প্রেমের শুরু পর্ব ৭+৮

#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৭
হিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
ডক্টর নাসরিন বললেন,
~এতো প্যানিক নিবেন না কারণ এটা আপনার জন্য ঠিক না আর আপনি প্রোপার রেস্ট ভিটামিন জাতীয় খাবার খাবেন এতেই আপনি আর বেবি ঠিক থাকবেন।
ফারুক বললো,
~অবশ্যই আমি এসব বিষয়ে খেয়াল রাখবো।
ডক্টর নাসরিন বললেন,
~সময় মতো খাবার আর ঔষধ আপনার প্রয়োজন এখন।বিনা কারণে কোনো বিষয় চিন্তা করবেন না আর হ্যাঁ নিজেকে বেশি সময় দিবেন।
হিয়া ফারুকের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো ফারুক বললো,
~আপনি সব নিয়ম-কানুন লিখে দিন আমি নিজ দায়িত্বে সব দিকে খেয়াল রাখবো।
ডক্টর নাসরিন বললেন,
~ঠিক আছে।
হিয়া আর ফারুক বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে হিয়া ফারুককে বললো,
~সব ঠিকঠাক হবে তো আমাদের বাবু সুস্থ থাকবে তো?
ফারুক বললো,
~তুমি কোনো প্রকার টেনশন নিবে না আমাদের বাবু একদম ঠিক থাকবে কারণ ও অনেক সাহসী একদম বাবার মতো হবে।মায়ের মতো ভীতু হবেনা সবসময় কান্না করতে থাকে।
হিয়া গাল ফুলিয়ে বললো,
~আমি ভীতু যান কথা বলবোনা আপনার সাথে।
হিয়ার গাল টেনে দিয়ে ফারুক বললো,
~বাবুর দাদীকে যে খবরটা দিতে হবে সে যে খুশীতে আত্মহারা হয়ে যাবে।
হিয়া বললো,
~মাকে আমি অনেক মিস করছি তাকে চলে আসতে বলেন।
ফারুক বললো,
~এখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবেও না তোমার কথা শুনলে দৌড়ে চলে আসবে।
ফারুকের কথা শুনে হিয়া খিলখিল করে হেসে উঠলে ফারুক সেই হাসির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~এই হাসিটা যাতে এই মুখ থেকে অদৃশ্য না হয়ে যাক।

হিয়া বাসায় পৌছাতেই হেমন্তির ফোন চলে আসে হিয়া রিসিভ করতেই হেমন্তির উৎসুক কন্ঠ বলা কথা শুনতে পেলো।হেমন্তি বললো,
~আপু সুখবর আছে কেয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
হিয়ার মুখে হাসির রেশ ফুটে উঠলো সে বললো,
~আমি অনেক খুশি হয়েছি হেমন্তি এ কথা শুনে।
হেমন্তি বললো,
~কালকে সবাই বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে তুমি আর ভাইয়াও আসবে মা বলে দিয়েছে।
হিয়া বললো,
~অবশ্যই আমরা আসবো।এখন আমার একটা সুখবর শুনবে
হেমন্তি বললো,
~বলো আপু সেই সুখবর।
হিয়া বললো,
~তুমি মামী হতে চলেছো।
হেমন্তি একথাটা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আর বললো,
~আপু এতো বড় একটা খবর দিচ্ছো বিনা মিষ্টি খাইয়ক আমি কিন্তু ছানা মিষ্টি খাবো।
হিয়া হেসে বললো,
~অবশ্যই বাবুর বাবা মিষ্টি নিয়ে হাজির হবে।
হেমন্তি বললো,
~আপু তুমি নিজের খেয়াল রাখবে দরকার পরলে আমাদের এখানে চলে আসো।
হিয়া বললো,
~আসবো কিন্তু পরে এখানে আমার মা আছে যে আমার খুব সেবা করবে।
হেমন্তি বললো,
~আমি অনেক খুশী হয়েছি উনি শুনলেও অনেক খুশী হবে।

