প্রেমনগর পর্ব ৩

#প্রেমনগর
পর্বঃ৩
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
অহনা হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,হাসবো না? আজ আমার বিয়ে হলো, এখন আমার বাসর রাত! হিহিহি। এ্যাই দেখো বউ সেজে আমাকে কত্ত সুন্দর লাগছে।
আকাশঃ এভাবে পাগলের মতো হেসো না তো। তুমি এখন শশুড়বাড়ি তে আছো। নতুন বউ এভাবে এতো হাসলে সবাই কি ভাব্বে হ্যাঁ?
অহনাঃ হিহিহি। আরো হাসবো। বেশি করে হাসবো৷
আকাশ এবার বিছানায় বসে ধমক দিয়ে বললো, চুপ! হাসি বন্ধ। এখন চুপচাপ বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো৷
অহনা হাসি থামিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশও অহনার রুপে মুগ্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।
.
এভাবে ড্যাবড্যাবিয়ে চেয়ে থাকতে থাকতে আকাশ অহনার পাশে এসে গা ঘেষে বসলো। অহনার হাত ধরলো। তারপর অহনার গালের সাথে নিজের গাল ঘষতে থাকে। আর গালে কয়েকটা চুমুও দিয়ে দেয়।
.
এদিকে তুলি রৌদ্রের ঘরে গিয়ে মেয়েদের ব্রা প্যান্টি পরা ভিডিও দেখে লজ্জায় কফির মগ ওখানেই ফেলে দিয়ে দৌড় দিয়ে বাহিরে আসতেই সিড়ির কাছে এসে ধপাস পরে যায়। শব্দ শুনে রৌদ্র ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। আর দেখলো তুলি তার ডান পা ধরে ফ্লোরে বসে আছে ।
রৌদ্রঃ এই মেয়ে পরে গেছো নাকি? ওভাবে দৌড় দেয়ার কি দরকারটা ছিল!
.
লজ্জায় তুলি তো রৌদ্রের দিকে তাকাতে না পেরে চোখ বন্ধ করে আছে। বুকের ধুকপুকানি চার গুন বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় কথা বলার তো কোনো প্রশ্নই আসে না৷ রৌদ্র তুলির জবাবের জন্য আর অপেক্ষা না করেই আচমকা তুলির হাতটা ধরে তুলিকে ফ্লোর থেকে টেনে তুললো। ভয়ে লজ্জায় তুলি কাপঁতে শুরু করে। ফ্লোরে দাঁড়ানোর পর পা দুটো অসার হয়ে আসতে থাকে। রৌদ্র এখনো তুলির এক হাত ধরে রয়েছে।
.
ওদিকে আকাশ অহনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়া শুরু করলে অহনা চেচিয়ে উঠল,
অহনাঃ এ্যাই তুমি এভাবে আমার শাড়ি গহনা খুলে দিচ্ছো কেন?
আকাশঃ এগুলো খুব ডিস্টার্ব করছে জান। এখন এগুলো খুলে ফেলো।
অহনাঃ তুমি এসব কি বলছো। আমি এগুলো খুলবো কেন? আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে তো৷ আমি এসব পরে থাকবো।
.
অহনা আকাশের থেকে একটু সরে এসে বসলো।
আকাশঃ আহা এমন করছো কেন। এখন রাতে এসব পরে থাকা লাগবে না। দাও আমি খুলে দিচ্ছি। এদিকে এসো৷
আকাশ আবার এগিয়ে এসে অহনার শাড়ি গহনা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করতেই অহনা এবার জোরে একটা চিৎকার দেয়।
.
