প্রিয় তুমি পর্ব ৪

#প্রিয়_তুমি❤
#মেঘা_আফরোজ

#পর্ব-৪
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী রেডি হয়ে বসে আছে অথচ আকাশের কোনো খবর নেই। প্রিয়ন্তী আফিয়ার রুমে গেলো আকাশকে ফোন দিতে বলার জন্য

__আপু আসবো?

আফিয়া হিজাব বাধতে বাধতে বললো
__ভাবি তুমি এসো এসো আমার রুমে আসতে অনুমতি লাগে নাকি। তোমার যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবে।

__আচ্ছা আপু আসবো। আপু তুমি কোথাও যাচ্ছো?

__হ্যা ভার্সিটিতে যাবো ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে। ভাবি তোমাকে তো ড্রেস পড়ে খুব সুন্দর লাগছে আর হিজাবে তো মাশআল্লাহ আরো বেশি সুন্দর দেখতে লাগছে তোমাকে। কোথাও যাবে নাকি?

__বাবা বললো না তোমার ভাইয়াকে আমার ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার করিয়ে এখানে এডমিশন করাতে। তাই তোমার ভাইয়া রুমে এসে বললো রেডি হতে ভার্সিটিতে যেতে হবে আজই নাকি ট্রান্সফার করানোর ব্যবস্থা করবে।

__বাবা ভাইয়াকে দায়িত্ব দিলো আর সে রাজি হয়ে গেলো তাও আবার তোমার ব্যাপারে। এতেই বোঝা যাচ্ছে আমার ভাইয়া একটু হলেও তোমার প্রতি দুর্বল হয়েছে। আর হবে নাই বা কেনো আমার এত্তো সুইট ভাবিকে দেখে হয়তো আমার ভাইয়া সত্যি প্রেমে পড়েছে।

__আপু তুমি বাড়িয়ে বলছো আমি মটেও এতো সুইট নই।তোমার ভাইয়া আমার প্রেমে পড়বে ইম্পসিবল! আর দুর্বল হওয়া তো দূরের কথা সে তো আমার দিকে ভালো করে তাকায় না। তোমার ভাইয়া যা করছে বাবা মার মন রাখার জন্য করছে।

আফিয়া প্রিয়ন্তীর গালে হাত দিয়ে বললো
__আমি জানি ভাবি তোমার খারাপ লাগে। জানো তো ধৈর্যের ফল মিঠা হয়,ধৈর্য রাখো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া আসলে একটা মৌহে আটকে আছে সেটা কেটে গেলে ভাইয়া তোমাকে বউয়ের মর্যাদা দেবে এটা আমার বিশ্বাস।

__কিসের মৌহ আপু?

__আরে না তেমন কিছু নয়। ভাবি এখন আমাকে বের হতে হবে তোমরাও আর দেরি করো না বেরিয়ে পড়ো।

__আপু তোমার ভাইয়া কোথায় সেটাই তো জানি না তুমি একটু ফোন দিয়ে দেখো না। আমি তোমাকে ফোন দিতে বলার জন্যই এসেছিলাম।

__তোমার কাছে ভাইয়ার নাম্বার নেই?

__আসলে আপু আমার ফোনটা আমি মামিকে দিয়ে এসেছি, আমার কাছে ফোন নেই।

আফিয়া হেসে আকাশের নাম্বারে ডায়েল করে বললো
__ভাবি তুমি সত্যি অনেক ভালো। নাউ কথা বলো।

__না না তুমি জিজ্ঞেস করো উনি কোথায় আছে।

__আমি কেনো তুমি কথা বলো রিসিভ করেছে।

প্রিয়ন্তী কানের কাছে ফোন নিতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো
__হ্যা বোন বল?

