#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১২
আরোহীর আড়াল থেকে সরে গিয়েও রক্ষে হয়নি। সায়না দৌড়ে গিয়ে আরোহীকে টেনে নিয়ে আসে। শুভ্রর নজর যেনো সেদিকেই আটকে গেছে। আজ বহুদিন পর তার প্রিয়তমাকে দেখছে সে। দুজনেই দুজনার দিকে অপলক চেয়ে আছে। বহু তৃষ্ণা তাদের দুই জোড়া চোখের দৃষ্টিতে।
আরোহীর হঠাৎ করে কেনো জানি ভয় করতে শুরু করলো। হালকা শীতল পরিবেশেও গায়ে উতপ্ত নহরের বিন্দু পরিলক্ষিত। উপস্থিত বাচ্চা দুটো ছাড়া বয়োজ্যেষ্ঠ দুজনেরো মনে কিছুটা ব্যাকুলতা আসছে। আর শুভ্র! সে তো এখনো অপলকে নিজের রুহিকে নজর বন্ধি করে রেখেছে। তৎক্ষণাৎ সিনা এসে শুভ্রর হাতে আলতো ভাবে হাত রেখে বলে,
–কি হয়েছে আঙ্কেল? তুমি আন্টির দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
ধ্যান ভাঙে শুভ্রর। একবার সিনার দিকে তাকিয়ে আবার আরোহীর দিকে তাকায়। এবার নজর যায় স্ফিত পেটের দিকে। সাড়ে পাঁচ মাসের পেট অনেকটা ফুলে আছে। আরোহী খানিকটা গুলোমুলো হয়েছে। শুভ্র বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে আরোহীর কাছে যায়। ওদের মাঝে দূরত্ব এখন অনেকটা কম। শুভ্র ভাবশূন্য ভাবে বলে,
–ছেড়ে আসার আগে একবারের জন্যও কি কষ্ট হয়নি? একবারের জন্য কি বিশ্বাস করতে পারলে না! তুমি তো আমাকে আমারও আগের থেকে ভালোবাসো। তারপরেও মিথ্যা কিছু দেখে আমাকে অবিশ্বাস করে চলে এলে! প্রেগনেন্সির খবরটাও আমাকে একমাস জানাওনি। কিভাবে পারলে, আমার সন্তানের আগমনের কথা আমারি কাছ থেকে লুকিয়ে যেতে? তোমার যদি আমাকে নিয়ে কোনো খারাপ ধারনা হয়ে থাকে তো একবার বলতে পারতে। আমি সব ক্লিয়ার করে দিতাম।
আরোহী চুপ করে আছে। চোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা বইছে। নিশ্চুপতার সাথে নোনাজলের সাক্ষী। শুভ্র আর কিছু বলেও না আর শুনেও না। দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। পেছোন থেকে ডাকার শব্দ পেলেও পেছোন মুড়ে দেখলো না।
শুভ্র চলে যাবার পর আরোহী দরজার চৌকাঠ ধরে বসে পরে। কাঁদতে থাকে সে। আরোহী জানে শুভ্র খুব কষ্ট পেয়েছে তবে এখানে আসা ও লুকিয়ে থাকা সব করতে সে বাধ্য ছিল। প্রেগনেন্সির খবরটা জানায়নি যদি জেসিকারা তার বেবির কোনো ক্ষতি করে দেয় এইজন্য।
শুভ্র নিজের রুমে যেয়ে মাথা চেপে বিছানায় বসে আছে।আজ তার মন হালকা হয়েছে কিন্তু অভিমান ঘিরে আছে মন প্রান্তর জুড়ে। কিছু প্রিয় অভিমান ভালোবাসাকে আরো মজবুত করে। এই অভিমান খনিকের জন্য অনন্তকালের নয়।
