প্রেমময় প্রহর পর্ব ৭পর্যন্ত

#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :৭

কিছুসময় আগে সায়রা আর নিহার কথোপকথনের দৃশ্য ঠি ক নিলুফা বেগমের চোখে পড়ে মুখে এক বাকাঁ হাসি ফুটে উঠে সে এমনই একটা মোহরা চেয়েছে আর সে পেয়েও গিয়েছে এই সুযোগ কোন ভাবেই উনি হাত ছাড়া করবেনা ।
চলে যায় আগুনে ঘি ঢালতে।
নিহার পাশে দাড়িয়ে সায়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
-“দেখেছ মেয়ের সাহস কত ?
তোমাকে অপমান করলো থ্রেড দিয়ে গেল !
আর তুমিও তাকে ছেড়ে দিলে ?
ওকে একটা শিক্ষা দেওয়ার দরকার ।”
নিহা নিলুফা বেগমের মুখে এমন কথা শুনে ভ্রু কুচঁকিয়ে সন্দেহর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
-“হঠাৎ আমার উপর এতটা দয়া দেখানোর কারন কি ?
কি চান আপনি ?
আমিতো আপনার কোন কালেই পছন্দ ছিলামনা ।আগে তো আমাকে সয্য করতে পারতেন না তো হঠাৎ এতটা পাল্টানোর কারন কি !”
কথা গুলো শুনে নিলুফা বেগমের মুখ কালো হয়ে যায় পরক্ষনেই নিজের মুখে হাসির রেখা টেনে বলল
-“আগে পছন্দ ছিলেনা এখন পছন্দ হয়ে গেছ ।
তুমি যা চাও আমার উদ্দেশ্যও তাই আমিও চাই সায়রা এই বাড়ি থেকে চলে যাক সারাজীবনের জন্য পরবর্তীতে কোন দিন যেন এখানে না ফিরে !”
-“এতে আপনার লাভ কি ?”
-“তা তোমার না জানলেও চলবে !
তুমি তোমার কাজ কর সাহায্যের জন্য আমি আছি ।”
নিহার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে সে দাতঁ কটকট করতে করতে বলে
-“এবার দেখুন এই নিহা কি করে !
ঐ মিডেলক্লাস মেয়েকে কি করে আরসালের জীবন থেকে আর এই বাড়ি থেকে বের করি ।”

রাতে মেহিদী বাড়ির সবাই বেশ ব্যস্থ ।বাড়ির ছাদেই মেহিদীর অনুষ্টান হবে তাই সকাল থেকে সবাই বেশ ব্যস্থ কাজে ।মুন দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে হাতে তার রঙ এর থালি ।
ছাদে আলপোনা করবে তাই রঙ নিয়ে যাচ্ছে ।
হঠাৎই সিড়ি বেয়েঁ উপরে উঠার সময় আদির খেলার বল মুনের পায়ে বাজে ফলে সে পড়ে যেতে নেয় চোখ বন্ধ করে ফেলে তার মনে হচ্ছে এই বুঝি তার কমোড় গেল !
আচমকাই কেউ কেউ তার কমোড় জরিয়ে ধরে কে এমন ভাবে কমোড় চেপে ধরেছে তা দেখার জন্য সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায় তাকিয়ে দেখে নিহাল তার কমোড় জরিয়ে ধরে আছে ।নিহালের পুরো শরীর রঙ দিয়ে মাখা ।নিহালের এমন অবস্থা দেখে মুন সাথে সাথে নিহাল থেকে দূরে সরে যায় ।তার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে ভিতরে খুব ভয় কাজ করছে ।এখন নিহাল তাকে কি বলবে ?
রাগ করবে নাকি তা ভেবে ভেবে নিজের অবস্থা খারাপ করে ফেলছে !
নিজেকে নিহালের ধমকি শুনার জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছে ।
কিন্তু মুন কে অবাক করে দিয়ে নিহাল বলল
-“এত ভয় পেতে হবে না আমি আপনার উপর মটেও রাগ ঝাড়বোনা !
এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট এটা নিয়ে এত ভাবতে হবেনা আপনিও রঙ এ মেখে গেছেন যান ভিতরে গিয়ে চেন্জ করে নিন ।”
মুন নিহালের কথায় নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ সত্যিই তো সে তো পুরো রঙ এ মেখে গেছে ।
মাথা নিচু করে জড়সড় কন্ঠে বলে
-“সরি আমি আসলে খেয়াল করিনি ।
অসাবধানতার কারনে এমনটা হয়ে গেছে !”
নিহাল হালকা হেসে বলতে লাগে
-“ইট’স অকে আমি বুঝতে পারছি !
ডোন্ট ওয়ারি ”
মুন এক পা এক পা করে পিছাচ্ছে আর নিহালকে সরি বলছে তার চেহারায় এখনো স্পস্ট ভয় দেখা যাচ্ছে ।নিহাল শুধু অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে মুনের যাওয়ার দিকে ।মেয়েটার মাঝে বাচ্চামো আর সরলতা টা খুব বেশি বিদ্যমান !

