প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল
২৬.
রাতের আঁধার কেটে ভোরের মিষ্টি স্নিগ্ধ আলো ফুটেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। জানালার পর্দা ভেদ করে আসছে মৃদু বাতাস। দেয়াল ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে পাঁচটা পঞ্চান্ন’তে। মিনিট পাঁচেকের মাঝেই, পাশের এলার্ম-ক্লক বেজে উঠল। ছ’টায় স্যাট করা ছিল হয়তো। বা’হাতে ঘড়িটা বন্ধ করে দিল অরু। তার চোখ ফুলে কলাগাছ। সারারাত ঘুমাতে পারেনি। তন্ময় নেশায় বুদ হয়ে যেসব কান্ডকারখানা করেছে, সেগুলো হজম করতে রাত পেরিয়ে গেল। এখনো দাউদাউ করে জ্বলছে ভেতরটা। হৃদয় এখনো দুরুদুরু কাঁপছে। ফাঁকাফাঁকা লাগছে মস্তিষ্কের মধ্যে। ঠিক কি ভাববে বা করবে বুঝতে পারছেনা।
রুবি ঘুমের নামে বেহুশ হয়ে গিয়েছে। হুটহাট পা তুলে দিচ্ছে অরুর শরীরে উপর, নাহলে সে নিজেই উঠে আসছে। তাদের পরিবারের প্রত্যেকজনই বলে অরু আর রুবির ঘুমের ধরণ এক! বিশ্রী ধরণ। হুশ জ্ঞান থাকেনা ঘুমিয়ে পড়লে। বিছানার একপ্রান্তে ঘুমালে, উঠে অন্যপ্রান্ত থেকে। ঘুম খারাপ তাদের দু’জনের। এবং তা আজ হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছে অরু।
উঠে বসলো। রুবিকে সরিয়ে হেলেদুলে উঠে দাঁড়ালো। এক্ষুনি রুমে যেতে হবে। তন্ময়কে তুলে তার রুমে পাঠাতে হবে। যদি বাড়ির কেউ দেখে ফেলে কেমন হবে? ভিষণ খারাপ দেখাবে! বেরিয়ে পড়লো নিজের রুমের উদ্দেশ্যে। মাঝপথে জবেদা বেগমকে পেয়ে বসেছে। সে এসেছে পশ্চিম দিক থেকে। সেদিকে তো অরুর রুম। তারমানে? অরু মুখটা কাঁচুমাচু করে ফেলেছে। জবেদা বেগমের চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনি ধীর স্বরে শুধালেন,
‘তন্ময় মদ খেয়ে বাড়ি ফিরেছে?’
অরু মাথা নাড়াল। পরপর মাথা দোলাল। চিন্তাভাবনা করে একটি বানোয়াট মিথ্যে বললো, ‘আমি জানি না। রাতে আমাকে এসে বললেন তার রুমে অনেক ইদুর। ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে। আমাকে অন্য রুমে ঘুমাতে যেতে। তো আমি রুবি আপুর রুমে চলে গিয়েছিলাম।’
জবেদা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে অরু প্রশ্ন করলো,’কী হয়েছে বড়ো মা?’
‘তোর চাচ্চুর কাছে বিচার এসেছে। এভাবে মদ খেয়ে রাতবিরেত হট্টগোল করে এসেছে, বিচার তো আসবেই। তবে এমনটা তো এই প্রথম! ছেলেটা আমার এসব আগে কখনো করেনি! তোর চাচ্চু ভীষণ রেগে।’
অরু মাথা নত করে রাখল। জবেদা বেগম যাবার পূর্বে বলে গেলেন, ‘লেবু দিয়ে শরবত করে আনি। তুই তন্ময়কে একটু তুলে দে।’
‘আচ্ছা।’
অরু রুমের রুমের দিক অগ্রসর হলো। দরজা ভিড়িয়ে রাখা। প্রথমে মাথা ঢুকালো। তন্ময় ঘুমিয়ে। আলগোছে দরজা সম্পুর্ন খুলে ঢুকলো। তার পরিপাটি রুমের যা’তা অবস্থা। মেঝেতে পড়ে থাকা তন্ময়ের শার্ট তুলে নিলো। তারপর বিছানায় নজর দিলো। পরপর নজর ঘোরালো। উদোম শরীরে শুয়ে। এই লোক শার্ট খুলেছে কেন? ভাগ্যিস প্যান্ট খোলেনি। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানার সামনে দাঁড়ালো। না চাইতেও চোখজোড়া চলে যাচ্ছে তন্ময়ের উদোম দেহ খানার দিক। উঠানামা করা প্রশস্ত বুক, পেশিবহুল হাত, স্লিম পেট ডুবে আছ।৷ আকর্ষণীয় ফিগার! অরু অবশ্য আগেও দেখেছে উদোম শরীরের তন্ময়কে। তবে এই প্রথম কাছ থেকে সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারছে। গম্ভীর মুখশ্রী এখন মায়ার রাজ্যে পরিনত হয়েছে। ভুরু দু’য়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ পড়েছে। যেন ঘুমের ঘোরে ভালো কিছু দেখছে না। নাকের ডগা এখনো লাল। গতরাতে যাবার পূর্বে অরু কামড়ে দিয়েছিল। ঠোঁটের দিক নজর যেতেই ঘুরে গেল। গলাটা শুকিয়ে কাঠকাঠ। দৃশ্যটি চোখে ভাসতেই বুক দুরুদুরু কাঁপতে লাগলো। তন্ময়কে উঠানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। আপাতত চোখেচোখ রেখে সামনে দাঁড়ানোর মতো হিম্মত নেই। সামনে একদম যেতে পারবে না! অরু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে শাবিহার রুমের দিক ছুটলো।
শাবিহা ঘুম থেকে উঠেছে। গোসল নিয়ে মাত্রই বেরিয়েছে। অরুকে দেখে প্রশ্ন করলো, ‘কি হয়েছে?’
