামনে মুখোশ খুলেছে তা ভেবেই ধোঁয়াটে হতাশা জাল বোনে মনে।
আদৃতের মনে হয়, এই যে এই নীরবতা, এই চুপিসারে অবহেলার তোড়জোড়, এর চেয়ে হৃদিতা যদি চিৎকার করে তার কাছে সত্যিটা জানতে চাইতো, মিথ্যে বলার জন্য তাকে দোষারোপ করতো তবে, সেটাই হয়তো অধিক শান্তির হতো। তবে হৃদিতা তো তা করলো না। বরং নিশ্চুপ থেকে নিভৃতে তাকে এক আকাশ সম অশান্তিতে ডুবিয়ে দিল!সত্যিই মেয়েটা কতটা নিষ্ঠুর।
আদৃত তপ্তশ্বাস ফেলে চেয়ে রইলো নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকা সেই নিষ্ঠুর মেয়েটির দিকে, যার নিষ্ঠুরতার জন্যই তাকে ভালোবেসেছিল সে। অদ্ভুত শোনালেও পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সত্যি যে এটাই!
.
বিকেলের দিকে জ্ঞান ফিরলো কাদম্বিনী দেবীর। শ্রাবণের আকাশ তখন আবারো ধুসর মেঘে নিজেদের সাজাতে ব্যাস্ত। মেঘের আড়ালেই জ্বলন্ত সূর্য লুকিয়ে নিয়েছে নিজেকে, একদম নববধুর মতো! সেই মেঘ বালিকাদের সংঘর্ষে মাঝে মাঝে গর্জে উঠছে পৃথিবী, চোখের পলকেই বিদ্যুৎআলোকে চমকে উঠছে, সেকেন্ডের ব্যবধানেই আবার হয়ে যাচ্ছে আগের মতোই, ধুসর, আঁধার!

কাদম্বিনী দেবীর জ্ঞান ফিরেছে শুনেই ওনার সাথে দেখা করতে এলেন আশুতোষবাবু, বাইরে তখনো হৃদিতা আগের মতোই দাঁড়িয়ে, স্থির,শান্ত দৃষ্টিতে। আর আদৃত মুখে হাত চেপে মাথা নামিয়ে বসে আছে।। কিছুই ভালো লাগছে না কেন যেন!
আশুতোষবাবুকে দেখামাত্র হালকা হাসি ফুটলো কাদম্বিনী দেবীর মুখে। রুগ্ন মুখখানি ক্ষণেই যেন রত্ন স্পর্শে চমকে উঠল। আশুতোষ বাবু পাশের একটা টুল টেনে বসলেন। স্ত্রীর মাথার একবার হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন লাগছে এখন? কষ্ট হচ্ছে কোথাও?”

কাদম্বিনী দেবী দুর্বলভাবে মাথা নাড়লেন। আশুতোষবাবু ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“কিছু হলেও যে তুমি বলবেনা তা জানি কৃষ্ণকায়া। অযথাই তোমাকে জিজ্ঞেস করা। নিজের কষ্ট, কান্না সবটা লুকিয়েই তো এসছে চিরটাকাল। আজ কি তার ব্যতিক্রম হতে পারে?”
কাদম্বিনী দেবী দুর্বল হাসলেন। আশুতোষ বাবু কিছু বললেন না আর। খানিক মৌন থেকে স্ত্রীর মুখটা কিছুক্ষণ নিবীর ভাবে দেখে গেলেন। ইশশ!কতগুলো দিন দেখা হয়নি এই মুখ। যে মুখ না দেখলে কখনো দিন কাটতো না, সেই মুখের দর্শন এখন কতই না কষ্টসাধ্য। আশুতোষ বাবু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কাদম্বিনী দেবী তখনো তার দিকে তাকিয়ে আছেন, ঠোঁটের কোণটায় এখনো সেই দূর্বল হাসি! আশুতোষবাবু খুব অনুনয়ের স্বরে শুধালেন,
“বাড়ি কবে ফিরবে কৃষ্ণকায়া?কবে ফিরবে?চলো না আমার সাথে? আর কতদিন এভাবে…?”

কাদম্বিনী দেবী আর বলতে দিলেন না, নিজেই বলে উঠলেন,
“ঠিক কতদিন জানিনা, তবে আপনাকে বলেছিলাম কবে ফিরবো!তাই বারবার জিজ্ঞেস করবেন না!”

আশুতোষবাবু হতাশ নয়নে তাকান। খুব কাতর কন্ঠে বলেন,
“তা কি কখনো হবে?কই, এতগুলো দিনতো কেটে গেল কৃষ্ণকায়া, এখনো অবধি তো কোনদিন তেমনটা হলো না। আর কবে হবে?তুমি অসুস্থ, বাইরে রাখতে চিন্তা হয় আমার। আজকের মতো আবার হলে?”

কাদম্বিনী দেবী উত্তর দেননা। শুধু হালকা হেসে বুজে নেন আঁখিপল্লব! আশুতোষবাবুও কথা বাড়ান না আর। তিনি জানেন তার স্ত্রীকে, ভীষণ জেদী। যা বলেছে তা না হলে কখনোই যে সে আর “মেঘকুঞ্জের” চৌকাঠ পেরোবে না তা জানা তার। তবুও আশা জাগে মনে, যদি রাজি হয়, তার অনুরোধ ফেরাতে না পেরে যদি নিজে ফেরে! কিন্তু তা তো অলীক স্বপ্ন।হবার না যে!

আশুতোষবাবু নিজের মনেই জিজ্ঞেস করেন,
” তুমি কবে ফিরবে কৃষ্ণকায়া। মেঘেরাণীর অভাব যে মেঘকুঞ্জ প্রতি পদে পদে অনুভব করে! মেঘরাণী ছাড়া কি মেঘকুঞ্জ মানায়?একদম না!ফিরে এসো না কৃষ্ণকায়া,দ্রুত ফিরে এসো!”

#চলবে!

[ছোট হয়েছে জানি। সেজন্য দুঃখিত! কাল বড় করে দেব। হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here