প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -১১

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১১
দুই পিচ্চি সিনা ও সায়না। ওরা শুভ্রকে নিয়ে ওদের গার্ডেন ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম পাশে নিয়ে আসে। পশ্চিম পাশে একটা ম্যাপল ট্রি আছে যার লালচে পাতা অসামান্য সৌন্দর্যের প্রতিকি। আরোহীর ব্যালকনিটা ওই বাড়ির পশ্চিম পাশে মানে পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় পূর্ব দিকে বারান্দাটা। আরোহ এতোক্ষন বসেছিল ব্যালকনির সাদা ফিনফিনে পর্দার আড়ালে থাকা একটা দোলনায়। শুভ্রকে খুব কাছাকাছি আসতে দেখে আরোহী উঠে যেতে নেয় তখন ব্যালকনির কাচের উইন্ড চার্মটার সাথে লেগে মৃদু রিনরিনে ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

পড়ন্ত বিকেল, সূর্যের লালচে আলো ম্যাপল ট্রির লাল রঙা পাতায় আরো মাধুর্য ফুটিয়ে তুলেছে। আরোহী বিকেলে অবসর পেলেই এখানে বসে থাকে। সামনে শীত ঘনিয়ে আসছে তাই প্রকৃতিতে শীতের আমেজ লক্ষণীয়। মৃদু শীতল হাওয়াতে ধোঁয়া উঠা কফি ও গায়ে শাল জড়িয়ে ব্যালকনির দোলনায় বসে সূর্য ডোবা ও ম্যাপল ট্রির সৌন্দর্যটা আরোহী মিস করেনা।
শুভ্রকে দেখে উঠে যেতে নিলে উইন্ড চার্মের সাথে শালের সুতা বেজে যায়। আরোহী সেটাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাতে আছে। শুভ্র উইন্ড চার্মের রিনরিনে শব্দ এই নিস্তব্ধতার মধ্যে শুনে সেদিকে তাকায়। সিনা ও সায়না ওদের বাড়ির পেছোনে দৌড়ে চলে গেছে একটা ছোট বিড়াল ছানাকে দেখে। তাই শুভ্র একা পশ্চিম দিকের গার্ডেনে দাঁড়িয়ে আছে।

আরোহীর ব্যালকনিতে তাকালে দেখে এক রমণী তার শালটা টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় উইন্ড চার্ম থেকে যার দরুন উইন্ড চার্মের একটা সুতা ছিড়ে ঝুলে পড়ে।
রমণীটির সেদিকে যেনো নজর নেই। সেতো ব্যাস্ত নিজেকে আড়াল করতে।

শুভ্র শুধু পেছোন সাইড দেখে রমণীর। কেনো এই ব্যাস্ততা রমণীর যে এতো সুন্দর ছন্দময় কাচের উইন্ড চার্মটিকে ছিড়ে ফেলতেও দ্বিধা হলো না!
এগুলোই উঁকি দেয় শুভ্রর মনে। শুভ্র জানে ওটা ডাক্তার ফিলিপের বাড়ি। সাথে এটাও জানে যে ডাক্তার ফিলিপের বড় মেয়ে ফিওনার কয়েকমাস হলো বিয়ে হয়ে গেছে। ফিওনার জেদের কারনেই ফিওনাকে জলদি বিয়ে দিয়েছে ডাক্তার ফিলিপ।

আরোহী রুমে ঢুকে যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ততোক্ষণে সিনা ও সায়না শুভ্রের কাছে চলে এসেছে। শুভ্র তখনো খালি ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়না শুভ্রকে এভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,

–হেই আঙ্কেল! তুমি কি দেখছো?

–কিছুনা। তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?

