প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল
৩৪.
তন্ময় গার্ডেনের মধ্যস্থানে দাঁড়িয়ে। হাতে কফির মগ। একটু পরপর তাতে চুমুক দিচ্ছে! দুপুরের সময় এখন। নির্জন চারিপাশ। কোলাহল নেই। প্রকৃতি শান্ত এবং প্রানবন্ত। দখিনা বাতাস বইছে। হুড়মুড়িয়ে বাতাস ছুটে এসে শরীর ছুঁয়ে দিয়ে, শান্ত হয়ে পড়ছে। আবার হুট করে অশান্ত হয়ে পুনরায় ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাগানের ফুলগুলোও এই শান্ত এবং অশান্ত দখিনা বাতাসে দুলছে। হরেকরকম ফুলের সমাহার! একত্রে তাদের দোলানো আকৃতি দেখতে অসম্ভব আকর্ষণীয়!
মোস্তফা সাহেব তন্ময়ের পাশেই গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে। ইতোমধ্যে গলা খাকড়ি দিয়েছেন কয়েকবার। পিঠে দু’হাত পেঁচিয়ে ছোট করে কেশে উঠলেন। যেমন কিছু বলতে চলেছেন। এবং বললেন ও গম্ভীর স্বরে, ‘অরুকে বলবে তুমি নিজের সাথে নিতে পারবেনা। তুমি একটা ধমক দিলে এই মেয়ে এখনো কীভাবে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে থাকতে পারে, হ্যাঁ?’
তন্ময়ের গলার স্বর অস্বাভাবিক শান্ত,’দিয়েছিলাম ত।’
অপরদিকে মোস্তফা সাহেব ছেলের শান্ত স্বরে অশান্ত হয়ে উঠছেন,’তুমি ধমক দিয়েছ আর ও এখনো যেতে চাচ্ছে? অসম্ভব! তুমি নিতে নারাজ থাকলে ও এতদূর আসার সাহসই পেতো না। তুমি এক্ষুনি যাবে আর বড়ো ধমক দিয়ে বলবে, নিবেনা সঙ্গে! ব্যস।’
তন্ময়ের চেহারার কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। বাবার মতো সেও মুখশ্রী গম্ভীর করে রেখেছে। চোখের চাহনি দূরে সীমাবদ্ধ। মগে চুমুক বসালো। খুব সাবলীল ভঙ্গিতে বলল,’আজকাল ওকে ধমক দিতে আর ইচ্ছে হয়না। বুকে লাগে!’
মোস্তফা সাহেব তাজ্জব বনে গেলেন। দু’একবার মুখ খুলেছেন কিন্তু কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না। অবশেষে সময় নিয়ে আঙুল তুলে ধমকে উঠলেন,’তু..তুমি এমন শান্ত চেহারা নিয়ে এভাবে অসভ্য কথাবার্তা কীভাবে বলতে পারো! অসভ্য ছেলে!’
‘যেতে চাচ্ছে ও নিজে। তাহলে অসভ্য আমি কীভাবে হলাম!’
‘অরু ছোটো! তুমি একজন সাবালক ছেলে হয়ে এভাবে বিহেভিয়ার কীভাবে করছ! ভবিষ্যতে তুমি ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।’
‘তোমার ভাতিজি নেচে-কুঁদে চলে আসে। ওকে গিয়ে থামাও।’
নিজের কথাগুলো শেষ করে, খুব উষ্কখুষ্ক ভঙ্গিতে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। মোস্তফা সাহেব উচ্চস্বরে ডেকে গেলেন,’তন্ময় আমার কথা শেষ হয়নি এখনো!’
কে শুনে কার কথা। তন্ময় সুড়সুড় করে চলে গেল। মোস্তফা সাহেব চেয়ারে শব্দ করে বসলেন। উচ্চস্বরে স্ত্রীকে ডেকে চলেছেন। জবেদা বেগম তাড়াহুড়ো পায়ে আসতেই বললেন, ‘এক কাপ চা দাও ত।’
মাথা ঠান্ডা করার জন্য জবেদা বেগমের হাতের গরম গরম এক কাপ চা খেতে হবে এক্ষুনি। নাহলে তিনি রাতারাতি রাগে স্ট্রোক করে বসবেন নিশ্চিত।
অরুর জেদের কাছে অসহায় আনোয়ার সাহেব। বিচলিত চেহারা নিয়ে কয়েকবার বড়ো ভাইয়ের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে বসে আছেন! কোনোপ্রকার কথা বলতে চাচ্ছেন না! আনোয়ার সাহেব আবারো এলেন। পাশের চেয়ারে বসে নরম সুরে বললেন, ‘ভাইয়া! অরু খুব করে যেতে চাচ্ছে! আমাদের তন্ময় আছে যেহেতু যাক সাথে।এখানে কোনো সমস্যা থাকার তো কথা নয়।’
মোস্তফা সাহেব বিড়বিড় করে নিজ মনে আওড়ালেন,’ওই বড়ো সমস্যা।’
আনোয়ার সাহেব শুনতে না পেয়ে শুধালেন, ‘জি ভাইয়া?’
