প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ৭

#প্রেমের_বৃষ্টি💦
#পার্ট_(৭)

স্পর্শ কি কথা বলবে আমাকে আমি ওর কথা কথা শুনতে চাই না।কিছুই না হঠাৎ আমার শরীরে খুব শক্ত চলে না আমি ছিটকে স্পর্শের হাত আমার হাত থেকে সরিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে এলাম।
আমার সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে রাগে-দুঃখেএকদিকে স্পর্শের অনুভূতি একটা আলাদা অনুভুতি আরেকদিকে অর প্রতারণা
মনে পড়ে একদিকে কষ্ট আরেক দিকে রাগ লাগছে।
মনে মনে শপথ করে নিলাম আর জীবনে লাইব্রেরীতে যাবো না ওইখানে গেলে স্পর্শিয়া মুখোমুখি হতে হবে জানলে কখনই ওখানে যেতাম না।

এদিকে স্পর্শ স্তব্ধ হয়ে সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সোজা ক্লাসরুমে গিয়ে বসে পড়লাম। কেন যে লাইব্রেরীতে যেতে গেলাম। এভাবে সময় যেতে লাগল মাঝে মাঝে স্পর্শের সামনাসামনি হয়ে যেতাম।
তখন খুব কষ্ট হতো তারপর আস্তে আস্তে কষ্টে লাগাতে চলে গেল আর ওর উপরদিকে সমস্ত ফিলিংস। এখন আর স্পর্শ দেখলে আমার কষ্ট হয়না কিন্তু রাগ লাগে আমার সাথে যা ঘটেছিল তা নিয়ে। তা নিয়ে কোন ভ্রক্ষেপ করিনা স্পর্শের সাথে কোন রকম কথা বলি না এক প্রকার ইগনোর করে চলি।স্পর্শক প্রথম প্রথম আমাকে দেখলে কিছু একটা বলতে চাইতো কিন্তু আমি শুনতাম না আসলে আমার সোনার মতো ইচ্ছে জাগে নাই।

দেখতে দেখতছ তিন মাস চলে গিয়েছে আর আমি ফার্স্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি। আর এইবার আমি ফার্স্ট ইয়ারে ফার্স্ট হয়েছি। এটা নিয়ে তো স্যার ম্যাডামরা খুবই খুশি তারা আগে থেকেই ভেবেছিলো এমন একটা রেজাল্ট করবো।কিন্তু স্টুডেন্টরা খুশি না ওরা তো আমার এই রেজাল্ট দেখে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।

পুরানো কষ্ট সমাপ্ত রেখে আবার আমি লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে জীবন নিয়ে।কোন একটা ছেলেকে নিয়ে যাও আমার কষ্ট হচ্ছিল এটা আমি ভুলে যাচ্ছি একসময় তা ভুলে একেবারৈ যাবো এটা আমার বিশ্বাস।

আজকে ফার্স্ট ইয়ারে নবীনবরণ তাই সেকেন্ড ইয়ার থেকে পাঁচজন, থার্ড ইয়ারে থেকে পাঁচজন ,ফাইনাল ইয়ারে থেকে পাঁচজন মোট পনেরো জন নিয়েছে অনুষ্ঠানের জন্য।
এখানে মোট আটজন মেয়ে নয়জন ছেলে।আমি বরাবরই এইসব কাজে অংশগ্রহণ করি না বা অনুষ্ঠানে আমি কখনো অংশগ্রহণ করিনা অনুষ্ঠানে আসি আর যাই কখনো পার্টি সেভ করি না এসব আমার দক্ষতা খুবই কম। আমি কোনমতেই পার্টি সেভ করতে চাইছিলাম না এসব কাজে কিন্তু ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হিসেবে স্যার ম্যামরা একপ্রকার জোর করে আমার নাম দিয়েছে।এখন আমাকে তাদের সাহায্য করতেই হবে কিছু করার নাই না হলে স্যার ম্যাডামদের অপমান করা হবে তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হয়েছি। অনুষ্ঠান টা খুব বড় করে করা হবে একজন বিশেষ অতিথি আছে তার জন্য এত আয়োজন। তাই আমাদের সমস্ত কাজ গ্রপ সুষ্ঠু ও নিপুন ভাবে করতে হবে।
আজকে আমাদের কাজের ফাস্ট দিন তিন দিন আগে থেকে সব কাজ শুরু করা হয়েছে। আজকে মঙ্গলবারে শুক্রবার এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
নিপার নাম দেওয়া হয়েছে তাই কিছুটা স্বস্তি। এখন দুজন থাকবো ভালো লাগবে।

