#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকা_আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____১২
মাথার উপর খটখট আওয়াজ তুলে বৃত্তাকার হয়ে লাগাতার ঘুরছে সাদা ফ্যানটা। নিশাতের মস্তিষ্কে তীক্ষ্ণভাবে আ ঘাত হানছে ভো ভো,বি-শ্রী শব্দখানি। ঘন ঘন আঁখিপল্লব ঝাঁপটিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল। বিছানার চারদিকে গোল হয়ে ঝুঁকে আছে অনেকগুলো পরিচিত, অপরিচিত মুখ। নিশাত হকচকালো,থমকালো। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল সবাইকে। সবার চোখের চাহনি বলছে সে কোনো নান্দনিক চরিত্র যা পর্যবেক্ষণে একটু পর হামলে পরবে সকলে। তৎক্ষনাৎ নিশাত বোকার মতো মনে মনে একটা ওয়াদা করল ‘ আর কখনো বেহুঁশ হবে না। ‘ নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে হাত বাড়িয়ে নিশাতের উষ্ণ, নরম গাল স্পর্শ করল। তিন-চারটে দাঁত দেখিয়ে হাস্যমুখে বলে উঠল,
‘ সবাই বলাবলি করছিল তুমি নাকি ঘুমিয়ে গিয়েছ। বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল আমার। বিয়ের গেইটে ঘুমিয়ে যাওয়া! বাপরে! অদ্ভুত বিষয়। জীবনে প্রথমবার দেখেছি বলে অনেক এক্সাইটেড হচ্ছিলাম। এরকম কেন বলছে সবাই জানার জন্য দু-একজনকে জিজ্ঞেস করতেই জানায় তুমি বাথরুমেও ঘুমাতে এক্সপার্ট। এত ঘুম!’
গলার স্বর টেনে শেষের লাইনটা উচ্চারণ করল সুন্দরী,সুশীল মেয়েটা। নিশাতের চেহারায় আরক্ত ভাব এসে নির্দ্বিধায় জুড়ে বসল। শেষে কিনা বরপক্ষের মানুষজনের থেকেও ঘুমের জন্য লজ্জা পেতে হবে! এই ঘুমকে কোথায় রাখা যায়? একটা বাক্সে বন্দী করলে চলবে তো? হাজারো অহেতুক ভাবনায় মগ্ন হলো মন। পরক্ষনেই মায়ের ডাকে হুঁশ ফিরে আসে।
রোকেয়া বিনীত করে সবাইকে নিচে যেতে বলছেন। ডাক্তার পইপই করে প্রথম থেকেই বলে গিয়েছে ভীড় না জমাতে তবুও পিংকির হবু বরের বাড়ির লোকদের হেলদোল নেই। মনে হচ্ছে পৃথিবীর আশ্চর্যতম কোনো জিনিসের সন্ধান মিলেছে তাঁর ভোলাভালা,হলদেটে মায়াবী রূপের মেয়েটার মধ্যে। শুধু সম্মানের খাতিরে কিছু বলতে বরাবরই অসফল হচ্ছেন। নীল শাড়ি পরিহিতা মেয়েটা পিংকির ননদ। কি অবলীলায় মজা নিতে এলো নিশাতকে নিয়ে! আজকাল যে মানুষের কী হয়েছে জ্ঞান হারানো আর ঘুমও বুঝে না। আফসোস করতে করতে উনি মেয়ের পাশে বসলেন।
নিশাতের মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কেমন লাগছে তোর? না খেয়ে দুর্বল হলে চলবে? বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলি বিয়ের গেইটে। মান সম্মান কি রাখবি না আর? কতক্ষন আছাড় খাস,আবার ঘুমিয়ে যাস,বেহুঁশ হয়ে যাস। কি যে শুরু করলি!’