‘কিছু না। যাইহোক আমার কিছু বলার নেই। যা ইচ্ছে করো গিয়ে!’
আনোয়ার সাহেব অসহায় মুখে বসে রইলেন। ভাইয়ের নারাজি সে বুঝতে পারছেন! তবে নারাজি ঠিক কেন বা কি নিয়ে, তা বুঝতে পারছেন না! আগে প্রায়সময় তন্ময়ের বিজনেস ট্যুরে শাবিহা বা দীপ্ত বা রুবি গিয়েছে সঙ্গে। তাহলে অরু গেলে সমস্যা কী? তাদের সাথে তন্ময়ের ম্যানেজার তো থাকছেই। দেখে রাখবে সেখানে। আনোয়ার সাহেবের মনে কিছু প্রশ্ন রয়েছে! তবে বলার সাহস পাচ্ছেন না। আর যাইহোক তিনি রাগী মোস্তফা সাহেবের সামনে আপাতত কিছুই বলতে পারবেন না।
_________
অরুর একটি ছোট ল্যাগেজ আছে। পুতুলের ল্যাগেজ। ছোটোখাটো! এটাতে দুদিনের একটা ট্যুরের জন্য সরঞ্জাম নেওয়া যাবে। ল্যাগেজটি দিয়েছিল মোস্তফা সাহেব। যখন অরু ক্লাস সেভেন। পরিক্ষায় খুব ভালো করেছিল বিদায় উপহার স্বরুপ দেওয়া! সাধারণত এই ল্যাগেজ সে বের করেনা। নষ্ট করে ফেলার ভয়ে। তবে আজ এটাই নিতে ইচ্ছে করছে। ল্যাগেজে দুই স্যুট কামিজ এবং আরও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুঁছিয়ে নিয়েছে। সবকিছু তৈরি করে ল্যাগেজ আটকে দিল। ধীরেসুস্থে নিচে নেমে এলো। মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে বসে আছেন সোফায়। আনোয়ার সাহেব পাশেই বসেছেন। তিনি জিড়িয়ে জিড়িয়ে গরম চা খাচ্ছেন। জবেদা বেগম রান্নাঘরে। অরু ছোটছোট পায়ে এগিয়ে গেল। বাপ-চাচার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো। মোস্তফা সাহেব গম্ভীর সুরে বললেন, ‘যেতে চাচ্ছ যাও! কথা ত শুনবে না আর!’
অরুর মুখশ্রী পূর্নিমার চাঁদের ন্যায়ে জ্বলজ্বল করে উঠলো । বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে চেঁচানো গলায় বলল,’থ্যাংকিউ চাচ্চু!’
যতই নারাজ হোক না কেন মোস্তফা সাহেব। আদুরে মেয়ের খুশিতে তিনিও খুশি হতে বাধ্য। মেয়ের হাস্যজ্বল চেহারা দেখে আনোয়ার সাহেবও হাসলেন। হেসে বললেন,’তৈরি হয়ে নাও। বিকেলের আগেই বেরোবে তন্ময়!’
খুশিতে অরু সোফার চারপাশে ঘুরেছে কিছুক্ষণ। তারপর ছুটে চলল উপরে। সিঁড়ির সামনে মাত্রই তন্ময় এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল করলো না অরু। ছুটে নিজের রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগালো। এখন সে তৈরি হবে! সুন্দর ভাবে সাজগোছ করবে। আশপাশ দেখার সময় কই?
অরু চুরিদার পরেছে। চুল আঁচড়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে। আয়নায় নিজেকে কয়েকবার দেখে নিয়েছে। কপালে টিপ দিতে গিয়ে দিল না। সুমিতা বেগমের ডাকে, ল্যাগেজ হাতে বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার সময় তন্ময়ের রুমে তাকাল। তন্ময় নেই!নিচে গিয়েছে হয়তো। অরুও দ্রুত পায়ে নিচে নামলো। জবেদা বেগম টিফিনবাক্স ধরিয়ে দিলেন হাতে। আনোয়ার সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। তন্ময় গাড়ির ভেতরে ড্রাইভিং সিটে বসে। ল্যাগেজ পেছনে ঢুকিয়ে, সামনে এসে উঠে বসলো অরু। সিটবেল্ট বেঁধে ছোট শ্বাস ফেলে হেসে উঠলো। ঠোঁটের দুপ্রান্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। একতরফা যুদ্ধের পর অবশেষে জয় তারই হয়েছে। এই দুর্দান্ত জয়ের দুর্দান্ত হাসি মুখশ্রী’তে লেপ্টে। তন্ময়ের দিক তাকিয়ে বলল, ‘দেখলেন ত আমি চট্রগ্রাম যাচ্ছি!’
