প্রেমনগর পর্ব ২২

#প্রেমনগর
পর্বঃ২২
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
তুলি আশেপাশে একবার তাকিয়ে তারপর রাফির দিকে তাকালো।
তুলিঃ আপনি কি আমারে উনার কোনো কথা বলার লাইগাই ছাদে লইয়া আইছেন?
রাফিঃ কার কথা?
তুলিঃ ওই যে উনি, আপনার বন্ধু!
এই কথা শুনে রাফি ছাদের দেয়ালে হাত দিয়ে জোরে একটা বারি দিলো আর মনে মনে কটমট করতে করতে বলছে, আমি কি ওকে ওর কথা বলতে এখানে এসেছি!
তুলিঃ আপনি এমন করতাছেন ক্যান! কি হইছে আপনের?
রাফি রেগে বললো, কি হয়েছে বোঝো না!
তুলিঃ আমি ক্যামনে বুঝবো! আচ্ছা উনার কাছে এতো মাইয়া মানুষ আসে ক্যান!
তুলির কথা শুনে রাফি আরও রেগে গেল, কেন আসে বোঝো না? তার মেয়ে মানুষ পছন্দ!
তুলিঃ তারে কইয়া দিবেন, আমার এগলা ভালা লাগে না। আমি কিন্তু সহ্য করবার পারুম না। যাই।
বলেই তুলি হন হন করে হাটতে হাটতে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল। রাগে রাফি দেয়ালে আরেকটা জোরে বারি দিলো।
.
রৌদ্র বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই মনিরা বেগম বলে উঠলেন, একি বাবা তুই উঠছিস কেন! তোর তো এখন ওঠা যাবে না।
রৌদ্র অস্থির হয়ে আছে।
রৌদ্রঃআমি ছাদে যাব!
মনিরা বেগমঃ এই অবস্থায় তুই সিড়ি উঠবি কেন?
রৌদ্রঃআমি যাব!
মনিরা বেগম কড়া গলায় বলেন,এখন কোথাও যাওয়া যাবে না চুপচাপ এখানে শুয়ে থাক।
.
তখনই রুমের ভিতরে তুলি এসে উপস্থিত হয়। তুলিকে দেখার সাথেই রৌদ্র মনিরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো ,ঠিকাছে মা। আমি এখন ছাদে যাব না। তুমি এখন যাও।
মনিরা বেগমঃ হীরের টুকরো ছেলে আমার!
মনিরা বেগম রুম থেকে চলে যেতেই রৌদ্র রেগে তুলির দিকে তাকিয়ে বললো, রাফির সাথে তোমার এতো কিসের কথা,যে ওর সাথে তোমার ছাদে যেতে হবে?
তুলিও চট করে সাথে সাথে উত্তর দেয়,আপনেরও মাইয়া গুলান সাথে এতো কিয়ের কতা!
রৌদ্র চোখ তীক্ষ্ণ করে তুলির দিকে তাকালো।
.
তখনই রুমের ভিতর রাফি ঢুকে পরে। রুমের ভিতর ঢুকেই রাফি কাশি দিয়ে উঠলো। চমকে উঠে তুলি পিছিয়ে যায়। রাফি ভালো করেই জানে এখনকার ঔষধের মলমটা কি। তাই ক্লিকবাজি করতে রাফি ফোন করে ক্লাসের থাকা রৌদ্রের সুন্দরী বান্ধুবিদের এখানে আবারও আসতে বলে দিয়েছে৷ তুলি রুম থেকে চলে গেলো।
রাফি হাসতে হাসতে বলছে, তুলি মেয়েটা খুব ভালো বুঝলি! আমার সাথে অনেক গল্প করলো।
রাফির কথা শুনে রৌদ্রের গা জ্বলে যাচ্ছে।
রৌদ্রঃ হুম। খুব ভালো মেয়ে। সব সময় আমার রুমের সামনে এসে ঘুর ঘুর করে। আর উঁকি দিয়ে আমায় দেখে।
.
শোনার সাথে সাথে রাফির হাসি মুখটা বন্ধ হয়ে যায়। রাফি জোর করে মুখে হাসি আনার বৃথা চেষ্টা করে বললো, তোর ড্যাসিং চেহারা তো তাই দেখে আর কি কিন্তু তোর ওর দিকে নজর দেয়ার কি দরকার বল! সহজ সরল মেয়ে। ওকে ওর মতো থাকতে দে।
রৌদ্রঃ সে ভাবিকে বলেছে, বেচারিটা নাকি আমার প্রেমে পরেছে।
সাথে সাথে রাফি শকড খেল। চমকে উঠে বললো, কি? কি বললি তুই? মানে তুলি এটা বলেছে? তুলি এটা নিজের মুখে বলেছে?
রৌদ্র মাথা নাড়ালো। তারপর বললো, নিজের মুখে বলবে না তো কি অন্যের মুখে বলবে!
.
