গহন রাতে শ্রাবণধারা পর্ব ১৪(শেষ)

#গহন_রাতে_শ্রাবণধারা
লেখাঃ সুমাইয়া আক্তার মনি
অন্তিম পর্ব

দিনগুলো কেটে যাচ্ছে খুব দ্রুতই। সময় কখনো ধরা দেয় না। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হয়। নয়তো সবকিছু ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে যায়। রোহানের বেতন বেড়েছে। বেতনের টাকা হাতে পাওয়ার পরেই রাহা’র হাতে তুলে দেয় সে। রাহা’র একটা কথাকেই বরাবরের মতোই প্রাধান্য দেয় রোহান। এই ছোট সংসার বড় করার দায়িত্ব তাঁর। এই কথাটিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে রোহান। একটা সংসার সুন্দরভাবে গড়ে তোলার সবথেকে বড় কারণ হলো দুজনের প্রতি দুজনের বিশ্বাস থাকা। রাহা’র প্রতি যেমন রোহানের বিশ্বাস থাকে, রোহানের প্রতিও রাহা’র আছে।
দু’জনের এই এক রুমের বাসাটিতেই পোষায়, তাই রোহান বলা সত্ত্বেও রাহা বারবার নিষেধ করে বড় বাসায় এখনই যাওয়ায় প্রয়োজন হয়না।
রাহা’র কথামতো রোহানও আর কিছু বলেনা।
গ্রাম থেকে আসার পরে মাহতাব খন্দকারের সাথে প্রতিদিনই রাহা কথা বলে। তাসলিমা বেগমের সাথে একবারও কথা বলেনি রাহা।

দেখতে দেখতে দুই বছরের মতো সময় কেটে গেল। রাহা অসুস্থ। সাতদিনের মধ্যে ডেলিভারির ডেট। রাহা’র জীবনের ঘটে যাওয়া সবকিছুর মধ্যেই কম-বেশি পাশের রুমের ভাবী জানে। তাঁর জীবনের কাহিনীও রাহা জানে। অনেকটা ভালো বন্ধুত্ব হয় দুজনের। রাহা’র সমস্ত দেখাশোনার দায়িত্ব সে নেয়। রোহানকে চিন্তা করতে বারণ করে। রাহা’র অসুস্থতার খবর গ্রামের দুই বাড়িতেই জানে সবাই। তাসলিমা বেগম মুখ ফুটে বলেন, এই অবস্থায় রাহাকে নিয়ে একা থাকার দরকার নেই। গ্রামে সবাই দেখাশোনা করবে। তখন রোহান বলে, রাহা যাবেনা। তোমাদের দয়া দেখতে। রোহানের কথায় চুপ হয়ে যায় তাসলিমা বেগম।
রাহা’র সৎ মা বারবার বলেন ওদের বাড়িতে এই ঝামেলা নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। তাঁর কথাশুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে রাহা বলে, যেতেও চাইনা আমি। খাওয়া-পরার তো অভাব নেই আমার, না ঘরের এক কোণে পরে আছি! তাই সবার থেকে দূরেই ভাল আছি। না কারো দয়া দেখতে চাই, না কাউকে দয়া দেখাতে চাই। রাহার কথাশুনে ওর মা বলেন,
এই অবস্থায়ও মুখে মুখে কথা! এই অবস্থায় কয়জন বাঁচে, কয়জন মরে তার ঠিক নাই।
তাঁর কথাশুনে রাহা বলে,
মরলে তো আপদ বিদায় হল। এত চিন্তা করবানা। ভাগ্যে যা আছে তাই হয়ে যাচ্ছে, আর যা ছিলনা তা কখনোই হবেনা।

