প্রেয়সী
২২|
ঘন্টাখানেক হয়েছে তন্ময় ভাই রুমে পৌঁছে দিয়েছেন। অথচ আমার ঘুম আসছেনা। অস্থির লাগছে। বারবার এপাশ-ওপাশ করছি।
গাড়িতে ঘুমিয়েছি। আবার রুমে পৌঁছেও ঘুমিয়েছি। তাই হয়তো ঘুম আসছে না। এমন অস্থিরতা দেখে আপু বলল,
‘ তন্ময়’কে ডাকবো? ঘুরেফিরে আসবি আশপাশ। ‘
‘ না না। ঘুমানো প্রয়োজন তার। একটুও ঘুমাতে পারেননি। ‘
আপুও মানলেন। তিনি তো সেই বিকেল থেকে ড্রাইভ করেছেন। ক্লান্ত আছেন হয়তো। ঘুম দরকার।
উঠে থাই গ্লাসটা সরালাম। ঠান্ডা হাওয়া। আসলেই পাহাড়ি অঞ্চলে শীত বা গরম বোঝা যায়না। শুধু বাতাসের অস্থির হাওয়া শরীরের পশম দাঁড় করিয়ে দেয়। আকুপাকু মন আশেপাশে চোখ বোলাতে ব্যস্ত। সময় যেন থমকে।
নির্ঘুম রাত কাটাব? নির্ঘুম রাত কাটালে কাল কীভাবে ঘুরবো?
না ঘুরতে পারলে, একদিন পুরো জলে চলে যাবে। উঁহু ঘুমাতে’ই হবে। আবারও বিছানায় চললাম। রুবি আপু টাইপিং করছে।
প্রশ্ন করলাম,
‘ হাত ব্যথা করছে না? ‘
‘ দেখছিস না, এ আমাকে ঘুমাতেই দিচ্ছেনা। রিপ্লাই না দিলে কল দিচ্ছে। কল রিসিভ না করলে, দেখবি চলে আসবে। ‘
‘ হাও, রোমান্টিক। ‘
‘ রোমান্টিক না ছাই। ‘
‘ পেয়ে পাত্তা দিচ্ছ না। ‘
রুবি আপু শক্ত চোখে তাকাল। গাল টেনে বলল,
‘ তুই কি পেয়েছিস, তার আইডিয়া এখনও তোর নেই। বোকা
মেয়ে। ‘
হ্যাঁ, তা সত্য। কিন্তু শিকার করবো না। হু। তিনি বা কোথায় শিকার করছেন কিছু। এইযে, আজও আমাকে ঠিকঠাক তোর মনের কথা জানাননি। একটু সুন্দর ভাবে মনের কথা জানালে, আমিও সাহস পেতাম আমার মনের কথা জানানোর। উফ।
রুবি আপু গভীর ঘুমে তলিয়ে। এদিকে, আমি এখনও সজাগ।
ঘুম আসছে না। ভোর চারটা পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করে, এবার উঠলাম। রুবি আপুর ফোন হাতে নিলাম। তন্ময় ভাই কী ঘুমিয়ে পরেছেন? নিশ্চয়ই জেগে নেই? একটা মেসেজ দিয়ে কী দেখব? যদি জেগে থাকে। নিজের ফোন দিয়ে মেসেজ করে, রিস্ক নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। রুবি আপুর ফোনের সাহায্যে তাকে মেসেজ
দিলাম,
‘ Tonmoy, ghumiyechen? ‘
টেক্সট সেন্ড করে জিহ্বা কাটলাম। দ্রুত কেটে ফেললাম। আল্লাহ। তুই করে না বলা উচিৎ ছিল। এটা কোনো কথা? তিনি তো আর ফোন নিয়ে বসে নেই। নিশ্চয়ই এখনও দেখেননি। আবার দিব ভাবছিলাম, তখনই মেসেজ আসে।
‘ Where is your cell phone? ‘
বুক ধুকপুক করছে। জেগে এখনও? কী বলতাম।
‘ charge nei. apni ghuman ni?.
