প্রেমময় আসক্তি❣️পর্ব ১৯+২০

#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৯.

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১সপ্তাহ। আদ্রিয়ান ও রোদেলার বিবাহিত জীবন অনেক ভালো যাচ্ছে। সাথে রাফসান মুন, কাশু, কাউসার, রুবা, আরাভ সবার দিন ভালোই যাচ্ছে। রাফসান ওর বাবা, মুন, কাশু, রুবা বসা ড্রইং রুমে।

রাফসানঃ বাবা আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
রাফসানের বাবাঃ হ্যাঁ, বল কি কথা।
রাফসানঃ বাবা আসলে,, বাবা আসলে আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবোনা।
রাফসানের বাবাঃ মানে?
রাফসানঃ বাবা আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবোনা কারন আমি মুনকে ভালোবাসি। বাবা আমি জানি তুমি হয়তো বলতে পারো আমি কেন এটা তোমাকে আগে বলিনি বা বিয়ের কথা হবার আগেও আমাকে আমার পছন্দের কথা মাকে দিয়ে জানতে চেয়েছিলে। তখনো আমি কেন বলিনি বা রিয়াকে দেখে ৪ মাসের সময় কেন চেয়েছিলাম। আসলে বাবা আমি মুনকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু আমি জানতাম না ও আমাকে ভালোবাসে কিনা। কিন্তু এই বিয়ে ঠিক হবার পর আমি জানতে পারি মুন আমাকে ভালোবাসে। আর ২য় রিয়া একজনকে ভালোবাসে কিন্তু সে বেকার ছিলো বলে রিয়ায় বাবা তাকে মেনে নেয়নি। কিন্তু এখন সে খুব ভালো একটা চাকরি করে। ভালো পজিশনে আছে। তাই বাবা আমি মুনকে ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই। আর রিয়া রাহুলকে বিয়ে করতে চায়। রিয়া আমাকে প্রথম দিন সব বলেছিলো। রাহুলের চাকরির অপেক্ষার জন্য আমি ৪মাস সময় চেয়েছিলাম। বাবা তুমি আশা করি সব বুঝতে পারছো।
রাফসানের বাবাঃ ঠিক আছে আমার মুনকে নিয়ে অমত নেই কোনো। মুন যথেস্ট ভালো লক্ষ্যি একটা মেয়ে। আমি রিয়ার বাবার সাথে কথা বলবো সমস্যা নেই। তবে আমরা আগামীকাল সিলেট ফেরত যাচ্ছি। সিলেটে গিয়েই আমি রিয়ার বাবার সাথে কথা বলবো। তুমি কবে যাবে সিলেট?
রাফসানঃ আমি সামনের সপ্তাহে যাবো। আমার কাজ সামনের সপ্তাহে শেষ হবে।
রাফসানের বাবাঃ ঠিক আছে তাহলে।

রুবা আসছে আরাভদের বাসায়। এখন প্রায় সে আসে আরাভদের বাসায়। রুবা সেদিন খামে আরাভের প্রেমের ডাকে সারা দিয়েছিলো। এরপর থেকে শুরু হয় তাদের পথচলা। রুবা এখন প্রায় আরাভদের বাসায় এসে জুঁইয়ের সাথে আড্ডা দেয়। রান্না করে তারপর আরাভ আসলে একসাথে খায়। আবার আরাভ রুবাকে বিকালে বাসায় দিয়ে আসে।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে একটু বের হয়েছে। কিছু কেনাকাটা করতে আসছে রোদেলা। কেনাকাটা শেষে ওরা শপিংমল থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসতেই পিছন থেকে একটা বুলেট এসে গাড়ির গ্লাসে লাগে। ভাগ্য ভালো যে আদ্রিয়ান আর রোদেলা কাছে ছিলোনা। নাহলে ওদের মাঝে কারো গায়ে গুলিটা লাগতো। আদ্রিয়ানের গার্ডরা ওর সাথে থাকায় গুলি যে ছুড়েছে তাকে ধরতে তিনজন গার্ড যায় আর বাকিরা আদ্রিয়ানের কাছেই থাকে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে চলে যায়। রোদেলা তার সাথে না থাকলে সে নিজেই ওই জানোয়ারকে ধরতে যেতো। কিন্তু এখন তার সাথে রোদেলা আছে। আর রোদেলার জীবন সে হুমকিতে আনতে চায়না। আদ্রিয়ান রোদেলাকে বাসায় দিয়ে একদম কড়া গলায় বলে গেছে রোদেলা যেনো বাসা থেকে কোথাও না বের হয়। সব গার্ডদের এলার্ট করে দিয়ে গেছে।

