প্রেমের শুরু পর্ব ১৫+১৬

#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৫
হেমন্তি কানে ফোন রাখতেই অপরপাশ থেকে চিরচেনা স্বরে বলে উঠলো ইলহাম,
~কেমন আছো হেমন্তি?
হেমন্তির মনটা খুশীতে ভরে উঠলো ইলহামের কন্ঠ শুনে হেমন্তি বিছানায় বসে পরলো কোনো কথাই তার মুখ থেকে বের হচ্ছেনা হেমন্তির কোনো জবাব না পেয়ে ইলহাম আবার বললো,
~তুমি কী কথা বলতে ইচ্ছুক না?
হেমন্তি শান্তস্বরে বললো,
~আমি ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?কিছু খেয়েছেন আপনি?সেখানে কী বেশী ঠান্ডা?আপনি গরম কাপড় পরে বের হবেন বুঝতে পেরেছেন।
ইলহাম কফির মগটা হাতে নিয়ে জানালার সামনে দাড়িয়ে হালকা হেসে বললো,
~এতো প্রশ্নের জবাব একসাথে কীভাবে দিবো?একটু শ্বাস তো নেও।
হেমন্তি বললো,
~আপনি নিজের খেয়াল রাখেন না তাই তো জিজ্ঞেস করছি।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~কোনো চিন্তা করবেনা আমি নিজের খেয়াল রাখবো আর তুমি পড়াশোনায় মনোযোগী হবে ভার্সিটি যেতে হলে বাবাকে সাথে নিয়ে চলে যেও।
হেমন্তি বললো,
~ঠান্ডার কারণে বাবার শরীরটাও বেশী ভালো না।
ইলহাম বললো,
~খেয়াল রেখো বাবার আর কালকে থেকে আমি অফিসে জয়েন করছি তাই হয়তো ব্যস্ত থাকবো।রাতের দিকে ফোন করবো তুমি কোনো টেনশন নিয়ো না।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে আপনি কাজে মনোযোগ দিন রাতেই কথা বলবো।
ইলহাম বললো,
~এখন আমি রাখছি পরে ফোন দিবো অফিসের কিছু ফাইল রয়ে গেছে সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে।
হেমন্তি হুম বলতেই ইলহাম ফোন রেখে দিলো হেমন্তি ফোনটা রেখে রুম থেকে বের হয়ে ইরিনা বেগমকে বললো,
~উনার সাথে কথা হয়েছে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~সব ঠিক আছে তো?
হেমন্তি বললো,
~হ্যা মা সব ঠিক আছে। বাবার শরীরটা এখন কেমন?
ইরিনা বেগম বললেন,
~এখন ভালোই আছে।
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো ইলহাম সারাদিনের কাজের পর হেমন্তি আর হিয়ার সাথে কথা বলে।হেমন্তিও সেই মূর্হুতোটা অনেক বেশী উপভোগ করে হেমন্তির দিনও ভালোই কাটছে পড়াশোনা আর সবার সাথে কথা বলে ভালোই চলছে।হিয়ার সাথে সে দেখা করতে যায় হিয়া তাকে বলেছে কিছুদিন থেকে যেতে হেমন্তি তাকে আশ্বাস দিয়েছে কয়েদিন পর এসে থেকে যাবে।সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই কেটে গেলো ১মাস কিন্তু এই ভালো সময় যে থাকবেনা কোনো এক ঝড় তাদের জীবনে আসতে চলেছে কালো রাতের আর্বিভাব হবে তাদের জীবনে।
হিয়ার শরীরটা বেশ খারাপ আজ পেটে অনেক ব্যাথা ফারুক অফিসে চলে গেছে রেহেনা বেগম রান্নাঘরে কাজ করছে।হিয়ার পেটে চিনচিন ব্যাথা করছে হিয়া বিছানা থেকে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যাথার কারণে দাড়াতে পারছেনা সে অস্ফুটস্বরে সে বলে উঠলো,
~মা।
আফসোস হিয়ার ডাক রেহেনা বেগমের কান পর্যন্ত পৌছায়নি হিয়া দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে সে অতি কষ্টল উঠে দাড়ালো।ধীর পায়ে হেঁটে সে দরজার কাছে আসতে নিবে তখনই হিয়ার মাথা ঘুরতে লাগলো সে টালসামলাতে না পেরে টিটেবিলের সাথে বারি খেয়ে মাটিতে পরে গেলো।মাথা কেটে রক্ত বের হয়ে গেলো হিয়ার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসলো রেহেনা বেগম হিয়ার জন্য জুস নিয়ে আসলো দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো হিয়াকে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে।রেহেনা বেগমের হাত থেকে গ্লাস পরে গেলো সে চিৎকার করে বললো,
~হিয়া তোমার কী হয়েছে?