ক্লাস শেষ করে আজকে যাওয়া হবে না কারণ বিকেলে কিছু কাজ করে যেতে হবে। ক্যান্টিনে আসলাম কিছু খাওয়ার জন্য আমি আর নিপা মুখোমুখি বসে আছি এর মাঝে প্রবেশ করল স্পর্শরা।
তাদের দেখি এক নজর আমার চোখ তাদে দিকে পড়লপাখি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে খাওয়া মন দিলাম খেয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম শান্তি এখনো ওর সামনে আমি পড়তে চাই না আমার কেমন যেন অস্বস্তি হয় রাগ হয়।
প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে এখানে আমাদের কোন কাজ নাই কারণ প্যান্ডেল সাজানো লোক এসেছে তারাই প্যানেল বানাচ্ছে বাঁশ কাঠ দিয়।
আমাদের কিছু করতে হচ্ছে না শুধু দেখছি দুই-একজন একটা দুটো জিনিসে গিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু আমার কিছু করতে হচ্ছে না এখানে এসে সেও অসুস্থিতে পড়তে হচ্ছে স্পর্শকে দেখলে এখন আমার কোন অনুভূতি হয় না কিন্তু অসুস্থি হয়।আর এখন এই তিনদিনই স্পর্শের সাথী থাকতে হবে কি মুশকিল। কারণে স্পর্শ ও একাজে যোগ দিয়েছে।
কিছু করার নেই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হবে।

একটা ছোট বাঁশের খন্ড চাইলো সেটা আনতে আমি দৌড় দিলাম সাথে স্পর্শ ও দিয়েছে দুজনে একসাথে একই জায়গায় ধরতেই নিজেদের হাতে পাঁচ পরলো চমকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।স্পর্শ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি ঘুরে নিপার কাছে চলে এলাম।
নিপা ও এখন স্পর্শকে দেখতে পারেনা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকে।

পরদিন আজকে প্যান্ডেলে কাপড় দেওয়া হচ্ছে সেগুলো আমরা করছি রঙীন কাপড় দিয়ে সবাই বাইরে করছে আমি একা ভেতরে মানে উপরে করছিলাম হঠাৎ স্পর্শ সেখানে আসে আর আমার কাছে এসে দাঁড়ায়। তারপর আচমকা আমার হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে আসে। আমি ছটফট করছি হাত ছারাতে পারছি না স্পর্শ টেনে আমাকে ক্লাসে এনে দরজা আটকে দেয়। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে।

আপ–নি আমাকে এখানে কেন এনেছেন? তোতলাতে তোতলাতে বললাম। ভয়ে কথা বলতে পারছি না স্পর্শ আমার উওর না দিয়ে আমার দিকে এগুতে লাগে ভয়ে আমি পিছিয়ে যায়। পিছাতে পিছাতে দেওয়ালের সাথে আটকে যায় ভয়ার্ত চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি স্পর্শ একদম আমার কাছে এসে গা ঘেষে দাড়ায়।
ক—কি করছে–ন কি?
আচমকা স্পর্শ আমার আমার ঠোট নিজের হাত দিয়ে আমার কথা থামিয়ে দেয়। স্পর্শের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠি,
ইসসসস,,, স্পর্শ কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভয়ে আমার হৃৎপিণ্ড কাঁপছে কি করবে স্পর্শ আমার সাথে এখানে এভাবে আমি হাত বাড়িয়ে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিতে গেলে স্পর্শ আমার দুই হাত ধরে ফেলে।
‘আমাকে কষ্ট দিয়ে তো খুব শান্তিতে আছো দেখছি।’
নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
‘ কি বলছেন কি আপনি। ছারুন আমাকে।’
ছারানোর চেষ্টা করতে করতে।
‘কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো। তোমাকে অপমান করেছিলাম বলে তার জন্য সরি আমি এ্যাম সরি সারা। তার জন্য আমি অনুতপ্ত আমার উচিত হয়নি তোমার সাথে ওমনি করা। কিন্তু এখন আমি সত্যি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি পাগলের মতো। কি করে তোমার মায়ায় জড়িয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি। তুমি জানো তোমার আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া ইগনোর করা আমাকে কতো কষ্ট দেয়। তোমার জন্য আমি ঘুমাতে পারিনা। খেতে পারিনা।সব সময় তোমার মুখটা মনে পরে। আই রিয়েলি লাভ ইউ সারা আমাকে ভালোবাসো প্লিজ। তোমার অবহেলা সহ্য করতে পারছিনা।’

গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা গুলো বলল স্পর্শ। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি স্পর্শের দিকে হঠাৎ সেদিন আমাকে গাইয়া আনস্মার্ট বলেছিল সেগুলো মনে পড়ে গেল।সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম উনাকে তারপর চিৎকার করে বললাম,,
‘ কি বললেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন হাহাহা এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে আচ্ছা আপনার কি আমাকে মাথামোটা মনে হয়। তখন ইচ্ছে হাত কেটে বলবেন ভালোবাসি বিশ্বাস করবো আবার সবার সামনে অপমানিত করে বলবেন আমি আনস্মার্ট খ্যেত আমার মতো মেয়ে আপনাকে ভালোবাসি বললে আপনার সম্মান চলে যাবে তারপর একদিন এসে জোর ধরে দরজা বন্ধ করে বলবে সরি ভুল করেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আমি নির্লজ্জের মত আপনার সমস্ত অপরাধ মাপ করে ভালোবাসি বলে মেনে নেব অসম্ভব। আমি এতো দয়ার সাগর না যে আপনি সরি বললেই ক্ষমা করে দেব সব ভুলে আমি আপনাকে কখনো কোনদিন ও ক্ষমা করবো না।’

বলেই স্পর্শকে পাশকাটিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
স্পর্শ থমকে দাঁড়িয়ে র‌ইলো সেখানেই।

পরের দিনটাও চলে গেল।
আজকে অনুষ্ঠান। আমরা মেয়েরা যারা কাজ করেছি তাদের বিশেষ অতিথিকে স্বাগতম জানাতে হবে ফুল দিয়ে।তাই শাড়ি পরতে হবে সবাইকে লাল শাড়ি পরতে বলেছে।

সব মানলাম এখন শাড়ি ও পরতেই হবে মনে মনে ভয়ে আছি। শাড়িটা যেন খুলে না যায়।
রেডি হয়ে দশটায় চলে এলাম। মাঠে এসে চারপাশ মুগ্ধ হয়ে দেখছি কি সুন্দর হয়েছে। নিপা এখন ও আসে নাই। আমি এগিয়ে স্টেজের কাছে গেলাম হঠাৎ কোথা থেকে স্পর্শ এসে হাজি সে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইগনোর করে চলে যেতে নিতেই স্পর্শ আমার হাত ধরে নিলো।

কি করছেন হাত ছারুন? হাত ছুটানোর চেষ্টা করে।
স্পর্শ ছারশো না একটা কোনায় নিয়ে ছারলো।
এভাবে শাড়ি পরেছো কেন?
অবলিলায় বলল,,
মানে ,
কোমর দেখি যাচ্ছে শাড়ির আঁচল ছেড়ে দাও।
কিহ।
বলেই দেখি সত্যি।তারাতাড়ি ঠেকে নিলাম ছারলাম না।
‘একদম আমার কাছে গেসার চেষ্টা করবেন না আমি আপনার ঘৃণা করি।’
‘কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর তুমি বাসো আমি জানি কিন্তু রাগে সিকার করছো না। কিন্তু বেশিদিন এই রাগ থাকবে না। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু আমি তোমাকে কখনো শাড়ি পরিয়ে বাইরের নিয়ে যাবনা।’
“কখন আমি আপনার মতো প্রতারক কে ভালোবাসবো না।’
স্পর্শ বলল, ভাসবে।
‘কখনো না।’

বলেই চলে এলাম।
#চলবে

লেখা:-#Sinthiya_Sara

(আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন? গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here