প্রেমের শুরু পর্ব ১৭+১৮

#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৭
হেমন্তি ও তার পরিবার হিয়ার সেবায় কোনো কিছুর কমতি রাখেনি আজ ৩দিন যাবত হিয়া আছে হেমন্তির বাসায়।আড্ডায় আড্ডায় ভালোই কাটছে সময় গুলো হিয়া তো নিজের বাড়ির মতোই থাকছে।হেমন্তি হিয়ার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে হিয়া কমলা খেতে খেতে বললো,
~ইলহামের সাথে গতকাল কথা হয়েছিল?
হেমন্তি বললো,
~নাহ আপু উনি ব্যস্ত এ কয়েকদিন কমই কথা হবে।
হিয়া বললো,
~এতো কিসের ব্যস্ততা যে পরিবারের খোজখবর নিতে পারেনা?
হেমন্তি বুঝতে পারলো হিয়ার ইলহামের কথা মনে পরছে তাই এসব বলছে হেমন্তি আলতো হেসে বললো,
~এবার ফোন করলে আচ্ছা মতো বকে দিয়ো।
হিয়া বললো,
~সে আবার বলতে এমনভাবে বকবো যে একদম সোজা হয়ে যাবে।
হেমন্তি হিয়ার চুলে একটা বেনুনি পাকিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বিকেল ৫টা বাজে।হেমন্তি হিয়াকে বললো,
~আপু,আন্টির মেডিসিনের সময় হয়ে গেছে আমি দিয়ে আসি।
হিয়া বললো,
~ড্রয়ারে মেডিসিনের বক্স আছে সেখান থেকে নিয়ে যাও।
হেমন্তি মুচকি হেসে ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বক্সটা নিয়ে রেহেনা বেগমের কাছে চলে গেলো।
কেয়া কিছুদিন যাবত খেয়াল করছে তার শাশুড়ি রাহেলা খাতুন তার সাথে বেশি একটা কথা বলছেনা।সবসময় এড়িয়ে এড়িয়ে চলছে এমন কী সে যখন হিয়ার অবস্থার কথা বর্ণনা করলো তখনও রাহেলা খাতুন ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করেছিলেন।কেয়া একমনে এসব ভেবে যাচ্ছে তখনই তার ফোন বেজে উঠলো কেয়ার ধ্যান ভাঙ্গলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তানভীর ফোন করেছে।কেয়া ফোন রিসিভ করতেই তানভীর বলে উঠলো,
~কেয়া আমাদের এয়ারপোর্ট যেতে হবে।
কেয়া অবাক হয়ে গেলো তানভীরের কথা শুনে কেয়া নিজেকে সামলে বললো,
~এয়ারপোর্ট কেন যেতে হবে?
তানভীর বললো,
~ইলহাম ভাই চলে এসেছে।
তানভীরের এতটুক কথা কেয়ার বিষন্ন মনটাকে খুশীতে ভরিয়ে দিলো কেয়া বসা থেকে দাড়িয়ে বললো,
~আপনি এসব কী বলছেন?ইলহাম ভাই এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন।
তানভীর বললো,
~সেসব আমি জানি না ফারুক ভাই ফোন করেছিল আর শোন হেমন্তি আপুকে কিছুই বলোনা তার জন্য সারপ্রাইজ।
কেয়া বললো,
~এটা আমার জন্যও সারপ্রাইজ ছিল কিন্তু অনেক খুশী লাগছে।
তানভীর বললো,
~রেডি হয়ে মেইন রোডে এসে পরো আমি তোমায় পিক করে নিবো।
কেয়া বললো,
~ঠিক আছে।
কেয়া ফোন রেখেই রেডি হতে চলে গেলো তার বোন যে আজ কতো খুশী হবে সেটা তার জানা আছে।কেয়া ভাবলো এই খবরটা রাহেলা খাতুনকে দেওয়া দরকার তাই সে রাহেলা খাতুনের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো রাহেলা খাতুন গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
~ভিতরে আসো।
কেয়া হাসি হাসি মুখ করে ভিতরে প্রবেশ করলো রাহেলা খাতুন বিছানায় বসে আছেন।কেয়া বললো,
~মা,ইলহাম ভাই চলে এসেছেন আমরা তাকে এয়ারপোর্টে নিতে যাচ্ছি।
রাহেলা খাতুন বিরক্তিকর চাহনি দিলেন কেয়ার দিকে আর বললেন,
~আর কতো এসব নিয়ে পরে থাকবে আমার ছেলেটা?
