প্রিয় তুমি পর্ব ২+৩

#প্রিয়_তুমি❤
#মেঘা_আফরোজ

#পর্ব-২ + ৩
.
🍁
.
আকাশ ওর মায়ের রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশের মা ওর পাশে এসে বললো

__আকাশ আমি আর তোর বাবা তোর ভালোর কথা ভেবে প্রিয়ন্তীকে তোর সাথে বিয়ে দিয়েছি।আমি বুঝতে পারছি তুই ওকে মেনে নিতে পারিস নি। প্রিয়ন্তী খুবই ভালো মেয়ে ওকে তুই মেনে নে।

আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে ওই মেয়ের তো আজ খবর আছে,আমি মানা করার পরেও মাকে বলে দিয়েছে আমি ওকে মেনে নেইনি!

__কি হলো বিড়বিড় করে কি বলছিস তুই??

__নাহ মা কিছুনা। মা ওই মেয়েটা তোমাকে বলেছে আমি ওকে মেনে নেই নি তাইনা??

__ওই মেয়েটা কি কথা হুম? ওকে প্রিয়ন্তী বলবি। আর শোন প্রিয়ন্তী আমাকে কিছু বলেনি। তুই খাবার টেবিলে ওর নাম শুনে চিনতে পারলি না তখনি আমি যা বুঝার বুঝে নিয়েছি। দেখ আকাশ মেয়েটা আমাদের মতো এতো বড় ঘরের মেয়ে না হলেও ওর মধ্যে আমাদের সাথে মিশে থাকার প্রতিভা আছে। আমি গত ২ সপ্তাহ ধরে ওকে ফলো করে তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোর কি মনে হয় তোর বাবা আর আমি তোর খারাপ চাইবো??

__মা এসব কি বলছো তোমরা আমার খারাপ কেনো চাইবে। মা তোমাদের কথা রাখতে আমি বিয়ে করেছি। ভেবেছিলাম পড়াশুনা শেষ করে তারপর বিয়ে করবো কিন্তু তোমরা সেই সুযোগ টাও দিলে না। চিনি না জানিনা এমন একটা মেয়েকে আমার লাইফে জুরে দিলে।

__এখন চিনবি ওকে প্রবলেম কোথায়? তোর পড়াশুনায় তুই চালিয়ে যা। আকাশ আবারো বলছি প্রিয়ন্তীর মতো লক্ষী মেয়ে খুবই কম দেখা যায়। ওর আচরন চলাফেরা সব দিক থেকেই পারফেক্ট। আর চেহারা তো মাশআল্লাহ,অনেক মায়া ওর চোখে মুখে।

আকাশ মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে কথা শুনতে। মাকে মানা করতেও পারছে না। তাই ওর মাকে বললো
__মা তোমাদের কথায় আমি বিয়ে করেছি,ঠিকআছে মেনেও নিবো ওই মেয়েকে। এবার খুশি তো??

আকাশের মা হেসে বললো
__হুম খুব খুশি। তুই শুধু একবার প্রিয়ন্তীকে মেনে নে দেখবি পরে তুই নিজেই ওকে ছাড়তে চাইবি না চোখে হারাবি ওকে।

আকাশ উঠে দাড়িয়ে বললো
__মা আমাকে একটু বের হতে হবে আসছি এখন।
আকাশ মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে রাগে হাত মুঠোবন্দী করে বলতে লাগলো
__মাকে তো থামানোর জন্য বললাম মেনে নেবো ওই মেয়েকে। কিন্তু নাহ ওকে আমি মানবো না। ওই মেয়েটি দেখছি মাকে নিজের বসে নিয়ে নিয়েছে। শুধু মা নয় বাবাও তার ভক্ত হয়ে গিয়েছে। এসব ছোট ঘরের মেয়েদেরকে ভালো করে চেনা আছে আমার ধনী পরিবার পেয়েছে তাই বাবা-মাকে কৌশলে নিজের দলে টেনে নিয়েছে। ওই মেয়েকে কি বলবো আমার বাবা-মা সুযোগ দিয়েছে বলেই তো সে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে। উদাসীন হয়ে ভাবছে কি হয়ে গেলো ওর জীবনে। বিয়ে শশুরবাড়ি বর সবকিছু নিয়ে মেয়েদের একটা সপ্ন থাকে হয়তো প্রিয়ন্তীর ও এমন সপ্ন ছিলো। সব ঠিক থাকলেও যে তার বরটা ঠিক নেই ওকে তো সে বউ বলেই মানবে না বলেছে। প্রিয়ন্তী বুঝে উঠতে পারছে ওর কি করা উচিত। ও কি আকাশের অবহেলা সয়ে এই বাড়িতে থাকবে নাকি চলে যাবে। কিন্তু এ বাড়ি ছেড়ে আর কোথায় যাবে প্রিয়ন্তী মামার কাছে ফিরে গেলে যে সে কষ্ট পাবে আর মামির কটু কথা শুনতে হবে।
প্রিয়ন্তী অনেক ভেবে মনে মনে বললো

__ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি এখানে এসে আমি নতুন বাবা মা পেয়েছি আমি পারবো না এদেরকে ছেড়ে যেতে। বরের ভালোবাসা না হয় নাই পেলাম বাবা মায়ের ভালোবাসা তো পাবো এতেই আমি খুশি।

প্রিয়ন্তীর ভাবনার মাঝে আফিয়ার ডাক শুনতে পেলো
__ভাবি কোথায় তুমি?

প্রিয়ন্তী ব্যালকনি থেকে রুমে এসে মৃদু হেসে বললো
__আপু এইতো আমি ব্যালকনিতে ছিলাম।

__ভাবি আমাকে আপু ডাকছো কেনো আমার নাম আফিয়া,নাম বলেই ডাকবে। তুমি আমার বড় ভাইয়ের বউ সম্পর্কে আমি তোমার ছোট ননদ হই।

__আপু তুমি আমার সম্পর্কে ছোট হলেও বয়সে তো বড় আমি তোমাকে আপু বলেই ডাকবো।

__আচ্ছা ঠিকআছে ডেকো তবে শোনো আমাকে ননদ বলে দূরে সরিয়ে রেখো না বোনের মতো মিশবে আমার সাথে।

__আচ্ছা আপু।

আফিয়া প্রিয়ন্তীর গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো
__আমার সুইট ভাবি। আমি ঠিক এমনই একটা ভাবি চেয়েছিলাম আর পেয়েও গেছি। আ’ম সো হ্যাপি।

প্রিয়ন্তী হাসলো কিছু বললো না শুধু মনে মনে অবাক হচ্ছে আকাশের বাবা মা ওর বোনের ব্যবহারে। মাত্র একদিকে এতোটা আপন করে নিয়েছে প্রিয়ন্তীকে।

__ওহ ভাবি যেটা বলতে এসেছিলাম,মা তোমাকে ডাকছে মায়ের রুমে যেতে বলেছে।

__হুম যাচ্ছি। আপু একটা কথা বলবো??

__হ্যা বলোনা কি কথা?

__বলছি তোমার ভাইয়া কি বাড়িতে আছে? ব্রেকফাস্ট এর পর আর দেখিনি তো তাই আর কি।

আফিয়া কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
__ভাইয়া তো সকালেই বেড়িয়ে গেছে। তোমাকে কিছু বলে যায়নি তাইনা?

__না মানে! আপু বাদ দাও চলো মায়ের রুমে যাই।

__ভাবি তুমি না বললেও আমি বুঝতে পারছি। ভাইয়া তোমার নামটাও জানতো না এতেই তো সবটা পরিষ্কার যে ভাইয়া তোমাকে মেনে নিতে পারে নি। তবে তুমি টেনশন করো না ভাইয়া তোমাকে মেনে নেবে আর তোমার প্রেমেও পড়বে খুব তাড়াতাড়ি।

