#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৫
কেয়াকে যথাসময়ে বাহিরে নিয়ে আসা হলো কেয়া মাথানিচু করে আছে তাকে একদম তানভীর এর সামনাসামনি বসিয়েছে হেমন্তি।কেয়া মাথা তুলতে পারছেনা সকল লজ্জা তাকেই ঘিরে দাড়িয়েছে এমনই মনে হচ্ছে তার।তানভীর এর মা রেহেনা খানম কেয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে বললেন,
~আমাদের কিন্তু মেয়ে অনেক পছন্দ হয়েছে।
রেহেনা খানমের কথা শুনে উপস্থিত সবাই অনেক খুশি হলেন কেয়া মাথানিচু করেই বসে আছে।ইমরান খান বললেন,
~আপা,আমরা খুশি হয়েছি আপনার কথা শুনে কিন্তু আমি চাই ছেলে-মেয়ে দুজনই একটু আলাদা ঘরে কথা বললে ভালো হতো।এতে তাদের মনোভাবটা আমরা বুঝতে পারতাম আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা এ বিষয়ে এগিয়ে যাবো।
রেহেনা খানম হাসিমুখে বললেন,
~অবশ্যই তাদের জীবনের প্রতিটি পদে একসাথে চলতে হবে তাই তাদের মনোভাব জানা অত্যন্ত জরুরি।
রেহেনা খানমের কথা শুনে উপস্থিত সবাই বুঝতে পারলো সে অনেক ভালো মনের অধিকারী।হেমন্তি কেয়াকে তার রুমে নিয়ে গেলো তার কিছুক্ষণ পর ইলহাম তানভীরকে নিয়ে গেলো কেয়ার রুমে।তাদের দুজনকে রেখে হেমন্তি আর ইলহাম বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে।ইলহাম হেমন্তিকে বললো,
~হেমন্তি,তোমার মনে আছে যেদিন আমি তোমাকে দেখতে এসেছিলান তোমার বাবা ঠিক এই কথাটাই বলেছিল এরপর আমরা দুজন তোমার রুমে গিয়ে বসে ছিলাম।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~মনে আছে কিছু মুর্হুত আমরা ভুলতে পারিনা এ জীবনে।সেদিন আমরা দুজনই চুপ ছিলাম কেউ কোনো কথাই বলেনি সেদিন।
ইলহাম বললো,
~সেই নীরবতার মাঝেও হাজারো কথা ছিল।
হেমন্তি বললো,
~আপনার মনে কথা ছিল?আমি তো মনে করেছিলাম আপনি মনহীন মানুষ।
ইলহাম বললো,
~আর আমি মনে করেছিলাম তুমি বোবা।
হেমন্তি ইলহামের কথা শুনে তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো ইলহাম হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে গেলো।ইলহাম চলে যেতেই কেউ পিছন থেকে বলে উঠলো,
~কেমন আছে হেমন্তি?
হেমন্তি কন্ঠস্বরের মালিককে চিনতে পারলো সে পিছন ফিরে দেখলো আরফান দাড়িয়ে আছে।হেমন্তি বললো,
~ভালো আছি ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?