তার জবাব সাথে সাথে আসলো,
‘ Come out. ‘
কাম আউট? বেরোবো? তার মানে তিনি আমাকে বাহিরে নিবেন? মনের স্রোত ঠেলে, হাসি মুখে দ্রুত তৈরি হলাম। ধীরে দরজা খুলতেই তাকে দেখলাম। তিনি দাঁড়িয়ে। হাতে ফোন। মাথায় ক্যাপ।
জ্যাকেট পরেছেন আজ। উম, মেয়ে পটানোর ধান্দা শুধু। ভ্রু তুলে,
ইশারা করলেন হাঁটতে। দরজা লক করে হাটা ধরলাম। স্লিপার পরেছি। হাইট ডিফারেন্স আমাকে বিপাকে ফেলে দিল। হিলস পড়া উচিৎ ছিল। কিন্তু, এমন যায়গায় হিলস পড়া’টা সম্পুর্ন বেমানান।
তিনি এতো লম্বা কেন? বারবার আমার চাহনি দেখে তিনি প্রশ্ন করলেন,
‘ হয়েছে কী? ‘
‘ কিছু না। ‘
তিনি মিষ্টি হাসলেন। হুইস্কি কন্ঠে জানালেন,
‘ তোর হাইট ঠিকাছে। ‘
লজ্জা পেলাম। বুঝে ফেলল। ইন্টেলিজেন্ট ছেলেগুলো আসলেই ডেঞ্জারাস। তার বড়বড় পায়ের স্টেপ ম্যাচ করা প্রতিযোগিতায় লাগলাম। সর্বদা আমি পিছু পরে যাই।
হোটেলের বিল্ডিং ফেলে অনেক দূর এসেছি। ভোরের আলোয় পৃথিবী উজ্জ্বলিত হতে শুরু করেছে। সামনে বড় বর্ডার। এটার মানে কী? প্রশ্ন করলাম তাকে,
‘ এখানে বর্ডার? ‘
‘ সুরক্ষিত পথের আইকন। ‘
দূরবর্তী পাহাড়ের চড় দেখালাম,
‘ ওখানে কোন দিক দিয়ে যাবো? ‘
‘ ডানপাশের হাইওয়ে দিয়ে। ‘
‘ ওখানে আরও মানুষ থাকবে? ‘
‘ অবশ্যই। ‘
‘ কখন যাবো? ‘
‘ ব্রেকফাস্ট করে। ‘
‘ তাড়াতাড়ি চলে আসতে হবে? ‘
তিনি থামলেন। আমার দিক তাকিয়ে বললেন,
‘ তুই চাইলে, সেখানে বাড়ি করে তুই-আমি বসবাস করতে পারি। করবি? ‘
দ্রুত সামনে হাটা ধরলাম। গাল গরম হচ্ছে। আঁড়চোখে তাকে দেখে নিলাম। তিনি পেছনে দাঁড়িয়ে,
‘ ইশ, পাহাড়ে বাড়ি হয় বুঝি। ‘
শব্দ করে হাসছেন,
‘ তুই চাইলে সব হবে। ‘
তার মুখে ফিল্মি কথাবার্তা এতটাও খারাপ লাগেনা।
আশেপাশে আরও কিছু মানুষজন দেখা যাচ্ছে। প্রান্তে দাঁড়িয়ে। দূরের পাহাড় গুলোর দিক তাকিয়ে। নিশ্চয়ই কাপল এরা। সুন্দর ভাবে একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছে। তন্ময় ভাই অপর সাইডে যাচ্ছেন। আমিও দৌঁড় লাগালাম। এপাশের বর্ডারের সামনে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে, শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। নিচে কোনো শেষ প্রান্তর দেখা যাচ্ছে না। বরং শীতল স্রোতের মতো সাদা কুয়াশাময় আভা ভেসে। ভয়ংকর অনুভূতি হলেও দেখতে ভালো লাগে। পাশে তার দিক তাকালাম,
‘ আমরা এতো উঁচু’তে? ‘
‘ হু। ‘
‘ একদমই বোঝা যায়নি যখন হাইওয়ে’র রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম। ‘
‘ হু। ‘
‘ হু, হু। কথা জানেন না? ‘
তিনি আমার পেছনে দাঁড়ানো। শক্ত দু’হাতে কোমর জড়িয়ে ধরলেন। হঠাৎ স্পর্শে আমি আশেপাশে তাকাতে ব্যস্ত। তার থুতনি আমার ঘাড়ে রাখলেন। ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
‘ কি বলব? ‘
‘ কিছু বলতে হবেনা। আ..আপনি সরুন। ‘
‘ উঁহু। ‘
আরও কিছুটা শক্তি ব্যবহার করলেন। বরফের মতো জমে আমি।
গলাটা শুকিয়ে আসছে। তিনি তার হাত দিয়ে পাহাড়ের নিচে দেখালেন,
‘ ওই ছোট রাস্তা বেয়ে, আমাদের উপরে চড়তে হবে। ‘
তার স্পর্শের থেকে ধ্যান সরে এলো। অবাক স্বরে বললাম,
‘ ওটা তো অনেক ছোট রাস্তা। ‘
‘ অতটা ছোট না। আবার বড় ও বলা যায়না। ‘
‘ আপনি গিয়েছিলেন? ‘
‘ হ্যাঁ। কলেজ লাইফে। ‘
‘ কাকে নিয়ে এসেছিলেন? ‘
‘ ফ্রেন্ডস। ‘
পরপর দুষ্টু কন্ঠে আবারও বললেন,
‘ কোনো মেয়ে ছিলো না কিন্তু। ‘
লজ্জা পেলাম। আবার হাসিও পাচ্ছে। তিনি কী ভাবছেন আমি জেলাস? উঁহু। অবশ্যই না।
হোটেলে ফিরে এলাম। আমাকে রুমে দিয়ে, তিনি চলে যাচ্ছেন। দরজায় দাঁড়িয়ে তার যাওয়া দেখছি। আজ তাকে আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। মন রক্তান্ত হয়ে আছে। অদ্ভুত ভাললাগার যন্ত্রণা।
আমি কীভাবে বোঝাব তাকে। তিনি এমন আচরণ করলে, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তাও চাই তিনি সদা এমন থাকুক। এভাবে তাকে চাই। শুধু আমার জন্য। তন্ময় ভাই হঠাৎ পেছনে তাকালেন। ডান ভ্রু উঁচু করলেন,
‘ যাচ্ছিস না যে? ‘
‘ য..যাচ্ছি। ‘
দ্রুত দরজা লাগালাম। পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।
রুবি আপু তৈরি হচ্ছে। দীপ্তও রুমে। আমাকে দেখেই বলল,
‘ বড় আব্বু কল দিয়েছিল। তোমাকে, আর তন্ময় ভাইয়াকে খুঁজেছিল। ‘
‘ ওহ। ‘
‘ আমি কল দিব আবার? ‘
‘ এখন? না পড়ে দে। ফ্রেস হয়ে নি। ‘
রুবি আপু বললেন,
‘ খাবার অলরেডি চলে এসেছে। দ্রুত আয়। খিদে পেয়েছে। ,
আমারও খিদে পেয়েছে। খেয়েই তো বেরোবো। উফ, আম এক্সাইটেড ।
চলবে
®নাবিলা ইষ্ক