প্রেমানুভূতি পর্ব -০৪

গল্পের নামঃ #প্রেমানুভূতি
#পর্বসংখ্যা_০৪
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

খাবার টেবিল জুড়ে এত খাবার দেখে অবাক হয়ে গেলো আদনান। চেয়ার টেনে বসতে বসতে শিল্পী খাতুনকে জিজ্ঞেস করলো,
– “এত খাবার কে রান্না করলো মা? তুমি উঠে করেছ নাকি? তোমার না কোমড় ব্যাথা, এত কিছু করতে গেলে কেন?”

শিল্পী খাতুন আদনানকে থামিয়ে বলে উঠেন,
– “আরে বাবা থাম! এসব আমি করি নি। যা করার সব মহুয়াই করেছে সকাল সকাল উঠে। আমিও তোর মতোই অবাক হয়েছিলাম এসব দেখে।”

আদনান মহুয়ার দিকে এক পলক তাকালো। তার মানে মেয়েটা তাকে মিথ্যা বলেছে। সারা সকাল সে এসব কাজ করেছে আর আদনানকে বলেছে সে বাড়ি ঘুরেছে।
মহুয়া মাথা নিচু করে দাঁত কামড়াচ্ছে। শিল্পী খাতুনতো আদনানকে সত্য কথা বলে দিলো। আদনান এবার নিশ্চয়ই রাগ করবে।

খাওয়া শেষ করে আদনান রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পরই মহুয়া আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে ঢুকলো। আদনান চোখ তুলে একবার মহুয়াকে দেখে আবার কাজে মন দিলো। মহুয়া উশখুশ করতে লাগলো। আদনান তাকে এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “কিছু হয়েছে? এমন করছেন কেন?”

মহুয়া মাথা নিচু করে বলল,
– “আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?”

আদনান ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “আমি কি কারনে আপনার উপর রাগ করবো?”

মহুয়া আবারো নিচু স্বরে বলল,
– “ওই যে বাড়ি ঘুরার ব্যাপার নিয়ে মিথ্যা বললাম।”

আদনান এবার আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। হেসে বলল,
– “আরে রাগ করি নি। আপনার বাড়ি আপনি যা খুশি তাই করবেন।”

মহুয়া এবার ইতস্তত করে বলল,
– “আচ্ছা,আমি কি একবার আমার বাড়িতে যেতে পারি।”

আদনান ব্যঙ্গ করে বলল,
– “কে যেন বলেছিলে সে কখনোই ওই বাড়িতে যাবে না।”

মহুয়া অদ্ভুতভাবে লজ্জা পেলো। তার গালগুলো লাল হয়ে উঠতে লাগলো। কোন মতে কথা এড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আদনান পেছন থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আজব তো! মেয়েটা লজ্জা পেলো কেন?

_______

শিল্পী খাতুনের সাথে বসে বসে আদনানের ছোটবেলার ছবি দেখছিলো মহুয়া। একটা ছবিতে আদনান পুরো গায়ে পাউডার মেখে ভুত সেজে দাঁড়িয়ে আছে। ছবিটা দেখে মহুয়া হেসে দিলো।
শিল্পী খাতুন বলতে লাগলেন,
– “আরে জানিস না তো ছেলেটা কি রকম দুষ্টু ছিল। আমি তাকে গোসল করিয়ে বিছানায় বসিয়ে রেখেছিলাম। সামনে পাউডারের কোট্টা ছিল। ও মা আমি এসে দেখি সাহেব পুরো পাউডার দিয়ে গোসল করে ফেলেছে। ছোটবেলায় আমার হাড়-মাংস জ্বালিয়ে খেয়েছে।”

শিল্পী খাতুনের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলো মহুয়া। আদনান নিজের মায়ের রুমের দিকেই আসছিলো। হাসির আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়ালো। মহুয়া মুখে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে, তার লম্বা চুলগুলো ফ্লোর ছুঁইছুঁই।
আদনান দরজায় ঠকঠক শব্দ করে ভিতরে ঢুকলো। আদনানকে দেখে আবারো হাসি পেয়ে গেলো মহুয়ার। কে বলবে এই ছেলে ছোটবেলায় এত দুষ্টু ছিলো। মহুয়া মিটমিটি হাসতে লাগলো আদনানকে দেখে। আদনান সে হাসির রহস্য উদ্ধার করতে পারলো না। মায়ের হাতে এলবাম দেখে খানিকটা আন্দাজ করতে পারলো কি হয়েছে। ধীর পায়ে মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে?”

শিল্পী খাতুন হাসি থামিয়ে বললেন,
– “তোর ছবি দেখাচ্ছিলাম মহুয়াকে।”

আদনান একবার এলবামে উঁকি দিয়ে দেখলো নিজের ছবিটা। বুঝলো মহুয়া কেন হাসছিলো। তারপর মুখ ফুলিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। মহুয়া আবারো খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।
শিল্পী খাতুন এবার বললেন,
– “আদনান মহুয়াকে একটু ওর বাড়িতে নিয়ে যা তো। মেয়েটা তার বাবার সাথে দেখা করে আসুক। রিসেপশন তো আরো তিনদিন পর।”

আদনান মায়ের কথা শুনে মহুয়ার দিকে তাকালো। সে উৎফুল্ল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাতেই মহুয়ার মুখে হাসি খেলে গেলো।
শিল্পী খাতুন বললেন,
– “বেশ তবে দুজনেই রেডি হয়ে নাও। মহুয়া তুমি যাও, কোন প্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে আসলে নিয়ে এসো।”