আরফান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~ভালোই আছি।
হেমন্তি আর কথা বাড়াতে চাচ্ছিলনা তাই সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখনই আরফান বললো,
~আমি বিয়ে করছি হেমন্তি এই মাসেই করবো।
হেমন্তি আরফানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,
~এটা তো খুশির কথা অভিনন্দন আপনাকে।
আরফান বললো,
~তোমাকে সুখে দেখে আমার অনেক খুশি লাগছে ইলহাম মানুষটা অনেক ভালো। দোয়া করি যাতে তুমি সুখে থাকো তোমার এই ঠোঁটে হাসি যেন লেগেই থাকে।
হেমন্তি বললো,
~আমিও দোয়া করি যাতে আপনিও জীবনের প্রতিটা মুর্হুতে সুখে থাকুন।ভালো থাকবেন নিজ জীবনসঙ্গীকে নিয়ে।
এতটুকু বলে হেমন্তি আরফানকে রেখে সেখান থেকে চলে আসলে আরফান হেমন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~চেষ্টা করবো যাতে এই নতুন জীবনে তোমাকে ভুলে থাকতে পারি।
আসলে মানুষের জীবনটা অনেক অদ্ভুত আমরা যাকে মনে প্রাণে ভালোবাসবো সে কোনোদিন আমাদের কাছে থাকবেনা অথচ এমন একজহ আমাদের জীবনে চলে আসবে যাকে না আমরা কোনোদিন অনুভব করেছি না কোনোদিন কল্পনা করেছি।
কেয়া আর তানভীর সেই কখন থেকে চুপ করে বসে আছে কেউই কোনো কথা বলছেনা এতো কীসের জড়তা কাজ করছে তাদের মধ্যে বুঝতে পারছেনা দুজনই।কেয়া এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
~আমি চলে যাই আপনার হয়তো কোনো কথা নেই।
কেয়া কথা শেষ করেই বিছানা থেকে উঠে বাহিরের দিকে যেতে নিবে তখনই তানভীর বলে উঠলো,
____♥____
~আসলে কী কথা বলবো তা খুঁজে পাচ্ছিনা?
কেয়া মনে মনে ভাবলো এমন গুরুগম্ভীর মানুষের সাথে সে সংসার করবে কী করে?হেমন্তি আপুকে কতো জ্বালাতন করতাম দুলাভাইয়ের এমন গুরুগম্ভীর স্বভাব নিয়ে এখন শেষ পর্যন্ত আমার কপালে এইটা ছিল।
কেয়ার এখন কান্না পাচ্ছে কিন্তু এমন অপরিচিত মানুষের সামনে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদলে নির্ঘাত পাগল বলে চলে যাবে।কেয়া নিজেকে সামলে নিতেই তানভীর বললো,
~আপনার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে শুধু এতটুকু খেয়াল রাখবেন যে আমার মা যাতে কোনোদিন কষ্ট না পায়।তার অনেক শখ ছেলের বউকে সে আগলে রাখবে আমার বাবা নেই মাই সব আমার মাকে দেখে রাখলেই চলবে।
তানভীরের এমন সরল কথা শুনে কেয়ার মনটা গলে গেলো যে ছেলে নিজের মাকে এতোটা সম্মান করে সে নিশ্চয়ই কোনোদিন তাকে অপমান করেনা বরং সব সমস্যা থেকে তাকে আগলে রাখবে।কেয়া মুচকি হেসে বললো,
~আমরা অনেকক্ষণ ধরে এই রুমে বসে আছি এখন বাহিরে যাওয়া দরকার।
তানভীর বললো,
~অবশ্যই।
অতঃপর তারা দুজনই রুম থেকে বের হয়ে হলরুমে চলে আসলো কেয়া নিজের জায়গায় বসে পরলো।রেহেনা খানম বললেন,
~তাহলে আজ আমরা আসি আপনারা মতামত জানিয়ে দিয়েন আমার ফোন নাম্বার ইরিনা আপার কাছে আছে।
তানভীর তার মাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো যাওয়ার আগে একবার কেয়ার দিকে তাকালো।তাদের বিদায় দিয়ে সবাই হলরুমে বসে পরলো ইরিনা বেগম বললেন,
~আমি কী বলছি কেয়ার মতামতটা জেনেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
ইলহাম বললো,
~অবশ্যই কেয়ার মতামত তো প্রয়োজন।
ফারুক বললো,
~সে পর্যন্ত আমরা আরেকটু খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারি।
