#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী
১১.
খাটের উপর বসে কাঁদছে রোদেলা। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে। কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি যে একজন খুনি মাফিয়ার সাথে তার এভাবে সারাজীবন বাধা পরতে হবে। রোদেলা কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর কান্নার শক্তি সে পাচ্ছেনা।
কিছু ঘন্টা আগে,,,
আদ্রিয়ানকে রোদেলা খুনি বলায় তার যেনো কিছুই আসে যায়নি। সে দিব্বি তার মতো করে রোদেলার কাছে আসলো। রোদেলা আদ্রিয়ানকে নিজের কাছে আসতে দেখে বললো,
রোদেলা: দেখুন আমার কাছে আসবেন না। প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকুন।
আদ্রিয়ান রোদেলার কাছে এসে খাটের উপর খাবারের ট্রেটা রেখে রোদেলার কোমর জরিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। রোদেলার একদম আদ্রিয়ানের বুকের সাথে মিশে আছে। রোদেলার ভয়ে খুব অসস্তি লাগছে। রোদেলা আদ্রিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছেনা। আদ্রিয়ান রোদেলার কপালে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো। রোদেলা এখনো ছুটার জন্য চেস্টা করছে। এবার আদ্রিয়ান ওকে দিলো একটা ধমক!
আদ্রিয়ান: এই মেয়ে এই সমস্যা কি তোমার এভাবে কৈ মাছের মতো মুচরাচ্ছো কেনো? একদম সোজা দাঁড়িয়ে থাকো নাহলে কোলে তুলে মারবো একটা আছাড়।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রোদেলা ভয়ে একদম শান্ত হয়ে গেলো। আদ্রিয়ানের যেই রাগ যদি সত্যি আছাড় মারে!
আদ্রিয়ান: আমি জানি তুমি এখন আমাকে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলবে,
” আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আমি আপনাকে ভালোবাসিনা। আমি আপনার সাথে থাকবোনা। ”
কিন্তু আমি সরি সেই সুযোগ তোমাকে আমি দিতে পারবোনা। তুমি আমাকে ঘৃণা করো ভালো না বাসো তাতে আমার জাস্ট কিছুই যায় আসেনা। কারন আমার একার ভালোবাসাই যথেস্ট আমাদের জন্য। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা যদি ভেবে থাকো যে এখান থেকে পালিয়ে তুমি বেঁচে যাবে তাহলে এটা তোমার সব থেকে বড় ভুল ধারোনা। ইউ নো, মনে আছেতো সেই ছেলেটার কথা যে তোমার বিয়ের দিন বর নয় লাশ হয়ে গেছিলো তোমার বাসায়! আই হোপ দ্যাট আর কাউকে তুমি সেভাবে দেখতে চাওনা।
আদ্রিয়ানের বলা প্রত্যেকটা কথা শুনে রোদেলার অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। রোদেলার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
রোদেলা: তার মানে আপনিই সেই যে আমার বিয়ের দিন আমার হবু স্বামীকে মেরে ফেলেছিলেন? আপনি সে যে আমাকে ম্যাসেজ করতেন? আপনি কি পাগল? কেউ কিভাবে কাউকে এভাবে মারতে পারে! আপনি একটা সাইকো। একটা পাগল আপনি। আমি মরে গেলেও আপনার সাথে তো দূর আপনার ছায়াও মারাবোনা।
আদ্রিয়ান রোদেলার কথা শুনে রোদেলার চুলের মুঠি ধরে বললো,