ইলহাম অফিসে কাজের থেকে বেশী তার বসের বলা কথাটি নিয়ে চিন্তা করছে কীভাবে সব সামলাবে?ইলহাম বসে বসে তাই ভাবছিল তখনই তার ফোন বেজে উঠলো ইলহাম ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো হেমন্তির ফোন।
ইলহাম ফোন রিসিভ করতেই হেমন্তি অতি খুশির কন্ঠে বলে উঠলো,
~অনেক বড় সুখবর এসেছে।
ইলহাম বললো,
~কীসের সুখবর?
হেমন্তি বললো,
~আপু মা হতে চলেছে আপনি মামা আর আমি মামী।
হেমন্তির কথা শুনে ইলহাম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
~তুমি সত্যি বলছো?
হেমন্তি বললো,
~অবশ্যই।
ইলহামের চোখের কোণে অশ্রু জমা হলো তার মনে খুশীর সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে ইলহাম বললো,
~তুমি রেডি হয়ে থেকে আমরা আজই হিয়ার বাসায় যাবো।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে।
ইলহাম ফোন রেখে বসের থেকে ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে সোজা শপিং মলে গিয়ে বোনের জন্য অনেক শপিং করলো।তারপর বাজারে গিয়ে ফলমূল সব কিনে একটা রিক্সা নিয়ে ছুটলো বাসার উদ্দেশ্যে।
আজ ইলহাম অনেক খুশী সে মনে মনে বললো,
~আজ যদি বাবা-মা বেঁচে থাকতো তাহলে হিয়ার এই সুখবর শুনে কতোটা খুশী হতো।

_____♥______

হেমন্তি আর ইলহাম হিয়ার বাসায় উপস্থিত হলো হিয়ার শাশুড়ি মহীমা বেগম তাদের দেখে অনেক খুশী।বিয়ের পর হেমন্তি এ নিয়ে ৪ বার এবাসায় এসেছে আর মহীমা বেগমকে দেখে সে অনেকটাই অবাক হয়েছে।এতো ভালো মনের মানুষ হেমন্তি কোনোদিন দেখেনি হেমন্তি সবসময় শুনেছে শাশুড়ী মানেই যম কিন্তু এখানে দেখছে পুরো উল্টো হিয়াকে নিজ মেয়ের মতো আগলে রেখেছে মহীমা বেগম।মহীমন বেগম নাস্তার ব্যবস্থা করে সব টেবিলে সাজিয়ে ইলহাম আর হেমন্তিকে বললেন,
~চলো এখন কিছু খেয়ে নেও সেই কখন এসেছো?
ইলহাম আলতে হেসে বললো,
~আন্টি আপনাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না আপনি আমাদের পাশে এসে বসেন।
মহীমা বেগম বললেন,
~তোমরা তো আসোই না এই বুড়িটার খোজ নিতে।
ইলহাম বললো,
~কাজের চাপটা একটু বেশি তাই আসা হয়না।
মহীমা বেগম হেমন্তির পাশে বসে বললেন,
~তোমার এই মিষ্টি বউটাকে আমার খুব পছন্দ ওকে কয়েকদিনের জন্য রেখে যেও।
ইলহাম বললো,
~রেখে যাবো আপনার শরীরটা কেমন?
মহীমা বেগম প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে বললো,
~তোমার বোন যে সুখবর আমাকে দিয়েছে আমার শরীর আরো ভালো হয়ে গেছে।
হিয়া বললো,
~আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না নিজেই সব করছে।
ফারুক বললো,
~মা হিয়া দুজনই শুনো কাউকে কাজ করতে হবে না আমি কাজের লোক ঠিক করেছি সেই করবে সব।
মহীমা বেগম বললেন,
~আমি বেঁচে থাকতে আমার মেয়ে বোয়ার হাতের রান্না খাবে?আমি রান্না করবো বাকি কাজ তুই তোর বোয়াকে দিয়ে করিয়ে নিস আমার আপত্তি নেই।
ফারুক বললো,
~ঠিক আছে আমার মা আপনার হুকুম মাথার উপর।
হেমন্তি বললো,
~আন্টি,আপু কিছুদিন আমাদের সাথে থাকুক।

মহীমা বেগম বললেন,
~নাহ মা এখন হিয়ার এই বাসায় থাকাটা উত্তম ওর এখন রিক্সা দিয়ে চলা ফেরা না করাই ভালো।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে আপু কালকেও যেতে পারবেনা?
হিয়া বললো,
~হেমন্তি মন খারাপ করোনা আসলে এখন আমি রাস্তায় বের হতেই চাই না।তাই কালকে তোমাদের বাসায়ও যেতে পারবোনা লক্ষ্মীটি রাগ করো না প্লিজ তোমার ভাইয়া যাবে।
হেমন্তি আলতো হেসে বললো,
~ঠিক আছে আপু আমাদের ছোট্ট সোনার জন্য যেটা ভালো হয় সেটাই করো।
ইলহাম বললো,
~হিয়া,তোর পছন্দের সব কিছু এনেছি আর আন্টির জন্য এই শাড়িটা এনেছি।
হিয়া বললো,
~এসবের কী প্রয়োজন ছিল?
ইলহাম বললো,
~আমার বোনের জীবনে এতো বড় সুখের উৎসবে ভাইয়ের তরফ থেকে ছোট একটি উপহার।
হিয়ার চোখের কোণে জল চলে আসলো বাবার কমতি ভাই পূরণ করছে তার ভাইটা যে তাকে এতো ভালোবাসে সেটা দেখে তার বুকটা খুশীতে ভরে গেলো।

