প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প পর্ব -০৯

প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

|৯|

সকালের প্রভাতছটা আলো আছড়ে পড়ছে সিঁড়ির গায়ে। লম্বা, সরু আলোর রেখায় লক্ষাধিক ধুলো-বালির সমাহার। আমি সেই আবিল আলো ভেদ করে চোখ তুলে চাইলাম। অস্বচ্ছ আলোয় পাঁচ তলার সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা থমথমে, গম্ভীর মুখখানি দেখেই তটস্থ হয়ে গেল মন। কলের পুতুলের মতোই টুপ করে সোজা হয়ে গেল শরীর। মেরুদণ্ড বরাবর বয়ে গেল অদ্ভুত শীতল শিহরণ। প্রিয়তা দরজায় তালা ঝুলিয়ে পেছনে ফিরেই চমকে উঠল। পরমুহূর্তেই সূক্ষ্ম আমোদে চকচক করে উঠল ছলছলে হরিণনয়ন। আমার কানের কাছে মুখ নুইয়ে কৌতুক করে বলল,

‘ তোর শ্বশুর তো হেব্বি দেখতে, নিশু।’

আমি কঠিন চোখে চাইলাম। তটস্থ হাতে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে শশব্যস্ত পায়ে সরে দাঁড়ালাম। ধ্রুবর বাবা অর্থাৎ আমার অ-শ্বশুর মহাশয় দীর্ঘদেহী পুরুষ। স্বাস্থ্যবান শরীরে হালকা রঙের ফতুয়া ও সাদা পাজামা। ঢলঢলে চেহারায় মেহেদী রাঙা দাড়ি। চোখদুটো ভয় ধরানো শীতল। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ। গায়েগতরে ধ্রুবর মতো হলেও চেহারাটা একটু ভিন্ন রকম। আমি শুকনো ঢোক গিলে আড়চোখে ভদ্রলোকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ভাইয়ের দিকে চাইলাম। ধ্রুব পিঠের পেছনে হাত বেঁধে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অস্বস্তিতে কালো মুখটা অল্প একটু নোয়ানো। আবিরের হাতে গুটিয়ে রাখা বাজারের ব্যাগ। চোখদুটোতে চকচকে খুশি। আমি চোখ সরিয়ে এক পাশে সরে দাঁড়াতেই উচ্ছ্বাসে ফেঁটে পড়ল আবির। খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠে বলল,

‘ আরে ভাবী… ‘

প্রায় সাথে সাথেই ভারি পায়ে আবিরের ডান পা’টা চটকে দিয়ে কেশে উঠলো ধ্রুব। বড় ভাইয়ের সতর্কবার্তায় সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেল তার মুখ। ডান পা’টা ধরে লাফিয়ে উঠে যন্ত্রণায় কুঁচকানো মুখে বলল,

‘ ভা-বী না, আপু। নিশু আপু ভালো আছো?’

আমি উত্তর দিলাম না। প্রিয়তা ঠোঁট টিপে হাসল। সুযোগ বুঝে আহ্লাদে গলে গিয়ে অত্যন্ত লক্ষ্মী মেয়েটির মতো বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম, চাচা।’

আহ্লাদে গলে যেতে যেতেই দুই আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে আমার পিঠের পেছনটাই তীক্ষ্ণ আঘাত করল প্রিয়তা। ইঙ্গিতপূর্ণ হেসে ইশারা করতেই শশব্যস্ত হয়ে একদম না শোনার মতোই মৃদু স্বরে বললাম,

‘ আসসালামু আলাইকুম।’

আমার কন্ঠটা কানে যেতেই কেশে উঠলো ধ্রুব। ভদ্রলোক গম্ভীর, শীতল চোখে ছেলেদের দিকে তাকালেন। বাবার দৃষ্টির ভয়েই কী-না কে জানে? অত্যধিক লজ্জায় দিশেহারা হয়ে লাল হয়ে গেলো ধ্রুবর ইস্পাত কঠিন মুখ। আমতা আমতা করে বলল,

‘ বাবা? আপ..আপনারা আসুন। আমি নিচে যাচ্ছি।’

কথাটা বলে এক মিনি সেকেন্ডও অপেক্ষা করল না ধ্রুব। আমাদের পাশ কাটিয়ে বাতাসের বেগে ছুটে গেল নিচে। অদ্ভুত কোনো কারণে বিস্ময়কর লজ্জায় মিইয়ে গেলাম আমিও। অকারণ লজ্জায় অস্থির হয়ে পড়তেই হস্তী গম্ভীর পায়ে পাঁচ তলার সিঁড়ি পেরিয়ে নিচে নেমে গেলেন ভদ্রলোক। বাবার পিছু পিছু বাধ্য বাচ্চাটির মতো মাথা নুইয়ে নেমে গেল আবির। বুঝলাম, ছেলেদের প্রতি আমার অ-শ্বশুর মশাইয়ের আচরণ খুব একটা বন্ধুসুলভ নয়। বরং ভয় ধরানো, শীতল। আমি আর প্রিয়তা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রিয়তা আমার দিকে চেয়ে ঠোঁট টিপে হাসল। আমি কটমটে চোখে চাইতেই প্রেতাত্মার মতো বিল্ডিং কাঁপিয়ে হেসে উঠল প্রিয়তা। আমার লাল হয়ে যাওয়া ছোট্ট মুখটির দিকে চেয়ে বলল,

