#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১০
__
‘টায়রার ডাকে নিজ লজ্জা’হীন আঁখি দুটোকে সামলে নিয়ে টায়রার পানে তাকাল বেলা।টায়রা আপন চিত্তে ব্যক্ত করতে লাগল,
— তুই এমন ‘হা’ করে কি দেখছিস?
বেলা নিজ মনে বিড়বিড় করতে লাগল,
— তোকে কি করে বলি?আমার দুই চোখ দিয়ে তোর ভাইকেই গিলে যাচ্ছি।
টায়রা বেলাকে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,
— কোথায় হারিয়ে গেলি আবার?
— কোথাও না । আচ্ছা শোন আজকে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, মনে হয় না আজ আর স্কুলে যেতে পারব। চল কিছু একটা বাহানা দিয়ে বাড়িতে থেকে যাই।নয়তো এই বৃষ্টিতেই পাঠিয়ে দিবে।
— ঠিক বলেছিস। চল গিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করি।
— আচ্ছা চল।এটা বেশ হবে।
টায়রা আর বেলা নিজ নিজ মায়ের সমীপে গিয়ে নানা কৌশলে তাদের অন্তঃকরণ গলাবার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।অতঃপর ফলাফল শূন্যে গিয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞতা রায়াযের নাস্তা শেষ হতেই তার সহিত স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় দুজন।তবে যাওয়ার আগে মায়েদের শর্ত দিয়ে যায়,,তারা টিফিনের পর আর ক্লাস করতে ইচ্ছুক নয়।তাদের মায়েরা তাদের এই সিদ্ধান্তে সায় জানিয়ে রায়াযকে বুঝিয়ে দেয় যেন, প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে দেয়।রায়ায সায় জানিয়ে দুজনকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে পুনরায় বাসায় ফিরে আসে।আজকে সে আর ভার্সিটি যাবে না।
রায়াযের যাওয়ার পানে আঁখি মেলে একধ্যানে তাকিয়ে রয় বেলা।রায়াযের এমন নিশ্চুপ ভাব যেন কারো হজম হচ্ছে না। কারো কণ্ঠ শ্রবনপথে পৌঁছতেই ঈষৎ চ’মকে ফিরে তাকায় টায়রার পানে বেলা,, টায়রা বলে উঠে,
— দেখলি তো বেলা ভাইয়া কেমন নিশ্চুপ হয়ে পড়েছে।সকাল থেকে লক্ষ্য করছি।
বেলা আঁখি পল্লব ঝাপটে উত্তর দেয়,
— আমিও।আচ্ছা চল ক্লাস শুরু হলো বৈকি।
__
ক্লাসে বসে আশার সাথে ফিসফিসিয়ে বকবক করে চলছে বেলা, থামার নাম-গন্ধ নেই।বেলা আশাকে নিজ অন্তঃকরণের দুঃখ ভাগ করতে বলে উঠে,
— জানিস তো আশা আজ রায়ায ভাইয়াকে কালো পাঞ্জাবিতে কি সুদর্শন লাগছিল।ইচ্ছে করছিল একদম খেয়ে নেই মিল্কশেকের মত। আশা’রে ভাইয়া আমাকে কবে বুঝবে’রে।কবে আমার ভালোবাসা স্বীকার করবে?
— নো চিন্তা, নো ফিকার। এই আশা আছে না? এমনি এমনি কি চার চারটা বয়ফ্রে’ন্ড সামলাই নাকি?তোর সমস্যা আজকেই শেষ করে দেব। শোন আজকে কিন্তু ভ্যালেন্টাইন।যা করার আজকেই করতে হবে।
বেলা আশায় কথায় নেত্র বড় বড় করে হতভম্ব হয়ে রইল কিছুক্ষন।পূনরায় আশায় গুতো খেয়ে হুশ ফিরে এলে কথায় মনোযোগ দেয়।
— আমি কি কি বলেছি বুঝেছিস তো বেলা?
— ইশরে! আমার শুনেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছেরে আশা।
— রাখ তোর লজ্জা। পুরুষ মানুষ এসবেই গ’লে পানি পানি হয়ে যায়।দেখবি রায়ায ভাইয়া ও তোকে মেনে নিবে আশা করা যায়।আমি যেভাবে যেভাবে বলেছি ঠিক সেভাবে সেভাবেই করবি কিন্তু! কেমন?
বেলা ঘাড় কাৎ করে সম্মতি জানায়।পূনরায় ব্যক্ত করে,
— কিন্তু রায়ায ভাইতো অনেক লম্বা আর আমি লিলিপু’ট!
