প্রেম প্রিয়জন পর্ব ১২

#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim

~দ্বাদশ পর্ব~

পূর্ণের বাবা মা খুব রেগে গেছেন। পুষ্পা দেখছে এরপর কি হয়। উনারা দুজন পরির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার পূর্ণ কে রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,

–‘এটা কি করেছিস তুই পূর্ণ? তুই ওকে বিয়ে করে নিলি!’

–‘হ্যাঁ আপনাদের ইচ্ছা ই তো পূরণ করেছি!’

–‘আমাদের ছেলে হয়ে তুই এটা করতে পারলি? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না পূর্ণ? এটা কি আসলেই তুই?’

–‘বিশ্বাস অবিশ্বাসের কিছুই নেই। ইসলামিক রীতি মতে পরি এখন আমার বউ!’

–‘সেই কথা স্বগর্বে বলছিস ও! ছি!’

এক পর্যায়ে উনারা রেগে মুখের উপর বলে দেন যাতে পূর্ণ এই বাড়ি তে না থাকে। এবং কি ভবিষ্যতে আর তাদের চোখের সামনেও না আসে। উনারা ভেবেছিলো এটা করায় পূর্ণ দমে যাবে কিন্তু তা একেবারেই হলো না। পরির থেকে সব আদায় করতে গিয়ে এমন কিছু ঘটে যাবে উনারা কল্পনাও করে নি। কাহিনী যে পুরোটাই ব্যতিক্রম হয়ে গেলো!

–‘ভাবলেন ই বা কি করে এখানে আমি থাকবো? এখনো চলে যাচ্ছি। এন্ড আর একটা কথা আপনারা দুজন ভুলেও কখনো আমার সামনে ও আসবেন না। আপনাদের পতন অতি শিঘ্রই ঘটবে! আগে যা করেছেন তার ফলাফল বাকি তো ছিলোই তারপর আজ আবার পরির জীবন বিপন্ন করতে চেয়েছিলেন আপনাদের তো কৃতকর্মের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে!’

পূর্ণের কথা শুনে তার মা রেগে বলে,

–‘আমি তো আগেই বলেছিলাম মেয়েটা ওকে জাদু করেছে দেখলে তো?’

পূর্ণ ঐ কথা কানে না নিয়ে একবার পরির মুখের দিকে দেখলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে সে। কোনো ওয়ে না পেয়ে পূর্ণ তাকে কোলে তুলে নেয়। আর বাড়ি থেকে বেরোতে নিলে তার বাবা বাঁধা দেয়।

–‘তাহলে তোর কথাই শেষ কথা!’

–‘হ্যাঁ!’

পুষ্পা এগিয়ে আসে।

–‘ভাইয়া আমি যাবো তোর সাথে!’

–‘পুষ্পা তুই কোথাও যাবি না!’

–‘একশ বার যাবো। তোমরা পরির সাথে যেই কাজ টা করতে যাচ্ছিলে কে জানে হয়তো কাল সেটা আমার সাথে ও করবে! তাই তোমাদের সাথে থাকার কোনো মানেই হয় না!’

নিজের দুই সন্তান ই বাবা মার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে উনারা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারে নি। পূর্ণ জানতো কোনো একদিন এমন কিছুই হবে। তাছাড়া সে নিজ ইচ্ছায় ঐ বাড়িতে থাকতে চাইতো না। দমবন্ধ হয়ে যেতো তার। তাই নিজের টাকায় বাবা মার অজান্তেই একটা বাড়ি তৈরি করে ফেলে সে। বাড়ি তার নামে নয় পরির আর পরির …. নামে! সেই বাড়ি টায় ই নিয়ে আসে পরি কে। পুষ্পা এই বাড়ি টি সম্পর্কে জানতো না। নিজেদের বাড়ি থেকে ও এই বাড়ি টি অনেক বেশি সুন্দর। সে হা হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। পূর্ণ পরি কে নিয়ে গিয়ে বেডে শুয়ে দেয়।

দই ভাই বোন মিলে পরির সেবাযত্ন করে পরি কে সুস্থ্য করার চেষ্টা করে।

————————-

কয়েক টা দিন কেটে যায়। সময় তো আর কারো জন্য থেমে থাকে না। নিজের মতো করেই সময় চলে যায়। পরি কারো সাথেই কথা বলে না। একেবারেই বলে না তা নয় প্রয়োজনের বাহিরে একটা কথাও বলে না। কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে সে। সেদিনের ঘটনা টা ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে তাকে। বাবা মার জন্য ভালোবাসা সম্মান শ্রদ্ধার বদলে ঘোর ঘৃণা হয় তার। পূর্ণ কে তার আশে পাশে ও ঘেসতে দেয় না। চিল্লাচিল্লি শুরু করে। অনেক টাই পাল্টে গেছে পরি। দিন রাত একা আবদ্ধ রুমে পড়ে থাকতে ভালোবাসে। কোনো কিছুর নিজেকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে। সেটা বাহিরে প্রকাশ করতে পারছে না বলেই এতো কিছু। পূর্ণ এসব লক্ষ্য করে নিরা কেও এখানে নিয়ে এসেছে। যাতে পরি আবার আগের মতো হয়ে উঠে। কিন্তু পরি স্বাভাবিক হচ্ছে না কোনো ভাবে। কাঁদে ও না হাসে ও না এক ভাবে মরার মতো পড়ে থাকে। পূর্ণ এসবের জন্য নিজের বাবা মা কেই দায়ী মনে করে। পরির কিছু হয়ে গেলে তাদের ছাড় দেবে না ও কিছু তেই।