রাহেলা খাতুনের প্রশ্ন শুনে কেয়া অবাক হয়ে বললো,
~কী বলছেন এসব মা?
রাহেলা খাতুন চেচিয়ে বললেন,
~বিয়ের পর থেকেই দেখছি এই সমস্যা সেই সমস্যা তোমার বাবা কেও দেখি ইলহামের পরিবারের কিছু হলে দরদ উতলিয়ে পরে অথচ আমার তো একদিন খবরও নিতে আসলোনা।
কেয়া বললো,
~এসব কী বলছেন মা? বাবা তো সেদিনও আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।
রাহেলা খাতুন বললেন,
~সেই তো খালি হাতেই চলে এসেছিলেন।
কেয়ার এখন কান্না করতে মন চাচ্ছে কিন্তু নিজেকে সামলে বললো,
~মা খাবার টেবিলে রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিবেন আর ওনাকে আমি এখনই বাসায় আসতে বলছি।আপনার সাথে থাকাট জন্য আমি বাবার বাড়ি যাচ্ছি।
বলেই কেয়া রুম থেকে বের হয়ে তানভীরকে ফোন করলো তানভীর ফোন রিসিভ করতেই কেয়া বললো,
~আপনি বাসায় চলে আসেন মায়ের খেয়াল রাখেন আমি আমার বাবার বাড়ির খেয়াল রাখতে পারবো তাই আমি যাচ্ছি সে বাসায়।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো।তানভীর কিছুই বুঝতে পারলোনা কী হয়েছে?তাই সে ফারুকের অফিসের দিকে রওনা দিলো ইলহামকে সে আনতে যাবেই।

____♥_____

ইলহাম এয়ারপোর্টের বাহিরে দাড়িয়ে আছে অফ হোয়াইট রঙ্গের সাদা শার্ট আর কালো প্যান্টে তাকে দারুন মানিয়েছে।পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফারুকের নাম্বারে ডায়াল করতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে ফারুক ইলহাম বলে ডাক দিলো।ইলহাম হাতের ফোন মুঠোয় নিয়ে ভীড়ের মাঝে ফারুক আর তানভীরকে দেখতে পেলো তাদের দেখে ইলহামের মুখের হাসিটা আরো বেশি চওড়া হলো।ফারুক আর তানভীর ভীর ঠেলে ইলহামের দিকে চলে আসলো ইলহাম ফারুককে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো।ফারুক ইলহামের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
~কেমন আছো ইলহাম?
ইলহাম ফারুককে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~অনেক ভালো ভাইয়া।
পাশ থেকে তানভীর বললো,
~ইলহাম ভাই কেমন আছেন?
ইলহাম বললো,
~ভালো আছি কেয়া কোথায়?
