#প্রেমনগর
পর্বঃ৪
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
আকাশের চাচী বললেন, এটা কেমন বউ! আমি তো মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মনিরা বেগমঃ বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর কিই বা করার আছে। মা হয়ে ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দেখছি। আরও যে কি কি দেখার বাকি আছে আল্লাহই ভালো জানেন। এই বাড়িতে আমার কথার মূল্যই বা কই। যেমন বাবা তেমন হয়েছে ছেলে গুলোও!
আকাশের চাচীঃ ধৈর্য্য ধরেন ভাবি। দেখবেন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
প্রেমনগরের চৌধুরী মহলের অনেকেই অহনার অদ্ভুত আচরণ গুলো লক্ষ্য করেছে।এবং তারা ভেবেই নিয়েছে অহনার মাথায় কিছুটা গন্ডগোল রয়েছে।বৌভাতে মেয়ে বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। তাদের সবার খাতির যত্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অহনা সেজেগুজে আকাশের সাথে বসে রয়েছে। ঘর ভর্তি লোকজন আসছে আর যাচ্ছে। আকাশ লোকজনের সাথে কথা বলার জন্য উঠে যেতেই অহনা তুলিকে ডাক দিলো।
অহনাঃ এদিকে আয়, বস গল্প করি।
তুলিঃ আপা শোন! তোর ওই দেবরটা না কেমন কইরা যেন তাকায়। ওই দেখ এহনো তাকায় আছে৷
অহনা আর তুলি এদিকে তাকাতেই রৌদ্র অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে দিলো।
অহনাঃ উফফ! কই না তো।
তুলিঃ আছিলো। আমি খেয়াল করছি। আর খুবই বেশরম। আর কাল রাইতে যা দেখছি… ছি ছি ছি ছি…ওইডা আমি কইবার পারুম না!
অহনাঃ বাদ দে তো। জানিস আমি ১০ টা প্রেম করবো! আমাকে অনেক গুলো ছেলে প্রপোজ করেছে। সবাইকে ঝুলিয়ে রেখেছি। হাহাহা। এখন আস্তে আস্তে গুনে গুনে সেগুলো একসেপ্ট করবো।
তুলি আতঙ্কিত হয়ে বললো, আপা!
ওখানে উপস্থিত থাকা রৌদ্র কথাটা অলরেডি শুনে ফেলছে।
রৌদ্রঃ ওয়াট! আর উ ম্যাড ভাবী!
অহনা হাসতে হাসতে বলছে, আমি প্রেম করবো তো,অনেক গুলো করবো। হিহিহি
রৌদ্রঃ ওয়াট!!! অনেক গুলো প্রেম করবে মানে! তাহলে আমার ভাইয়াকে বিয়ে করেছো কেন!
.
রৌদ্রের কথায় আকাশ এদিকে এগিয়ে আসে।
আকাশঃ কিরে কি হয়েছে?
রৌদ্রঃ ভাইয়া,ভাবী নাকি অনেক গুলো প্রেম করবে।
আকাশ অবাক হয়ে একটু মুচকি হেসে অহনার দিকে তাকায় আর অহনা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে দুইহাত উপরে তুলে হাতের দশটা আঙুল দেখিয়ে বললো,করবো তো গুনে গুনে একেবারে দশটা! হিহিহি
শুনে আকাশের মুখের আকৃতি বদলে যায়। মুচকি হাসা বন্ধ হয়।
আকাশঃ এসব তুমি কি বলছো।
অহনাঃ হিহিহি…
আকাশঃ চুপ! আর কেউ যেন এই কথাগুলো না শোনে। তুমি আমায় বিয়ে করেছো। বিয়ের পর আর অন্য কারো সাথে প্রেম করা যায় না। এসব শুনলে সবাই কি ভাব্বে,ছি ছি ছি। আমার মান সম্মান সব যাবে।
অহনাঃ আমি তো..
আকাশঃ চুপ! এখানে আর কোনো কথা বলবে না তুমি। চলো ভিতরে চলো।
অহনাঃ আমি…
আকাশ অহনার মুখে আঙুল দিয়ে অহনাকে চুপ করিয়ে দিলো৷ তারপর অহনাকে ভিতরে যাবার জন্য বললেও অহনা রাজি না হওয়ায় আকাশ ওকে কোলে তুলে জোর করেই তাড়াতাড়ি ভিতরে নিয়ে গেল। কারণ এখানেই থাকলেই অহনা কোনো একটা গন্ডগোল বাধিয়ে দেবে। এখানে ঘর ভর্তি মেহমান।
.
আকাশ অহনাকে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে যাবার সময় মেহমানদের মধ্য একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা তা দেখে আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, আজকাল পোলাপানের লজ্জাশরম একেবারেই উঠে গেছে,মুরুব্বীও মানে না,ছি ছি ছি! প্রেয়ার মহব্বত আছে বইলা কি সকলের সামনেই এভাবে ঢলাঢলি করবে নাকি? কি দিন আইলো।আগে আমাদের বিয়ে হলে তো লজ্জায় ঘোমটাই শরাইতাম না!