বিকালে সায়রা কিচেনে নাস্তার কাজে সাহায্যে করছে সন্ধ্যার পর থেকেই গেস্ট আসা শুরু করবে এখন তারাতারি করে সব কাজ শেষ করতে হবে কাজের লোকটা ও একা পারছেনা তাই সায়রা হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে ।
সায়রা পুড়ি ভাজছিলো এমনই সময় নিহা কিচেনে ভিতর ডুকে কারো উপস্থিতী টের পেয়ে সায়রা পিছনে ঘুরে তাকায় তাকিয়ে দেখে নিহা !
তার পড়নে শর্ট টপস নাভি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লং স্কার্টের সাইট দিয়ে নিচে থেকে কাটা ফলে পা দেখা যাচ্ছে মর্ডান সাজসজ্জা তার ।
সায়রা চোখ বুলিয়ে দেখে আবার নিজের কাজে মন দেয় ।
নিহা সায়রার কাছে এগোতে এগোতে বলতে লাগে
-“ইউ নো হোয়ার্ট তোমাকে এখানেই বেশ ভালো মানায় কাজের লোকেদের সাথে ।
তোমার মত মিডেলক্লাস মেয়ের জন্য এটাই পার্ফেক্ট জায়গা !”
কথাটা শুনতেই সায়রার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ।পাশে কাজের লোকের দিকে তাকিয়ে দেখে উনিও ফ্যাল ফ্যাল চোখে সায়রার দিকে তাকিয়ে আছে নিহার এসব কথা শুনে ।সায়রা নিজের রাগটাকে চেপে ধরে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে
-“নিহা আপনিও না সত্যি গাধাঁ শুধু হাত পায়েই দেখছি বড় হয়েছেন মাথায় বিন্দু মাত্র বুদ্ধি নেই !
আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি এই বাড়ির বউ আমি কিচেনে থাকবো না তো কে থাকবে ।
আমার একমাত্র ননদের বিয়ে বলে কথা !
আমি তো আর আপনার মত গেস্ট না যে বিয়েতে ফ্রি তে খেয়ে দেয়ে সেজে সেজে ডেংডেং করে ঘুরবো ।”
সায়রা খুব সুন্দর করে মুখে মধু নিয়ে নিহাকে অপমান করে দেয় ।কাজের লোকটা মুখ চেপে হাসছে ।নিহা রেগে বের হয়ে যায় কিচেন থেকে ।সায়রাকে বার বার অপমান করতে যেয়ে নিজেই অপমানীত হয় তার কাছ থেকে ।সায়রাই তার পথের একমাত্র কাটা এই সায়রার জন্যেই তার এতবছরের প্লান সব ভেস্তে গেছে যে করেই হোক সায়রাকে এই বাড়ি থেকে বের করতে হবে না হয় তার এত বছরের সব পরিকল্পনা সব শেষ হয়ে যাবে !
এই সব কথা ভাবতে ভাবতেই বড় বড় পা ফেলে নিহা উপরে নিজের রুমে চলে যায় ।
এদিকে সায়রাকে কিচেনে এসব করতে দেখে মুনতাহা খাঁন বলে
-“এত লোক থাকতে তুমি কেন এইসব করছো !
যাও তৈরী হয়ে নেও কিছু সময় পরই গেস্ট আসতে শুরু করবে ।”
সায়রা নাড়তে নাড়তে বলে
-“এই তো মা প্রায় শেষ আমি কাজটা শেষ করেই তৈরী হতে যাচ্ছি !”
মুনতাহা খানঁ বেশ জোরাজুরির করার পরও সায়রা যায় না কাজ শেষ করেই যায় !

সন্ধ্যায় এক এক করে গেস্ট আসতে শুরু করেছে আরসালের তার বন্ধুদের সাথে ছাদে সুইমিং প্যুলের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছে তার চোখ জোড়া বরাবরের মত সায়রাকে খুজেঁ যাচ্ছে বাড়ির সব মেয়েরাই এখানে শুধু সায়রা বাদে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজার কাছে তার চোখজোড়া আটকিয়ে যায় কারন মুখে আনমনেই বের হয়ে যায়
-“ওয়াও !!!”
আজ সায়রাকে অসাধারন লাগছে সবুজ লং স্কার্ট গোল্ডেন কমোড় পর্যন্ত টপ কমোড় পর্যন্ত চুলগুলো ছাড়া মাথায় শুধু লাল গোলাপের টি কলি হালকা মেকওভার সব মিলিয়ে অসাধারন আরসাল যেন কোন পুতুলকে দেখছে ।