ইমরান খান বললেন,
~ঠিক বলেছো আমিও তাই ভাবছি।
সুমনা ফুফু বললো,
~আমার একটা আছে ভাইজান যার জন্য আমি এখানে এসেছিলাম।
ইমরান খান বললেন,
~বল।
সুমনা ফুফু বললেন,
~আরফানের বিয়ে ঠিক করেছি এই মাসেই বিয়ে ছোট করেই করছি।তোমরা সবাই যাবে এটা আমার অনুরোধ হিয়া বললো,
~অবশ্যই যাবো।
ইলহাম বললো,
~এটাতো খুশির সংবাদ অবশ্যই আমরা যাবো।
আরফান বললো,
~তোমরা সবাই আসলে আমি অনেক খুশি হবো আমার নতুন জীবনে তোমাদের দোয়া অনেক জরুরি।
হেমন্তি বললো,
~আমরা আসবো।
রাতের খাবার শেষ করে সবাই রওনা দিবে যার যার বাসার উদ্দেশ্যে তখনই কেয়া বলে উঠলো,
~হেমন্তি আপু, তুই কয়েকটাদিন থেকে যা তোর সাথে কতোদিন মন খুলে কথা বলিনা।
হেমন্তি বললো,
~তোর দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করে আসি।
কেয়া বললো,
~আমি যাই তুমি বসো।
কেয়া রুম থেকে বের হয়ে দৌড়ে ইলহামের কাছে এসে বললো,
~আপু কয়েকটাদিন এখানেই থাকবে।
ইলহাম কেয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পরলো হিয়া আর ফারুক ইলহামের চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসছে।ইমরান খান কেয়ার কথায় সহমত হয়ে বললেন,
~আসলেই ইলহাম বাবা মেয়েটা অনেকদিন ধরে থাকেনা ওকে আজ রেখে যাও।
ইলহামের মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেলো করুন মুখে শশুড়ের দিকে তাকালো হিয়ার তো অনেক হাসি পাচ্ছে।হেমন্তি সেখানে উপস্থিত হতেই কেয়া বললো,
~আপু,তুমি কয়েকটাদিন এখানেই থাকবি দুলাভাই পারমিশন দিয়েছে।
ইলহাম এইবার বললো,
~আমি কখন পারমিশন দিলাম আর তোমার আপু এখন থাকতে পারবেনা।পরে একসময় রেখে যাবো তুমি আমাদের সাথে চলে আসো তাহলেই হবে।
____♥____
ইলহামের এমন কথায় কেয়া আশাহত হলো সে করুন দৃষ্টিতে হেমন্তির দিকে তাকালো।হেমন্তিরও অনেক ইচ্ছে কয়েকটাদিন থেকে যাবে তাই সে বললো,
~আমি দুদিন থাকবো তারপর চলে আসবো বাসায়।
হিয়া ইলহামের কানে ফিসফিস করে বললো,
~আহারে বউও পাশে রইলোনা।
ইলহাম রাগী দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকালো হিয়া হেসে ফারুকের সাথে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,
~ইলহাম,দুদিন পর হেমন্তি চলে আসবে নে এতে এতো ভাবার কী আছে?
ফারুকও হিয়ার কথায় তাল মিলিয়ে বললো,
~আমিও তাই বলছি ইলহাম তুমি আমাদের সাথে চলে আসো তাহলেই তো হলো।
ইরিনা বেগম বললেন,
~ইলহাম বাবা এখানেই থেকে যাক এতে তো কোনো সমস্যা দেখছিনা।
ফারুক বললো,
~ইলহামের অফিস এখান থেকে অনেক দূর হয়ে যায় আর ইলহামের তো অনেক কাজ অফিসে তাই না ইলহাম?
ইলহাম মনে মনে বললো,
~সাহায্য করা তো দূর এরা আমাকে আরো দূরে ঠেলল দিচ্ছে।
হেমন্তি ইলহামের মুখ দেখে বুঝতে পারলো ইলহামের এতে মত নেই তাই হেমন্তি বললো,
~কেয়া,আমি আরেকসময় এসে থেকে যাবো আর তুই যদি বিয়ের জন্য রাজী হয়ে যাস তাহলে তো লম্বা সময়ের জন্য থাকতে আসবো।
হেমন্তির কথা শুনে কেয়া মন খারাপ করলেও হেমন্তিকে আর কিছু বললোনা তারা ৪জনই কেয়াদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
হেমন্তি আর ইলহাম রিক্সায় বসে আছে কেউ কোনো কথা বলছেনা ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুমি কী রাগ করেছো?