— তো কি হয়েছে? দরকার পড়লে দশ ইঞ্চির হিল পরবি বুঝেছিস।
বেলা পুনরায় সায় জানিয়ে ক্লাসে মনোনিবেশ করে।
__
আজ যেন বেলার মন খারা’পের দিন।বাড়ি ফিরে নিজ রুমে শুয়ে আছে বেলা।বৃষ্টি যেন কমতেই নারাজ।এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভার গিয়ে বেলা আর টায়রাকে নিয়ে এসেছে।আজকে ফুপিরা চলে যাবে ভেবেই আঁখি জলে ভরে উঠছে বেলার।পলক ঝাপটে উঠে দাঁড়ায় বেলা, উদ্যত হয় কিয়ারার রুমের উদ্দেশ্যে।
আপন চিত্তে কিয়ারা কিছু একটা নিয়ে ভাবনায় বিভোর।বেলা ক্ষীণ পায়ে কিয়ারার সন্নিধ্যে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে পড়ে। বেলাকে দেখে কিয়ারা ব্যথিত চিত্তে উঠে বসে।বেলা কিয়ারার ব্যথিত মনোভাব বুঝতে পেরে বেলা বলে উঠে,
— আপু আজকে থেকে যাও’না।দেখো বৃষ্টি এখনও থাকেনি।
— আচ্ছা দাড়া মাকে দেখি মানানো যায় কিনা?
__
বৃষ্টির কারণে আজকে আদিবরা থেকে যায়।মন্থরবেগে সাঁঝ এসে হানা দেয় আকাশের বুকে। ক্ষণকাল পূর্বে বৃষ্টি থেমে গেছে, কিছু সময় পূর্বেই ডেলিভারি ম্যান এসে বেলার প্রয়োজনীয় সকল জিনিপত্র ডেলিভারি দিয়ে যায়। অজ্ঞতা বেলা লেগে পরে কাজে। আশার বলা কথার প্রেক্ষিতে সকল কিছু রেডি করে নেয়। বৃষ্টির কারণে আপাদত ছাদে যেতে কেউ ইচ্ছুক নয়। ফলস্বরূপ এটাই যেন বেলার জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়।এখন শুধু রাত হওয়ার পালা।
____
রাত এখন বারোটা বেজে বিশ মিনিট।সহসা রায়াযের ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে।রায়ায কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে মোবাইল হাতে নেয়।ম্যাসেজ খানা দেখে রায়াযের ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে গেল। আপন চিত্তে বিড়বিড় করে উঠল,
— চাচিমা! এতো রাতে ম্যাসেজ দিয়ে ছাদে যেতে বলছে?
রায়ায আপন চিত্তে ভাবনায় বিভোর হয়ে ব্যগ্র পা বাড়ায় ছাদের দিকে।ছাদে এসে রায়াযের চক্ষু ললাটে ওঠার উপক্রম।ছাদের সর্বদিক গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সজ্জিত তার সহিত ক্যান্ডেল ও রয়েছে চারিপাশে ছড়িয়ে।এসব দৃষ্টিপাত হতেই রায়ায ইষৎ চমকে উঠল।সহসা পৃষ্ঠদেশ দিক হতে কেউ তার পাঞ্জাবি খামচে ধরে পশ্চাৎদিকে ঘুরিয়ে নিল।রায়াযকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে অগন্তুক তার ওষ্ঠে নিজ ওষ্ঠ স্পর্শ করল। দীর্ঘ্ হতে দীর্ঘ হলো সে স্পর্শ,,, যেই রায়ায বুঝতে পারল ঠিক কি হচ্ছে? সহসা নিজ কায়া থেকে সেই নারী মূর্তির বদনখানি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। বেলা শঙ্কিত আঁখি মেলে যেই রায়াযের পানে তাকাল,, অকস্মাৎ বেলাকে দেখে রায়ায কিঞ্চিৎ চমকে উঠে নিজ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে দৃঢ়চিত্তে নিশ্বাস নিতে লাগল।রায়ায অগ্নিমূর্তি ধারণ করে সুদৃঢ় কণ্ঠে বেলার পানে প্রশ্ন করে উঠল,
— তুই! তুই এখানে এত রাতে কি করছিস? আর কিছুক্ষন আগে কি করতে চাইছিলি এটা?