আদ্রিয়ানের গার্ডরা সেই লোকটাকে ধরে নিয়ে আসে যে ওদের উপর গুলি ছুড়ে ছিলো। আদ্রিয়ানের চোখ লাল হয়ে আছে। বিষন কাঁপছে আদ্রিয়ানের শরীর। আজকে রোদেলার কিছু যদি হয়ে যেতো। আদ্রিয়ান সামনে থাকা লোকটার বুক বরাবর লাথি মারে। লোকটা যন্ত্রনায় ছটফটিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওর গার্ডদের ইশারা করতেই ওরা লোকটাকে বেধর মারতে লাগলো। হকি স্টিক দিয়ে বেধর মার মারছে লোকটাকে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে এসেছে লোকটার। আদ্রিয়ান ইশারায় ওদের থামতে বলে, আদ্রিয়ান একটা বন্ধুক হাতে নেয় পর পর ছয়টা গুলি লোকটার মাথা বরাবর চালিয়ে দেয়।

লোকটাকে মারার পর আদ্রিয়ান বাহিরে এসে দাঁড়ায়। সায়মন আদ্রিয়ানের কাছে এসে বলে,

সায়মনঃ স্যার, আমার মনে হয় এবার আপনার মাঠে নামা দরকার।
আদ্রিয়ানঃ মাঠে নেমে কি করবো? যাকে নিয়ে খেলবো তাকেইতো পাচ্ছিনা। সে কোন গর্তে লুকিয়ে আছে।
সায়মনঃ স্যার, আমাদের লোকেরা খবর লাগিয়েছে। আপনার বাবা হয়তো দেশে আছে। তবে সেটা সিওর না।
আদ্রিয়ানঃ না করেছিনা তোকে অই লোককে আমার বাবা বলবিনা। বাবা নামক কলঙ্ক সে।

হ্যা আদ্রিয়ান জানে এগুলা তার বাবাই করছে। তার বাবা তার পরম শত্রু।

সায়মনঃ জ্বি। ভুল হয়ে গেছে।
আদ্রিয়ানঃ যত দ্রুত পারো তার খোঁজ আমাকে দেও। আর বসে থাকার সময় নেই।

আদ্রিয়ান কথা শেষ করে বেরিয়ে পরলো গাড়ি নিয়ে।

আদৃতা রোগী দেখে নিজের কেবিনে বসে আছে। তখন ওর কেবিনে আসে ওর কলিগ আদনান। আদনান আর আদ্রিতা এক সাথে পড়াশুনা করেছে দেশে বাহিরে এক সাথেই পড়াশুনা করেছে তারা। আদনান আদ্রিতাকে ভালোবাসে। সে অনেকবার তার মনের কথা আদ্রিতাকে বলেছে কিন্তু আদৃতা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আদৃতা মনে করে ভালোবাসা বলতে সব ধোঁকা। সবাই তার বাবার মতো করবে। আদনান এটা অনেকবার আদ্রিতাকে বুঝিয়েছে যে সবাই তোমার বাবার মতো নয়। কেন তুমি সবাইকেই তোমার বাবার মতো ভাবো। কিন্তু আদৃতা তাও আদনানকে মেনে নেয়নি আর না এটা মানে যে সবাই তার বাবার মতোনা।