তন্ময় জবাব দিলো না। তবে দু’একবার চোরাচোখে তাকিয়েছে অরুর দিক। ধীরেসুস্থে গাড়ি স্টার্ট করল। ছুটে চলল গাড়ি চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। অরু সামনে তাকিয়ে। বিকেলের সোনালী আলোয় আলোকিত পৃথীবির বুকে, ভেসে বেড়াতে মনোযোগী হয়ে গেল। কাঁচ নামিয়ে বাহিরে দৃষ্টি দিয়ে রাখল। কিছুক্ষণ গুনগুন করে বলল,’একটা গান ছাড়েন ত।’
সময় নিয়ে তন্ময় বা’হাতে টিপে একটা গান ছাড়ল। গান খানা অরুর পছন্দ হলো না। কপাল কুঁচকে বলল,’অন্য একটা।’
তন্ময় পুনরায় পরিবর্তন করলো। এটাও অরুর পছন্দ হলোনা। এবার পরিবর্তন করতে বলেছে আর সঙ্গে সঙ্গে ধমক খেল। ধমক শুনে অরু ক্ষীণ কষ্ট পেলো যেমন। অভিমানী মন নিয়ে ঘুরে বসল। এক ধ্যানে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। তন্ময়ের কথায় আর গ্রাহ্য করলো না। তার ডাকে সাড়া পর্যন্ত করছে না।
তন্ময় নিজ পছন্দের একটি গান প্ল্যা করেছে। অরুর গানটি পছন্দ হয়েছে তবে মুখে প্রকাশ করলো না। মুখমণ্ডল কালো করে শুনে গেল। চোরাচাহতনি’তে তাকিয়ে দেখল তন্ময়কে। তন্ময় যখন ড্রাইভ করে অরুর দেখতে ভালো লাগে। খুব আকর্ষণীয় লাগে বিষয়টা৷ এমন অনেক সাধারণ বিষয় ও তন্ময় করলে অরুর কাছে আকর্ষণীয় লাগে। যেমন এইযে ঘড়ি হাতে স্ট্রিং ঘোরাচ্ছে যে এই বিষয়টিও মারাত্মক চোখে লাগে অরুর।
________
মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। শাবিহার আড়মোড়া ঘুম ভেঙে গেল। জোরপূর্বক চোখজোড়া মেলে তাকাল। মাথা ধরে বসে রইলো ঝিম মেরে। বাবার সাথে রেগে নিজের রুমে বন্দী ছিলো সারাদিন। বলা যায় সারাদিন ঘুমিয়েছে। জানালার দিক তাকাল। অন্ধকার হয়ে এসেছে। বিছানা হাতড়ে ফোন হাতে নিল। স্ক্রিনে ভালোভাবে নজর দিতেই চোখ কপালে উঠে গেল। চল্লিশটা মিসডকল? শাবিহা হন্তদন্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। রুমের লাইট জ্বালাল। এতগুলো কল হঠাৎ করে অয়ন কেন দিয়েছে? চিন্তাভাবনা পড়ে!আপাতত তৎক্ষণাৎ কল ব্যাক করলো। অয়ন যেমন ফোন হাতে নিয়ে রেখেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ধরেছে। শাবিহা জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বেই অয়ন দ্রুততম গলায় শুধালো, ‘কই তুমি?’
‘কি হয়েছে! আমিতো বাসায়।’
‘ছাঁদে আসো।’
কল কেটে গেল। ফোনের দিক তাকিয়ে আছে শাবিহা। কি হলো? সে সেলফোন বিছানায় ফেলে ওয়াশরুম ঢুকল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। ওড়না কাঁধে জড়িয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে চলল। ছেলেটার হঠাৎ করে হলো কী? গলার স্বর এতটা বিচলিত শোনাচ্ছে কেন!
শাবিহাদের ছাঁদে বাতি লাগানো আছে। সন্ধ্যার পরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আজ এখনো জ্বালানো হয়নি। তবুও চাঁদের আলোয় আলোকিত। সবকিছু স্পষ্ট চোখের সামনে। অয়ন আজ তাদের ছাদেই দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে সিগারেট! হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। শাবিহার হাসি পেলো। এতটুকু ছেলে এমন গম্ভীরমুখ কেন করে রেখেছে! মনে হচ্ছে কাউকে অনায়াসে খেয়ে ফেলবে। শাবিহা হেসে এগোতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি এমন হয়েছে?’