রায়াযের রক্তবর্ণ আঁখি দেখে বেলার অন্তঃকরণ ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠল।পরন্ত সে হেরে না গিয়ে রায়াযের সমীপে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল,, অতঃপর নিজ আঁখি পল্লব বন্ধ করে আপন গহীন চিত্তে লুকিয়ে রাখা বাক্য ব্যক্ত করে উঠল,
— ভাইয়া আমি সত্যি আপনাকে অনেক ভালোবাসি,,আমার ভালোবাস গ্রহণ করে নিন! আমি সবসময় আপনাকে ভালোবেসে যাব ভাইয়া।
সহসা কপোল জুড়ে এক ভয়ংকর থাপ্পড়ের আভাস পেল বেলা। যায় দারুণ ছিটকে গিয়ে পড়ল একদম ছাদের মেঝেতে।থাপ্পড় এতটাই জোরালো ছিল যে বেলার ওষ্ঠের কার্নিশ বেয়ে রক্ত ঝরে পড়ল।সহসা নিজের কেশের ফাঁকে রায়াযের বলিষ্ঠ হাত প্রবেশ করতে দেখে শঙ্কিত নয়নে রায়াযের পানে তাকায় বেলা।রায়ায খুব দৃঢ়ভাবে বেলার চুলের মুঠি চেপে ধরে নিচ থেকে টেনে তুলে ভয়ংকর চিৎকার করে বলে উঠে,
— তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই!তাছাড়া তোর সাহস কি করে হলো আমাকে কিস করার?(চিৎকার করে কথাগুলো বলে উঠে রায়ায) তাছাড়া কাল না তোর আরেক নাগরকে দেখলাম প্রপোজ করেছিলি? এখন আবার আমার কাছে এসেছিস? চরিত্রেহীন মেয়ে! আজ তোর একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়ব।
নিজ বাক্য ব্যক্ত করেই রায়ায বেলাকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেল।বেলা সমানতালে কেঁদেই চলছে।বেলার চক্ষুর জল যেন আজ রায়াযের পাথর সমতুল্য অন্তঃকরণ গলাতে অক্ষম।সহসা রায়ায চিৎকার করে বাড়ির সকলকে ডাকতে লাগল। মধ্যপ্রহরে এমন চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাড়ির সকলে হতভম্ব হয়ে ছুটে এলো ড্রইংরুমে।বেলাকে এমন মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সকলে আঁতকে উঠলেন।মেয়েকে এমন বিধ্বস্থ অবস্থায় দেখে দৌড়ে মেয়েকে নিজ বক্ষে টেনে নিলেন রুমি বেগম। রাজিয়া বেগম নিজ ছেলের সন্নিধ্যে এসে শঙ্কিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস কিরে উঠলেন,
— কি হয়েছে রায়ায? তুই এই মাঝরাতে এমন চিৎকার করছিস কেন? আর বেলার কি হয়েছে? ও এমন মেঝেতে বিধ্বস্থ অবস্থায় কেন পড়ে আছে?
মায়ের কথা কর্ণপাত হতেই রায়ায হুংকার ছাড়ল,
— কি করেছে? এই মেয়েকেই জিজ্ঞেস করো? চরিত্রহীন মেয়ে একটা!
ছেলের এহেন কথা শুনে রাজিয়া বেগম এবার রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
— এসব তুই কি বলছিস রায়ায ?
পুনরায় রায়ায হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,
— এখনই এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করো।একে দেখে আমার ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে।এই মেয়েকে যত পার আমার থেকে দূরে রেখ।
কথাটা বলেই গটগট পায়ে রায়ায নিজ রুমে চলে গেল।
আকস্মিক রুমি বেগম নিজ মেয়ের কপোলে কয়েকটি চড় বসিয়ে দিল।রুমি বেগমের এহেন কাজে রাজিয়া বেগম নিজ বোন সমতুল্য জা’য়ের নিকট এসে জা’কে শাসিয়ে উঠলেন,
— কি করছিস কি ছোট? ওকে কেনো মারছিস?
–, কারণ আমি জানি এই মেয়েই সকল গন্ডগোলের মূল্।নিশ্চয়ই এই মেয়ে কিছু একটা করেছে যায় দারুণ রায়ায এতটা রেগে গেছে।তাই সবার ভালোর জন্য এই মেয়ের একটা ব্যবস্থা আমি করেই ছাড়ব।
কথাটা বলেই রুমি বেগম নিজ মেয়ের বাহু শুক্ত হাতে পাকরাও করে মেয়ের রুমের উদ্দ্যেশে প্রস্থান করলেন।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। বাহির থেকে সকলে বারংবার দরজায় করাঘাত করে যাচ্ছে সমান তালে। ভিতর হতে ভেসে আসছে বেলার কান্নার আওয়াজ।
ক্ষণকাল পর রুমি বেগম মেয়ের রুম থেকে বের হয়ে এলেন।সকলে দৌড়ে উনার সন্নিধ্যে এগিয়ে গেলাম।উনি সকলকে থামিয়ে দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
— বেলা এখন ঘুমাচ্ছে। বাকি কথা পড়ে হবে।এখন সবাইকে যার যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।রাত প্রায় শেষ হতে চলল।
অজ্ঞতা সকলে যার যার রুমে চলে গেলেও কিয়ারা বোনের পাশে থাকতে চাইলে রুমি বেগম বুঝিয়ে-সুজিয়ে পাঠিয়ে দিলেন নিজ রুমে।
এতক্ষন সকলের সাথে আদিব ও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। যাওয়ার আগে একপলক বেলার কক্ষের পানে আঁখি মেলে তাকিয়ে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজ রুমের উদ্যেশে অগ্রসর হয়।
.