সে হিয়ার মাথা কোলে তুলে হিয়ার ফোন নিয়ে ফারুকের নাম্বারে ফোন দিতেই ফারুক রিসিভ করলো রেহেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
~ফারুক বাসায় আয় হিয়া মা অজ্ঞান হয়ে গেছে।
রেহেনা বেগমের কথা শুনে ফারুকের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।সে শুধু বললো,
~আমি আসছি মা।
বলেই ফারুক দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসলো রিকশা নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

____♥_____

হেমন্তি ব্যাগ গুছিয়ে নিলো আজ সে হিয়ার বাসায় যাবে কিছুদিন থাকতে হিয়াকে সারপ্রাইজ দিবে তাই তাকে বলে নি।হেমন্তি ইমরান খানের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো রিকশায় উঠে বসতেই ইমরান খান বললো,
~আমার একটু কাজ আছে তাই তুমি একাই চলে যাও।
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~ঠিক আছে বাবা চলে যেতে পারবো।
ইমরান খান হেমন্তিকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন নিজ কাজের স্থানে হেমন্তি রিকশায় বসে ভাবছে হিয়া কতো খুশী হবে তাকে দেখে আর হেমন্তির মনটাও ভালো থাকবে।রিকশা এসে থামলো হিয়ার বাড়ির সামনে হেমন্তি রিকশা ভাড়া মিটিয়ে যেই না বাসার ভিতরে যেতে নিবে তখনই সে দেখলো ফারুক হিয়াকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে।হেমন্তির বুকটা কেঁপে উঠলো হিয়ার এ অবস্থা দেখে সে হাতের ব্যাগ রেখে দৌড়ে চলে গেলো হিয়ার কাছে।ফারুক হেমন্তিকে দেখে বললো,
~হেমন্তি তুমি মাকে নিয়ে আসো আমি হিয়াকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে ভাইয়া।
ফারুক হিয়াকে সিএনজিতে করে নিয়ে গেলো হাসপাতাল হেমন্তি রেহেনা বেগমকে নিয়ে রিকশায় করে ছুটলো হাসপাতাল।রেহেনা বেগম কেঁদেই যাচ্ছেন আর বলছেন,
~সবকিছু আমার জন্য হয়েছে আমি যদি ভালো মতো খেয়াল রাখতাম তাহলে এসব কিছুই হতোনা।
হেমন্তি বললো,
~কিছুই হবে না আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।
হিয়াকে নিয়ে ফারুক হাসপাতালে পৌছাতেই ডাক্তার হিয়াকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেলো।হেমন্তি আর রেহেনা বেগম পৌছাতেই ফারুক তাদের দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~হিয়াকে ভিতরে নিয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছিনা কী করবো?
হেমন্তি বললো,
~ভাইয়া নিজেকে সামলান আপুর ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
ফারুক বললো,
~হ্যা আমি দেখছি।
ফারুক চলে গেলো হেমন্তি রেহেনা বেগমকে বসিয়ে দিয়ে ইমরান খানকে ফোন করলো ইমরান খান হেমন্তির কথা শুনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।
ডাক্তার নাসরিন চলে এসেছেন সে এসেই হিয়ার কাছে চলে গেলেন হিয়াকে চেক করে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলেন এরপর কিছু টেস্ট করাতে বললেন।এসবের মাঝেই সবাই এসে হাজির হেমন্তির শুধু ইলহামের কথা মনে পরছে সে যদি একবার জানে হিয়ার অবস্থা তাহলে কী করবে?হেমন্তির চিন্তার মাঝেই ডাক্তার নাসরিন বের হয়ে আসলেন তাকে দেখেই ফারুক এগিয়ে এসে বললো,
~হিয়া কেমন আছে?
