#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim
~ত্রয়োদশ পর্ব~
পরি চোখে মুখে অন্যরকম এক ভয়ংকর চাহনি। পূর্ণ কিছু বলার আগেই পরির বাবা মা এতো বছর পর মেয়ের মুখ দেখে পাগলের মতো কান্না শুরু করে দেন। অথচ তারা জানতো তাদের মেয়ে মারা গেছে। এই মৃত মেয়ের স্মৃতি কষ্ট দেবে বলে আপন ঠিকানা ছেড়েছুড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন। আজ তাদের সেই পরি কত বড় হয়ে গেছে। পরি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পা আর নিরা খুশিতে কান্না করে দিয়েছে। পূর্ণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পরির রিয়েকশন দেখার জন্য। কিন্তু পরির সেই এক ভাবেই আছে। মুহুর্তের মধ্যে পূর্ণের মায়ের বকা কথা গুলো কানের কাছে ঝংকার তুলতে লাগলো,
–‘তোর মা বাবা তো তোকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে! যেই মেয়ের মা বাপ তাকে ছেড়ে পালাতে পারে তার আবার বড় গলা কিসের? মানায় না এসব!’
আহা কত সেই অপমান অবহেলা জুটেছে তার কপালে এই দুই মানুষের কৃতকর্মের জন্য। আজ এতো ভালোবাসা কিসের? কোথা থেকেই বা পূর্ণ এনাদের খোঁজ পেলো? পরির কাছে তার বাবা মার একটা ছবি সযত্নে ছিলো তাই নিজের জন্মদাতা পিতা মাতা কে চিনতে তার একটু ও ভুল হয় নি। তবে এনাদের এই কান্না যেনো সহ্য হচ্ছে না তার। ঠং করছেন মনে হচ্ছে তার কাছে! চেঁচিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো তার। পুরো শরীর প্রচন্ড রাগে থরথর করে কাঁপছে। পরির বাবা মা তা লক্ষ্য করে।
–‘পরি?’
পরি কোনো কথা না বলে দুজনার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। এবার খুব কষ্টে চেপে রাখা চোখের পানি গুলো যেনো আর আটকানো যাচ্ছে না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো!
–‘আপনারা কেন এসেছেন এখানে? কে আপনারা?’
অবাক করা কথা শুনে দুজন ই হতাশ হয়। পুষ্পা বললো,
–‘এসব কি বলছিস পরি চাচা চাচি কে চিনতে পারছিস না? আরে এরা তোর বাবা মা!’
–‘ভুল বললে আপু! জন্ম দিলেই বাবা মা হয়ে যায় কে বলেছে তোমাকে? আমাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়ে এখন কান্না এনাদের চোখে? মানাচ্ছে না মোটেও!’
পরির বাবা মা বললো,
–‘পরি আমাদের কথা টা শোন আগে!’
–‘আমাদের কোনো কথা শুনতে চাই না আমি! পূর্ণ ভাই কাজ টা তুমি ঠিক করো নি! সারপ্রাইজ টা খুব বাজে! এর থেকে তো ভালো ছিলো আমাকে এক বোতল বিষ এনে দিতে পারতে!’
পরি আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে উপরে চলে যায়। আর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। সবাই গিয়ে পরি কে দরজা খুলতে বলে কিন্তু সে খোলে না। পরির বাবা মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পরি এতো বড় একটা কথা বলবে ভাবতে পারে নি! এতোদিন পর দেখা অথচ সন্তানের মুখে দুজনার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই তারা দেখতে পারছেন না।
————————
এদিকে পূর্ণের বাবা মা পরির উপর খুব রেগে যান। ওর জন্য নিজের দুই সন্তান থেকে ও যেনো নেই। আজ কতোদিন একটার ও মুখ দেখে না। রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ণ কোথায় আছে তা জানতে উঠে পড়ে লাগে। এট লাস্ট ঠিকানা পেয়ে ও যায়। যত দ্রুত পেরেছেন দুজন ই চলে আসেন ঐ ঠিকানায়। লাগাতার কলিংবেল বাজায় নিরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সে পূর্ণের বাবা মা কে চিনতে পারলো না!