‘ দেবর, বর, শ্বশুর সবার সাথে তোর সিঁড়িতেই দেখা সাক্ষাৎ হয়ে গেল নিশু। এখন শুধু শাশুড়ী মহাশয়ার অপেক্ষা। সত্যিই যদি তোদের কখনো বিয়েশাদি হয় তাহলে বাসরটা সিঁড়িতে সাজালে কেমন হয়, বল তো? তারপর ধর ডেলি….’

প্রিয়তার কথায় পেটের ভেতর আলতো সুড়সুড়ি হলেও আগুন চোখে চাইলাম আমি। প্রিয়তা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত থামল না তার হাসি। অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ আমার কিছু মারাত্মক অশ্লীল কথা বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে নিশু। পেটটা ফেঁটে যাচ্ছে। বলে ফেলি?’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। প্রিয়তার মুখের লাগাম ছুটে যাওয়ার আগেই দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম গ্রাউন্ডে।

ধ্রুবদের বিল্ডিং থেকে সাংকিপাড়া কাঁচা বাজার কেবল দশ মিনিটের পথ। হাঁটা পথে পনেরো মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় অনায়াসে। আমি আর প্রিয়তা হাঁটা পথ ধরলাম। বেশ কিছু কাঁচা সবজি কিনে মাছের বাজারে ঢুকতেই মাথায় হাত পড়লো দুজনের। জীবনের প্রথম বাজারে এসেছি। চারদিকে হৈ হৈ মানুষ। মাটিটা প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা। পা’টুকু ফেলার জো নেই কোথাও। দোকানে দোকানে সারি সারি মাছ। কিছু কিছু মাছের দৈর্ঘ্য দেখে বিস্মিত দু’জনের চোখ। এদিক-ওদিক ঠেলা ধাক্কায় একরকম বিহ্বল হয়ে পড়লাম আমরা। কোন মাছটা কিনবো? কীভাবে কিনবো? দাম কেমন? কিচ্ছু না জানা আমরা হঠাৎই নিজেদের গৌণ মূর্খ বলে আবিষ্কার করলাম। প্রিয়তা আর আমি কিছুক্ষণ মুখ কাঁচুমাচু করে একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দোকানের সব মাছ আমার কাছে একরকম মনে হলেও একটা মাঝারি আকারের মাছের দিকে আঙুল নির্দেশ করে বললাম,

‘ মামা এটা কী মাছ?’

সাথে সাথেই কয়েক জোড়া চোখ স্প্রিংয়ের মতো ঘুরে এলো আমার উপর। আমি চোখদুটো তুলে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ধ্রুবরা এই দোকানেই মাছ দেখছে খেয়াল হলে পৃথিবীর একমাত্র মাছের দোকান হিসেবেও এই দোকানের চৌকাঠ মারাতাম না আমি। নিজের গালে কঠিন একটা চড় বসানোর দুর্দমনীয় ইচ্ছেকে প্রশ্রয় না দিয়ে আড়চোখে চাইলাম আমি। ধ্রুবর বাবার ঠান্ডা দৃষ্টি আর ধ্রুবর কৌতুকে ভরা চাহনি দেখে আমার সেই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে হলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, হে বিধাতা? দয়া করে এই শেষ বারের মতো পৃথিবীটা দু’ভাগ করে আমায় ভেতরে ঢুকিয়ে নাও। এই ভয়াবহ অস্বস্তি থেকে রক্ষা করো। আমি জীবনেও আর নামায ছেড়ে দেব না। দিনে তিনবেলা করে দান করব। সত্যি! সত্যি! তিন সত্যি! আমার ‘তিন সত্যি’ কাজে দিলো না। বিধাতা আমার আকুতি শুনলেন না। বিশাল একটা মাছ কাটতে কাটতে মাছওয়ালা মামা মৃদু হাসলেন। বললেন,

‘ এইটা রুই মাছ মামা।’

ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে হলো, আসমানটা ফেঁটে যাক। আমার মান্ধাতার আমলের অত্যধিক স্লো মাথাটা পাকা তরমুজের মতো ফেঁটে ভর্তা হয়ে যাক। নয়তো এখনই ওই সামনের রেললাইনটাতে শুয়ে পড়ি। একটা দৈব ট্রেন এসে ছিন্নভিন্ন করে দিক আমার বেয়াদব মস্তিষ্ক। আমি আড়চোখে চাইলাম। ধ্রুব তখনও ঠোঁট টিপে হাসছে। তার এই গা জ্বালানো বিশ্রী হাসিটা দেখেই মেজাজ জ্বলে গেল আমার। ধ্রুব নামক বেয়াদব লোকটাকে সটান একটা চড় বসাতে ইচ্ছে হলো। আমি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিলাম। নিজেকে যথারীতি শান্ত করে প্রিয়তার হাতটা টেনে মৃদু কন্ঠে বললাম,

‘ চল, অন্য দোকানে যাই।’

প্রিয়তা অবাক চোখে চাইল। আমার বাদ বাকি মানসম্মানটুকুও মশলা বাটার মতো পিষে ফেলে বলল,

‘ কেন? এমনিতেও তো কোনো মাছ চিনিস না। রুই-কাতলা সবই আমাদের এক। এইখান-ওইখান থেকে কেনাও ওই একই। তাহলে শুধু শুধু না ঘুরে এখান থেকে কিনে নিলেই তো হয়?’

আমি কঠিন চোখে চাইলাম। আমার অ-শ্বশুর মশাইয়ের ভয়াবহ ভদ্র ছেলেটার ঠোঁট টেপা হাসি এবার দীর্ঘ হলো। চট করে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চাপা হাসিতে ভরিয়ে ফেলল ঠোঁট। আমার সারা শরীর রি রি করে উঠল প্রচন্ড মেজাজ খারাপের দায়ে। প্রিয়তার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘ যাবি তুই?’

প্রিয়তা এবার আর তর্ক করার সাহস করে উঠল না। আমি মনে মনে নিজেকে চড়, লাথি, থাপ্পড় আর কঠিন কিছু গালি দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম৷ মাছের বাজারের মাছগুলোকে আমার হঠাৎ পরীক্ষার খাতার সবচেয়ে কনফিউজিং চার অপশনের মতো মনে হলো। কোনটা থেকে কোনটা সিলেক্ট করব, কিচ্ছু বুঝে পেলাম না। আমার অ-শ্বশুর মশাইকে দেখলাম বিশাল বড়ো বড়ো তিনটা মাছ কাটিয়ে বাজারের ব্যাগে চালান করে দিলেন। বিস্মিত প্রিয়তা গলা নামিয়ে বলল,

‘ তোর শ্বশুরবাড়ির সব ক’টা রাক্ষস নাকি রে? এতো মাছ দিয়ে করবেটা কী?’

আমি চোখ রাঙিয়ে চাইলাম। ধমক দিয়ে বললাম,

‘ একদম শ্বশুর বাড়ি শ্বশুর বাড়ি করবি না। সব জেনেশুনেও অযথা ক্ষেপাচ্ছিস কেন আমায়? এই বেয়াদব, অসভ্য ছেলেটাকে আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না। পৃথিবীর একমাত্র ছেলে হলেও না।’

প্রিয়তা মুখ ভেঙাল। এই ভিড়ের মধ্যেও দ্রুত পা চালিয়ে বলল,

‘ এইজন্যই তো রাতে কেঁদেকেটে মরে যাচ্ছিলি।’

প্রিয়তার কথাটা শ্রবণেন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌঁছানোর সাথে সাথেই নিজের গালে আজকের দিনের তিন নম্বর চড়টা বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করল। এই বেয়াদব ছেলের জন্য ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেছি ভাবতেই দৈব ট্রেনের নিচে মাথা দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে ইচ্ছে করল মস্তিষ্ক। শেষমেশ মাছ কেনা ক্ষান্ত দিয়ে মাছের বাজার থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা। পুরো বাজার ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় অজস্র কাঁচা বাজারে ভরিয়ে ফেললাম দু’দুটো বাজারের ব্যাগ। ভয়াবহ ভারি ব্যাগদুটো টানতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হলো দুজনার। বাজার থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হেঁটে মোড় পর্যন্ত যেতেই হাঁপানি শুরু হয়ে গেল প্রায়। প্রিয়তা হাতের কাছের একটা রিকশাকে ডেকে শুধাল,

‘ মামা, সামনের মোড় পর্যন্ত যাবেন?’

রিকশাচালক অলস ভঙ্গিতে বলল,

‘ যামু তয় তিরিশ টাকা।’

আমি আর প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে চাইলাম। প্রিয়তা মারমুখো হয়ে কিছু বলবে তার আগেই পাশে এসে দাঁড়াল গমগমে এক কন্ঠস্বর। মেঘমন্দ্র কন্ঠে শুধাল,

‘ রিকশা সামনের মোড়ে যাবে?’