আদনানঃ কি অবস্থা?
আদৃতাঃ এইতো। তুমি যে আসবা আমাকে তো বললানা।
আদনানঃ চমকে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু আম্মু তোমাকে আগেই বলে দিছে আমি আসবো সেটা।
আদৃতাঃ হ্যাঁ। আন্টি আমাকে কালকেই বলছে। তুমি যে আসছো।
আদনানঃ আচ্ছা আজকে আর রোগী আছে?
আদৃতাঃ না নেই।
আদনানঃ তাহলে চলো।
আদৃতাঃ কোথায়?
আদনানঃ বাসায়। আজকে মা তোমার পছন্দের খাবার রান্না করছে। তোমাকে নিয়ে যেতে বলছে।
আদৃতাঃ আচ্ছা। ঠিক আছে চলো।

আদনান আদৃতাকে নিয়ে আদনানদের বাসায় গেলো। আদনানের মাও আদৃতাকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু আদৃতাই রাজী নয়। আদৃতাকে আদনানের মা অনেক ভালোবাসে একদম নিজের মেয়ের মতো।
আদৃতাও আদনানের মায়ের মধ্যে নিজের মাকে ফিল করে।

রোদেলা বাসায় বসে অপেক্ষা করছে আদ্রিয়ানের। সেই সকালে ওইভাবে রেগে বাসা থেকে গেছে। এখন রাত হয়ে আসছে আসার নাম নেই। রোদেলার অনেক চিন্তা হচ্ছে আদ্রিয়ানের জন্য।

রোদেলাঃ আল্লাহ, লোকটা কোথায় গেলো! আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছে।

রোদেলা এসব চিন্তা করছে এর মধ্য দরজাল বেল পরলো। রোদেলা দরজা খুলে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়ানো। কিন্তু আদ্রিয়ান হেলেদুলে দাঁড়াচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে ওর ড্রিংক করে বাসায় আসছে। রোদেলা আদ্রিয়ানকে ধরে ঘরে আনে।
আদ্রিয়ান উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। রোদেলা আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে,

রোদেলাঃ আদ্রিয়ান আপনি ড্রিংক করে আসছেন কেন? আর এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলেন আপনি।

আদ্রিয়ান নেশায় কিছু স্বাভাবিক ভাবে শুনতে পারছেনা। সে নেশার ঘোরে রোদেলাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। রোদেলা হাজার না করার পরেও আদ্রিয়ান নেশার ঘোরে রোদেলাকে আপন করে নেয়।

পরেরদিন সকালে,,,,,

আদ্রিয়ানের ঘুম ভাংগলে নিজের মাথাটা খুব ভার ভার লাগে। আদ্রিয়ান পাশে তাকিয়ে দেখে রোদেলা নেই। আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। রোদেলা রান্না ঘরে রান্না করছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলে,

আদ্রিয়ানঃ আমার বউটা কি করে?
রোদেলাঃ……….
আদ্রিয়ানঃ কি হলো কথা বলছোনা কেন?
রোদেলাঃ কাল রাতে ড্রিংক করে বাসায় আসছেন
তারওপর মাতাল অবস্থায়…। এতো রাতে বাসায় আসছেন তাও মদ খেয়ে কি কারনে?
রোদেলার কথায় বুঝতে পারে আদ্রিয়ান যে সে মাতাল অবস্থায় রোদেলাকে ছুঁয়েছে।
আদ্রিয়ানঃ সরি নেশামই। কাল ওই মার্কেটের ঘটনায় অনেক ভয় পেয়েছিলাম আমি।
রোদেলাঃ আপনি জানেন কাল আমি কত টেনশনে ছিলাম? আর হ্যাঁ, এরপর কোনোদিন ড্রিংক করবেননা। কাল আমি আপনার স্ত্রী বলে আপনি আমার কাছে এসেছেন। কিন্তু এই ড্রিংক আর করবেননা।
আদ্রিয়ানঃ ওকে করবোনা।