‘কিছুনা। ওয়াশরুম যাই?’
‘যা।’
যেতে নিয়ে অরু ফিরে দাঁড়ালো। সংকোচবোধ করছে। সেটা লক্ষ্য করে শাবিহা বলল,’কি বলবি বল?’
‘উম..মাতাল কেউ যদি কিছু বলে সেটা কি সত্যি মেনে নেওয়া যায়? মানে সেটায় কতটুকু সত্যতা থাকতে পারে?’
‘সাধারণত ওদের প্রত্যেকটা শব্দই সত্য হয় তখন। মাতাল হয়ে তারা শুধু মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো বলে, যা সে কখনো বলতে চায়না। ধ্যান জ্ঞান থাকেনা তো, যা মনে আসে বলে দেয়৷ বলা যেতে পারে, মানুষ মাতাল হলে একটি সাদা কাগজের ন্যায়ে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে নয়। অনেকে মাতাল হলে নিশ্চুপ প্রকৃতির হয়। কেউবা আবার উদোম পাগল হয়ে পড়ে। যে যেমনটা বাস্তবে হতে পারেনা, মাতাল হলে তারা সেটাই হয়। বোঝা গেল?’
‘হু।’
অরু ওয়াশরুম ঢুকে গেল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বিছানার কোণে বসে রইলো। দীপ্ত ছুটে এসেছে। চোখমুখে অবিশ্বাসের ছাপ। দ্রুততম গতিতে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে নিয়ে বললো,’তোমরা কিছু জানো?’
‘কি হয়েছে?’
‘কি হয়নি বলো।’
‘সেটাই বল যেটা হয়নি।’
‘শাবিহা আপু মজা না কিন্তু। ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় বলতে যাচ্ছি।’
‘শুনছি আমার বাপ বল।’
‘তন্ময় ভাইয়া কাল মদ খেয়ে বাড়ি এসেছিল।’
শাবিহার হাতের চিরুনি পড়ে গেল। হতভম্ব হয় গেল কিছুক্ষণের জন্য। নিজেকে সামলে চিরুনি তুলে আঁড়চোখে অরুর দিক তাকাল। অরু চুপচাপ বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়াল শাবিহা। কি যে শুরু করেছে এই দুইজন আল্লাহ জানেন! যেসব কখনো হয়নি এখন সেগুলো হচ্ছে। শাবিহা কি এ’বিষয়ে অরুর সঙ্গে কথা বলবে? ভালো দেখাবে? নাকি দুজনের মধ্যে না ঢোকা শ্রেয় হবে? পুনরায় চুল আঁচড়াতে মনোযোগী হলো। দীপ্ত হতভম্ব হয়ে গেল। এতবড় একটা সংবাদ জানাল, তাতে কারোই কোনো মাথা ব্যথা নেই? আশ্চর্য! দীপ্ত সন্দেহ সুরে বলল, ‘তোমরা কি ইতোমধ্যে জেনে গেছ?’
শাবিহা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললো, ‘জেনে গেছি। তুই যা ভাগ। ডিস্টার্ব করিস না।’
‘অ্যাহ! ডিস্টার্ব করিস না। আমার হাতে ওতোপ্রোতো সময় নেই।’
দীপ্ত যেভাবে এসেছে সেভাবে চলে গেল। এবার শাবিহা অরুর দিক ঘুরলো। ভালোভাবে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,’ঠিক আছিস?’