অয়ন ঘুরে তাকাল। চোখের কোণ লালচে হয়ে আছে। শাবিহা কিছুটা ভড়কে গেল। অয়ন সিগারেট ফেলে এগিয়ে আসলো নিজে। প্রশ্ন করলো, ‘আমাকে কিছু বলবে?’
‘আমি বলব?’
‘তোমার কিছু বলার নেই?’
শাবিহা অপ্রস্তুত স্বরে বলল,’মানে?’
‘আমি না জানলে তুমি আদৌও বলতে?’
কথার মধ্যেই অয়ন তেড়েমেরে এগোচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে সে। কপালের মধ্যস্থান কুঁচকে গিয়েছে মারাত্মক ভাবে। শাবিহা অন্যমনস্ক ভাবে কয়েক’পা পিছিয়ে গেল। অয়নের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেনা। পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ মগজধোলাই হলো তার। মুহুর্তে চোখ বড়বড় করে ফেললো। অয়ন কী জেনে গিয়েছে, তাকে দেখতে আসার বিষয়টা? তাই হবে হয়তো। সে কিভাবে বুঝিয়ে বলবে ব্যাপারটা? দ্বিধাবোধে আক্রান্ত শাবিহা দোটানায় পড়ে গেল।
অয়ন তখন রাগে থরথর করে কাঁপছে। সামনে কিছু একটা থাকলে ঘুষি মেরে রাগের নিয়ন্ত্রণ করতো। দুঃখের বিষয় তেমন কিছুই নেই চারপাশে। সামনে শুধু তার আদুরে শাবিহা দাঁড়িয়ে। এখন অয়ন তো আর তার আদুরে শাবিহাকে ঘুষি মারতে পারবেনা। বরংচ পারবে একটা চুমু দিতে। কিন্তু সেটা দেওয়ার সময় তো এটা নয়। এখন সে রেগে আছে। চুমু দিলে রাগ কীভাবে দেখাবে? অয়ন ভিষণ বিরক্ত হচ্ছে নিজের প্রতি। সামান্য রাগ সে ঠিকঠাক ভাবে করতে পারছেনা শাবিহার সামনে। আসলে দোষটা তার নয়৷ দোষ শাবিহার। ঘুম থেকে উঠে এমন নিষ্পাপ সরল মুখশ্রী নিয়ে এসেছে যে অয়নের রাগ থাকতে চাচ্ছে না। বরং এই মুখখানা ধরে সহস্র চুমু খেতে ইচ্ছে করছে! নিজের চুলগুলো দু’হাতে কপাল থেকে সরিয়ে বলল, ‘কথা বলছ না কেন! নাকি এনগেজমেন্ট সেড়ে এসে বলতে।’
শাবিহা নিজের শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিল। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,’আমি সেই সম্পর্কে আজ বলতাম।’
‘তাই বুঝি? বলো তাহলে।’
অয়ন সমানে এগোচ্ছে সামনে। পেছাতে পেছাতে শাবিহা রীতিমতো দেয়ালে ঘেঁষে গিয়েছে। ছেলেটার সমস্যা কি? এভাবে এগোচ্ছে কেন! শাবিহা ধমক দিতে গিয়েও দিলো না। দোষ তো তার। তাই আজ সে অয়নকে সয়ে যাচ্ছে। নাহলে আকাশ ফাটিয়ে ধমকে উঠতো অয়নের উপর। এমন উষ্কখুষ্ক ব্যবহারের কোনো মানে হয়! শাবিহা নিজের গুছিয়ে রাখা কথাগুলো বলতে শুরু করলো,’এসব বিষয় আজ নতুন নয়। প্রস্তাব আসতেই থাকে। মুলত ভাইয়া আটকে রেখেছিল এতদিন। এবার বাবা বেশ সিরিয়াস। সে চাচ্ছে আমি বিয়ে করে নেই।’
‘আমাকে কেন জানাও নি?’
‘জেনে তুমি কি করতে?’
‘জানিয়ে দেখতে কি করতাম!’
শাবিহা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। অয়ন আচমকা ঝুকে এলো তার মুখের সামনে। নিচুস্তর গলায় বলল, ‘শাবিহা আমাকে ফাঁকি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছ না তো? আমি কিন্ত পাগল হয়ে যাবো!
শাবিহার বুক কেঁপে উঠলো। দুরুদুরু কাঁপছে সর্বাঙ্গ। নজর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখল। বলল,’কেউ চলে আসবে। সরো!’