রৌদ্র হাসতে থাকে।
তুলি কিছুটা ক্ষেপে বললো, আমার আপারে নিয়া হাসবেন না কইলাম!
.
মেঘ বাড়ি ফিরলো। মনিরা বেগম এসে বললেন, এতোক্ষণে তোর আসার সময় হলো? এদিকে সবাই ওই বাড়ি যাওয়ার জন্য রওয়া হচ্ছে! আজকের দিনটা অন্তত তোর ক্যাম্পাসে না গেলে হতো না?
মেঘঃ মানে কি আমিও যাবো নাকি!
মনিরা বেগমঃ যাবি মানে আকাশ তোকে আর রৌদ্রকে সাথে নিয়ে যাবে বলেছে৷ আজ দিন থেকে কালই চলে আসবে। বৌমার অবস্থা ভালো না তাই আকাশ ওকে বেশিদিন ওখানে রাখবে না। নিয়ম অনুযায়ী বাপের বাড়ি যেতে হয় তাই যাচ্ছে। একদিন থেকেই চলে আসবে।
মেঘঃ আমি যেতে পারবো না। আজ একটু কাজ আছে।
আকাশ ওখানে এসে উপস্থিত হয়,
আকাশঃ যাবি না মানে! তুই যাবি ব্যাস। আর কোনো কথা নয়। ভাইয়ের বিয়ে আর তুই সকাল থেকে কোথায় ছিলি হ্যাঁ?
মেঘঃ ভার্সিটি গিয়েছিলাম।
আকাশঃ আজও! খুব জরুরী কোনো ক্লাস ছিলো নাকি?
মেঘঃ তোর জন্য ক্লাস না করেই চলে এসেছি।
আকাশঃ গেলি অথচ ক্লাস না করেই চলে এলি ? ব্যপারটা তো সুবিধার মনে হচ্ছেনা।
মেঘঃ আরে এসব কি বলছিস!
আকাশঃ হাহাহা…তা তার সাথে হয়েছে দেখা?
মেঘ এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো…হয়েছে!
আকাশ মেঘের ঘারে চাপড় দিয়ে দিল।
আকাশঃ চল!
.
অহনার বাড়ি যাবার জন্য সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছে। ভাগ্য ক্রমে শুধুমাত্র তুলির জায়গা হলো না। তুলিকে মেঘ আর রৌদ্রের গাড়িতে গিয়েই বসতে হলো। ছেলেদের গাড়িতে উঠে শরমে তুলি মরে যাচ্ছিলো। ওরা তুলির সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত লজ্জায় তুলি চুপচাপ ছিলো। অহনার বাড়িতে ফিরে অনেক গল্প গুজবের পর রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই শুয়ে পরলো। মেঘ আর রৌদ্রকে এক রুমে রাখা হয়েছে। অনেকক্ষণ থেকে মেঘের ফোনের রিংটন বেজেই যাচ্ছে। ফোনটা নিয়ে কথা বলার জন্য মেঘ এবার এই বাড়ির ছাদে চলে গেলো। রৌদ্র তার প্রিয় ল্যাপটপটা সাথেই নিয়ে এসেছে। রুমে একা একা বসে ল্যাপটপে টিপাটিপি করছে। হঠাৎ মনে হলো একটু বাগানে গিয়ে হাওয়া খেয়ে আসবে। রৌদ্র বাহিরে চলে এলো। বাগানে বসে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেয়েদের সাথে জমিয়ে চ্যাটিং করছে।
.
পানি খাওয়ার জন্য তুলি ডাইনিং রুমে এসেছে। ডাইনিং রুমের জানালা দিয়ে এতো রাতে বাগানে কাউকে বসে থাকতে দেখে কৌতুহলবসতো তুলি বাহিরে চলে এলো।
মনে মনে বলছে,এতো রাতে ওইহানে কে? আবার আলোও জ্বলতাছে! ভূত নয়তো?
তুলি একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যায়। এবার তুলির মুখ থেকে হালকা আওয়াজ বেড়িয়ে এলো,কে ওইহানে?
সাথে সাথে রৌদ্র চমকে উঠে পিছনে তাকায়। তুলিকে দেখে বলে উঠলো, তুমি! যাক এসেছো ভালোই হয়েছে।এদিকে শোনো, কাছে এসো। যদি কিছু মনে না করো একটা কথা বলবো৷
তুলি মনে মনে বলছে, ওহ! ওই বেশরমডা এইহানে? আমারে আবার কাছে যাইবার কয় ক্যান। নিশ্চয়ই কোনো খারাপ মতলব আছে!
.