ইলহামের প্রশ্নের জবাব নেই তানভীরের কাছে সে আমতা আমতা করে বললো,
~কেয়া তো হেমন্তি আপুর সাথে আছে।
ইলহাম ওহহ বলে লাগেজ হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলো গাড়ির দিকে তারা গাড়িতে উঠে বসলো ফারুক ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতে বললো।ইলহামের মনের খুশীটা আরো দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে হিয়া আর হেমন্তি কীভাবে রিয়েক্ট করবে তা দেখার জন্য সে অনেক এক্সাইটেড।
কেয়ার এমন হঠাৎ আগমনে সবাই অবাক কিন্তু কেয়ার হাসি মাখা মুখ দেখে আর কেউই কিছু ভাবলোনা।হেমন্তি রান্নাঘরে কাজ করছে কেয়া এসেই ফরমাইশ শুরু করে দিয়েছে তার নাকি হেমন্তির হাতের খাবার খেতে মন চাইছে।হেমন্তি সব রান্না নিজ হাতে করছে হিয়া আর কেয়া আড্ডা দিচ্ছে কেয়া নিজেকে খুশী দেখালো তার মনে অনেক কষ্ট জমে আছে।রাহেলা খাতুনের কথা তাকে আজ বড্ড পুড়াচ্ছে তার মনে যদি এতো কথায় চলছিল তাহলে একবারও কেন কেয়াকে বললোনা।
হেমন্তি হাতের সব কাজ শেষ করে যেইনা হলরুমে আসলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো হেমন্তি কোমড়ে গুজে রাখা আঁচলটা খুলে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।দরজাটা খুলে দিয়ে সে সমানে তাকাতেই দেখতে পেলো ফারুক দাড়িয়ে আছে সাথে আছে তানভীর দুজনকে দেখে হেমন্তি হেসে বললো,
~আপনারা এসেছেন খাবার রেডি হয়ে গেছে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে চলে আসেন।
তানভীর আর ফারুক ভিতরে এসে পরলো কেয়া তানভীরকে দেখে একটু অবাক হলো।হেমন্তি দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই চিরচেনা স্বরটা তার কানে চলে আসলো ইলহাম বললো,
~আমাকে কী বাসার ভিতরে ডুকতে দিবেনা?
হেমন্তির পুরো পৃথিবীটা থেমে গেলো চোখ দুটো সে উপরে তুলতে পারছেনা কেন জানি সকল লজ্জা তাকল ঘিরে ধরেছে।হিয়া ইলহামকে দেখে খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেলো হিয়া হেমন্তিকে পাশ কাটিয়ে ইলহামকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছিস?ভাই তুই হঠাৎ করে কীভাবে চলে আসলি ২মাস তো হয়নি?
হেমন্তি এখনো চুপ হয়ে আছে সে মাথা নিচু করে আছে তার মন বলছে ছুটে গিয়ে ইলহামের বুকে ঝাঁপিয়ে পরতে।কিন্তু লজ্জা যে তাকে আড়ষ্ট করছে বার বার আবার অভিমানও কাজ করছে কেন তাকে বলেনি আজকে ইলহাম চলে আসবে?
ইলহাম হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ভিতরে তো আসতে দে।
হিয়া সরে গেলো ইলহাম বাসায় ডুকে সোফায় বসে পরলো ইমরান খান,ইরিনা বেগম, রেহেনা বেগম রুম থেকে বের হয়ে ইলহামকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন।ইলহাম সবার সাথে কুশলাদি করছে আড়চোখে হেমন্তিকে দেখছে হেমন্তি দেওয়াল ঘেষে দাড়িয়ে আছে শাড়ির আঁচল আঙ্গুল দিয়ে পেঁচাচ্ছে।ইলহাম বললো,
~এক গ্লাস পানি পেলে ভালো হতো।
হেমন্তি তবুও সেখানে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো কেয়া ইলহামকে পানি এনে দিলো।ইলহাম বললো,
~এতোদিন পর ফিরে আসলান কী অবহেলা পাওয়ার জন্য?
