প্রেমময় প্রহর পর্ব ২২+২৩ শেষ পর্ব

#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :২২

সন্ধ্যায় সবাই উপস্থিত শুধু সায়রা ছাড়া সবার মনে একটাই প্রশ্ন সায়রা হঠাৎ কেন সবাইকে ডাকলো ।এদিকে নিহার মনে খুশির জোয়ার আজ সায়রা এই বাড়ি থেকে চলে যাবে পথের কাটা সরে যাবে তার উদ্দেশ্য সফল হতে আর কোন বাধাঁ থাকবেনা ।
এদিকে আরসাল বেশ চিন্তিত তার মনে কোথাও ভয় কাজ করছে সায়রা কি সিদ্ধান্ত নিতে এখানে সবাইকে ডেকেছে ।
তার থেকে দূরে যাওয়ার কোন সিদ্ধান্ত নিবেনা তো ?
কিন্তু সবাইকে ডেকে সায়রা কোথায় সেই সকালে বের হয়েছে এখনো পৌছায়নি ।
পুরো বাড়ির লোক হল রুমে জড় হয়েছে সায়রার বাড়ির লোক ও সবাই এখানে তাদেরও সায়রা সকালে এখানে আসতে বলেছে ।কিন্তু এখানে আসার পর থেকে তারা এখনো সায়রার দেখা পায়নি বার বার কল করছে কিন্তু বরাবরের মতই ফোন বন্ধ বলছে ।সবাই বেশ চিন্তিত আরসাল ও অফিস থেকে বাড়িতে এসে সায়রাকে দেখেনি প্রথম স্বাভাবীক ভাবে নিলেও এখন বেশ অস্বাভাবীক লাগছে সে বার বার সায়রার ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু প্রত্যেকবারই শুনতে পারছে “সংযোগ দেওয়া সম্ভব না !”
আরসালের মন বলছে সায়রা কোন বিপদে পড়েছে তাই আর দেরী না করে সে সময়ই বের হয়ে যায় বাহিরে গাড়িতে উঠতে যাবে ঠি ক এমন সময়ই আরসালের চোখ যায় গেটের মধ্যে প্রবেশ করা সায়রার দিকে আরসালের চোখ মুহূর্তেই ভয়ে বড় বড় হয়ে যায় ।তারাতারি করে আরসাল সায়রার কাছে চলে যায় ।সায়রার কপালে ব্যন্ডেজ হাতে ব্যন্ডেজ আদিলের গাড়ি থেকে নামসে ।আরসাল সায়রার কাছে যেয়ে আতংকিত স্বরে বলে
-“সায়রা তোমার কি হয়েছে ?এতো যখম কি ভাবে পেলে ?
এসব কি করে হলো !”
আরসাল কাপাঁ কাপাঁ হাতে সায়রার যখম গুলো ছুয়েঁ দিচ্ছে তার চোখ গুলো টলটল করছে ।সায়রা বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে হালকা আওয়াজে বলে
-“আপনি চিন্তা করবেন না !
আমি ঠি ক আছি ভিতরে চলুন ।”
আরসাল সায়রা কে কোলে নিতে চাইলে সায়রা আরসালকে বাধাঁ দেয় কিন্তু আরসাল সায়রার বাধাঁ উপেক্ষা করে সায়রাকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায় ।বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই সায়রার এমন অবস্থা দেখে বেশ ঘাবড়িয়ে যায় ।সবাই সায়রার কাছে ছুটে আসে শুধু নিহা বাদে ।নিহার কাছে বেশ বিরক্ত লাগছে ।
মুনতাহা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জিগাসা করে
-“সায়রা মা কি করে এসব হলো ।”
সায়রা হালকা আওয়াজে বলে
-“মা সব বলছি কে করেছে আর কি করে হয়েছে এসব !”
আরসাল বেশ রেগে বলে
-“সায়রা আমাকে বলো কে করেছে এসব এসবের পিছনে কে রয়েছে আমাকে বলো আমি এখনই তাকে খুন করবো !”
সায়রা নিহার দিকে তাকিয়ে তার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে
-“এসব কিছুর পিছনে এই নিহা রয়েছে ।”
সবাই শুনে বেশ চমকিয়ে যায় ।মুনতাহা বেগম ‌অবাক হয়ে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে
-“নিহা ? কিন্তু নিহা এসব করবে কেন !”
-“কারন আছে মা সব বলছি আজ এখানে সবাইকে ডাকার কারন হলো যা এখান থেকে শুরু হয়েছে তা এখানেই শেষ করা !”