.
.
চলবে ইনশাল্লাহ,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১১
__
ট্রেনে বসে বাহিরের দিকে আঁখি মেলে চেয়ে আছে বেলা।নির্বাক চিত্তে বিরতিহীন অশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলছে বেলা।আজকেই ঢা’কাতে তার শেষ দিন।আজই নিজ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অচেনা শহরে।শেষ দেখা ও হলো না আপন মানুষগুলোর সাথে। প্রগাঢ় ভাবনায় বিভোর বেলা টেরই পেল না তার অপরপাশে কেউ একজন এসে নিজ আসন গ্রহণ করেছে।সহসা কারও কণ্ঠে নিজ নাম শুনে ইষৎ চমকে উঠে বেলা, পাশ ঘুরে অপরপাশের ব্যক্তির মুখপানে তাকিয়ে বিস্ময়কর নয়ন-জোড়া বড় বড় করে রাখে।অপরপাশে অবস্থিত ব্যক্তি নিজ ওষ্ঠ নেড়ে বেলার পানে তাকিয়ে বলে উঠে,
–, আমাকে চিনতে পেরেছো বেলা?
বেলা আপন চিত্তে ভাবনায় বিভোর হয়ে বলে ওঠে,
— আর আপনিতো সেই ভাইয়াটা তাই না! যে আমাকে ওইদিন বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল।
রাফি নিজের মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।অতঃপর পূনরায় অবাক চিত্তে ব্যক্ত করে উঠে,
— কিন্তু তুমি একা! এতো সকালে কোথায় যাচ্ছো?
সহসা বেলা নিজের মাথা পতিত করে বলে উঠে,
— খুলনা যাচ্ছি। নানুর বাড়িতে।
বেলার বলা বাক্য সমূহ কর্ণগোচর হতেই রাফি কিঞ্চিৎ চমকে পুনরায় বেলাকে জিজ্ঞেস করতে লাগে,
— কিন্তু তুমি একা কেনো! বাকিরা কোথায়?
পূর্বেরন্যায় বসে থেকে বেলা উত্তর প্রদান করে,
— ভাইয়া এতকিছু বলতে পারছি না আপাদত। কিন্তু এটা বলতে পারব, আমাকে এই মুহূর্তে নিজ শহর, নিজ পরিবার সব ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কিছু মনে করবেন না আমার কথায়।
অজ্ঞতা রাফি আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে চুপটি করে বসে রইল।
—
নাস্তার সময় হতে সকলে এসে উপস্থিত হলো।যে যার যার আসন গ্রহণ করে বসে পড়ে টেবিলে।বেলার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে রাজিয়া বেগম রুমি বেগমকে জিজ্ঞেস করে উঠে,
— বেলা কোথায় ছোট? ওকে তো দেখছি না সকাল থেকে।
রুমি বেগম জায়ের পানে আঁখি মেলে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে উত্তর দেয়,
— যেখানে থাকার সেখানেই আছে আপা।
ঈষৎ চমকে উঠে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে রাজিয়া বেগম বলে উঠে,
— কিন্তু আমি তো ওকে কোথাও দেখতে পারছি না ছোট? সত্যি করে বল বেলা কোথায়?