এভাবে আরো কিছুদিন চলে গেলো। রাফসানের বাবা মা সিলেট চলে গেছেন। রিয়ার বাবার সাথে কথা বলেছেন তিনি। রিয়ার বাবার কোনো আপত্তি নেই।

আদ্রিয়ান রোদেলা আজকে এই বাসায় আসছে। রাফসান কাল চলে যাবে তাই আসতে বলছে। সবাই মিলে কথা বলছিলো তখন রাফসানের ফোনে একটা কল আসলো। রাফসান ফোনটা রিসিভ করে যা শুনলো তা শুনে ওর হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো। মুখ থেকে একটা কথাই বের হলো,

“এটা হতে পারে না।”
#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_২০
#নন্দিনী_চৌধুরী

২০.
মাটিতে বসে সোফায় মাথা দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে তাকা ইকুরিয়ামটার দিকে রোদেলা। দুচোখ তার ফুলে গেছে কান্না করতে করতে। এখন আর কাঁদার মতো শক্তিটাও সে পাচ্ছেনা। রোদেলা পাশে সোফায় বসা মুন। মুনের সামনের সোফায় বসা রুবা আর কাশু বসা ওর পাশে সোফায়। সবার চোখ মুখ ফোলা। একটা ঝর এসে সব এলোমেলো করে দিয়েগেছে ওদের।

আদ্রিয়ান, আরাভ, রাফসান মাত্র বাসায় ঢুকলো রাফসানের মা-বাবার জানাজা দিয়ে। হ্যাঁ, চলে গেছে রাফসান আর রোদেলাকে অনাথ করে ওদের মা-বাবা না ফেরার দেশে। সারাজীবনের মতো চলে গেছে ওরা। আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা তারা। রাফসান বাসায় এসে বসে পরলো চেয়ারে। রাফসানকে এতোটা ভেংগে পরতে দেখে মুন ভিতরর ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদেলার মাথার পাশে বসলো। রোদেলার কোনো রেসপন্স নেই। আরাভ এসে রুবার পাশে বসলো। সবাই এই শোকটা মানতে পারছেনা সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো তাদের।

রাফসান সকালে যখন ফোন রিসিভ করে তখন ওদের পাশের বাসার লোকেরা জানায় ওদের মা-বাবা ঘরে পরে আছে মৃত অবস্থায়। রাফসান সেটা শুনে যত তাড়াতাড়ি পেরেছে সবাইকে নিয়ে ইমার্জেন্সি ফ্লাইটে সিলেট গেছে। বাসায় পৌছে ওরা ওদের মা-বাবার লাশ ছাড়া কিছুই পায়না। রোদেলা ওর বাবার নীথর দেহট ধরে একটা গগণ ফাটানো চিৎকার দিয়ে ওখানেই জ্ঞান হারায়। রাফসানের চোখ দিয়ে পানি পরছে। তারা আসতে বোড্ড দেড়ি করে ফেলেছে। বিকালে তাদের জানাজা সম্পুর্ন হয়। রোদেলার জ্ঞান ফিরে বিকালের আগেই শেষবারের মতো মা-বাবাকে দেখিয়ে আনা হয় ওকে। তারপর থেকে এই মাটিতেই বসে আছে ও।

মুন উঠে রাফসানের কাছে যায়। রাফসানের কাঁধে হাত রেখে বলে,

মুন: শুনো, সেই সকাল থেকে তোমরা না খাওয়া কিছু একটু খেয়ে নেও।
রাফসান: আমার ইচ্ছে নেই। তুমি রোদেলা, আদ্রিয়ান আর বাকিদের খাবার দেও।
মুন: ওরাও কেউ খাবেনা বলছে।
রাফসান: তাহলে রোদেলা আর আদ্রিয়ানকে দেও।
মুন: আচ্ছা।

মুন কিচেনে যেতে নিলে আদ্রিয়ান বলে,

আদ্রিয়ান: কোথায় যাচ্ছেন ভাবি।
মুন: আপনাদের জন্য কিছু খাবার বানাতে। সেই সকাল থেকে না খাওয়া আপনারা।
আদ্রিয়ান: তার কোনো দরকার নেই। আমি বাহিরে অর্ডার দিছি। হয়তো কিছু সময়ের মাঝে চলে আসবে। আপনি রাফসানের কাছে থাকুন। আমি রোদেলাকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি।
মুন: আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।

