তোমার আড়ালে পর্ব ১

💞 তোমার আড়ালে 💞

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট :১

আজ যাবরীন সুবাহ র বিয়ে পুরো বাড়ি বাহারী রং এর আলোয় জলমল করছে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে হবে নাই বা কেন একসাথে বাড়ির দুই মেয়ের বিয়ে আজ সুবাহ র আর কাল তার ফুফাতো বোন নিদ্রার ।সুবাহ অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী বাবা মায়ের বড় মেয়ে তার ছোট দুই ভাইবোন রয়েছে ।এলাকায় আর ৫ টা প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে তার পরিবার একটা ।এলাকায় বেশ নামডাক রয়েছে সুবাহ র দাদাভাইয়ের !
আয়নার সামনে কনে সেজে মনমরা হয়ে বসে আছে সুবাহ হাতে আরোশের ছবি ।নিজের বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের কতই না জলপনা কল্পনা থাকে !
চোখে কতই না স্বপ্ন থাকে অথচ সুবাহ চোখে না আছে কোন স্বপ্ন না আছে কোন আনন্দ ।থাকবেই কি করে ?
যার মনে বসবাস অন্য কারো আর বিয়ে হতে যাচ্ছে অন্য কারো সাথে তার চোখে কি করে কোন স্বপ্ন আনন্দ থাকবে !
সুবাহ র সব কিছুই বিরক্ত লাগছে অসয্য লাগছে ।
কিন্তু সব কিছু বিরক্ত লাগলেও তার মেনে নিতে হবে !
এই তো ২ মাস আগেই তো সে সবকিছু ছাড়ার আরোশ কে ভুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে !
সে নিজের ভালোবাসাকে কুরবান করে দিয়েছে নিজের পরিবারের সুখের জন্য !
আরোশের সারাজীবন অজানাই থেকে যাবে সুবাহ র অবক্ত ভালোবাসাটা !
এই সব ভাবতে ভাবতেই সুবাহ র চোখের জল গড়িয়ে পড়ে !
এমন সময়ই দরজা ঠেলে হুরমুর করে ভিতরে ডুকে পরে সুবাহ র দাদী আর ফুফাতো বোন নিদ্রা !
সুবাহ তাদের দেখেই নিজের চোখের জল আর আরোশের ছবি লুকাতে বেস্ত হয়ে পড়ে ।কিন্তু সুবাহ র চোখের জলটা না দেখলেও আরোশের ছবিটা তারা ঠি কই দেখে ফেলে আর তা দেখে নিদ্রা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে বলতে লাগে
“আর কত অভিনয় করবি সুবাহ ?
এবার তো আমার আরোশের উপর থেকে নিজের কুনজর সড়া ।
আজ তোর বিয়ে আদির সাথে !
আর কাল আমার আর আরোশের বিয়ে ।
এখনো তুই আরোশের ছবি নিয়ে এতো নাটক করছিস ?
আর কত এবার তো আমার আরোশের পিছন ছাড় !
আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দে !”
সুবাহ নিদ্রার এসব কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারে না রেগে বলতে লাগে
“নিদ্রা সত্যিই কি আরোশ তোর ছিলো কখনো ?
ভুলে যাসনা আমি পিছন সরে এসেছি বলে তুই আরোশকে পেয়েছিস !
আর আরোশ যদি সত্যিটা জানতে পারে সে কি তোর থাকবে ?
ভুলে যাসনা আমার দয়ায় তুই আরোশ কে পাচ্ছিস ।”
নিদ্রা চুপ হয়ে যায় তার চোখে মুখে ভয় ফুটে উঠে ।পাশ থেকে সুবাহ র দাদী রেগে ধমকের স্বরে বলতে লাগে
“সুবাহহহ !
তুই খুব বেশি বেড়ে গেছিস ।
তুই ও ভুলে যাসনা তুই এর বিনিময়ে কি চেয়েছিস !
আমার একটা কথায় সব কিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে ।”
সুবাহ তার দাদীর কথা শুনে নিশব্দে নিজের চোখের জল ফেলতে লাগে ।মানুষ ঠি ক কতটা স্বার্থপর হতে পারে তা হয়তো নিজের দাদীকে না দেখলে সে বুঝতো না !
সুবাহ কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আফসোস দাদু তুমি নিদ্রাকে ঠি ক যতটা ভালোবাসো তার শত ভাগের এক ভাগ যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে হয়তো তুমি আমার কষ্টটা বুঝতে !
আমার কষ্টটা অনুভব করতে পারতে !
আমি সারাটা জীবন তোমাকে আপন মনে করে ভালোবেসে এসেছি !
অথচ তুমি আমাকে আমার মাকে আর আমার ভাই বোনকে কখনই নিজের মনে করনি !
সবসময় দু চোখে দেখেছো ।
আমাদের জানা ছিলোনা এতটা ঘৃনা কর আমাদের যে আমাদের তোমার সয্য হয়না !”