‘ছিলাম না। তবে এখন দিব্বি আছি।’
বলেই অরু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। জানালার সামনে পৌঁছে দূর প্রান্তে, আকাশ পানে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো গাছটির দিক নজর দিল। গাছের উপর দুটো পাখি। কপোত-কপোতী হয়তো? এক পাখি আরেক পাখির পিছু ঘুরছে। অরুর মন বললো, পিছু ঘুরতে থাকা পাখিটি সে আর সামনে অগ্রসর হতে থাকা পাখিটি তন্ময়। ঠিক এমনটাই হয়ে এসেছিলো এতদিন। সে তন্ময়ের পিছু ঘুরত, তন্ময় তাকে এভোয়েড করতো।তবে এখন আর এমনটা হবেনা! এখন অরু তন্ময়কে জেনেছে। বুঝেছে কিছুটা! এখনো তন্ময়ের ধীর স্বরে বলা কথাগুলো কানে বাজে!
অরুর এই বোকার মতো হাসার কারণ জানা নেই শাবিহার। তবে সে নিজেও মুচকি হাসলো। প্রাণবন্ত অরু তার পছন্দের। এভাবেই থাকুক মেয়েটা। দেখলেও পরাণ জুড়িয়ে যায়। মন ভালো থাকে।
________
ব্রেকফাস্ট টেবিলে সর্বপ্রথম আজ ফুরফুরে মেজাজে অরু বসেছে। দিব্বি নিজের পছন্দের ব্রেড নিয়ে তাতে ধীরেসুস্থে চকলেট ক্রিম মাখছে। সময় নিয়ে সকলেই এসে নিজেদের সিটে বসেছে। তন্ময়কে দেখা গেল সবার শেষে। কপাল চেপে এসেছে ডাইনিংয়ে। ছেলেকে দেখে মোস্তফা সাহেব শব্দ করে কাঁটা চামচ ফেললেন প্লেটে। যেন তন্ময়ের মনোযোগ তার দিক চাচ্ছেন। তবে সেটা পেলেন না।ওহী সাহেব বললেন, ‘ভাই থাক বাদ দিন না। খেতে বসে..’
‘আস্কারা দিস না। আজ প্রথম করেছে, লাই পেয়ে মাথায় চড়ে আরও করবে।’
তন্ময় যেন শুনেও শুনল না। চুপচাপ বসে পড়লো খেতে। জবেদা বেগম দু’একবার ছেলের কপালে হাত ছুয়ে গেলেন।
অরুকে আগের মতো চঞ্চল স্বভাবে দেখে বাড়ির সবাই বিমোহিত। খুশিতে আটখানা হয়ে পড়েছেন।
মোস্তফা সাহেব বেরোনোর পূর্বে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেছেন। ওহী সাহেব পাঁচশো টাকা হাতে দিয়ে বলেছেন, ঘুরে আসতে। আনোয়ার সাহেব মেয়েকে জিজ্ঞেস করে গিয়েছেন, ফিরবার সময় কি আনবে। অরু হালিম, ফুচকা, চটপটি, স্যুপ আনতে বলেছে।
ড্রয়িংরুমে যখন অরু সোফায় বসেছিলো, তার দু’পাশে ছিলো দীপ্ত এবং রুবি। ওপরপানে কলি বসে। তন্ময় অফিস ব্যাগ নিয়ে এসেছে। তাদের সামনে দিয়ে যখন যেতে নিবে, অরু উচ্চস্বরে বললো, ‘হানিফ ভাইয়া দেখতে ভালোই তাই না? স্মার্ট আছে হালকাপাতলা।’
তন্ময়কে থেমে যেতে দেখা গেল। গম্ভীর মুখশ্রী আরও গম্ভীর হয়ে উঠলো। ফিরে কিছু একটা বলতে নিয়েও বলল না। অরুকে চোখ রাঙিয়ে বেরিয়ে গেল। সে যেতেই অরু হো হো করে হাসছে। রুবি চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘ওই ছেলেটাকে ভালো দেখায়? তোর চোখে ছানা পড়েছে। আবার স্মার্ট? ছিঃ!’
‘আসলেই ছিঃ!’
বলেই অরু গুনগুন শব্দ করে চলে গেল।
শুক্রবার দিন কলি চলে যাবে। আজ বুধবার। জয়া বেগম এখন থেকেই কেনাকাটা করছেন কলির সঙ্গে পাঠানোর জন্য। বাড়ির বাচ্চাদের জন্য, মা-বাবার জন্য সামান্য কেনাকাটা পাঠাবেন এই’যা। এখন কলিকে দিয়ে আসবে কে, এটা নিয়ে বড়ো সমস্যা। চিন্তিত তাকে কলি নরম সুরে বলল, ‘তন্ময় ভাইয়ের সময় নেই?’
জয়া বেগম মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘না। ও বিজনেস ট্যুরে যাবে। চিন্তা করিস না, ড্রাইভার আছে। নয়তো আকাশ ফ্রি থাকলে সেও যেতে পারে। দেখা যাক!’