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তির বুকটা ধ্বক করে উঠলো কিন্তু তবুও সে চোখ তুলে তাকানের সাহস পেলো না।

___♥___

ইমরান খান ইলহামের কথা শুনে বললেন,
~এভাবে বলো না বাবা আমরা যদি জানতাম তাহলে তোমার জন্য অনেক আয়োজন করতাম।
হিয়া বললো,
~আঙ্কেল ইলহাম আপনি কিছু মনে করবেন না ইলহাম মজা করছে।
ইলহাম সোফা ছেড়ে দাড়িয়ে বললো,
~আমি রুমে যাচ্ছি শাওয়ার নিতে।
বলেই সে গটগট করে রুমের দিকে চলে গেলো হেমন্তি চোখ তুলে ইলহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।কেয়া হেমন্তির পাশে দাড়িয়ে বললো,
~আপু,দুলাভাইয়েট কাছে যাও দেখো তার কী কী লাগবে?
হেমন্তি শুকনে ঢোক গিলে বললো,
~আমার এখানে কাজ আছে।
কেয়া চোখ গরম করে তাকাতেই হেমন্তি বললো,
~যাচ্ছি।
হেমন্তি ধীর পায়ে রুমের দিকে চলে গেলো ইলহাম রুমে এসে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো ঝর্ণা ছেড়ে সেটার নিচে দাড়িয়ে পরলো।ইলহামের পুরো শরীরে পানি পরছে সে ভাবছে যার জন্য এসেছে সেই তাকে ইগনোর করছে ভেবেছিল হেমন্তি তাকে দেখেই খুশীতে জড়িয়ে ধরবে কান্না করবে তার কাজল লেপ্টে যাবে চোখে কিন্তু সেরকম কিছুই হলোনা।
হেমন্তি ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে অনেক ভাবে দরজায় টোকা দিয়ে কাঁপা কাপা গলায় বললো,
~আপনার টাওয়াল।
ভিতর থেকে কোনো জবাব আসলোনা হেমন্তি একটু অবাক হলো সে আবার দরজায় টোকা দিতে যাবে তখনই ইলহাম তার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে আসলো এরপর দরজা লক করে হেমন্তিকে নিয়ে ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে পরলো হেমন্তির দুসাইডে হাত রেখে বললো
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৮
ইলহাম হেমন্তির দুসাইডে হাত রেখে বললো,
~মনে পরেছে আমার কথা আপনার?
হেমন্তি চোখ বন্ধ করে আছে ঝর্নার পানি তার শরীরকে ভিজিয়ে তুলছে চোখে-মুখে পানির আবরণ।হেমন্তিকে দেখতে অনেক মোহোনীয় লাগছে কিন্তু ইলহাম নিজের মনকে আরো শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
~তোমার মুখের বুলি কখন ফুটবে হেমন্তি আমার মৃত্যুর পর।
ইলহামের কথা শ্রবণ হতেই হেমন্তি চোখ খুলে তাকালো ইলহামের মৃত্যু কথাটি শুনে তার বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো।হেমন্তি মনে মনে বলছে,
~২মাসের দুরত্ব আমাকে এতো পুড়িয়েছে আপনার থেকে আর দূরে থাকতে পারবোনা। আর আপনার মৃত্যু হওয়ার আগে যাতে আমার মৃত্যু হয়।
মনের কথা মনে রয়ে গেলেও মুখ ফুটে কিছুই বললোনা হেমন্তি।ইলহাম হেমন্তির দুহাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,
~ভালোবাসো না মানছি এর জন্য কী মানবতাও ভুলে যাবে?আমি কতো দ্রুত কাজ শেষ করে এসেছি শুধুমাত্র তোমার জন্য কীভাবে কেটেছেন তোমাকে ছাড়া এ কয়েকদিন তুমি জানতে চাও?এতোটা অবহেলা না করলেও পারো তুমি হেমন্তি।
ইলহামের বলা প্রতিটা কথা হেমন্তির বুকে ব্যাথা তৈরি করছে অসহ্য ব্যাথা করছে।ইলহামের হেমন্তির হাতটা ঢিল করতেই হেমন্তি ইলহামকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।হেমন্তির এমন কাজে ইলহাম একটু অবাক হলো সে কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।হেমন্তি বললো,
~আপনার কী মনে হয় আমি খুব ভালো ছিলাম?আমার বুকে যে কতোটা কষ্ট জমে আছে তা কী আপনি জানেন?মনকে শুধু সান্তনা দিয়েছি আপনি আসবেন এই হেমন্তিকে বাহুডরে আবদ্ধ করে রাখবেন।
হেমন্তির বলা কথা কর্ণকুহরে পৌছাতেই ইলহাম হেমন্তিকক দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আমি হেমন্তি তুমি কখন আমার কাছে আসবে?