অহনার চিৎকার শুনে চমকে উঠে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা রৌদ্র তুলির হাতটা ছেড়ে দিলো। ওদিকে মনিরা বেগম আর আফতাব চৌধুরীও চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেড়িয়ে এদিকেই আসছেন। বাড়ি ভর্তি আত্মীয় সজনেরাও কৌতুহলবসতো বেড়িয়ে এসেছে। চেচামেচি শুনে মেঘও তার রুম থেকে বের হয়৷ সবাই এসে আকাশের রুমের সামনে ভিড় করলো। এক পর্যায়ে দরজায় ঢাক্কাঢাক্কি শুরু হয়। আকাশ এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথেই সবাই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পরলো৷ সবার নজর এখন অহনার দিকে। অহনা খাটে বসে নিজের শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত।
এবার আকাশের চাচী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, কিরে নতুন বৌমার গলার আওয়াজ পেলাম? কি হয়েছে!
আকাশ একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, হাহ্! ইয়ে ওইতো টিকটিকি দেখে ভয় পেয়েছে।
অহনা শাড়ি ঠিক করতে করতেই বলে উঠলো, ও আমার শাড়ি গহনা খুলে দিচ্ছিলো। তোমরাই বলো আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে না?
.
রুমে থাকা উপস্থিত লোকজন ভ্রু কুচকে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো। কেউ কেউ মুচকি মুচকি হেসে চলে গেল। মেঘ আর রুদ্র যাওয়ার আগে একবার বড় ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে বাঁকা হাসি দিতেই আকাশ ওদের ঢাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
.
সকালবেলা তুলি ছাদে দাঁড়িয়ে টবের বিভিন্ন রকম গাছ গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। পাশেই মনিরা বেগম দাঁড়িয়ে থেকে ফুলের টবে পানি দিচ্ছিলেন।
তুলিঃ আমিও পানি দেই?
মনিরা বেগমঃ আরে না না! পাগলীটা বলে কি। তুমি মেহমান মানুষ তুমি কাজ করবে কেন।
তুলিঃ আপনেই তো কইছেন এইডা নিজের মনে কইরা থাকুম। তাছাড়া আপা তো এহনো ঘুম থেকেই উঠে নাই। আমি কি করুম?
মনিরা বেগমঃ হাহাহা! কোনো কাজ পাচ্ছো না? তাহলে যাও আমার বাদর ছেলেটাকে ঘুম থেকে ওঠাও। প্রতিদিন ডাকতে ডাকতে আমি আর পারিনা। সারারাত জেগে কি যে করে আর তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় তারপরও তার ঘুম ভাঙে না!
তুলিঃ কেডা খালা?
মনিরা বেগমঃ কে আবার আমার রৌদ্র মশাই!
সাথে সাথে তুলির রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল।
রৌদ্র তো ব্রা প্যান্টি পরা মেয়েদের ভিডিও দেখছিলো।
মনিরা বেগমঃ কি হলো পারবেনা? ও কিন্তু একবার দুইবার ডাকলে শোনে না অনেকবার ডাকতে হয়!
লজ্জায় তুলি লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে। বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেছে।
তুলিঃ মানে আমি এহন উনার ঘরে যামু? আমি পারুম না।
মনিরা বেগমঃ আরে আগেই হাল ছাড়ছো কেন? আগে চেষ্টা তো করো। এখনই যাও।
তুলিঃ জি আচ্ছা।
.
তুলি রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। জোরে জোরে ধুক ধুক করছে। তখনই মনিরা বেগমের গলার আওয়াজ শোনা গেল। তিনি ছাদ থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলছেন, রৌদ্রকে ডেকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসো ততোক্ষণে আমি নাস্তা রেডি করছি। উনার কথা শুনে তুলি এবার রৌদ্রের রুমের দরজাটা হালকা একটু ঢাক্কা দিলো। দরজাটা শুধু চাপানো ছিল।ভেতর থেকে লক করা ছিল না। তাই দরজা ঢাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। তুলি রুমের ভিতর উকি দিলো। উকি দিয়ে খাটের দিকে তাকাতেই চোখ দুটো কপালে উঠে যায়। রৌদ্র খালি গায়ে চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। দুই পায়ের দূরত্বের মধ্য রয়েছে অনেকটা ফাঁক। আর লম্বা কোল বালিশটা গিয়ে রয়েছে একদম দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা জায়গাটায়। রৌদ্রের এই অবস্থা দেখে আর খালি গা দেখেই লজ্জায় তুলি আবারও এই ঘর থেকে দৌড় দিলো।
.
