প্রিয় তুমি পর্ব ১

তোমাকে বিয়ে করেছি বলে ভেবো না তুমি বউয়ের অধিকার পাবে আমার থেকে। এ বিয়েতে আমার কোনো মত ছিলো না শুধুমাত্র মা-বাবার কথা রাখতে বিয়ে করেছি। না হলে তোমার মতো একটা মেয়ে এই আকাশ আহমেদের পাশে দাড়ানোর যোগ্যতা রাখে না।
সো বি কেয়ারফুল অধিকার দেখাতে আসবে না কখনো।

বাসর রাতে স্বামীর থেকে এরকম কথা শুনে প্রিয়ন্তী খানিকটা অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলো। কারন ওর ধারনা ছিলো এমনটাই হতে পারে। কিন্তু যোগ্যতা এই কথাটা খুব গায়ে লাগলো ওর। হতে পারে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে কিন্তু রুপে গুনে কোনে দিক থেকে তো কমতি নেই। আচ্ছা শুধু কি টাকা পয়সা দিয়ে যোগ্যতা যাচাই করা হয়??প্রিয়ন্তী ঘোমটার আড়াল থেকে আড় চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো

__নাহ ভেঙে পড়লে চলবে না,নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। আজ অন্তত কিছু বলবো না। আমাকে যোগ্যতা নিয়ে কথা শুনানো তাইনা! কি ভাবে কি নিজেকে হিরো! হুহ। অবশ্য হিরোর থেকে কম কিছু নয় দেখতে তো মাশআল্লাহ!!

প্রিয়ন্তী বেড থেকে নেমে কোনো কথা না বলে লাগেজ থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আকাশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো প্রিয়ন্তীকে এতোটা শান্ত দেখে। ও ভেবেছিলো হয়তো কোনো রিয়েক্ট করবে।

__কি হলো এটা!! মেয়েটি কি কিছুই শোনে নি! কিন্তু আমি তো জোরেই বলছি। আমি এতো কিছু বললাম অথচ একটা শব্দও বের করলো না মুখ থেকে। বাই দা ওয়ে,মেয়েটি বোবা নয় তো?? ধুর যা খুশি হোক তাতে আমার কি। বরং ভালোই হলো আমাকে আর কিছু বলতে হলো না।

প্রিয়ন্তী শাড়ি চেঞ্জ করে কালো রঙের একটা ড্রেস পড়ে নিলো। রাতে শাড়ি পড়ে ঘুমাতে অসুবিধা হবে তাই।
আকাশ বেডে শুয়ে ফোনে কিছু একটা করছে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সেদিকে না তাকিয়ে বললো

__তোমাকে আমি যা যা বলেছি এসব মা-বাবা যেনো না জানতে পারে। যদি জানে তাহলে…..

__তাহলে খুব খারাপ হবে তাইতো??

প্রিয়ন্তীর মুখে কথা শুনে আকাশ অবাক হয়ে তাকালো। কিন্তু সে অবাক চাহনি প্রিয়ন্তি দেখলো না। ও আকাশের থেকে উল্টো দিকে ঘুরে গায়ে ওড়নাটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিলো।
আকাশ স্বাভাবিক হয়ে বললো

__যাক কথা বলতে পারো তাহলে আমি তো ভেবেছিলাম….যাই হোক ঘরের কথা যেনো বাইরে না যায়।

প্রিয়ন্তী মুখ বাকিয়ে মনে মনে বললো
__এই ছেলে আমার সামনে যতোই হিরোগিরি দেখাক না কেনো নিজের বাবা-মায়ের কাছে একদম জিরো,এটা বেশ বুঝতে পারছি আমি।

প্রিয়ন্তী বেডের অন্য পাশে গিয়ে বেডে বসতে নিলে আকাশ,ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো
__আমি কারো সাথে বেড শেয়ার করে শুতে পারিনা।তুমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ো। তুমি নিজেকে আমার বউ ভাবতে পারো বাট আমি তা মানি না।

প্রিয়ন্তীর এবার রাগ উঠে গেলো ভেবেছিলো আজ অন্তত কিছু বলবে না কিন্তু এখন দেখছে কথা না বললে আকাশ আরো সুযোগ পেয়ে যাবে।

__এই যে মিস্টার,আমি কি আপনাকে বাধ্য করেছি বিয়ে করতে? করলেন কেনো বিয়ে? আমার এতো ইচ্ছে ছিলো না এমন বড় বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করতে। এরা তো শুধু অহংকার করতে জানে মন বলতে কিছুই নেই। আপনি যেমন আপনার বাবা-মায়ের কথা রাখতে বিয়ে করেছেন আমিও তেমন আমার মামার কথা রাখতে বিয়েতে রাজি হয়েছি।
ভেবেছিলাম আজ কোনো কথা বলবো না কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করলেন বলতে। আর শুনুন আমি এই বেডেই ঘুমাবো আপনার প্রবলেম হলে আপনি সোফায় যান। গুড নাইট।