প্রিয়ন্তী চোখ বড় বড় করে তাকালো,আফিয়ে হেসে উঠে বললো
__ওভাবে কি দেখছো! আমি যা বলেছি না এটাই হবে মিলিয়ে নিয়ো। চলো এখন।
.
🍁
.
রাত ১১টা বেজে গিয়েছে আকাশ এখনো বাড়ি ফেরেনি। প্রিয়ন্তী ড্রয়িংরুমে বসে আছে আকাশের অপেক্ষায়। আকাশের মা ও বসে ছিলো প্রিয়ন্তী জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে ওর ক্ষিদেও পেয়েছে আকাশের সাথে খাবে বলে সবার সাথে খায়নি। প্রিয়ন্তী যদিও জানে ও না খেয়ে থাকলেও আকাশ ওকে খেতে বলবে না বা জানতেও চাইবে না খেয়েছে কিনা।
কলিংবেল বেজে উঠতে প্রিয়ন্তী শাড়ির আচঁলটা মাথায় তুলে দরজা খুলে দিলো। বাইরের আলো প্রিয়ন্তীর মুখে না পড়লেও ঘরের লাইটের আলো আকাশের মুখে পড়েছে। আকাশের ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে প্রিয়ন্তী। আকাশ বিরক্ত নিয়ে বললো

__দরজা আটকে দাড়িয়ে না থেকে সরো এখান থেকে।

প্রিয়ন্তী সরে আসলো সেখান থেকে। আকাশ ভেতরে ঢুকে সোজা উপরে চলে গেলো। প্রিয়ন্তী দরজা আটকে ডাইনিং এর খাবার রেডি করে উপরে এলো।
আকাশ ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে প্রিয়ন্তী সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো

__খাবার রেডি করে এসেছি নিচে চলুন।

__আমি খেয়ে এসেছি ফ্রেন্ডের বাসা থেকে,খাবো না এখন।

প্রিয়ন্তী আর কথা বড়ালো না নিচে এসে খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিলো। প্রিয়ন্তীও আর কিছু খেলো না শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে রুমে চলে এলো।
আকাশ বেডের ঠিক মাঝখানে শুয়ে আছে ফোনের দিকে তাকিয়ে। প্রিয়ন্তী ঠিক বুঝতে পারছে ও যেনো বেডে শুতে না পারে এইজন্যই মাঝখানে গিয়ে শুয়ে আছে।

__আমি যেমনি হই না কেনো এই আকাশের সামনে নরম হওয়া যাবে না।
প্রিয়ন্তী বেডের পাশে দাড়িয়ে বললো
__পুরো বেড জুড়ে শুয়েছেন কেনো? একপাশে যান আমি ঘুমাবো এখন।

আকাশের কানে যেনো কোনো কথাই যায় নি ও ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে।

__কি হলো আপনি শুনতে পাননি? আমি ঘুমাবো তো।

আকাশ ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো
__রুম আমার বেড আমার এমনকি এ রুমে যা আছে সবই আমার। সো জোরটা আমার বেশি,এতো কথা না বলে যাও গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ো।

__ও আচ্ছা রুম আপনার বেড আপনার এ রুমের সব আপনার তাহলে আপনি স্বীকার করলেন আমিও আপনার মানে আপনার বউ।

আকাশ রেগে উঠে বসলো প্রিয়ন্তী পাশ ফিরে দাড়ালো মনে মনে ভাবছে
__সাহস দেখিয়ে তো বলে ফেললাম না জানি এই জিরোটা কি করবে এখন!

__হাউ ডেয়ার ইউ!কি বলছো এসব?তোমাকে আমি বউ বলে স্বীকার করেছি কখন?

__এক্ষুনি তো বললেন এই রুমে যা যা আছে সব আপনার। তাহলে আমিও তো এখন আপনার রুমে আছি আমিও আপনার। সিম্পল।

আকাশ রাগি চোখে তাকালো প্রিয়ন্তীর দিকে। প্রিয়ন্তী সাথে সাথে অন্যদিকে ঘুরে বললো
__আপনি যদি আমাকে শুতে না দেন তাহলে আমি এখনি মাকে গিয়ে বলে দিবো আপনি আমাকে বেডে জায়গা দিচ্ছেন না।