হেমন্তি বললো,
~নাহ।
ইলহাম হেমন্তির একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
~একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
হেমন্তি বললো,
~কী জিজ্ঞেস করবেন?
ইলহাম বললো,
~এটা কী সত্যি যে আরফানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল?
হেমন্তি অবাক চোখে তাকিয়ে ইলহামকে বললো,
~এসব কে বলেছে আপনাকে?
ইলহাম বললো,
~সুমনা ফুফু আজ কথায় কথায় বলে ফেলেছিল।
হেমন্তি মাথানিচু করে বললো,
~হ্যা।কিন্তু বাবার ওনাকে পছন্দ ছিল না তাই এ বিষয় আর আগানো হয়নি আর বিয়ের কথাবার্তা হয়েছিল বিয়ে ঠিক হয়নি।
ইলহাম আর কিছু বললো না ইলহামের কোনো শব্দ না শুনে হেমন্তি তার পাণে তাকিয়ে দেখলো ইলহাম বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
হেমন্তি ইলহামের এমন ব্যবহারে একটু কষ্ট পেলো হেমন্তি ভাবছে হয়তো ইলহাম রাগ করেছে।আর ইলহাম ভাবছে যদি হেমন্তির বাবা বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যেতো তাহলে সে কীভাবে হেমন্তিকে নিজের করে পেতো ধন্যবাদ আল্লাহ হেমন্তিকে আমাকে দেওয়ার জন্য।
____♥_____
দুজনের চিন্তাধারা দুদিকে অবস্থান করছে বাসায় পৌছে হেমন্তি কোনো কথা না বলে নিজের কাজ করতে লাগলো বিছানা গুছিয়ে রুমের বাহিরে এসে অন্য একটি রুমে চলে গেলো।ইলহাম ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করতে থাকে হেমন্তি অন্য রুমের বিছানায় শুয়ে আছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তার মন বলছে ইলহাম তার সাথে রাগ করেছে তাই সে কেঁদে কেটে পাহাড় সমান দুখ দেখাতে ব্যস্ত।
ইলহাম নিজের কাজ শেষ করে ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখলো রাতঃ১২.০৫ বাজে।ইলহাম অবাক হলো এখন পর্যন্ত হেমন্তি ঘরে কেন আসেনি?ইলহাম ল্যাপটপ রেখে সোজা রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো সেখানে হেমন্তিকল না পেয়ে একটু অবাক হলো সে ওয়াশরুমও চেক করলো সেখানেও নেই।অন্য রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ফুপানোর আওয়াজ শুনে তার পা থমকে গেলো।
সে রুমের দরজা ঠেলে রুমের ভিতর গিয়ে দেখলো হেমন্তি বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশে মুখ করে আর একটু পর পর কেঁপে উঠছে।ইলহাম হেমন্তির এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো সে তড়িঘড়ি করে হেমন্তির কাঁধে হাত রেখে বললো,
~কী হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?তুমি মন খারাপ করেছো আমাকে বলো কী হয়েছে?
হেমন্তি ওভাবেই শুয়ে রইলো ইলহাম এবার না পেরে হেমন্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখলো হেমন্তি কাঁদছে কান্নার ফলে তার চোখ-মুখ লাল আর ফুলে গেছে।
ইলহাম হেমন্তিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তুমি কাঁদছো কেন?কীসের এতো কষ্ট তোমার?
হেমন্তি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো,
~আপনি আমাকে কেন ভুল ভাবছেন?আমি সত্যিই বলছি আরফানের ভাইয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব ফুফু দিয়েছিল বাআার পছন্দ হয়নি সে জন্য বিয়েও হয়নি।এতে আপনি কেন আমার ওপর রেগে আছেন?
ইলহাম হেমন্তির কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে তাই বুঝতে পারছেনা। ইলহাম হেমন্তির গালে নিজ ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে বললো,
~পাগলি,আমি কোনো রাগ করিনি তুমি যাতে অস্বস্তি ফিল না করো তাই কোনো কথা বলিনি।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি তার বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
~সত্যি বলছেন?