একদিন সকালে হুট করে ঝুম বৃষ্টি নামে। পরি স্বেচ্ছায় ছাঁদে গিয়ে বৃষ্টি তে ভিজতে শুরু করে। বৃষ্টি টা হেলেদুলে উপভোগ করছে সে। আজ অনেক দিন পর পরির ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ‌দেখলো পূর্ণ। প্রশান্তিতে তার ঠোঁটের কোণে ও হাসি ফুটে উঠল। নিজের মন ভালো করতে এটাই যথেষ্ট ছিলো। পরির কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে ইচ্ছে করছে,

–‘এই হাসি মুখ দেখার জন্য হলেও প্রতিদিন ঝুম বৃষ্টি নামুক!’

তার ও ইচ্ছা জাগে পরির সাথে গিয়ে একসঙ্গে বৃষ্টি বিলাস করতে। কিন্তু তাকে দেখলেই পরি চলে যাবে সঙ্গে তার হাসি ও। তার থেকে এভাবেই লুকিয়ে পরির বৃষ্টি বিলাস দেখা অধিক শ্রেয় মনে হলো।

দেখতে দেখতে এক সময় পরি হাসি থামিয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। পূর্ণ এসব দেখে হঠাৎ ই ভড়কে যায়। কি হলো পরির? কাছে যাবে কি যাবে না ভাবছে সে। থম মেরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। পরি কাছে চলে যায়। পরির দু গালে হাত রেখে বলে,

–‘পরি এই পরি কি হলো তোর?’

পরি পূর্ণের শার্ট ধরে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা মার উপর যত রাগ ক্ষোভ ছিলো সব বলে দেয়। পূর্ণের ও আর বুঝতে বাকি রইলো না পরির এই কান্নার পেছনে মূল কারণ পরির বাবা মা! এটাও বুঝলো তাদের উপর পরির ঠিক কতোখানি অভিমান জমা রয়েছে। ঝট করে পরি পূর্ণ কে ছেড়ে নিচে চলে যায়। পূর্ণ পেছন পেছন গেলো না। বরং বসে থাকলো নিচে। কিছু একটা ভেবে সে ও উঠে নিচে যায়। কাপড় চেঞ্জ করা উচিত।

পূর্ণ ফ্রেশ হয়ে পরির রুমে যায়।পরি বেলকনিতে ভেজা কাপড়ে দাঁড়ানো।

–‘ফ্রেশ হয়ে নে! নাহলে জ্বর আসবে। এই অসময়ের বৃষ্টি ভালো না।’

পরি কিছু বললো না। বুঝলো পরির থেকে উত্তর আসবে না। তাই সেও জোড় করলো না। এতোদিন পর পরির কিছুটা স্বাভাবিক রূপ দেখে পূর্ণ আর জোড় করার সাহস ও পেলো না। সে তৈরি হয়ে নিচে আসে। যেনো কোথাও যাচ্ছে সে। পুষ্পা আর নিরা নিচে বসা ছিলো। তাদের দুজনার মধ্যে ও ভালো ভাব জমে গেছে। দুজন ই পূর্ণ দেখে বলে,

–‘কি ব্যাপার কোথাও যাচ্ছো নাকি ভাইয়া?’

–‘হুম কয়েক দিন আসতে পারবো না। সাবধানে থাকিস তিন জন ই ওকে?’

–‘কিন্তু যাচ্ছো টা কোথায়?’

–‘পরি কে আবার আগের মতো করতে এটাই শেষ চেষ্টা থাকবে! এর বেশি কিছু বলবো না। বাকি টা সারপ্রাইজ!’

পূর্ণ কে বেলকনি থেকে চলে যেতে দেখলো পরি ও। কিন্তু বুঝতে পারে নি পূর্ণ কোথায় যাচ্ছে? পর পর কয়েক দিন পূর্ণ কে আর দেখা গেলো না। পরি শূন্যতা লক্ষ্য করছে ভালোই কিন্তু প্রকাশ করে না। পূর্ণ পরির ভালো মন্দ খবর নেয় নিরা আর পুষ্পার কাছে থেকে!

