প্রেমময় আসক্তি❣️পর্ব ১৭+১৮

#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৭[বিয়ে স্পেসাল]
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৭.

দেখতে দেখতে আদ্রিয়ান রোদেলার বিয়ের সময় চলে এলো। আর একদিন পরেই তাদের বিয়ে। আগামীকাল তাদের হলুদ। আদ্রিয়ান-রোদেলা, রাফসান-মুন এদের প্রেম বেশ ভালোই চলছে। কাশু নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে রোদেলার বিয়ের দিন সে কাউসারকে তার উত্তর জানাবে। রোদেলা কলেজের কাউসার, তিথি-মাহিনকে নিজের বিয়েতে দাওয়াত করেছে। সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত।

রাতে রোদেলা ডিনার করে রুমে আসলো। তখন ফোনে কল আসলো আদ্রিয়ানের। রোদেলা কল রিসিভ করার পর আদ্রিয়ান বললো,

আদ্রিয়ান: শুনো, আলমারিতে দেখো একটা প্যাকেট রাখা আছে। সেটায় যা যা আছে সব পরে রেডি হয়ে নেও।
রোদেলা: আচ্ছা কিন্তু এখন এতো রাতে কই যাবো?
আদ্রিয়ান: বেশি কথা বইলোনা। তাহলে তোমার নাগা মরিচ তোমাকেই খাইয়ে দিবো।
রোদেলা: আচ্ছা হচ্ছি রেডি।

রোদেলা ফোন রেখে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট পায়। সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। একটা কালো শাড়ি সাথে মেচিং চুড়ি, ঝুমকা আর একটা গাজরা। রোদেলা সব পরে রেডি হয়ে নেয়। একদম হালকা একটু সাজে। রেডি হয়ে বাহিরে আসে বাসার। যা ভাবনা তাই। আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে বসে আছে। রোদেলা গিয়ে গাড়িতে বসলো। আদ্রিয়ান একটা ব্লাক শার্ট আর ব্লাক পেন্ট, ব্লাক বেল্ট ঘড়ি পরছে। আদ্রিয়ানকেও দেখতে বেশ লাগছে। আদ্রিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে একটা ফাঁকা জায়গায় আসলো। জায়গাটা অনেক অন্ধকার রোদেলা কিছুই বুঝতে পারছেনা। রোদেলা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে জায়গাটায় লাইট জ্বলে ওঠে। অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা জায়গাটা। অনেক সুন্দর কেন্ডেল দিয়ে সাজানো। লাইটিং করা, লাল, সাদা, নীল, বেলুন দিয়ে সাজানো।

রোদেলা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে সবটা। আদ্রিয়ান এসে রোদেলা পিছনে এসে দাঁড়ালো। তারপর রোদেলাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো,

আদ্রিয়ান: উপরে আকাশে তাকাও।

রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা মতো আকাশে তাকায় সাথে সাথে আকাশে লেখা উঠে,

“প্রেমের এক অজানা আসক্তি দেখেছিলাম তোমার মাঝে। সেই আসক্তিতে ডুবে যেতে চেয়েছি তোমাকে নিয়ে। তুমি আমার প্রেমের এমন এক আসক্তি। তাইতো তুমি আমার প্রেমময় আসক্তি।”

রোদেলা আকাশে লেখা গুলো দেখে অবাক আর খুশি দুটোই হয়েছে। আদ্রিয়ান ততোক্ষনে রোদেলাকে ছেড়ে দিয়েছে। রোদেলা পিছনে ঘুরে আদ্রিয়ানকে কিছু বলবে তার আগে আদ্রিয়ান ওর সামনে একটা গোলাপের তোড়া যার উপরে অনেক গুলো চোকলেট রাখা আর একটা রিং।