অয়ন এক ইঞ্চি নড়ল না। খুব কাছ থেকে শাবিহাকে দেখছে খুটিয়ে খুটিয়ে। শাবিহাকে কতটা আবেদনময়ী লাগছে চাঁদের আলোতে, তা শুধু অয়ন দেখতে পারছে। এবং শুধু সেই দেখবে সারাজীবন। হুট করে অপ্রস্তুত শাবিহার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বসলো। পরপর দু’গাল। শাবিহা কেঁপে উঠে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো, ‘তুমি কী থামবে না মাইর খাবে?’
অয়ন গম্ভীর স্বরে হাসলো, ‘মারবে আমাকে? দেখি মারো ত! বাই দা ওয়ে, কোথায় মারবে?’
শাবিহা রেগে তাকাল। মাথাটা ঘুরতেই অয়ন শব্দ করে তার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলো। থমকে গেল শাবিহা। বড়বড় হয়ে গেল চোখ জোড়া। এটা সে মোটেও আশা করেনি৷ পরপর অয়ন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। শাবিহার মাথা নিজের বুকে নিয়ে বলল,’আমরা বিয়ে করে নেই?একবার বিয়ে হয়ে গেলে দেখবে সবাই মেনে নিবে। শাবিহা আমায় বিয়ে করবে?’
চলবে ~
‘Nabila Ishq’
______________________প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল
৩৫.
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
বন্দরনগরী নামে পরিচিত এই শহরটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত।বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও চিত্তাকর্ষক স্থানের জন্যও এ জেলা বিখ্যাত। দু হাজার সতেরো সালে শহরের জনসংখ্যা ছিল সাতাশি লক্ষের বেশি। ঢাকার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত। মানবসভ্যতায় ঘেরা এই শহরের গুনের শেষ নেই। বলে কয়ে শেষ করা মুশকিল। পাহাড়ের চুড়া কিংবা গাছের মগডাল থেকে ধরে ব্রীজের সীমান্ত সবই চোখ ধাধানো সৌন্দর্যে ঘেরা। রাস্তাঘাট উন্নয়নের সীমানায় পৌঁছে এক অপরুপ দৃশ্য সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রাম এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সখ অরুর ক্লাস সেভেন থেকে। অনেকবারই আসতে চেয়েছে তবে তন্ময় মুখের উপর না করে দিয়েছে! যেহেতু তন্ময় না বলেছে তারমানে না! চাচ্চু, বড়ো মা কেউ তাকে আর রাজি করাতে পারেনি, অরুকে নিতে। এভাবে পরিবারের সঙ্গে যে ফ্যামিলি ট্যুরে যাবে, সেটাও সম্ভব হয়ে উঠেনি। সকলেই ব্যস্ত, ব্যস্ত এবং সর্বদাই ব্যস্ত। ছোটোখাটো ফ্যামিলি পিকনিক দু’বছরে একবার হয়ে থাকে। তাও অরু, দীপ্তর জোড়াজুড়িতে। সেখানে ফ্যামিলি ট্যুরে যাবার স্বপ্ন দেখাটা একপ্রকার বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো।
তিন ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট গাড়ি চলেছে একটানে। তন্ময়ের সঙ্গে এতক্ষণ একা থাকা এই প্রথম অরুর। এবং সে হাড়েহাড়ে পস্তাচ্ছে। একটা মানুষ এতটা গম্ভীর কীভাবে হতে পারে? নিজ থেকে একটি কথাও বলছে না৷ অরু কথা বললে জবাব দিচ্ছে দু’এক শব্দে। চুপচাপ থাকার মেয়ে তো অরু নয়। সে জোরপূর্বক আজাইরা প্যাঁচাল পেড়ে যাচ্ছে। একসময় তন্ময় ধমকের সুরে চুপ থাকতে বলেছে। রেগে অরু এতক্ষণ যাবত চুপ রইলো। কিন্তু এখন আর পারছেনা। পেট গুলিয়ে আসছে কথার প্যাঁচ লেগে। ইনিয়েবিনিয়ে ডাকল, ‘তন্ময় ভাই! এইযে.. ‘
তন্ময় মাথা না ঘুরিয়ে গভীর স্বরে বলল,’হু!’
‘আর কতক্ষণ?’
‘দু’এক ঘন্টা।’
‘এখনো দু ঘন্টা। আমার কোমর ব্যথা করছে। একটু থামাবেন রেস্ট নেবার জন্য?’
‘না।’
‘একটু প্লিজ!’