সায়রার মা চিন্তিত হয়ে সায়রাকে বলে
-“তুই কি বলছিস ? শুরু শেষ কিছুই বুজতে পারছিনা !”
-“মা সবটা ক্লিয়ার হবে আমাকে একটু সময় দেও আমি এখনি সবটা ক্লিয়ার করছি !
মা এই কাহিনির শুরুটা হয় তখন যখন আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি হঠাৎই একদিন নিহা আমার কলেজে যেয়ে আমাকে শাষিয়ে আসে আমার গায়েঁ হাত পর্যন্ত তুলে আমাকে যা নয় তা বলে আসে আমাকে পতিতার সাথে তুলনা করতে তার বাজে না তার ভাষ্য মতে আমি নাকি আরসালকে আমার দিকে আকৃষ্ট করছি আমি নিহা আর আরসালের মাঝে এসেছি তার থেকে আরসালকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি ।সেদিন আমার খুব অভিমান হয় খুব রাগ হয় আরসালের উপর রাগ হয় কারনটা ছিলো তার জন্য আমার এইসব শুনতে হয়েছে ।সেদিন থেকে আমি আরসালকে এড়িয়ে চলা শুরু করি ।আমার জীবন থেকে আরসালের নামটা মুছে ফেলতে চেষ্টা করি কিন্তু তা আরসাল বুঝতে পারে সে জোর করেই আমাকে বিয়ে করে আমাদের বিয়েটা কি পরিস্থীতে হয়েছে তা সবাই জানে ।আমি কখনো বিয়েটা মানতে পারিনি কারন ছিলো নিহার অপমান ।তারপর ২ বছর পর সায়রীর বিয়েতে যখন আবার এই বাড়িতে আসি নিহার সাথে আমার দ্বিতীয় বারের মত দেখা হয় ।তারপর এই বাড়িতে আমার নিহার কাছে বার বার অপমান হতে হয় ।আর তার জন্য আরসালের প্রতি আমার রাগ অভিমানটাও বাড়তে লাগে কখনো আরসালকে এসব নিয়ে জিগাসা করা হয়নি না কখনো জিগাসা করার চেষ্টা করেছি কারন বরাবরই নিহার জন্য আরসালের সম্পর্কে খারাপ ধারনা হয় ।কিন্তু সায়রীর হলুদের দিন আমার উপর যখন ঐ জানোয়ার আক্রমন করে আরসাল সেই জানোয়ারকে মারে তার ক্ষোভে মামি আমাকে যাতা বলে অপমান করে যা আমার আত্নসম্মানে লাগে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই ।তার পরই আরসাল আমার বাড়িতে আসে আমাকে ফিরিয়ে নিতে সেদিন নিজের মধ্যে আর সব কষ্ট জমিয়ে রাখতে পারিনা আরসালকে সবটা বলে দেই প্রথম থেকে সবটা কারন আমার সবসময় ধারনা ছিলো সবকিছুর জন্য আরসাল দায়ী আরসালের জন্য আমার এতটা অপমান হতে হচ্ছে সে আমার জীবনে না থাকলে হয়তো এসব হতো না আমার জীবনে এত সমস্যা থাকতো না ।আরসাল সবটা শুনে বেশ রেগে যায় কারন এইসব কিছু তার অজানা ছিলো সে নিজেও কিছু জানতো না সবকিছু নিহা করেছে আর আমিও বোকার মত নিহাকে বিশ্বাস করেছি ও যা বলেছে আর ও যা দেখিয়েছে তাই বিশ্বাস করেছি ।আরসাল সেদিন বাড়িতে এসে নিহা আর মামীকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ।তারপর সব ঠি কই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন আরসাল নিহাকে বাড়িতে নিয়ে আসে সবার সামনে নিহার পেটের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বলে ।

হ্যা সেদিন আমার খুব কষ্ট হয় খুব যন্ত্রনা হয় এইটা নিয়ে না যে আরসাল আমাকে ধোকা দিয়েছে এই জন্য আরসাল নিহাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে নিহাকে বিশ্বাস করছে আমাদের মধ্যে আনছে ।আমি প্রথম থেকেই জানতাম এই বাচ্চা আরসালের না কারন এতটা বছরে তো এইটুকু তো জেনেছি যে আরসাল কেমন ! আর আমার নিজের ভালোবাসার উপর পুরো বিশ্বাস আছে আর যাই হোক না কেন আমার আরসাল আমাকে ঠকাবেনা নিজের জান দিয়ে দিবে তার পরও আমাকে ঠকাবে ।এতটুকু তো তাকে আমি চিনি কতটা আমাকে ভালোবাসে ।
এটা অন্যকারো বাচ্চা আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিলো আরসাল কাউকে বাচাঁনোর চেষ্টা করছে কিন্তু আমি শতচেষ্টা করলেও আরসাল আমাকে বলবে না সে নিজের ওয়াদায় অনেক পাক্কা !
এটা তো সিউর ছিলাম যে এটা আরসালের বাচ্চা না কার বাচ্চা তা বের করাই ছিলো আমার লক্ষ !
এই বাচ্চাটি হলো নি…”
সায়রা আর বলতে পারেনা তার আগেই আরসাল তাকে থামিয়ে দেয় ।আরসাল ভিতু ভিতু কন্ঠে বলে
-“সায়রা এসব কথা ছাড়ো এসব পড়ে শুনা যাবে আমার কথাটা আগে শুনো রুমে চলো রেস্ট নেও !”
পাশ থেকেই সায়ন বলে উঠে
-“ভাই অনেক হয়েছে আর না !
সত্য একদিন সবার সামনে আসবে সে সময়ও পরিস্থীতি একই হবে তবে সব শেষ হবার আগেই সবাই সত্যটা জানুক
আমার ভুলের মসুল কেন তুই দিবি।আমার জন্য কেন সায়রা আর তোর সম্পর্ক নষ্ট হবে !”
সবাই সায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রিদ্ধির বেশ ভয় করছে নিজের বুকে হাত দিয়ে আছে তার চোখ থেকে পানি ঝোড়ছে ।সায়ন মাথা নিচু করে বলে
-“নিহার বাচ্চার বাবা আমি ।”
সবাই সায়নের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায় রিদ্ধি হুহু করে কান্না শুরু করে দেয় ।আরসাল সায়রার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে
-“আজ তোমার জন্য কিছু হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবোনা সায়রা ।”
সায়রা উত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় ।
সায়রা আস্তে আস্তে রিদ্ধির কাছে যেয়ে তার কাধেঁ হাত রেখে সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে
-“ভাইয়া এই বাচ্চা আপনার না ।নিহা আপনাদের ফাসিঁয়েছে এই বাচ্চা অন্যকারো !”
সায়ন বলে
-“এসব কি বলছো সায়রা ?”
সায়রা শান্ত স্বরে বলে
-“হ্যা ভাইয়া এটাই সত্য !”

