#প্রেমের_বৃষ্টি💦
#পার্ট_(৪+৫+৬)
বিষন্ন মন ঠিক করতে আপুর বাসায় গেলাম।আপুর ছোট ছেলে ঈশান বয়স পাঁচ ওকে নিয়ে বিকেলে পার্কে গেলাম।আপুর বাসায় সাথে একটা পার্ক আছে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাগল করে ফেলেছে আসার পর থেকে তাই বিকেলে ওর সাথে গেলাম।
কিন্তু কি পরে যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি বাসা থেকে বিষন্ন মন নিয়ে এসেছি তাই আসার সময় ব্যাগই আপনি নি।আসার পর থেকে এক ড্রেস পরেছিলাম গোসল করে আপুর ঢিলা একটা কামিজ পরেছি।
এখন বাইরে গেলে তো এই জামা পরে যাওয়া যাবে না।
তখন আপু বলল, ‘ আমার একটা শাড়ি পরে যা।নীল রং এর তোকে খুব মানাবে তোর ভাইয়া নতুন গিফট করেছে আমাকে। ‘
তখন আমি পরলাম বিপাকে শাড়ি পরে হাঁটতে পারি না একদম। কখন ও শাড়ি পড়ি না এজন্য তাও আপুর বিয়েতে সবার জরাজরিতে পরেছিলাম শাড়ি। তারপর একটা কান্ড ঘটেছিলো আমি শাড়িতে পা বেজে পরে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম। তারপর রুমে বসে থেকেছি সেই ঘটনার পর কেউ আর আমাকে শাড়ি পরতে ফোর্স করে নি।
আজকে শাড়ির কথা শুনে আমার সেই ঘটনা মনে পরতেই শুকনো ঢোক গিললাম।আর ভয়ার্ত চোখে আপুর দিকে তাকালাম।
আপু আমার এমন চেহারা দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারছে মনে হয়। তাই সে বলল,,,’ সেই ভয় এখন ও পাচ্ছিস। পাগলি তখন আর ও ছোট ছিলি আর এখন তা নেই আর এমন ভাবে পিন আপ করে দিবো দেখবি কোন খারাপ লাগবে না আর না অসস্থি বোধ হবে।
আপুর কথায় ও আমি অসহায় মুখ করে রইলাম আমার ভয় কাটছে না।
কিন্তু আপু শাড়ি না পরিয়ে ছারবে না তাই কি আর করার পরতৈ রাজি হলাম। আপু খুব সুন্দর ভাবে শাড়ি পরিয়ে দিল তারপর চুল বিনুনি করে দিলো।
আমি চোখে কাজল আর ঠোট হালকা লিপস্টিক দিলাম না হলে দেখতে ভালো লাগছে না কারণ শাড়ি পরে একটু ও না সাজলে কেমন জানি লাগে দেখতে।
বিনি একপাশে এনে রাখলাম আর আপু কিছু ছোট চুল বের করে কানের পেছনে গুঁজে দিলো। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখছি একদম অন্যরকম লাগছে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
চশমা পরতে যাব আপু সেটা রেখে দিলো। আসলেই চশমা ছাড়াই ভালো লাগছে নিজি নিজেকে চিনতে পারছি না।
রেডি হয়ে ঈশানকে নিয়ে পার্কে চলে এলাম। এখানে এসেই ঈশান লাফালাফি করছে অনেকে ওর পরিচিত তাদের সাথে দৌড়া দৌড়ি করছে খেলছে শাড়ি পরে আমি খুব একটা হাটছি না কারণ আমি ভয়ে আছি যদি খুলে যায়। শাড়ির কুচি ধরে একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলাম। মনটা ফ্রেশ লাগছে মন খারাপ নেস অনেকটা কমে গেছে।
হঠাৎ বাচ্চারা সবাই আমার দিকে এগিয়ে এলো আর বলল ওদের খেলার ঝামেলা হয়েছে মানে ওরা কানামাছি খেলবে কিন্তু কেউ চুর হবে না যে যাকে চুর হতে বলছে সেই আরেকজন কে দেখাচ্ছে।
তারপর আমি আবার হাত দিয়ে বাটতে লাগলাম।চোর একজন কে বানিয়ে দিলাম তারপর আবার খেলা শুরু হলো।
আবার সব বাচ্চার আমার কাছে এলো ঈশান নাকি তাদের বলেছে আমি ভালো গান গাইতে পারি। এখন আরেক জ্বালা একটার পর একটা জামেলা পড়তে হচ্ছে। আসলে অত ভালো না একটু আক্টো গায় আরকি। সব বাচ্চারা চেপে ধরেছে আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে যে পর্যন্ত গান না গাইবো তারা সরবেনা নাছোড়বান্দা সবগুলো। অসহায় মুখ করে সবার দিকে তাকিয়ে আছি।
কাউকে আমি কথা শুনতে পারলাম না অবশেষে রাজি হলাম। সব বাচ্চাটা চিৎকার করে উঠল। আমি রাজি হয়েছি তাই।
কি আর করবো একটা গান গাইতে লাগলাম। বাচ্চারা চুপ করে শুনছে আসে আশেপাশে অনেকে এসে শুনতে লাগলো আমার লজ্জা লাগছে এখন এভাবে এত লোক তাকিয়ে আছে দেখে। তাই আর তাকিয়ে রইলাম না চোখ বন্ধ করে গাইচে লাগলাম।
.