__আমি প্রিয়ন্তী। আপনি কোথায়?আমি তো তখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।

আকাশ একটু চুপ থেকে বললো
__নিচে এসে দাড়াও আসছি আমি।

__আচ্ছা।
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী আফিয়ার ফোন দিলে আফিয়া বাই বলে বেরিয়ে গেলো। প্রিয়ন্তী রুমে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে আকাশের মাকে বলে গেটের সামনে এসে দাড়ালো।
২/৩ মিনিটের মধ্যে আকাশ বাইক নিয়ে প্রিয়ন্তীর সামনে এসে দাড়িয়ে কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ন্তীর দিকে।
প্রিয়ন্তী পার্পেল কালারের ড্রেস আর মাথায় ব্লু হিজাব পড়েছে। সাজ বলতে ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক হালকা করে নেওয়া। তাতেই যেনো অপ্সরীর মতো লাগছিলো প্রিয়ন্তীকে।
আকাশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে প্রিয়ন্তী বিরক্তি নিয়ে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বললো

__এই লোকটার প্রবলেম কি? এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে? উনার আচরন ও আজ সকাল থেকে কেমন যেনো লাগছে কি হয়েছে কে জানে।

গাড়ির শব্দ শুনে আকাশের হুস এলো। প্রিয়ন্তী তখনো মাথা নিচু করে আছে। আকাশ নরম স্বরে বললো
__কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো ওঠো বাইকে।

__আপনিই তো কিছু না বলে হা করে তাকিয়ে আছেন,দাড়িয়ে থাকবো না তো কি করবো।

__হা করি নি মুখটা বন্ধই ছিলো আমার। এখন ওঠো।

__আমি কখনো বাইকে উঠি নি উঠলে যদি পড়ে যাই!

আকাশ হেসে বললো
__ধরে বসলে পড়বে না। দেরি করো না উঠে পড়ো।

প্রিয়ন্তী বাইকে উঠে আকাশের থেকে দূরত্ব রেখেই বসলো।

__এভাবে বসলে তো পড়ে যাবে আমাকে ধরে বসো।

__আপনি রাগ করবেন নাতো?

আকাশের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। প্রিয়ন্তী যে আকাশের বলা কথা গুলো মাথায় রেখে এ কথা বলেছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে। আকাশ হালকা হেসে বললো
__না রাগ করবো না। বাবা আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছে সেটা তো ঠিকঠাক করতে হবে।তুমি ভালো ভাবে বসে আমার কাধে হাত রাখো।

__ওও আমি তাহলে ঠিকি ধরেছিলাম মিস্টার জিরো সাহেব নিজের বাবার কথা রাখতে এসব করছে। হুহ।

প্রিয়ন্তী আকাশের কাধে হাত রেখে শক্ত করে ধরে বসে আছে বাইকে। আকাশ বাইক আস্তে চালালেও প্রিয়ন্তী একটু পর পর আকাশের কাধ খামচে ধরছে। আকাশ একটা অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করছে। আকাশ আগে কখনো নিজের মা আর বোন ছাড়া কোনো মেয়ের এতো কাছে যায়নি। বাইকে ও এপর্যন্ত কোনো মেয়েকে তোলো নি এমনকি নিজের বোনকেও না। আফিয়া বাইকে উঠতে চাইলে বলতো এ বাইকে আগে আমার বউ উঠবে তারপর তুই। কথাগুলো ভেবেই আকাশ নিশব্দে হাসছে। যদিও আকাশ এখনো প্রিয়ন্তীকে বউ বলে স্বীকার করেনি কিন্তু তার মায়াপরী যে তার বাইকে উঠেছে এটাই বা কম কিসে।
প্রিয়ন্তী যতোটা পারছে আকাশের থেকে দূরে সরতে চাইছে। তারপরেও একটু পর পর আকাশের পিঠের সাথে ওর শরীর ছুয়ে যাচ্ছে। না চাইতেও নিজের হাত দ্বারা আকাশের কাধ খামচে ধরছে। প্রিয়ন্তী ভেবেছিলো আকাশ হয়তো রেগে যাবে কিন্তু না আকাশ চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে। প্রিয়ন্তীর মনে বাইকে উঠার আগে যে ভয়টা ছিলো এখন আর তেমন ভয় লাগছে না। বরং আকাশের এতো কাছে থেকে নিজেকে সেভ মনে হচ্ছে।
কেমন যেনো একটা ভালোলাগা অনুভব করছে আকাশের প্রতি যার একটুও গত দুইদিনে অনুভব করে নি প্রিয়ন্তী।