__তোমার সাহস তো কম নয় আমাকে ভয় দেখাচ্ছো মায়ের কথা বলে!!

__ওমা! আপনাকে আমি ভয় দেখাবো কেনো আপনি কি ছোট বাচ্চা,যে মায়ের কথা বললাম আর ভয় পেয়ে গেলেন।

আকাশ হাতের মুঠো শক্ত করে দাতে দাত চেপে মনে মনে বললো
__মাত্র দুদিন ধরে এসেই এতো সাহস বেড়ে গিয়েছে এই মেয়ের। অধিকার দেখাতে মানা করেছি সেটা তো মানছেই না উল্টো আমার মা বাবা বোনকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। আবার এখন আমার রুমটাও দখল করতে চাইছে।

প্রিয়ন্তী আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। প্রিয়ন্তী মুচকি হেসে গিয়ে বেডের একপাশে চাঁদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

আকাশ পাশে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললো
__তোমাকে না বলেছি সোফায় গিয়ে শুতে। এখানে কেনো শুয়েছো? ওঠো বলছি।

প্রিয়ন্তী চাঁদরটা মুড়ি দেওয়া অবস্থায় বললো
__উঠবো না। বেডে অনেক জায়গা আছে শুয়ে পড়ুন। না হলে সোফায় যান।

__কি মেয়েরে বাবা! ঠিকআছে এটাও মেনে নিলাম তবে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে এবাড়ি থেকে বের করবো।
.
🍁
.
খুব ভোরে মধুর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনে আকাশের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ ডলতে ডলতে চোখ মেলে তাকালো। কিছুটা বিরক্ত লাগলেও এতো সুন্দর কোরআন পাঠ শুনে খুব ভালো লাগছে ওর। সোয়া থেকে উঠতে নিলে দেখলো কালকের মতো আজও চাঁদর গায়ের ওপর।
আকাশ সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ন্তী মাথায় ওড়না পেচিয়ে জায়নামাজে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছে।
আকাশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৫:৫২ বাজে। এতো ভোরে কি করে ওর ঘুম ভাঙলো এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে!

প্রিয়ন্তী পড়া শেষ করে কোরআন শরীফ ঠিক জায়গায় রেখে জায়নামাজ গুছিয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে আছে।

__কি ব্যাপার আপনার এতো সকালে ঘুম ভেঙে গেলো যে? বুঝেছি আমার কোরআন পড়ার শব্দে আপনার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আচ্ছা ঠিকআছে আমি পাশের রুমে গিয়ে পড়বো কাল থেকে।

প্রিয়ন্তী কথাটি বলে অন্যদিকে ঘুরে ওড়না খুলতে লাগলে। আকাশ উঠে দাড়িয়ে টি শার্ট ঠিক করতে করতে বললো

__না অন্য রুমে যেতে হবে না এ রুমেই পড়বে।

প্রিয়ন্তী ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
__আপনার প্রবলেম হবে নাতো??

__নাহ প্রবলেম কিসের কোরআন পড়া বা শোনা তো খারাপ কিছু নয়।

__তাহলে তো নামাজ পড়াটাও খারাপ কিছু নয় বরং আপনার জন্য ভালো। আপনি এখন থেকে নামাজ পড়বেন কেমন?

__এই মেয়ে তোমাকে আমার ভালো নিয়ে ভাবতে হবে না আমি নিজের ভালোটা বুঝে নেবো ওকে।

__ঠিকআছে ভাবলাম না হুহ।

প্রিয়ন্তী ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল ছেড়ে দিলো। ওর ঘন কালো কোকড়ানো চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়ে পড়লো। প্রিয়ন্তী চুল আচড়ে চুল কাধের একপাশে এনে কিছু একটা খুজতে লাগলো।
ড্রেসিংটেবিলের ওপর আকাশের ফোন রাখা ছিলো আকাশ ওটা নিয়ে মাথা তুলে কয়েকসেকেন্ড অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললো

__তুমিই প্রিয়ন্তী!!

🍁
#চলবে……..