‘ বিয়ের গেইট’ শব্দটা শুনে তড়াক করে নিশাতের হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে উঠল। চোখের সামনে ভাসল একটা চেহারা। ভুল দেখছে ভেবে চাইল পুনশ্চঃ । না একই দৃশ্য। প্রহর চুল নাড়াতে নাড়াতে ধপ করে বিছানার একপাশে বসে পড়ল। সোজা রোকেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ হ্যাংলা টা ঠিক আছে মামী। তুমি চিন্তা করো না। ‘
রোকেয়া দুঃখী মুখ করে তাকালেন প্রহরের দিক। পরমুহূর্তে নিশাতের রক্তশূণ্য মুখশ্রীর পানে চাইলেন কঠিন দৃষ্টিতে। ক্ষোভ ঝাড়তে লাগলেন ওর ওপর,
‘ হ্যাংলা টা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করলে কি আমার চিন্তা হতো প্রহর? এই মেয়ে নিয়ে আছি আমি জ্বালায়। দেখ,দেখ গাল দুইডাতে একটুও মাংস নাই৷ চাপা ভাঙা। দেখলে মনে হয় অনেক বছর খাইতে পায় না। ‘
প্রহর মামীর কথা রাখতে চট করে নিশাতের দিকে তাকাল। গাঢ়,অনিমেষ চাহনি। ভড়কে গেল নিশাত। পায়ের তলা শিরশির করতে লাগল। রক্ত হিমশীতল হতে আরম্ভ করল। মুহূর্তেই মনে হলো প্রহর ভাইয়ের চোখের সামনে হাত চেপে বলতে,’ কি করছেন প্রহর ভাই? মেয়ে মানুষের দিকে এভাবে তাকাবেন কেন? আপনি কি জানেন না,আমি বড় হয়েছি!’
রোকেয়ার ডাক পড়ল নিচে। দরজার সন্নিকটে গিয়ে সে আবার ফিরে আসে। ভয়ার্ত কণ্ঠে আওড়ায়,
‘ তোর মামার সাথে কথা বলেছিস?’
‘ বলেছি। ‘
‘ কি বলল?’
প্রহর একটা বালিশ টেনে তাতে পিঠ হেলিয়ে জবাব দেয়,
‘ রফিক আজমের সেই পুরোনো বাণী, দেখো কোনো ঝামেলা করবে না। আমাদের ভদ্র ফ্যামিলিতে অভদ্রের কোনো জায়গা নেই। তবুও বরপক্ষের হয়ে এসেছ যখন মান সম্মান বজায় রেখে চলবে। আশা করি তোমাকে শেখাতে হবে না। ‘
হতাশার সুর তুললেন কণ্ঠে রোকয়া,
‘ এই লোক বদলাবে না। পুরোনো রেশ ধরে রেখে কিভাবে চলতে হয় সেটা তাঁর চেয়ে ভালো বোধহয় কেউ জানে না। মন খারাপ করিস না প্রহর। নিশুকে নিয়ে নিচে আয়। আমি যাই। ‘
রোকেয়া চলে যেতেই প্রহর নিশাতের পরনের বাদামী জর্জেটের ওড়না টার কিছু অংশ টেনে নিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি রে আমায় দেখে হুঁশ হারিয়েছিলি?’
পায়ের তালু শিরশির করে উঠল নিশাতের। হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার জোগাড়। ঘাড় বাঁকিয়ে একটু তাকাল। প্রহর ভাই কি করে বুঝে যায় তার মনের কথা? মন পড়তে পারে নাকি এই লোক! ঝটপট মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,’ না। ‘
প্রহর মুখের ওপর ওড়না টা ধরে রেখেই দ্বিরুক্তি করল,
‘ নিশু রে,,,তুই হলি গাধী। বড়সড় ধরনের গাধী। আর গাধীকে প্রশ্ন করাও ভুল। পৃথিবীর সব উদ্ভট গুণ তুই কি করে বহন করছিস? আমাকে দেখে চোখ গোল গোল করে পড়ে গেলি আমি বুঝব না? নায়ক কি জীবনে দেখিস নি? আজ প্রথম দেখলি?’