প্রিয়ন্তীর সাথে থেকে আকাশ ওর ট্রান্সফার করার সব ব্যবস্থা করে ওকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো।
.
🍁
.
রাত ৯:৩৩ মিনিট আকাশ তখন বাড়ি ফিরেছে। আকাশের মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে।

__মা আমার দিকে এমন অবাক চোখে তাকিয়ে আছো কেনো?

__অবাক হবো না,তুই আজ এতো তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেছিস! যে ছেলে রাত সাড়ে দশটার আগে বাড়িতে আসতো না সে আজ ১০ টার আগে এসেছে ভাবা যায়!!

__মা তোমার প্রবলেম কি বলোতো?দেরি করে ফিরলেও কথা শোনাও আবার আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছি তাও এসব বলছো। ঠিকআছে আমি কাল থেকে আবারো দেরি করে ফিরবো।

__না বাবা আমি আর কিছু বলবো না তুই আজকের মতো রোজই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসবি কেমন।

আকাশ আর কিছু বললো না উপরে যেতে নিলে আফিয়া এসে সামনে দাড়ালো। আকাশ কপাল কুঁচকে বললো
__কি হলো সামনে দাড়ালি কেনো,মায়ের মতো তুইও কি তাড়াতাড়ি ফেরা নিয়ে কথা শোনাবি?

__মা তো তাড়াতাড়ি ফেরার কারনটা জানে না আমি জানি তাই এ বিষয়ে কিছু বলবো না। এখন বল তোর হাতে এই প্যাকেট টা কিসের কি আছে এতে?

আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো
__এই প্যাকেটটা কিসের তোর না জানলেও চলবে। কি কারন জানিস সেটা বল?

__কারন আর কি আমার একমাত্র ভাইয়ার একমাত্র বউ মানে আমার সুইট ভাবি তার জন্য তুই তাড়াতাড়ি ফিরেছিস। ঠিক বলেছি না?

আকাশ আফিয়ার মাথায় চাটি মেরে বললো
__তুইও যেমন তোর ভাবনা গুলোও তেমন। তবে তোর এই ভাবনাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।

আকাশ উপরে উঠে গেলো আফিয়া ওর মায়ের কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে বললো
__মা বুঝলে কিছু?

__হুম কিছুটা বুঝেছি। আমরা প্রিয়ন্তীকে বউ করে এনে ভুল করি নি।
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী ব্যালকনিতে দাড়িয়ে ছিলো রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে রুমে এসে দেখলো আকাশ এসেছে। প্রিয়ন্তী এগিয়ে এসে কিছু বলবে তার আগেই আকাশ বললো

__প্লিজ তুমি অন্তত জানতে চেয়ো না এতো তাড়াতাড়ি কেনো ফিরলাম। নাউ এটা তোমার জন্য এনেছি।

আকাশ প্রিয়ন্তীর দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো প্রিয়ন্তী ওটার দিকে তাকিয়ে বললো
__কি আছে এতে?

__নিজেই খুলে দেখো।

প্রিয়ন্তী প্যাকেটটা নিয়ে কয়েকসেকেন্ড ওটার দিকে চেয়ে থেকে খুললো ভেতরে থাকা বক্সটা দেখে প্রিয়ন্তী বড় বড় চোখ করে বললো
__এ তো মোবাইল ফোন! কার এটা?