.
.
এই পার্কে স্পর্শরা ও এসেছে। ও আর ওর ফ্রেন্ডরা ওরা একপাশে গোল হয়ে বসে গল্প করেছে তার মেইন টপিক হলো সারা। স্পর্শ নিরব দর্শক হয়ে বসে ছবি আঁকছে। আরেকটা কথা স্পর্শ কিন্তু খুব ভালো আঁকতে পারতে। আর এখানে এসেছে আর্ট করতে। নিজের মতো আঁকছে আর ফ্রেন্ডদের কথা গিলছে। স্পর্শের তিনটা ফ্রেন্ড, মাহিন, ইউসুফ, আরমান আর ও এই চার জন আছে। এক জন বলল স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ দোস্ত তুই যে ওই সারা মেয়েটাকে তোর প্রেমে ফেলতে পারবি আমরা সত্যিই ভাবিনি। ‘
সারার কথা শুনতেই স্পর্শ সাথে সাথে পেন্সিল চালানো থামিয়ে দেয় আর রাগী ভাবে ওদের দিকে তাকায়। স্পর্শের এমন তাকানো দেখে ওরা মুখে মেকি হাসি এনে বলে, ‘ প্লিজ এভাবে তাকাস না ভাই ভয় করে। ‘
স্পর্শ রেগে বলছ, ‘ তুই আবার ওই মেয়ের কথা বলছিস। তোদের কথা শুনে আর জীবনে এমন কাজ করবো না এটা আমার শিক্ষা। ‘
ইউসুফ বলল,,’ আমাদের কি দোষ বল দোষ তো তোরই।’
স্পর্শ ভ্রুকুচকে বলে ,,, ‘ কি বলতে চাস? আমার দোষ মানে কি। আমি কি যেসে গিয়ে তোদের বলেছিলাম আমাকে বাজি দে আমি বাজি ধরবো। তোরাই তো আমাকে এসব করাতে বাধ্য করালি। ‘
মাহিন বলল,, ‘ সে তো তোর জন্যই। দেখ স্পর্শ তুই হলি আমাদের চকলেট বয়। এমন কোন মেয়ে দেখেনি যে তোর দিকে হাঁ করে তাকায় নি।সমস্ত মেয়ে এক দেখাতে তোর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে। সবাই একটু কথা বলার জন্য পাগলের মত ঘুরেছে।তুই যেখানে থাকিস সব মেয়েরা তোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। আর এসব আমরা সব সময় দেখে আসি। কিন্তু তুই কোন মেয়েকে পাত্রা দিস না। ভার্সিটির সব মেয়ে তুই বলতে পাগল শুধু মাত্র এই সারা ছাড়া। এই মেয়েটাকে আমরা অনেক বার খেয়াল করেছি যে ভুলেও তোর দিকে তাকায় না। মাথা নিচু করে ক্লাসে ঢুকে আবার মাথা নিচু করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে।তুই ওর সামনে থাকলে ও তোর দিকে তাকায় না মাথা উঁচু করে। এক রকম তোকে এই মেয়ে ছাড়া আর কেউ ইগনোর করে নি এটা আমরা মানতে পারছিলাম না।আবার খুশিও হয়েছিলাম যে একজন পেলাম যে স্পর্শের জন্য পাগল না। তখন আমাদের মাথা এই বুদ্ধি টা আসে তোকে গোটা দেওয়ার আর দিতেও থাকি। আর তুই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাসছিলি এসব শুনে তোর ইগোতে লাগলো কেন সে তোর দিকে তাকাবে না এটা তার অন্যায়। তখন ই তো তোকে বললাম এখানে রাগারাগি না করে ওই মেয়েকে তোর প্রেমে ফালিয়ে দেখা দেখি। তুই একদিন সময় নিয়ে রাজি হয়েছিলি। এতে আমাদের কি দোষ বল।’
স্পর্শ লাগে ফুঁসে ওঠে কিছু বলার আগেই আরমান বলে,,’ তুই সময় নিলি দুদিন যখন এক কথাতে মানাতে পারলি না।আমরা দিলাম তারপর সব তুই একাই করেছিস।শেষ পর্যন্ত তুই জিতলি ওকে প্রেমে পরতে বাধ্য করলি ব্লাকমেইল করে।’
এবার স্পর্শ বলে, ‘ হ্যা সব ঠিক ছিলো কিন্তু মেয়ে আমায় আয় লাভ ইউ বলেছে রাতে এটাই তো কথা ছিলো ভেবেছিলাম ওকে সব জানিয়ে দিবো পরদিন একা একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কিন্তু সেসব করার সুযোগই দিলো না ভার্সিটি এসে সবার সামনে মাঠে আমাকে জরিয়ে আই লাভ ইউ বলে আবার দুদিন ওর পেছনে ঘুরেছি সেটাও বলে। আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করলো ও সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিলো মনে আছে তোদের। আমি স্পর্শ সবার ক্রাশ সে কিনা একটা আনস্মার্ট খ্যেত মেয়ের পেছনে ঘুরেছি তার জন্য হাত কেটেছি ও গড কতোটা রাগ হচ্ছিল ভাবছি পারবি না। ‘