________সময়ের পাতা থেকে ঝরে যায় আরো কয়েকটা পাতা। আরোহীর ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। শুভ্র আরোহীর খেয়াল ঠিকই রাখে তবে কথা বলে না। সেদিনের পরেরদিন ডাক্তার ফিলিপ শুভ্রকে সব বলেছে। এটাও বলেছে যে সব ঠিক হবার পর আরোহীর ইচ্ছা ছিল সে (শুভ্র) এখানে এলে একটা সুন্দর প্রিয় মূহুর্তে দেখা করবে।
শুভ্র সবটাই শুনে তবে সে অভিমান ভাঙতে সময় নিবে খানিকটা। কিন্তু আরোহীর যত্নে কোনো ত্রুটি রাখবে না। একমাস যেহেতু সায়নাদের বাড়িতে থাকতে হবে তাই শুভ্র আরোহীর রুমে মানে পাশের বাসায় গিয়ে আরোহীর খেয়াল রাখে। খাবার, ঔষুধ সবকিছুর। আরোহীর মন ছটফট করে শুভ্রর সাথে কথা বলতে তবে শুভ্র বলে না।
ডিসেম্বর মাসের শেষ অর্ধে শীত নেমেছে। প্রকৃতিতে কোনো কোনো অংশে তুষারপাত হচ্ছে। শীতলতায় মন চাইছে উষ্ণ আলিঙ্গন আরোহীর।
______ধ্রুব জেনে গেছে আয়ানা যে আমেরিকায় এসেছে পরিবার সহ এবং তার ক্যান্সারের কথা জেনে এসেছে তাও জানে। ধ্রুবর শরীর তৃতীয় কেমো দেওয়ার পর আগের তুলনায় আরো ক্লান্ত হয়ে গেছে। সত্য বলতে তারও এখন তার ধ্রুবতারাকে চাই। অসুস্থতা জানে নিজের তাও মনটা তো ব্যাকুল হয়ে আছে। তাই আয়ানার খবরটা জেনেও বাজে রিয়াক্ট করেনি। নতুন বছর শুরু হলে আয়ানাদের সাথে শিফট হবে। মিসেস নূর নিজে এসে ধ্রুবকে বলে গেছে অনেক করে। ধ্রুবও আর না করতে পারেনি। আয়ানা ধ্রুব যেখানের ডাক্তার সেখানে প্রতিদিন যায় আর ধ্রুবের কেবিনে বসে থাকে। আয়ানার জব তো এখনো হয়নি তাই সে ধ্রুবের সাথে সময় কাটায়।
★★নতুন বছরের সূচনা ধরণীর মাঝে। উৎসব মুখর চারপাশ। ধ্রুব চলে এসেছে আয়ানাদের সাথে। সবাই একত্রে আজ আরোহীকে ভিডিও কল করে। শুভ্রও দীর্ঘ একমাস আরোহীর সাথে নিরবে যত্ন করে গেছে কোনো উক্তি ব্যায় না করে। শুভ্রর সাথে সাথে বাকি সদস্যরাও খুব কম কথা বলতো একমাত্র আয়ানা বাদে। আয়ানা পারেনি বোনের সাথে কথা না বলে থাকতে। প্রতিদিন আয়ানার সাথে ফোনে কথা বলার সময় আরোহী কাঁদতো কারন শুভ্র তাকে মৌন থেকে শাস্তি দিচ্ছে। আয়ানা কি বলবে তখন বুঝতে পারতো না। শুধু শান্তনা দিতো।
আজ নতুন বৎসরের সাথে সাথে শুভ্র আরোহীকে রাঙাবে তার শুভ্রতার রঙে। শুভ্র যায় তার প্রেয়সী স্ত্রীর কাছে। তখন আরোহী তার পরিবারের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো। শুভ্র পেছোন থেকে গিয়ে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে বসে।
আচানক কেউ জড়িয়ে ধরায় আরোহী ঘাবড়ে যায়। ফোনের অপরপাশ থেকে তখন সাদিয়া ও সাবিলা সমস্বনে টিটকারি দেয়,
–ওওও! কত্তো প্রেম! কত্তো ভালোবাসা! হায়!