রৌদ্রের কথায় ভয় পেয়ে তুলি কোনো কথার উত্তর না দিয়েই হনহন করে হাটা শুরু করলো। রৌদ্রও পিছু পিছু আসতে থাকে।
রৌদ্রঃ এ্যাই শোনো? দাঁড়াও।
ভয়ে তুলি জোরে জোরে হাটতে থাকে। রৌদ্রও ওর পিছু পিছু দৌড়ে দৌড়ে আসছে। হঠাৎ তুলির ওড়নায় টান পরে। ভয়ে জমে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল তুলি। ভয়ে সারা শরীর কাঁপতে থাকে। রৌদ্র ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দিকে পা বাড়াতে গেলেই তুলির ওড়নাটা পিছনে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ওটা শক্ত করে ধরে আছে। লজ্জা আর ভয়ে তুলি চোখ বন্ধ করে জড়সড় হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে কয়েক মিনিট কেটে গেল। তুলির কোনো নড়াচড়া না দেখে রৌদ্র এবার গোলাপ গাছের কাঁটার সাথে বেধে যাওয়া তুলির ওড়নাটা ছাড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করলো। ওড়ানাটা গাছ থেকে ছাড়াতেই হঠাৎ করে তুলি সাহস করে চোখ মেলে পিছনে তাকালো আর রৌদ্রের হাতে নিজের ওড়না দেখে বলে উঠলো, শরম নাই আপনের! আপনে আমার ওড়না টাইনা ধরছিলেন ক্যান! ছাড়েন আমারে!
রৌদ্র অবাক হলে ওড়ানাটা নিজের হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো, ওটা আমি ধরিনি তো! ওড়নাটা তো তোমার ওই গাছ….
পুরো কথা না শুনেই তুলি ওখান থেকে দৌড় দিলো।
.
এদিকে ফোনে মেঘের সাথে নীলার হালকা পাতালা ঝগড়া হয়৷ নীলার বক্তব্য সকাল বেলা মেঘ নীলার দেওয়া পানি খায় নি আর নীলার সাথে দেখার না করেই ক্যাম্পাস থেকে চলে এসেছে। মেঘ অবশ্য চেয়েছিলো সকালের ঘটনার জন্য বিকেলবেলা নীলার সাথে দেখা করতে কিন্তু এখানে আসার জন্য তা হয়নি। মেঘ রুমে আসতেই রৌদ্র বলে উঠলো, কিরে ভাইয়া কি হয়েছে, মেজাজ খুবই হট মনে হচ্ছে। তখন থেকে দেখছি তুই ফোন নিয়ে পরে আছিস।
মেঘঃ কিছুনা। মাথাটা খুব ধরেছে রে।
রৌদ্রঃ আমারও। এক মগ কফি খেতে পারলে ভালো হতো। একটু আগে এই বাড়ির একজনকে ডেকে কফির কথা বলতে চাইলাম কিন্তু সে না শুনেই চলে গেল। ভেরি আনকালচারাল!
মেঘঃ এখন হট গান শুনতে পারলে ভালো হতো! গরম হয়ে যেতাম। সেটা কফির থেকে বেশি কাজে দেবে।
রৌদ্রঃ সো লেস্টস স্টার্ট!
.
রৌদ্র তার ল্যাপটপে থাকা সেই ব্রা প্যান্টি পরা মেয়েদের ভিডিও সং প্লে করলো। মিউজিক ভিডিও দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে দুই ভাই শার্টের বোতাম খুলে নাচতে শুরু করে। এদিকে কিছুক্ষণ আগে ওড়না টেনে ধরার ঘটনায় তুলির সব ঘুম উড়ে চলে গেছে। ঘুমই আসতে চাইছে না। বিছানায় শুয়ে ঘটনাটা বার বার মনে করে শুধু এপাশ ওপাশ করছে আর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। হঠাৎ বিছানা থেকে উঠে কি মনে করে যেন বাহিরে এলো। তারপর মেঘ আর রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজাটা হালকা একটু খুলে রুমের ভিতর উকি দিতেই তুলির চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। মেঘ আর রৌদ্র দুইজনই মাতালের মতো হয়ে রয়েছে। রুমের ভিতর ল্যাপটপে চলছে ব্রা প্যান্টি পরা আর একদম ছোট ছোট কাপড় পরা সুন্দরী মেয়েদের নাচ!
তুলি চোখ পিট পিট করে বলতে থাকে, ছি ছি! বেশরম কোথাকার! কত্ত খারাপ!
মেঘ আর রৌদ্র ইংলিশ ভিডিও সং দেখছিলো আর নিজেরাও হালকা কোমর দুলাচ্ছিলো। নাচতে নাচতে হঠাৎ রৌদ্রের দরজার দিকে চোখ পরতেই তুলি দৌড় দিতে গিয়ে ওড়নাটা দরজার সাথে আটকে গেল ।
.
চলবে….