আকাশ তো আশ্চর্য হয়ে গেছে। এই মেয়ে এতো কথা বলতে পারে ওর ধারনাই ছিলো না। ধারনা থাকবেই বা কি করে প্রথমে তো টু শব্দ ও করেনি।
প্রিয়ন্তী অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে আছে। আকাশ একবার তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বেড থেকে নেমে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। রাগে গজ গজ করতে করতে বললো

__মেয়েটিকে যতোটা সহজ সরল ভেবেছিলাম ততোটাও নয়। কিভাবে কথা শুনিয়ে দিলো আমাকে এমনকি আমার বেডটাও দখল করে নিলো। ইচ্ছে তো করছে এই মেয়েকে এ রুম থেকেই বের করে দেই। মা-বাবা কি দেখেছে এই মেয়ের মাঝে আল্লাহ জানে। ওকে তো আমি দূর করবোই আমার লাইফ থেকে। এমন নিচু ঘরের একটা মেয়ে আমার বউ হয়ে থাকতে পারে না।

প্রিয়ন্তী ঘুরে দেখলো আকাশ সোফায় শুয়ে আছে। প্রিয়ন্তীর চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো,শব্দহীন কাঁদছে। মনে মনে বলতে লাগলো

__মা-বাবা তোমরা তো ওপর থেকে সব দেখছো। জানো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমরা চলে যাবার পর মামা অতি আদরের সাথে আমাকে বড় করেছে। কিন্তু মামি আমাকে সহ্য করতে পারতো না মামার অবর্তমানে আমাকে কথা শোনাতো। মামা বুঝতে পারতো আমার কষ্টটা। আমার একটু সুখের জন্য মামা আমাকে আকাশের সাথে বিয়ে দিলো। কিন্তু আমার ভাগ্যটা যে খারাপ আকাশ আমাকে নিজের ইচ্ছে বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে। মা বাবা তোমরা বলোনা আমি কি করবো এখন? আমি কি পারবো আকাশকে মানিয়ে নিতে?
.
🍁
.
প্রিয়ন্তীর যখন ৫ বছর বয়স তখন ওর বাবা-মা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা য়ায়। তারপর থেকেই প্রিয়ন্তী ওর মামা বাড়িতে থাকতো। প্রিয়ন্তীর মামা ওকে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু ওর মামি ওকে দেখতে পারতো না খোটা দিয়ে কথা বলতো। প্রিয়ন্তী ভেঙে পড়েনি নিজেকে গড়ে তুলতে হলে এমন হাজারো কথা শুনতে হয় এটা ভেবেই কখনো মামির সাথে খারাপ ব্যাবহার করে নি।
প্রিয়ন্তী অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে ওর এতোদূর আসার পেছনে একমাত্র অবদার ওর মামার।
প্রিয়ন্তীর গায়ের রং উজ্জল শ্যাম বর্ণের। চুল গুলো কোকড়ানো হলেও কোমড় ছাড়িয়ে যায়। প্রিয়ন্তীর মুখের গড়নটা খুবই মায়াবী। আর সেই মায়াতেই আটকে গিয়েছে আকাশের বাবা-মা।
প্রিয়ন্তীর মামা আকাশের বাবার অফিসে চাকরি করে। প্রিয়ন্তী প্রায় যেতো মামার অফিসে।রিয়াদ আহমেদ (আকাশের বাবা) প্রিয়ন্তীকে দেখে পছন্দ করে ওর ব্যবহার চলাফেলা সবকিছু দেখে মুগ্ধ হয় সে। আকাশের বাবা আকাশের মাকেও প্রিয়ন্তীর ব্যাপারে বলে। আনিলা আহমেদ(আকাশের মা) সেও প্রিয়ন্তীকে দেখে তারও ভালো লেগে যায়।
আকাশের বাবা-মা প্রিয়ন্তীকে ছেলের বউ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রিয়ন্তীর মামাকে প্রস্তাব জানালে সে অমত করেনি প্রিয়ন্তীর ভালোর কথা ভেবে রাজি হয়ে য়ায়।
আকাশ মাস্টার্সে পড়ছে,দেখতে স্মার্ট ফরসা গায়ের রং। আকাশ নিজের মন মতো চলতেই পছন্দ করে। বন্ধুদের সাথে বেশির ভাগ সময় সে বাইরে কাটায় এতে ওর ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। তাই ওর বাবা-মা ভাবে ওকে বিয়ে করালে হয়তো নিজেকে পাল্টাতে পারবে। আকাশ এখনি বিয়ে করতে চায়নি ওর বাবা-মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে। বিয়ের আগে প্রিয়ন্তীকে দেখেওনি।
প্রিয়ন্তী ও এ বিয়ে করতে চায়নি। ও জানে বড়লোকের ছেলেরা অহংকারী হয় তারা সব সময় নিজের ইগোকে প্রাধান্য দেয়। প্রিয়ন্তী মানা করে দিয়েছিলো এ বিয়ে ও করবে না শুধুমাত্র মাত্র মামার মান রাখতে রাজি হতে হয়েছে। কারন ওর মামা আকাশের বাবা-মাকে কথা দিয়েছিলো। প্রিয়ন্তীকে ছোট থেকে ওর মামা অনেক ভালোবেসে বড় করেছে তাই মামাকে সে কষ্ট দিতে চায়না। আকাশকে বিয়ে করতে রাজি হয়। অবশেষে পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়েটা হয় আত্নীয় স্বজন রাও জানে না। আকাশের পড়াশুনা শেষ হলে জানাবে সবাইকে।
.
🍁
.
খুব সকালে প্রিয়ন্তীর ঘুম ভেঙে যায়। প্রিয়ন্তী উঠে ফ্রেস হয়ে শাড়ি পড়ে নিলো,সে এবাড়ির বউ বিয়ের পর দিনে জামা পড়াটা মটেও ভালো দেখায় না।প্রিয়ন্তী নামাজ আদায় করে ঘড়িতে টাইম দেখলো ০৫:৫৫ বাজে। প্রিয়ন্তীর রোজকার অভ্যাস ভোরে উঠে নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করা। কিন্তু এ রুমে আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও কোরআন দেখতে পাচ্ছে না। তাই ভাবলো শাশুড়ির থেকে জেনে নেবে কোরআন কোথায় রাখা আছে।
আকাশ সোফায় জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে,প্রিয়ন্তী বেড থেকে চাদরটা এনে আকাশের গায়ে মেলে দিলো। প্রিয়ন্তী আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো

__ছেলেরা ঘুমালে এতো সুন্দর দেখায় জানা ছিলো না। কি সুন্দর লাগছে উনাকে। আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে। এই মানুষটা আমার স্বামী কিন্তু উনি তো আমাকে বউ বলে মানতে নারাজ। উনি কি কখনোই মেনে নেবে না আমাকে? মানুষের জীবন সত্যি অদ্ভুত অনেক বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। আমাকে শক্ত হতে হবে আকাশের সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না। আকাশকে বুঝিয়ে দিতে হবে যোগ্যতা শুধুৃমাত্র সমানে সমানে হয়না। মানুষের সঠিক ব্যবহারই হলো আসল যোগ্যতা।

প্রিয়ন্তী কিচেনে এসে নিজে হাতে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে সব টেবিলে নিয়ে রাখলো। বাড়ির কাজের মেয়ে ওকে মানা করেছিলো কিন্তু ও শোনে নি শিউলিকে(কাজের মেয়ে) সাথে থেকে সাহায্য করতে বলে নিজেই করেছে।
আকাশের মা নিচে এসে দেখলো প্রিয়ন্তী ডাইনিং এ সব এনে রাখছে। উনি এগিয়ে গিয়ে বললো

__প্রিয়ন্তী তুমি এতো সকালে উঠেছো কেনো? আর এসব তুমি করছো কেনো?

__আসলে আন্টি আমার সকালে উঠার অভ্যাস। তাছাড়া আমার এসব করতে প্রবলেম হচ্ছে না। শিউলি আমাকে মানা করেছিলো আমি নিজে থেকেই করেছি।

__হুম বুঝলাম তুমি আমাকে আন্টি কেনো ডাকছো মা বলে ডাকবে কেমন।

__আচ্ছা। তাহলে আপনি আমাকে তুমি নয় তুই করে বলবেন।

__ঠিকআছে বলবো তুই করে তাহলে যে তোকেও এই মাকে আপন ভেবে তুমি বলতে হবে।

প্রিয়ন্তীর চোখ ছলছল করে উঠলো,শাশুড়ি যে ওকে একদিনে এতো আপন করে নেবে ভাবে নি।

__একিরে তোর চোখে পানি কেনো!

__কই নাতো। চোখের পানি মুছে বললো।

আকাশের মা প্রিয়ন্তীর গালে হাত রেখে বললো
__বুঝতে পেরেছি আমি। শোন আজ থেকে আমি তোর মা কখনো শাশুড়ি ভাববি না। নিজের মা ভেবে সবকিছু শেয়ার করবি আমার সাথে। তুই সত্যি খুব লক্ষি মেয়ে আমার মেয়ে হয়ে থাকবি তুই।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে আকাশ পরোটা খেতে খেতে বললো
__মা আজকের ব্রেকফাস্ট কে বানিয়েছে? স্বাদটা অন্যরকম।

__কেনো ভালো হয়নি?

__ভালো হয়েছে বলেই জিজ্ঞাসা করলাম।

আকাশের মা হেসে বললো
__প্রিয়ন্তী করেছে।

আকাশ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
__প্রিয়ন্তী কে??

আকাশের মা বাবা বোন সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আকাশের বোন আফিয়া বললো
__সেকি ভাইয়া তুই নিজের বউয়ের নামটা জানিস না এখনো!!

#চলবে……..

#প্রিয়_তুমি❤
#মেঘা_আফরোজ

#পর্ব- ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here