–আমরা তো একটা বিড়ালকে ধরার জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু বিড়ালটা লুকিয়ে গেলো তাই পারলাম না।

শুভ্র সায়নার মুখ ভার করা লুক দেখে হেসে ফেলে। এতো ছোট একটা মেয়ে তার বাবা-মাকে পায়না তারা জীবিত থাকার পরেও। সায়নার ভাইটা খুব দায়িত্বশীল। মাত্র ১০ বছর বয়সে নিজের ছোট বোনকে আগলে রাখে। শুভ্র আবারো ফাঁকা ব্যালকনির দিকে তাকায়। কেনো যেনো বারংবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে।

সায়না ব্যকপারটা লক্ষ্য করে বলে,
–ওটা আয়রা আন্টির ট্যারেস। আন্টি ওখানে বিকেলে বসে থাকে আর আমাদের সাথে মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হয়। তবে আজকে তাকে দেখতে পাচ্ছি না।
( ভিনদেশি ভাষাকে বাংলাতে বুঝার সুবিধার্থে লিখছ)

শুভ্র আর কথা বাড়ায় না। সে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আরোহী আড়াল থেকে দেখছে সব। বহুদিন পর আজ মন খুলে আনন্দ ধ্বনি করতে ইচ্ছে করছে তার।

__________

আয়ানার আজ আমেরিকার মাটিতে নেমেছে। নীড়, সাদিয়া, মেঘ, সাবিলার জন্মভূমি এই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া। আয়ানা উদগ্রীব হয়ে আছে ধ্রুবকে দেখবে বলে। সাদিয়া সবার মাঝে খানিকটা রসিকতা করে উৎফুল্ল চিত্তে বলে,

–আমরাও আমেরিকায় জন্ম নিয়েছি আর আমাদের বাচ্চারাও হবে এখানে। এমন মনে হচ্ছে যেনো বাচ্চা ফুটাতে এখানে আসা। আমাদের চারজনের বাবা-মায়েরা আমাদের এখানেই জন্ম দিয়েছে। আর আমরা পেটে করে নিয়ে এসেছি এদের জন্ম দিতে। কি মিল!

নীড় গম্ভীর ভাবে বলে,
–কি সব বলছো? কথা ঠিক করে বলো।

সাদিয়া ঠোঁট উল্টে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
–কি এমন বললাম! যে তুমি বকছো আমায়। ঠিকই তো বললাম বলো।

মিসেস নূর ওদের কাছে এসে বলে,
–থাক না নীড়। ওতো মজা করে বলেছে। তব। সঠিক বলেছে ও। অনেকটাই মিল।

সাদিয়া খুশি হয়ে শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
–লাভ ইউ মামনি।

সবাই মুচকি হাসে সাদিয়ার পাগলামিতে।

ধ্রুব রাতে হসপিটাল থেকে ফিরে দেখে তার রুমের দরজায় একটা চিঠি। ধ্রুব কৌতূহল বশত চিঠিটা খুলে আর সেখানে বাংলা গোটা শব্দে লিখা,

” জানাম দেখলো, মিট গেয়ি দূরিয়া!
মে এহা হু এহা হু এহা হ এহা! ”

ধ্রুব হিন্দি গানটার দুই লাইন কে লিখলো সেটাই বুঝতে পারছে না। এই মূহুর্তে ধ্রুবর টায়ার্ড লাগছে তবে লেখা গুলো পরিচিত! কিন্তু তা কি সম্ভব?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।

ধ্রুব চলে গেলে আয়ানা ও মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে। ওরা অনেক রিকুয়েস্ট করে এই দালানে এসেছে। এর প্রায় এক মাইল পরেই ওরা একটা বাংলো নিয়েছে। বাংলোর সাতটা রুম আর ওদের লাগবে চারটা। ধ্রুব আসলে পাঁচটা লাগবে। কেয়ারটেকারকে বলে আগেই বাংলোর দুই রুম রেন্টের ব্যাবস্থা করে ফেলেছে। এই বাংলোতেই নীড়, মেঘ, সাদিয়া, সাবিলা কিছুদিন ছিলো ছোট বেলায়।

পরেরদিন,,
আয়ানা ধ্রুবের ওখানে যায় তবে আড়াল থেকে। ধ্রুব এখন মেডিকেলে যাবে। আয়ানার এক মাস কোনো কাজ নেই তাও পরিচিত আঙ্কেলকে বলেছে স্কলারশিপটা পাওয়ার আগে টুকটাক এমনিতে একটু ভিজিট দিতে চায় হসপিটালে তাহলে প্রেকটিস থাকবে।