ভাবহীন চিত্তে রুমি বেগম ব্যক্ত করে,
— সকলের মঙ্গলের জন্য বেলা এই শহর ছেড়ে চলে গেছে, এরবেশি আমি আর কিছু বলতে পারব না আপা।তবে বলল তোমরা কেউ চিন্তা করো না,, ও যেখানেই আছে ভালো আছে।
কথাটা বলেই রুমি বেগম প্রস্থান করলেন।কেবল রেখে গেলেন কিছু মানুষের শঙ্কিত চমকিৎ মুখচ্ছবি।
রায়াযের গলা দিয়ে যেন খাবার নামতে নারাজ।সেই যে আটকে গেছে আর নামতে চাইছে না। সে নির্জীব দৃষ্টিতে একমনে তাকিয়ে আছে খাবারের দিকে। সে আপন চিত্তে ভাবতে লাগল,, সে কি খুব বেশি খারাপ করে ফেলল মেয়েটার সাথে?কেনো মেয়েটাকে তার জন্য শহর ছাড়তে হলো?খুব কি বড় ভুল করেছিল মেয়েটা?একটু বোঝালেই হতো।নিজের রাগকে যদি একটু সংযত করতে পারত তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হয়তো না।খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রায়ায়,,গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
স্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তে নারাজ জিসান সাহেব।কারণ তার একটাই মেয়ে, বড়ই আদরের মেয়ে তার কিন্তু তার স্ত্রী সর্বদাই মেয়ের প্রতি একটু কঠোর। সহসা খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।স্ত্রীর পানে ব্যগ্র পায়ে ছুটে চললেন।তার মেয়ে কি এমন ভুল করল যার দারুণ তাকে বাড়ি ছাড়া এমন কি শহর ছাড়া করলেন তার স্ত্রী।
রুমি বেগিনের সন্নিধ্যে এসে জিসান সাহেব স্ত্রীকে প্রশ্ন করে উঠলেন,
— কি এমন করেছে বেলা? যার জন্য তুমি ওকে এতবড় শাস্তি দিলে।
স্বামীর পানে তাকিয়ে রুমি বেগম দৃঢ় চিত্তে জবাব দেয়,
— মস্ত বড় ভুল করেছে আপনার মেয়ে।আপনার মেয়ের বয়স হচ্ছে ঠিকই কিন্তু জ্ঞান হাঁটুর নিচে।তাই একটু আক্কেল হওয়ার আশায় ওকে ওর উপযুক্ত স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি।আমি চাইছি ওর জবাব ও নিজে দেক।
কথা শেষ করেই রুমি বেগম নিজ গন্তব্যে ছুটলেন।স্ত্রীর কথার শুরু-শেষ বুঝে উঠলেন না জিসান সাহেব।অজ্ঞতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
—-
নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেছে বেলা।আপন চিত্তে এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে খুজে চলছে কাউকে।অতঃপর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে পেয়ে ওষ্ঠে ছেয়ে গেল বেদনার আড়ালে কৃত্রিম হাসি।বেলা এগিয়ে গেল সেই দিক,,গিয়ে নিজ মামাকে সালাম প্রদান করল। অনিক নিজ ভাগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে ব্যক্ত করলেন,
— ইশ’রে! বেলা তুই মাশাল্লাহ কত বড় হতে গেছিস।কতদিন পর তোকে দেখলাম।সাথে আপা এলে বেশ হতো।তোকে কেন যে এতটা পথ একা পাঠাল আপা!, কিছুই বুঝলাম না।
বেলা আঁখির পল্লব ঝাঁপটে ব্যক্ত করে,
— এখন থেকে তোমাদের এখানেই থাকব মামা।আচ্ছা এবার চলো বাসায় যাওয়া যাক।
অনিক সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে ওঠে,
— হ্যা চল চল। দে তোর লাগেজটা আমায় দে।
অতঃপর তারা পা বাড়ায় নিজ গন্তব্যে
অনিক সাহেব হচ্ছে বেলার ছোট মামা।যে বর্তমানে মাস্টার্স কমপ্লিট করে ঘরে বসে।কাজে তার কোনো মন নেই,, সে নিজের মত দেশের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়।বেলার মায়েরা তিন ভাই এক বোন।তিন ভাইয়ের আদরের বোন হচ্ছে রুমি বেগম।
__
শিকদার বাড়িতে হইহই পড়ে গেছে বেলার আগমনে।বেলার বড় মামা রাজিব শিকদারের এক পুত্র এক কন্যা।মেঝো মামা আতিক শিকদারের দুই মেয়ে এক ছেলে।আর ছোট মামা অনিক শিকদার বর্তমানে ব্যাচেলর।রাজিব শিকদারের বড় পুত্র যে বর্তমানে উচ্চডিগ্ৰি অর্জনের উদ্দেশ্যে কানাডা অবস্থান করছে।
_
বর্তমানে বেলা নিজ নানুমনির সন্নিকটে অবস্থান করছে। রাফিদা বেগম আদরের মেয়ের একমাত্র কন্যার মাথায় আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।সহসা বেলি( রাজিব শিকদারের মেয়ে) এসে বেলাকে নিজ সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।সত্বর ওষ্ঠ নাড়িয়ে বেলা জিজ্ঞেস করে উঠে,
— কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে বেলি?
চপলতা সহিত বেলি বলে উঠে,
— চল তোকে নিয়ে আমাদের এলাকায় ঘুরে আসি।তার আগে চল আগে তোকে রেডি করিয়ে দেই।
অজ্ঞতা বেলা বেলির সঙ্গে পা বাড়াল বেলির রুমের দিকে।
____
— বেলি তুই এগুলো কি ড্রেস পরালি আমাকে!