রোদেলা সোফায় ওভাবে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। আদ্রিয়ান ওকে কোলে করে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুবা উঠে ওর রুমে যায় যাওয়ার আগে আরাভকে একটা রুমে দিয়ে আসে। কাশুও উঠে রুমে চলে যায়। মুন আবার আসতে করে রাফসানের পাশে চেয়ার টেনে বসে। রাফসানের কাঁধে আবার হাত রাখতেই রাফসান মুনকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। এতোটা সময় খুব কষ্টে কান্না দমিয়ে রেখেছে রাফসান। এখন যেনো আর পারছেনা আটকাতে। তাইতো তার প্রেয়শীর বাহুডোরে হাউমাউ করে কাঁদছে। রাফসান খুব ভালোবাসে তার বাবা-মাকে। তাদের এই অকাল মৃত্যু মানতে পারছেনা রাফসান। রাফসান পুলিশের কাছে গিয়েছিলো জানাজা করে আসার সময়। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে বীনা কোনো প্রমানে তারা কোনো কেস লেখবেনা। কারন রাফসানের মা বাবার শরীলে কোনো ক্ষতবিক্ষত হবার চিহ্ন ছিলোনা। তাই এটা যে মার্ডার নাকি নরমাল ড্যাথ বুঝা যাচ্ছেনা। রাফসানের প্রতিবেশি যারা ফোন করেছিলো তারা জানায়। রোজ কারের মতো সে রাফসানের বাবার সাথে বাজারে যাবে বলে এসেছিলো। কিন্তু অনেকক্ষন দরজায় বেল দেওয়ার পরেও যখন তারা দরজা খুলছিলোনা। তখন সে তার ছেলেদের দিয়ে দরজা ভাংগায় আর দেখে রোদেলা বাবা সোফায় পরে আছে, আর রোদেলার মা মাটিতে। তারা এটা দেখার সজ্ঞে সজ্ঞে তাদের পার্লস চেক করে দেখে তারা আর নেই। তার পরেই তারা রাফসানকে কল করে।

রাফসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মুন। চোখের পানিতে তার চোখ আটকে আসছে। কিন্তু সবাই এক সাথে কাঁদলে। শান্তনা দেবে কে কাকে। মুন রাফসানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। অনেকটা সময় পর রাফসান শান্ত হলো। এভার একদম চুপ করে মুনকে জরিয়ে ধরে বসে আছে সে।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রোদেলার পাশে বসে। পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগায় সায়মনকে। ওদের সব জানায় তারপর ওদের ওদিকে খেয়াল রাখতে বলে কল কাঁটে। আদ্রিয়ান রোদেলার হাত ধরে বসে আছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে মেয়েটা একদম নেতিয়ে গেছে।

মুন হাতে করে দুই প্লেট খাবার এনে আদ্রিয়ান রোদেলার রুমে দিয়ে যায়। আর এক জগ পানি আর গ্লাস। তারপর আরাভ, রুবা,আর কাশুর রুমেও দিয়ে আসে খাবার। তারপর রাফসানের জন্য খাবার নিয়ে ওর রুমে যায়। জানে নিজেতো খাবেনা। তাই ও খাইয়ে দেবে।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে আসতে করে ডাকতে লাগলো।

আদ্রিয়ান: রোদেলা, রোদেলা উঠো। একটু কিছু খেয়ে নেও রোদেলা।
রোদেলা কপাল কুঁচকে বলে,

রোদেলা: উফফ মা ডেকোনাতো। এই সকাল সকাল। আমি এখন আরেকটু ঘুমাবো।
আদ্রিয়ান বুঝতে পারে রোদেলা ঘুমের ঘোরে ওর মাকে স্বপ্নে দেখছে।