আদ্রিয়ান: সবার মতো এতো স্টাইল করে, “আই লাভ ইউ” বলা আমার দ্বারা হবেনা। আমার মনের সব অনুভুতি তোমাকে আমি অনেক আগেই জানিয়েছি। ভালোবাসি ঠিক কতটা সেটা হয়তো তোমাকে পরিমাপ করে দেখাতে পারবোনা। তবে তোমাকে কোনোদিন কোনো কষ্ট ছুঁতে পারবেনা। আমার জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। সব সময় তোমাকে নিজের পাশে চাই।
“ভালোবাসি নেশামই”।

রোদেলা আদ্রিয়ান থেকে তোড়াটা নিয়ে আর সেকেন্ডও দেড়ি করেনা। খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে আদ্রিয়ানকে। ঠিক যতটা শক্ত করে ধরলে নিজেকে আদ্রিয়ানের মাঝে ডুবিয়ে দেওয়া যায়। আদ্রিয়ান রোদেলাকে জরিয়ে ধরে। তাদের ভালোবাসার মিলন আজকের আকাশের চাঁদও যেনো খুশিতে হাসছে।

রোদেলা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলে,

রোদেলা: আমি কোনোদিন আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। এক মাত্র মৃত্যু ছাড়া আদ্রিয়ানের থেকে তার নেশামইকে কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা।

আদ্রিয়ান রোদেলা বুকে থেকে সামনে এনে ওর কপালে ভালোবাসার পরস একে দিলো। তারপর দুজনে আরো কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পরলো বাসার জন্য।

রাফসান পানি খেতে কিচেনে এসে বোতলে পানি নিয়ে কি ভেবে মুনের রুমে উঁকি দিলো। দেখলো মুন টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে মুন। রাফসান রুমে এসে খুব সাবধানে মুনকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা দিয়ে দিলো। রোদেলা রুমে না দেখে অবাক হলো রাফসান। কিন্তু একটুপর গাড়ির হর্ন এর আওয়াজ পেয়ে বারান্দায় এসে দেখে রোদেলা আদ্রিয়ানের সাথে। রাফসান এটা দেখে হালকা হেসে নিজের রুমে চলে যায়। রোদেলা আদ্রিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে।

পরেরদিন,,,,,,

আজকে রোদেলা আর আদ্রিয়ানের হলুদ। হলুদ হবে আদ্রিয়ানদের বাসায় বড় গার্ডেনে। সকাল থেকে সবাই হলুদের কাজে বিজি। মুন, রুবা, কাশু সবাই হলুদ বাটতেছে। রোদেলাকে রুমে ওর মা হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। বিকালের দিকে পার্লারের মেয়েরা এসে রোদেলাকে সাজিয়ে দিলো। রোদেলাকে একটা লাল হলুদ মিশানো লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে সাথে জুয়েলারি আর কাঁচা ফুলের গহনা পরানো হয়েছে।

দেখতে দেখতে হলুদ শুরু হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান আর রোদেলাকে স্টেজে বসানো হলো। আদ্রিয়ানকে একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরানো হয়েছে। অনুষ্টানের ছেলেরা নীল আর মেয়েরা গোলাপি হলুদ মিশানো শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরেছে।

আরাভ তো রুবাকে দেখে বড় ধরনের ঝটকা খেয়েছে। কারন রুবা বাংলা স্টাইলে শাড়ি পরেছে। চুল গুলো সুন্দর করে বেনি করে মাঝে ফুল দেওয়া। দুই হাত ভর্তি চুড়ি সাথে ফুলের গহনা।

কাউসার কাশুকে দেখে আরেক দফা ফিদা। কাশু শাড়ি পরেছে সাথে চুল গুলো খুলা। হালকা সাজ সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে।

রাফসান মুনকে দেখে পারলে এখোনি বিয়ে করে ফেলে। মুনকেও দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।

সবাই আসতে আসতে করে রোদেলা ও আদ্রিয়ানকে হলুদ ছোঁয়ালো। নাচ গান আনন্দে পার করলো হলুদ সন্ধ্যা।

