#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২১
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রাহেলা খাতুন কেয়া তাকে অবাকের চড়ম শিখরে পৌছে গেছে রাহেলা খাতুন বললেন,
~আমাকে ভিতরে আসতে দিবে না?
রাহেলা খাতুনের কথা শুনে কেয়ার ধ্যান ভাঙ্গলো দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে বললো,
~আসুন।
রাহেলা খাতুন বাসায় প্রবেশ করে কেয়া বললো,
~আপনি বসুন।
রাহেলা খাতুন মুখে মলিন হাসি টেনে বললেন,
~তানভীরকে না জানিয়ে এসে পরেছি আসলে ও ঘুমিয়ে আছে তাই।
কেয়া বললো,
~উনি তো টেনশন করবেন আচ্ছা আমি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।
তখনই ইরিনা বেগম সেখানে উপস্থিত হয়ে রাহেলা খাতুনকে দেখে একবার কেয়ার দিকে তাকালেন। কেয়া তার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝালো সে এসব কিছুই জানেনা।ইরিনা বেগম নিজ দৃষ্টি ইরিনা বেগমের দিকে করে সালাম দিয়ে বললেন,
~আপা এতো সকালে আমাদের বাসায়?
রাহেলা খাতুন একটু অস্বস্তি প্রকাশ করে আমতা আমতা করে বললেন,
~আসলে অনেক কথা আছে কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো তা বুঝতে পারছিনা।
ইরিনা বেগম এগিয়ে গিয়ে রাহেলা খাতুনের পাশে বসে বললেন,
~আপা সহজ ভাবে আমাকে বুঝিয়ে বলুন আমি বুঝবো।
রাহেলা খাতুন ইরিনা বেগমের হাত ধরে বললেন,
~আমি জানি গতকাল যেটা করেছি সেটার ক্ষমা চাওয়ার মুখ হয়তো আমার নেই।আমি শুধু আপনাদের না তানভীর আর কেয়া মনেও অনেক কষ্ট দিয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস করুন এতোটা করুন কখনো আমি ছিলাম না কিছুদিন যাবত মাথার ভিতর এসব উল্টাপাল্টা জিনিস ঘুরছিলো বিশেষ করে তানভীর যখন আপনাদের গুনগান করতো তখন বেশি খারাপ লাগতো।এসব বিষয় নিয়ে আমার আলাপ শুরু পাশের বাসার ভাবির সাথে সে আমাকে ঠান্ডা করার বদলে আরো আগুন ভরে দিতো তাই গতকাল এসব বলে দিয়েছি।
ইরিনা বেগম রাহেলা খাতুনের হাতে হাত রেখে বললেন,
~আপা,আপনি যদি বাহিরের মানুষের সাথে এসব কথা না বলে কেয়ার সাথে আলোচনা করতেন বা তানভীরকেই জানাতেন তাহলে আর এসব হতো না।আমাদের জীবনে অনেক কষ্টের সময় পার হয় সেগুলো একজন বাহিরের মানুষদের সাথে না বলে আপন মানুষদের সাথে বলতে হয় কারণ পর কোনোদিন আপন হয়না।তানভীর আপনাকে অনেক ভালোবাসে যদি একবাট ওকে বলতেন তাহলে হয়তো এসব হতো না।
রাহেলা খাতুন মাথানিচু করে কথাগুলো শুনছেন আসলেই সে যদি একটু সচেতন হতো তাহলে এসব হতো না নিজ পরিবারেরে সাথে তিনি এতো খারাপ করেছেন তাও পরের জন্য এটা ভাবতেই তার লজ্জা লাগছে।ইরিনা বেগম কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~কেয়া,টেবিলে নাস্তা দেও আর তানভীরকে ফোন করে বলো আপা কয়েকটাদিন এখানেই থাকবে।
কেয়া বললো,
~আচ্ছা মা।
বলেই সে রুমে চলে আসলো ফোন নিয়ে তানভীরকে ফোন করতেই তানভীর ফোন রিসিভ করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
~মা কে পাওয়া যাচ্ছেনা কেয়া?