তন্ময়ের জবাব এলো না। অরু হাত ঘড়িতে নজর দিল আটটা বেজে ত্রিশ। ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। অগোচরে পেট চেপে ধরলো। ক্ষুধায় পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে মনে হচ্ছে! লাঞ্চবক্স কি খুলবে? পাষাণ তন্ময় একটু জিজ্ঞেস ও করছে না। খিদে পেয়েছে নাকি, বোরিং লাগছে নাকি, খারাপ লাগছে নাকি! এতটা জার্নি একদফায় করিয়ে নিচ্ছে। মায়াদয়া কিছুই নেই লোকটাকে মধ্যে। হাত ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে এসেছে অরু। এগুলো তাকেই দিয়েছে শাবিহা। সেগুলোর মধ্যে যেটা হাতে উঠেছে সেটাই বের করল। চিপস। চিকন বোতলের মতো বয়ামের ঢাকনা খুলল৷ চিপস খসখস আওয়াজে খেতে লাগলো। আঁড়চোখে তন্ময়কে দেখল। মায়াবতী অরুর মন বিশাল বড়ো। সে একা খেতে দ্বিধাবোধ করছে। তাই বয়াম এগিয়ে ধরলো। তন্ময় তাকাল অবদি না। অন্ধকার মুখে নিজের চিপস নিজেই খেল। একপর্যায়ে অরুর আবারো মায়া জন্মাল। সে দু আঙুলে এটি চিপস নিয়ে তন্ময়ের মুখের সামনে ধরলো। একটু লজ্জা অবশ্য লাগছে। তাতে কী? এভাবেও তন্ময় কখনোই খাবেনা এভাবে। অরু তো তাকে বিরক্ত করার জন্যই এসব করছে। অরুকে আশ্চর্যের শেষে পৌঁছে তন্ময় চিপস খেয়ে নিল। নেবার সময় আঙুলে শক্ত একটা কামড় ও বসিয়েছে। স্তব্দ অরু আঙুল বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো। চিনিচিন ব্যথায় তার রুহ চলে যাবার যোগাড়। অরুর কান্নার শব্দ যেমন তন্ময় শুনছে না। সে মুখের চিপসে দু’একটা কামড় মেরে গিলে ফেলেছে।
দেখা গেল তন্ময় গাড়ি মাঝপথে থামাতে রাজি হয়নি। আরও দু’ঘন্টা টানা জার্নি করে চট্টগ্রাম বর্ডার ক্রোস করেছে। ইতোমধ্যে তন্ময়ের ম্যানেজার কল করে জানিয়েছে সে চট্টগ্রাম পৌঁছে গিয়েছে। গতকাল হোটেল বুক করে রেখেছিল সে। গাড়ি থেমেছে লালবাজার রেডিসন ব্লু’তে। বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল। যার অবস্থান লালখান বাজার । এই রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ নামেও পরিচিত। এটি চিটাগং বন্দর শহরের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল। এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় পাঁচ তারকা হোটেল। সর্বমোট ৪.১৮ একর স্থানে এই হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ২১০০ বর্গ মিটারের একটি বলরুম রয়েছে যা অফিসিয়াল সভাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এতে একটি মেজবান হল রয়েছে। এতে ২৪১ টি কক্ষের পাশাপাশি ১৩টি জুনিয়র স্যুট ও ৪টি এক্সক্লুসিভ স্যুট রয়েছে। অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে,
সুইমিংপুল
ড্রিনক বার
রেস্তোরা’র সুবিধা বিদ্যমান। জনপ্রিয় এই হোটেল নামের দিকে বেশ বিখ্যাত।
গাড়ি পার্কিং করতেই ম্যানেজার সুমনকে দেখা গেল। তিনি ব্যস্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। গাড়ির নাম্বার চিনেই ছুটে এলেন৷ তার পাশে একজন গার্ড। ইশারা করলেন ল্যাগেজ নিতে। গাড়ির ব্যাক খুলে ল্যাগেজ বের করে নিয়ে দাঁড়িয়েছে। তন্ময় সময় নিয়ে বেরিয়েছে। পরপর অরুও বেরোলো। তার প্রিয় ল্যাগেজ গার্ডের হাতে দেখে ছুটে গেল। ছোট পুতুলের ল্যাগেজ টেনে নিজের হাতে রাখল। বাকি দুটো ল্যাগেজ নিয়ে দাঁড়ানো গম্ভীর গার্ড নড়েচড়ে সুমনের দিক তাকাল। সুমন মুচকি হেসে স্যুটের চাবি দেখাল। সেখানে ছোট অক্ষরে স্যুটের নাম্বার লেখা। সে অনুযায়ী গার্ড ল্যাগেজ হাতে চলে গেল। ম্যানেজার সুমন চাবি তন্ময়কে দিয়ে বলল,’স্যার মিটিং কাল সন্ধ্যা সাতটায় স্যাট করেছি। ইজ দ্যাট ওকে স্যার?’
‘গুড।’
‘তাহলে স্যার আমি কি চলে যাবো? নাকি খাওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিব!’