আদ্রিয়ান তাই আর ওকে উঠালোনা। আদ্রিয়ান হালকা একটু খেয়েনিলো। তারপর রোদেলার পাশে শুয়ে ওকে বুকে টেনে এনে শুইয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।

___________________________

কয়েকদিন পর,,,,,,

দেখতে দেখতে রোদেলাদের মা বাবা মারা গেছে ১সপ্তাহ হয়ে গেছে। রাফসান যতটা পারছে নিজেকে স্ট্রং রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু রোদেলা একদম ভেঙে গেছে। মাঝে মাঝেই মা বাবার জন্য পাগলামি করে। জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। চিৎকার করে। আদ্রিয়ান একজন সাইক্রেটিস দেখায়। আর সে জানায়। রোদেলা যতটা পারে হ্যাপি রাখতে। তাই আদ্রিয়ান ভেবেছে রোদেলাকে নিয়ে ঘুরে আসবে কিছুদিন। আগামীকাল তারা চট্টগ্রাম যাবে।

যথারীতি আজকে আদ্রিয়ান রোদেলা বান্দরবন যাবে। এয়ারপোর্টে এসে সব ফর্মালিটি পূরন করে তারা এখন অপেক্ষা করছে ফ্লাইটের জন্য। বেশ কিছু সময় পর তারা প্লেনে উঠলো। রোদেলা জানালার সাইডে বসেছে। প্লেন চলা শুরু হলো।

৪০ মিনিট জার্নি শেষ করে

আদ্রিয়ান রোদেলা এসে পৌছালো চট্টগ্রাম । ঠান্ডা শীতল বাতাস খোলা আকাশ আশে পাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে রোদেলার এখন অনেকটা ভালো লাগছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে একটা হোটেলে উঠলো। ওদের রুমে এসে দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর দুজনে খাবার খেতে নিচে গেলো।
খাবার খেয়ে আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে আশে পাশের জায়গায় গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে।

________________

কাশফিয়া আর কাউসার বসে আছে রেস্টুরেন্টে। কাউসার সব জানে রোদেলার মা বাবা যে মারা গেছে। কাউসার কাশুকে বলে,

কাউসার: তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
কাশু: হুম বলো।
কাউসার: আমাকে আগামি মাসের দেশের বাহিরে চলে যেতে হবে।
কাশু: কেনো।
কাউসার: আমি দেশের বাহিরে গিয়ে আমার ডাক্তারি পড়াশুনা সম্পূর্ন করতে চাই।
কাশু: ওহ আচ্ছা। তাহলে যাও।
কাউসার: তুমি কি রাগ করবা? আমাকে ভুলে যাবা এই কয়েক বছরে?
কাশু: জানিনা।
কাউসার: আচ্ছা ঠিক আছে। চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
কাশু: হুম।

আরাভ আর রুবা বাসার সোফায় বসে আছে। তুর্য জুঁইকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এখন আরাভ জুঁইয়ের বিয়ের ব্যাপারে ভাবছে।

আরাভ: ভাবছি আদ্রিয়ান বান্দরবন থেকে আসলেই জুঁইয়ের বিয়েটা দিয়ে দেবো।
রুবা: হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে।
আরাভ: হ্যা তারপর নিজেও বিয়ে করে বউ ঘরে নিয়ে আসবো।
রুবা: হুহ😒।
আরাভ: 😁।

দুইদিন পর,,,,
রোদেলা চট্টগ্রাম এসে এখন অনেকটা ভালো আছে। এখানে ঘুরে ফিরে ওর ভালোই লাগছে। সকালে রোদেলা রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান কি কাজের জন্য বাহিরে গেছে। রোদেলা বসে ছিলো রুমে তখন হোটেলের একটা স্টাফ ওর রুমে নোক করলো। রোদেলা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে হোটেলের একটা স্টাফ। স্টাফটা রোদেলার দিকে একটা পার্সেল এগিয়ে দিয়ে বলে,