কেয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
~মা আমাদের বাসায় আর কয়েকটাদিন এখানেই থাকবেন।
তানভীর ভ্রুকুচকে বললো,
~আমার কান হয়তো খারাপ হয়ে গেছে ঠিক শুনতে পাচ্ছিনা।
কেয়া বললো,
~আপনার কান একদম ঠিক আছে আপনি এই বাসায় চলে আসেন।
বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো কেয়া আর তানভীর ফোন হাতে নিয়ে এখনো অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
___♥____
হেমন্তি নাস্তা তৈরি করে হিয়া,ফারুক আর ইলহামকে টেবিলে আসতে বললো।সবাই টেবিলে বসে নাস্তা করছে হিয়া পরোটা ছিড়তে ছিড়তে বললো,
~ইলহাম,গ্রামের বাড়ি একবার যাওয়া উচিত কতোদিন সেখানে যাইনা।
ইলহাম বললো,
~ওখানে গিয়ে করবি কী আছে সেখানে?কেউ নেই আমাদের তুই ভুলে যাস কথাটা বার বার।
হিয়া বললো,
~কেউ নেই মানে ইবরাহীম চাচা জীবিত আছে ইলহাম।সে আমাদের পরিবারের অংশ তুই কেন ভুলে যাস।
ইলহাম বললো,
~আমি কিছুই ভুলিনি এই চাচা যে আমাদের ঠকিয়ে আছে তা কী ভুলে যাস?
হিয়া বললো,
~বাবা তাকে মাফ করে দিয়েছিল ইলহাম চাচা প্রতিদিন ফোন করে তোকে দেখতে চায়।
ইলহাম টেবিলে বারি দিয়ে বললো,
~আমি মাফ করিনি আমার এখনো মনে আছে গ্রামের লোকদের ব্যবহার যখন বাবা তার সেই কুঠি ঘরটার দাবি নিয়ে গিয়েছিল।সেই ঘরটায় বাবার ছোটবেলার স্মৃতি রয়েছে তাই সে ঘরটা চেয়েছিল তখন ওই চাচাই আমাদের বাবাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
হেমন্তি আর ফারুক নিরব দর্শক ফারুক আগে থেকে সব জানলেও হেমন্তি এসব শুনে অবাক হচ্ছে।হিয়া বললো,
~একবার তুই চল গ্রামে চাচার অবস্থা বেশ ভালো না চাচী কালকে রাতেও ফোন করেছে।
ইলহাম চুপ করে রইলো কিছুই বললো না হিয়া ইলহামের হাত ধরে বললো,
~আমার জন্য চল শুধু একদিন থেকে চলে আসবো।
ইলহাম কিছু না বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো হিয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
হেমন্তি হিয়ার পাশে বসে বললো,
~আপু,আমি দেখছি এই ব্যাপারটা।
হিয়া কিছু না বলে হেমন্তির গালে হাত রেখে চেয়ার ছেড়ে রুমে চলে গেলো।হেমন্তি সব গুছিয়ে নিজ রুমের দিকে পা বাড়ালো রুমে গিয়ে দেখলো ইলহাম বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।
হেমন্তি ধীর পায়ে ইলহামের পাশে বসে পরে তার চুলে হাত ডুবিয়ে বললো,
~আপুর জন্য এতটুকু তো করতেই পারেন।
ইলহাম চোখ ফট করে খুলে বললো,
~এসব কথা বলবেনা রাগ উঠে যাবে।
হেমন্তি বললো,
~এতো রাগ কেন আপনার?আপু যদি কষ্ট পায় তাহলে তার শরীরটাও খারাপ হয়ে যাবে।
ইলহাম এখন চিন্তায় পরে গেলো সে ভাবছে হিয়ার শরীরটা এখন ঠিক রাখা প্রয়োজন তাই সে শোয়া থেকে উঠে বললো,
~ঠিক আছে শুধু একদিনের জন্য হিয়াকে বলে দেও আগামীকাল রওনা দিবো পরশু চলে আসবো।
হেমন্তি খুশি হয়ে ইলহামের গাল টেনে বললো,
~এখনই আপুকে বলে আসছি।
বলেই সে রুম থেকে চলে আসলো ইলহাম মুচকি হেসে আবার শুয়ে পরলো।হেমন্তি হিয়ার রুমে গিয়ে এই সুখবরটা দিয়ে আসলো অনেকদিন কোথাও বাহিরে যাওয়া হয় না তাই হেমন্তির মনটাও ভালো হয়ে গেলো।