ডাক্তার নাসরিন বললেন,
~মাথা ব্যান্ডেজ করা হয়েছে আর কিছু টেস্ট করানো হয়েছে রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে।দোয়া করুন যাতে বেবি ঠিক থাকে কারণ আমার কাছে অবস্থান বেশী একটা ভালো লাগছেনা।
ডাক্তার নাসরিনের কথা শুনে ফারুক মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো রেহেনা বেগম কান্নায় ভেঙে পরলেন।হেমন্তিও কেঁদে ফেললো কেয়া হেমন্তিকে সামলাতে লাগলো ইরিনা বেগমের চোখেও পানি চলে আসলো।
ফারুক বললো,
~হিয়ার কী জ্ঞান ফিরেছে?
ডাক্তার নাসরিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~নাহ কয়েক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে।
ফারুক বললো,
~দেখা করতে পারবো।
ডাক্তার নাসরিন বললো,
~হ্যা অবশ্যই কিন্তু যেকোনো একজন।
বলেই ডাক্তার নাসরিন চলে গেলো ফারুক বললো,
~আমি হিয়ার সাথে দেখা করে আসছি।
হেমন্তি বললো,
~ভাইয়া ওনাকে জানাতে হবে।
ফারুক বললো,
~কোনো দরকার নেই ইলহামকে জানানোর। ইলহাম এখন ব্যস্ত ওকে টেনশন দেওয়ার প্রয়োজন নেই সবাই নরমাল ব্যবহার করবে।
হেমন্তি কিছুই বললোনা সে আবার চেয়ারে বসে পরলো ফারুক হিয়ার রুমের দিকে চলে গেলো।

____♥____

ইলহাম অফিসের কাজ শেষ করে হেড কোর্য়াটারে পৌছালো নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার সামনে নিতেই তার মনে পরলো হিয়ার কথা।মনটা একদম আনচান করে উঠলো ইলহাম ফোন বের করে হিয়ার নাম্বারে ফোন করলো কিন্তু কেউই রিসিভ করলোনা।ইলহাম ২/৩বার ট্রাই করে ফারুকের নাম্বারে ডায়াল করতেই ফারুক রিসিভ করলো।ইলহাম বললো,
~কখন থেকে হিয়াকে ফোন করছি ফোন কেন রিসিভ করছেনা?
ফারুক গলার স্বর ঠিক করে বললো,
~হিয়া ঘুমিয়ে পরেছে তাই ফোন রিসিভ করতে পারেনি।
ইলহাম বললো,
~ওর শরীর ঠিক আছে তো?
ইলহামের প্রশ্ন শুনে ফারুকের চোখের কোণে পানি চলে আসলো ইলহাম ফারুকের কোনো জবাব না পেয়ে আবার বলে উঠলো,
~ভাইয়া আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
ইলহামের কথায় ফারুক চোখের পানি মুছে বললো,
~সব ঠিক আছে তুমি কোনো চিন্তা করোনা কাজে মনোযোগ দেও।
ইলহাম বললো,
~ভাইয়া খুব দ্রুত আমার কাজ শেষ হয়ে যাবে আমি হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসতে পারবো।আপনি কাউকে বলবেন না এটা সারপ্রাইজ
ফারুক বললো,
~চলে আসো ইলহাম এখানে অনেকের তোমার প্রয়োজন।
ইলহাম ফারুকের কথা বুঝতে না পেরে বললো,
~কী বলছেন ভাইয়া?