মহীমা বেগমের যাতে কোনো কাজ না করতে হয় তাই ফারুক বাহির থেকে খাবার নিয়ে এসেছে রাতের।মহীমা বেগম নিজে টেবিল সাজালো তারপর সবাইকে নিয়ে বসে পরলো রাতের খাবার খেতে।মহীমা বেগম হেমন্তির প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,
~তোমাদের সুখবরটা কবে শুনছি?
মহীমা বেগমের প্রশ্ন শুনে হেমন্তি আর ইলহাম দুজনই বিষম খেলো ইলহামকে ফারুক পানি দিলো আর হেমন্তিকে হিয়া।হেমন্তি পানি শেষ করে বললো,
~যখন আল্লাহর ইচ্ছে হবে।
ইলহাম বিড়বিড় করে বললো,
~এখানে লাভ স্টোরি শুরু হচ্ছেনা আবার বাচ্চা স্টোরি হবে।
ইলহামকে ঠোঁট নাড়াতে দেখে হিয়া বললো,
~কিছু বলছিস তুই?
হিয়ার দিকে তাকিয়ে ইলহাম বললো,
~কিছু না।
মহীমা বেগম বললেন,
~হিয়ার পরেই যাতে তোমার সুখবরটা শুনতে পাই তাই দোয়া রইলো।
হেমন্তি কিছু না বলে শুধু মুচকি হেসে খাবারে মনোযোগ দিলো তার অনেক অস্বস্তি হচ্ছে।

____♥_____

কেয়া বিছানায় শুয়ে গল্পের বই পরছে তখনই তার ফোনটা ভেজে উঠলো কেয়া একটু অবাক হলো এতো রাতে কে তাকে ফোন করলো?কেয়া ফোন হাতে নিসে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছে।কেয়া ভাবছে ফোন রিসিভ করবে কী করবেনা?এরই মাঝে ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো কেয়া ফোন রেখে দিতেই আবার বেজে উঠলো দুবার রিং হতেই কেয়া ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,
~কে বলছেন?
অপর পাশ থেকে ভারী পুরুষালি কন্ঠে তানভীর বলে উঠলো,
~আমি বলছি তানভীর আহমেদ।
কেয়ার হাসি পেলো কিন্তু নিজের হাসিটাকে সামলে বললো,
~কে তানভীর আহমেদ?
তানভীর সিরিয়াস হয়ে বললো,
~আপনি কী সত্যিই আমাকে ভুলে গেছেন?
কেয়া বললো,
~মনে রাখার মতো কোনো কাজ তো আপনি করেননি তাই হয়তো আমার মনে নেই।
তানভীর বললো,
~আমি বুঝতে পেরেছি আপনি আমার সাথে মজা করছেন।
কেয়া বললো,
~যাক বুঝতে পেরেছেন।
এতটুকু বলে কেয়া বিছানায় পা দুটো ভাজ করে কোলে বালিশ নিয়ে বসে পরলো।তানভীর বললো,
~কালকে আমরা আপনাদের বাসায় আসছি।
কেয়া বললো,
~জানি বাসায় তা নিয়ে তোড়জোড় হচ্ছে।
তানভীর বললো,
~আপনার কী আমাকে সত্যিই পছন্দ হয়েছে?
কেয়া বললো,
~না হলে কী আপনার সাথে এখন কথা বলতাম?আচ্ছা আপনি আমার নাম্বার কোথা থেকে পেলেন?
তানভীর আলতো হেসে বললো,
~মায়ের ফোন থেকে নিয়েছি আপনার মা আমার মাকে দিয়েছিল।
কেয়া বললো,
~বাহ বুদ্ধি আছে বটে।
তানভীর বললো,
~আপনার কোন রঙ্গটা সবচেয়ে বেশী পছন্দ?
কেয়া বললো,
~তা জেনে কী করবেন?
তানভীর বললো,
~এভাবে জানতে চাচ্ছি।
কেয়া বললো,
~সবুজ রঙ্গটা পছন্দ।
তানভীর বললো,
~ওকে ঠিক আছে।
এভাবেই তাদের মধ্যে অনেকক্ষন কথা হলো কেয়া আর তানভীর হয়তো নিজদের বোঝার চেষ্টা করছে।