বিকেলের দিকে কেয়া,তানভীর আর রাহেলা খাতুন রওনা হয়েছে ইলহামদের বাসার উদ্দেশ্যে। ইমরান খানও যেতে চাইছিলেন কিন্তু ইরিনা বেগম তাকে যেতে বারণ করছেন কারণ রাহেলা খাতুন হয়তো তার উপস্থিতিতে কথা বলতে পারবেনা।
বিকেলের সময় তাই হেমন্তি ফুলগাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে ইলহাম একটু বাহিরে গেছে হিয়া ঘুমিয়ে আছে।কলিংবেল বাজতেই হেমন্তি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমের বাহিরে চলে আসলো দরজার সামনে গিয়ে খট করে দরজা খুলতেই কেয়া,তানভীর আর রাহেলা খাতুনকে দেখে অবাক হলো।কেয়া হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছো আপু?
হেমন্তি বললো,
~ভালো।
কেয়া হেমন্তিকে ছেড়ে দিতেই হেমন্তি বললো,
~আসেন আপনারা ভিতরে আসেন।
তিনজনই বাসায় প্রবেশ করলো রাহেলা খাতুন অনেক লজ্জা পাচ্ছেন।হিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেছে কলিংবেলের আওয়াজে কে এসেছে দেখার জন্য বাহিরে চলে আসলো আর এসে দেখলো কেয়াদের।
___♥___
তাদের দেখে হিয়া হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~আপনারা কখন আসলেন?হেমন্তি তো বলেনি যে আপনারা আসছেন।
কেয়া বললো,
~আপুও জানতোনা।
হিয়া সোফায় বসে বললো,
~তা কেমন আছো তোমরা?
তানভীর বললো,
~ভালো আপনার শরীরটা কেমন আপু?
হিয়া বললো,
~ভালো আছি।
রাহেলা খাতুন চুপ করে বসে আছেন কী বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না কেন যে এতো জড়তা কাজ করছে কে জানে?
হিয়া রাহেলা খাতুনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আন্টি কেমন আছেন?
হিয়ার কথায় সে চমকে উঠলো আর বললেন,
~ভালো আছি মা।
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি ইলহামকে ফোন দেও বলো যে কেয়ারা এসেছে।
বলেই হিয়া সোফা ছেড়ে উঠে রুমের দিকে যেতে নিবে তখনই রাহেলা খাতুন বলে উঠলেন,
~হিয়া মা তোমার সাথে কথা আছে আমার।
হিয়া রাহেলা খাতুনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~আন্টি আমি জানি আপনি কী বলবেন?আপনার মাফ চাইতে হবে না বড়রা ছোটদের কাছে মাফ চাইবে এমন ধারনা নিয়ে বড় হয়নি না বাবা-মা সে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছল আপনার প্রতি কোনো রাগ আমার নেই।
এতটুকু বলে হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি একটু তোমার ভাইয়াকে ফোন করে আসছি।
বলেই হিয়া রুমে চলে গেলো রাহেলা খাতুন বুঝতে পেরেছেন কোন মানুষগুলোকে সে কষ্ট দিয়েছেন।তাই সে মাথানিচু করে বসে রইলেন তানভীর মায়ের হাত ধরে তাকে বললো,
~এই মানুষগুলোর মন অনেক ভালো মা তোমায় অবশ্যই মাফ করে দিবে।
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২২
ইলহাম বাসায় এসে যে এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার হবে তা জানা ছিল না রাহেলা খাতুন স্বয়ং এসেছেন কেয়া আর তানভীরের সাথে এটা অনেকই অবাকের ব্যাপার।ইলহামকে দেখে রাহেলা খাতুন অতি নম্রভাবে বললেন,
~বাবা,আমি ভুল করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি আমাকে কী মাফ করা যায়?