ফারুক বললো,
~সে কিছু না ইলহাম তুমি নিশ্চিন্তে থাকো কেউই কিছু জানবেনা।
ইলহাম হেসে বললো,
~ঠিক আছে।
সবাই এখন সকালের জন্য অপেক্ষা করছে হেমন্তি রেহেনা বেগমেকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে তার বিশ্রামের প্রয়োজন।
হেমন্তি জায়নামাজে বসে দোয়া করছে হিয়ার জন্য দুচোখ থেকে অশ্রু বয়ে যাচ্ছে হিয়ার বাচ্চাটা যাতে ভালো থাকে সেটাই দোয়া করছে।হিয়ার জ্ঞান এখন পর্যন্ত আসেনি ডাক্তার বলেছে বেশী দূর্বলতার কারণে তার শরীর ক্লান্ত তাই সকাল পর্যন্ত দেখতে হবে।
হেমন্তি জায়নামাজ থেকে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ৩.৩০ বাজে ইলহামের সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে এই প্রথম সে ইলহামের কাছে মিথ্যা বলেছে।
হেমন্তি বিছানায় শুয়ে পরলো নানান চিন্তা তার মাথায় কেনজানি মনটা কু ডাকছে মাথাটা ভনভন করছে।
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৬
ইলহাম স্বপ্নে দেখছে হিয়া একটা সাদা শাড়ি পরে আছে তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে একটা মেয়ে বাচ্চা হঠাৎই সেই মেয়ে বাচ্চাটি হিয়ার হাত ছেড়ে পালিয়ে গেলো।হিয়ার হাসিমাখা মুখটা কালো হয়ে গেছে সে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সেই বাচ্চা মেয়েটির পিছনে দৌড়ে যাচ্ছে এক পর্যায়ে হিয়া সেই মেয়ে বাচ্চাটি সহ হাওয়ায় মিলে গেলো।তখনই ইলহামের ঘুম ভেঙ্গে গেলো সে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে ঠান্ডার সময়ও সে ঘেমে এককার।শোয়া থেকে উঠে বসে সে নাক ফুলিয়ে কতক্ষন শ্বাস নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ৮টা বাজে।ফজর নামায শেষ করে সে ঘুমিয়ে পরেছিল হঠাৎ এই স্বপ্নটা এসে তার মনটাকে বিচলিত করে ফেলেছে।
ইলহাম ফোন হাতে নিয়ে তৎক্ষনাৎ হিয়ার নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু এবার ফোন বন্ধ ইলহামের মনটা আনচান করছে ইলহাম ফারুককে ফোন করলো।
হাসপাতালের কড়িডোরে দাড়িয়ে আছে ফারুক নিজেকে সামলাতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।আজকের দিনটা তার জীবনের অনেক ভারী দিন হঠাৎ তার পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।ফারুক পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ইলহামের নামটা জ্বলজ্বল করছে ফারুক ভ্রুকুচকে ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই উদ্বিগ্ন কন্ঠে ইলহাম বলে উঠলো,
~হিয়া কোথায় ভাইয়া?সে কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন বন্ধ দ্রুত ওকে ফোনটা দিন তো।
ফারুক কী বলবে বুঝতে পারছেনা তার মাথাটা ভার হয়ে আসছে ফারুক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
~হিয়া শুয়ে আছে ওর শরীরটা ভালো লাগছেনা তাই।
ফারুকের কথা শুনে ইলহাম ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~কী হয়েছে হিয়ার?
ফারুক বললো,
~মাথাটা ওর ব্যাথা তাই শুয়ে আছে।
ফারুকের কথায় ইলহামের মনটা শান্ত হচ্ছেনা মনে হচ্ছে বড় কিছু হয়ে গেছে এই অশান্ত মনটাকে কীভাবে শান্ত করবে তার দিক খুজে পাচ্ছেনা। ইলহাম বললো,
~আমি ভিডিও কল করছি আপনি একটু হিয়াকে দেখান তাহলেই হবে।
ফারুক কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে নার্স বলে উঠলো,
~পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে আপনি দেখা করতে পারবেন।
অসাবধানতায় ফোনটা স্পিকারে দেওয়া ছিল ইলহাম সবটা কথা শুনে বলে উঠলো,
~কে হাসপাতালে ভর্তি?আপনারা কী লুকাচ্ছেন আমার থেকে?
ফারুক ইলহামের কথা শুনে বললো,
~আমি তোমাকে কিছুক্ষণ পর ফোন করছি।
বলেই সে ফোন রেখে দৌড়ে চলে গেলো হিয়ার কেবিনে ইলহাম কান থেকে ফোন নামিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরলো ইলহামের কেন জানি মনে হচ্ছে হিয়ার কিছু হয়েছে।সে হেমন্তিকে ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো তখনই তার ফোনে অফিস কলিগের ফোন চলে আসলো ইলহাম বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো।
হেমন্তি সকালের নাস্তা টিফিনবক্সে নিয়ে বের হয়ে পরেছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ফারুক কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে জানিয়েছে হিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।সবাই হেমন্তির সাথে হাসপাতালে আসতে চেয়েছিল হেমন্তি মানা করেছে হিয়ার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন সবাই সেখানে থাকলে হিয়া আরাম করতে পারবেনা।
হেমন্তি হাসপাতালে পৌছে সোজা হিয়ার কেবিনে চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো ফারুক হিয়াকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে।হেমন্তি দরজায় টোকা দিতেই হিয়ার নজর পরলো হেমন্তির উপর হিয়া হাসিমুখে বললো,
~হেমন্তি,ভিতরে আসো।
ফারুক পিছন ফিরে হেমন্তিকে দেখে বললো,
~নাস্তা করেছো হেমন্তি?