বেলি ভাবহীন ভঙ্গিতে বেলার মুখ পানে আঁখি মেলে তাকিয়ে ব্যক্ত করে,
— শোন বেলা ফুপিয়া বলছে তোকে একটু মডার্ন আর দুনিয়া-ধারী শিখাতে।তুই যা গাধা! তোকে একটু চালক বানাতে বলেছে ফুপিয়া বুঝেছিস।এবার চল আমরা একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।বিকেল বেলা ঘুরে মজা আছে বুঝেছিস।
বেলা বিস্মিত আঁখি মেলে বেলির পানে চেয়ে মাথা কা্ৎ করে সায় জানায়।
অমি বেগমের কাছে বলে বেলাকে নিয়ে বের হয়ে এলো বেলি।
___
বাহিরে এসে বেলি নিজের বাইক বের করতে যায়। বেলিকে বাইক চালাতে দেখে বেলার চোখ বের হাওয়ায় উপক্রম।বেলা বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠে,
— বেলি তুই বাইক ও চালাতে জানিস!
বেলি ওষ্ঠের কার্নিশে অকৃত্রিম হাসি বজায় রেখে বলে উঠে,
— তোকে ও শিখিয়ে দিব। এবার তাড়াতাড়ি উঠে বস আয়।
নিজ এলাকা বেলাকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে বেলি। শঙ্কিত বেলা বেলির পৃষ্ঠদেশ খামচে ধরে বসে আছে।আগে কখনো বাইক উঠা হয়নি বেলার।শঙ্কিত চিত্তে সহসা প্রমোদ খেলে যায়।বেলা আঁখি জোড়া বুঝে নেয়।তার সর্ব কায়া জুড়ে খেলে যাচ্ছে মুগ্ধতা।বেলি এটা-সেটা দেখিয়ে যাচ্ছে বেলাকে।বেলি পার্কের পাশে নিজ বাইক সাইড করে নেমে পড়ে সঙ্গে বেলাকে টেনে নামিয়ে দেয়।দুজন আপন মনে হেঁটে চলছে,, বেলি বেলাকে এটা-সেটা চিনাচ্ছে।সহসা কোনো এক স্থান হতে অবির্ভাব হয় রুবেলের।
রুবেলের মুখমণ্ডল দৃষ্টিগোচর হতেই রেগে ভৎস হয়ে পড়ে বেলি,,রেগে হুংকার ছেড়ে বলে উঠে,
— এই চামচার বাচ্চা পথ ছাড় বলছি! নয়তো তোর একদিন কি আমার একদিন।
রুবেল মাথা নত করে নিজ চিত্তে অভিব্যক্ত করে,
— ভাবী আভ্র ভাই আপনাকে যেতে বলেছে।
বেলি এবার রেগে ফেঁটে পড়ে বলে উঠে,
— সা*লা আমি তোর কোন জনমের ভাবীরে?সামনে থেকে সর বলছি।
কথাটা শেষ করে বেলি বেলার হাত ধরে সত্বর গতিতে সামনের দিকে নিজের অধমাঙ্গ জোড়া বাড়াল।সহসা ওষ্ঠের কার্নিশে সিগারেট চেপে ধরে ধোয়া গগনের পানে উড়িয়ে বেলির সামনে এসে দাঁড়ায় আভ্র।
.
.
চলবে ইনশাল্লাহ,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১২
আভ্রকে সামনে দেখে সংঘাতিক রেগে গেল বেলি।বেলির মুখের সামনে গিয়ে আভ্র সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দেয়। আভ্রের এহেন কাণ্ডে বেলির মুখমণ্ডল ভয়ংকর লাল আভা ধারণ করে,,,বেলি তর্জনী আঙ্গুল উচুঁ করে আভ্রের মুখ-পানে চেয়ে বলে উঠে,
— এগুলো কি ধরনের অসভ্যতামি! আর সামনে থেকে সরে দাড়ান বলছি।আমাদের যেতে দিন।
বেলির ব্যক্ত বাক্য কর্ণপাত হতেই অভ্র বিভৎস হেসে, বেলির দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলে উঠে,
— ওহো সুন্দরী!তুমি খালি খালি রাগ করো। অবশ্য অভ্র চৌধুরীর বউয়ের তেজ থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।কি বলিস তোরা( চামচা গুলোর দিকে তাকিয়ে)।
কথাটা বলেই জোরে জোরে বিভৎস হাসি হাসতে লাগে অভ্র।
বেলা কিছুটা তটস্থ নয়নে আভ্রর পানে তাকিয়ে রইল।সহসা বেলার পানে আঁখি পড়ে আভ্রর।ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বেলিকে জিজ্ঞেস করে উঠে,
— এই নতুন পাখিটা কোথা থেকে নিয়ে এলে বউ?পাখিটা নিশ্চয়ই রুহাশ ভাইয়ার পছন্দ নিশ্চয়ই।