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~আন্টি আপনি আমাদের গুরুজন অবশ্যই আমাদের ভুল দেখলে আপনারা শাসন করবেন কিন্তু যে জিনিসটা হয়নি সেটা না জেনে আপনার এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি।আপনার মাফ চাইতে হবে না আন্টি আপনি আমাদের পরিবারের সদস্য আর আপন মানুষ ভুল করলে মাফ করে যেতে হয় এটা আমার বাবা সর্বদা বলতো।
হিয়া ইলহামের কথা শুনে অনেক খুশী হলো সে মনে মনে বললো,
~ইলহাম এখন বড় হয়ে গেছে।
হেমন্তি বললো,
~টেবিলে নাস্তা দিয়েছি আপনারা আসুন।
রাহেলা খাতুন চোখের পানি মুছে বললেন,
~তোমাদের মন অনেক বড় আমার ছেলের অনেক ভাগ্য যে তোমাদের মতো একটা পরিবার পেয়েছে।
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~এখন এসব ভুলে যান আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে নাস্তা করাটা জরুরি।
রাহেলা খাতুন বললেন,
~এই সময় ক্ষুধা নিয়ে থাকতে নেই চলো খেয়ে নেও।
অতঃপর তারা সবাই একসাথে নাস্তা করে নিলো হেমন্তি ফারুকের জন্য নাস্তা প্লেটে করে রেখে দিলো।
তানভীর বললো,
~এখন তাহলে আমরা আসি।
কেয়া বললো,
~আপু ভালো থেকো আবার দেখা হবে।
ইলহাম বললো,
~কালকে আমরা কিছু কাজে গ্রামে যাচ্ছি তোমরা যেতে চাইলে আসতে পারো।
তানভীর মন খারাপ করে বললো,
~নাহ ভাইয়া আসলে অফিসের কাজটা অনেক বেশি নাহলে অবশ্যই আপনাদের সাথে জয়েন করতাম।
ইলহাম বললো,
~কোনো সমস্যা নেই।
তানভীররা বিদায় নিয়ে চলে গেলো হেমন্তি রান্নাঘরে চলে গেলো রাতের খাবার তৈরি করতে।ইলহাম রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো হেমন্তি কাজে ব্যস্ত সে ধীর পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে হেমন্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এতো কাজ করে কী হবে?স্বামী যে একা একা বিরহতে ভুগছে।
হেমন্তি কনুই দিয়ে ইলহামের পেটে গুতা দিয়ে বললো,
~আর খাবার না রান্না করলে ক্ষুধার বিরহে ভুগবেন।
ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~তুমি খাওয়ার কথাই ভাবলে আর আমার কথা ভুলে গেলে।
ইলহামের কথায় হেমন্তি বললো,
~জ্বী ভাবলাম এখন রুমে গিয়ে চুপচাপ বসুন আমার কাজে একদম ডিস্টার্ব করবেন না।
ইলহাম মুখ ফুলিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললো,
~আমি আর কোনো কথা বলতে আসবোনা।
হেমন্তি ইলহামের অভিমান মাখা কথা শুনে মুখ টিপে হেসে আবার কাজ শুরু করলো।ফারুক রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরে আসলো হিয়া ফারুকে আজকের সব ঘটনা খুলে বললো ফারুক সব কথা শুনে হালকা হেসে বললো,
~ভালোই হয়েছে সব মিটমাট হয়ে গেলো।
হিয়া বললো,
~ইলহাম কালকের জন্য প্রাইভেট বুক করে ফেলেছে।
ফারুক শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
~হিয়া,তোমার শরীরের অবস্থা ভালো না কিন্তু চাচার কথা ভেবে আমরা যাচ্ছি তোমার কিন্তু নিজের খেয়াল রাখতে হবে।
হিয়া বললো,
~অবশ্যই খেয়াল রাখবো আমি রুম থেকেই বের হবো না আর আমরা তো চলেই আসবো।
ফারুক আলতো হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। হেমন্তি সকল কাজ শেষ করে রুমে ডুকেই দেখতে পেলো ইলহাম বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে।হেমন্তির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো।সে ধীর পায়ে হেটে ইলহামের শার্টের ভিতর হাত ডুকিয়ে দিলো ইলহামের পিঠে ঠান্ডা হাত পরতেই সে চিৎকার করে উঠে বসলো।
তা দেখে হেমন্তি হো হো করে হেসে উঠলো তা দেখে ইলহাম নাক ফুলিয়ে বললো,
~এতো ঠান্ডা হাত কেউ পিঠে রাখে?
