প্রেমময় প্রহর পর্ব ১৭

#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :১৭

(আমি জানি এই পার্ট টা ছোট হয়েছে ছোট বলে লজ্জা দিবেন না আমি একটু চাপে আছি তাই লেট হয়েছে 🙃)

সময় বহমান নদীর মত নিজ গতীতে ছুটতে থাকে এর গতিকে কখনো কারো সাদ্য থাকেনা আটকানোর ।প্রত্যেকেক জীবনে সুখ আর দুঃখ বিদ্যমান !
কখনো সুখ আবার কখন দুঃখ এই নিয়েই জীবন !

রিদ্ধির প্রেগনেন্সির ৮ মাস চলছে এই সময়টা প্রতিটা প্রেগনেন্ট মহিলার জন্য রিক্স এই সময়টাতে খুব সাবধানে
আর যত্নে থাকতে হয় হাসি-খুশি থাকতে হয় ।কিন্তু রিদ্ধির ক্ষেত্রে পুরোই ব্যতিক্রম যার অন্তরেই শান্তি নেই তার বাহিরের চাকচিক্কের কি মূল্যে ?
সায়ন আজও নিজের কর্মের ফল ভোগ করছে ।রিদ্ধির ইগনোরেন্স তার ভিতর জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করে দিচ্ছে ।তার বার বার নিজের অপরাধের কথা মনে করিয়ে দেয় ।
সে চায় সব কিছু ভুলে রিদ্ধি আদিকে নিয়ে শান্তিতে নিজের জীবন কাটাতে কিন্তু অতীত বার বার তার সামনে চলে আসে ।তার পিছন ছাড়তে চায়না !
অন্যদিকে রিদ্ধি নিজে চাওয়ার পরও কিছুই ভুলতে পারছে না সায়নের দেওয়া ধোকা বার বার মনে পড়ে যায় ।মানুষ সব কিছু সয্য করতে পারে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে কোন ধরনের আঘাত তারা সয্য করতে পারেনা !
রিদ্ধির সাথেও তাই হচ্ছে নিজের যন্ত্রনা গুলো না কাউকে বলতে পারে না নিজে সয্য করতে পারে সায়নের তার আসে পাশেও থাকলে তার কাছে বিষের মত মনে হয় তার প্রত্যেকটা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যায় ।
তাই সায়ন ও রিদ্ধি থেকে দূরত্ব বজায় রাখে রিদ্ধিকে কিছুটা স্পেস দেয় কারন সে চায় না তার আর কোন ভুলের জন্য রিদ্ধির কোন ক্ষতি হোক !
তার প্রত্যেকটা নিশ্বাস এখনো তার ভুলের কথা মনে করিয়ে দেয় সেই রাতের নেশার ঘোরে করা ভুলের কথা মনে করিয়ে দেয় ।এখন তার নিজের জীবনকে ব্যর্থ মনে হয় শ্বাস নেওয়াটাও দায় হয়ে যাচ্ছে ।