হেমন্তি বললো,
~নাহ ভাইয়া ভেবেছিলাম যে তিনজন একসাথে নাস্তা করবো তাই তো টিফিনবাক্সে নাস্তা নিয়ে এসেছি।
হিয়া বললো,
~বেশ করেছো যাও টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দুজনই খেয়ে নেও।
ফারুক হেমন্তির হাত থেকে টিফিনবক্সটা নিয়ে টেবিলে চলে গেলো হেমন্তি হিয়ার হাত ধরে তার পাশে বসে বললো,
~কেমন লাগছে আপু?
হিয়া বললো,
~ভালোই লাগছে আর জানো আমার বেবিও একদম ভালো আছে।

____♥_____

হিয়ার কথা শুনে হেমন্তি একবার ফারুকের দিকে তাকালো ফারুক চোখের ইশারায় না বললো।হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~বাবু একদম ফিট তো থাকবেই তার মা যে অনেক সাহসী তাই।
হিয়া বললো,
~ইলহামকে কিছু জানিয়েছো নাকি?ওকে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই শুধু টেনশন করবে।
হিয়ার কথা শুনে ইলহামের ফোনের কথা মনে পরলো ফারুকের সে হেমন্তিকে বললো,
~আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি হেমন্তি। হিয়ার খেয়াল রেখো এখনি এসে পরবো।
হেমন্তি মাথাদুলালো ফারুক কেবিনের বাহিরে গিয়ে ফোন বের করে ইলহামকে ফোন করলো।ইলহাম অফিসের কলিগের সাথে কথা শেষ করে অফিসের ফাইল চেক করতে লাগলো তখনই তার ফোন বেজে উঠলো।
ইলহাম ফারুকের নাম ফোনের স্ক্রিনে দেখে সে তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলো,
~ভাইয়া সত্যি বলবেন হিয়া ঠিক আছে তো?
ফারুক আমতা আমতা করে বললো,
~আরে হিয়া ঠিক আছে আমি হাসপাতালে এসেছি কারণ আমার বন্ধুর এক্সিডেন্ট হয়েছে ওকে নিয়েই হাসপাতালে আছি।ইলহাম একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
~আমি কতো টেনশনে ছিলাম জানেন আজকে স্বপ্নটাও খারাপ দেখেছি।
ফারুক মাথার ঘাম মুছে বললো,
~তুমি কোনো চিন্তা করোনা এখানে সব ঠিক আছে।
ইলহাম বললো,
~খুব দ্রুতই বাংলাদেশ ফিরছি আমি।
ফারুক বললো,
~তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।
ইলহাম বললো,
~রাখছি ভাইয়া।
ফারুক বললো,
~ঠিক আছে।
ইলহাম ফোন রেখে হাসিমুখে অফিসের জন্য তৈরি হতে শুরু করলো ফারুক ফোন রেখে পিছন ফিরতেই একজন নার্স এসে বললো,
~ডাক্তার নাসরিন আপনাকে ডাকছে রির্পোট চলে এসেছে।
ফারুক বললো,
~আমি আসছি।
নার্স চলে যেতেই ফারুক চোখের কোণে জমা থাকা পানিটা মুছে ধীর পায়ে ডাক্তার নাসরিনের কেবিনের দিকল হাঁটা ধরলো।হেমন্তি হিয়ার সাথে কথা বলছে হিয়া পেটে হাত বুলিয়ে বলছে,
~দেখেছো তোমার মামী তোমাকে কতো ভালোবাসে সকাল সকাল তোমাকে দেখতে চলে এসেছে।
হেমন্তি হিয়ার এমন মমতাময় কথা শুনে চোখটা ছলছল করে উঠলো এই বাচ্চাটাকে ঠিক হতেই হবে নাহলে হিয়া হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবেনা।
হেমন্তি হিয়ার হাতে হাত রেখে বললো,
~বাবুকে সবাই ভালোবাসে একবার সে আমার কাছে আসলে তোমাকে দিবোই না।
হিয়া হেসে বললো,
~দেখবো নে।
ফারুক ডাক্তার নাসরিনের সামনে বসে আছে সে রিপোর্ট চেক করে ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আপনাদের ভাগ্য অনেক ভালো ফারুক সাহেব।
Baby is ok.