সায়রা একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে
-“হ্যা ভাইয়া এটাই সত্যি ও আপনাদের বোকা বানিয়েছে সত্যি তো এটাই এই বাচ্চা আপনার না এটা ওর সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডের বাচ্চা !
সেদিন যখন স্টাডি রুমে আপনি আরসাল থেকে ক্ষমা চাইছিলেন তখন আমি সবটা জেনেছি কিন্তু কেন যেন বিশ্বাল হচ্ছিলোনা সবটা তার উপর আমার নিহাকে প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিলো ।তাই আমি সেদিন নিহার রুমের তালাসী করি আর রুম থেকে মেডিকেল নিহার মেডিকেল রিপোর্ট পাই ।আর সেখানে জানতে পারি নিহা আট মাসের প্রেগনেন্ট !
সায়ন ভাইয়ার মতে তিনি সায়রীর হলুদের রাতে নিহার কাছে যায় আর সেই রাতেই তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক হয় !
সায়রীর বিয়ে হয়েছে ৭ মাস হয়েছে তাহলে সে কি করে ৮ মাসে প্রেগনেন্ট হয় ?
আমার সন্দেহ জাগে এই বিষয়টি নিয়ে আমি নিহার ডক্টোরের সাথে দেখা করি কিন্তু উনি কোন মতেই কিছু বলতে রাজি ছিলোনা উনি বাহানা দেয় হসপিটালের রুলসের বাহিরে তাই আমি আদিল ভাইয়ার সাহায্য নেই আদিল ভাইয়া যেহেতু ঐ হসপিটালের ডক্টোর + উনার বাবা ডিরেক্টর হসপিটালের তাই উনি চাপ দিতেই ভয়ে ভয়ে এক এক করে সব বলে দেয় সেই ডক্টোর জানায় নিহা উনাকে বেশ বড় অংকের টাকা দিয়েছে আর বলেছে ব্যপারটা গোপন রাখতে আর তার ডেলিভারীর সময় বলতে যে বাচ্চা প্রেগনেন্সিতে সমস্যার জন্য তারাতারি ডেলিভারী হয়েছে ।ডক্টোরের কাছ থেকে আরো জানতে পারি নিহার সাথে একটা ছেলে আসতো চেকআপের সময় !
তাই হসপিটালের সিসি ক্যামেরার ফোটেজ থেকে ছেলেটির ছবি নেই তারপর আমি আর আদিল ভাইয়া ছেলেটির ছবি নিয়ে তাকে খুজঁতে বেরিয়ে পড়ি ছেলেটি কে শেষ পর্যন্ত বারে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় পাই যখন তাকে ধরতে যাই সে আমার উপর আক্রমন করে আমার মাথায় লাঠি দিয়ে বারি দেয় আমি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি তাকে আটকানোর কিন্তু সে আমার উপর আবার আঘাত করে পালিয়ে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই সেখানে আদিল ভাইয়া আর তার বন্ধুরা পৌছিয়ে যায় আর তাকে ধরে ফেলে !”
সায়ন রেগে প্রশ্ন করে
-“ঐ ছেলে কোথায় “
সায়রা আদিলকে ইশারা করতেই আদিল তার বন্ধুকে ফোন করে আর সাথে সাথে ছেলেটিকে আদিলের বন্ধুরা মারতে মারতে ভিতরে নিয়ে আসে ।
আদিল ছেলেটির মুখে চাপ দিয়ে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে
-“এবার সত্যিটা বল তুই আর তোর থার্ড ক্লাস গার্লফ্রেন্ড কি কি করেছিস !”