কথাটা শেষ হতেই অভ্র রুহাশকে ফোন লাগল। অভ্রর এহেন কাজে বেলি রেগে দৃঢ়কন্ঠে সতর্কমূলক বাক্য বলে উঠল,
— দেখুন বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না।আর বেলার দিকে তো ভুলেও আপনাদের দুইভাইয়ের একজন ও তাকানোর চেষ্টা করবেন না। নতুবা আমি আপনাদের কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে আসব।
বেলির মুখপানে দৃঢ় আঁখিতে দৃষ্টিপাত করে মোবাইলের দিকে মনোনিবেশ করে অভ্র,
— ভাই তাড়াতাড়ি আয়।তোর জন্য একটা নতুন পাখির খোঁজ পেয়েছি। হ্যা! জলদি আয়।
কথা শেষ করে বেলির দিকে আঁখি পল্লব মেলে দৃঢ়চিত্তে বলে উঠে,
— কলিজা ছিঁড়ে নাও আর যাই করো! বেলি ফুল তুমিতো আমার হবেই। আর রইল এই সুন্দরীর(বেলার অভিপ্রায় তাকিয়ে) একে ভাইয়ার পছন্দ হয়ে হলে এই পাখি ভাইয়েরই হবে ব্যাস।
বেলি এবার অচঞ্চল গতিতে রাগতে লাগল। শঙ্কিত বেলা বেলির পৃষ্ঠদেশের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজ সত্তাকে আড়াল করে নিল। বেলি রেগে গিয়ে আভ্রর উদ্দশের বলে উঠল,
— আপনাদের কি নিম্নতম লজ্জবোধ নেই! এতো এতো মেয়েদের জীবন নষ্ট করে আপনার ভাইয়ের শান্তি হয়নি।এখন আমার বোনের দিকে নজর দিতে আসছেন? খবরদার!
—
চারিদিক কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে রায়াযের।কোথাও যেন কারো উপস্থিতি নেই।সব কিছুতেই সে বিষিয়ে উঠছে। সবকিছুই কেমন বিরক্ত লাগছে।
ফিরেছে অনেক আগেই রায়ায,,নিজের রুমে বসে আছে।কাজেও কেমন মন বসতে অক্ষম সে।তাই নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখতে ব্যস্ত রায়ায।নিজের ভাবনায় বিভোর রায়ায,,সহসা করো কণ্ঠে নিজ নাম কর্ণগোচর হতেই ঈষৎ চমকে রুমের দ্বার খুলে দিতে রাজিয়া বেগমের চেহারা দৃষ্টিপাত হলো,,,পূনরায় সে রুমে বসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল।রাজিয়া বেগম ছেলের মুখপানে একধ্যানে তাকিয়ে থেকে ছেলের মাথায় আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলেন,
— রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে।ধ্যান কোথায় তোমার রায়ায?চলো নিচে যাবে খেতে।
রায়ায নির্জীব কণ্ঠে মাকে উত্তর করল,
— খাবো না মা, তুমি যাও।
রাজিয়া বেগম পূনরায় ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু রায়াযের এক কথা,,এসে খাবে না। অগ্যতা উপরে খাবার এনে রাজিয়া বেগম নিজ ছেলেকে ভালোবাসা সহিত নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন।
—
রাতের খাবার শেষ হলে বেলা এসে বেলির কক্ষে বসে রয়।কারণ সে’তো এখন থেকে এখানেই রাত্রিযাপন করবে। একটুপর বেলি হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে হাজির হয়।এতো রাতে বেলির হতে আইসক্রিম দেখে বেলা চোখদুটো ঈষৎ বড় করে তাকিয়ে রয় বেলির পানে।বেলি বেলার এহেন দৃষ্টি দেখে কিঞ্চিৎ হেসে বেলার দিয়ে একটা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— এমন হাবার মত তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ধর।খুব রিস্ক নিয়ে মায়ের চোখের আড়ালে চুরি করে নিয়ে এসেছি।
বেলির কথা কর্নগোচর হতেই যেন অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে নিজেকে ধাতস্থ করে বেলির পানে বলে উঠে,
— তখনকার ওই ছেলেগুলো কে ছিলরে? কেমন গুন্ডা গুন্ডা মনে হচ্ছিল।আর কাকে ফোন করেই বা আসতে বলল?