হেমন্তি কেঁদেই চলছে ইলহাম হেমন্তিকে সোজা করে দাড় করিয়ে তার দুগালে হাত রেখে বললো,
~আর কাঁদবে না তোমার কান্না যে আমাকে ধ্বংস করছে বহুবার।
বলেই হেমন্তির ওষ্ঠ জোড়ায় নিজ ওষ্ঠজোড়া ছুঁইয়ে দিলো হেমন্তির দুচোখ বেয়ে পানি পরছে ইলহাম তা নিজ ওষ্ঠজোড়া দ্বারা শুষে নিচ্ছে।ইলহাম হেমন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~অনেক ভালোবাসি তোমায়।
হেমন্তি লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো ইলহাম মুচকি হেসে হেমন্তিকে কোলে তুলে নিলো দুজনই ভিজে এককার হয়ে আছে।হেমন্তি বললো,
~রুমে গেলে তো ফ্লোর ভিজে যাবে।
ইলহাম বললো,
~সারারাত কী তাহলে এখানেই কাটাবো?আমার কোনো আপত্তি নেই এতে।
হেমন্তি বললো,
~অসভ্য লোক।
ইলহাম বললো,
~তোমার জন্যই।
কেয়া রুমে বসে আছে তানভীর তার পাশে বসে আছে তানভীর বললো,
~কী হয়েছে তোমার?আর তুমি যে কিছুদিন থাকবে তাও তো বলোনি।
কেয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~আপনার এখন বাসায় যাওয়া উচিত মা একা বাসায়।
তানভীর বললো,
~আমার প্রশ্নের জবাব এটা নয় কেয়া।
কেয়া বললো,
~এখানে এসব বিষয়ে কথা না বলি সেটাই ভালো হবে আর মায়ের মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে কিনে নিয়ে যাবেন।
বলেই সে উঠে যেতে নিবে তখনই তানভীর কেয়ার হাত ধরে বললো,
~শেষবার জিজ্ঞেস করছি কী হয়েছে?
কেয়া বললো,
~জানেন একটা কথা সবসময় শুনতাম কিন্তু কোনোদিন নিজে সেটা উপলব্ধি করিনি।
তানভীর কেয়ার কথার কিছুই বুঝতে পারলোনা কেয়া তানভীরের দিকে ছলছলা নয়নে তাকিয়ে বললো,
~কথাটি হচ্ছে পর কোনোদিন আপন হয়না।
এতটুকু বলেই কেয়া তানভীর থেকে নিজ হাত ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো দরজা আটকে পানির কল ছেড়ে কান্না করতে লাগলো।
তানভীর কেয়ার কোনো কথাই বুঝতে পারলোনা তার মাথাটা ভো ভো করছে সে আর কিছু না বলে রাহেলা খাতুনকে ফোন করে জানিয়ে দিলো আজ সে বাসায় আসবেনা বুয়াকে নিয়ে যাতে সে শুয়ে পরে।ফোনে কথা শেষ করে বারান্দায় দাড়িয়ে পরে তানভীর মনটা তার যতটা খুশী ছিলো এখন ততোটাই খারাপ হয়ে গেছে।

___♥___

হেমন্তি শাড়ি পাল্টে চুলগুলো খোপা করে নিলো ভেজা চুলই বাঁধতে হলো ইলহামের কারণে এখন বাহিরে গেলে কেয়া মজা নিবে। হেমন্তির রুম থেকে বের হয়ে দেখলো ইরিনা বেগম আর কেয়া টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে হেমন্তি গিয়ে কেয়ার কান টেনে বললো,
~এই জন্যই তো আমার কাছে এতো খাবারের আবদার।
কেয়া বললো,
~উফ আপু কান ছাড়ো তোমার জামাইর জন্যই তো এতো কিছু করালাম।
হেমন্তি কেয়ার কান ছেড়ে দিয়ে গরুর মাংসের বাটিটা হাতে নিয়ে বললো,
~রাহেলা আন্টি কেন আসলোনা?