হেমন্তি হাসি বন্ধ করে বললো,
~আরে আমি তো মনে করেছি আপনি ঘুম তাই আরকি।
ইলহাম বললো,
~এখন আমি তোমাকে নিয়ে ঝর্ণার নিচো দাড়িয়ে পরি?
ইলহামের কথায় হেমন্তও ঢোক গিলে বললো,
~এই না না আমার ভুল হয়ে গেছে এই যে কান ধরছি।
বলেই হেমন্তি দুই কান ধরে ফেললো তা দেখে ইলহাম মুড নিয়ে বললো,
~এখন উঠবস করো।
হেমন্তি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
~এতো বড় শাস্তি এতটুকু ভুলের জন্য নিষ্ঠুর মানুষ।
ইলহাম চোখ বড় বড় করে বললো,
~তাহলে চলো ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে পরি?
হেমন্তি বললো,
~না না আমি উঠবস করছি।
বলেই সে উঠবস করতে লাগলো তা দেখে ইলহাম মুখ টিপে হেসে বললো,
~থাক আর করতে হবে না।
হেমন্তি কান ছেড়ে বুকে হাত রেখে বললো,
~যাক বাবা বাঁচা গেলো।
ইলহাম বিছানা ছেড়ে উঠে হেমন্তির কাছে গিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে বললো,
~এখন পর্যন্ত তোমার বাঁচার সময় হয়নি।
বলেই সে হেমন্তির ঘাড়ে মুখ গুজলো তখনই হিয়া হেমন্তি বলে ডেকে উঠলো।এতে ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিলো তা দেখে হেমন্তি হেসে বললো,
~আহারে বেচারার কী কষ্ট?
বলেই সে রুম থেকে চলে যায় ইলহাম মনে মনে হিয়াকে অনেক গুলো গালি দিয়ে থাকে।
___♥___
সকাল ৭টায় তারা চারজন গাড়িতে উঠে বসে পাক্কা ৪ঘন্টা লাগবে তাদের যেতে ইলহাম ড্রাইভারকে আগেই সচেতন করে দিয়েছে যাতে সে গাড়ি ধীর গতিতে চালায় যাতে হিয়ার কোনো প্রবলেম না হয়।ইলহাম মিরর দিয়ে বার বার হেমন্তিকে দেখছে আর মনে মনে বলছে,
~কী দরকার ছিল টপস পরার একদম বাচ্চা লাগছে আমি কী বাচ্চা বউ বিয়ে করেছি?
হেমন্তি টপস পরতে চায়নি কিন্তু হিয়া বললো এতো ঘন্টার জার্নি শাড়ি পরে কীভাবে বসে থাকবে?তাই হেমন্তিকে জোর করে টপস পরিয়ে দিলো গ্রামে গিয়ে শাড়ি পরে নিবে।
হেমন্তি হিয়ার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ফারুক আর ইলহাম মোবাইল টিপতে ব্যস্ত আছে।হিয়া ফারুককে বললো,
~মোবাইলে বাচ্চাদের মতো গেইম খেলছেন কেন?