ইউসুফ বলল,,, ‘ তোর সম্মানে লেগেছে বুঝতে পারছি কিন্তু তুই ও খুব খারাপ বিহেব করেছিস ওর সাথে কতো কাঁদছিল দেখেছিস সেদিনের পর আর ওকে ভার্সিটিতে ও দেখি নাই ওর তো কোন দোষ নাই তাই না। ‘
‘তোরা কি বলতে চাস দোষ আমার।’স্পর্শ রেগে বলল
আরমান বুঝলো এখন ঝামেলা হবে।’ এই তোরা চুপ কর তো দেখ কেউ মনে গান গাইছে কি অপূর্ব কন্ঠ চল তো গান শুনে আসি তকবিতর্ক না করে। মনটা ফ্রেশ হবে। ‘
স্পর্শরা সবাই গানের সুর মিলিয়ে সেদিকে গিয়ে দেখলো সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে তার মাঝে থেকে গানের আওয়াজ আসছে।ওরা সেদিকে গেল তারপর দেখলো একটা নীল শাড়ি পরা মেয়ে গান গাইছে চোখ বন্ধ করে।সাইট থেকে মুখ বোঝা যাচ্ছে না।
স্পর্শ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে ও মুগ্ধ হচ্ছে কন্ঠে অপূর্ব কন্ঠ স্বর। মেয়েটার মুখ দেখতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দেয় মেয়েটা লজ্জা লাল হয়ে একটু ঠোট বাঁকিয়ে হেসে পাশ ফিরতেই স্পর্শ মুখটা দেখতে পায় আর থমকে যায়। ও কি ঠিক দেখলো নাকি ভুল বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে যায় সারার মুখ দেখে। আশেপাশে সবাই চলে যায় শুধু কিছু বাঁচ্চা থেকে যায় যারা কিছু বলছে আর সারা তা শুনে খিলখিলিয়ে হাসছে স্পর্শ বিস্মিত হয়ে সারার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখের পলক পরছে না।
.
.
.
সারা পরছে বিপাকে কি করবে বুঝতে পারছে না। ভয়ার্ত চোখে একবার নিজের দিকে ও আশেপাশে খেয়াল করছে। বাচ্চা গুলো খুশি হয়ে একদম গাঁয়ে পরে কথা বলেছে ও না ও করতে পারেনি আর এতেই ওর চরম সবনার্স হয়ে গেছে। বাচ্চা গুলো ওঁর শাড়ির কুচিতে পা দিয়ে শাড়ির কুচি খুলে ফেলেছে।
এখন করবোটা কি ঠিক করবো কিভাবে পেটে কুচি আঁচলের উপর দিয়ে আলতো করে চেপে ধরে আছে যাতে পরে না যায়। এখানে থেকে যাব কি করে?
দু পা পিছিয়ে ছে পেছনে না ঘুরেই আর কারো সাথে ধাক্কা লেগেছে তার বুকের সাথে। চমকে উঠে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে বিষ্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেল।
খানে এসে এর সাথে দেখা হবে ভাবিনি।
#চলবে
লেখা:-#Sinthiya_Sara
(সারার কার সাথে ধাক্কা লেগেছে বলুন তো?)
#প্রেমের_বৃষ্টি💦
#পার্ট_(৫)
আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম লোকটাকে দেখে। বড় বড় চোখ করে বিষ্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছি। এখানে এসে স্পর্শের মুখোমুখি হতে হবে সপ্নেও ভাবিনি। স্পর্শ ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি অবাক হয়ে।
স্পর্শের থেকে দুরে গিয়ে দাঁড়ালাম দ্রুত। হঠাৎ শাড়ির কুচির কথা স্মরণে আসলো তারাতাড়ি অন্যদিকে ঘুরে গেলাম। একেতে স্পর্শকে দেখে কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।যার সামনে না যাওয়ার জন্য এতো দূর এলাম সেই তার সাথেই দেখা হলো। তার উপর শাড়ির এই হাল। আমি কি যে করবো এখন?