‘সমস্যা নেই। আপনি যান আই’ল হ্যান্ডেল।’
‘তাহলে আসি। আসি অরু মামনী!’
অরু হেসে মাথা দোলাল। খিদে’তে যে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে, তা সে কাউকে বুঝতে দিবেনা। অরু তন্ময়ের পেছনে পেছনে যাবে ভেবে রেখেছে। কিন্তু তাকে অবাক করে সে, সেদিনের মতো পুনরায় পিঠের পেছন হাত নিয়ে তার কাঁধ ধরেছে। এবং নিজের সাথে সমান তালে নিয়ে চলেছে। এ’তে তাদের পাশাপাশি হয়ে ঘনিষ্ঠ হতে হলো। অরু স্পষ্ট তন্ময়ের পারফিউমের ঘ্রাণ শুঁকতে পারছে। মাতাল করা ঘ্রাণ। পিঠে অনুভব করছে তন্ময়ের দানবীয় হাতের স্পর্শ। ছোট ল্যাগেজ টেনে অরু তন্ময়ের বড়ো পায়ের ধাপে পা মেলাতে পারছেনা। এতো দ্রুত হাটে কেন! এদিকে বিরক্ত হয়ে তন্ময় অরুর হাত থেকে টেনে ল্যাগেজ নিজে নিল। অরু সঙ্গে সঙ্গে মুখ অন্ধকার করে রাখল। এমন মুড দেখানোর কি আছে!
লিফট ব্যবহার করে তারা নিজেদের স্যুটে চলে এলো। গার্ড দাঁড়িয়ে ল্যাগেজ নিয়ে। তন্ময় চাবি দিয়ে স্যুট খুলে দিতেই ল্যাগেজ ভেতরে নেওয়া হলো। পকেট থেকে কিছু টাকা এগিয়ে দিল গার্ডকে। গার্ড টাকা নিয়ে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। পুনরায় ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলো,’স্যার খাবারের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করব? ম্যামকে দেখে মনে হচ্ছে তিনিই বেশ ক্ষুদার্ত।’
অরু দ্রুত পেট থেকে হাত সরাল৷ হতচ্ছাড়া লোক! একদিক নজর যায় কেন! অরু পেট ধরলেই বুঝে নিবে ক্ষুদা পেয়েছে? আশ্চর্য! তন্ময় কিছুক্ষণ অরুকে দেখে নিল। হতাশ গলায় বলল,’কল সার্ভিস আছে না? কল করে অর্ডার করে নিব।’
‘জি স্যার।’
গার্ড যেতেই দরজা লাগাল তন্ময়। অরু ঘুরেফিরে স্যুটের ভেতর দেখছে। বড়ো একটা ফ্ল্যাট বলা যায়। পরিপাটি করে রাখা। সবই রয়েছে চারিপাশে। রান্নাঘর দেওয়া। তারমানে নিজ থেকে রান্নাবান্না করার সুযোগ সুবিধা রয়েছে৷ দুটো মাস্টার বেডরুম আছে। ড্রয়িংরুম রয়েছে। টিভি স্যাট করা প্রত্যেকটা বেডরুমে। সাথে অ্যাটাচড বাথরুম তো আছেই। অরু আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাল। তন্ময় হাত ঘড়ি খুলছে। যতটুকু তার মনে আছে! বড়ো চাচ্চু পইপই করে বলেছে দুটো রুম নিতে। এসে দেখছে স্যুট। বড়ো স্যুট। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, অন্যদিকে খারাপ। ভালো এরজন্য যে অরু একা-একা ভীষন ভয় পায়৷ খারাপ কারণ তার এখনই কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে! মগজে পরিষ্কার গলায় জানান দিচ্ছে, তন্ময় আর সে একই ফ্ল্যাটে আছে। এবং সম্পুর্ন একা। কেউ নেই তাদের মধ্যে। বিষয়টি ভাবতেই তার রক্ত চলাচল বন্ধ হবার যোগাড়। সেদিকে যেমন তন্ময়ের ধ্যান নেই। সে নিজের ল্যাগেজ টেনে একটা বেডরুমে ঢুকে গেল। অরু ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে। পাশের বেডরুমে সে চলে যাবে নাকি? অরু নিজের ছোট ল্যাগেজ টেনে পাশের রুমে ঢুকলো। দরজা লাগিয়ে বড়ো শ্বাস নিল। জামাকাপড় খুলে ওয়াশরুম ছুটলো। শরীর ক্লান্ত৷ একটা গোসল নিলে ভালো লাগবে। গোসল শেষ করে সেলফোন হাতে নিল। পরিবারের অনেকে কল করেছে। অথচ সে দেখেনি। সেলফোন সাইলেন্ট হলো কীভাবে? নাম্বার চেক করতে গিয়ে একটি আননোন নাম্বারে কল পেল৷ ধরলো না। ফোন পুনরায় সাইলেন্ট করে রুমের দরজা খুলে মাথা বের করলো। তন্ময় ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে। উদোম শরীর। শুধু একটা প্যান্ট লুজ করে পরে আছে। গলায় তাওয়াল ঝুলানো। একহাতে চুল মুছতে ব্যস্ত। দ্বিতীয় হাতে কথা বলছে। কথা শুনে বোঝা গেল রাতের খাবার অর্ডার করছে। অরু ফটফট চোখে চেয়ে রইলো। তন্ময়ের পিঠ বেয়ে জল গড়িয়ে প্যান্ট ভেদে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। ফর্সা, পেশিবহুল পিঠ। চওড়া এবং দীর্ঘ কাঁধ। অরু চোখ ফেরাতে পারছেনা। তন্ময় ঘুরতেই চোখাচোখি হলো। অরুর বুক কেঁপে উঠলো। দ্রুত দরজা লাগিয়ে ফেললো। এভাবে কাঁপছে কেন বুক? হার্টএট্যাক করে বসবে নাকি?