ফারুক বললো,
~এতে সময় কাটছে তোমাদের মেয়েলি আলাপ চালিয়ে যাও।
হিয়া ফারুকের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বললো,
~এখন আমাদের মেয়েলি আলাপ আপনিও শুনবেন।
ফারুক অসহায় চোখে হিয়ার দিকে তাকালো হিয়া৷ মোবাইলটা নিজ ব্যাগে রেখে দিলো।
সময়ের গতি চলতে লাগলো গাড়িও সেই সময়ের তালে তালে চলছে এক পর্যায়ে তারা গ্রামের মোড়ের রাস্তায় এসে পরলো।ইলহাম চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখছে কতো স্মৃতি রয়েছে এই গ্রাম জুড়ে সেই ছোটবেলার কথামনে পরে গেলো কিন্তু অনেক কিছু বদলেছে যেমন এই রাস্তাটাই তো আগের থেকে কতোটা উন্নতি হয়েছে
আগে তো হেঁটে যেতে হতো বাবা তাকে ঘাড়ে বসিয়ে এই রাস্তা থেকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যেতো ইশশ কতো সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।ইলহামের চোখের কোণে পানি তাই সে দেরি না করে সানগ্লাসটা চোখে পরে নিলো।বাসার সামনে আসতেই গাড়িটা থেমে গেলো সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলো হিয়া বাড়িটার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো অনেল পরিবর্তন এসেছে এই বাসায়।হিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হেমন্তির হাত ধরে বললো,
~চলো ভিতরে।
ফারুক আর ইলহাম তাদের লাগেজ আর কিছু শপিং ব্যাগ করতে লাগলো সবার জন্যই তারা কিছু উপহার নিয়ে এসেছে।হিয়া আর হেমন্তি বাসার ভিতরে ডুকতেই একজন যুবক এগিয়ে আসলো হিয়া তাকে চিনতে পেরে হালকা হাসলো তার দিকে তাকিয়ে সেই যুবকটি হিয়া আর হেমন্তির সামনে দাড়িয়ে সালাম দিয়ে বললো,
~হিয়া আপু কেমন আছো?
হিয়া আলতো হেসে বললো,
~ভালো আছি ইশরাক।বাসার সবাই কোথায়?
ইশরাক বললো,
~মা রান্নাঘরে জান্নাত কলেজে গেছে।
হিয়া বললো,
~জান্নাত কলেজে এখন?
ইশরাক বললো,
~আপু সবাই বড় হয়ে গেছে।
হিয়া হাসলো ইশরাক হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~উনি কে আপু?
হিয়া বললো,
~উনি তোমার ভাবী ইলহাম ভাইয়ের বউ।
ইশরাক হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~কেমন আছেন ভাবী?আসলে শুনেছিলাম যে ইলহাম ভাই বিয়ে করেছেন কিন্তু কখনো আপনাকে দেখিনি।
হেমন্তি বললো,
~সমস্যা নেই বুঝতে পেরেছি।
ততক্ষনে ইলহাম আর ফারুকও চলে আসলো তাদের দেখে ইশরাক এগিয়ে গেলো ইলহাম ইশরাককে দেখে বললো,
~বেশ বড় হয়ে গেছিস তুই?
ইশরাক হেসে বললো,
~ভার্সিটির শেষের দিকে আছি আমি।
ইলহামের চাচী রান্নাঘর থেকে বের হয়ে তাদের দেখে তাড়াহুড়া করে তাদের কাছে এসে বললেন,
~তোমরা এসে পরেছো?এই ইশরাক যাও রান্নাঘরে শরবত করে রেখেছি নিয়ে আসো।
ইলহামের চাচী হিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কতদিন পর তোকে সামনাসামনি দেখলাম।
তারপর হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~এই কী আমার ইলহামের বউ?