কলি বিরক্ত হলো। তন্ময় একদিন সময় করে যেতে পারবেনা? হবু বউ সে তার। আজ বাদে কয়েকদিন পর দুজন এক হবে।এতটুকু করার জন্য এগিয়ে আসার কথা নিজ থেকেই। উল্টো তার বলতে হচ্ছে। বলেও তো কোনো লাভ দেখছে না। কলি বাড়িতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলবে! তার এই অরুকে একদম ভালো লাগেনা। নির্লজ্জের মতো কেমন না কেমন করে!
________
শাবিহার সঙ্গে হঠাৎ পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। হঠাৎ সাক্ষাৎকারে খুশিতে আটখানা তারা৷ সামনের কফি শপে একসঙ্গে ঢুকলো। আশ্চর্যজনক ভাবে অয়ন ভার্সিটি ড্রেসে, বন্ধুদের সঙ্গে সেখানটায় আড্ডা দিচ্ছে। পৃথিবী এতটাই ছোট কী? শাবিহার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। অয়ন তাকে এখনো খেয়াল করেনি। মাথা নিচু করে বন্ধুদের বলল,’চল অন্যটি’তে যাই।’
বন্ধু সাইফুল হেসে বললো,’দোস্ত এই কফি শপের কফি মারাত্মক। খেয়ে দেখ।’
শব্দ শুনে অয়ন এবার মাথা তুলে তাকাল। শাবিহা ও তাকিয়েছে।দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। অয়ন চমকে দাঁড়াতে নিয়ে ও বসে পড়ল। শাবিহা নিশ্চয়ই চাইবে না, সে যাক তার বন্ধুদের সামনে।
পাশের সিট গুলোতে জড়সড় হয়ে বসেছে শাবিহার বন্ধুবান্ধব। শাবিহাও বসলো। এখান থেকে অয়নকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে ধীরে কথা বললেও ছেলেটা শুনতে পাবে৷ অদ্ভুত! সাইফুল মেনু দেখছে। সকলকে অর্ডার করতে বলে, শাবিহার দিক তাকাল। বলল, ‘দোস্ত তোর ব্যাপারস্যাপার কি? কেউ আছে জীবনে? আমি কিন্তু ভাই সেই কলেজ লাইফ থেকে লাইন মেরে আছি তোর পেছনে।পাত্তাই দেস না৷ ‘
শাবিহার গলাটা শুকিয়ে গেল। হাসার চেষ্টা করে বললো,’ এগুলো বাদ দে না।’
‘সবসময় এই টপিক এভোয়েড করিস। হুয়াই? ডোন্ট ইউ ওয়ান্ট অ্যা লাইফ পার্টনার?’
বান্ধবী মল্লিকা বললো,’দেখ অলরেডি আছে, আমাদের বলছে না।’
সাইফুল বললো,’এই দোস্ত। আমাকে দেখোস না?
আমরাও ট্রায় করতে পারি। বেস্ট কাপল হলেও হতে পারি। এভবেও ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই বলে উই লুক গুড টুগেদার। আমারও তাই মনে হয়। ভালো ম্যাচ হবে দুজনের, তাই না মল্লিকা?’
‘শাবিহা ভেবে দেখ।’
অয়ন হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ কাঁধে চেপে বেরিয়ে গেল। পেছনে অয়নের বন্ধুবান্ধব ও ছুটেছে। শাবিহা হাত খানা শক্ত করে মুঠো করে রাখল। পেছনে দৌড় দিবে? অয়নকে কি একটু বোঝাবে? কি বা বলবে! ওদের রেখে যাওয়া তো সম্ভব নয়!সাথে অয়নের বন্ধুবান্ধব আছে। কি পরিচয়ে যাবে? নিশ্চয়ই অয়ন লজ্জায় পড়বে!
চলবে~
‘Nabila Ishq’
____________________প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল
২৭.