রোহান ছুটি নিয়েছে রাহা’র জন্য। এদিকে লেবার পেইনও উঠে গেছে রাহা’র। হন্তদন্ত হয়ে ক্লিনিকে ছুটে চললো। গ্রামে খবর পৌঁছে দেয়া হয়, এক ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে রাহা। মাহতাব খন্দকারের খুশি আর কে দেখে। তাসলিমা বেগমও খুশি হন তাঁর ঘরের উত্তরাধিকারী, তাও নাতি!
এক মুহুর্ত দেখার জন্য রাহা’র বাবার মনও ছটফট করে। সে নানা হয়েছে। কিন্তু এই বিছানায় থাকা অবস্থায় কিভাবে দেখবে নাতিকে! মাহতাব খন্দকার সেদিনই ঢাকার উদ্দেশ্যে গেলেন, তাসলিমা বেগম যেতে চেয়েছিলেন মাহতাব খন্দকার নেয়নি সাথে।
ছয়মাস পরেই তিশাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে ঘরে তিশা একা থাকবে যদি তাসলিমা বেগমও ঢাকা যায়। তাছাড়া তিশাকে রাহা’র বাসার আশেপাশেও নিতে চাইছেনা মাহতাব খন্দকার। তাঁর কথাশুনে তাসলিমা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। নিজেদের কর্মফলের জন্যই নিজের নাতিকেও দেখতে পারছেন না।

ছেলের মুখ দেখার পরে এতদিনের সমস্ত কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে গেল রাহা’র। হুবহু রোহানের কপি। রোহানের খুশি আর কে দেখে! নিজের একটা আলাদা জগৎ খুঁজে পেয়েছে নতুনভাবে।

স্রোতের মতো সময়গুলো চলে যাচ্ছে। রাহিনের বয়স চারমাস। রাহা আর রোহানের ছেলের নাম রাহিন। এই চারমাসের ছেলেকে নিয়ে প্রায় আড়াই বছর পরে গ্রামের বাড়িতে পা রাখছে রাহা। পুরনো শৈশবের সাথে পুরনো স্মৃতিগুলোও কড়া নাড়ছে রাহাকে।
রাহা’র বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। নাতিকে দেখার পরে কোলে নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি রাহা’র বাবার। রাহিনও একমনে নানাকে দেখছে আর খিলখিল করে শব্দ করে হাসছে। রাহা’র বাবার শেষ সময়ে চোখদুটো ভিজে আসে। নিজের মেয়েকে অবশেষে সুখী দেখতে পেয়ে সুখের কান্না করছে সে। এই কান্না করতে করতে একসময়ে পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেল। রাহা’র মায়ের চোখ-মুখে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। রেগে কথা বলা, কাউকে কথা শোনানো ভুলেই গেছে সে। তবুও নাতিকে কোলে নিয়ে চোখমুখ গম্ভীর করে বসে আছে।

রোহানের বাড়ি থেকেও অনেকে আসলো। একসময়ে রাহা’র সাথে চোখাচোখি হয় তাসলিমা বেগমের। সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে দেয় রাহা। মাহতাব খন্দকার সামনের বারান্দায় লাশের কাছে। মহিলারা সবাই ভেতরে, সেখানেই তাসলিমা বেগমের সাথে দেখা হয় রাহার। আগের থেকে মোটা হয়েছে রাহা, চেহারায় লাবণ্যতার ছাপ স্পষ্ট। কোনো রাজরাণীর থেকে কম মনে হয়না। তাসলিমা বেগম অর্ধেক কথা মুখে রেখে বললেন, দাদুভাই কার কাছে? রাহাও অস্পষ্টভাবে বললো, মায়ের কাছে। তাসলিমা বেগম আর কিছু না বলে রাহিনকে খুঁজে কোলে নিলেন। মুখের দিকে তাকিয়ে দাদিকে দেখছে রাহিন। রোহানের ছোটবেলার মতো মনে হচ্ছে তাসলিমা বেগমের কাছে। মনে হয় রোহানকেই কোলে নিয়ে বসেছেন।

দাফনকাজ সম্পন্ন হয়। চোখমুখ শক্ত করে এক কোণে বসে আছে রাহা। তাঁর পাশেই রোহান বসে আছে।
মাহতাব খন্দকার যাওয়ার সময়ে রাহাকে বলে গেলেন তাঁদের বাড়িতে যেন নাতিকে নিয়ে যায়। শ্বশুরের কথা শুনে মাথা নাড়ায় রাহা।