ইলহাম আর হেমন্তি বাসায় পৌছে গেছে হেমন্তি শাড়ি পাল্টে বিছানায় বসে পরলো। ইলহাম হেমন্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~কালতো শুক্রবার আমার অফিস নেই বিকেলে আমরা তোমার বাসায় যাবো।আমি ভাবছি সকালে আমরা ঘুরতে বের হলে কেমন হয়?
হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আপনি ঘুরতে যেতে চান আমার সাথে?
ইলহাম বললো,
~আর কার সাথে যাবো আমি?
হেমন্তি বললো,
~নাহ মানে বিয়ের পর তো কোথাও যায়নি তাই
ইলহাম বললো,
~এখন যাবো শুনো কালকে তোমার নীল শাড়িটা পরবে তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে সেই শাড়িতে।
হেমন্তি বললো,
~দুপুরের খাবারের কী হবে?
ইলহাম হেমন্তির পাশে বসে বললো,
~বাহিরে খাবো এখন শুয়ে পরো কালকে আমাদের ভ্রমণ শুরু হবে।
হেমন্তি আর ইলহাম শুয়ে পরলো তারা দুজনই একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কালকের সকালের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

_____♥______

হেমন্তি ইলহামের কথামতো সকালে শাওয়ার নিয়ে নীল রঙ্গের শাড়ি পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো।একবার বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইলহাম ঘুমিয়ে আছে হেমন্তি আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভেজা চুলগুলো ভালো মতো টাওয়াল দিয়ে মুছে নিলো এরপর চুল চিরুনি করে হালকা রঙ্গের লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ৯.৩০ বাজে।হেমন্তি ইলহামের কাছে গিয়ে তাকে ডাকতে লাগলো,
~এই যে উঠুন সকাল হয়ে গেছে।
হেমন্তির ডাক শুনে ইলহাম পিটপিট করে চোখ খুলে হেমন্তির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো নীল রঙ্গের শাড়িতে হেমন্তিকে অনেক সুন্দর লাগছে।ইলহাম দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো হেমন্তি বললো,
~নাস্তা তৈরি আছে আপনি রেডি হয়ে আসেন।
হেমন্তি এতটুকু বলে সেখান থেকে চলে আসলো ইলহাম হেমন্তির যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~কতবার তোমার এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হবো?