ইলহাম হালকা হেসে হেমন্তির চোখ মুছে দিয়ে বললো,
~সত্যি।আর আমি তো অনেক খুশি যদি শশুড় বাবা বিয়ের জন্য হ্যা বলে দিতো তাহলে তমি আজ আমার কাছে থাকতেনা তাই আমার জন্য তো ভালোই হয়েছে।
হেমন্তি বোকার মতো ইলহামের দিকে তাকিয়ে রইলো ইলহাম হেমন্তির চাহনি দেখে হালকা হেসে হেমন্তিকে আবার নিজের বক্ষপিঞ্জিরায় আবদ্ধ করলো।হেমন্তিও কিছু বললো না ছোট বাচ্চার মতো সেও ইলহামের শার্টের কলার ধরে ইলহামের বুকে শুয়ে রইলো।
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
ইলহাম অফিসে কাজে ব্যস্ত নিউ প্রজেক্টের কারণে তার উপর কাজের চাপটা একটু বেশি।ইলহাম মনোযোগ সহকারে কাজ করছে তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো। ইলহাম হাতের কাজটা রেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফোনের স্ক্রিনে হেমন্তির নামটা জ্বলজ্বল করছে। ইলহাম ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে ফাইলের দিকে নজর দিলো অপরপাশ থেকে হেমন্তি বলে উঠলো,
~আপনি কী বেশি ব্যস্ত?আসলে জরুরি কথা আছে না হলে ফোন করতাম না।
ইলহাম চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ফোনটা ভালোমতো কানের সাথে লাগিয়ে বললো,
~হেমন্তি,কীসের জন্য ফোন করেছো বলো?আমার হাতে ততোটা কাজ নেই।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
~বাবা ফোন করেছিল কেয়া বিয়েতে নিজের মত দিয়েছে। তাই বাবা চাইছে আপনি একটু তানভীরের অফিসে গিয়ে খোজখবর নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো।
ইলহাম চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলো অন্য একটা ফাইল খুজতে খুজতে হেমন্তিকে বললো,
~আমি ব্যাপারটা দেখছি তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে এখন আমি ফোন রাখছি।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো ইলহাম ফোন কান থেকে নামিয়ে টেবিলের উপর রেখে ফাইল খুজতে মনোযোগ দিলো।
তখনই অফিসের পিয়ন আশরাফ কেবিনের দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলো।ইলহাম অনুমতি দিতেই সে দ্রুত পায়ে কেবিনে ডুকে বললো,
~বস আপনাকে ডাকছে।
ইলহাম তার কথা শুনে ফাইল খোজা বন্ধ করে বললো,
~কোনো জরুরি কাজ আছে আমার দ্বারা তার?
আশরাফ কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে বললো,
~আমি এসব জানিনা আপনাকে ডেকেছে।
ইলহাম বললো,
~আমি আসছি তুমি যাও।
আশরাফ চলে গেলো ইলহাম ফাইল গুলো টেবিলে সাজিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো।বসের কেবিনের সামনে এসে নক করতেই ভিতর থেকে অনুমতি পেলো সে তারপর ইলহাম দরজা ঠেলে ভিতরে চলে আসলো।ইলহামকে দেখে তার বস অমিত হাওলাদার বললেন,
~বসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
ইলহাম তার অনুমতি পেয়ে চেয়ারে বসে পরলো অমিত হাওলাদার ইলহামের বাবার বয়সী তাই ইলহাম তাকে শ্রদ্ধা করে।
অমিত হাওলাদার বললেন,
~ইলহাম,তুমি যে প্রজেক্টটায় কাজ করছো সেই প্রজেক্টের জন্য তোমাকে থাইল্যান্ড যেতে হবে।তাও ২মাসের জন্য কারণ সেখানে কোম্পানির মেইন পয়েন্ট রয়েছে আর তোমাকে সেখান থেকেই রির্পোট করতে হবে।
ইলহাম অমিত হাওলাদারের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে কী বলবে বুঝতে পারছেনা এই মুহূর্তে।
ইলহাম নিজেকে সামলে বললো,
~স্যার,আমাকে কিছুদিনের সময় দেওয়া যাবে?