অরু ভয়ে আর বেরোলো না। ঘন্টা খানেক বাদ তন্ময়ের আওয়াজ শোনা গেল। অরুকে ডাকছে। পেট চেপে ধরে থাকা অরু দ্রুত বেরোলো। নিশ্চয়ই খাবার এসেছে? ডাইনিং টেবিলে খাবার রাখা। তন্ময় দাঁড়িয়ে। ফোনে কথা বলছে। কথার ভঙ্গিমায় বুঝতে পারলো, তন্ময় বড়ো চাচ্চুর সঙ্গে কথা বলছে! গম্ভীর তার স্বর। চুপচাপ গিয়ে চেয়ার টেনে বসল অরু। প্লেট টেনে দেখল তার পছন্দের খাবার। ঘ্রাণে পেট ফুলে উঠল তৎক্ষণাৎ। কিছুটা খাবার চামিচে নিয়ে মুখে দিল৷ তখন এক অদ্ভুত বাক্য সে তন্ময়ের মুখ থেকে শুনল, ‘আমি হানিমুনে আসিনি। কাজে এসেছি। এভাবে প্রেসারাইজড করলে ওকে ছুঁড়ে ঢাকা পাঠিয়ে দিব।’
অরু বিষম খেল। গলায় খাবার নিয়ে কেশে উঠল। এক গ্লাস জল ঢকঢক করে খেয়ে নিল। তন্ময় তখন কল কেটে অপর পাশের চেয়ার টেনে বসেছে। চুপচাপ নিজের মতো খেতে শুরু করেছে। অরু আঁড়চোখে কয়েকবার তাকাল। জিজ্ঞেস কি করবে কার সাথে কথা বলছিল? কি নিয়ে বলছিল! খাওয়ার একফাঁকে ইনিয়েবিনিয়ে শুধালো, ‘আপনি সকালে কই যাবেন?’
‘জবাবদিহি করতে হবে তোর কাছে!’
‘তা নয়। মানে… ‘
অরু হাসফাস করল কিছুক্ষণ। সময় নিয়ে বলল,’এমনেই।’
নিস্তব্ধতা চারপাশে। অরু একটুপর আবারো কথা তুলল,’এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তাই না?’
তন্ময়ের জবাব নেই। অরু মুখ বাঁকাল। লোকটা কী পাথর! নাকি গরু। সে কি বুঝতে পারছেনা অরু কি বলতে চাইছে? এতো বুদ্ধিমান লোক এতটুকু ইঙ্গিত বুঝতে পারছেনা। অদ্ভুত!
পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি বলে কথা আছে। কথাটি যে সত্য আজ তা আবারো প্রমানিত। পেট ভরে খেয়ে অরু আরাম করে চেয়ারে বসে থাকল। তন্ময় ইতোমধ্যে নিজের রুমে চলে গেছে। তন্ময়ের রুম কেমন? দেখার বেশ কৌতুহল জাগল অরুর মনে। সে গুটিগুটি পায়ের দরজার সামনে এলো। দরজা আধখোলা। উঁকি দিল। তন্ময় শার্ট খুলছে। আচমকা অরু শুনতে পেল তন্ময়ের গলা,’কি এখানে ঘুমাবি?’
আতঙ্কে অরু ছুটে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। ভয়ে বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। আরেকটু হলে তো সে মরেই যেতো। মাথা না ঘুরিয়ে কীভাবে দেখল দরজায় অরু? মানুষটা কী চার চোখের অধিকারী? মাথার পেছনে লুকানো চোখ আছে নাকি?
চলবে ~
‘Nabila Ishq’
__________________