ছেলেটির শরীর রক্তাক্ত বুঝাই যাচ্ছে ছেলেটিকে বেশ উত্তম মাধ্যম দেওয়া হয়েছে এখানে আনার আগে ।
অন্যদিকে নিহা ভয়ে কাপছেঁ পালানোর ফাদঁ খুজছে পালাতে যাবে তার আগেই সায়রী আটকিয়ে ফেলে হাতে মোচড় দিয়ে ধরে বলে
-“আরে আরে কোথায় পালাবে !
সবটা শেষ তো হতে দেও তারপর তোমার ব্যবস্থা করছি ।”
অন্যদিকে ছেলেটি কাপতেঁ কাপতেঁ বলতে লাগে
-“আমার কোন দোষ নেই এসবের পিছনে নিহার হাত রয়েছে ।
সায়নের কোন দোষ ছিলোনা যা হয়েছে সব কিছু নিহা করেছে ।আমি মানিক নিহার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকদিন এর আমার নিহার শরীর দরকার ছিলো আর অন্যদিকে নিহার আমার টাকার দরকার ছিলো দুজন মধ্যে ডিলটা এমনই হয়েছিলো ।আমি নিহার ব্যপারে সবটা জানতাম সায়ন নিহাকে পছন্দ করে এই ব্যপারটাও সেদিন হলুদের রাতে সায়নকে বারে দেখে নিহাকে ফোন দেই নিহাকে জানাই সায়নের কথা সে সময় সায়ন নেশা পুরো ডুবে আছে ।নিহা আমাকে সায়নকে ড্রাক্স দিতে বলে যা মানুষের মাইন্ড কন্ট্রোল করতে পারে আমি ড্রিংক্সের সাথে তা মিশিয়ে দেই আর সায়নের উপর ড্রাক্স কাজ করা শুরু করতেই আমি নিজ ইশারায় তাকে চালাই সে নিহার কাছে আমার কথায়ই ফোন করে আর আমার কথাই নিহার বাড়িতে যায় ।কিন্তু সেদিন রাতে সে নিহার বাড়িতে যেতেই জ্ঞান হারায় নিহার আর তার মধ্যে কিছু হয়না ।আমি তার শরীরের জামা কাপড় এলোমেলো করি নিহা সায়নের কাছ থেকে বেশ কিছু ছবি তুলে যা দেখে মনে হয় তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে আর পরেরদিন সকালে সায়ন নিহাকে নিজের এতটা কাছে দেখে ভয় পেয়ে যায় কারন গত রাতে তার সাথে কি হয়েছিলো কিছুই মনে নেই আর এদিকে নিহা সায়ন কে জানায় সায়ন নিজের থেকে তার কাছে এসেছে সায়ন নিজের কল লিস্ট ঘেটে দেখে এটাই সত্য নিজে থেকে সে ফোন করেছে ।সায়ন নিহাকে বেশ কয়েকটা থাপ্পর মেরে সেখান থেকে চলে যায় আর এদিকে নিহা এই ছবি গুলো নিয়ে সায়নকে ব্লাকমেইল করতে শুরু করে যে সে সব রিদ্ধিকে এই ছবি গুলো সেন্ড করবে !
আর সায়ন ভয় পেয়ে যায় তার কথা মত চলতে থাকে নিহা সায়নকে ব্লাকমেইল করে তার থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে যার ভাগিদার আমিও ছিলাম ।হঠাৎ একদিন জানতে পারি নিহা প্রেগনেন্ট আর এই বাচ্চা আমার তার পর নিহা প্লান করে এই বাচ্চা সায়নের ঘাড়ে দিয়ে ঐ বাড়িতে ডুকবে আর তাই করে সায়ন কে বললে অসৃকার করে সে তারপর রিদ্ধির ডেলিভারীর সময় হসপিটালে আরসালকে সবটা বলে আর ছবি দেখায় নিহা আর সায়নের আরসাল সবটা বিশ্বাস করে নেই রিদ্ধি আর তার বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে নিহার বাচ্চাকে নিজের নাম দেয় আর নিহাকে বাড়িতে নিয়ে আসে যা সে সবসময় চেয়েছে !
আমি যা করেছি টাকার জন্য করেছি আমার নিহা আর ওর বাচ্চার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই সবটা টাকার জন্য করেছি নিহা বলেছে এই বাড়ির বউ হতে পারলে অনেক টাকা আমাকে দিবে !
নিহার সবসময় আরসালের জন্য এসব করেছে আরসালকে পাওয়াই তার উদ্দেশ্য ছিলো তার জন্য এত কিছু করেছে এই বাড়ির বড় বউ হয়ে সব সম্পত্তি আর আরসালকে নিজের করতে চেয়েছে ।
আমাকে ছেড়ে দেও আমার কোন দোষ নেই !”
মানিক আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরসাল দৌড় দিয়ে এসে মানিকের পেটের মধ্যে লাথ্থি দেয় সাথে সাথে সে নিচে পড়ে যায় ।আরসাল তার নাকে মুখে ইচ্ছে মত লাথ্থি দিতে লাগে মানিকে নাক মুখ থেকে রক্ত ঝোড়ছে ।আরসাল তার পরও থামছেনা আজ যেন তাকে খুন করে ফেলবে আদিল আর তার বন্ধুরা আরসালকে আটকায় ।
আরসাল রেগে চিৎকার করে বলতে শুরু করে
-“এই কু* জানোয়ারের সাহস হয় কি করে আমার সায়রার গায়ে হাত তুলার আমার সায়রাকে স্পর্শ করার “
বলেই আবার এলো মেলো ভাবে লাথ্থি দিতে শুরু করে নিহা দৌড় দিতে নিলে আরসাল তার কাছে যেয়ে তার গলা চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে নিহা ছাড়া পাবার চেষ্টা করছে আরসালের চোখ রক্ত চক্ষু হয়ে আছে ।আজ ভয়ংকর ভাবে সে রেগে তার খুন করতেও হাত কাপঁবেনা