ইলহাম হেমন্তির বের করে রাখ হালকা আকাশী রঙের পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নিলো।পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো হেমন্তি নাস্তা টেবিলে সাজাচ্ছে।ইলহাম সোজা চেয়ারে বসে পরলো হেমন্তির নজর ইলহামের দিকে পরলো বেশ লাগছে এই পাঞ্জাবিতে ইলহামকে।হেমন্তি ইলহামকে নাস্তা দিয়ে নিজেও নাস্তা করতে বসে পরলো ইলহাম বললো,
~হেমন্তি আমরা নাস্তা করার পরই বের হয়ে পরবো তুমি তৈরি তো?
হেমন্তি বললো,
~আমি তো তৈরি কিন্তু আমরা যাবো কোথায়?
ইলহাম বললো,
~আরে সেখানে পৌছেই তো দেখতে পাবে।
হেমন্তি বললো,
~আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারিনা।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~এতো বুঝতে হবে না আমার মনের কথা বুঝতে পারলেই হবে।
তারা নাস্তা শেষ করে রওনা দিলো অজানা উদ্দেশ্যে ইলহাম আগে থেকেই রিক্সা বুক করে রেখেছিল।ইলহাম আর হেমন্তি সেই রিক্সায় বসে পরলো ইলহাম বললো,
~তোমার গরীব জামাইর কাছে রিক্সা ভাড়া করারই সার্মথ্য আছে একদিন অবশ্যই একটা বাইক কিনবো আর তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
হেমন্তি ইলহামের কথা শুনে বললো,
~আমার এসব বাইকের কোনো দরকার নেই এই রিক্সাই আমার জন্য ভালো।
ইলহাম হেমন্তি কথা শুনে আলতো হেসে তার একহাত ধরে এই শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
রিক্সা এসে থামলো একটা বৃদ্ধাশ্রমের সামনে হেমন্তি বড় বড় করে লেখা সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে লেখাটা পরলো।অতঃপর সে অবাক নয়নে ইলহামের দিকে তাকাতেই হেমন্তির নজর পরলো ইলহামের মুখের সেই হাসির দিকে।ইলহামের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে এই জায়গাটায় পৌছে হেমন্তি বুঝলো এটা ইলহামের চিরচেনা জায়গা আজ হয়তো সে হেমন্তিকে নিজ চিরচেনা স্থানের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছে।এটা ভাবতেই হেমন্তির মনটা অনেক খুশি হয়ে গেলো ইলহাম তার ছোট ছোট খুশী তার সাথে ভাগ করে নিচ্ছে এটাই অনেক বড় কথা হেমন্তির জন্য।
এ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ছোট ছোট কাজে অনেক বেশি খুশী হয়ে যায় কারণ তারা শুধু চায় আপন মানুষ গুলো তাদের সাথে সুখময় সময় গুলো ভাগ করে সেই সময় গুলো উপভোগ করুক।
ইলহাম রিক্সা থেকে নেমে হেমন্তির দিকে একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
~এই যে ম্যাডাম আপনি কী আজ এখানেই বসে থাকবেন?
ইলহামের মুখের বাণী শুনে হেমন্তির ধ্যান ভাঙ্গলো সে ইলহামের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে নিজ হাতটা তার হাতের উপর রেখে রিক্সা থেকে নেমে বললো,
~রিক্সায় বসে থাকার জন্য তো আজ আপনার সাথে বের হইনি জনাব।
হেমন্তির জবাব শুনে ইলহাম মুচকি হেসে হেমন্তির হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
~আসো আজ তোমায় আমার আর হিয়ার পছন্দের জায়গায় ঘুরাবো।
হেমন্তি ইলহামের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করলো মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই একজন মধ্যবয়সী লোক দাড়িয়ে ইলহামকে দেখে বললেন,
~আরে ইলহাম বাবা এতদিন পর আসছেন যে?আমাদের তো ভুলেই গিয়েছেন।
ইলহাম আলতো হেসে বললো,
~নাহ লোকমান চাচা আপনাদের কোনোদিন ভুলতে পারবোনা।আসলে কাজের কারণে আসতে পারিনি আর জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এখন আমি ব্যস্ত।
লোকমান চাচা ইলহামের কথা শুনে তার পাশে থাকা হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~এই লক্ষ্মী আর পরী মেয়েটা কে?
ইলহাম একবার হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার স্ত্রী।
হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকালো কেন জানি ইলহামের মুখে “আমার স্ত্রী” কথাটা শুনে অনেক ভালো লাগছে।লোকমান চাচার মুখের হাসিটা বেশ চওড়া হয়ে গেলো সে বললো,
~আমি অনেক খুশী হয়েছি বাবা তোমরা সুখে থাকো আর শোনো আজ দুপুরে না খেয়ে যাবে না।আমি তোনার চাচীকে বলে দিচ্ছি দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিতে।
ইলহাম বললো,
~চাচীর হাতের রান্না অনেকদিন খাইনা আজ খেয়ে যাবো নিশ্চই।
হেমন্তির দিকে তাকিয়ে লোকমান চাচা বললেন,
~তোমাকে দেখে আজ আমার মনটা ভীষন ভালো হয়ে গেছে আমার ইলহাম বাবা যে জীবনে এগিয়ে গেছে এটাই অনেক।
হেমন্তি বললো,
~দোয়া রাখবেন চাচা আমাদের জন্য।

ইলহাম হেমন্তিকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো হেমন্তির কাছে পরিবেশটা অনেকটা সুন্দর আর শান্তিময় লাগছে।আশেপাশে সারি সারি গাছ রয়েছে ফুলের গাছও রয়েছে বটে একটু এগিয়ে যেতেই হেমন্তি দেখতে পারলো অনেক বয়স্ক মহিলা পুরুষ বসে আছে গল্প করছে ইলহাম হেমন্তিকে নিয়ে সেদিকটাই এগিয়ে গেলো।ইলহাম আর হেমন্তিকে সেখানে দাড়াতেই একজন বয়স্ক মহিলা ইলহামকে দেখে খুশীতে আত্মহারা হয়ে বললেন,
~ইলহাম এসেছে এতোদিন পর।
ইলহাম হেমন্তির হাতটা ছেড়ে দিয়ে সেই মহিলাটির কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
~আপনাদের ভুলে থাকতে পারিনা আম্মাজান।
সেই মহিলাটির চোখে অশ্রুকণার আবির্ভাব হলো তার সাথের সকল লোক এসে হাজির হলো সবাই ইলহামকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে
ইলহাম সবার উদ্দেশ্যে বললো,
~আমার প্রিয়া আম্মাজান আর আব্বাজানরা আজ আমি এসেছি নতুন কাউকে আপনাদের সাথে পরিচয় করাতে আর সে হলো আমার স্ত্রী হেমন্তির সাথে।
হেমন্তির নাম নিতেই হেমন্তি এগিয়ে গিয়ে সবাইকে সালাম দিলো সবাই সেখানে হেমন্তিকে দেখতে ব্যস্ত একজন বৃদ্ধা এগিয়ে তার হাত দিয়ে হেমন্তির সারামুখ ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
~একদম রাণীর মতো দেখতে।
হেমন্তি সেই বৃদ্ধার হাত ধরে বললো,
~আম্মাজান আপনি কেমন আছেন?
সেই বৃদ্ধাটি হেসে বললো,
~কী সুন্দর লাগলে তোমার মুখ থেকে এই আম্মাজান ডাকটি শুনে।
হেমন্তি আলতো হাসলো তাদের সবার সাথে হেমন্তি ইলহাম কথা বললো তারা হেমন্তিকে তারা খুব সহজে আপন করে নিয়েছে।হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে খুশী মনে সবার সাথে কথা বলছে।ইলহামের হাসি মুখটা দেখে হেমন্তির অনেক ভালো লাগছে এতো সুন্দর হাসি হয়তো হেমন্তি কোনোদিন দেখেনি।