কাশফিয়ার দুইচোখ খুঁজে যাচ্ছে কাউসারকে। কাউসার পিছন থেকে এসে কাশুকে ধাক্কা দিলো। প্রথমে কাশু ভয় পেলো। পরে সামনে তাকিয়ে দেখে কাউসারকে।

কাউসার: কি কাকে খুঁজতেছো আমাকে?
কাশু: নাতো। আপনাকে খুঁজতে যাবো কেন? আমিতো এমনি এখানে দাঁড়ানো।
কাউসার: ওহ আচ্ছা। তাই নাকি তাহলে ঠিক আছে থাকো তুমি আমি যাই।
কাশফিয়া: নাহ্।
কাউসার: কি?
কাশফিয়া: আমার আপনাকে কিছু বলার আছে। মানে উত্তর দেওয়ার আছে।
কাউসার: আচ্ছা তবে দেও উত্তর।
কাউসার কাশফিয়ার আর একটু কাছে এগিয়ে গেলো। কাশফিয়ার বুক ধুক ধুক করছে। কাশফিয়া অনেক সাহস জুগিয়ে বললো,

কাশফিয়া: আমি আপনাকে…
কাউসার: হুম, তুমি আমাকে!
কাশফিয়া: আমি আপনাকে ভা…
কাউসার: তুমি আমাকে ভা..কি?
কাশফিয়া: আমি আপনাকে ভালোবাসি। [এক নিশ্বাসে চোখ বন্ধ করে কথাটা বললো।]
কাউসার কাশফিয়ার কানের কাছে মুখ এনে বলে,
লোকে ঠিকই বলে বিয়ে বাড়িতে বিয়ে হয় দুইজনের আর প্রেম হয় ৪/৬ জনের।
আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিস চাশমিস।

বলেই কাউসার চলে গেলো। কাশফিয়ার অনেক নার্ভাস লাগছিলো। তাই তাকে রিলেক্স করতে কাউসার চলে আসে।

অনেক রাত করেই শেষ হয় হলুদ অনুষ্টান। সবাই যার যার মতো করে ফ্রেশ হয়ে বাসায় এসে শুয়ে পরে। আগামিকাল বিয়ের আয়োজন আছে।

অপেক্ষার প্রহর শেষে আজ সেই দিন আদ্রিয়ান ও রোদেলার সারাজীবনের জন্য এক হবার দিন। আজ তাদের বিয়ে। এই দিনটার জন্য কতটা অপেক্ষায় ছিলো তারা।

সারাবাড়ি সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে বিয়ের জন্য। সবাই মিলে রং খেলে করলো। এখন রোদেলাকে গোসল দিবে। রোদেলাকে গোসল দিয়ে সোজা নিয়া যাওয়া হলো পার্লারে। রোদেলারা সবাই সেজে বাসায় আসলো ৭টায়। রোদেলাকে একটা লাল বেনারসি শাড়ি পরানো হয়েছে। সাথে মেচিং গহনা। রুবা, কাশু, মুন তিনজন শাড়ি পরছে।

রোদেলাকে নিয়ে সেন্টারে যায় সবাই। কিছুক্ষনের মাঝে আদ্রিয়ানরা আসে। ২০০০০ টাকা না দিলে আদ্রিয়ানকে রুবারা ঢুকতে দিবেনা। অনেকক্ষন গেটে মজা করার পর আদ্রিয়ান টাকা দিলো। তারপর ওকে মিষ্টি আর শরবত খাইয়ে স্টেজে নিয়ে বসানো হলো।

রুবা নিজের শাড়িটা একটু ঠিক করতে ওয়াশরুমে আসে। শাড়ি ঠিক করতে করতে আরাভ পিছন থেকে এসে ডাকে,

আরাভ: মিস চেইন খুলা!!