স্পর্শ ভ্রুকুচকে আমার কান্ড দেখছে তারপর এগিয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,,, ‘ তুমি এখানে কি করছো? আর এমন অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন?’
প্রতিউওরে আমি নিরব রইলাম স্পর্শের দিকে তাকাতে চাইছি না আবার এমন লজ্জা জনক পরিস্থিতি। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি শুধু।
আমার কাছে উওর না পেয়ে রেগে গেল স্পর্শ, ‘ ইউ আমাকে ইগনোর করছো।’
বলতে বলতে স্পর্শ আমার সামনে চলে এলো আমি আবার পেছনে ফিরলাম। আর তারা তারি হাঁটা দিলাম কুঁচি ধরেই।
স্পর্শ আমার যাওয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
একটু যেতেই ঈশানকে পেলাম ওকে ঠেকে হাঁটতে লাগলাম। শাড়ি পড়ে হাটা কষ্ট হচ্ছে আর জীবনে এই শাড়ি পারবো না।অপরদিকে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে ও পরছে স্পর্শ দেখে নিজের কান্না আটকাতে পারছিলাম না আর একটু থাকলে ওর সামনেই কেঁদে দিতাম।গাড়ি নেওয়ার কথা ভুলে গেছি হেঁটে ই যাচ্ছি।
ঈশানের কথায় বুঝলাম,
-আন্টি আমার পা ব্যাথা করছে?
ক্লান্ত মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।ওর দিকে তাকিয়ে ভেতরটা হু হু করে উঠলো নিজের কষ্ট নিয়ে ভাবতে গিয়ে এই বাচ্চাটা কে কষ্ট দিলাম।আপুর বাসা থেকে পার্ক খুব দূরে না কাছেই তবুও অনেকটা হেটে যায় না রিকশা আছে।
-সরি সোনা আমার মনেই ছিলো না।
তারপর রিকশায় জন্য দাঁড়ালাম কিন্তু পাচ্ছি না। বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছি রাস্তায় দিকে হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে আমাদের সামনে থামে একদম গা ঘেষে ভয়ে ঈশানকে নিয়ে পিছিয়ে যায়।
রাগে গজগজ করতে করতে জানালায় ঠোকা দিলাম কোন হনুমান এমন করলো একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হয় নি।
জানালা খুলতেই চেনা মুখ ভেসে উঠলো।
এই তো সেই লোক সেদিন আমাকে বাঁচিয়েছিলো।
বকতে এসে সারা থ মেরে গেছি। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধর দিকে সেম একই ঘটনা মুগ্ধর ও সারা কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মুগ্ধ বিষ্ময় কাটিয়ে বলল,,,’ আরে তুমি সিনথিয়া?
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম।
মুগ্ধ গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। তারপর একবার সারাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করলো। নীল শাড়িতে অপ্সরা লাগছে মুগ্ধর কাছে। কিন্তু সন্দেহ ও হচ্ছে সারা কাচুমাচু মুখ দেখে।
মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,, ‘এনি প্রবলেম?’