কেয়ার মুখটা ছোট হয়ে গেলো সে বললো,
~শরীরটা ভালো লাগছেনা তাই আসেনি।
ইরিনা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললেন,
~সে কী আগে বলবিনা?বেয়ানের শরীরটা এতো খারাপ আর তুই এখন বলছিস।
হেমন্তি বললো,
~আগামীকালই আমরা দেখতে যাবো মা আন্টিকে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~অবশ্যই সে আবার বলতে।
কেয়া বললো,
~এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই কালকে আমি চলে যাচ্ছিনা কিছুদিন থাকবো।
ইরিনা বেগম রাগ নিয়ে বললেন,
~শাশুড়ির শরীর ভালো না আর তুই এখানে থাকবি কালই চলে যাবি লাগলে আমিও তোর সাথে চলে যাবো কাজে সহায়তা করতে পারবো।
কেয়া বললো,
~ঠিক আছে।
টেবিলে সবাই বসে গল্পগুজব করছে এতোদিন পর সবাই একসাথে আবার বসেছে সবার মুখেই একটা হাসি লেগে আছে।হিয়া খাবার তুলে ইলহামকে খাইয়ে দিয়ে বললো,
~তুই কতো শুকিয়ে গেছিস।
ইলহাম বললো,
~তোর চোখে কবে মোটা ছিলাম?
হিয়া বললো,
~তোর জন্য হেমন্তিও শুকিয়ে গেছে।
ইলহাম আড়চোখে হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~সেটার চিন্তা করোনা আমি দেখে নিবো সেসব।
হেমন্তি চোখ তুলেতেই ইলহামের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো হেমন্তি ইলহামের মুখে দুষ্ট হাসি দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।কেয়া বললো,
~তো দুলাভাই কেমন ছিল থাইল্যান্ড?
ইলহাম বললো,
~ঘুরার সময় ততটা পায়নি কিন্তু হ্যাঁ সুন্দর দেশ।
কেয়া বললো,
~তো আপুকে মিস করেছেন?
ইমরান খান আর ইরিনা বেগম কেয়ার প্রশ্নে একটু ইতস্তত বোধ করলো তাই তারা বললো,
~আমরা রুমে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।
তারা চলে যেতেই কেয়া আবার ইলহামকে প্রশ্ন করলো আর বললো,
~আপুকে মিস করেছেন?
ইলহাম বললো,
~তোমাকে বেশি মিস করেছি।
কেয়া বললো,
~সত্যি?
ইলহাম বললো,
~আমার একটামাত্র শালী তুমি তোমাকেই তো বেশি মিস করবো।
বলেই ইলহাম হাসলো কেয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,
~হয়েছে বুঝেছি মজা নিচ্ছেন প্রশ্ন চেঞ্জ করছেন।
ফারুক বললো,
~কেয়া,তুমিও যে কী জিজ্ঞেস করছো মিস করেছে দেখেই তো সবকাজ শেষ করে এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
সবার কথা শুনে হেমন্তি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে হিয়া তা দেখে বললো,
~লজ্জাবতী গাছের ন্যায় কেউ লজ্জায় ডুবে যাচ্ছে?
ইলহাম বললো,
~অনেক হয়েছে তোমাদের কথা এখন ঘুমাতে যাও।
হিয়া দুষ্ট হেসে বললো,
~আজ ভাবছি যে হেমন্তি আমার সাথে ঘুমিয়ে পরুক।
হিয়ার কথা শুনে ইলহাম মাথা তুলে চোখ বড় বড় করে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?