ডাকটা শুনে রুবা থমকে যায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে আরাভ দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। রুবা শাড়ি ঠিক করে আরাভকে বলে,

রুবা: আপনি এখানে?
আরাভ: হুম আমি। কেন কোনো সমস্যা?
রুবা: না সমস্যা না।

বলে রুবা যেতে নিলে আরাভ রুবার হাতটা ধরে ফেলে। রুবা এতে ওনেক শকড হয়ে যায়।

আরাভ: পালাচ্ছেন মিস?
রুবা: ন.নাতো.প.পালাবো কেন? হাতটা ছাড়ুন।
আরাভ রুবার হাতে একটা খাম দেয় আর বলে,

আরাভ: আশা করি উত্তরটা পাবো।

বলেই আরাভ চলে আসে আর রুবা খামটার দিকে তাকিয়ে থাকে। খামটা পার্সে রেখে বিয়ের আসরে যায়।

কাজি চলে আসছে বিয়ে পড়াতে। বিয়ে পড়ানো শুরু হলো। প্রথমে রোদেলাকে কবুল বলতে বলা হলো। রোদেলা কিছুটা সময় নিয়ে কবুল বললো। এরপর আদ্রিয়ান কবুল বললো। বিয়ে সম্পুর্ন হবার পর সবাই মিষ্টি মুখ করলো। খাওয়া দাওয়া শেষ। এবার বিদায়ের পালা। রোদেলা ওর বাবা ভাইকে ধরে অনেক কান্না করতে লাগলো। এক মাত্র মেয়ে এক মাত্র বোনকে বিদায় দেওয়া খুব কষ্টের। রোদেলাকে রাফসান গাড়িতে বসালো তারপর আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলে বিদায় দিলো বোনকে। রুবা, কাশু, মুন সবাই কান্না করছে।

আদ্রিয়ানদের বাসায় জুঁই, আদ্রিয়ান, আরাভ রোদেলাকে বরণ করে ঘরে তোলে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে করে বাসর ঘরে দিয়ে আসে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে রুমে রেখে বলে যায় চ্যাঞ্জ করে নিতে। বেশ অনেকটা সময় পর আদ্রিয়ান রুমে আসে। রুমে এসে আদ্রিয়ান রোদেলাকে দেখে হুসসসস। কারন রোদেলা আদ্রিয়ানের একটা সাদা টি শার্ট পরেছে। যেটা হাঁটু পর্যন্ত রোদেলার হয়েছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে দেখেও না দেখার মতো ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে একটা টাউজার পরে আসে গায়ে কিছু পরেনা। রোদেলা আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে লজ্জায় পায়। আদ্রিয়ান সেটা বুঝতে পেরে রোদেলার কাছে গিয়ে ওর কোমর জরিয়ে ধরে বলে,

আদ্রিয়ান: এতো লজ্জা পেলে হবে! আমিতো এখনো কিছুই করিনি।

আদ্রিয়ানের কথায় রোদেলা লজ্জা পায়।

আদ্রিয়ান রোদেলা দিকে তাকিয়ে বলে,

আদ্রিয়ান: রোদেলা মে আই?

রোদেলা বুঝতে পারে আদ্রিয়ান কি বলতে চাইছে। আজ তাদের মাঝে কোনো বাধা থাকবেনা। আজ রোদেলা আদ্রিয়ানকে উজার করে ভালোবাসবে আদ্রিয়ান রোদেলাকে ভালোবাসবে। রোদেলা আদ্রিয়ানকে সম্মতি দেয়। রোদেলার থেকে সম্মতি পেয়ে আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে তুলে নেয়। আজ সে হারিয়ে যাবে রোদেলার নেশায়। আজকে তার প্রেমের আসক্তি পূর্নতা পাবে। আজ সে ডুব দেবে রোদেলার আসক্তির মাঝে। আজ পূর্নতা পাচ্ছে তাদের প্রেমময় আসক্তি। আদ্রিয়ান রোদেলা বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দিয়ে আবদ্ধ করে নেয়। আসতে আসতে গাড়ো হচ্ছে আদ্রিয়ানের স্পর্শ। আজ ওদের মিলন দেখে দূর থাকা দেওয়ালটাও লজ্জা পাচ্ছে।
#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৮
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৮.