আরসাল আদো আদো চোখে ঘুম নিয়ে পাশে হাত রাখতেই টের পায় সায়রা বিছানায় নেই ।আরসাল হুট করে চোখ খুলে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে মাত্র সকাল ৭:৩০ টা বাজে এত সকালে তো সয়রা ঘুম থেকে উঠেনা তাহলে আজ এত সকালে কোথায় চলে গেল ?
আরসাল আসে পাশে খুজঁতে শুরু করে দেয় ওয়াশরুমের কাছে যেতেই ভিতর থেকে বমির শব্দ আসতে লাগে ।
আরসাল দরজায় দু-তিনবার নক করে কিন্তু ভিতর থেকে কোন উত্তর আসেনা !
এবার আরসাল বেশ চিন্তায় পড়ে যায় সে চিন্তিত হয়ে জোরে জোরে নক করতে করতে বলে
-“তুমি ঠি ক আছো তো ?”
ভিতর থেকে সায়রার হালকা আওয়াজ
-“হুম ঠি ক আছি ।”
কিন্তু সায়রার এই উত্তর যেন আরসাল শুনে সন্তুষ্ট হয়নি তার মধ্যে আগের মতই অস্থিরতা কাজ করছে সায়রা কে সরাসরি না দেখা পর্যন্ত তার শান্তি নেই ।
কিছুসময় পরই সায়রা দরজা খুলে আরসাল দেখে তার চোখে মুখে বেশ ক্লান্তির ছাপ বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আরসাল সায়রাকে ধরে বেডে বসিয়ে এক গ্লাস পানি সায়রার মুখের সামনে ধরে সায়রা আস্তে আস্তে পানিটা শেষ করে ।আরসাল গ্লাসটা রেখে সায়রার পাশে বসে তার হাত জোড়া নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয় ।
অন্যহাতে সায়রার গালে স্পর্শ করে বলে
-“তুমি ঠি ক আছো তো !
তুমি অসুস্থ আর আমাকে কেন ডাকনি ?
আমি এখনি ডক্টোরকে ফোন করছি !”
আরসাল বেড থেকে উঠে যেতে নিলে সায়রা পিছন থেকে আরসালের হাত আটকায় হালকা আওয়াজে বলে
-“আরসাল আপনি শুধু এতটা চিন্তা করছেন !
আমি ঠি ক আছি তো ।
গ্যাসের সমস্যার জন্য এমন হচ্ছে বাসায় মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে”
আরসাল পিছনে ফিরে শক্ত গলায় বলে
-“সায়রা আমি এসব ব্যপার নিয়ে হ্যালামি একদম পছন্দ করিনা !
কিছুসময়ের মধ্যেই ডক্টোর আসবে ।”
সায়রা আগের মতই হাত ধরে করুন কন্ঠে বলতে লাগে
-“প্লিজ আরসাল বোঝার চেষ্টা করুন এখন সকাল সকাল বাড়িতে ডক্টোর আসলে বাড়ির সবাই চিন্তা করবে শুধু শুধু ঝামেলার কি দরকার বলুন ?
আমি মেডিসিন নিলেই সুস্থ হয়ে যাবো ।”
আরসাল কিছুসময় চিন্তা করে করে বলে
-“আর ইউ সিওর?”
সায়রা পলক ফেলে মুখে হাসির রেখা টেনে হ্যা বোধক সংকেত দেয় ।আরসাল সায়রার পাশে বসে ঠি কই কিন্তু তার কপাল কুঁচকানো ।সায়রা আরসালের দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারছে সে এখনো চিন্তিত তাই সায়রা আরসালের চিন্তা দূর করতে তার পাশ ঘেষে বসে কাধেঁ মাথা হেলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে বলে
-“আমার মাথায় একটু হাত ভুলিয়ে দিবেন !
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ।”
কথাটা শুনতেই আরসাল আর এক সেকেন্ড ও দেরী করে সাথে সাথে সায়রাকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে সায়রাকে নিজের বুকে টেনে নেয় আলতো হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে সায়রা আবেশে চোখ বুঝে নেয় আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে লাগে ।