ডাইনিং রুমে এসে তুলি হাপাচ্ছে। লজ্জায় চোখ বার বার বন্ধ করছে। ডাইনিং এর চেয়ারে বসে মেঘ তখন নাস্তা করছিলো। কিন্তু তুলি সেটা খেয়ালই করেনি। তুলির এমন করা দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর একটু কাশি দেয়।
.
সাথে সাথে তুলি চমকে উঠে এদিকে ফিরে দেখলো এক জোরা চোখ ওর চেয়ে আছে। লজ্জায় তুলি চোখ দুটো বন্ধ করে ঘামতে ঘামতে এবার বড় বড় দম নিতে শুরু করলো।
মেঘ হঠাৎ পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, এই নেও পানি খাও!
তুলি চোখ খুলে তাকিয়ে মেঘের হাতে পানির গ্লাসটা তার দিকে ধরা দেখেই দৌড় দিলো।
তুলির এভাবে দৌড় দেয়া দেখে মেঘ সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তখনই তার ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করলে সে ফোনটা রিসিভ করে কথা কথা বলতে বলতেই বাইক নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেল।
.
অহনা ফ্রেস হয়ে নতুন শাড়ি পরে নিচে নেমে এসেছে। আকাশের চাচী রান্নাঘর থেকে বের হয়েই অহনাকে দেখে বলে উঠলেন,আরে বউমা এসেছো? আকাশকেও ডেকে আনো। এক সঙ্গে নাস্তা করবে।
অহনা চাচী শাশুড়ির কথায় পাত্তা না দিয়েই এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতেই উনি আবারও বলে উঠলেন,কাকে খুঁজছো?
অহনাঃ আমার বোন কোথায়?
আকাশের চাচীঃ ওকে তো অনেকক্ষণ থেকে আমিও দেখছিনা!
অহনাঃঠিকাছে আমি খুঁজে বের করছি।
.
অহনা কয়েকটা ঘর চেক করে তারপর এই ঘরে এসে তুলিকে পেল।
অহনাঃ কিরে তুই এখানে একা একা বসে কি করছিস!
তুলিঃ আপা!
অহনাঃ কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা শোন!
অহনাঃ হুম? কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা….. আপা তোর দুই দেবর!
আহনাঃ হুম? আমার দেবর কি? কি হয়েছে!
তুলিঃ আপা… তোর দুই দেবর খুব বেশরম!
.
মেঘ বাইক নিয়ে ভার্সিটি এসেছে। মেঘের ড্যাশিং লুক দেখে মেয়েরা হা করে তাকিয়ে ড্যাবড্যাবিয়ে মেঘের দিকে চেয়ে আছে৷ আর মেঘও একটু ভাব নিয়ে ওদের সাথে হাই হ্যালো করে লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকে গেল। ওখান থেকে কিছুটা দূরে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নীলা সবটা খেয়াল করছিলো। রাগে নীলার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সে এবার ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট পানির বোতল বের করে ঝাঝালো কন্ঠে বললো, আমি এক্ষুনি খাওয়াবো, আমার আর সহ্য হচ্ছে।
শ্রাবনীঃ এখন? কিভাবে?
নীলাঃ জানিনা! ওর আশেপাশে এতো মেয়ে ঘুরঘুর করবে সেটা আমি সহ্য করবো ভেবেছিস!
শ্রাবনীঃ কিন্তু মেঘ তো এখন,নীলা এ্যাই নীলা কোথায় যাচ্ছিস, তাড়াহুড়ো করিস না। আমার কথা শোন, দাঁড়া।
.