সুবাহ র দাদী রেগে গর্জিয়ে বলতে লাগে
“আমি তোর এত কথা শুনতে চাইনা !
আমি চাই তুই এই বাড়ি থেকে আর নিদ্রা আর আরোশের জীবন থেকে দূরে চলে যা ।
আমার নাতনির জীবন আমি তোর কারনে নষ্ট হতে দিবোনা !
তোরা মা মেয়ে একদম এক হয়েছিস নাগিন !
যেখানে যাস নিজেদের বিষ ছাড়াস !
তোর মায়ের কারনে আমার আর আমার ছেলের মধ্যে এত দূরত্ব হয়েছে !
আর তুই যদি চাস সব ঠি ক হোক তাহলে আরোশ আর নিদ্রার জীবন থেকে দূরে সরে যাহ !
আদি কে বিয়ে করে বিদায় হ এ বাড়ি থেকে ।”
বলেই আর এক সেকেন্ড দেরীনা করে সুবাহ র দাদী নাসরিন বেগম চলে যায় ।আর তার পিছু পিছু লেজের মত নিদ্রা ছুটে !
নাসরিন বেগম যেতেই সুবাহ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।পাশ থেকেই সুবাহ র বান্ধুবী জান্নাত তার পাশে বসে তাকে সামলাতে লাগে !
এত সময় সবকিছু নিরব দর্শকের মত দেখছিলো জান্নাত !
তার প্রথম থেকে এই পর্যন্ত সব কিছু জানা আছে ।
সে চাইলেও কিছু বলতে পারছেনা কারন সুবাহ কড়া ভাবে তাকে মানা করেছে !
দাতেঁ দাতঁ চেপে সব কিছু সয্য করেছে ।তারা যেতেই জান্নাত পাশ থেকে বলতে লাগে
“সুবাহ তুই কার জন্য করছিস এসব তোর এই স্বার্থপর দাদীর জন্য ?
যে নিজের মেয়ে ঘরের নাতনিকে ছাড়া কিছুই বুঝে না ! “
সেহের চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগে
“আমি মটেও দাদীর জন্য কিছু করছিনা !
আমি যা করছি সব আমার আব্বুর খুশির জন্য করছি ১৯ বছর ধরে আব্বু নিজের মায়ের ভালোবাসা পায় না আদর পায় না !
এক বাড়িতে থাকার পর ও দাদী তার সাথে কথা বলে না নিজের কাছে টেনে নেয় না করনাটা ছিলো আব্বু কাউকে না জানিয়ে মাকে বিয়ে করার অপরাদে !
দাদাভাই মেনে নিলেও দাদী কখনো মাকে মেনে নেয়নি না আমাদের ভাই বোনদের !
আব্বুকে দাদীর ভালোবাসা আদর পাওয়ার জন্য আমি ১৯ বছর আব্বুকে কাতরাতে দেখেছি কষ্টে দেখেছি যদি আমার ভালোবাসা ত্যাগে আমার আব্বু নিজের মায়ের ভালোবাসা ফিরে পায় তাহলে এমন হাজার বার নিজের ভালোবাসা আমি ত্যাগ করতে রাজি !”
জান্নাত করুন কন্ঠে বলতে লাগে
“তুই কি মনে করিস যদি আরোশ ভাইয়া সত্যিটা কখনো জানতে পারে তাহলে নিদ্রাকে মেনে নিবে ?
আরোশ ভাইয়া সব কিছু তছনছ করে দিবে !
শেষ করে দিবে ।”
সুবাহ বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলতে লাগে
“আরোশের সামনে কখনো সত্যিটা আসবেনা !
আমি কখনই জানতে দিবোনা তার “প্রভা “ নিদ্রা না আমি !”
জান্নাত বলতে লাগে
“সত্যি কখনো আড়াল থাকে না !”
সুবাহ বলতে লাগে
“আমি সত্যটা সব সময় আড়াল করেই রাখবো আরোশ কে কখনই জানতে দেবনা কিছু !
আর কয়েক ৩ ঘন্টা পরই আদির সাথে আমার বিয়ে ।
আর এই বিয়ের সাথে সাথেই সারাজীবনের জন্য আরোশের প্রভার মৃত্যু হবে জন্ম হবে হৃদয়হীন সুবাহ র ।”
জান্নাত সুবাহ র এসব কথা শুনে তার কাছ থেকে রেগে উঠে চলে আসে তারপর দরজার সামনে দাড়িয়ে পিছনে ঘুরে বলতে লাগে
“আরোশ ভাইয়ার সামনে একদিন ঠি ক সবকিছু আসবে আর সেদিন সব কিছু সে ধ্বংস করে দিবে !”
সুবাহ তাচ্ছিলোর হাসি দিয়ে বলতে লাগে
“ধ্বংস হবার জন্য কোন কিছু অবশিষ্ট নেই আর !
(বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে আরোশের ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে )আর কয়েক ঘন্টা তারপর সারাজীবনের জন্য চলে যাবো “ তোমার আড়ালে “ !
জান্নাত সুবাহ র পাগলামো আর জিদ দেখে হনহন করে রেগে চলে যায় !
তার এইসব সয্য হচ্ছেনা সুবাহ র কষ্টটা সে স্পষ্ট দেখতে পারছে অথচ তার পরিবার তা বুঝতে পারছেনা ।
সে নিজের পরিবারের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করছে !