সকালের মুখে পানির ছিটা আসায় ঘুম ভেংগে যায় আদ্রিয়ানের। পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে এক মোহমই নারী সদ্য তার গোসল করে আসা ভিজা চুল ঝারছে। চুল ঝারছে আর পানি ছিঁটে এসে আদ্রিয়ানের মুখে পরছে। আদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে রোদেলার দিকে। রোদেলা চুলের পানি শুকাতে মন তাই আদ্রিয়ান যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা খেয়াল করছেনা। রোদেলা চুল ভিঁজা রেখেই আয়নার সামনে বসে চেহারায় হালকা একটু ফেস পাউডার দিলো, গালে হালকা পিংক ব্লাসন, চোখে গারো করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক দিলো। রোদেলা একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে। গলায় চেইন, আর হাতে চিকন চুরি, কানে ছোট দুল আর নাক ফুলটা পরে একদম রেডি সে। রোদেলা উঠে সোজা বাহিরে চলে গেলো। যাওয়ার আগে যদি একটু পিছনে তাকাতো তবে দেখতো এক প্রেমিকপুরুষ তার দিকে কি নেশালো চোখে তাকিয়ে ছিলো। আদ্রিয়ান নিজ মনে মনে বলে উঠে,

“নারীকে কাজলে আর ভেঁজা চুলে যতটা রূপবতী লাগে! একজন প্রেমিকপুরুষকে ঘায়েল করার জন্য সেটাই যথেস্ট।”

আদ্রিয়ান উঠে নিজেও ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। রোদেলা নিচে কিচেনে এসে দেখে জুঁই রান্না ঘরে। জুঁই রোদেলাকে দেখে বলে,

জুঁই: শুভ সকাল ভাবি। তুমি এতো সকালে রান্না ঘরে আসলা কেন?
রোদেলা: শুভ সকাল। আমি আজকে রান্না করবো সবার জন্য তাই আসছি।
জুঁই: কি বলো! তুমি মাত্র কাল বিয়ে করে বাসায় আসছো। নতুন বউ তুমি আর তুমি আজকেই রান্না করবা? না না সেটা কেমন দেখায়!
রোদেলা: তাতে কি এটা আমার সংসার। আর নিজের সংসারে কাজ করতে নতুন পুরানো হতে হয়না। তুমি আর না করোনা।
জুঁই: আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমিও তোমাকে সাহায্য করবো।
রোদেলা: ঠিক আছে। তুমি ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে ভিজাও আর মসলা বের করো আজকে কাচ্চি রান্না করবো। আমি ওনাকে গিয়ে কফি দিয়ে আসি।
জুঁই: আচ্ছা ঠিক আছে।

রোদেলা আদ্রিয়ানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে উপরে রুমে যায়। আদ্রিয়ান মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসছে। গায়ে তোয়াল দেওয়া আর পরনে টাউজার। রোদেলা কফি নিয়ে রুমে এসে আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে লজ্জা পেয়ে অপর দিকে ঘুরে গিয়ে বলে,

রোদেলা: ইসসসস!!

আদ্রিয়ান রোদেলাকে এভাবে বলতে দেখে অবাক হয়ে বলে,

আদ্রিয়ান: ইসস মানে🙄।
রোদেলা: আপনি জীবনেও গায়ে কিছু পরে বের হননা কেন? এভাবে উদাম গায়ে আসেন কেন? লজ্জা লাগেনা!
আদ্রিয়াম: এহ! আমি ছেলে আমি মেয়েনা। যে খালি গায়ে বের হলে লজ্জা পেতে হবে। আর তুমি এভাবে বলছো যেনো আমি তোমার অচেনা তাই লজ্জা পাচ্ছো! নিজের স্বামীকে এভাবে দেখে লজ্জার কি আছে?
রোদেলা: এতো কিছু জানিনা। এভাবে আমার সামনে আসবেন না। আমার লজ্জা লাগে।