স্টাফ: ম্যাম, এই পার্সেলটা আপনার জন্য এসেছে।
রোদেলা: কে দিয়েছে এটা?
স্টাফ: জানিনা ম্যাম। সকালে আসছে এটা। আপনার নাম লেখা। স্যারকে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু স্যার তো বাহিরে গেলেন দেখলাম। তাই আমিই দিয়ে গেলাম আপনাকে।
রোদেলা: আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

রোদেলা পার্সেলটা নিয়ে বিছানায় বসলো। পার্সেলটা ওপেন করবে এমন সময় মুনের কল আসলো। রোদেলা পার্সেলটা টেবিলের কোনায় রেখে ফোন রিসিভ করলো। তারপর মুনের সাথে কথা বলতে লাগলো।

রাতে,,,,,

আদ্রিয়ান আর রোদেলা হোটেলের গার্ডেনে দোলনায় বসে চাঁদ দেখছে। রোদেলা আদ্রিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে। আদ্রিয়ান রোদেলা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,

আদ্রিয়ান: কাল তোমাকে নিয়ে পাহাড় দেখতে যাবো তুমি যাবা?
রোদেলা: হ্যাঁ, যাবো যাবো।
আদ্রিয়ান: আচ্ছা। তাহলে আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে পাহাড় দেখতে যেতে হলে।
রোদেলা: কি?
আদ্রিয়ান: আমাকে আজকে তোমাকে ভালোবাসতে দিতে হবে।
রোদেলা: 🙈🙈।

আদ্রিয়ান রোদেলার চুপ করে থাকাটা সম্মতি বুঝলো। আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে তুলে নিলো। রোদেলা কোলে করে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে মিসে যেতে লাগলো রোদেলার মাঝে। আসক্ত হয়ে যেতে থাকে আবার আজকের রাতে তারা দুজন।

_______________

মুন, রুবা নাস্তা বানাচ্ছে। রুবার মুনকে কেমন চিন্তিত লাগছে। রুবা মুনকে বলে,

রুবা: কিরে তোকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন?
মুন: জানিনারে আজ সকাল থেকে মনটা কেমন কুঁ ডাকছে। মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হতে চলেছে।
রুবা: আমারো আজ কেমন জানি করছে মনটা। বড় কোনো বিপদ আসছে সামনে এমন মনে হচ্ছে। আল্লাহ করুক এমন কিছু না হয়।
মুন: হুম সেটাই যেনো হয়।

আদৃতা অনেক কষ্টে ওর চাচার খোঁজ পেয়েছে। এক মাত্র ওর চাচা বলতে পারবে ওর ভাই কোথায় আছে। বেঁচে আছে নাকি নেই। আদৃতা সকাল হতেই আদনানকে নিয়ে বেরিয়ে পরেছে ওর চাচার হাবিবের বাসায় যাওয়ার জন্য। আজ ও সব প্রশ্নের উত্তর ও পাবে এই আশা আজ ওর মনে।

রোদেলা আর আদ্রিয়ান বান্দরবনে যাচ্ছে পাহাড় দেখতে। রোদেলার মনটা আজ কেন জানি খুব বিষন্নতাময়। আদ্রিয়ান জিনিশটা খেয়াল করেছে। আদ্রিয়ান রোদেলার হাতের উপর হাত রেখে জিজ্ঞেশ করে,

আদ্রিয়ান: কি হয়েছে তোমার?

রোদেলা আদ্রিয়ানের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়না। উল্টা আদ্রিয়ানকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে যেনো ছেড়ে দিলেই আদ্রিয়ান চলে যাবে।
আদ্রিয়ান ও রোদেলাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। গাড়ি চলছে আপন গতীতে। রোদেলা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কিছু একটা ভাবছে ভাবতেই চোখের কোণে পানি এসে গেছে। রোদেলা আপন মনেই বলতে থাকে,

“কিছু জিনিশ আমাদের না চাইতেও হারাতে হয়। কিছু মানুষকে না চাইতেও সরিয়ে দিতে হয়।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here