আরসাল রেগে বলতে শুরু করে
-“তোকে সেদিনই বলেছিলাম আমার আর সায়রার মধ্যে না আসতে এর ফল ভালো হবেনা কিন্তু তুই শুনিসনী আমার আর সায়রার মধ্যে আবার আসার চেষ্টা করেছিস তোর জন্য আমার সায়রা আমার থেকে দূরে সরে গেছে আমার সায়রাকে কষ্ট দিয়েছি ।
তোর তো এর ফল পেতে হবে তাই না ?
আজ তোকে খুনই করে ফেলবো !”
বলেই পাশ থেকে ফুলদানি নিয়ে নিহার উপর আঘাত করতে নেয় তার আগেই সায়রা এসে আরসালের হাত আটকিয়ে ফেলে বলতে লাগে
-“আরসাল ওকে ছেড়ে দিন ও প্রেগনেন্ট !
আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না ওর যা শাস্তি পাবে পুলিশ ওকে দিবে !”
আরসাল সায়রার দিকে তাকিয়ে রেগে গর্জন করে বলে
-“সায়রা তোমার কোন কথাই আজ আমার হাত থেকে এই রাস্তার মেয়েকে রক্ষা করতে পারবেনা !
আমি আজ ওকে খুনই করে ফেলবো ও আবার আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টা করেছে ।
তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে !
ওকে আজ শেষ করলেই সব ঝামেলার শেষ হবে ।”
আরসাল আবার বারি দিতে নেয় সেই সময়ই সায়রা চিৎকার দিয়ে বলে
-“আরসাল আমি চাইনা আমার সন্তানকে খুনির সন্তান নামে সবাই জানুক !
সায়রার কথাটা আরসালের কানে আসতেই আরসালের হাতে থেকে ফুলদানীটা পড়ে যায় ।অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সে সায়রার দিকে সায়রা আবার বলতে শুরু করে
-“আরসাল ও প্রেগনেন্ট আজ আপনি তাকে খুন করলে তার সাথে তার গর্ভের নিস্পাপ বাচ্চাটাও মারা যাবে কোন নির্দোষ কে কেন খুন করবেন ?
এই বাচ্চার কি দোষ এখানে !
আজ এই বাচ্চাটাকে খুন করবেন কাল যদি আমার গর্ভে আপনার সন্তানের কিছু হয় পারবেন তা সয্য করতে ?
আরসাল ওকে ছেড়ে দিন ও মারা যাবে !”
আরসাল সাথে সাথে নিহাকে ছেড়ে দেয় সায়রার কাছে যেয়ে কাপাঁ কাপাঁ হাতে সায়রার গালে হাত রেখে ছল ছল চোখে তাকিয়ে সায়রাকে বলে
-“সায়রা তু…তুমি প্রেগনেন্ট ?
আ..আমি বাবা হতে যাচ্ছি !
তুমি যা বললে এটা সত্যি !”
সায়রা ঠোঁট দিয়ে নিজের কান্না চেপে ধরে মাথা হ্যা বোধক নাড়ায় ।মুহূর্তেই আরসালের চোখ থেকে খুশির পানি ঝোড়তে লাগে সে সবার সামনেই পাগলের মত সায়রার হাতে কপালে চুমু দিতে লাগে সায়রাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় ।আজ যেন তার খুশির সিমানা নেই জীবনের সবচেয়ে খুশি সংবাদ পেয়েছে সে ইচ্ছে করছে সায়রাকে মন ভরে ভালোবাসতে দুনিয়ার সব খুশি সব সুখ তার পায়ে এনে দিতে !
পুলিশ এসে নিহা আর মানিক কে নিয়ে যায় ।
সায়রার একটা খবর পুরো বাড়িতে খুশির আমেজ ছড়িয়ে দেয় মুহূর্তেই দুঃখের কালো ধোঁয়া হওয়ায় মিলিয়ে যায় ।মুনতাহা বেগম মিষ্টি বিলি করতে শুরু করে সবাইকে ফোন করে খবর দিচ্ছে আরসাল ছলছল চোখে তার সায়রাকে দেখছে তার চোখের জলটা খুশির বাবা হওয়ার খুশির জল !

রাতে আরসাল রুমে আসতেই দেখে সায়রার রুমে নেই পুরো রুম খালি না আছে সায়রার কোন জিনিসপত্র আরসাল পাগল পাগল হয়ে পুরো বাড়ি সায়রাকে খুজেঁ কিন্তু কেথাও সায়রা নেই ।আরসালের বুকে মুহূর্তেই ভয় চেপে বসে ।সে পাগলের মত বিলাপ করছে একা একাই ছুটাছুটি করছে সায়রাকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে মনে মনে একই কথা বলে যাচ্ছে “তবে কি তার রূপমোহিনী তাকে ছেড়ে চলে গেছে ?”
এসব বিলাপ করতে করতে আরসাল নিজের মায়ের কাছে যায় ।মুনতাহা বেগম কে সায়রার কথা জিগাসা করতেই তিনি উত্তরে বলে
-“সায়রা তার বাবার বাড়ি চলে গেছে আর এই বাড়িতে ফিরবেনা ।
আমি চাইনা তোমার জন্য মেয়েটা আর কোন কষ্ট বা আঘাত পাক ।
ও তোমার সাথে থাকতে চায়না আলাদা হতে চায় !”
একথা গুলে মুহূর্তেই আরসালের মেজাজ গরম করে দিলো তার মধ্যে অস্বভাবীকতা স্পষ্ট ফুটে উঠে সে রেগে বলে তার মায়ের সামনে বলতে লাগে
-“ছেড়ে চলে গেছে মানে কি ?
সায়রা আমার বউ আমার জান ওকে ছাড়া আমি কি করে বাচঁবো ওর গর্ভে আমাদের সম্তান ছোট প্রান বাস করছে ও চাইলেই আমি ওকে যেতে দিবো !
আমার ভালোবাসা আমার পাগলামো আমার নেশা ও !
এতটা বছর ধরে আমি ওকে ভালোবেসে এসেছি আমার বউ ও আর ও চাইলেই কি আমি ওকে দূরে যেতে দিবো ।
আমি বেচেঁ থাকতে তা সম্ভব না আমি এখনি ওকে নিয়ে আসবো !”
বলেই হনহন করে বেরিয়ে যায় ।মুনতাহা বেগম ছেলের চোখে আজ সেই আগের মত সায়রার জন্য ভালোবাসা পাগলামো দেখেছে ।
ছেলের যাওয়ার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে !
হালকা আওয়াজে বলে
-“আমিও চাই আমার ঘরের লক্ষি ঘরে ফিরে আসুক !”#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :২৩ (শেষ)