–‘জ্বি আপনারা কারা?’
–‘এই মেয়ে তুমি কে? আমার পূর্ণ কই?'[রেগে]
সবাই পরির কথা শুনে চিন্তিত হয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে ছিলেন। পুষ্পা বললো,
–‘নিরা কে এসেছে?’
নিরা কে ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায় দুজন। নিরা বলে,
–‘আরে আশ্চর্য পূর্ণ ভাইয়া কে কেন খুঁজছেন?’
পূর্ণের বাবা মা ড্রয়িংরুমে এসে পৌঁছায়। সবাই তাদের দেখে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। খুব বড়সড় একটা ধাক্কা খায় উনারা। এতোটাই অবাক হচ্ছেন যে নিজেদের চোখ কেই বিশ্বাস হচ্ছে না! পূর্ণ বলে,
–‘কি চিনতে পারছেন এনাদের?’
পূর্ণের বাবা মা রাগ ভুলে ভয়ে ঢোক গিলে। চিনতে একটু ও কষ্ট হয় নি। তারা এখানে কিভাবে আসলো তাই বুঝতে চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু বুঝতে পারলো না।
পরির বাবা রেগে বলে,
–‘তোমাদের দুজন কে আমি ছাড়বো না!’
পরির বাবার হাত পরির মা টেনে ধরে তাকে আটকে দেয়। পরির মা অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,
–‘কি আমাদের চিনতে কষ্ট হয় নি তো? অবশ্য কষ্ট তো হওয়ার ও কথা নয়! আপনারা দুজন খুব বড় এক্টর! আমাদের কাছে আমাদের সন্তান কে মৃত বানিয়ে আমার পরির জীবন টাকে এভাবে নড়ক বানিয়ে দিলেন? অপরাধী বানালেন আমাদের কে পরির কাছে? লজ্জা করলো না আপনাদের? এবার খুশি হয়েছেন তো? পরি আমাদের কে অস্বীকার করলো! ভালো একটা কাজ করেছেন আপনারা দুজন! সত্যিই বাহবা পাওয়ার যোগ্য! না বলে পারলাম না! পূর্ণ বাবা আমাদের এই সব না জানালে তো আমরা আজীবন এটাই জানতাম আমাদের সন্তান মৃত!’
পূর্ণের বাবা মা থ হয়ে দৃষ্টি নত করে ফেললো। পূর্ণ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
–‘অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই?’
পূর্ণের বাবা মা নিজেদের বাঁচাতে বললো,
–‘পূর্ণ ওরা তোকে মিথ্যা বলেছে! বিশ্বাস করিস না ওদের! ওরা তো পরি কে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো!’
–‘কে সত্যি আর কে মিথ্যা তা তো আমি অনেক আগেই জেনে গেছিলাম। কিভাবে জানতে চান?’
–‘কিভাবে?’
–‘আমাদের মুখ থেকে নিজের কানেই শুনেছি আর নিজের চোখেই দেখেছিলাম! এবার বলুন উনাদের নাহয় অবিশ্বাস করবো কিন্তু নিজের কানে যা শুনলাম আর যা দেখলাম তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করতে পারি!’
পূর্ণ কে নানা ভাবে বানিয়ে যা পারে তাই বলতে শুরু করে পূর্ণ রেগে যায়।
–‘শাট আপ! দুজন একের পর এক মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন তো বলেই যাচ্ছেন? সব কিছুর একটা লিমিট আছে! লিমিটের বাহিরে গেলে সেটা কে আর ভালো দেখায় না!’
পরির বাবা মা তাদের বিষয় টা ভুলে এবার বললেন,
–‘পূর্ণ পরি তো দরজা বন্ধ করে আছে! ও তো জানে ও না সত্যি টা! আমরা কি এসে ভুল করলাম? এখন যদি পরি নিজের ক্ষতি করে ফেলে!’