গত দুদিন ধরে অয়নের কোনো মেসেজ, কলস নেই। শাবিহা কল দিলে ধরছে না। মেসেজের রিপ্লাই করছে না। ছেলেটা কি খুব ব্যস্ত? নাকি সাইফুলের কথাগুলো শুনে রেগেছে? শাবিহা বুঝতে পারছেনা সে কি করবে! কার কাছে অয়নের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে? মন আনচান করছে। তার স্বচ্ছল পৃথিবীর আকাশে মেঘ জমেছে। দুদিন ধরে সেখানে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। ঝোড়ো হাওয়ায় তোলপাড় শুরু করেছে। ভস্ম করছে ভেতরের সবকিছু। গলাকাটা যন্ত্রনায় বুক ধরে আসছে।
জীবনে এই প্রথম সে প্রেমে পড়েছে। বা প্রেম করছে বলা যায়! প্রেমিককে কিভাবে মানাতে হবে বা কি করতে হবে সে-সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। বড়ো শূন্যতা অনুভব করছে। বিষন্ন মনে এই নিয়ে অগুনতি বার কল করেছে। এখন আবার করলো! রিং হচ্ছে তবে ধরছে না।
শাবিহার চোখ জ্বলছে। কান্নার আগামী বার্তা! কিন্তু সে কাঁদবে না! এতটাই ইমোশনাল হয়ে গেল সে? একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে তার কান্না আসছে? ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! শাবিহা নিজের প্রতি ভীষণ বিরক্ত! এতো ব্যাকুল হওয়ার কি আছে? মাত্র দুদিন হয়েছে। তাতেই তার এই অবস্থা? অথচ, দিন শেষে কান্নার ইচ্ছেটা দমন করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।
অফিস থেকে বেরিয়ে শাবিহা বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। আজও অপেক্ষা করছে! যদি অয়ন আসে? দুদিন ধরে নিম্নে একঘন্টা সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটাই আশায়! অয়ন আসবে। এই বুঝি অয়ন এসে মুখ ভর্তি হেসে ডাকবে, ‘শাবিহা।’
কিন্তু সেই মুহুর্ত আসছেই না! দাঁড়িয়ে থেকে শাবিহা আবারো কল করলো। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না! ঘন্টা খানেক হয়ে গিয়েছে। শাবিহার আজ দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে। বাসে উঠবে এমন সময় তার সামনে একটি ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটাকে চিনতে তার মিনিট পাঁচেক লেগেছে। অয়নের বন্ধু সৌভিক না এটা? সবসময় এই ছেলেটা অয়নের সঙ্গেই থাকে। শাবিহা কিছু বলবে এর পূর্বেই সৌভিক বললো, ‘আপু আমার কথায় রেগে গেলে একটা চড় মেরে দিয়েন। তবুও তন্ময় ভাইকে বিচার দিবেন না প্লিজ! আমি শুধু আপনার কাছে মেসেজ বিতরণ করতে এসেছি।’
শাবিহার কানে সৌভিকের এগুলো গেল না।সে নিজের মতো উতলা কন্ঠে শুধালো, ‘অয়ন কোথায়?’
সৌভিক চমকে তাকাল। শাবিহার উতলা মুখমণ্ডল দেখে, মনের ভয় কিছুটা কেটে গেল। প্রাণ প্রিয় বন্ধু অয়ন যখন বলেছে, শাবিহাকে গিয়ে আনতে। সে রাজি হয়নি। কেন রাজি হবে? কে চাইবে ইচ্ছে করে জুতোপেটা হতে? কিন্তু অয়ন ভরসার সঙ্গে বলেছে, শাবিহাকে একবার অয়নের নাম বললেই চলে আসবে। দ্বিধাবোধ নিয়েই মুলত সৌভিক এসেছে। এখন শাবিহার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে হালকা অনুভব করছে। মনের গহীনে থাকা ভয় অনেকাংশে কেটে গিয়েছে। হাসিমুখে বললো, ‘আপু সামনেই। পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে শুধু।’
‘তাই? আচ্ছা, চলো।’
সৌভিক আগে হাঁটছে শাবিহা পেছনে। তারা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি রেস্টুরেন্টের। এখানেই তো সেদিন অয়নকে দেখেছে। নিজের বন্ধুবান্ধব নিয়ে এই রেস্টুরেন্টেই ঢুকেছিল শাবিহা। সৌভিকের পিছু পিছু ঢুকলো। ভেতরে কোনো লোকজন নেই।কালারফুল লাইটস জ্বলছে! ফুলের সাহায্য সাজানো চারপাশ। যেমন কেউ পুরোটা বুক করেছে। শাবিহা পুরোপুরি ভেতরে যেতেই অয়নকে দেখতে পেল। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে জাদুকরী হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। চিরচেনা সেই আদুরে চোখে তাকিয়ে। অয়ন সামনের বেলুন ফুটিয়ে উসখুস কন্ঠে বলল,
‘ শুভ জন্মদিন।’
শাবিহার নাক ফুসছে। চোখের ভেতরের কোণ লালচে হয়ে এসেছে। সে যথাসম্ভব নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। শাবিহাকে এভাবে দেখে, অয়ন দ্রুত পায়ে জিহ্বা কামড়ে এগিয়ে আসলো। ‘রেগে আছ? সরি! আল্লাহ! দেখি… কান্না করছ?’
শাবিহার মুখশ্রী দু’হাতে ছুয়ে দিল। তাকে টেনে নিজের বাহুতে নিল। সমানে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘আমি ব্যস্ত ছিলাম। সেলফোন চেইক করার সময়টুকু পায়নি।টেনশনে ছিলে বুঝি?’
সৌভিকের চোখজোড়া কপালে উঠে গেল। এই বান্দর পোলা শাবিহাকে পটিয়ে ফেলেছে? তাদের এলাকার সুন্দরী সিনিয়র আপুকে পটিয়ে ফেললো? সৌভিকের ইচ্ছে করছে, অয়নের পা ধরে বসে থাকতে! মাম্মা কি চিজ তুই!