রাফির গলা শুকিয়ে গেছে আর মুখটা আমাবস্যার অন্ধকারের মতো করে আছে। সেই সময় রৌদ্রের ক্লাসের সুন্দরী মেয়ে গুলো রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে পরলো।
রায়িসাঃ ও ডারলিং! তুমি এখন কেমন আছো?
রৌদ্র ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো, তোমরা!
পৃথাঃ তোমায় দেখতে এলাম জান!
রাফি বললো, তোরা গল্প কর! আমি একটু পানি খেয়ে আসি।
.
বাধ্য হয়ে মেঘ নীলাদের বাসায় ডিনার করলো। নীলার বাবা রেজা খান বললেন, আজ রাতে এখানেই থেকে যাও জামাই বাবা!
মেঘ মনে মনে বলছে, এইবারেই বোধহয় উত্তম মাধ্যম শুরু করে দেবে! কুরবানীর আগে পশুকে ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে যেমন করে আদর যত্ন করা হয়। তেমনি আজ বলির পাঠার মতো আমাকেও এরা তাই করবে! মাবুদ রক্ষা করো!
মেঘ একটা ঢোক গিললো আর নীলার দিকে তাকাতেই নীলা তার এক চোখ টিপ দেয়।
মেঘ জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো, ইয়ে মানে না আংকেল!
নীলাঃ না মানে কি হ্যা! কোনো মানে টানে নেই। এখন চল তো ছাদে গিয়ে গল্প করি! চল।
নীলা মেঘের বাহু ধরে মেঘকে টানতে টানতে সিড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
সময় রাত সাড়ে এগারোটা।
তুলি রৌদ্রের ঘরে যাবার জন্য ড্রইং রুমের কাছে আসতেই শোফায় বাসা রাফিকে দেখতে পেলো।
রাফিও তুলিকে দেখে হাতে থাকা নিউজ পেপারটা নামিয়ে বলে উঠলো,কোথায় যাচ্ছিলে! রৌদ্রের ঘরে বুঝি? গিয়ে লাভ নেই! ও এখন বান্ধুবিদের সাথে বিজি!
রাফির কথা শুনে তুলি আহত হয়ে বললো,কি! হেরা আবার আইছে!
সাথে সাথে তুলি দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠে রৌদ্রের ঘরের দিকে চলে গেল। দরজা থেকেই উঁকি দিয়ে দেখলো, ভিতরে রৌদ্রের বেডে ওর কাছে দুইজন মেয়ে এবং বাকি তিনজন মেয়ে চেয়ারে বসে আছে।
এই দৃশ্য দেখার সাথে সাথে তুলির মন খারাপ হয়ে গেল। যেন আকাশে মেঘ জমেছে। তুলি সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলো৷ নিচে আসার সাথেই রাফি খুব উৎসাহ নিয়ে জিগাসা করলো, কি দেখলে!
তুলি আস্তে করে উত্তর দেয়, হ দেখলাম!
রাফি বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে বলছে, বলেছিলাম না, ও এখন সুন্দরী মেয়েদের সাথে ব্যস্ত! ওকে কি আর এখন পাবে তুমি! ওসব ছাড়ো বুঝলে!
তুলির চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।
তুলিঃ হ ঠিকই কইছেন! উনার মতো সুন্দর পোলা সুন্দরী মাইয়ার দিকেই তো তাকাইবো! আমার মতো মাইয়ারে কি আর দেখবো!
.
কাঁদতে কাঁদতে তুলি আবারও তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উঠে অহনার ঘরে চলে গেল।
তুলির চোখে পানি দেখে রাফির সামান্য খারাপ লাগলেও রাফি এটাই চাইছিলো। রৌদ্রের জন্য তুলির দুর্বলতা নষ্ট হয়ে যাক আর সেই মুহুর্তেই রাফি তুলিকে পাকাপাকি ভাবে প্রপোজ করবে।
.
অহনা রুমে বসে আকাশের সাথে ফোনে কথা বলছিলো।
আকাশঃ জান এখন রাখি। আমাকে এখন একবার পেশেন্টদের দেখে আসতে হবে।
অহনা আদুরে গলায় বললো, তুমি আমায় সময়ই দেও না।
আকাশঃজান আজ সারাদিন তোমার সাথেই তো ছিলাম তবুও বলছো আমি তোমায় সময় দেই না!
অহনা আবারও আদুরে গলায় বলছে, হয়েছে থাক। আচ্ছা যাও! লাভ উ!
আকাশঃ লাভ উ টু মাই জান। উম্মাহ!
.
আকাশ ফোন রাখতেই অহনা এদিকে ফিরে তাকাতেই তুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
অহনাঃএকি তুই কাঁদছিস কেন!
তুলি এগিয়ে এসে অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করে দেয়।
অহনাঃ আরে কি হয়েছে বলবি তো!
তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আপা তোর দেবর তো কত গুলান সুন্দরী মাইয়া গো লগে! আমার দিকে কি সে আর তাকাইবো! আপা আমার বুকটা পুইড়া যাইতাছে আপা!
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here