কি বলবো বুঝতে পারছি না লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
মুগ্ধ নিজে থেকেই বললো,,, ‘ আমি মনে হয় তোর প্রবলেমটা বুঝতে পারছি।’
বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম উনার কথা শুনে। বড় বড় চোখ করে তাকালাম উনার দিকে।
উনি তাকালো না জানালায় ঠোকা দিয়ে ড্রাইভার কে কি যেন বলল তারপর আমার কাছে এসে বলল,,
‘ গাড়ি ফাঁকা আছে আপনি শাড়ি ঠিক করে নিতে পারেন যদি চান। ‘
ঈশান আমার এক হাত ধরে ছিলো ও গোল গোল চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছে।উনি আমাকে কথাটা বলেই ঈশান কে কাছে ডিকলো কিন্তু ঈশান গেল না। অপরিচিত কারো কাছে ও যায় না।
আমি ঈশানকে বললাম,,’ ঈশান যাও কথা বলো না হলে তো তোমাকে অভদ্র বলবে।’
আমার কথায় ঈশান একবার আমার দিকে ও একবার উনার দিকে থাকি তার কাছে গেল। আমি দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে কুচির পিন খুলে কোন রকম ঠিক করে আবার পিন করে নিলাম।উফ এই লোকটা আমাকে দুইবার সাহায্য করলো একটা ধন্যবাদ দিতেই হবে।
স্বস্থির নিংশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম এসে দেখি ঈশানের হাতে আইসক্রিম। আইসক্রিম খাচ্ছে আর হেসে হেসে উনার সাথে কথা বলছে একটু আগে লোকটাকে চিনতো না কাছে যেতে চাইছিলো না আর এখন এমন ভাবে আছে কেউ বলবেই না এদের একটু আগে দেখা হয়েছে।
কাজ শেষ। উনার কথায় আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটলো উনার দিকে তাকিয়ে হ্যা বললাম।
ঈশান আমার হাত ধরে দাঁড়ালো।
উনি জিগ্গেস করলেন,,’ কোথায় গেছিলেন এমন সেজে গুজে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে নাকি। ‘
আমি বিস্মিত হলাম উনার কথায় তাঁর পর একটু গম্ভীর হয়ে বললাম,,’ আমার বয়ফ্রেন্ড নাই।’
আমার কথা শুনে উনি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো তারপর বলল,,’ ওইদিন না বললেন…
আমি মাঝে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,’বয়ফ্রেন্ড হওয়ার আগেই যদি সে আমাকে অস্বীকার করে তাকে কি বয়ফ্রেন্ড বলা যায়।’
উনি বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে বললো, ‘ মানে।’
আমি শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে বললাম, ‘ কিছু না। আসি।’
উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটা দিলাম ঈশানের হাত ধরে। কিছু দূরে গিয়ে আবার পেছনে ফিরলাম দেখি উনি ওইভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার উনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে আমি একদম উনার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ ধন্যবাদ।’বলেই মুচকি হাসলাম।
উনি বুঝতে না পেরে বললো, ‘ কেন?’
আমি বললাম,’ দুইদিন সাহায্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।’
আর দাঁড়ালাম না চলে এলাম।
দূরে দাঁড়িয়ে একজন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে সে না চাইতেও রেগে আগুন হয়ে গেছে।এতো রাগ কেন লাগছে আমার ওর যার সাথে ইচ্ছা মিশুক আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু আমার এতো রাগ লাগছে কেন রাগে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।
‘কিরে এমন কটমট করে তাকিয়ে কি দেখছিস।’
ইউসুফের কথায় স্পর্শ সারাদের থেকে তো সরিয়ে ওদের দিকে তাকায়।
‘এতো রেগে আছিস কেন? কি হয়েছে?’
স্পর্শ বলল,, ‘কিছু না চল।
-চল মানে তোর পেন্ডিং তো শেষ হয় নাই।
-শেষ করবো না।
ওরা কেউ স্পর্শের মতি গতি কিছুই বুঝতে পারে না। স্পর্শের অনেক রাগ এখন ও রেগে আছে তাই কথা না বাড়ানোই ভালো।
বাসায় আসতে আসতে স্পর্শের অনেক রাত হয়।আজকে স্পর্শের মনটা খুব খারাপ লাগছে।ডিংকের পরিমান বেশি হয়ে গেছে ওইভাবেই ঢোলতে ঢোলতে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