_______________
‘তোর গলার স্বর এতো মধুর শোনাচ্ছে কেন?’
‘আমার গলায় মধু ঢুকেছে তাই!’
কথাটি বলে অরু স্তব্ধ হয়ে গেল। নিজের কথায় নিজেই কিংকর্তব্যবিমুঢ়। সঙ্গে শরীর শিরশির করে উঠলো। ভেতরে ঠান্ডা শ্রোত বয়ে গেল। কেন, সেটা ভাবতেও অরুর লজ্জা করছে। কথা ঘোরাতে বলল, ‘না মানে মন ভালো।’
‘ভালো মনের রহস্য নিশ্চয়ই তন্ময় ভাই।’
মেয়েটা বড্ড সেয়ানা। সব বুঝে ফেলে। অরু অজানা ভঙ্গিতে মিনমিন সুরে বলল, ‘কি জানি কী বলছিস!’
‘অ্যাহ। আদিখ্যেতা যত্তসব। সব জানি!কি পাকিয়েছিস চুপচাপ এসে বলবি।নাহলে… ‘
‘রাখ, রাখ। আমার কাজ আছে।’
‘সময় মতো চলে আসিস কাল সক্কাল সক্কাল।’
‘আসব না। যা ভাগ!’
কল কেটে অরু মুচকি হাসলো। তার আকাশের প্রজাপতি রঙিন আলোয় জ্বলজ্বল করছে। মনের গহীনে উড়ছে প্রাণবন্ত ভাবে। সেই কি অমায়িক শান্তি। শান্তিতে অরুর নাচতে ইচ্ছে করছে। উড়তে ইচ্ছে করছে। দুলতে ইচ্ছে করছে। আর তন্ময়কে জ্বালাতন করতে ইচ্ছে করছে। দুদিন ধরে তার মনে হচ্ছে, তন্ময়ের মতো আদুরে পুরুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই। উপর দিয়ে গম্ভীর, রাগী মুখশ্রী নিয়ে থাকলেও ভেতরে সে নরম তুলতুলে। হাওয়াই মিঠাই একদম! অরুর ইচ্ছে করছে গপগপ করে খেয়ে ফেলতে। যখন সে একটু বাজিয়ে দেখে লোকটাকে, মুখের দিক তাকানো দায় হয়ে যায়।
মেসেঞ্জারে অরুদের একটা কাজিন গ্রুপ খোলা আছে। সেখানে যুক্ত রয়েছে, রুবি, আকাশ, শাবিহা, তন্ময় অরু, ইব্রাহিম এবং অয়ন। ইব্রাহিম গত পরশু অ্যাড হয়েছে। অ্যাড করেছে আকাশ! আর অয়নকে আজই অ্যাড করা হয়েছে। রাতে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে অরু গ্রুপে একটি মিমি শেয়ার করলো। সঙ্গে সঙ্গে সিন করে রিয়েক্ট করেছে ইব্রাহিম এবং আকাশ! কিছুক্ষণ পর তন্ময়কে সিন করতে দেখা গেল। সময় নিয়ে অরু একটি মেসেজ পাঠাল, ‘একটি ছেলে প্রপোজ করেছে। দেখতে সুন্দর। এক্সেপ্ট করবো?’
সবাই ‘হা হা’ রিয়েক্ট করেছে। তন্ময় শুধু সিন করেছে। তাকে বেশ কিছুক্ষন টাইপিং করতে দেখা গেল। তবে শেষপর্যন্ত কোনো মেসেজ এলো না। ইব্রাহিম এবং আকাশ রিপ্লাই করেছে। ইব্রাহিমের রিপ্লাই, ‘এক্সেপ্ট করে ফেল।’
আকাশের রিপ্লাই, ‘কোন গাঞ্জাখর?’
অরু রিপ্লাই করবে তার পূর্বেই দরজায় করাঘাতের শব্দ। হঠাৎ দরজা পেটানোর শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। বুকে হাত ডান হাত চেপে ধরলো। ভয় পেয়েছে! এতো দ্রুত চলে এলো? সেলফোন বালিশে লুকিয়ে অরু উঠে দাঁড়ালো। ঠোঁটের হাসি যথাযথ সম্ভব লুকিয়ে দরজা খুলতে অগ্রসর হলো। দরজা খুলতেই সামনে তন্ময়ের গম্ভীরমুখ। সে টিশার্ট-টাউজার পরে দাঁড়িয়ে। গম্ভীর স্বরে শুধালো,
‘ছেলেটা কে?’
‘কোন ছেলেটা?’
‘ইয়ার্কি করছিস?’
‘বড়ো ভাইয়ার সাথে কি কেউ ইয়ার্কি করে!’
‘থাপ্পড় দিয়ে তোর সব-কয়টা দাঁত ফেলে দিব। বেয়াদব!’