__বললাম তো তোমার জন্য এনেছি। তারমানে তোমার এটা।

প্রিয়ন্তীর চোখ জোড়া আগের চেয়ে আরো বড় হয়ে গেলো। একবার বক্সটার দিকে তাকাচ্ছে আবার আকাশের দিকে। আকাশ মুচকি হেসে বললো

__চোখ দুটো তো বেড়িয়ে আসবে এভাবে দেখার কি আছে।

__না মানে আপনি আমাকে হঠাৎ ফোন এনে দিলেন কেনো? এটা আপনিই রাখুন আমার লাগবে না।

__চুপ বেশি কথা বলো কেনো। তোমার ফোন নেই তাই নিয়ে এলাম। সব সময় মায়ের ফোন বা আফিয়ার ফোন নিতে তোমার হয়তো ভালো লাগবে না। তাছাড়া তুমি ভার্সিটিতে যাবে আসবে কখন কি হয় বলা যায় না ফোন থাকলে অনেক সুবিধা হবে। এখন থেকে এটাই ব্যবহার করবে ফোনে আমি সিম সেটিং করে দিয়েছি। বাবা মা আফিয়া আর আমার নাম্বার ও সেভ করে দিয়েছি। তুমি তোমার ফ্যামিলিতে যারা আছে তাদের নাম্বার সেভ করে নিও। আর একটা কথা বাইরের কাউকে নাম্বার দেবে না ক্লোজ ফ্রেন্ড ছাড়া।

আকাশ ওর কথা শেষ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এদিকে প্রিয়ন্তী যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সবটা সপ্নের মতো লাগছে। আকাশের বিহেব টা ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের রাতে প্রিয়ন্তী যে আকাশকে দেখেছিলো তার সাথে এই আকাশের কোনো মিল খুজে পাচ্ছে না প্রিয়ন্তী।

প্রিয়ন্তী নিজে নিজে বলতে লাগলো
__যে ছেলে আমার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছে। আমাকে কখনো মানবে না বলেছে। সে এতো ভালো ব্যবহার কি করে করছে আমার সাথে? আমি তো তাকে ফোনের কথাও বলিনি তাহলে হঠাৎ নিউ ফোন এনে দিলো কেনো? আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না। আসবেই বা কি করে বিয়ের প্রথম দুদিন আমার ছায়াও দেখতে পারতো না আর আজ সকাল থেকেই তার উল্টোটা হচ্ছে। আল্লাহ জানে কি চলছে এই আকাশের মাথায়!

রাতে ডিনার করে এসে আকাশ বেডে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে। প্রিয়ন্তী চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে পড়লো আকাশ আড় চোখে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে বললো

__ফোনটা যেভাবে দিয়েছি ওভাবেই রেখে দিয়েছো বক্সটা খুলে তো দেখতে পারতে। নাকি আমার দেওয়া কিছু নেবে না তুমি?

প্রিয়ন্তী আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
__কেনো নিবো না অবশ্যই নিবো। এখন তো কোনো দরকার নেই তাই বের করিনি। আর শুনুন আপনি দিয়েছেন এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। আপনি আমাকে বউ বলে না মানলেও আমি আপনাকে আমার বর বলে মানি। আর আমি শুনেছি বর কিছু দিলে তা ফিরিয়ে দিতে নেই।

আকাশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না এই মেয়েটাকে যে সে মনের অজান্তে অনেক আঘাত দিয়ে ফেলেছে। আকাশের এখন নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হচ্ছে। আকাশ ভাবছে কেনো সে নিজের আভিজাত্যের অহংকার করে তার মায়াপরীকে লোভী বলে ভাবলো। সে যে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়েও আকাশের পাশে দাড়ানোর যোগ্যতা রাখে।

আকাশ বেডে শুয়ে আছে দেখে প্রিয়ন্তী কিছু বললো না। বেড থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় কাছে যেতেই আকাশ বলে উঠলো

__তুমি বেডেই শুতে পারো আমার কোনো প্রবলেম হবে না।

__আমি এখানেই ঠিক আছি এমনিতে আপনাকে দুদিন কষ্ট করে সোফায় শুতে হয়েছে। আপনি বেডেই ঘুমান আমি সোফায় ঘুমাবো।

আকাশ কিছু বললো না শুধু তাকিয়ে থাকলো তার মায়াপরীর দিকে।
.
🍁
.

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here