ইলহামের প্রশ্ন শুনে অমিত হাওলাদার হেসে বললেন,
~১মাসের সময় আছে তোমার বউকেও এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়ো আর খেয়াল রেখো এটা তোমার ক্যারিয়ারের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ইলহাম একটু হাসার চেষ্টা করলো সে চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিম থেকে বের হয়ে নিজ কেবিনে চলে আসলো।চেয়ারে বসে নিজের দুহাত মাথায় চেপে ধরে বললো,
~হেমন্তির সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আমার তার সাথে থাকা প্রয়োজন যদি এখন আমিই দূরে চলে যাই তাহলে হেমন্তি আবার নিজেকে গুটিয়ে নিবে।
ইলহাম আর কিছু ভাবতে পারছেনা মাথাটা ঘুরছে তাই সে চুপ করে বসে রইলো চেয়ারে এই শীতের দিনেও সে ঘেমে একাকার হচ্ছে।
____♥_____
হেমন্তি আজ ইলহামের সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে তার মনটা আজ ভীষণ ভালো।ফিরোজা তাকে সাহায্য করেছে সব কাজ সম্পন্ন করতে সব খাবার তৈরি করার পর হেমন্তি ফিরোজাকে টাকা দিয়ে বললো,
~আপু,আমাকে একটা বেলীফুলের মালা এনে দিবেন?
ফিরোজা হেমন্তির কথা শুনে উপলব্ধি করতে পারলো এই প্রশ্নে কতোটা জড়তা আর লজ্জা কাজ করছে।ফিরোজা মুচকি হেসে বললো,
~আইনা দিমু ভাবীজান আফনে একটু অপেক্ষা করেন।
হেমন্তি বললো,
~বাকি টাকা আপনি রেখে দিয়েন আমাকে আজ অনেক সাহায্য করেছেন।
ফিরোজা টাকা নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসলো হেমন্তি ইলহামের পছন্দের রঙের শাড়ি পরলো।কিছুক্ষণ পর ফিরোজা তাকে বেলীফুলের মালা দিয়ে চলে গেলো যাওয়ার আগে বললো,
~আফনাগো যেনো আল্লাহ সব সময় খুশী রাহে।
হেমন্তি ফিরোজার কথা শুনে খুশি হলো সে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলো খোঁপা বেলীফুলের মালাটা গুজে দিলো।তারপর বারান্দার দোলনায় বসে পরলো আশেপাশের মনোরম দৃশ্য সে দেখতে লাগলো।
হেমন্তি ভাবতে লাগলো আগে তো প্রকৃতি এতো সুন্দর লাগেনি এখন কেন এতো সুন্দর লাগছে?এই ভালোলাগার বিষয়টা কী ইলহামের সাথে জড়িত।ইলহামের কথা মনে হতেই হেমন্তি লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেললো হাতের আঙ্গুলে দেওয়া মেহেদীর রঙ্গটা একদম লাল হয়ে আছে।ফিরোজা নিজ গাছের মেহেদী এনে বেঁটে দিয়ে হেমন্তির হাতে পড়িয়ে দিয়েছে।
হেমন্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এতো সুন্দর এই ধরনী কারণ আপনি আমার সাথে আছেন।আপনার থেকে দূরে আমিও থাকতে পারিনা কারণ বুকটা ফাঁকা লাগে এই অনুভূতির নামটা অজানা কিন্তু আমি জানি আপনি এই অনুভূতির নাম ঠিক বের করে দিবেন।
ইলহাম অফিসে শেষ করে রিক্সায় বসে আছে তার মাথায় নানান ধরনের চিন্তা কাজ করছে।বাসার সামনে এসে সে রিক্সা থেকে নেমে পরলো ভাড়া মিটিয়ে সে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো সিড়ি বেয়ে নিজ ফ্যাল্টের সামনে এসে কলিংবেল বাজালো।
হেমন্তি কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দিলো আর দেখলো ইলহামের বিধ্বস্ত অবস্থা শার্টের অবস্থা বেশ ভালো না চুলগুলো উশখুশ হয়ে আছে।মুখটা একদম কালো হয়ে আছে ইলহামের এমন রুপ দেখে হেমন্তির মনটা বিষাদময় হয়ে উঠলো।
ইলহাম মুখ তুলে হেমন্তির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো হেমন্তির সুন্দর রুপ।এক পলকেই ইলহামের মনটা ভালো হয়ে গেলো সব টেনশন তার মাথা থেকে দূর হয়ে গেলো।ইলহাম বাসায় প্রবেশ করে সোফায় বসে পরলো হেমন্তি তার জন্য পানি এনে টি টেবিলে রেখে দিলে।ইলহাম জুতা খুলে বললো,
~আজকের এই সাজটা কী আমার জন্য?