মহুয়া হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আদনান মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। শিল্পী খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– “টায়ার্ড? আজকেও নিশ্চয়ই ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিস। তোর এই ল্যাপটপকে একদিন আমি পানিতে গোসল করাবো।”

আদনান হেসে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে রইলো। শিল্পী খাতুন বিড়বিড়িয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

__________

মহুয়া বোরকা-নিকাব পড়ে ড্রয়িংরুমে রেডি হয়ে বসে আছে। আদনান রেডি হয়ে মহুয়াকে দেখে থমকে গেলো। নিজেকে সামলে শিল্পী খাতুনকে বলে ওরা দুজনে বেড়িয়ে গেলো। মহুয়া গাড়ির সামনে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আদনান চাবি নিয়ে এসে মহুয়াকে এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
– “কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে বসুন।”

বলেই গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো। মহুয়াকে গাড়িতে বসে পড়লে আদনানও গিয়ে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে আদনান বলল,
– “আই হোপ ইউ নো হাউ টু ইউজ এ্যা সিল্টবেল্ট।”

মহুয়া থতমত খেয়ে বলল,
– “আই নো ইট!”

মহুয়া কথা না বাড়িয়ে সিল্ট বেল্ট লাগিয়ে নিলো। বাড়ির সামনে এসে পৌঁছাতেই তাড়াহুড়ো করে করে সিল্টবেল্ট খুলে বাড়ির ভিতর দৌড় দিলো। আদনান মহুয়ার কাজ দেখে হেসে দিলো।

মোর্শেদ চৌধুরী মহুয়ার রুমেই বসে ছিলেন। মহুয়া লেখা চিঠিটা তার হাতে ছিলো। মহুয়া রুমে ঢুকতেই তিনি কুঁচকিয়ে এক কোণায় ছুড়ে ফেললেন। মহুয়া মোর্শেদ চৌধুরীকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
আদুরে গলায় বলল,
– “কেমন আছেন বাবা?”

মোর্শেদ চৌধুরী মহুয়ার মাথায় হাত রাখলেন। বিড়বিড়িয়ে বললেন,
– “ভালো আছি, সুঁচি। ভালো আছি। ”

আদনান দরজার নক করলে মহুয়া মোর্শেদ চৌধুরীকে ছেড়ে দাঁড়ালো। আদনান মোর্শেদ চৌধুরীকে দেখে সালাম দিলো। টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো তারা। মহুয়া ততক্ষণে ধীর পায়ে এগিয়ে হাতের পেছনে নিজের ডায়েরীটা লুকিয়ে ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মোর্শেদ চৌধুরী আদনানের সাথে কিছু কথা বলে বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। প্রথমবারের মতো তার মেয়ের জামাই এসেছে তাই একটু ভালো-মন্দ তো রান্না করতেই হবে।

মোর্শেদ চৌধুরী বেরিয়ে যেতেই আদনানের ফোনে একটা কল আসে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ফোন তুলে চাপা স্বরে আদনান বলে উঠে,
– “কি ব্যাপার এতবার ফোন করছো কেন? বললাম আমি এখন ব্যস্ত।”

ওপাশ থেকে কোন একটা কথার উত্তরে আদনান বলল,
– “আচ্ছা আমি দেখছি।”

________

মহুয়া অন্যরুমে নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে একটা কাজ করছিলো তখনই আদনান এলো। আদনানকে দেখে মহুয়া তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– “আপনি এখানে? কিছু কি লাগবে?”

আদনান ইতস্তত করে বলল,
– “আসলে আমার একটা আর্জেন্ট কাজ আছে যেটার জন্য ল্যাপটপ দরকার। তোমার কাছে তো আছে, জানি এভাবে মানুষের কাছে চাওয়াটা অদ্ভুত। কিন্তু আমার একটু আর্জেন্ট লাগবে।”

মহুয়া একবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– “নো প্রবলেন! আমি দিচ্ছি,জাস্ট একটু ওয়েট করুন।”

আদনান ওকে বলে আবার বেরিয়ে গেলো। মহুয়াকে জলদি ব্রাউজারে গিয়ে সার্চবারটা ডিলিট করলো, তারপর ফোল্ডারের প্রত্যেকটা ফাইল হাইড করে ফেললো।
অতঃপর আদনানের কাছে গিয়ে ল্যাপটপটা দিয়ে আসলো। আদনান মহুয়াকে অদ্ভুত চোখে একবার দেখে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

ল্যাপটপে কাজ করা অবস্হায় আদনানের বিছানায় কুঁচকানো এক কাগজে চোখ গেলো। কাগজটা টেনে খুলতেই মহুয়ার লেখা ছোটবেলার চিঠিটা দৃশ্যমান হলো। চিঠিটা পড়তেই তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। সাথে মোর্শেদ চৌধুরীর প্রতি একরাশ রাগ প্রকাশ পেলো। তার অবহেলায় আজ মহুয়ার এমন অবস্হা। কাজ শেষ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে মহুয়ার খোঁজে বেড়োলো সে।
মহুয়া রান্নাঘরে রান্না করছিলো। আদনান এসে ডাকতেই সে চমকে উঠলো যার ফলে হাতে থাকা গরম পানি পায়ে ছিটকে পড়লো। ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো মহুয়া

চলবে,,

গতকাল দিতে না পারার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here