ধ্রব হসপিটলে যাবার জন্য রাস্তায় বেড়োলে কাউকে আড়াল হতে দেখে। মেয়েলি অবয়ব মনে হলো ওর। আর বয়েজ মেসের কাছে মেয়ে আসে না। কারো গার্লফ্রেন্ড কেও এখানে আনে না। ধ্রুব খানিকটা সেদিকে এগিয়ে যায়।

আয়ানা ধ্রুবকে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায় তাই কোনোমতে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে। ধ্রুবও কাউকে না পেয়ে ফিরে আসে।

_____আজ শুভ্র এসেছে ডাক্তার ফিলিপের বাড়িতে ডিনারে। ডাক্তার ফিলিপ রিকুয়েস্ট করেছে তাই এসেছে শুভ্র সাথে সিনা ও সায়না। সায়না এসেই প্রথমে আরোহীর কাছে ছুটলো। আরোহী তখন কিচেনে ছিলো। শুভ্রের জন্য ক্ষীর ও সাবুদানার পায়েস রান্না করছিলো। বাকি সব খাবার তো বিদেশি যেমন, বিফ স্টেক, ক্রন স্যুপ, ভেজিটেবল চিকেন সালাদ ইত্যাদি। আরোহী এই পায়েসটা ভালো বানায় যা শুভ্রের পছন্দ। পায়েসে বেশি করে কিশমিশ দিলো। আরোহী ও শুভ্রর কিশমিশ পছন্দ অনেক।

সায়না আরোহীকে রুমে না পেয়ে কিচেনে যায় তারপর কোমড়ে হাত রেখে বলে,

–আয়রা আন্টি। তুমি কিচেনে কি করো? তুমি তো অসুস্থ। আগুনের কাছে কেনো গেলে!

আরোহী পায়েসটা নামাতে নামাতে বলে,
–বাড়িতে গেস্ট এসেছে ডিয়ার। গেস্টকে ভালো কিছু খাওয়াতে হবে তো। তুমি একটু এদিকে এসো তো। এই ডেজার্টটা টেস্ট করো তো।

সায়নার ডেজার্ট পছন্দ অনেক। খুশি হয়ে বাটিতে পায়েস নেয়। তারপর খেয়ে বলে,
–এটা সত্যি অনেক মজার। অনেকটা বাদামের ফ্লেবার
আসছে। তুমি কি এতে বাদাম দিয়েছো? আমার বাদাম অনেক পছন্দ।

আরোহীর মনের শংকা দূর হয়। তারপর বলে,
–হ্যাঁ, বাদাম দিয়েছি। এখন সার্ভ করার সময় আরো বাদাম দিবো।

ডিনারের সময় আরোহী পরে খাবে বলে খায়না। এনা বুঝে কেনো তাও সে কিছু বলে না। মেয়েটার লুকুচুরি খেলতে ইচ্ছে করছে তো করুক।
শুভ্র পায়েসটা খেয়ে থমকে যায়। আরোহীর হাতের বানানো পায়েসের স্বাদ। শুভ্র আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করে,

–পায়েস কে বানিয়েছে?

মিসেস এনা উৎফুল্ল হয়ে বলে,
–আয়রা। আমাদের বাসায় যে থাকে সে। ওকে আমরা মেয়ের মতো ভালোবাসি। ছোট থেকে চিনি ওকে। ওই বানিয়েছে পায়েসটা।

শুভ্র উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,
–তাকে একবার ডাকা যাবে? মানে এক সপ্তাহ হলো পাশের বাড়িতে এসেছি আর একসাথে জব করি দুই সপ্তাহ কিন্তু তাকে দেখাই হলো না।

এনা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাঝ থেকে সায়না বলে,
–ওইতো দরজার কাছে আয়রা আন্টি।

আরোহী সাথে সাথে সরে যায় সেখান থেকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here