অরু গাল পেতে দিল, ‘এইযে দেন..তবে সবগুলো দাঁত কি সত্যিই পড়ে যাবে?’
তন্ময় ভাষা খুঁজে পেল না যেন কথা বাড়ানোর মতো। চরম বিরক্ত সুরে বলল,’এসব আর শুনলে তোর পা ভেঙে ফেলবো!’
‘কেন?’
‘তর্ক করছিস?চাচ্চুকে বিচার দিব?’
‘আমিও দিব আপনার নামে।’
বলেই অরু অস্পষ্ট স্বরে ভেঙাল, ‘তন্ময় ডাক।’
তন্ময়ের চাহনি হতভম্ব এবং বিমুঢ়! অরুকে কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে দেখল। পরপর হনহনিয়ে চলে গেল। অরু মাথাটা বের করে দেখে নিল। চোখের সামনে থেকে যেতেই শব্দ করে হাসলো। দরজা লাগিয়ে মনপ্রাণ জুড়িয়ে হেসেছে। হেসে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মেজাজ ফুরফুরে করার নতুন ঔষধ পেয়েছে। সেটি হলো তন্ময়কে জব্দ করা। কি’যে সুখ অনুভব করছে সে, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
রাতে অরু বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে। ভীষণ ভালো ঘুম হয়েছে। ঘুম থেকে উঠেছেও দ্রুত। চোখমুখে তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি ছেপে। দরজা খুলে উঁকি মারল। তন্ময়ের দরজা আটকানো। দরজার সঙ্গে কানের স্পর্শ ঘটালো। শুনতে চেষ্টা করলো, জনাব উঠেছে কি-না। টুকটাক শব্দ শুনতে পেল। উঠেছে তাহলে। অরু ফিরে এলো নিজের রুমে। ওয়াশরুম ছুটলো। বেরিয়ে সম্পুর্ন কালো রঙের চুরিদারি পরেছে। ওড়না গলায় ঝুলিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখল। চুল আঁচড়াতে গিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে নিল। তার এই রহস্যময় হাসার কারণ অজানা। কিন্তু এখন সে চুল নিয়ে দোটানায় পড়লো। চুলে বিনুনি গাঁথবে নাকি ঝুটি? ভেবেচিন্তে দুটো বিনুনি গেঁথে নিল। পরপর শুনতে পেল পাশের রুমের দরজা খোলার শব্দ। অরু তৎক্ষণাৎ হেলেদুলে বেরিয়ে পড়ল। তন্ময়ের সামনে যেতে নিয়ে, গুনগুন করে সুর তুললো। গানের বিশেষ লাইন গুলো গাইতে গাইতে অগ্রসর হচ্ছে,
‘একখান পান চাইলাম পান দিলা না,
তোমার সনে কিসের পিরিতি? ‘
স্তব্দ তন্ময়কে রেখে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাচ্ছে। তন্ময়কে বেশ সময় নিয়ে নামতে দেখা গেল। অরু তখন ছুটোছুটি করছে ডাইনিং রুম জুড়ে। নুপুরের রিনঝিন শব্দ চারপাশ হতে প্রতিধ্বনি তুলছে। মুফতি বেগম হেসে বললেন, ‘মাশাল্লাহ। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। তা এতো সকাল সকাল সেজেগুজে তৈরি হয়েছিস যে?’
অরু পা দুলিয়ে চেয়ার টেনে বসেছে দীপ্তর পাশে। হেসে জবাব দিলো, ‘মারজির বাসায় যাবো চাচী। আন্টি আমাকে ইনভাইটেশন দিয়েছে।সারাদিন সেখানে থাকতে। সন্ধ্যায় ফিরবো!’
আনোয়ার সাহেব বললেন,’সারাদিন থাকতে হবে কেন?’
‘বাবা গল্প করবো! বাড়িতে বসে থেকেই বা কি করবো?’
‘আচ্ছা ঠিকাছে।’
খেয়েদেয়ে অরু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সাইকেল বের করতে নিয়ে দেখল তন্ময়ের গাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে। গাড়িটা যেন দেখেনি এমন ভাবে সাইকেলে চড়ে বসলো। তন্ময় গাড়ির কাঁচ নামাল। বিরক্ত সুরে বলল,’উঠে আয়।’
অরু নড়ল না। একইভাবে বসে। যেন তন্ময়ের ডাক সে শোনেনি। তন্ময় শাসানো সুরে ডাকল, ‘অরু!’
‘জি, তন্ময় ভাইয়া!’