#প্রিয়_তুমি❤
#মেঘা_আফরোজ

#পর্ব-৩
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ আবারো বললো

__কি হলো বলো,তুমিই প্রিয়ন্তী??

__হ্যা আমি প্রিয়ন্তী। কিন্তু হঠাৎ এভাবে নাম জিজ্ঞাসা করছেন কেনো??

আকাশ কোনো কথা না বলে হা করে তাকিয়েই রইলো প্রিয়ন্তীর দিকে। ওর এভাবে তাকানোতে প্রিয়ন্তী অস্বস্তি বোধ করছিলো। হঠাৎ আকাশের এভাবে তাকিয়ে থাকা নাম জানতে চাওয়া অদ্ভুত লাগছে প্রিয়ন্তীর কাছে। প্রিয়ন্তী আকাশের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো

__এই যে জিরো সাহেব কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি??

আকাশ কিছুটা চমকে উঠে বললো
__জিরো! আমাকে জিরো কেনো বলছো তুমি??

__ঘরের মধ্যে আমার সামনে হিরোগিরি দেখান আর বাবা মায়ের সামনে জিরো আপনি। তাই আমি আপনার এই নাম দিয়েছি।

__খবরদার আমাকে তুমি জিরো বলবে না। আচ্ছা একটা কথা বলোতো আমি কি তোমাকেই বিয়ে করেছি??

প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে বললো
__বিয়ের ২ দিন পর আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন কিনা! কথাটা কেমন হাস্যেকর হয়ে গেলো না??

আকাশ আর কিছু বললো না মাথার চুলগুলো একহাতে টানতে টানতে ব্যালকনিতে চলে গেলো।
প্রিয়ন্তী আকাশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
__কিছুই তো বুঝলাম না কি হইলো এইটা!!

আকাশ ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
__এই মেয়েটার সঙ্গে দুদিন একরুমে থেকেও ওর চেহারাটা আমি দেখিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আয়নায় ওর মুখটা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না! এটাই সেই মায়াপরী যাকে আমি এতো খুজেছি অথচ পাইনি। হ্যা সেদিন তো ক্যাফেতে পাশের মেয়েটি ওকে প্রিয়ন্তী নামেই ডেকেছিলো। আজ সেই মায়াপরীটা আমার বউ হয়ে আমার এতো কাছে আছে! ও মাই গড! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না! আমি আরো দুদিন আগে ওর মুখটা কেনো দেখলাম না? কেনো ওর নামটা শুনেও আমি সেই মায়াপরীর কথা ভাবলাম না? যদিও নামটা শুনে চমকেছিলাম কিন্তু একই নামে তো অনেক মেয়ে আছে এটা ভেবেই ভুল করেছি। এখন কি করবো আমি?
.
🍁
.
আকাশ চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো কয়েকমাস আগের কথা……
আকাশ বন্ধুদের সাথে একটা ক্যাফে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ক্যাফেটা খুবই সুন্দর আর জায়গাটাও খোলামেলা। ক্যাফের চারিপাশটা ছিলো শুধু সবুজের সমারহ। শো শো করে বাতাস বইছে যা এখানে থাকা সকলের শরীর মনকে ফ্রেশ করে দিচ্ছে। এককথায় অসাধারণ একটি জায়গা।

হঠাৎ মেয়েদের হাসির শব্দ পেয়ে আকাশ পাশের টেবিলে তাকালো। ওই টেবিলে ৩ জন মেয়ে বসে আছে ২ জন মেয়ের মুখ দেখতে পেলেও ওই ২ জনের আড়ালে থাকা মেয়েটির মুখটা আকাশ দেখতে পায় নি। হাসির শব্দটা যেনো আকাশের কানে এখনো বাজছে কিন্তু এই ৩ টি মেয়ের মধ্যে কে এতো সুন্দর করে হাসলো আকাশ সেটাই ভাবছে।

আকাশের বন্ধু অনিক আকাশকে বললো
__কিরে ওই দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ওই মেয়েদের মধ্যে কাউকে ভালো লেগেছে নাকি?