———————-

পূর্ণ ফিরলো ঠিকই তবে একা নয় আরো দুজন ব্যক্তি কে সঙ্গে নিয়ে। যাদের কে পূর্ণের বাবা মা ই পরির জীবন থেকে দূর করে দিয়েছিলো। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন পূর্ণ যাদের নিয়ে এসেছে তারা সম্পর্কে পরির জন্মদাতা বাবা মা। পরির ৫ বছর বয়সে তারা দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলেন। নিজ ইচ্ছায় নয়। সেখানে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছিলো পরির মৃত্যু। তারা জানতো পরি মারা গিয়েছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা আর বানোয়াট ছিলো। আর এই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ছিলো পূর্ণের বাবা মা। পূর্ণের বাবা মা এটাও জানতো পরির মা আর কোনো দিন সন্তান জন্ম দিতে পারবে না ফলে এই আঘাত টাই যথেষ্ট ছিলো তাদের জন্য। মূলত তারা পরির বাবা মার বিয়ে টাই মেনে নিতে পারেন নি। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো দুজন। পরির মা তাদের কাছে লো ক্লাসের মেয়ে ছিলো। পছন্দ ই করতেন না তারা পরির মাকে। কিন্তু পরির বাবার জন্য কোনো কিছু করতে পারতো না। তার উপর সকল সম্পত্তির ভাগ দুই ভাই সমান পেতো। যা পূর্ণের বাবা মা কিছুতেই চাইতো না। তাই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে পরির থেকে পরির বাবা মা কে আলাদা করে দেয়। উনারা ভেবেছিলো পরি বয়স ১৮ হলেই তার থেকে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া যাবে! কারণ পরির বাবা মা আর কখনো এই দেশে ফিরে আসতেন না। কিন্তু পূর্ণের জন্য সেই সুযোগ হয়ে উঠে নি। পূর্ণ সর্বদা পরির সঙ্গে ছিলো। এক পর্যায়ে তারা পরি কে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়। শেষে পরির বিয়ে দিতো এমন একজনের সঙ্গে যে থাকবে হাবাগোবা। তার সাথে পরির বিয়ে হলে সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে তার স্বামী। তার থেকে নিয়ে নেওয়া যেতো। কিন্তু কে জানতো তাদের এই সকল কথা গুলো পূর্ণ শুনে নেবে? পূর্ণ এই কথা গুলো জানার পর থেকেই নিজের বাবা মা কে দুচোখে দেখতে পারতো না। সম্পূর্ণ ভাবে নতুন রূপ নেয় ও। আর খোঁজ করতে থাকে পরির বাবা মা কোথায় তা নিয়ে। এবং এই কিছু দিন আগেই সে সফল হয়।

কয়েক বার কলিংবেল বাজানোর পর পুষ্পা দরজা খুলে দেয়। পূর্ণ এক গাল হেসে বললো,

–‘সারপ্রাইজ!’

নিরা ও এগিয়ে আসে দুজন ই হতভম্ব কারণ কেউ ই এই অগন্তুক ভেসে আসা দুজন ব্যাক্তি কে চিনে না। পূর্ণ বললো এনারা পরির বাবা মা। পুষ্পা আর নিরা দুজন ই শক্ড হয়ে যায়। পূর্ণ পরির বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুজন ই সালাম দেয়।
পরির বাবা বলেন,

–‘আমার পরি কোথায়? দেখাবে না ওকে?’

পুষ্পা আর নিরা বললো,

–‘পরি উপরের রুমে! আমি গিয়ে ডেকে আনবো?’

পূর্ণ তাদের আটকিয়ে দেয়!

–‘আমি যাচ্ছি!’

পূর্ণ পরির রুম টায় গিয়ে দেখলো পরি দাঁড়ানো ছিলো। সে হুট করে গিয়ে পরি কে জড়িয়ে ধরে ফেলে। পরি নির্বাক হয়ে রইল। পূর্ণ আজ কেন যেনো খুব খুশি! পরির কপালে চুমু খায় পূর্ণ। ঠোঁট জুড়ে লেপ্টে থাকা হাসির যথোপযুক্ত কোনো কারণ খুঁজে পেলো না পরি। পূর্ণ আচমকা পরির চোখ দুটো পিছন থেকে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিয়ে বললো,

–‘চল আমার সাথে!’

পরি না চাইতেও কথা বললো,

–‘পূর্ণ ভাই আমার চোখে কাপড় বেঁধেছেন কেন ছাড়ুন! পড়ে যাবো তো!’

–‘পড়বি না! শিসস আর কোন কথা নয় নিচে চল তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে!

পরি আর কোনো কথা বললো না। পরি কে তার বাবা মার সামনে নিচে নিয়ে এসে চোখ টা ছেড়ে দেয়। আর পূর্ণ বলে,

–‘বলেছিলাম না তোর লাইপের বেস্ট সারপ্রাইজ টা আমি দিবো! নে সেই সারপ্রাইজ টা!’

(চলবে)[লাস্ট পর্ব রাতে আসতে পারে]

পরির রিয়েকশন কেমন হবে?😎

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here