____♥_____

সবার সাথে আড্ডা মেরে হেমন্তি আর ইলহাম এখন সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে হেমন্তি নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আপনি আর হিয়া আপু এখানে কতো বছর ধরে আসেন?
ইলহাম ঘাসের দিকে নজর রেখে বললো,
~ছোটবেলা থেকে প্রতি মাসে আমরা এখানে আসতাম বাবা নিয়ে আসতো।
হেমন্তি বললো,
~তাই এটা আপনার এতো পছন্দের জায়গা।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি,এখানের প্রতিটা মানুষের সাথে আমি জড়িয়ে আছি এখানে না আসলে আমার ভালো লাগেনা।তুমি জানো হেমন্তি এখানের অনেক মানুষের মৃত্যুর পর আমি আর বাবা তাদের কবরে মাটিও দিয়েছি।এমন কী লোকমান চাচার আগে যে এখানে দারোয়ান ছিলেন তার মৃত্যুর পরও আমি আর বাবা তার কবরে মাটি দিয়েছি।এই জায়গাটাকে আমার মা-বাবা অনেক আগলে রাখতো যাতে কেউ কষ্টে না থাকে।কতো নিষ্ঠুর সন্তানরা তাদের এভাবে একা করে ছেড়ে যেতেন আমার বাবা- মা তাদেরকে খুশী করার কোনো প্রচেষ্টা ছাড়তেন না।আমার জন্য এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হলো আমার বাবা-মা তারা যদি এখন জীবিত থাকতো তাদের জড়িয়ে ধরে এ কথাটি অবশ্যই বলতাম।
ইলহামের গলা কাঁপছে তার চোখ লাল হয়ে গেছে হেমন্তি নিজ চোখের পানিটুকু মুছে বললো,
~আজ থেকে এটা আমারও পছন্দের জায়গা আমাকে এখানে নিয়ে আসবেন যখনই আপনি আসবেন।
ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~হিয়া আমার জন্য পার্ফেক্ট একটা মেয়ে খুজে দিয়েছে যেই মেয়ে আমার জন্য পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে কনফিউজড হয়ে যেতো।সে তোমাকে পছন্দ করতে দুবার ভাবেনি আসলেই হিয়ার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
হেমন্তি আলতো হেসে বললো,
~আপনি আর আপনার উদ্ভট কথা দুটোই অনেক অদ্ভুত লাগে আমার কাছে।
হেমন্তির কথা শুনে ইলহাম অন্যদিকে চোখ দিয়ে হাতের ইশারায় হেমন্তিকে কিছু দেখিয়ে বললো,
~ওই জায়গাটায় ছোট একটা ঘর ছিল এখন অবশ্য নেই সে ঘরটায় আমি আর হিয়া অনেক লুকিয়েছি বাবা আর মা আমাদের খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে যেতো তখন আমরা বের হয়ে এসে তাদের দেখে হেসে ফেলতাম।অনেক সুন্দর সময় ছিল এখন সেইসময় গুলো মনে পরলে বুকপ চিনচিন ব্যাথা হয় যদি সেই সময়গুলো ফেরত আসতো কতই না ভালো হতো।