ওকে দেখার মতো কেউ নেই। ধনী বাবার ছেলে হবার সুবাদে টাকা পয়সার অভাব নাই কিন্তু অভাব ভালোবাসার। স্পর্শের মা ওর পাঁচ বছর থাকতে মারা গেছে। তার পর থেকে স্পর্শ অবহেলা অযত্নে একা নিঃসঙ্গ বড় হয়েছে।বাবা নতুন বিয়ে করে সে স্পর্শকে প্রথমে সহ্য করতে পারলেও ওর সতভাই হবার পর আর দেখতে পারে না। ভালোবাসে না।
বাবা নিজের বিজনেস নিয়ে পরে থেকেছে টাকার অভাব পড়ে নাই। কখন ও পরেছে ভালোবাসার কতো রাত জ্বর হয়েছে স্পর্শ কষ্ট কাতরাচ্ছে কিন্তু দেখার মতো কেউ নাই। অন্ধকার ঘরে একা ভয়ে চিৎকার করেছে কাউকে পাশে পায়নি। হাত কেটে গেছে খেলতে গিয়ে খাবার সময় সতমা তার ছেলে মেয়েকে যত্ন করে খাইয়ে দিয়েছেন আর ও অসহায় মুখ করে তাকিয়ে দেখেছে।
একদিন হুট করে বাবা স্পর্শকে হোস্টেল দিয়ে এলো।ও একটু মেরে চায়নি কিন্তু বাবা জোর করে দিয়ে এলো। এর পর থেকে বাসা থেকে দূরে একা থেকে ছে মাসে মাসে ব্যান্ডেল ভর্তি টাকা পাঠিয়েছে কিন্তু দেখতে যায় নি। ভার্সিটিতে ভর্তির পর থেকে বাসায় থাকে ও তবুও সব সময় না। আলাদা একটা বাসা ও আছে ওর মা ওর বাবা ওকে দিয়েছে। সেখানে থাকে বেশি মাঝে মাঝে আবার এখানে আসে ছোট বোন আহানার জন্য ও সত হলেও আমাকে আপন বোনের মতো ভালোবাসে।সপ্তাহে দুই দিন বাসায় থাকে বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার।আজ বৃহস্পতিবার। আর ওর যখন কষ্ট হয় তখন ডিংস্ক করে।
মাঝে রাতে স্পর্শ চিৎকার করে ওঠে বসে।ওর সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। কপালের ঘাম মুছে ভাবে কি দেখলাম এসব আমি।
স্পর্শ সপ্নে দেখেছে সারা ওর সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর বলছে কে আমাকে ঠকালে আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম আর তুমি আমার অনুভূতি নিয়ে খেললে।
কাঁদতে কাঁদতে বলছিল। অনেক কাঁদছিল সারা একদম নাক মুখ লাল করে কাঁদছিল।
আচ্ছা বাস্তবেও কি সারা এতোটাই কষ্ট পেয়েছে আমার জন্য।
চিন্তা করতে লাগল স্পর্শ।
#চলবে
লেখা:-#Sinthiya_Sara
(ধাক্কা টা তো স্পর্শের সাথে লাগলো তা এটা দেখার পর সবার কেমন লাগছে।)
#প্রেমের_বৃষ্টি💦
#পার্ট_(৬)
ঘড়িতে সময় সাড়ে সাড়ে চারটা বাজে সকাল হয়ে এসেছে।স্পর্শ আর ঘুমাতে পারল না ওইভাবে উঠে বসে হালকা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় থ মেরে বসে রইল। বারবার স্বপ্নটার কথা মনে পরছে আর কালকে শাড়ি পরা মায়াবী মুখটা বারবার চোখের সামনে ভাসছে স্পর্শের ও চোখ বন্ধ কিছুক্ষণ বসে আমার রুমে চলে এলো।মাথাটা চাপ ধরা ব্যাথা হয়ে আছে কালকে ড্রিংকস বেশি করা হয়েছে। পেটে খিদের দেখা যাচ্ছে দুপুর থেকে কিছু খাওয়া হয়নাই। মাহিনরা বারবার বলেছিল খাবার জন্য কিন্তু আমি খাই নাই।
উঠে এলোমেলো পায়ে স্পর্শ রুম থেকে বেরিয়ে এলো তারপর কিচেনে গেল খাবার বলতে কিছুই নাই। ফ্রিজ খুলে একটু গোশতের ঝোল পেলাম এ ছাড়া আর কিছুই নাই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্পর্শ। সবাই জানে আজকে আমি আমি আসবো তবুও কেউ খাবার রাখে নাই। আহানা তো এমন করে না ও তৌ আমার জন্য জেগে বসে থেকে আমি না আসা পর্যন্ত কিন্তু আজকে। স্পর্শ প্লিজ একটা মিষ্টি পেল সেখান থেকে একটা মিস্টি বের করে খেয়ে পানি খেয়ে আহানার রুমের দিকে যেতে লাগলো।
ও ঠিক আছে তো এক সপ্তাহ আমার ওর সাথে কথা বলা হয় নাই।
দ্রুত পায়ে আহানার রুমের কাছে গেল দরজা খুলে দিল। ধীর পায়ে প্রবেশ করল দেখল আহানা বিছানায় শুয়ে আছে। কি মনে করে যেন ওনার মাথায় হাত রাখতেই চমকে উঠলো স্পর্শ কারন আহানার শরীর প্রচন্ড গরম তারাতাড়ি সুইচ অন করলো। দেখলো আহানা নিশ্চুপ ভাবে শুয়ে আছে ওর মুখটা লাল হয়ে। ওকি অসুস্থ মুখটা শুকনো লাগছে। আবার হাত দিয়ে দেখলাম খুব গরম তাহলে কি জ্বর হয়েছে ধীরগতিতে আহানাকে ডাকলো। ভাইয়ের ডাকে আহানা চোখ মেলে তাকাল ক্লান্তি ভরা চোখ দুটো।
ভাইকে দেখে একটা প্রশান্তির হাসি দিল শুকনো মুখ নিয়েই।
তারপর আস্তে আস্তে বলল, ‘ভাই তুমি কখন এসেছ তোমাকে কত মিস করছিলাম জানো।’
স্পর্শক ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,’ হয়েছে তুই অসুস্থ আমাকে বলিস নি কেন আগে?’