মিসেস নূর ও মিস্টার মুনতাসির একটু আড়াল হয়। নাহলর যে লজ্জায় পরতে হবে। আরোহীর ভাবিদের এভাবে বলা ও শুভ্রর হুট করে জড়িয়ে ধরাতে আরোহীর মুখশ্রী রক্তিম হয়ে উঠে। শুভ্র তো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে স্বস্ত্রীকে আরো গভীর ভাবে আগলে নেয়। আরোহীর দুই ভাবি মজা নিতে চাইলে নীড় এসে ল্যাপটপ অফ করে দেয়।
সাদিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলে,
–এই এই তুমি অফ করলে কেনো? কথা বলছিলাম তো।
নীড় ট্রাউজারের পকেটে দুইহাত রেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
–কথা বলছিলে নাকি ওদের রোমান্স দেখছিলে সেটাতো দেখতেই পেলাম। এতো দেখার শখ হলে ঘরে আসো। তোমাকেও দেখিয়ে দেই।
সাদিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তখনি মেঘ সাবিলাকে একটু রোমান্টিক সুরে বলে,
–আমার কিউট সাবুদানা! তুমি তো দিন দিন আরো কিউট হচ্ছো। আসো আমার কাছে। ননদের রোমান্স দেখার থেকে নিজেরটা দেখা ভালো তাইনা!
সাদিয়া, সাবিলক দুজনই একে অপরের দিকে তাকায় আর সাদিয়া ফিসফিস করে বলে,
–নতুন বছরের সাথে কি সব গুলা ছেলে লুচ্চামির উপর পিএইচডি করলো নাকি?
সাবিলাও ফিসফিস করে বলে,
–আমারো তাই মনে হয় আপু। এরা সবাই লুচ্চামি শুরু করছে স্থান ও সময় না দেখে।
মেঘ এদের কথা শুনে বলে,
–ইটস নট লুচ্চামি বেইবি! ইটস কলড লাভ এক্সোপোজ। কাম হেয়ার সাবুদানা বেইবি।
সাবিলা ভয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়। সাদিয়া ভ্যাবলার মতো তার স্বামী ও দেবরের দিকে তাকিয়ে আছে। নীড় হুট করে সাদিয়ার হাত ধরে। সাদিয়া নিজের হাতের দিকে একবার ও নীড়ের মুখের দিকে তাকায়।
নীড় বলে,
–চলেন রানী সাহেবা। আপনাকে একটু প্রেমময় প্রিয় প্রহরে ঘুরিয়ে আনি।
মেঘ মুখ চেপে হাসছে। আজ তার গম্ভীর ভাইও রোমান্টিকতা দেখাচ্ছে জনসম্মুখে। নীড় সাদিয়াকে টেনে নিয়ে যায় আর মেঘ সাবিলার দিকে আগাচ্ছে তো সাবিলা পিচাচ্ছে। সাবিলা হঠাৎ পরে যেতে নিলে মেঘ ধরে ফেলে তারপর নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।
ধ্রুবকে নিয়ে আয়ানা একটু আগে ঘুরতে বের হয়েছে। ওদের দুই পরিবারে কথা হয়েছে যে আরোহীর বেবি হয়ে গেলে ধ্রুবর পরিবার আমেরিকায় আসবে আর শুভ্র ও আরোহীও আসবে তখন আমেরিকায় ধ্রুব-তারার বিয়ে হবে।
আয়ানা আজ মহাখুশি। আল্লাহ তাদের আবারো মিলিয়ে দিবেন এটা তার কাছে অনেক। ধ্রুব আয়ানার পাশাপাশি হাঁটছে আর আয়ানার মুখে লেগে থাকা হাসির কারন যে সে নিজে তা বুঝে সেও স্নিগ্ধ হাসে। নতুন বৎসের জন্য ফুল, ফেস্টুন দিয়ে পুরো ক্যালিফোর্নিয়া সজ্জিত। ক্রিসমাস থেকেই তাদের এই সাঁজ সাঁজ রব।
অন্যদিকে, আরোহী আলতো স্বরে বলে,
–শুভ্র! কি হয়েছে আপনার? আজও কি কথা বলবেন না?