__আরে নাহ কি বলছিস আমি তো অন্য কিছু দেখছিলাম।

আকাশ কফি খাচ্ছে আর আড় চোখে পাশের টেবিলের দিকে তাকাচ্ছে। ওর খুব মন চাইছে জানতে এতো সুন্দর করে কে হাসছিলো। আকাশ ওইদিকেই তাকিয়ে আছে তখন ২ জন মেয়ের মধ্য একজন উঠে কোথায় যেনো গেলো। মেয়েটা সরে যাওয়ার পর সেই আড়ালে থাকা মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখতে পেলো আকাশ।
আকাশ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে, মেয়েটির ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি সামনে থাকা কোকড়ানো চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। কিছু চুল চোখে মুখে পড়তে হাত দিয়ে কানের পেছনে গুজে হাত নাড়িয়ে সামনের মেয়েটির সাথে কথা বলছে। চোখে কাজল নেই অথচ ঘন পাঁপড়ি গুলো দেখে মনে হচ্ছে কাজল টেনে দেওয়া চোখে।
আকাশ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটির চোখের মায়ায় সে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।
হঠাৎ মেয়েটি উঠে দাড়াতেই আকাশ নড়েচড়ে উঠল তবে দৃষ্টি সরালো না। পাশে থাকা মেয়েটি বললো

__প্রিয়ন্তী এ জায়গাটা খুব সুন্দর মাঝে মাঝে আসতে হবে।

তখন আকাশের দেখা মেয়েটি হাসি মুখে কিছু একটা বললো যা আকাশ শুনতে পেলো না।
আকাশের বন্ধুরা ওকে ডাকছে সেদিকে ওর কোনো খেয়াল নেই ও সেই মেয়েটিকে দেখতে ব্যস্ত,তার মুচকি হাসি চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিকে তাকানো আকাশকে মুগ্ধ করে তুলেছে।

মেয়েগুলো বেড়িয়ে যেতে নিলে আকাশ উঠে দাড়িয়ে বললো
__তোরা থাক আমার একটু কাজ আছে আমি আসছি এখন। কাল দেখা হবে।

আকাশ কথাটা বলে তাড়াহুড়ো করে ক্যাফের দরজার সামনে আসতেই অনিক জোরে বলে উঠলো
__আরে আকাশ তোর ফোন আর বাইকের চাবিটা তো নিয়ে যা।

আকাশ ফিরে এসে ফোন আর চাবি হাতে নিয়ে যেতে নিলে পিয়াস(আকাশের বন্ধু) বললো
__কি এমন কাজ তোর এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেনো?

__পরে বলবো এখন সময় নেই।

আকাশ ক্যাফে থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এলো কিন্তু চারিদিকে তাকিয়ে সেই মেয়েটিকে আর দেখতে পেলো না। হতাস হয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো
__কোথায় গেলো মেয়েটা? ধেত তখনি কেনো বের হলাম না আমি। কোথায় খুজবো এই মায়াপরীটাকে? হ্যা মেয়েটি সত্যি একটা মায়াপরী পাগল করা তার হাসি মুগ্ধ করেছে আমাকে। কাজল বিহীন চোখ জোড়া যেনো তার চোখের মায়ায় ফেলে দিয়েছে। ঘন কালো কোকড়ানো চুলগুলো মেয়েটির সৌন্দর্যকে যেনো আরো শতগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আমি যে হারিয়ে ফেললাম সেই মায়াপরীকে,তার দেখা কি পাবো আমি কখনো?
আচ্ছা পাশের মেয়েটি কি নামে ডাকলো ওকে? ধেত মনে পড়ছে না,যাই হোক সে আমার কাছে শুধুই মায়াপরী।

তারপর থেকে আকাশ প্রায়ই সেই ক্যাফেতে যেতো কিন্তু কখনো তার মায়াপরীকে আর দেখেনি। এমনকি রাস্তায় ও কখনো তাকে চোখে পড়েনি। আকাশ আশা ছেড়ে দিয়েছিলো যে সে তার মায়াপরীকে হয়তো কখনো খুজেই পাবে না। সে হয়তো সপ্নের মতো এসে তাকে মুগ্ধ করে হারিয়ে গিয়েছে।
আকাশের দেখা সেই মায়াপরীটা আর কেউ নয় সে প্রিয়ন্তী।
.
🍁
.
রিয়াদ আহমেদ সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছে। তার রোজকার অভ্যাস সকালে নিউজপেপার পড়া। প্রিয়ন্তী চা এনে রিয়াদ আহমেদকে বললো
__বাবা আপনার চা।

রিয়াদ আহমেদ পেপারটা রেখে হাসি মুখে চা নিয়ে বললো
__বউমা তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে নাতো এবাড়িতে??