হেমন্তির একটু রাগ হলো এ কথাটি শুনে সে আর কার জন্য সাজবে? ইলহাম ছাড়া।হেমন্তি গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~নিজের জন্য সেজেছি আপনার জন্য কেন সাজবো?
ইলহাম হেসে বললো,
~তবুও বলবো অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় হেমন্তি।
হেমন্তি জেনো এটাই শুনতে চেয়েছিল তাই সে লজ্জা পেয়ে বললো,
~আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
ইলহাম আলতো হেসে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর হেমন্তির খোপার বেলীফুলটা ঠিক করে দিয়ে বললো,
~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
____♥_____
হেমন্তি টেবিলে সব খাবার গুছিয়ে রুমে চলে আসলো ইলহাম ওয়াশরুমে আছে দেখে সে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।ইলহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিজের কিছু কাজ শেষ করতে বসে গেলো।
কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো হেমন্তির কথা তাই ইলহাম কাজ সাইডে রেখে বারান্দায় চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো হেমন্তি দোলনায় ঘুমিয়ে পরেছে তা দেখে ইলহাম মুখ টিপে হেসে হেমন্তির কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।
হেমন্তির ঘুমটা তাতে ছুটে গেলো হেমন্তি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো সে ইলহামের কোলে। তা দেখে হেমন্তি অবাক হয়ে বললো,
~আমাকে কোলে কেন নিয়েছেন?
ইলহাম হেমন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,
~কারণ আপনি দোলনায় ঘুমিয়ে পরেছিলেন তাই।
হেমন্তি বসে পরলো আর বললো,
~চোখ লেগে গিয়েছিল তাই।
ইলহাম বললো,
~খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
হেমন্তি আর ইলহাম খাবার খেয়ে নিলো হেমন্তি সব গুছিয়ে রুমে এসে দেখলো ইলহাম শুয়ে পরেছে।
হেমন্তিও আর কিছু না বলে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পরলো তখনই হেমন্তিকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইলহাম।হেমন্তি ইলহামের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো হেমন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আপনি ঘুমাননি?
ইলহাম বললো,
~নাহ ঘুম আসছে না।
ইলহামের হাতের বাঁধন একটু হালকা হতেই হেমন্তি ইলহামের দিকে ফিরে বললো,
~আপনার কী শরীর খারাপ লাগছে?আপনার মুখটা কেমন যেনো লাগছে।
ইলহাম হেমন্তির কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~এভাবেই কাজের অনেক চাপ তো তাই।
ইলহাম হেমন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি যদি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাই তাহলে তুমি কী আমায় ভুলে যাবে?
ইলহামের এমন প্রশ্ন শুনে হেমন্তি অনেকটাই অবাক হয়ে বললো,
~এসব কেমন কথা?আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
ইলহাম কিছু না বলে হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বালিশে মাথা রেখে বললো,
~এভাবেই বললাম আর কী তুমি ঘুমিয়ে পরো?