শেষ কথাটা বলার সময় আরোহীর চোখের কার্নিশ বেয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। শুভ্র আরোহীর ঘারে এতোক্ষন মুখ গুঁজে ছিলো। আস্তে করে মাথা তুলে আরোহীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে দেয় এরপর বলে,
–নতুন বৎসর। সবকিছু নতুনভাবে শুরু করবো। পুরোনো কিছুকে আর আমাদের মাঝে আসতে দিবো না। আর আমি বুঝতে পারছি কেনো তুমি এখানে এসেছো তবে বিশ্বাস করো তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমি আরো কষ্ট পেয়েছি। ওইটুকু না করলেই পারতে। যাইহোক, সব ভুলে আমরা নতুন করে শুরু করবো। আর কোনো তিক্ততাকে আমাদের মাঝে আসতে দিবোনা। আমাদের অনাগত বাবুকে কখনো আমাদের অতিতের তিক্ততার সাক্ষী হতে দিবোনা।
শুভ্র আরোহীকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। আর তিনমাস পর তার রৌদ্রিতা এক ছোট্ট প্রাণকে পৃথিবীর রোদের শুভ্রতায় ঘেরা আলো দেখাবে।
.
.
.
.
_______আনন্দঘন মূহুর্তের পরে আজ একরাশ চিন্তা এসে ভর করেছে সবার মনে। আরোহীর বাবা-মা ও আয়ানা জার্মানিতে এসেছে আরোহীর প্রেগনেন্সির লাস্ট স্টেজে। কিছুক্ষণ আগে আরোহীর লেভার পেইন হলে আরোহীকে শুভ্র ও বাকিরা মিলে হসপিটালে আনে। আরোহী বারবার মুখে বাজে কথা আনছে আর যা শুনতে শুভ্রর একটুও ভালো লাগছে না। সে তার রৌদ্রিতাকে হারাতে পারবে না। মিসেস নূর ও আয়ানা আরোহীকে সামলাচ্ছে।
মিস্টার মুনতাসিরও ভয়ানক চিন্তায় আছে। সে বারবার মনে করছে যখন তার স্ত্রী তার দুই মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়েছিল তখন অনেক প্রবলেম হয়েছিল। বেবিদের পজিশন নাকি উল্টে গেছিলো তাই সিজার করতে হয়েছিল। সেদিনের মতো আজকেও তার ভয় হচ্ছে। এক বাবার তার মেয়েকে নিয়ে ভয় হচ্ছে।
তার সেই ছোট্ট আরোহী আজ আরেক ছোট্ট প্রাণকে আনতে চলেছে। বাবার কাছে তার মেয়ে সারাজীবন রাজকন্যা হয়ে থাকে। তারও খুব ভয় করছে।
যথাসময়ে শুভ্র নিজে কোলে করে তার সদ্যজাত পুত্র সন্তানকে অটির বাহিরে আনে। আরোহীর সাথে শুভ্রও গিয়েছিল অটির ভিতরে। শুভ্র তার তোয়ালে পেঁচানো পুত্র সন্তানকে প্রথমে কোলে নিতে ভয় পাচ্ছিলো। আরোহীতো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে মুখে এক চিলতে হাসি দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। শুভ্র তখনো ভয় পেয়ে যায়। ডাক্তার হয়েও সে আজ ভীত। ডাক্তার ফিলিপের ওয়াইফ ডাক্তার এনা আজ আরোহীর ডেলিভারি সামলিয়েছে। আরোহী ও আয়ানা দুজনে তার হাতে করে পৃথিবীতে এসেছে আর আজ আরোহীর সন্তানও।