দুপুরে ইলহাম আর হেমন্তি লোকমান চাচার ঘরে প্রবেশ করলো ছোট টিনশেটের বাড়ি তার।লোকমান চাচার বউ রাহেলা চাচী এগিয়ে এসে তাদের ঘরে বসতে দিলো।রাহেলা চাচী বললেন,
~এতোদিন পর এসেছো তাও বউমাকে নিয়ে আগে বলে আসলে আমি আরো অনেক কিছু তৈরি করতাম।
হেমন্তি তার কথা শুনে বললো,
~আপনারা যে ভালোবাসা নিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করছেন তাই অনেক বেশি।
রাহেলা চাচী বললেন,
~বাহ খুব সুন্দর করে কথা বলে। ইলহাম হিয়ার আসেনি কেন?
ইলহাম বললো,
~নতুন মেহমান আসতে চলেছে তাই রেস্টে আছে।
রাহেলা চাচীর চোখ খুশীতে চিকচিক করে উঠলো সে বললো,
~এতো বড় খুশীর সংবাদ দিয়েছো আজ যে চোখ দিয়ে পানি পরে গেলো।
ইলহাম বললো,
~দোয়া করবেন চাচী যাতে হিয়া আর ওর বাচ্চা সুস্থ থাকে।
রাহেলা চাচী বললেন,
~আমি ওকে দেখতে যাবো কোনো সমস্যা হবে নাতো?
ইলহাম বললো,
~কোনো সমস্যা হবে কেন?হিয়ার শাশুড়ি অনেক ভালো মনের মানুষ এসব নিয়ে ভাবেনা।
হেমন্তি অবাক হচ্ছে শুধু এই সময় এসে কাছের মানুষ পর হয়ে যায় আর এর আপন না হয়েও ইলহামদের কতো আপন করে নিয়েছে।দুপুরের খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারা সবার থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সা চড়ে আবার চলছে অজানা গন্তব্যে।

____♥_____

হিয়া সেই সকাল থেকে বসে আছে এই বিকেল পর্যন্ত কোনো কাজ তাকে করতে দেওয়া হচ্ছেনা এতে সে বিরক্ত হচ্ছে।হিয়া পা মেলে শুয়ে আছে ফারুক তার পাশে বসে আছে হিয়া একবার ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললো,
~অনেক বোর হচ্ছি আমি।
ফারুক চোখ উঠিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তাহলে ঘুমাও ভালো লাগবে।
হিয়া শোয়া থেকে উঠে বললো,
~আপনি ঘুমান সারাদিন ঘুৃমিয়ে কাটিয়েছি।
ফারুক হিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে বললো,
~ছাদে যাবে?
হিয়া খুশী হয়ে বললো,
~হ্যা যাবো।
ফারুক বললো,
~এক শর্তে আমি কোলে তুলে নিয়ে যাবো।
হিয়া বললো,
~রাজি।
ফারুক হিয়াকে কোলে তুলে রুমের বাহিরে এসে পরলো তার মা নিজ রুমে শুয়ে আছেন।তাই বিনা কোনো বাধায় সে হিয়াকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো ফারুক হিয়াকে ছাদে নিয়ে এসে কোল থেকে নামিয়ে বললো,
~তুমি মোটা হয়ে গেছো আমার কোমড়টা শেষ হয়ে গেছে।
হিয়া ফারুকের পিঠে কিল বসিয়ে বললো,
~আমি মোটা হয়ে গেছি যান তাহলে কোনো চিকনির কাছে ভালো লাগবে।
বলেই হিয়া মুখ ফুলিয়ে রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলো ফারুক হিয়ার অভিমান বুঝতে পেরে বললো,
~আমি তো বলছি এতো গোলুমোলু আর কিউট লাগে তোমাকে যে আমার চোখই সরে না তোমার থেকে।
হিয়া আলতো হেসে ফারুকের গা ঘেষে দাড়িয়ে বললো,
~সত্যি।
ফারুক বললো,
~তিন সত্যি।
দুজনই খিলখিল করে হেসে উঠলো তাদের হাসির শব্দ স্তব্ধ শহর জেগে উঠলো তাদের সেই ছোট্ট প্রানটিও এখন হয়তো তাদের সাথে হাসছে।
হেমন্তি আর ইলহাম এখন বসে আছে একটা স্বর্ণের দোকানে ইলহাম হেমন্তির জন্য একটু নাকফুল পছন্দ করেছে।হেমন্তি সেই নাকফুল দেখে বললো,
~কী উপলক্ষে এই উপহারটা আমার হলো?
ইলহাম আলতো হেসে বললো,
~প্রিয়তমাকে উপহার দিতে কোনে উপলক্ষ লাগে না।
হেমন্তি ইলহামের কথা শুনে লজ্জা পেলো হেমন্তি সেখানেই সেই নাকফুলটা পরে ফেলো।
সেখান থেকে বের হয়ে ইলহাম হেমন্তিকে নিয়ে শপিংমলে চলে গেলো সেখানে গিয়ে হেমন্তি নিজ পছন্দে ৫টি শাড়ি কিনলো।ইলহাম কেয়ার জন্য একটা শাড়ি কিনতে বললো হেমন্তিকে। প্রথমে হেমন্তি দ্বিমত করলেও ইলহামের জোরাজুরিতে নিতে বাধ্য হলো।