আদ্রিয়ান: মরতে চাইলে তোকে আমিই মেরে দেবো। এতো মরার ইচ্ছা তাইনা। তাহলে আমার হাতেই তুই মরবি। প্রথমে তোকে মারবো তারপর নিজে মরবো। তুই যদি আমার না হতে পারিস তবে তোকে আমি অন্য কারো হতে দেবোনা। এই আদ্রিয়ান নিজের ইউজ করা টিস্যু কাউকে দেয়না আর তুইতো সেখানে আমার ভালোবাসা তোকে কাউকে দেওয়াতো দূর কেউ তোর দিকে তাকালে তাকে এই দুনিয়া ছাড়া করে দেবো আমি।
আদ্রিয়ান আর নিজের মাঝে নেই এখন রোদেলার চুলের মুঠি ধরা অবস্থাতেই রোদেলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় সে। এক অজানা নেশায় আদ্রিয়ান হারিয়ে গেছে। আর রোদেলা সে বরফের মতো জমে গেছে। এই প্রথম কোনো পুরুষের এতো কাছে এসেছে সে। রোদেলা নিজেকে আদ্রিয়ানের থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। বেশ কিছুটা সময় পর আদ্রিয়ান নিজেই ছেড়ে দিলো রোদেলাকে। তারপর দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আর রোদেলা খাটে বসে কাঁদতে লাগলো।
বর্তমানে,,,,,
আদ্রিয়ান বসে আছে গার্ডেনের দোলনায়। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ওর। আদ্রিয়ান যেই আশংকাটা করেছিলো সেটাই হলো। রোদেলা তাকে ভুল বুঝলো। আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করে। নিজের রুমে আসলো। রুমে এসে দেখে রোদেলা খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
রাফসানের বাসায়,,,,,
মুন নিজের রুমে বসে আছে চুপচাপ। নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে তার। আজকে নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হতে দেখতে হচ্ছে তার। এর থেকে কষ্টের কিছু হতে পারে কিনা সে জানেনা। মন বলে, রাফসানকে বলতে যে সে কতটা ভালোবাসে ওকে। আর বাস্তবতা বলে, রাফসান এখন অন্য কারো। তার উপর অধিকার নেই।
রুবা মুনের রুমে এসে দেখে মুন চুপচাপ বসে আছে। রুবা মুনের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো। কারো স্পর্শে চমকে গেলো মুন। পিছনে তাকিয়ে দেখে রুবা দাঁড়ানো। রুবাকে দেখে মলিন হাসি দিলো সে। রুবা মুনের পাশে বসতে বসতে বললো,
রুবা: যখন ভালোবাসিস এতো তাহলে বলে দে। এভাবে গুমুট করে রাখলে কি লাভ? এতে কষ্ট ছাড়া তো কিছুই পাচ্ছিস না।
মুন: যেই মানুষটা আর কিছুদিনের ব্যবধানে অন্য কারো হয়ে যাবে। যার নামের আংটি অন্য একজনের হাতে আছে। সেই মানুষটাকে কি বলবো? আর বললেই বা কি সে আমায় মানবে? সেতো আমাকে ভালোবাসেনারে রুবা।
রুবা: বলতে তো ক্ষতি নেই তাইনা।
মুন: থাকনা কিছু অনুভূতি কিছু ভালোবাসা লুকানো।
রুবা আর মুনকে কিছুই বলার মতো পেলোনা। আসতে করে উঠে চলে আসলো। এই ভালোবাসার আসক্তিতে হয়তো সেও পরেছে।
কাউসার,জাহিদ আর মাহিন এসেছে ক্লাবে। মুলোতো আজকে কাউসার রেগে এসেছে ক্লাবে। আজকে কাশফিয়ার সাথে একটা ছেলেকে কথা বলতে দেখে মাথায় আগুন ধরে গেছে তার। সে কাশফিয়ার কাছে ছেলেটার কথা জানতে চাইলে কাশফিয়া তাকে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়। কাশফিয়ার এমন আচারণ সয্য করতে পারছেনা কাউসার।
জাহিদ: ভাই আসতে! আসতে! এতো গুলা গ্লাস খেয়েছিস আর খাসনা।
কাউসার: জাহিদ ওর সাহস হয় কিভাবে আমাকে ইগ্নোর করার?