শুভ্র কিছুক্ষণ নিজেকে স্থির করে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে টলমল পায়ে অটির বাহিরে আসে। শুভ্রকে আসতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রর বাবা-মা, বোন-বোন জামাই ও ছোট রিপ্তিও এসেছে। আয়ানা যখন খেয়াল করে শুভ্র কেমন টলছে তখনি সে জলদি করে গিয়ে গোলাপি শুভ্রতায় আচ্ছাদিত বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে যায়।
বাচ্চাটা ভুমিস্ট হবার পর থেকেই চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখছে। তার মাকেও দেখেছে এরপর বাবাকে এরপর মায়ের ডুবলিকেট খালাকে😳।
আয়ানার কোলে গিয়ে বাচ্চাটা আর অন্যদিকে দেখছে না। সে তার বড় বড় চোখ দিয়ে খালাকে দেখে যাচ্ছে। আয়ানা হেসে ফেলে ছোট তুলতুলে গোলাটি মুখশ্রীর বাচ্চাটার এমন চাহনি দেখে। এরপর রিয়ানা এসে তার ভাইয়ের বাচ্চাকে নেয়। ছোট রিপ্তি বাবু দেখে বারবার কোলে নেওয়ার বায়না করছে। আস্তে আস্তে সবাই বাচ্চাটাকে কোলে নেয়। এক ঘন্টা পর আরোহীর সেন্স ফিরে তারপর বাচ্চা সহ সবাই ভিতরে ঢোকে। আয়ানা বোনের কাছে বাচ্চাটাকে নিয়ে বলে,
–দেখ আরু, তোর ছেলে কনফিউজড যে কে মা আর কে খালা!
আয়ানার কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। ভিডিও কলে তখন নীড়, সাদিয়া, মেঘ, সাবিলা, ধ্রুব ও ধ্রুবের পরিবার আছে। মিসেস কায়রা ও মিসেন নূর বাচ্চাদের নাম ভাবছে। তাদের ছেলে-মেয়ের নামের সাথে মিলিয়ে নাতির নাম রাখবে। মিস্টার রিয়াদ ও মিস্টার মুনতাসির এদের কান্ডে হাসছে শুধু। কেউ কোনো নাম ঠিক করতে পারছে না। তখন আরোহী দুর্বল স্বরে বলে,
–রৌদ্রদ্বীপ মাহতাব স্নিগ্ধ।
সবাই অবাক ও খুশি হয়ে তাকায়। সকলের নাম পছন্দ হয়েছে। একে একে সকলে কেবিন ছেড়ে চলে যায় রয়ে যায় শুভ্র, আরোহী ও রৌদ্র।
শুভ্র আরোহীর ললাটে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া আঁকে। তারপর বলে,
–তোমার মতোই হবে আমাদের ছেলে।
আরোহী নাকচ সুরে বলে,
–উহুম। সে আমাদের দুজনের সম্মিলিত এক অংশ। তো দুজনের মতোই হবে।
তৎক্ষণাৎ হেসে উঠে ছোট বাচ্চাটি। শুভ্র আরোহী দুজনেই একত্রে তাকায় সেদিকে। এক সুন্দর প্রিয় প্রহরে বন্ধি তিনজন।
________
আজ “ধ্রুবতারা” এর বিয়ে। আরোহীর ছেলের এখন দুইমাস আর সাদিয়া ও নীড়ের ছেলে “সাদ্রিয়ান ইসলাম নিদ্র” এর ১৪ দিন বয়স ও সাবিলা ও মেঘের ছেলে “সাহিয়ান ইসলাম নিলাভ্র” এর বয়স ১০ দিন।
এখন তিন তিনটা ছেলে। কোনো মেয়ে নেই বলে তিন ছেলের মা আফসোস করছে। তিন ছেলেই দেখতে তাদের বাবাদের মতো হয়েছে।
আয়ানাকে বিয়ের আগে থেকেই আরোহী, সাদিয়া ও সাবিলা বলছে,
–বিয়ের পর যেনো তোর ত্রিপল মেয়ে বাবু হয়। আমাদের তিন ছেলের বউ লাগবে তো!