বাহিরের ঝড়ো হওয়ায় রুমের সাদা পর্দা গুলো উড়ছে ‌অন্ধকার রুম খোলা কেশে দাড়িয়ে আছে রিদ্ধি !
জীবনের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে কি পেলো আর কি হারালো ।সবকিছু তো ঠি ক হলো শুধু মাঝে দিয়ে তার আর সায়নের সম্পর্কটায় দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ।ভালোবাসায় অনেক পরিক্ষার সম্মখীন হয়েছে দুজন কিন্তু অবশেষে সব আবার আগের মত হয়েছে ।নিহা নামের কালো ছায়া তাদের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে সে তার সায়ন কে আবার সেই আগের মত পেয়েছে ।কতটাই না ভুল বুঝেছে সায়নকে কতটাই না কষ্ট দিয়েছে সে ।নিজের থেকে নিজের বাচ্চাদের থেকে দূরে রেখেছে এমন কি তাকে তিলে তিলে মরতে ছেড়ে দিয়েছিলো অথচ যেখানে তার কোন দোষই ছিলোনা সবটা ছিলো নেহার চাল ।
আজ অনেক দিন পর মুক্ত ভাবে শ্বাস নিতে পারছে সে এতটাদিন মনে হচ্ছিলো কোন এক অদৃশ্য কারাগারে বন্ধি যেখানে শ্বাস নেওয়াটা ও কষ্টের হচ্ছিলো !
কিন্তু এখন সব কিছু মুক্ত না আছে কোন কোন ভুল বোঝাবুঝি আর না কেউ তাদের মাঝে আছে কিন্তু তারপর ও কেন যেন আজ কেমন জড়তা কাজ করছে কি করে সায়ন থেকে ক্ষমা চাইবে কি করে তার সামনে দাড়াবে এমন হাজারো প্রশ্ন মনে জাগছে ।
এসব ভাবছে হঠাৎই কারো স্পর্শে তার ধ্যান ভাঙ্গে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে ।রিদ্ধি সায়নের দিকে তাকাতে পাড়ছে না একটা লজ্জাবোধ তার মধ্যে কাজ করছে বিনা দোষে সায়ন কে এতটা কষ্ট দিয়েছে এখন কি করে তার চোখে চোখ মিলাবে !
কি করে তার এই চোখে তাকাবে ?
অনেকটা অপরাধবোধ কাজ করছে তার মধ্যে ।

সায়ন হালকা আওয়াজে বলে
-“এখনো কি আমাকে ক্ষমা করতে পারোনি ।
আমি যে তিলে তিলে শেষ হচ্ছি !”
কথাটা শুনে রিদ্ধি আরো বেশি লজ্জায় পড়ে রিদ্ধি নিজের চোখ নামিয়ে বিচলীত কন্ঠে বলে
-“সায়ন এসব বলে আমাকে আর লজ্জা দিবেন না আমি না জেনে কোন খোজঁ না নিয়ে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি আপনাকে যাতা বলেছি আমার থেকে বাচ্চাদের থেকে আপনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি আপনাকে এতটা মাস প্রত্যেকটা মুহূর্ত অপমান করেছি !
কতটা কষ্ট দিয়েছি আপনাকে তার জন্য যদি সারাজীবন ক্ষমা চাই তাও কম হবে ।
আমি আপনার অনেক বড় অপরাধী !”
সায়ন রিদ্ধি কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ বলে
-“আমি যা কষ্ট পেয়েছি তা আমার প্রাপ্য ছিলো এর চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট আমি তোমাকে দিয়েছি কর্মের ফল সবাইকে পেতে হয় এসব আমার কর্মের ফল ছিলো !
বার বার ক্ষমা চেয়ে আমাকে আর ছোট করোনা ।
অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে ।তুমি কখনোই আমার মৌহ ছিলেনা সবসময় আমার ভালোবাসা ছিলে আমার লাইফে সবকিছু থেকে তোমার মূল্য বেশি !
অনেক বেশি ভালোবাসি ।”
-“আমিও যে অনেক বেশি ভালোবাসি !”