ইলহাম হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো হেমন্তির মনটা কেমন যেনো খচখচ করছে কিছুই ভালো লাগছেনা।
____♥_____
কিছুদিন যাবত ফারুক খেয়াল করছে হিয়ার শরীরটা বেশি একটা ভালো না আজ সকালে তো হিয়া অনেকবার বমিও করেছে।ফারুকের মাও বাসায় নেই বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে হিয়া বিছানায় শুয়ে আছে ফারুক অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।ফারুক হিয়ার পাশে বসে বললো,
~তোমার শরীরটা অনেক খারাপ মনে হচ্ছে চলো আজই ডক্টরের কাছে যাই।
হিয়া বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে বললো,
~আপনাকে একটা অদ্ভুত কথা বলি?
ফারুক বললো,
~কীসের অদ্ভুত কথা?
হিয়া বললো,
~আমাদের সংসারে নতুন মেহমানের আগমন হচ্ছে।
ফারুক কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো হিয়া বললো,
~আপনি আমার কথা শুনে খুশী হননি?
ফারুক হালকা হেসে বললো,
~বাবা হওয়ার কথা শুনে কোন পুরুষ অখুশী হতে পারে বলো।
হিয়া বললো,
~আজ ডক্টরের কাছে গিয়ে আমরা সিউর হয়ে সবাইকে জানিয়ে দিবো।
ফারুক বললো,
~সবাই কতো খুশি হবে এটা শুনে।
হিয়া ফারুকের বুকে মাথা রেখে বললো,
~আমি কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো এতিমের জীবনেও এতোটা সুখ আসতে পারে।
ফারুক বললো,
~উহু এসব কথা বলবেনা তুমি এসেছো বলেই তো আমার জীবনটা কতো সুন্দর হয়েছে।
ইমরান খান নাস্তার টেবিলে বসে ইরিনা বেগমকে বললেন,
~ইলহাম আজ তানভীরের অফিসে গিয়ে সব জেনে আসবে। আমার মতে সব জেনে শুনেই আগে বাড়া উচিত তুমি কী বলো?
ইরিনা বেগম বললেন,
~অবশ্যই মেয়ের জীবন বলে কথা একটা ভুল সিদ্ধান্ত সব নষ্ট করে দিবে।
ইমরান খান বললেন,
~আমার মনে হচ্ছে তানভীর ভালো ছেলে একদম ইলহামের মতো।
ইরিনা বেগম বললেন,
~আমার একটাই দোয়া হেমন্তি যেমন সুখে আছে তেমনি কেয়াও সুখে থাকুক।
তাদের কথোপকথন সবই কেয়া শুনতে পেরেছে কেয়া শুধু বিড়বিড় করে এতটুকু বললো,
~মানুষটা অনেক সরল তার জন্য মনে এক আলাদা জায়গা তৈরি হয়ে গেছে।
ইলহাম তানভীরের অফিসে গিয়ে সব খোজখবর নিয়ে দেখলো তানভীর অনেক ভালো ছেলে তাই দেরি না করে ইমরান খানকে ফোন করে সব জানালো।ইমরান খান বললেন,
~তাহলে দেরি করে লাভ নেই কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক।
ইলহাম বললো,
~অবশ্যই ভালো কাজে দেরি করতে নেই।
ইমরান খান তানভীরের পরিবারদের জানিয়ে দিলো মতামত তারা বললেন আগামীকাল বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবেন।ইমরান খান সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিলেন হেমন্তিও অনেক খুশী বোনের বিয়ের কথা শুনে।কেয়ার মনটাও ভালো হয়ে গেলো সবার সিদ্ধান্ত জেনে
হিয়া আর ফারুক ডক্টর নাসরিনের সামনে বসে আছে ডক্টর নাসরিন সব রির্পোট চেক করে বললেন,
~হিয়া,তুমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু তুমি অনেকটাই দূর্বল এমন তা অবস্থায় মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।তাই তোমার প্রোপার রেস্ট নিতে হবে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
ডক্টরের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো হিয়া সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
চলবে
(