শ্রাবনীও নীলার পিছু পিছু লাইব্রেরির দিকে ছুটতে থাকে। নীলা লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকেছে। মেঘ যেদিকে বসেছে সেদিকে হনহন করে হেটে যাচ্ছে। নীলা প্রচন্ড রেগে আছে। মেঘের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সরাসরি ওর কাধের ওপর এক হাত রেখে বলে উঠলো, ওঠ! ওঠ বলছি!
মেঘ ঘার ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে নীলাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, উঠবো মানে!
নীলাঃ বাংলা বুঝিস না! উঠে আয় এখান থেকে!
মেঘঃ মানে কি! এভাবে চিল্লাছিস কেন?
নীলাঃ আমার ইচ্ছে আমি চিল্লাবো!
মেঘঃ তোর সাথে আমি পরে কথা বলবো। এখন কাজ করতে দে। বিরক্ত করিস না।
.
রাগে নীলা পিছনে দাঁড়িয়ে থেকেই মেঘের শার্টের কলার টেনে ধরলো।
মেঘঃ আরে আরে কি করছিস, ছাড়!
নীলাঃ না ছাড়বো না।
মেঘ নীলার হাতটা ধরে ফেললো। আর তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, তোর সমস্যাটা কি!
নীলা চিল্লিয়ে বললো, আমার সমস্যা তুই!
মেঘঃ আস্তে!এটা লাইব্রেরি।
নীলা পানির বোতলটা মেঘের সামনে ধরে বলছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
মেঘঃ আমি এখন পানি খাবো না।
নীলাঃ খা বলছি!
মেঘঃ উফ আমার এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে না।
নীলাঃ তোকে খেতেই হবেই। খা বলছি।
নীলা বোতলের ছিপিটা খুলে জোর করেই মেঘের মুখের কাছে পানির বোতলটা ধরছে। মেঘও নীলার হাতটা ধরে তা আটকাচ্ছে৷ এভাবে হাতাহাতি করতেই বোতলটা হঠাৎ করে নিচে পরে গেল। সেই সাথে পানি গুলোও পরে যায়।
শ্রাবনী এসে ওটা দেখার সাথেই চিল্লিয়ে বলে উঠলো,আহ! সব গেল!
রাগে নীলা এবার কান্না শুরু করে দেয়! শ্রাবনী নীলার গায়ে হাত দিয়ে ওকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছে।
ঘটনার কিছুই বুঝতে না পেরে মেঘ অবাক হয়ে ওদের দুইজনের দিকে চেয়ে আছে। ওখানে মেঘের দুইজন বন্ধু এসে দাঁড়ালো।
শ্রাবনীঃ পানিটা খেলেই পারতে মেঘ। খুব বেশি ক্ষতি হতো না তাতে৷ কাঁদিস না নীলা! সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘঃ মানে কি! কিসের পানি ছিল ওটা? আর ও এভাবে কাঁদছে কেন?
নীলাঃ প্রচুর লোভ আমার! ভালোবাসা পাবার লোভ!
বলেই নীলা কাঁদতে কাঁদতে লাইব্রেরির বাহিরে চলে গেল।
শ্রাবনীঃ কাজটা তুমি ঠিক করোনি মেঘ।ওটা কোনো সাধারণ পানি ছিলো না
মেঘের বন্ধু রবিন তখন ফাজলালো করে বললো, তাহলে কি অসাধারণ পানি ছিল! উমম…
শ্রাবনীঃ ওটা শ্যামপুর কবিরাজের পানিপড়া ছিল।
বলেই শ্রাবনী রাগ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর হনহন করে হেটে লাইব্রেরির বাহিরে চলে গেল।
এই কথা শুনে মেঘসহ তিনজনের তিন জোড়া চোখই অলরেডি কপালে উঠে গেছে।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here