নিপলল ভাবি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘জানালে কি হতো?আমি অসুস্থ আমি কি তোমাকে যেচে গিয়ে খবর দেবো তুমি আসতে পারলেন আমাকে দেখতে একা খবর দিতে হবে কেন?’
‘এটা কেমন কথা আহানা।আমি জানব কিভাবে যদি তুই না বলিস।’
‘সেটা তোমার ব্যাপার আমি কেন বলতে যাবো এই জন্যই তো তোমাকে বাড়িতে থাকতে বলি। কিন্তু তুমি তো তাতে রাজি হবে না নিজে একা একা বাসায় পড়ে থাকো। আমাকে নিয়ে যেতে বললাম তাও তো নিয়ে যাবে না।’অভিমানী মুখ করে বলল।
‘একেতে অসুস্থ হয়েছিস আমাকে জানাসনি আবার এত কথা বলছিস তুই জানিস আমি এখানে কখনোই থাকবো না। অসুস্থ কবে থেকে সেটা বল।’গম্ভীর হয়ে বলল।
ক্লান্ত মুখ করে বলল, ‘কালকে থেকে।’
চিন্তিত হয়ে,’ডাক্তার দেখিয়েছিস।’
‘হ্যাঁ আজকে ও এসেছিল।’
‘তুমি কখন এসেছ খাবার খেয়েছো?’
‘আমি অনেকক্ষণ এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এখন আবার জাগানা পেয়ে তার কথা মনে পড়লো।’
‘ও খাবার খেয়েছ তো।’
এখন যদি আহানাকে বলে যে ও খাবার খেয়ে নি তাহলে অনেক চিন্তা করবে এমন ও হবে উঠে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে তার থেকে খেয়েছি বললেই ভালো হবে।
‘হ্যাঁ আমি খেয়েছি তুই চিন্তা করিসনা ঘুমা মেডিসিন নিয়েছিস?’
‘হ্যাঁ মা খাইয়ে দিয়ে গেছে।’
‘আচ্ছা তাহলে ঘুমা সকালে কথা হবে।’
বলে স্পর্শ উঠে লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। খিদে পেট জ্বালাপোড়া করছে একটা মিষ্টি খেলে কি পেট ভরে। রুমে এসে ওভাবে শুয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসছে না।
বাসায় আসলাম দুইদিন আপুর বাসায় থেকে। এই 2 দিন আর আপুর বাসা থেকে আর বের হই নাই বের হলেই মনে হয়েছে স্পর্শ সাথে দেখা হবে। এজন্য একপ্রকার ঘরে বন্দী হয়ে গেছিলাম। আপু বার বার বলেছে যা বের হয়ে ঘুরে আয়। কিন্তু আমার এক কথা আমি কোথাও যাবো না। আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাছে থেকে চলে গেছে। আর কতবার জিজ্ঞেস করেছিএ যে কি হয়েছে তোর কি হয়েছে? এমন মনমরা হয়ে থাকিস কেন কোন প্রবলেম?
আপু বার বার বলেছে কোন সমস্যা থাকলে আমার সাথে শেয়ার কর ভাল লাগবে তাও এভাবে মন মরা হয়ে থাকিস না।
আমি বলেছি না আসু আমার কিছু হয় নাই। তুমি এত টেনশন করো না। আমার এত বেড়াতে ভালো লাগেনা তুমি জানোই। আমি একটু বেশি ঘরে থাকি।
তখন আপু বলতো হ্যাঁ জানি কিন্তু কখনো এভাবে মনমরা হয়ে থাকতে দেখি নাই। চুপ থাকতে কিন্তু হাসি-খুশি থাকতি। কিন্তু এখন তোকে আমি হাসি দেখতে পাই না।
কিছু হয় নাই তুমি অযথা টেনশন করছো ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে আমি একটু চিন্তিত।তাই ভাবে চুপচাপ থাকি তুমি তো জানো আমি পড়ালেখা নিয়ে কতটা সিরিয়াস যদি খারাপ হয় তাহলে খুব কষ্ট পাব এই আর কি।
হ্যাঁ জানি এত চিন্তা করিস না তুই খুব ভালো রেজাল্ট করবি দেখিস।
বাসায় আসার পর আমার ছোট বোন দের কাছ থেকেও আমার এটা শুনতে হচ্ছে সবাইকে ইগনোর চলছি।আবার টেনসনে পড়লাম ভার্সিটিতে যাওয়া নিয়ে। এখন তো ভার্সিটিতে যেতেই হবে কিন্তু কিভাবে যাব সবার মুখোমুখি আমি কিভাবে হবো সেদিন তো ভার্সিটি শুদ্ধ সবাই দেখেছে শুধু স্যার ম্যামরা ছাড়া।সবার সামনে আমি এই মুহূর্তে কিভাবে কিন্তু না গিয়ে উপায় নাই এক্সাম তো দিতেই হবে। ক্লাসে প্রতিদিন নুটস দিয়ে দেয় সেগুলো তো আমাকে নিতে হবে নিপার কাছ থেকে এই কয়েকদিনের নোটস নিতে হবে।
ভার্সিটিতে গেলে আবার স্পর্শের মুখোমুখি হতে পারি কিন্তু আমি ওর মুখোমুখি হতে চায় না।
কি করবো আমি সারারাত ভোর ঘুম হলো না আমার টেনশন টেনসনে মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে সকালে উঠে চোখ মেলে তাকাতে পারছিনা। ব্যথায় মাথাটা মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
‘আপু তোমাকে এমন লাগছে কেন দেখতে মনে হচ্ছে তুমি অসুস্থ?’