হিয়া মাথা দুলায় ইলহামের চাচী হেমন্তির দিকে তাকাতেই হেমন্তি সালাম দেয়।ইলহামের চাচী বলে,
~অনেক সুন্দর তো ওকে দ্বার করিয়ে রেখেছো কেন?
ভিতরে আসো।
ইলহামের চাচী তাদের ভিতরে নিয়ে এসে চেয়ারে বসতে দিলো ইলহামের এসব সহ্য হচ্ছেনা তবুও সে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায় না বলে চুপ আছে।ইলহাম চারপাশে চোখ বুলিয়ে সেই ঘরটি খোঁজার চেষ্টা করলো সেই ঘরটির দেখা না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~ওই জায়গায় তো একটা ঘর ছিল সেটা কোথায়?
ইলহামের চাচী মাথা নিচু করে বললেন,
~সেটা তো কবেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
ইলহাম আর কিছুই বললো না চুপ করে বসে রইলো হিয়া বললো,
~এসব কথা ছাড়ো চাচার অবস্থা কেমন?
ইলহামের চাচী বললো,
~আছে কোনোরকম আসো তোমরা ফ্রেশ হয়ে নেও আমি খাবার দিচ্ছি।
___♥____
সবাই একেবারে শাওয়ার নিয়ে খাবার ঘরে বসে পরলো হেমন্তি এবার শাড়ি পরেছে তা দেখে ইলহামের চাচী বললেন,
~বাহ তোমাকে তো শাড়িতেও অনেক মানায়।
হেমন্তি বললো,
~আসলে আমি শাড়িই পরও আজ গাড়ি দিয়ে আসবো বলে টপস পরেছি।
ইলহামের চাচী বললো,
~কোনো সমস্যা নেই এখন এসব পরাই যায়।
হেমন্তি মুচকি হেসে খাবারে মনোযোগ দিলো ইলহামের চাচী ফারুকে প্লেটে আস্তো মাছের মাথা রেখে বললো,
~খাও জামাই তুমি প্রথম আমাদের বাসায় এসেছো তাই ইশরাক পুকুর থেকে মাছ নিয়ে এসেছে।
ফারুক বললো,
~তাই বলে কী এতো বড় মাথা আমও খেতে পারবোনা।
ইলহাম বললো,
~আরে খান ভাইয়া গ্রামে এসে যদি খাবারই ঠিক মতো না খান সেই গ্রামে এসে লাভ কী?
ফারুক ইলহামের দিকে তাকাতেই ইলহাম একটা দুষ্ট হাসি দিলো।খাওয়া শেষ হতেই সবাই হাত ধুয়ে বাড়ির উঠানে বসে পরলো গ্রামের দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগছে হেমন্তির হঠাৎ একটা মেয়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করলো।হিয়া তাকে দেখে বললো,
~কীরে কেমন আছিস?
জান্নাত হিয়াকে দেখে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আপু কেমন আছো?
হিয়া বললো,
~এই তো ভালো।
জান্নাত হেমন্তিকে দেখে বললো,
~এই কী আমার ভাবী?
হিয়া বললো,
~হ্যা পছন্দ হয়েছে?
জান্নাত হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অনেক পছন্দ হয়েছে।
হিয়া জান্নাতকে দেখে বুঝলো মেয়েটা অনেক বাচ্চামো স্বভাবের।ইলহামের চাচী এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~তোমাদের চাচা তোমাদের ডাকছে।
ইলহাম তার কথা শুনে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুই যা দেখা করে আয়।
হিয়া ইলহামের কাছে গিয়ে বললো,
~এতো রাগ ভালো না ইলহাম এই পর্যন্ত এসে পরেছিস তো একটা দরজা ঠেলে ভিতরে যেতে কী সমস্যা?
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~চল ভিতরে।
হিয়া মুচকি হেসে ইলহামের হাত ধরে সেই রুমের দিকে পা বাড়ালো।
চলবে
(