____♥_____

হেমন্তি আর ইলহাম যথাসময়ে হেমন্তির বাসায় পৌছে গেলো। হেমন্তি ইরিনা বেগমের সাথে কাজে সাহায্য করতে লাগলো ইলহাম ইমরান খানের সাথে বসে কথা বলছে।হেমন্তির আওয়াজ শুনে কেয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো হেমন্তি কেয়াকে দেখে হালকা হেসে বললো,
~তোর জন্য একটা শাড়ি এনেছি তোর দুলাভাই আর আমি পছন্দ করেছি আজ ওই শাড়িটায় পরবি।
কেয়া খুশী হয়ে হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ধন্যবাদ আপু।
কেয়া দৌড়ে ইরিনা বেগমের ঘর থেকে শাড়ির প্যাকেটটা খুলে দেখলো হালকা সবুজ রঙ্গের শাড়ি এনেছে হেমন্তি তার জন্য। কেয়া শাড়ি হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই ইলহাম বললো,
~কেয়া তোমার শাড়ি পছন্দ হয়েছে?
কেয়া মুখে হাসি বজায় রেখে বললো,
~অনেক সুন্দর শাড়ি দুলাভাই ধন্যবাদ।
ইলহাম বললো,
~যাও তৈরি হয়ে নেও সময় হয়ে যাচ্ছে তারা চলে আসবে।
হেমন্তি মায়ের সাথে সব কাজ শেষ করে কেয়াকে তৈরি করতে লাগলো কেয়া চুড়ি পরতে পরতে বললো,
~আজ কোথায় কোথায় ঘুরা হলো ভালোবাসা পাখিদের?
হেমন্তি কেয়ার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো,
~এটা জেনে তুই কী করবি?
কেয়া বললো,
~আমার বরকেও বলবো দুলাভাইয়ের মতো রোমান্টিক হতে নাহলে আমিই রোমান্টিক হয়ে যাবো।
হেমন্তি কেয়ার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো আর বললো,
~এখন দুলাভাই রোমান্টিক হয়ে গেলো আগে তো বলতি গম্ভীরের ডিপ্পা।
কেয়া বললো,
~আগে কে জানতো বলো দুলাভাই এতোটা রোমান্টিক হবে যে তোমায় চোখে হারাবে।
কেয়ার কথা শেষ হতেই কলিংবেল বেজে উঠলো তানভীররা চলে এসেছে তাই হেমন্তি কেয়াকে রেডি করে বাহিরে চলে আসলো।

তানভীর,রেহেনা খানম আর তানভীরের মামা শহীদুল ইসলাম এসেছেন। তাদের সাথে কুশলাদি করে সোফায় বসতে দেওয়া হলো তানভীর ইলহামের সাথে হাত মিলিয়ে তার সাথে বসে পরলো।তানভীর কেয়ার ঘরের দিকে একবার চোখ উঁচু করে তাকালো ইলহাম তা খেয়াল করে তানভীরের কানে ফিসফিস করে বললো,
~কেয়াকে একটু পরই নিয়ে আসা হবে আপনি চিন্তা করবেন না।
ইলহামের কথা শুনে তানভীর লজ্জা পেয়ে গেলো রেহেনা খানম বললেন,
~আমি এই মাসেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।
ইমরান খান বললেন,
~দেখেন আপা আমার বড় মেয়ের সময়ও আমি কোনো তোড়জোড় করিনি আমি চাই কেয়ার বিয়েটাও সাদামাটা ভাবে হোক।
রেহেনা খানম বললেন,
~অবশ্যই আপনাদের ইচ্ছা আমরা মেনে নিয়েছি।
শহীদুল ইসলাম বললেন,
~আপনারা যদি মেয়েকে নিয়ে আসতে তাহলে আংটি বদল টা করে ফেলা যেতো।
ইমরান খান হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললেন,
~কেয়াকে নিয়ে আসো আর সাথে আংটিটাও।
হেমন্তি বাবার কথা মতো কেয়া আর আংটি নিয়ে হাজির হয়ে যায়।কেয়াকে তানভীরের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো ইলহাম তাদের অনেক গুলো ছবি তুলে দিলো।কেয়া আর তানভীর দুজন দজনাকে আংটি পড়িয়ে দিলো সবাই তাদের জন্য দোয়া করলো।
সব আয়োজন সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হয়ে গেলো তখনই ইলহামের ফোনটা বেজে উঠলো ইলহাম ফোনটার দিকে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here