আদ্রিয়ান রোদেলার কথা শুনে বেস মজা পেলো। তাই গিয়ে দরজা আটকে রোদেলার কাছে গেলো। আদ্রিয়ানকে দরজা আটকাতে দেখে রোদেলা অবাক হলো। লোকটা এই সময় দরজা আটকালো কেন। আদ্রিয়ান গায়ের টাওয়ালটা বিছানায় ফেলে রোদেলার কোমর জরিয়ে ধরলো। রোদেলাতো জমে গেছে একদম। আদ্রিয়ান রোদেলার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,

আদ্রিয়ান: সো তোমার আমাকে এভাবে দেখলে লজ্জা লাগে তাইতো?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে মাথা নাড়ালো।
আদ্রিয়ান: তাহলেতো তোমার এই লজ্জা ভাংগতে হবে কি বলো।
রোদেলা: ম.মানে?
আদ্রিয়ান: Wait
আদ্রিয়ান রোদেলার হাত থেকে কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিলো। তারপর রোদেলাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে এসে নিজের ঠোঁট দিয়ে রোদেলার ঠোঁটে রাখলো। আদ্রিয়ানের মুখে যে কফিটা ছিলো সেটা রোদেলার মুখে চলে গেলো। আদ্রিয়ান তার উষ্ণ ভালোবাসার ছোঁয়া দিচ্ছে রোদেলার ঠোঁটে। এই জায়গাটা আদ্রিয়ানের কাছে বেশ মাদকতাময়। বেশ আসক্ত করে এই ওষ্টযুগোল ওকে। বেশ কিছুটা সময় যাওয়ার পর রোদেলা আদ্রিয়ান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

রোদেলা: দূর! আপনি লোক ভালোনা। আমি আপনার জন্য ভালো মনে করে কফি নিয়ে আসলাম আর আপনি! দূর! দূর!
আদ্রিয়ান: আমার কি দোষ তোমার তো আমাকে এভাবে দেখলে লজ্জা লাগে। তাই ভাঙ্গালাম লজ্জা।
রোদেলা: দূর ছাই।

রোদেলা রাগ দেখিয়ে চলে আসে দরজা খুলে আর আদ্রিয়ান হাসতে থাকে।

রোদেলা রান্না ঘরে এসে জুঁইকে নিয়ে রান্না করলো। রান্না শেষে সবাইকে ডাক দিলো। আরাভ, আদ্রিয়ান, রোদেলা, জুঁই মিলে খাবার খেয়ে নিলো।

এদিকে,,,,,,

মুন আর রোদেলার আম্মু মিলে নাস্তা বানাচ্ছে। রাফসান আর ওর বাবা সোফায় বসে কথা বলছে। কাশফিয়া রুমে বসে কাউসারের সাথে ফোনে কথা বলছে। আর রুবা খাটে বসে আছে হাতে আরাভের দেওয়া খামটা। রুবা বুঝতে পারছেনা কি থাকতে পারে খামে।

রুবা খুব জরতা নিয়ে খামটা খুলে। খামের ভেতরে একটা চিঠি। রুবা চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো,

প্রিয় ভিতুর ডিম ওরফে মিস চেইন খুলা,,,

কি শুরুতেই ভাবছেন তো আপনাকে ভিতু কেন বললাম? কারন আপনি আসলে অনেক ভিতু। সেই যে প্রথম দেখায় আপনাকে আমি বাঁচিয়েছিলাম সেদিন ভয়ে আপনি আমাকে ধরে রেখেছিলেন। তারপর কলেজের সেই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় কিভাবে আমার হাত ভয়ে ধরে রেখেছিলেন। যার দাগ এখনো আমার হাতে আছে। জানেনতো আপনার ওই ভিতু চেহারার প্রেমে আমি পরে গেছি! একটা বাচ্চা বাচ্চা ফেসের মেয়ের সেই ভিতু চেহারা আমাকে তার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছে। আর রইলো চেইন খুলা ওটা কেন ডাকি তা আশা করি বলতে হবেনা। যাই হোক আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। আদ্রিয়ানের বউভাতের অনুষ্ঠানে আশা করি উত্তর পাবো।