দুদিন ধরে তন্ময় বিরক্তের চরম পর্যায়ে। সে এতটাই বিরক্ত যে, যেকোনো কিছু নির্দ্ধিধায় খেয়ে ফেলবে। ঘনঘন কিছু নিশ্বাস নিয়ে পুনরায় বলল,’উঠে আয়।’
অরু সাইকেল যেখানে ছিলো সেখানে রেখে গাড়িতে উঠে বসল। সিটবেল্ট বেঁধে পা দোলালো। মনযোগ সহকারে বাইরে তাকিয়ে। বা’হাতের অনামিকা আঙুলের আংটি ঘোরাচ্ছে। গুনগুন সুরে গান গাইছে। নিস্তব্ধ গাড়ির মধ্যে সে গুনগুন করলেও স্পষ্ট শোনাচ্ছে গানটি। মধুর স্বরে গানের একেকটি লাইন এতটাই মনোমুগ্ধকর শোনালো, যে স্ট্রিংয়ে রাখা তন্ময়ের হাত নড়ে উঠলো দৃশ্যমান রূপে।
‘শুনতেহে যাব পেয়ার হো ত,
দিয়ে জ্বাল উঠতে হে
তান ম্যা মান ম্যা, ওর নানান ম্যা
দিয়ে জ্বাল উঠতে হে।’
ঠোঁট কামড়ে অরু চুপসে গেল। গান গেয়ে আরেকটু বিরক্ত করতে চাচ্ছিল তন্ময়কে, তবে ভেবেচিন্তে করলো না৷ যদি লোকটা ফেটে উঠে? রেগে আবার তাকে চড় সত্যি না মেরে বসে! পেটে কথার ফুলঝুরি দমিয়ে আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাল। মুহুর্তেই চোখে চোখ পড়লো। তন্ময় তখন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। অরুর ছোট হৃদয় খানা কেঁপে উঠলো।
_____________
মারজি সদরদরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অরুকে দেখতেই তাকে নিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। তাদের সামনে পড়েছে রোকেয়া বেগম। মারজির মা! তিনি অরুকে বেশকিছু প্রশ্ন করলেন পরিবার নিয়ে। কেমন আছে সবাই! অরু জবাব দিবে তার পূর্বে মারজি অধৈর্য ভঙ্গিতে অরুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। অরু বিছানায় বেসামাল হয়ে বসলো। মারজি প্রশ্ন করলো, ‘কোন ছেলে প্রপোজ করেছে তোকে?’
চমকে তাকাল অরু। ‘মানে?’
‘মানে টানে আবার কি? তাড়াতাড়ি বল কোন ছেলে!’
‘কিসব বকছিস!’
‘তন্ময় ভাইয়া কল দিয়ে আমাকে বলেছে, ছেলেটার পরিচয় দিতে। যেই ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে।মনে হয় ধোলাই দিবে।’
অরু কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। কাহিনি বুঝতে তার খানিক সময় লাগলো। বুঝতে পেরে, হো হো শব্দে হাসতে শুরু করেছে। হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার পাশে মারজি ও শুয়ে পড়ল। দুজনের চাহনি চলন্ত ফ্যানে রয়েছে। অরু এতদিনে ঘটে যাওয়া সম্পুর্ন ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে মারজি লাফিয়ে উঠে বসলো। বলল,
‘তুই কি বোকা? হতেই পারে তন্ময় ভাইয়া জানেনা। কলি না ফলির মা বলেছে দেখেই বিয়ে হবে? সুমনার পরিবার চাইছে তন্ময় ভাইয়ার সাথে সুমনার বিয়ে দিতে, তারমানে কি বিয়ে হচ্ছে? গাঁধি ছেমরি! তোর কি মনে হয়, এতবড় কথা সত্যি হলে কি তোর চাচ্চু তোদের সাথে শেয়ার করবে না?’
অরু বিষন্ন সুরে বলল, ‘তখন এতকিছু মাথায় আসেনি। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।’
‘ঢং! এমন আজাইরা কষ্ট ডেকে এনেছিস কেন!’
‘আমি ডেকে এনেছি?’
‘তো? তুই ডিরেক্ট ভাইয়াকে প্রশ্ন করতি! সব খোলাসা হয়ে যেতো।’
‘সাহস পাইনি।’
‘তুই সাহস পাসনি? তুই না পেলে পাবে কে! তোর ভেতর ভয় আছে বুঝি?’
‘আমি তাকে ভয় পাই।’
‘কি ভয় পাস তার নমুনা তো শুনলাম।’
‘রাগের মাথায় ভয় একটু কম পাই।’
মারজি হাসতে লাগলো। ‘রাগ কমেছে?’
‘হু।’
‘তারমানে এখন আবার ভয় পাস?’
‘হু।’
‘কতটুকু?’
‘উফ মারজি।’
অরু বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। মারজি হাসছে। হাসি থামিয়ে খুব উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
‘তন্ময় ভাই ও তোকে ভালোবাসে। আমার মন বলছে।’
অরু মুখ লুকিয়ে আনমনে হাসলো। সে তো মারজিকে সেই রাতের কথা বলেনি! সেগুলো শুনলে মারজির রিয়েকশন কেমন হতো?
চলবে~
‘Nabila Ishq’
___________________