নায়ক! প্রহর ভাই নিজেকে নায়ক বলে দাবী করছে? নিশাত আহাম্মক বনে গেল। চোখের কোণা দিয়ে পরখ করল মানুষ টাকে। সাদা পাঞ্জাবি দেহে। শ্যামলা চেহারায় কেমন একটা চিন্তিত, গম্ভীর ভাব। হয়তোবা উত্তরের অপেক্ষায়। চাহনি সর্বদার ন্যায় ধারালো,এই বুঝি কে টে কুটি কুটি করে ম রা গাঙ্গে ভাসিয়ে দিবে ওর মোটামুটি লম্বা,চিকনা শরীরটা। তার তো হুটহাট মনে হয় পৃথিবীর সবার ক্ষেত্রে প্রহর ভাই একরকম আর ওর বেলায় উল্টো। দেখলেই যেন অপ মান করার মতলব করে ফেলে আর নয়তো মা রার। ভাগ্যিস এবার এখনো হাত-টাত তুলে নি।
‘ আপনি আমাদের বাড়ি কিভাবে আসলেন? ‘
প্রহর ঠাশঠাশ মুখের ওপর বলে বসল,
‘ কেন আসতে কি তোর আর মামার পা ধোঁয়া পানি খেয়ে আসতে হয়? আজ প্রমাণ করে দিলি তুই মামার ডিএনএ বহন করছিস। থা-প্পড় মে রে একটা দাঁতও রাখব না,সাথে তোদের বাড়ির একটা ইটও রাখব না। বেই মান মেয়ে। তুই আমাদের বাড়ি গেলে এমন প্রশ্ন করি আমি?’
নিশাতের এই মুহূর্তে মন বলছে টুনিদের পুকুর পাড়ের কচু ক্ষেতে গিয়ে ফাঁ সি দিতে। ও এ জীবনে বোধহয় প্রহর ভাইয়ের সাথে ঠিকঠাক বাক্য প্রয়োগ,গুছিয়ে কথা বলা শিখবে না। প্রহর ভাই নিশ্চিত ভাবছে বাবার মতো সেও নিষেধ করছে এই বাড়িতে আসতে। অথচ সে জানতে চেয়েছিল বরের সাথে কিভাবে আসল। তড়িঘড়ি করে বলে বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল,
‘ আমি এমনটা বুঝায় নি। ‘
‘ মামার বাড়ি থেকেও নেই। রফিক আজমই পাত্তা দেয় না,তুই তো সেদিনের ফিডার খেয়ে বড় হওয়া নিশু। বর আমার ছেলে। ‘
‘ আপনার ছেলে!’
নিশাতের প্রশ্নের ভঙ্গিতে প্রহর বেজায় বিরক্ত। হাতটা নিশপিশ করছে। মুঠো করে বুঝানোর চেষ্টা করে,
‘ এই ছেলে সেই ছেলে না। আমার রক্তের ছেলে হতে আরো বহু বছর আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আমি যেই মেয়েকে বিয়ে করব সেই মেয়ে এখনও একটা বাবু। পিংকির বর রাজনীতি করে আমার আন্ডারে, সে আমাকে ছাড়া বিয়ে করবে নাকি! ‘
প্রহর ভাই বউ ঠিক করে রেখেছেন! আকস্মিক নিশাতের মনের দুয়ারে বিনা বার্তায় বুঝি বিষাদেরা এসে উপস্থিত। দরজা খুলবে না বলে সপ্তদশী নিশাত দৃঢ় পণ করে। প্রহর ভাই একটা পেত্নী,খাট্টাশ,বাবু বিয়ে করবে তাতে কার কী! বরঞ্চ সে নিস্তার পাবে এই রাজনীতিবিদ গু-ন্ডার হাত থেকে।
বিছানা ছেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাঢ় করে লিপস্টিক লাগিয়ে নিল। চেহারা থেকে অসুস্থ, অসুস্থ ভাব দূর করতে হবে। মেকআপের প্রতি গভীর ভালোবাসা আছে নিশাতের। বয়স টাই তো এমন,সাজগোজ করে থাকলে নিজেকে নিজের কাছেই রাণী মনে হয়। তাছাড়া মেয়ে মানুষের লিপস্টিক, আইনাইলার,কাজল, মেকআপের প্রতি ঝোঁক থাকবে না তা আদৌ হতে পারে! প্রহর গম্ভীর মুখে দ্রুত এসে ওকে আয়নার সমুখ হতে একপাশে ঠেলে দিল। সূক্ষ্ম চাহনি নিক্ষেপ করল। থমথমে কণ্ঠস্বর,
‘ তুই এটা কি পড়েছিস?’