ইতি,,
আপনার ডাক্তার বাবু।

রুবা চিঠিটা পরে আপন মনেই হাসলো। কি ভাবে নিজের প্রেম নিবেদন করলো লোকটা।

নাস্তা বানানোর পর মুন সবাইকে খেতে আসতে বললো। সবাই খেয়ে এখন রেডি হবে সন্ধ্যায় অনুষ্টান আছে বউ ভাতের।

আদৃতা আজকে হাসপাতালে রোগী দেখে মাত্র বাসায় আসলো। এখন আর সে ওই লোকটার সাথে থাকেনা। আদৃতা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। সে এখনো তার ভাইয়ের খোঁজ করে। তার মনে হয় তার ভাই আছে। হয়তো কোথাও না কোথাও আছে। সে ল্যাপ্টপে অনেক সাইডে আদ্রিয়ান নাম লেখে সার্চ দেয়। হতেও পারে তার ভাই কোনো সেলেব্রিটি সাইটে বা বড় কোনো বিজনেস সাইটে আছে। আদ্রিতা যত সাইটে আদ্রিয়ান লেখে সার্চ দিতো সেই সব সাইটে আদ্রিয়ান খান আমান নামটা আসতো। আদৃতার সন্দেহ হয় মাঝে মাঝে এই আদ্রিয়ান কি তার ভাইয়া। পরে ভাবে তার ভাই হলে তাকেতো নাম শুনেই চিনতো। এটা তার ভাই নয়।
আদৃতা আবার হতাশ হয়ে ল্যাপটপটা রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। আসতে আসতে চলে যায় সে ঘুমের দেশে।

বিকালে,,,,
বউ ভাতের আয়োযন করা হচ্ছে। পার্লার থেকে মেয়েরা আসছে রোদেলাকে সাজাতে। রোদেলাকে একটা গোল্ডেন কালারের লং ড্রেস পড়ানো হয় অনেক হাই কাজ করা ড্রেসটায়। সাথে মেচিং ডায়মন্ডের হালকা কিছু জুয়েলারি। সাজানো শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সাজানো শেষ করে রোদেলাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়। একে একে সবাই এসে রোদেলাকে দেখছে আর গিফট দিচ্ছে। ক্যামেরামেন আদ্রিয়ান রোদেলার অনেক আলাদা আলাদা পোজের ছবি তুলে দিচ্ছে।

রোদেলার বাসার সবাই এসে রোদেলার কাছে যায়। রোদেলা মা বাবাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়। মুন, রুবা, কাশু তিনজনে রোদেলা লজ্জা দেওয়ার জন্য ওকে লজ্জা মার্কা কথা বলছিলো। রুবা কিছুক্ষন কথা বলে এখন আরাভকে খুঁজতেছে। আরাভ সিড়ি দিয়ে নেমে দেখে রুবা দাঁড়ানো। আরাভ রুবাকে দেখে ওর কাছে এসে ওর সামনে তুড়ি বাজালো। রুবা আরাভকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

রুবা আরাভের হাতে তাড়াতাড়ি খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে,

রুবাঃ এখানে আপনার কাঙ্ক্ষিত জিনিশটা আছে।

বলেই রুবা তাড়াতাড়ি চলে গেলো।

দেখতে দেখতে অনুষ্টান শেষ হলো। আদ্রিয়ান ও রোদেলা রোদেলাদের বাসায় গেলো। সাথে আরাভ ও জুঁই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here