সায়রা হাতে মেহেদী লাগিয়ে বসে আছে সামনেই পানির গ্লাস আসে পাশে সবাই ব্যস্ত কাউকে যে বলবে পানির গ্লাসটা মুখে তুলে দিতে সেই সুযোগটাও নেই !
বার বার পানির গ্লাসের দিকে তাকাচ্ছে কারন তার খুব পিপাসা পেয়েছে ।
তার পুতুল চোখ দিয়ে আসে পাশে সবাইকে দেখে যাচ্ছে বাচ্চাদের মত ঠোঁট বাকিঁয়ে রয়েছে ।হঠাৎই কেউ পেছন থেকে সায়রার মুখের কাছে জুসের গ্লাস ধরে সায়রা এক নিশ্বাসে ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের জুস শেষ করে ফেলে ।
জুস খাওয়া শেষ হতেই সায়রা মুখে বড় হাসি দিয়ে পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে বলতে লাগে
-“অনেক ধন্যবাদ !”
হঠাৎ চেহারার দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে মূহুর্তেই সায়রার মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায় ।সায়রা বলল
-“আ..আ..আপনি ?”
-“হ্যা হ্যা আমিই !”
-“আপনি এখানে কি করছেন ?”
-“তো আমার কোথায় থাকা উচিত ?”
-“ও হো আপনি কথা এত প্যচান কেন !
সরাসরি কোন উত্তর দিতে পারেন না ?”
-“তো সরাসরি বললেই কি আপনি সবটা বুঝেন ?
কত কথাই তো সরাসরি বোঝানোর চেস্টা করি কিন্তু আপনি তো বুঝেও বুঝেন না !”
সায়রা বেশ বুঝতে পারছে আরসাল কি বোঝাতে চাচ্ছে ।সায়রা তা বুঝেও না বোঝার মত করে থাকে যেন সে কিছুই জানে না !
আরসাল বাকাঁ হেসে বলে
-“তোমার এই অবুঝ চেহারাটাও মনমুগ্ধ কর !”
সায়রা আরসালের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকায় ।আরসাল ঠোঁট চুখা করে সায়রাকে কিস করার ভঙ্গিমা করে সায়রা মুখ ঘুরিয়ে বলে
-“অসভ্য !”
-“আর এ‌ই অসভ্য বানানোর পেছনে পুরো অবদান আপনারই !”

সায়রা আর কথা বাড়ায় না হঠাৎ সায়রার চোখ যায় খানিকটা দূরে বসে থাকা রিদ্ধি আর সায়নের দিকে বেশ মিষ্টি লাগছে দুজনকে একসাথে !
রিদ্ধি বায়না করছে সে খাবেনা সায়ন তাকে জোর করে খাওয়াচ্ছে পাশেই আদি বসে আছে মা বাবার ঝগড়া দেখছে ।বেশ সুন্দর লাগছে তাদের পরিবারটা ।
সায়রা তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হালকা আওয়াজে বলে
-“কখনো এই ভালোবাসায় নজর না লাগে !”
আরসাল পাশ থেকে সায়রাকে দেখছে সায়রার কথা ঠিক তার কানে গেছে ।
সে সায়রার ঘাড়ে থুতনী রেখে বলে
-“চিন্তা করোনা কখনো নজর লাগতে দিবোনা !”
সায়রার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে ।
কিছু দূর থেকে কেউ একজন সায়রা -আরসাল ,রিদ্ধি – সায়নের দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে আছে ।সে রেগে বলতে লাগে
-“নজর তো লেগে গেছে তোমাদের কাউকে শান্তিতে থাকতে দিবোনা ।
সবার শান্তি ছিনিয়ে নিবো !
তোমাদের সবাইকে ফল ভোগ করতে হবে ।”

ঘড়িতে রাত ২ টা বাজতে চলছে সায়রা বারান্ধা থেকে আরসালের রুমে উকি ঝুকিঁ মেরে যাচ্ছে ।পুরো রুম অন্ধকার ভিতরে যাবে কি যাবেনা তা ভেবে যাচ্ছে ।
এক পা ভিতরে দিলে দু পা পিছনে যাচ্ছে তার বেশ ইচ্ছে করছে আরসালকে একবার ভিতরে যেয়ে দেখতে তার জ্বর আসছে কিনা তা দেখতে কিন্তু পরবর্তীতে আরসালের কথা ভেবে পিছিয়ে যাচ্ছে ।
অবশেষে সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ভিতরে চলে যায় আরসালকে দেখতে ।যেই আরসালের কপালে হাত রেখে দেখতে যাবে জ্বর আছে কিনা সেই সময় খপ করে আরসাল
সায়রার ধরে ফেলে ।সায়রার কলিজা কামড় দিয়ে উঠে সে কাদোঁ কাদোঁ ফেস করে সোজা হয়ে বসে ।আরসালের ঠোঁটের কোনায় দুস্টামির হাসি ফুটে উঠে !
সায়রা মনে মনে বলতে লাগে
-“আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো বাচাঁতে পারবেনা কেউ !”

চলবে……..❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊

সামনে স্টোরিতে ‌অনেক টুইস্ট এন্ড টার্ন আসবে সবাই প্রস্তুত হোন ।😴

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here