নিজের দিকে তাকায় নিশাত। দৃষ্টি অবাকতার। মুখ উঠিয়ে মিনমিন করে,
‘ এটা সারারা। ‘
প্রহর রুক্ষতার সহিত পাল্টা জিজ্ঞেস করে,
‘ কি?’
নিশাত একটু পিছায়। ক্ষীণ তেজ ঢালে গলায়।
‘ সারারা,,,,,’
‘ চিল্লাছিস কেন ফাজিল? আমাকে বয়রা বানানোর ধান্ধা শুরু করেছিস? এসব সারারা,গারারা তুই ৬০ সেকেন্ডে বদলে সুন্দর দেখে একটা ড্রেস পরে আসবি। ‘
‘ কেন?’
‘ কারণ তোকে শেওড়া গাছের ভূ তনি লাগছে। পে-ত্নী একটা। এসব ড্রেস পরে কি প্রমাণ করতে চাস? তুই নায়িকা? কিন্তু তুই এখনো বাবু্। যা বাবুদের মতো ফ্রক পড়ে আয়। ‘
দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলল প্রহর। নিশাত তখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে। এই ড্রেসটা সে অনেক আহ্লাদ করে শহর থেকে বানিয়ে এনেছে। কতকাল পরে বাড়িতে অনুষ্ঠান, পরিধানের সুযোগ পেল। কিন্তু প্রহর ভাইয়ের লালচে দৃষ্টির দাপটে কিশোরী আত্মা বেরিয়ে আসার উপক্রম। বেছে বেছে একটা কালো রাউন্ড ড্রেস পড়ে নিচে এলো।
নিচে আসতেই বাঁধল বিপত্তি। সকলে মুখ টিপে টিপে হাসছে। বিয়ের গেইটে বেহুঁশ হয়ে যেন অসম্ভব কাজ সম্ভব করে ফেলেছে। কই কেউ তো এওয়ার্ড দিতে আসল না! সৌরভ শত ব্যস্ততার ভিতরেও দৌড়ে আসল। ব্যগ্র গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘ ঠিক আছিস এখন?’
‘ হু ভাইয়া। ‘
বোনের কণ্ঠ শুনে স্বস্তি পেল। পুনরায় বলে উঠল,
‘ প্রহর এসেছে। দেখেছিস?’