মুন অটো থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে নিবে এমন সময় দেখে ভার্সিটির সামনে নিহাল দাড়ানো ।তাকে দেখে মুন কিছুটা ঘাবড়িয়ে যায় বড় ঢোক গিলে ।নিহালে চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে যার কারন মুনের অজানা নয় !
সে অনেকটা সাহস নিয়ে ভিতরের দিকে পা বাড়াতে নেয় নিহাল মুনের হাত ধরে আটকিয়ে দেয় ।
মুন সামনে তাকিয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে
-“ছাড়ুন আসে পাশে সবাই দেখছে । “
নিহাল যেন কথা গুলো কানেই নিচ্ছেনা সে গেটের থেকে টানতে টানতে মুনকে গাড়িতে নিয়ে বসায় ।মুন অসহায় ভাবে সবটা দেখছে সে কিছুই করতে পারছেনা একজন পুরুষ মানুষের শক্তির সাথে আর কতটুকুই বা পাড়বে সে ?
সে নিরব চোখে সবটা দেখছে নিহাল রাগে ফুসফুস করতে করতে গাড়ি স্টার্ড দেয় ।
সেদিন আর মুনের ভার্সিটিতে যাওয়া হলো না নিহাল তাকে ভার্সিটির থেকে কিছুটা দূরে লেকের পাড়ে নিয়ে যায় ।
লেকের পাড়ে একদম লোকশূন্য শান্ত পরিবেশ আসে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা মৃদ্যু বাতাস বইছে এক অন্যরকম পরিবেশ দুজনই বেশ শান্ত মুন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর অন্যদিকে নিহালের গভীর নজর মুনের দিকে ।সে মুনকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে ।
দুজনের বেশ নিরব অবশেষে নিহাল নিরবতা কাটিয়ে বলল
-“তোমার সমস্যা কি ?”
মুন আগের মত মাথা নিচু করে শান্ত গলায় বলে
-“কই আমার তো কোন সমস্যা নেই !”
এবার নিহাল বেশ চড়ে গেল সে শক্ত কন্ঠে বলতে লাগে
-“আমাকে নিয়ে তোমার কি সমস্যা ?
আমাকে কি তোমার পছন্দ না ?
আমি কি দেখতে খারাপ না আমার চরিত্রে কোন সমস্যা আছে !
তোমাকে সুখে রাখার মত সব রকমের এভিলিটি আমার আছে তাহলে আমাকে মেনে নিতে তোমার সমস্যা কি ?”
মুন আগের মতই শান্ত স্বরে বলে
-“পছন্দ অপছন্দ মনের ব্যপার এর মধ্যে কারো কোন রকম জোর থাকে না !
আমার আপনাকে ‌পছন্দ না এটাই আমার শেষ কথা ।”
এবার নিহাল আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনা মুনের বাহু ধরে চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসে দাতঁ কিটকিটিয়ে বলে
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি তা বুঝতে পারছো ?
তাহলে কেন এমন করছো !”
মুন রেগে বলে
-“এখন কি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে আপনাকে ভালোবাসতে হবে ?”
নিহাল মুনের রাগ দেখে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলে
-“মুন আমি জানি শুধু এটাই কারন না অন্যকোন কারন আছে আমাকে বলো আমি সমাধান করছি ।”
মুন কোন জবাব না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে রেগে সামনের দিকে হাটতেঁ লাগে নিহাল মুনকে আটকায় তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে
-“আমি বুঝে গেছি তোমার আমাকে অপছন্দ আমি আর আজকের পর থেকে তোমার সামনে আসবো না ।
আমি যেহেতু তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি তোমাকে বাড়িতে পৌছানোর দায়িত্বও আমার !”
মুন আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে ।নিহাল পাশে বসেই গাড়ি স্টার্ড দেয় ।নিহাল মুনের এমন প্রত্যাখানে বেশ আঘাত পেয়েছে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে ।অন্যদিকে মুনের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে নিহাল দেখার আগেই তা মুছে ফেলে ।

দেখতে দেখতে আরো একটা মাস কেটে যায় ।এর মধ্যে সায়রার শরীরের গঠন বেশ পরিবর্তন হয়েছে শুধু শরীরের গঠনই নয় ব্যবহার আচরনেও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে তা আর কারো চোখে না পড়লেও আরসালের চোখে ঠি কই পড়েছে !