______

এই ক’বছরে অনেককিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। মন-মানসিকতাও এক থাকেনা মানুষের সবসময়। আগের রাহা আর এখনের রাহা’র মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আগের রাহা সবকিছু চুপচাপ সহ্য করতো, এখনের রাহা স্পষ্ট জবাব দিতে শিখেছে। এমনকি যেখানে কোনো মর্যাদা নেই, তার থেকে দশ হাত দূরে থাকে রাহা।
খন্দকার বাড়িতে পা রাখতে নিজের মধ্যে কেমন অপমানবোধ করছে রাহা। কতকিছু ঘটে যাওয়ার পরে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছিল।
উঠোনে পা রাখার সাথে সাথে বাড়ির সবাই ঝাপটে ধরে রাহার চারিপাশ। কেউ রাহিনকে নিচ্ছে, আবার কেউ রাহার সাথে কথা বলছে।
আজকে বিকেলেই ঢাকা চলে যাবে। রোহান বলেছিল কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে থাকবে। কিন্তু রাহা মানতে নারাজ, সে ঢাকা যাবে।
দুপুরে কোনোরকমের খেয়েদেয়েই আটঘাট বেঁধে বসলো রাহা। সে ঢাকা যাবেই যাবে। মাহতাব খন্দকারও বলছেন অন্ততপক্ষে ৩-৪ দিন যেন এখানে থাকে, কিন্তু রাহা’র এক কথা। এখানে থাকবে না, কোনোভাবেই না।
এমনকি রাহিনকেও কোল থেকে ছাড়েনি, রোহান আর মাহতাব খন্দকার ছাড়া কারো কাছেই রাহিনকে দিচ্ছেনা।

তাসলিমা বেগম রাহাকে বললেন,
ক’টাদিন যেন থাকে। তখন শক্তভাবে রাহার জবাব,
কেন! আম্মা। এখানে থাকার পরে আমার ছেলেকে শিখাবেন আমার চরিত্র সম্পর্কে! না-কি বাবার বাড়ি থেকে কিছুই আনতে পারিনি এসবও বলবেন ছেলেকে?
অবশ্য এসব জানা দরকার ওর। ওর মায়ের জীবনে কত সুন্দর সুন্দর ঘটনা ঘটেছে। সম্মান নিয়ে টানাপোড়ায় পরতে হয়েছিল। এমনকি বাবার বাড়ি থেকে কিছু আনতে পারেনি তারজন্যও কথা শুনতে হইছে দিনের পর দিন।
কিন্তু ধন্যবাদও দিতে হয় আপনাদের, আপনারা এতকিছু না করলে হয়তো আজ এতদূর পর্যন্ত আসতেই পারতাম না।
বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতাম না।
তাছাড়া ভুলেও এমনকোনো চিন্তা করবেন না। এখন শাশুড়ির কথা বউ শুনছে না। তাই আমার ছেলের বউও এমন করবে আমার সাথে। সেই সুযোগই রাখবো না আমি।
আমার ছেলেকে সম্পুর্নভাবে ওর বাবা আর দাদুর মতো তৈরি করবো। তাছাড়া নিজে সবসময় মনে রাখবো, আমার থেকে যেন আমার ছেলে আর ছেলেবউ, নাতিনাতনি কখনো দূরে সরে না যায়। সেভাবে কোনো আচরণই করবো না। নিজের ছেলে বউয়ের মা হয়ে থাকলে এমনকিছু হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। যেরকমটা আপনার সাথে হচ্ছে অথবা প্রথম থেকে আপনি করে এসেছেন।
রাহা’র কথাশুনে তাসলিমা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। কোনো কথা বলার নেই তাঁর।

শেষবারের মতো রাহিনকে কোলে নিয়ে মনে হয়েছিল, নিজের আচরণগুলোকে পরিবর্তন করতে পারলে আজ এভাবে ছন্নছাড়া থাকতে হতো না। সারাক্ষণই সাথে সাথে রাখতে পারতো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাছের আড়াল দিয়ে উঁকি দিয়ে রোহান-রাহার পথের দিকে তাকিয়ে আছে তাসলিমা বেগম। যতক্ষণ পর্যন্ত ওদেরকে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণই তাকিয়ে ছিল সে। মাহতাব খন্দকার বাজার পর্যন্ত এসে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন। গাড়ি না ছাড়া অব্দি নাতিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।

______

এই যে রাহা ঔষধ! এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আসাটা কি ঠিক হলো? আর ক’দিন থাকা যেতো না বাড়িতে?