বেলার কথার সমাপ্তিতে বেলি নিজ ললাট চাপড়ে ব্যক্ত করে উঠে,
–আর বলিস না দুঃখের কথা! আর গুন্ডার মত দেখতে কি? এরা আসলে গুন্ডাই।এই অভ্র নামক তুফান আজ দুই বছর ধরে আমার পিছন পড়ে আছে।একটা দিনও শান্তি নেই আমার।যেখানেই যাই সেখানেই পিছন পিছন এসে হাজির হয়।আর যাকে ফোন দিল ওটা হচ্ছে অভ্রর বড় ভাই।আমাদের এলাকার কাউন্সিলরের ছেলে ওরা দুজন।দুই ভাইয়ের দুইজনই গুন্ডা, একটাও ভালো হলো না। তবে এদের বাবা খুব ভালো।এমন বাপের এমন সন্ত্রাসের মত দুজন ছেলে।মানুষ যেমন বিশ্বাসই করতে চায় না এটা।এখন ঘুমা কালকে চাচ্চু গিয়ে তোকে আমার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। ইয়াহু এখন থেকে আমরা একসাথে থাকব, একসাথে একই স্কুলে পড়ব কি মজা!
কথাটা শেষ করে বেলি বেলাকে জাপটে ধরে।অতঃপর দুই চঞ্চল কন্যা আপন চিত্তে গল্প করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
___
সকালে নাস্তা করে অনিক সাহেব বেলা আর বেলিকে নিয়ে বের হয়, বেলাকে বেলির স্কুলে ভর্তি করার উদ্দ্যেশে।ভর্তি করে দুজনকে রেখে বাড়িতে ফিরে আসে অনিক সাহেব।বেলা আর বেলি রয়ে যায় ক্লাস করবার উদ্যেশে।বেলি বেলাকে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।বেলাকে কিছুটা ভীত দেখে বেলি বেলার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— তুই এতো ভীতু কেন বল তো বেলা!কিন্তু এখন যখন বেলি আছে, তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই।তোকে সব শিখিয়ে-পড়িয়ে একদম গুলিতে খাইয়ে দিব।
বেলা ঘাড় কাৎ করে সায় জানায়।অতঃপর বেলির ফ্রেন্ডরা সকলে মিলে বেলাকে টেনে ক্লাসে নিয়ে যায়।বেলিদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সব কটা এক-একটা বিচ্ছু।সকলের মাথা চিবিয়ে খেতে এক্সপার্ট।সবকটা বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান হওয়ায়,,পুরো স্কুলে একটা দাপট নিয়ে চলে। অগ্যতা সকলে এদের সহিত মেপে মেপে কথা বলে।একপ্রকার আতঙ্ক এই ব্ল্যাক টিম।
__
ছুটি শেষে বেলি বেলাকে নিজের বাইকে করে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। সহসা তাদের সমীপে কয়েকটা বাইক এসে থামে।বেলি কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে শক্ত মুখে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে।
অভ্র নেমে আসে,, বেলির সমীপে দাঁড়ায়।তখনই পিছন থেকে একটা গম্ভীর রাশভারি কণ্ঠে কেউ অভ্রর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— কোন পাখির কথা বলছিলিরে আভ্র? দেখা দেখি তোর পাখি।
আপন চিত্তে সিগারেটের ধোঁয়া শূন্যে ছেড়ে বলে উঠে রুহাশ।
ভাইয়ের বলা বাক্য কর্ণপাত হতেই সহসা আভ্র ভাইয়ের অভিমুখে তাকিয়ে বলে উঠে,
— ভাই আমার বেলি ডার্লিংয়ের পিছনে বসা মেয়েটা।
ভাইয়ের কথার প্রেক্ষিতে রুশান বেলির পিছনে বসে থাকা মেয়েটির অভিমুখে তাকায়।
বেলাকে দেখার সাথে সাথে রুশানের সমস্ত শরীর যেন এক ভয়ঙ্কর বিদ্যুৎ খেলে যায়।চোখের পল্লব ঝাপটে একধ্যানে বেলার দিকে গভীর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে রুশান।সহসা ভাইয়ের ডাকে গভীর ধ্যান থেকে বের হয় রুহাশ।বেলার মুখপানে দৃষ্টি রেখেই ভাইকে বলে উঠে,
— এদের যেতে দে।
ভাইয়ের এহেন কথা কর্ণপাত হতেই চমকে ভাইয়ের পানে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
–কিন্তু ভাই?
রুহাশ আভ্রর দিকে ঘাড় বাঁকা করে তাকিয়ে পুনরায় ভাইকে আদেশ করে,
— যা বলছি তাই কর! বেশি কথা বলিস না।বেশি কথা আমার পছন্দ না।
অগ্যতা সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় আভ্র।বেলা একপলক সকলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেক করে রুশানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে গভীর দৃষ্টি মেলে বেলার পানে তাকিয়ে আছে।এহেন দৃষ্টি দর্শন হতে বেলা আঁখি নত করে নেয়।বেলি আভ্রকে চোখ রাঙিয়ে পাশ থেকে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় সকলের চোখের আড়ালে।
.
.
চলবে ইনশাল্লাহ,,,