রিকশাওয়ালা এবার কিছুটা তটস্থ হলো। মিনমিন করে বলল,

‘ জি। যামু।’

আমি মাথা নুইয়ে আড়চোখে চাইলাম। আমার অ-শ্বশুর মহাশয়ের পেছনে বাজারের ব্যাগ হাতে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসভ্য ছেলেটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল তখনই। ধ্রুব কয়েক সেকেন্ড আমার চোখের দিকে চেয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবির ধীরে ধীরে আমাদের দিকে চেপে এসে দাঁত বের করে হাসল। আমার অ-শ্বশুর মশাই গমগমে কন্ঠে শুধালেন,

‘ কত নিবা?’

‘ বিশ টাকা, চাচা।’

রিকশাওয়ালার আকস্মিক কথা বদলে চোখ বড় বড় করে চাইলাম আমরা। চোখের আগুনে ঝলসে দেওয়ার মতোই বিদ্রোহী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো প্রিয়তা। ভাবখানা এই, এইবারের মতো ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয়বার এমন বাটপারি চিন্তা করলে ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেব একদম। চ্যাংড়া রিকশাওয়ালা প্রিয়তাকে খুব একটা গুরুত্ব দিলো না। আমার অ-শ্বশুর মশাই মেঘমন্দ্র কন্ঠে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন,

‘ পনেরো টাকা দেওয়া হবে।’

একে তো স্থানীয় লোক। তারওপর দু’দুটো শক্তি সামর্থ্য ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোককে প্রত্যুত্তর করার সাহস না পেয়ে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাল অল্প বয়স্ক রিকশাচালক। আমি আর প্রিয়তা মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য একটা রিকশা দেখতে উদযোগ করতেই আমাদের দিকে চাইলেন ভদ্রলোক। আমাদের দুজনকে দুর্নিবার বিস্ময়ে ছুঁড়ে দিয়ে অদ্ভুত কোমল কন্ঠে বললেন,

‘ যাও, উঠো।’

আমি আর প্রিয়তা একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে অস্পষ্ট কন্ঠে বললাম,

‘ জি?’

ভদ্রলোক শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,

‘ উঠো।’

আমি আর প্রিয়তা কয়েক সেকেন্ড স্থির দাঁড়িয়ে থেকে রিক্সায় উঠতে নিতেই বাবার সূক্ষ্ম ইশারায় মাথা নেড়ে এগিয়ে এলো ধ্রুব। একদম নিঃসংকোচে আমার হাত থেকে ভারি বাজারের ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে তুলে দিল রিক্সায়। আমি আর প্রিয়তা রিক্সায় চেপে বসতেই নিজেদের ব্যাগ থেকে সদ্য কেনা মাছের বিশাল একটা পুটলি আমাদের ব্যাগে চালান করে দিতে দিতেই ঠোঁট টিপে হাসল ধ্রুব। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে একবার ব্যাগ তো একবার ধ্রুবর দিকে চাইলাম। হতভম্ব হয়ে বললাম,

‘ এসব? এসব কী?’

ধ্রুব উত্তর দিল না। ততক্ষণে আরও একটি রিক্সা ডেকে তাতে চেপে বসেছে আমার ‘হঠাৎ পেয়ে যাওয়া’ শ্বশুর মশাই আর অতি আদুরে দেবর। ধ্রুব তীব্র অধিকারবোধের সাথে রিক্সা ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে গা জ্বালানো হাসি হাসল। আমার ছোট্ট, বিভ্রান্ত মুখটির দিকে চেয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

‘ মান-ইজ্জত তো শেষ করে দিলেন ম্যাডাম। এখন থেকে একটু বাঙালি হওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনাদের জন্য তো ‘ মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটাই আর থাকছে না। আবির ভেবে ধ্রুবকে শাসানো যেমন চলবে না। ইলিশ ভেবে বোয়াল খাওয়াও চলবে না। দে হ্যাভ ডিফারেন্ট টেস্টস্, মিস. প্রেমিকা।’

আমি উত্তর না দিয়ে হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলাম। ধ্রুব তার বিশেষ গা জ্বালানো হাসিটা হেসে সরে দাঁড়াতেই রিক্সা ছুটলো শা শা। শীতের সকালের জল মেশানো ফিনফিনে বাতাসটা গায়ে লাগতেই তুলতুলে অনুভূতিতে ছেয়ে গেল বুক। প্রিয়তা কিছুক্ষণ থম ধরে বসে থেকে বলল,

‘ ব্যাপারটা কী হলো বল তো? তোর শ্বশুর কী তোদের সম্পর্ককে নীরব সম্মতি দিয়ে দিল? নয়তো বাতাসে ভেসে আসা পুত্রবধূর প্রতি এতো মায়া কেন? আশ্চর্য!’

#চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here