–‘ভুল করেন নি। এখনি উপযুক্ত সময় আমি নিয়ে আসছি পরি কে! [পূর্ণ তার বাবা মার সামনে গিয়ে বলে] এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন এক পা ও নড়বেন না!’
পূর্ণ পুষ্পা আর নিরা পরির রুমের দিকে যায়।
–‘পরি দরজা খোল!’
সবাই অনেক রিকোয়েস্ট করে! পরি আর না পথরে রেগে চেঁচিয়ে বলে,
–‘আমি কিন্তু নিজের ক্ষতি করে ফেলবো!’
পূর্ণ ধৈর্য হারা হয়ে নিজেও রেগে বললো,
–‘আমি বলছি তুই নিজের কোনো ক্ষতি করবি না! কিসের জন্য নিজের ক্ষতি করবি? তুই এতোদিন পর্যন্ত যা জেনে এসেছিস তা ভুল! আজ সেই সময় ভুল গুলো কে সঠিক ভাবে জানার।’
–‘আমি কিচ্ছু জানতে চাই না চলে যান এখান থেকে। ভালো লাগছে না আমার!’
–‘আমি কিন্তু দরজা ভেঙ্গে ফেলবো পরি!’
অবশেষে পরি দরজা খুলে কান্না করে চোখ মুখ লাল করে রেখেছে। পূর্ণ তাকে নিচে নিয়ে যায়। সব কিছু খুলে বলে। পূর্ণের বাবা মা অপরাধীর মতো নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর অন্যদিকে পরির দিকে তার বাবা মা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। সব সত্যি উন্মোচন করার পর পরি হতবাক। এতোসব কাহিনী তার অজানা ছিলো! তার জেঠা জেঠি তার সাথে এই ভাবে বেঈমানি করলো সত্যি ই অবিশ্বাস্য!
পূর্ণের বাবা মা যেই মুখ নিয়ে এই বাড়িতে ঢুকেছিলাম তার থেকে শত গুন অপমানিত হয় নিজেদের কাছে। মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে পূর্ণ আর পুষ্পা তাদের কে আর কখনো বাবা মা বলে স্বীকার করবে না তাও বলে দেয়।
এবার উনারাও বুঝুক সন্তান থেকে ও না থাকার কষ্ট কতটুকু! যা এতোদিন পরির বাবা মা ভোগ করে এসেছেন!
————————-
এতোদিন পর যেনো পরি আবার আগের মতো হতে পেরেছে। নিজের সব হাসি খুশি ফিরে পেয়েছে। এতোদিন মনে হতো সে-ই পৃথিবীতে সবচেয়ে অসুখী। আজ মনে হচ্ছে পরি ই একমাত্র ব্যক্তি যে পৃথিবীতে একমাত্র সুখী ব্যক্তি। পরি এই আনন্দে কাঁদছে। তার মাথার কাছে তার ছায়া হয়ে বসা দুজন ব্যক্তি। তিন জনের চোখেই পানি। পরি উঠে বসে। বাবা মার চোখের পানি মুছে দেয়।
–‘আজ থেকে আর কেউ কাঁদবো না ওকে? চল তো এখান থেকে! তার আগে হাসো দেখি!’
দুজন ই হাসে। পরি ও। এই হাসি তৃপ্তির। পূর্ণ তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। পরি কিছু না বুঝে আচমকা পূর্ণ কে পেছন থেকে জাপটে ধরে বললো,
–‘আমাকে অনেক অনেক অনেক থ্যাঙ্কস!’
পূর্ণ হেসে দেয়। পূর্ণ পেছন ফিরে। পরি কি করেছে ভেবে লজ্জা পেয়ে যায়। পূর্ণ সেটা বুঝতে পেরে বললো,
–‘বউয়ের খুশির জন্য এতটুকু করতেই পারি!’ [উইথ ডেভিল স্মাইল]😉
(চলবে)
রি-চেইক করা হয় নি! এক পর্বে পুরো টা হচ্ছিল না তাই আরো এক পর্ব বাড়াতে হলো! অন্তিম পর্ব শিঘ্রই আসছে!(কাল সকালে দেব)