সানজিদার প্রশ্নে ক্লান্ত মুখ নিয়ে ওর দিকে তাকালাম মেয়েটা আমার দিকে গোল গোল করে তাকিয়ে আছে। উত্তরের আশায়,
আমি বললাম, ‘কিছু হয় নাই মা কি করে রে?’
সানজিদা বলল, ‘মা রান্না করতেছে। তোমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে চোখটা কি লাল হয়ে আছে।’
‘ও কিছু না রাতে ঘুম কম হয়েছে তো তাই।’
‘আচ্ছা।’
ভার্সিটি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।সবার দিকে তাকিয়ে লজ্জার মাথা নুয়য়ে নিলাম। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলাম গন্তব্য স্থানে।আমি জানি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে কখনো আমি মাথা উঁচু করে হাঁটি না আশেপাশে আমি তাকাই না কিন্তু আজকে আমার তাকিয়ে সবার মুখটা একবার দেখতে ইচ্ছে করছে সবাই কি আমার দিকে ঘৃনার নজরে তাকিয়ে আছে দেখলে কি সবাই আমাকে নিয়ে উপহাস করবে সেই চিন্তায় মাথাটা খারাপ হয়ে আসছে চোখ দিয়ে জল পরছে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাকে পড়তে হবে কখনও কল্পনা করিনি।
হাঁটতে হাঁটতে নিজের ক্লাসরুমে চলে এলাম।
কিন্তু অদ্ভুত কেউ আমাকে নিয়ে বাজে কোন কথা বলছে না শুধু অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে হায়তে কেউ ভাবে নাই আমি এত কিছুর পর আর ভার্সিটিতে আসবো।
চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে যে সিটে ফাঁকা পেলাম বসে পড়লাম।
নিপা আজকে আসলো না। আর ভয়ে ভয়ে রইলাম যে কখন এসে আমাকে নিয়ে উপহাস শুরু করে কিন্তু এমন কিছু ঘটনা না স্যার ম্যাম রা এসে বলল এই কয়দিন কেন আসি নাই। অসুস্থতার অজুহাত দিলাম।
ক্লাস করে বের হয়ে এলাম কিন্তু স্পর্শকের নজরে পড়ল না।
এক সপ্তাহ যাবত স্পর্শ আমি দেখি নাই মানে সামনে পরে নাই। প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে থেকেছি এই বুঝি স্পর্শ সামনে চলে আসবে। তখন কিভাবে ওর সামনে নিজেকে ফ্রেস করবো কি পরে নি তাই কিছুটা স্বস্তি।
নিপার সাথে আজকে ক্লাস শেষে লাইব্রেরী তে এলাম এখানে এসে স্পর্শের মুখোমুখি হলাম।
স্পর্শকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো।মাথা নিচু করে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি।
স্পর্শ ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তারপর আমার সামনে এসে দাড়ালো আমি তারাতাড়ি পেছনে ঘুরে চলে আসতে নিলাম। এক সেকেন্ডে ও আমি স্পর্শের সামনে থাকতে চাই না।
অশ্রু লুকানোর চেষ্টা দেখে ফেলে তাহলে ভাববে আমি আর ও উপর দুর্বল। দুর্বলতা আমি দেখাতে চাই না। স্পর্শকে তো কিছুতেই না।
কিন্তু অদ্ভুত পেছনদিকে স্পর্শ আমার হাতটি ধরেছে। স্পর্শ ছোঁয়া পেয়ে আমি থমকে গেলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে করে উঠল।
থ মেরে আমি দাঁড়িয়ে আছি নরার শক্তিটুকু পাচ্ছিনা।
‘শোনো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
স্পর্শের কথা শুনে আমি অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম।
স্পর্শের আমার সাথে কথা আছে কি কথাআছে আর কি বা কথা থাকতে পারে ওর আমার সাথে।
#চলবে
লেখা:- #sinthiya_sara
(স্পর্শ সারাকে কি বলবে বলুনতো।)