আয়ানা কি বলবে! সে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর ধ্রুব ও আয়ানার বিয়ে সম্পন্ন হয়। আয়ানা রেড গাউন, রেড হিজাব ও সুন্দর করে মেকাপ করেছে। একটা বার্বিডল লাগছে। ধ্রুব সে ব্ল্যাক ব্লেজার ও রেড সুট সাদা শার্টের উপর, কালো প্যান্ট, বো টাই আর চুল গুলো আঁচরে তারপর এলোমেলো করে কপালে ছড়িয়ে রেখেছে। হাতে রিচ ওয়াচ।
ধ্রুব ও আয়ানা দুজনকেই দারুন লাগছে। নীড়, মেঘ ও শুভ্র ব্ল্যাক সুট-প্যান্ট ও সাদিয়া,সাবিলা ও আরোহী ব্ল্যাক গাউন। তাদের তিন ছেলে তো ছোট তাই কি পড়াবে বুঝতে না পেরে সাদা শার্ট পড়িয়ে রেখেছে।
বিয়ের সব অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে শোষ হয়। ধ্রুবরো এতো মাসে আটটার মতো কেমো শেষ। আর চারটা দিবে। ডাক্তার বলেছে রিকোভার করেছে অনেক তাও কেমো গুলো দিতে হবে। ধ্রুব অসুস্থ হয়ে গেছিলো অনেক পরে অন্য এক নতুন মোডিসিন যা কেমোর সাইড এফেক্ট গুলো কমায় সেটা নেয় তারপর থেকো সুস্থ আছে।
আয়ানা লাল বেনারসি পড়ে ধ্রুবের জন্য বাসর ঘরে বসে আছে। আধ ঘন্টা পর ধ্রুব আসে ফুলে সজ্জিত রুমে। ধ্রুব তার স্ত্রীকে দেখে অপলক। এ যেনো এক প্রিয় প্রহর তার জন্য। তারপর আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে বসে এরপর আয়ানার গলায় একটা ডায়মন্ডের স্টার লকেট পড়িয়ে দেয়। তারপর কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে বলে,
” আমার রাতের আকাশের তারা,
এক প্রিয় প্রহরে উজ্জল ধ্রুবতারা!”
______তিথি
আয়ানার ঠোঁটে লজ্জা মিশ্রিত হাসি। পূর্ণতা পায় তাদের প্রিয় প্রহরে ভালোবাসা যেটা সব প্রহরে অমলিন থাকবে।
শুভ্র ও আরোহী ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে জানালার কাছে আসে। আকাশ পরিস্কার। রাতের আকাশ তাই সেখানে না আছে শুভ্র আলো আর না আছে রোদের আদ্রতা। তাও শুভ্র বলে,
” শুভ্রের প্রিয় প্রহর সর্বদা তোমায় ঘিরে রৌদ্রতা। ”
নীড় ও সাদিয়া, মেঘ ও সাবিলা দুই জুটি তাদের রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে একে অপরের বাহু জড়িয়ে। তাদের সবার দৃষ্টি নিকষ কালো অম্বরে ঝলঝল করা নিহিরিকা কুঞ্জের দিকে। এক ভালোবাসাময় প্রিয় প্রহর!
মিস্টার মুনতাসির ও মিসেস নূর তারাও ব্যালকনিতে বসে আছে। মিসেস নূর তার স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে বলে,
–আজ আমার চার ছেলে-মেয়ে তাদের জীবনে সুখী। তাদের এই প্রিয় প্রহর সর্বদা প্রিয় হোক।
মিস্টার মুনতাসির তার স্ত্রীর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ আঁকেন।
~~~~~~~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~~~~~
অনেক অনিয়ম করে শেষ করলাম প্রিয় প্রহর। আপনাদের ভালোবাসা আমার এই পথ চলার সঙ্গী। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো আপনাদের মন রাখতে।
ভালোবাসা সকলকে, আমাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।