প্রবলেম আর কি সবই ঠিক আছে, প্রবলেম তো একটাই আপনার ছেলে। প্রিয়ন্তী মনে মনে কথাটা বলে মৃদু হেসে বললো
__না বাবা আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না।

রিয়াদ আহমেদ একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো
__আমি জানি বউমা তোমার কোনো প্রবলেম হবে না। তোমার মামার সঙ্গে কথা বলেছিলে??

__কাল রাতে বলেছিলাম।

আফিয়া প্রিয়ন্তীর পাশে এসে দাড়িয়ে বললো
__কি কথা হচ্ছে শশুর বউমার মাঝে আমি কি জানতে পারি?

__আপু আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে নাকি বাবা সেটাই জিজ্ঞাসা করছিলো।

__ওও আচ্ছা! বাবা আমি আর মা থাকতে ভাবির কোনো প্রবলেম হবে ভেবেছো। ভাবি যদি ভাইয়ার সঙ্গে একা থাকতো তাহলে না হয় প্রবলেমের কথা ভাবা যেতো।

__মানে আকাশ কি বউমাকে কিছু বলেছে?

আফিয়া কিছু বলতে নিলে প্রিয়ন্তী ওর হাত ধরে থামিয়ে বললো
__না বাবা তেমন কিছু নয় আপু তো এমনি বলেছে।

__ওহ আচ্ছা বউমা শোনো তুমি আগামিকাল থেকে আবারো ভার্সিটি যাবে পড়াশুনাটা চালিয়ে যাও।

প্রিয়ন্তী খুশি হয়ে বললো
__আচ্ছা বাবা যাবো।

__বাবা ভাবির ভার্সিটি তো আমাদের বাসা থেকে দূরে হয়ে যায়। তুমি বরং ভাবিকে ওখান থেকে ট্রান্সফার করে আমার ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়ে দাও তাহলে ভাবির ও সুবিধা হবে আর আমারো একজন সঙ্গী হবে।

__হুম তুই তো ভুল কিছু বলিস নি। বউমা আকাশ কোথায়?

__উনি হয়তো রুমে আছে।

__আফিয়া যা তো আকাশকে ডেকে আন। আকাশকেই বলি বউমাকে ওখান থেকে ট্রান্সফার করিয়ে এখানে এডমিশন করিয়ে দিতে।

__না না বাবা তার কোনো প্রয়োজন নেই মাত্র তো ৪৫ মিনিট সময় লাগবে যেতে আমি ওখানেই যেতে পারবো। ট্রান্সফার করানোর দরকার নেই।

__ওখানে যেতে ৪৫ মিনিট আর আফিয়ার ভার্সিটি আমাদের বাসা থেকে ১০ মিনিট লাগে মাত্র। আফিয়া যেমন আমার মেয়ে তুমিও আমার মেয়ে দুজনকে আমি সমান চোখে দেখি। তাছাড়া তুমি রোজ একা এতো দূরে যাবে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। আফিয়া তুই যা আকাশকে ডেকে আন।

আফিয়া প্রিয়ন্তীর কানের কাছে মুখ এনে বললো
__ভাইয়াও কিন্তু আমার ভার্সিটিতেই মাস্টার্সে পড়ছে। তুমি ভর্তি হলে ভালোই হবে।

আফিয়া কথাটি বলে চলে গেলো প্রিয়ন্তী মনে মনে ভাবছে
__আপু তাহলে ইচ্ছে করেই বাবাকে এখানে এডমিশন করিয়ে দিতে বলেছে। যে ছেলে ঘরেই আমাকে বউ বলে মানে না সে কি আর বাইরে মানবে! হয়তো তখন সবার সামনে বলবে আমাকে সে চেনেই না।
.
🍁
.
আফিয়া রুমে ঢুকে বললো

__ভাইয়া বাবা তোকে ডাকছে এখনি নিচে আয়।

আকাশ বেডে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। আফিয়ার কথা হয়তো ওর কানে যায় নি। আফিয়া চলে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে এসে আকাশের সামনে দাড়িয়ে বললো
__ভাইয়া আমি যে কিছু বলেছি শুনেছিস তুই?