ডাক্তার নাসরিনের কথা শুনে ফারুক বললো,
~আপনি সত্যি বলছেন ডাক্তার?
ডাক্তার নাসরিন বললেন,
~আমার মিথ্যে বলে লাভ নেই কিন্তু হিয়া এখন থেকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকবে কোনো কাজ করার চেষ্টাও যাতে সে না করে।
ফারুক বললো,
~আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ডাক্তার আমি খেয়াল রাখবো।
ডাক্তার নাসরিন বললেন,
~শারীরিক মানসিক দুদিক দিয়েই ভালো থাকতে হবে তার জীবনে যাতে সবকিছু পসিটিভ হয় এমন পরিবেশই রাখতে হবে।

____♥_____

ফারুক বললো,
~হিয়াকে কবে বাসায় নিয়ে যেতো পারবো?
ডাক্তার নাসরিন বললেন,
~বিকেলেই নিয়ে যেতে পারবেন।
ফারুক রির্পোট গুলো হাতে নিয়ে ডাক্তার নাসরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ধন্যবাদ ডাক্তার।
ডাক্তার নাসরিন মুচকি হাসলেন ফারুক রিপোর্ট নিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে আসলো সে সোজা চলে গেলো হিয়ার কেবিনে।
রেহেনা বেগম জায়নামাজে বসে হিয়ার জন্য দুহাত তুলে দোয়া করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালেন।এরপর জায়নামাজ ছেড়ে উঠে রুমের বাহিরে আসলেন ইরিনা বেগম তাকে দেখে বললেন,
~আপা,এখন তো কিছু খেয়ে নিন।
রেহেনা বেগম বললেন,
~এখন খেতে পারবো আপা আমার বউমা একদম ঠিক আছে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~বসেন টেবিলে হেমন্তির ফোন এসেছিল বিকেলে চলে আসবে হিয়া।
রেহেনা বেগম বললেন,
~অনেক ভালো লাগছে আপা।
ইরিনা বেগম বললেন,
~আপা,আমি বলছি হিয়া আর আপনারা এ কয়েকদিন এবাসায় থেকে যান এটাই উত্তম হবে।
রেহেনা বেগম বললেন,
~আপনারা অনেক ভালোমানুষ আমাদের জন্য অনেক করেছেন।
ইরিনা বেগম বললেন,
~আপা এসব কী বলেন আমরা তো এক পরিবার আপনাদের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব।
রেহেনা বেগম চোখ মুছে বললেন,
~ঠিক আছে আপা আমরা এখানেই থাকবো।
ইলহাম অফিস থেকে অনেক বড় সুখবর পেয়েছে আর মাত্র ৩দিন পর সে চলে যাবে নিজ দেশে প্রজেক্টটা খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে সময়ের আগেই সে সব শেষ করে দিয়েছে।আজ শুধু তাকে একবার ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ঘুরে আসতে হবে সেখানে চেক করে আসলেই তার কাজ সম্পন্ন ৩দিন সে শুধু শপিং করবে আর টিকটের ব্যবস্থাও করা হয়ে যাবে।
ইলহাম ভেবেছে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে তাই কাউকে না জানিয়েই সে পারি দিবে তার চিরচেনা স্থানে তার আপনজনদের মাঝে।
বিকেলে হিয়াকে নিয়ে হেমন্তিদের বাসায় উপস্থিত হলো ফারুক হিয়ার জন্য হেমন্তি নিজের রুম পরিষ্কার করে দিয়েছে।হেমন্তি হিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,
~আপু,কোনো কাজ তুমি করবেনা আমি যাতে না দেখি তোমাকে বিছানা থেকে উঠতে।
হিয়া বললো,
~আবারো এসব শুরু হয়ে গেলো আমার এভাবে শুয়ে থাকতে ভালো লাগেনা।
হেমন্তি বললো,
~থাকতে হবে এখন তোমাকে রেস্ট নিতে হবে।
ফারুক রুমে প্রবেশ করেই হিয়াকে বললো,
~আমি বাসায় গিয়ে আসছি আমার কাপড় গুলো নিয়ে আসছি।
হিয়া বললো,
~শশুড় বাড়িতে থাকার প্ল্যানিং শুরু হয়ে গেছে।
ফারুক হেসে বললো,
~সালার শশুর বাড়িতে থাকার প্ল্যানিং করছি।
ফারুকের কথা শুনে হিয়া আর হেমন্তি দুজনই হেসে উঠলো

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here