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ এত কথা বলতে যাস না। বাবা রে-গে যাবে। সে শুধু গেস্ট হিসেবেই এসেছে। বাবা প্রথম রেগে গিয়েছিলেন,পরে বরের বাড়ি থেকে অতিথি বলে চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছেন। ‘
‘ আমাদের মামার বাড়িতে আমরা প্রতি বছর যাই,কত মজা করি। তাহলে প্রহর ভাই,প্রত্যয় ভাই কেন বঞ্চিত হচ্ছে ভাইয়া? আমরা এক স্কুলে পড়া সত্ত্বেও বান্ধবী সেজেও শিমুল বিয়েতে আসতে পারছে না। এটা কি অন্যায় না? আমি জানিনা কি কারণে ফুপির বাড়ির সবার ওপর বাবার এত ঘৃ””ণা, কিন্তু আমরা কি দোষ করেছি? ‘
সৌরভ সতর্ক দৃষ্টি বুলালো বোনের চেহারায়। মেয়েটা বড় হয়ে যাচ্ছে কি! নাকি দৈহিকের চেয়ে মানসিকভাবে বড় হচ্ছে! বিচ্ছেদের আসল কারণ টা সে বলতে পারবে না বোনকে,মানা আছে। আরেকটু সময় যাক,সুযোগ করে বলবে। চলে যেতে নিলে নিশাত বাঁধা দেয়।
‘ তুমি কি প্রহর ভাইয়ের সাথে রেগে?’
সৌরভ মলিন হাসে। শান্ত গলা,
‘ না। মা রপিট নিয়ে রাগ পুষে লাভ নেই। খেতে আয়। ‘
‘ এখন খাওয়া? আগে বিয়ে হবে না?’
‘ বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ‘
‘ কি? কখন?’
‘ তোর যখন হুঁশ ছিল না। আসলে বাবা দেরি করতে চায় নি। ‘
‘ তুমি উপস্থিত ছিলে?’
‘ খুব কাছ থেকে পিংকির কবুল বলা শুনেছি। আমার বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেল।’
বলতে গিয়ে গলাটা বোধহয় ধরে এলো সৌরভের। নিশাত করুণ গলায় বলে ওঠে,
‘ আমি জানি সব বাবার কথায় করছো। বাবা তোমার জীবনটা শেষ করে দিল ভাইয়া। ‘
আঁতকে উঠল সৌরভ। নিম্ন কণ্ঠে শুধালো,
‘ এসব কি বলছিস? বাবা কেবল মাধ্যম ছিল পিংকির আসল রূপ টা দেখানোর। নয়ত আজীবন তাকে পেয়ে আমার আফসোস করতে হত ভালোবাসার জন্য। ‘
ভাইয়ের সাথে একমত হতে পারল না নিশাত। বাবার প্রতি অল্পস্বল্প রাগ জমা রাখল মনে। পিংকির বিদায় লগ্নে ডাক পড়ল সাথে বউয়ের বোন যেতে হবে। পিংকির ছোট বোনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। কিন্তু বর পক্ষ জানাল সাথে তাঁরা নিশাতকেও নিতে চায়। বিশেষ করে পিংকির ননদ বারংবার অনুরোধ করতে থাকল। তাঁদের একটাই কথা মেয়েটা বেহুঁশ হয়ে বিয়েটা ভালো করে উপভোগ করতে পারে নি,বোনের সাথে থাকলে ভালো লাগবে কিঞ্চিৎ। পিংকির ননদের এত রিকুয়েষ্টের কারণ ঠাহর করতে পারছে না নিশাতের মস্তিষ্ক। মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি এমন মনে হচ্ছে। তবুও যেতে রাজি ও। সৌরভ ভাই মধ্যরাত্রিতে বুক ফাটা আর্তনাদে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলবে আর পিংকি শ্বশুর বাড়িতে মজায় থাকবে? কতটুকু আনন্দে থাকবে স্বচক্ষে দেখতে চায় ও।