সায়রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে চুল গুলো ব্রাশ করছে তার মন যেন অন্যকোথাও আরসাল বেড থেকে এতটা সময় সায়রা কে দেখছিলো সায়রাকে এমন আনমোনা দেখে আর চুপ করে থাকতে পারেনা বেড থেকে উঠে এসে সায়রার কমোড় জরিয়ে ধরে ।
হঠাৎ কারো স্পর্শ পেতেই সায়রা কিছুটা ঘাবড়িয়ে যায় সে হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে আরসাল ।মুহূর্তেই সায়রার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে ।
সায়রা মুচকি হেসে বলতে লাগে
-“কিছু বলবেন ?”
আরসাল আগের মত জরিয়ে ধরেই বলল
-“হুম আই লাভ ইউ !”
সায়রা কথা শুনতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে আরসালের গায়েঁ নিজের শরীর হ্যলিয়ে দেয় আরসাল সায়রার ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে ছোট ছোট করে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগে সায়রা কাপাঁ আওয়াজে বলল
-“লাভ ইউ টু !”
দুজন যেন হাওয়ায় বাসছে মধুময় সময় অতিবাহিত করছে ।আরসাল সায়রার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে নেশায় ডুবে বলতে লাগে
-“তোমার এই গায়েঁ সুবাস আমাকে পাগল করে দিচ্ছে ।আজকাল তোমার সৌন্দর্য যেন বাড়ছে তোমার মধ্যে এক ‌অদ্ভুদ মুগ্ধতা কাজ করে !
সত্যি তোমার এই রূপে আমি বার বার পাগল হয়ে যাচ্ছি রূপমোহিনী !
এখন তুমি ছাড়া আর অন্যকোন কিছুতে মন বসেনা
পাগল করে দিচ্ছ আমায় তুমি ।”
সায়রা আরসালের কথা শুনে লজ্জায় চুপ হয়ে আছে গাল টমেটোর মত লাল হয়ে আছে ।কি বলবে বুঝতে পারছেনা !
সায়রা আরসালের দিকে ঘুরে লজ্জায় তার বুকে নিজের মাথা লুকায় ।আরসাল আস্তে আস্তে সায়রার থুতনী ধরে উচুঁ করে তার ঠোঁট জোড়ার দিকে নিজের ঠোঁট আগাতে লাগে আস্তে আস্তে কাছে আসতে লাগে তাদের ঠোঁট জোড়া প্রায় ছুঁই ছুঁ‌ই !
হঠাৎ এমন সময় দরজায় কেউ জোরে জোরে নক করে দুজনের ধ্যান ভেঙ্গে যায় সায়রা লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে আরসাল বিরক্ত নিয়ে বির বির করতে করতে দরজা খুলে ।দরজা খুলে দেখে বাড়ির কাজের লোক দাড়িয়ে আছে চোখে মুখে প্রচন্ড ভয়ের ছাপ আরসাল তা লক্ষ করে কি হয়েছে জিগাসা করতেই কাজের লোক উত্তরে জানায় রিদ্ধির লিভার পেইন উঠেছে এখনি হসপিটালে নিতে হবে আরসাল আর সায়রা তা শুনে দ্রুত পায়ে নিচে চলে যায় ।নিচে যেতেই দেখে সোফার রুমে সবা‌ই রিদ্ধি লিভার পেইনে কাতরাচ্ছে পাশেই সায়ন তার হাত জোড়া ধরে তাকে সাহস নিচ্ছে সায়ন নিজেও অনেক ভয়ে রয়েছে তা স্পষ্ট তার চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে !
তারাতারি করে রিদ্ধিকে হসপিটালে নিয়ে যায় ।হসপিটালে নিতেই সাথে সাথে অপরেশন রুমে নিয়ে যায় ।সবাই বাহিরে দাড়িয়ে আছে সায়রা রিদ্ধির যন্ত্রনা দেখে কাদঁছে মুনতাহা বেগম তাকে সাহস দিচ্ছে ।সায়ন কে খুব নার্ভাস লাগছে আরসাল তাকে বোঝাচ্ছে ।
ডক্টোর এসে জানায় রিদ্ধির ‌অবস্থা বেশ ক্রিটিকাল তা শুনে সবাই আরো ভেঙ্গে পড়ে সায়রার কান্নার বেগ বেড়ে যায় মুনতাহা বেগম তাকে বোঝাচ্ছে ।
কিছুসময়ের মধ্যে হসপিটালে রিদ্ধি সায়রার বাড়ির লোকেরা সবাই পৌছিয়ে যায় সবাই বেশ চিন্তিত মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে !

চলবে…….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here