রোহানের কথাশুনে আঁড়চোখে তাকিয়ে আবারো জানালা দিয়ে বাইরের জগতে পাড়ি দিল রাহা। রোহান থাইগ্লাসের জানালা চাপিয়ে রাহা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
আজকাল কি রাহা ঔষধের প্রভাব বেশি বেড়ে যাচ্ছে। রোহানের কথাশুনে রাহা চোখমুখ খিঁচিয়ে রোহানের দিকে তাকালো। রোহান ঢোক গিলে রাহা’র দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো,
উহু! এভাবে তাকালে লাভ নেই, রাহা ঔষধ। আমি ভয় পাইনা। হুহ!
এই ঔষধের প্রভাব যতমাত্রাই থাকুক না কেন! আমি সেড়ে উঠতে পারি। বুঝলা বউ!

রোহানের কথাশুনে রাহা বললো, বাবু ঘুমিয়েছে মাত্র। একদম কথা বলবে না।

উহু! বউউউউউউ। আমারও ঘুম আসছেনা। একটু ঔষধ দেয়া যাবে?

আবারো রোহানের কথাশুনে কপাল কুঁচকে তাকালো রাহা। রোহান মুখে হাত দিয়ে রাহিনের কাছে শুয়ে বললো,
দেখ বাবা! তোর মা কতটা পাষাণ হয়ে গেছে। যে কিনা আগে বাড়ি থেকে আসার সময়ে সারাক্ষণ কান্না করে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলতো। আজ কতটা অত্যাচার করছে সে।

রোহানের কথাশুনে রাহা হেসে বললো, এখন তো তুমিই চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলছো রোহান।

রোহান বসে মুখ ফুলিয়ে বললো, তো নালিশ করো ছেলেকে।

রাহা রোহানের কাছে এগিয়ে যেয়ে বললো, এতটাও পাষাণ হইনি এখনো। যে কারণে-অকারণে নালিশ করতে হবে। কথাটি বলেই নিজেই রোহানের ওষ্ঠ এক করে নিলো।
রোহান! আমি বলেছিলাম, আমার উপরে যেন কারো কোনো অভিযোগ না থাকে। না থাকবে স্বামীর, না ছেলেমেয়ের, না থাকবে অন্যকারো কোনো অভিযোগ। গহন রাতে আগে কান্না করেছি, ছোট থেকেই এই কান্নাগুলো আমার সঙ্গী। শ্রাবণের বৃষ্টির মতো প্রতিনিয়তই এই দুঃখগুলোর বৃদ্ধি পেতেই চলেছিল। যদি না একটা রোহানের দেখা মিলতো কখনোই এই শ্রাবণধারাগুলোর শেষ ছিল না। গহন রাতে শ্রাবণধারা প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকতো।
কিন্তু এই একটা রোহানের জন্য সবকিছু ভুলেই গিয়েছি আমি। প্রতিটি দিনেই সুখের ধারা বহন করতে হয় এখন।

রাহা’র কথাশুনে ওর কপালে ঠোঁট স্পর্শ করে অন্যদুনিয়ায় পাড়ি দিলো রোহান।

______

তিশার বিয়ে হয়েছে, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে। তাও বাড়ির আশেপাশে থেকেও বিয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না। সবাইতো ওর কুকর্মের ফল জানে। বড় খালার বাড়িতে থেকে বিয়ের ঝামেলা ঘরোয়াভাবেই শেষ করে। জামাই গার্মেন্টসে চাকরি করে। রাজী না হওয়ারও উপায় নেই তিশার। নিজের কুকর্মের ফল তো ভোগ করতে হবেই।