রফিক আজমের মেজাজ প্রহরকে দেখেই তপ্ত হয়েছিল। এখন আরো গরম। কিন্তু শত হোক বরপক্ষের সাথে যা তা ব্যবহার করা যায় না,এতে নিজের বাড়ির মান-সম্মান শূণ্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকবে। উপায়ন্তর না পেয়ে নিশাতকে যেতে দিতে রাজি হলেন। পরশু বৌভাত। মেয়েকে সাথে নিয়ে আসবেন সেদিন।
নিশাত বা হাতে টান অনুভব করে। পিংকির ননদ টেনে নিয়ে গাড়িতে নিজের পাশের সিটে বসাল। সুন্দরী এই রমণীর নাম মাহিশা। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে কেমিস্ট্রি নিয়ে। বয়সে ১৯ এর গন্ডি পার করে বিশে পদার্পণ করেছে সবে। গুণে গুণে নিশাতের বছর তিনেক বড়। সেই সুবাদে আপু ডেকে ফেলেছে দু-তিন বার। বড্ড মিশুক স্বভাবের মাহিশা। গাড়িতে বসে বার কতক চোখের পাপড়ি ঝাঁকিয়ে, ঠোঁট নেড়ে মুগ্ধকর অঙ্গভঙ্গি মিশিয়ে অনেক কথা বলল। এটাও বলল,
‘ জানো নিশাত? তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই ভাবলাম সাথে তোমাকে নিয়ে যাই। একটু আলাপচারিতা বাড়বে,পরিচয় গভীর হবে। পিংকি ভাবীর বিষয়েই যেমন তাঁর পছন্দ, অপছন্দ অনেক কিছুই জানা হবে। ‘
নিশাতের মুখে শুধু কথার তালে তাল মিলিয়ে হা,হু লেগে আছে। বিষন্ন হৃদয় হাহাকার করছে একজনের জন্য। আবার খুশিও লাগছে স্বাধীনভাবে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে পারবে এই ভেবে। ড্রেস চেঞ্জ করে আসার পর আর প্রহর ভাইকে দেখে নি সে। শুনল চলে গিয়েছে। কিন্তু কেন সেটা জানা নেই। এবারও কি বহু বছরের জন্য চলে গিয়েছে? নাকি গ্রামেই রয়ে গেল!
————————————-
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আগমন কমলাটে প্রকৃতিতে। ঢাকা পৌঁছাতে আরো তিন ঘন্টা। পিংকির শ্বশুর বাড়ি ঢাকা। সন্ধ্যার আজানের ধ্বনি আসছে অদূরের মসজিদ হতে। গাড়িতে মাহিশা ও তার নিঃশ্বাসের শব্দ। ড্রাইভার হুট করে ব্রেক কষলেন। নিশাত অবাক হলো,মাঝপথে গাড়ি থামায়। মাহিশার দিকে তাকাতেই সে ওষ্ঠদ্বয় ছাড়িয়ে মিষ্টি করে হাসল। রিনিঝিনি স্বর,
‘ বের হও কিউটি। ‘
তৎক্ষনাৎ বিস্ময়কর দৃষ্টি তাক করল নিশাত। আস্তে-ধীরে জানতে চাইল,
‘ কেন?’
‘ আমার ডিউটি এতটুকুই ছিল। হি ইজ ওয়েটিং ফর ইউ। ‘
জানালার কাচ নামাতেই চক্ষু আয়নায় ভেসে উঠে একটা ছেলে ছাতা মাথায় দৌড়ে আসছে এদিকে। হাতে ভাঁজ করা আরেকটা কালো ছাতা।
#চলবে,,,!
(মনে হচ্ছে বহু বছর লিখি না। গল্পটা যেন ভুলেই বসেছি প্রায়। আপনাদের হয়তো একই হাল। দৃঢ় চেষ্টায় লেগে যাব পুরো জোরসে আবারো লেখালেখির জগতে ফিরে আসতে। সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা, আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই। আর হে গল্প আসবে,রেগুলার আসবে শুধু পরীক্ষার দিনগুলো ব্যতীত। পরীক্ষার আগের দিন টাতেও দিতে পারব না। তাছাড়া অন্য কোনো কারণ না থাকলে প্রতিদিন ইনশাআল্লাহ। এবার কিন্তু সব কারণ বলে দিলাম, কেউ রা গ রাখবেন না। ভালোবাসা সবার জন্য। ভুল -ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার অনুরোধ থাকবে।)