সুবাহ বেডে বসে আছে আর কয়েক ঘন্টা পরই তো সে অন্য কারো হয়ে যাবে আদির সাথে তার বিয়ে ।আচ্ছা বিয়ের পর আরোশ কে মনে মনে ভালোবেসে যাওয়াটা কি তার অন্যায় হবে ?
খুব বেশি অপরাধের হবে ?
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রুমের লাইট অফ হয়ে যায় লাইট অফ হওয়ায় পুরো অন্ধকার হয়ে যায় রুম কারন বাহিরে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ।সুবাহ বেড থেকে উঠে দরজার কাছে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখে পুরো বাড়িরই লাইট অফ !
হয়তো লোর্ড শেডিং হয়েছে কিন্তু এসময় তো লোর্ড শেডিং হবার কথা না তারপরও কি করে হলো ?
সুবাহ তার মাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু কোন সাড়া পেলো না হয়তো সবাই বাড়ির পিছনে বাগানে পেন্ডেলের মধ্যে রয়েছে এসব ভেবে সুবাহ রুমে চলে আসে ।এসে মোমবাতি খুজঁতে লাগে হঠাৎ কেউ রুমে প্রবেশ করে !
কারো আসার শব্দ পেয়ে সুবাহ কিছুসময় থেমে যায় তারপর পিছন ঘুরে অন্ধকারে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার মোমবাতি খুজঁতে বেস্ত হয়ে পড়ে !
কিছুসময় পর সুবাহ মোমবাতি খুজেঁ তা জ্বালাতে নিলেই পিঠে কারো গরম নিশ্বাস অনুভব করে ।পিছনে থেকে এক জোড়া হাত তার লেহেঙ্গার উড়নাটা বেদ করে তার খালি পেট স্পর্শ করে !
হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এভাবে জরিয়ে ধরায় সুবাহ ভয় পেয়ে যায় ।
সে পিছনে ঘুরতে নেয় কিন্তু পিছনের থাকা মানুষটি আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে তারপর সুবাহর ঘাড়ে নিজের থুতনিঁ রাখে সুবাহ কেপেঁ উঠে !
পিছনে থাকা লোকটি দাতঁ কটকট করে মৃদ্যু আওয়াজে বলতে লাগে
“খুব বেশি অন্যায় করেছো সুবাহ !
তোমার এমনটা করা মটেও উচিত হয়নি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করার পরিনতী তুমি অবশ্যই পাবে ।
আমার বিশ্বাস ভাঙ্গার পরিনাম তুমি ঠিকই পাবে !
তোমাকে নিজের করে ভয়ানক শাস্তি দেবো ।”
বলেই পিছনে থাকা লোকটা আরো শক্ত করে সুবাহ র কমোড় জরিয়ে ধরে বেশ রাগ ক্ষোপ জেদ নিয়ে ।
সুবাহ ব্যথায় কুকড়িঁয়ে উঠে চোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝড়তে লাগে !
পিছনের লোকটির কন্ঠ শুনে সুবাহর বুঝতে বাকি রইলে না সে কে !
সুবাহ ভয়ে কাপাকাপাঁ কন্ঠে আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুড়িয়ে বলতে লাগে
“আ..আ..আরোশ ভাইয়া আ..আ…আপনি ?
আপনি এখানে কি করছেন !
আর এসব কি বলছেন ?”
আরোশ একটানে সুবাহকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে !
একহাতে শক্ত সুবাহ র চুলের মুঠি ধরে অসম্ভব লাল হয়ে আছে আরোশের চোখ ফরসা চেহারা রাগে জিদে লাল হয়ে !
ভয়ংকর রেগে আছে আরোশ রাগে ফুসতে ফুসতে বলতে লাগে
“এই ইনোসেন্ট সাজার নাটক করবি না তোকে এইসব মানায় না !
তুই আর তোর সো কল্ড বোন যা করেছিস ইচ্ছা তো করছে তোদের দুজনকে খুন করে দি !
আমার বিশ্বাসকে তোরা দু বোন কাচের মত ভেঙ্গে দিয়েছিস !
সবকিছুর মূলে তুই ছিলি তাই না ?তোকে এর শাস্তি পেতে হবে !
খুব শখ আদিকে বিয়ে করার তাই তো ?
তা আর হবে না !
আমি হতে দিবো না ।
তোকে তো আমাকেই বিয়ে করতে হবে ।
আমি জানি আমার জিনিস আমার কি করে আদায় করে নিতে হয় !”
সুবাহ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ।সুবাহ কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরোশ সুবাহ র মুখে স্প্রে করে দেয় !
সুবাহ আরোশের বুকে হেলে পড়ে ।
আরোশ সুবাহকে কোলে নিয়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে তাকে গাড়িতে তার পাশের সিটে বসিয়ে দেয় তারপর সুবাহ র দিকে তাকিয়ে বলতে
“Everything is fair in love and war”
বলেই গাড়ি স্টার্ড দেয়………

চলবে……..
❤️❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here