মাসখানেক হলো তাসলিমা বেগম বিছানায় পরে আছেন। মাহতাব খন্দকার যতটুকু পারেন দেখাশোনা করেন। তাছাড়া রোহান একজন মহিলা রেখে দিয়েছে তাসলিমা বেগমের দেখাশোনা করার জন্য। প্রথম কয়েকদিন তিশা আসছিল, কিন্তু বিছানাপ্রাপ্ত রোগীর দেখাশোনা করা এতটা মুখের কথা না। তাই তিশাও কেটে পরেছে। তাসলিমা বেগম শুয়ে শুয়ে চোখের পানি ফেলছেন। যার জন্য এতকিছু করলো জীবনে, সেই আজকে এভাবে অবহেলা করে চলে গেল। রোহান যদি মানুষ রেখে না দিতো তাহলে কি যে হতো ধারণা করতে পারছেন না তাসলিমা বেগম।
এমনকি রাতে শুয়ে শুয়ে চোখের পানিও ঝড়াচ্ছেন তিনি। এই দুনিয়ায় কেউ কারো নয়, প্রয়োজন শেষ হলেই কেউ কাউকে চেনেনা। তিশাই প্রমাণ।
এত তেজ, এত রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল তাসলিমা বেগমের। নিজের পাপের জন্য কাঁদে। এই কান্নার কারণতো তিনি নিজেই। নিজের কর্মের ফল নিজেই ভোগ করে। রাহা’র সাথে এতকিছু না করলে হয়তো এখন রাহাই দেখাশোনার দায়িত্ব নিতো। এভাবে অবহেলায় দিন কাটাতে হতো না।

মাহতাব খন্দকার পাশে এসে বসা মাত্রই তাসলিমা বেগম রোহানের সাথে কথা বলতে চাইলেন।
রোহানের সাথে কথা বলার পরে নাতির সাথে কথা বললেন তাসলিমা বেগম। সবশেষে রাহা’কে চাইলেন, রাহাও কথা বললো। তাসলিমা বেগম প্রথমেই কেঁদে দিলেন, নিজেই ক্ষমা চাইলেন। গ্রামে আসতে বললো ওদেরকে, শেষ দেখা যেন দেখতে পারে।

চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে উঠা মাত্রই ভেতরটা হুহু করছে রোহানের। মায়ের পাশে যেয়ে বসলো রোহান। হাড্ডিসার তাসলিমা বেগম বিছানায় শুয়ে আছেন। হাত-পা চলাচল করা বন্ধ করে দিয়েছে, কোনোভাবে বেঁচে আছেন তিনি। তাও কারো কথায় সাড়াশব্দ নেই তাঁর। গতকাল রাত থেকেই এমন অবস্থা। অনেক চেষ্টা করে রাহিনকে তাসলিমা বেগমের পাশে বসাতে চাইলো রোহান কিন্তু রাহিন নামছেই না কোল থেকে। যতবার জোর করছে ততবারই চেঁচিয়ে উঠছে রাহিন। আশেপাশে প্রায় সবাই তাসলিমা বেগমের কাছে আছে। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে।
রাহা যেয়ে তাসলিমা বেগমের মাথার কাছে বসে, তওবা করাচ্ছে। কয়েকজন কুরআন তেলওয়াত করে। একসময়ে পৃথিবীর মায়া-মমতা ছেড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাসলিমা বেগম। রাহা’র হাতেই ইহকালের শেষ পানি পান করেন।
ইহকালের শেষ মুহুর্তটি সেই মা মরা মেয়েটির কোলের কাছে মাথা রেখেই তিনি চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে যান।

সমাপ্ত

অন্যকে অবহেলা করতে করতে কখন যে নিজেই অবহেলার স্বীকার হয়ে যায় বুঝতে পারেনা মানুষ। এমনকি আলো-আঁধারের গল্পে আঁধারের জন্যই আলোর এত গুরুত্ব হয়। তাসলিমা বেগম, তিশা, তুহিন ওরা না থাকলে হয়তো আলোর খোঁজ এত সহজে রাহা’র মিলতো না।
সবশেষে সবার মতামত জানাবেন। অন্ততপক্ষে এক লাইনের মন্তব্য হলেও লিখবেন। সাইলেন্ট রিডার্সদের থেকেও আশা করছি।
ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here