____♥____

হিয়া ইলহামের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,
~মাথা খারাপ কেন?একদম ঠিক আছে আজ আমি আর বাবু হেমন্তির সাথে রাত কাটাবে।কোনো সমস্যা হেমন্তি?
হেমন্তি জোরপূর্বক হেসে বললো,
~কোনো সমস্যা নেই আপু।
ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার সমস্যা আছে আর আমার অনুমতি নিতে হবে।
হিয়া বললো,
~তোর অনুমতি কেন লাগবে?
কেয়া বললো,
~আপু,আজ রাতে সব মেয়ে একসাথে থাকি কতো মজা হবে।
তানভীর অসহায় ভাবে ইলহামের দিকে তাকালো ইলহাম হেমন্তির হাত ধরে দাড় করিয়ে বললো,
~তোরা থাক তোদের মজা নিয়ে আমি চললাম আমার বউকে নিয়ে
বলেই সে হেমন্তিকে নিয়ে রুমে চলে গেলো ইলহামের কান্ডকারখানা দেখে সবাই হেসে উঠলো হিয়া বললো,
~ইলহাম পাগল হয়ে গেছে।
ইলহাম হেমন্তিকে রুমে নিয়ে এসে দরজা খট করে বন্ধ করে দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~সবটি খারাপ একটারও মাথায় বুদ্ধি নেই
হেমন্তি ড্যাবড্যাব করে ইলহামের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
~আপনি এভাবে আমাকে নিয়ে আসলেন কেন?আপু যদি রাগ করে?
ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললে,
~রাগ না ওর মজা লাগছে আমাকে জ্বালিয়ে।
হেমন্তি বললো,
~কী বলেন এসব?
ইলহাম বললো,
~তুমি বুঝবেনা ওর প্ল্যান এক বাচ্চার মা হবে তবুও বাচ্চামি স্বভাব গেলোনা।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~হিয়া আপু মজা করছিলো আপনি শুধু শুধু এতোটা প্যানিক হচ্ছেন।
ইলহাম কেনো কথা নন বলে হেমন্তির কাছাকাছি দাড়িয়ে বললো,
~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
বলেই সে হেমন্তির খোপা করা চুলগুলো খুলে দিলো ইলহাম চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে বললো,
~এই চুলে কতোদিন আমার আনা বেলীফুল পড়া হয়নি তাই না?
হেমন্তি চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুজলো হেমন্তি এতোদিন পর ইলহামের স্পর্শ পেয়ে হালকা কেঁপে কেপে উঠছে।ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে কোলে তুলে নিলো হেমন্তি এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।
ইলহাম হেমন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হেমন্তির বুকে নিজের মাথা রেখে বললো,
~তুমি কেমন আছো হেমন্তি?আমাকে ছাড়া তোমার দিন কেমন কাটতো?
হেমন্তি চোখ খুলে ইলহামের চুলে হাত ডুবিয়ে বললো,
~আপনি হীনা মন বড়ো আনচান করতো। আপনাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগতোনা
ইলহাম হেমন্তির বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললো,
~তোমার এই চোখে যে বহুবার দেখেছি আমি আমার সর্বনাশ।
বলেই সে হেমন্তির কাঁধে মুখ গুজে দিলো হেমন্তি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে সেই অনুভূতি গুলো অনুভব করতে লাগলো।তারা দুজনই ভালোবাসার অথৈ সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে এতোদিনের বিচ্ছেদের পর দুজন চাতক পাখি নিজ ঠিকানা খুজে পেয়েছে। এ রাত শুধু তাদের ভালোবাসার চাদরে ডেকে যাবে ইলহাম আকড়ে নিয়েছে তার হেমন্তিকে নিজ বাহুডরে❤️❤️।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here