কিছুসময় পূর্বে ভোরের আলো ফুটেছে সূর্যের স্নিগ্ধ শীতল পরশে চারদিক আলোকিত হয়ে আছে ।প্রচন্ড ঝড়ের পর প্রকৃতি একদম শান্ত হয়ে আছে জানালার গ্রিল বেয়ে এখনো টপটপ পানি চুয়ে চুয়ে পড়ছে বারান্ধাটাও বৃষ্টির পানিতে ভিজে আছে ।ভোরের স্নিগ্ধ আলো সায়রার মুখের উপর পড়তেই সায়রা ছোট ছোট চোখ করে তাকায় ।চোখ খুলে চারদিকে তাকাতেই রুমটা তার খুব বেশি অচেনা লাগছে ।বিছানা থেকে উঠতে নিলে বুকে বেশ ভারি কিছু অনুভব করে চোখ ঘুরাতেই দেখে কেউ তার গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে আছে সায়রার আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে !
কিন্তু তার কাছে বেশ অবাক লাগছে সায়রা তো তার বাড়িতে ছিলো তাহলে এখানে আসলো কি করে ? আর আরসাল কোথায় থেকে আসলো ? আর এই জায়গাটাই কোথায় ?
সায়রা ঘুম থেকে উঠে এত বড় একটা শক পাবে সে কল্পনা করেনি ।তার সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।তাই চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আরসালকে ডাকতে শুরু করে আরসাল বেশ বিরক্তের ভঙ্গিতে বলে
-“উহু জান আমাকে ঘুমাতে দেও !”
সায়রা আরসালের কথা কানে না নিয়ে আবার ডাকা শুরু করে ।এবার আরসাল পুরোপুরি চোখ খুলে মাথা উচুঁ করে সায়রার দিকে তাকায় ।সায়রার দিকে তাকাতেই দেখে সায়রা পুরো রেগে আগুন হয়ে আছে ।সায়রা রাগি কন্ঠে বলে
-“আমি এখানে কি করে ?
আর আপনি আমার সাথে কি করে !”
-“তো আমার তো তোমার সাথেই থাকার কথা ছিলো তাই না ?”
-“না আরসাল আমার আপনার সাথে থাকার কথা ছিলোনা !
আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা ।”
কথাটা শুনে আরসালের রাগ হলেও তা প্রকাশ করে না কারন পুরো দোষটা তার সায়রার এমন ব্যবহার স্বাভাবীক ।আরসালে শান্ত কন্ঠের উত্তর
-“সায়রা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে তাই বলে কি সম্পর্ক ভাঙ্গতে হবে ।”
সায়রা এবার প্রচন্ড রেগে যায় ।রেগে বলতে শুরু করে
-“এটা কোন ছোট ঝামেলা ছিলোনা আপনি একটা প্রেগনেন্ট মেয়েকে আমার সামনে এনে বলেছেন যে তার গর্ভের সন্তান আপনার যদিও পুরোটা মিথ্যা ছিলো কিন্তু কাল যদি সত্যি সত্যি কাউকে নিয়ে এসে আমার জায়গা দেন তখন ?
তখন আমার কি হবে আমার বাচ্চার কি হবে ?
আপনি ঐ মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছেন কাল অন্য কারো জন্য মেরেও ফেলতে পারেন ।”
সায়রা কথা শেষ করতেই আরসাল তাকে টান দিয়ে বেডে চেপে ধরে দাতেঁ দাতঁ চেপে রেগে বলতে শুরু করে
-“এই মেয়ে অনেক বলেছো আর আমি অনেক শুনেছি আমি অপরাধী আমি মানছি আর সবটার পিছনের সত্যিটা তুমি জানো !
আমার কোন শখ ছিলোনা নিজের ভালোবাসাকে নিজের থেকে দূর করার শুধু নিশ্বপাপ বাচ্চা দুটোর কথা চিন্তা করে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এসব করেছি ।
তুমি আমার কাছে কতটা মূল্যবান তা তুমি জানো এতটা বছর ধরে কতটা ভালোবেসে এসেছি তা তুমি জানো সবাই জানে আমি তোমার দিওয়ানা তোমার জন্য জান দিতেও পারি জান নিতেও পারি !
মনে রেখ আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে আমার কাছে আবদ্ধ রাখবো এর জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তা করবো হ্যা ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি !
আমি নিজের ফিলিংক্সগুলো অন্যসবার মত প্রকাশ করতে পারিনা তাই বলে এই না যে আমার কোন ফিলিংক্স নেই ।
আমার পুরো দুনিয়া তুমি আমার সবটা জুড়ে শুধু তুমি !
“#আমার আমিতে শুধুই যে তুমি “তোমার স্থান না কারো ছিলো না আছে না কোন দিন থাকবে ।
আর রইলো গায়ে হাত তোলার কথা ? ঐটা রাগের মাথায় অজান্তে হয়ে গেছে ।তোমার কি মনে হয় তোমার গায়েঁ হাত তুলে আমি শান্তিতে ছিলাম ! আমি প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পুড়ছিলাম নিজেকে যেই পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারিনি শান্ত হতে পারছিলাম না তাই এর জন্য নিজেকে শাস্তি দিয়েছি !”
কথাটা শেষ করেই নিজের শার্টের বোতাম খুলে শার্ট টা দূরে ছুঁড়ে মারে ।সায়রা আরসালের পিঠ দেখে আতকিয়ে উঠে সাথে সাথে চোখে জলরাশির ভিড় জমে টপটপ করে পানি পড়ছে ।আরসালের পুরো পিঠে চাবুকের ঘায়ের দাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ডেবে গেছে সায়রা কার কাঁপাকাঁপা হাত আরসালের পিছে ছোঁয়ায় ।কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে কান্না করতে করতে বলে
-“আপনি কি পাগল এসব কি করেছেন আপনি কতটা লেগেছে !
এসব কেমন পাগলামি নিজেকে কেউ এমন ভাবে আঘাত করে ।”
আরসাল নিজের জিদ চেপে ধরে বলে
-“তোমাকে যে কষ্ট দিবে তাকে শাস্তি পেতে হবে যদি তা আমি হই আমাকেও পেতে হবে !”
কথা শেষ করতেই সায়রার পায়ের কাছে বসে তার হাত চেপে ধরে তার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয় আতংক পাগলামোর ছাপ রয়েছে ।সায়রা তা দেখে বেশ অবাক ।আরসাল সায়রার হাতে অস্বাভাবীক ভাবে চুমু দিয়ে যাচ্ছে তারপর বলতে লাগে
-“জান প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা আমি তোমাকে আর বেবীকে ছাড়া বাচঁতে পারবোনা ।তুমি যা চাইবে যা বলবে যেমটা বলবে সব ঐভাবে হবে কিন্তু তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।তোমাদের পায়ের তলিতে সব সুখ এনে দিবো তুমি যা বলবে তাই হবে শুধু তুমি আমার কাছে থাকো “
সায়রা বেশ কিছু সময় আরসালের চেহারায় তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে এই পাগলকে নিয়ে সে কি করবে ?
এই তার কেমন পাগলামো ভালোবাসা যার জন্য মরতে মারতেও প্রস্তুত !
এই পাগলটাকে ছেড়ে সে কোথায় যাবে এই পাগলটাকেই যে সে বড্ড বেশি ভালোবাসে ।
সায়রা ঠিকঠাক হয়ে গম্ভীর মুখ করে বসে বলে
-“আমি আপনার কাছে থাকবো কিন্তু আমাক শর্ত আছে ।”
-“তোমার সব শর্ততে রাজি শুধু তুমি আমার কাছে থাকে ।”
-“আগে শর্তটা তো শুনুন !”
-“বলো কি ?”
-“আপনাকে এই মারামারি পাগলামো নিজেকে আঘাত দেওয়া ছাড়তে হবে ! আররর”
-“পারবো কিন্তু তোমার আর আমার সন্তানের প্রতি কেউ চোখ দিলে ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমি তাকে খুন করে ফেলবো !
তার পরের শর্ত বলো “
-“আমাকে আর আমাদের বেবীকে অনেক অনেক ভালোবাসতে হবে।কখনো আমাদের ছেড়ে যাওয়া যাবে না !”
-“তোমাদের ছেড়ে বেচেঁ থাকা অসম্ভব ।
আর ভালোবাসা ?
তা তো নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি নিজের সবটা দিয়ে তোমাদের আগলে রাখবো !”
সায়রা আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে আরসালের বুকের সাথে মিশে যায় আরসালও তাকে বেশ শক্ত করে জরিয়ে ধরে ।এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে যায় ।হঠাৎ সায়রা আরসালের বুকে মাথা রেখে জিগাসা করে
-“আচ্ছা আমি এখানে কি করে আসলাম ?”
আরসাল বাকাঁ হেসে উত্তর দেয়
-“বাড়ি থেকে ঘুমের ঘোরে তুলে নিয়ে এসেছি !”
সায়রা বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলে
-“সিরিয়াসলি ? মানে আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন ?
-“এটা কে কিডন্যাপ বলেনা অকে নিজের অধিকার খাটানো বলে আমি তো স্বামীর অধিকারে তুলে এনেছি ।”
সায়রা হেসে উত্তর দেয়
-“আপনি সত্যি পাগল !”
-“উহু !
দিওয়ানা তোমার দিওয়ানা আমার রূপ মোহিনীর দিওয়ানা ।
সায়রা আবার বুকে মুখ লুকায় আরসাল সায়রাকে নিজের বাহুডোরে বেশ শক্ত করে জরিয়ে ধরে সারাজীবন আগলে রাখার জন্য !