জাহিদ: বাচ্চা মেয়ে। নিশি যা বলেছে মেনে নিয়েছে।
কাউসার: আর আমার ফিলিংস যা আমি ওকে বলেছি সেটা? সেটা কি ওর মিথ্যা মনে হয়েছে।
জাহিদ: জানিনা রে। তবে তুই বেশি রেগে থাকিস না।
জাহিদ কোনোভাবে কাউসারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ক্লাব থেকে নিয়ে আসে।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় এসেছে। রোদেলা এখনো ঘুম। আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে করে লিফটে করে ওদের ফ্লাটে নিয়ে আসে। কলিং বেল বাজাতে মুন গিয়ে দরজা খোলে। আদ্রিয়ানের কোলে রোদেলাকে দেখে অবাক হয় মুন। মুন জানে রোদেলা আদ্রিয়ানের কাছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো।
আদ্রিয়ান: ওর রুম কোনটা?
মুন: এইযে এইদিকে।
আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে রুমে গিয়ে ওকে খাটে শুইয়ে দিলো।
আদ্রিয়ান: রাফসান কোথায়?
মুন: জ্বী, উনি অফিসে।
আদ্রিয়ান: ওকে আমি আসছি।
আদ্রিয়ান চলে আসলো। আর মুন রোদেলার পাশে গিয়ে বসলো।
আরাভের বাসায়,,,,
আরাভ ও জুঁই দুইজনে বসে খাবার খাচ্ছে।
আরাভ: তারপর তোর আর তুর্যের কি অবস্থা?
জুঁই: এইতো ভালোই।
আরাভ: আচ্ছা তাহলে তোদের বিয়েটাও তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবো।
জুঁই: উহু! আগে আমি না, তুমি বিয়ে করবে। আগে আমি ভাবির মুখ দেখবো।
আরাভ: হুম ভাবিতো আমার পছন্দরে কিন্তু তোর ভাবি যে আমাকে পাত্তা দেয়না হায়।
জুঁই: কি বললা বিড়বিড় করে?
আরাভ: কিছুনাতো।
খাবার খেয়ে আরাভ নিজের রুমে চলে আসলো। আরাভ রুবার নাম্বারটা জোগার করেছিলো। আরাভ কল লাগায় রুবার নাম্বারে।
রুবা বসে বসে পড়ছিলো। ফোন আসায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার।
রুবা কল রিসিভ করলো।
রুবা: আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
আরাভ:…………….
রুবা: হ্যালো কে বলছেন?
আরাভ:……………
রুবা: আরে আজব কে? দুর আলতু ফালতু কোথাকার।
বলেই রুবা কল কেটে দিলো। তারপর রুবা আবার পড়তে বসলো।
আরাভ কল রেখে হেসে দিলো।
আরাভ: মেয়েটা আসলেই পাগলি।
রাফসান বাসায় আসতে আসতে রাত ১২টা বাজলো। মুন রাফসানের জন্য অপেক্ষা করছে। রোদেলা মাঝখানে উঠেছিলো। নিজেকে নিজের বাসায় দেখে সস্তি পায় রোদেলা। তারপর খাবার খেয়ে রোদেলা আবার শুয়ে পরে।
রাফসান বাসায় এসে মুনকে জেগে থাকতে দেখে অবাক হয়। কিন্তু কিছু বলেনা মুখে। রাফসান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নিলো। মুন কল করে ওকে জানিয়েছিলো রোদেলাকে যে আদ্রিয়ান দিয়ে গেছে। রাফসান খেয়ে উঠে রোদালাকে দেখে আসে। তারপর নিজের রুমে এসে শুয়ে পরে।
মুন নিজে একটু খেয়ে সব গুছিয়ে গিয়ে রোদেলার পাশে শুয়ে পরলো।
এদিকে আদ্রিয়ান নিজের রুমে বসে আছে। আজকে সে একটা এমন সত্যি জানতে পেরেছে সে যে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি।
#চলবে
ভুল ত্রুটি মাফ করবেন😟।