আকাশ কিছুটা কেপে উঠে বললো
__তোর কথা পরে শুনবো আগে আমার কথা শোন,তোকে কয়েকমাস আগে একটি…..

__ভাইয়া তোর কথা আমি পরে শুনবো। বাবা তোকে নিচে যেতে বলছে।

__কেনো?

__নিজে গিয়েই শুনে নে না।

আফিয়া চলে যেতে নিলে আকাশ বলে উঠলো
__বোন আমার কথাটা একটু শুনে যা।

__ঠিকআছে বল একটুই বলবি কিন্তু।

__হুম একটুই বলছি। তোকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম না যার নাম দিয়েছিলাম মায়াপরী ওকে আমি পেয়ে গিয়েছি।

আফিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো
__ভাইয়া তোর এখন বউ আছে আর তুই সেই অচেনা অজানা মায়াপরীকে নিয়ে পড়ে আছিস। এমনিতে তো ভাবিকে মেনে নিসনি এখন তোর মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে ভাবি কতোটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছিস?
ভাবির মতো এমন একটা বউ পেয়েছিস এটা তো তোর ভাগ্য।

__আফিয়া আমার পুরো কথাটা তো শোন আগে,আমি যার কথা বলছি সেই…

__শুনবো না তোর কথা গেলাম আমি।

আফিয়া চলে গেলো আকাশ কপালে হাত রেখে বললো
__ধেত এই মেয়েটাও না আমার পুরো কথা না শুনে উল্টো আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।

আকাশের বাবা মা দুজনে বসে কথা বলছে আকাশ এসে বললো
__বাবা তুমি আমাকে ডাকছিলে?

__হ্যা,তোর কি আজ এবং আগামি দুদিনে কোনো কাজ আছে? অবশ্য তোর বিশেষ কোনো কাজ নেই জানি যদিও থাকে তা ক্যান্সেল করবি।

আকাশের মা বললো
__তোমার ছেলের আর কি কাজ থাকবে ওর প্রধান কাজ তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া।

আকাশ কিছু বলতে নিলে ওর বাবা বলে উঠলো
__হুম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াটা কমা আকাশ। শুনলাম কালও অনেক রাতে বাড়িতে ফিরেছিস ভদ্র ঘরের ছেলেমেয়েরা বেশি রাত করে বাড়িতে ফেরে না এটা নিশ্চই তোর অজানা নয়।
যাই হোক আসল কথায় আসি,আমি ভাবছি বউমা পড়াশুনাটা চালিয়ে যাক। কিন্তু এখান থেকে ওর যাতায়াতে সমস্যা হবে। ওকে তোদের ভার্সিটিতে এডমিশন করাতে চাইছি। এখান থেকে কাছেই আর আফিয়ার সাথে বউমা যাওয়া আসা করতে পারবে। আমি চাইছি বউমাকে ওর ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার করে এখানে এডমিশন করানোর সব কিছু তুই করবি। পারবি তো?

আকাশের চোখটা কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিছু না ভেবেই বলে দিলো
__হ্যা বাবা আমি পারবো।

আকাশের মা হা করে তাকালো ছেলের দিকে উনি হয়তো ভাবে নি আকাশ বিনাবাক্যে হ্যা বলে দেবে।

প্রিয়ন্তী পেছনেই দাড়িয়ে ছিলো। আকাশের এভাবে রাজি হওয়াতে অবাক হলো প্রিয়ন্তী। ও ভেবেছিলো আকাশ হয়তো বলবে আমি পারবো না ওই মেয়েটার জন্য কিছু করতে। প্রিয়ন্তী পরক্ষণেই আবার মনে মনে বললো
__ধেত এতো অবাক হওয়ার কি আছে। এই আকাশ আহমেদ যে তার বাবা-মায়ের সামনে জিরো এটা ভুলে যাচ্ছি কেনো!
.
🍁
.

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here