২ মাস পর আজ মুন আর নিহালের বিয়ে পুরো পরিবার এখানে ।আজ দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হবে তাদের একে অপরের হয়ে যাবে নিজেদের ভালোবাসা পূর্ন করবে ।

সায়রার পেট ফুলেছে আরসাল এক সেকন্ডের জন্যও নিজের চোখের আড়াল করেনা সায়রাকে সে পুরোটা সময় সায়রার সাথে থাকে ।সারাদিন বাচ্চাদের মত কিছুনা কিছু খাওয়াতে থাকে সায়রা না করলে তার উপর নিজের অধিকারের জোর খাটায় সায়রা আরসালের সাথে না পেরে নাক ফুলিয়ে তা খেতে লাগে ।তার জীবন যে আরসালময় হয়ে গেছে !

রিদ্ধি সায়নের সংসার বেশ ভালো কাটছে তাদের জীবনে খুশি জোয়াড় দুজনার মধ্যে কোন দূরত্ব কোন সংশয় নেই আছে শুধু ভালেবাসা ।

৩ বছর পর …

সময় পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর ভালোবাসা সেই আগের মতই রয়ে গেছে ।আজ সায়রা আর আরসালের মেয়ে সারা আড়াই বছরের হয়েছে দেখতে খুব মিষ্টি একদম মায়ের মত সারা ছোট ছোট পায়ে পুরো বাড়ি হেটেঁ বেড়াচ্ছে এদিকে আরসাল মেয়েকে খুজেঁ পাগল প্রায় সারা বাবার থেকে লুকানোর জন্য পর্দার আড়ালে চলে যায় ।
বাড়িতে আসার পর তার সায়রা আর সারাকে নিজের চোখে সামনে চাই ।খুজঁতে খুজঁতে আরসাল রুমে আসতেই দেখে পর্দার পিছনে ছোট ছোট এক জোড়া পা আরসাল আলতো পায়ে ঐদিকে এগিয়ে যায় তার খপ করে সারাকে কলে তুলে নেয় সারা বাবার সাথে খিল খিল করে হাসতে লাগে ।সায়রা কফির মগ নিয়ে রুমে আসতেই বাবা মেয়ের হাসির শব্দ পায় ।সায়রা মুচকি হেসে বলে
-“আমাকে ছেড়ে কি নিয়ে এত হাসাহাসি হচ্ছে শুনি !
সারা মুখে হাত রেখে হাসতে হাসতে বলে
-“তোমাকে বলা যাবেনা মাম্মাম
আমাদের গোপন কথা চলছে !”
সায়রা মুখ বাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলে
-“তুমি শুধু বাবাইকে ভালোবাসোআমাকে একটুও ভালোবাসোনা !”
সায়রা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিতেই আরসাল আর সারা তার সামনে চলে যায় আরসাল আর সারা সায়রার কপালে ঠোঁট ছুয়িঁয়ে একসাথে বলে
-“উই লাভ ইউ সোওওও মাচ !”
সায়রা আরসাল আর সারাকে জরিয়ে ধরে
-“লাভ ইউ টু”

এভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রেমময় প্রহর !

পূর্নতা পাক সকল পবিত্র ভালোবাসা গুলো !❤️

সমাপ্ত❤️

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here