প্রেয়সী পর্ব ২০+২১

প্রেয়সী

২০|
আমার জন্য বাড়িতে অঘোষিত নিয়ম ছিলো কোনো পিকনিক, ফ্রেন্ডস ট্রিপ অ্যাটেন্ড করা যাবেনা। অবশ্য ওটা বাড়ির নিয়ম কোনো কালে’ই ছিলো না। ওটা ছিল তন্ময় সাহেবের নিয়ম।
তার আবার আমাকে নিয়ে ছিলো ময়লা চিন্তাভাবনা। যেটার বিন্দুমাত্র অনুমান অসহায় আমার ছিল না। যাইহোক, আজকের ট্রিপ আমি একদমই এঞ্জয় করতে পারবো না। কারণ, সোজা।
সাথে থাকবে তন্ময় ভাই। দ্য গ্রেট তন্ময় শয়তান।
এ থাকলে সাথে,
এঞ্জয় যাবে ভেসে।
আর যেহেতু ইব্রাহিম ভাই যাচ্ছে। তাহলে রুবি আপুকে তো আর পাওয়া যাবেনা। আমাকে তন্ময় ভাইয়ের সাথে’ই থাকতে হবে।
আর তিনি আমায় নড়তে দিবে নাকি সন্দেহ। কত ধমক-থাপ্পড় কপালে আছে, তা পরে বেরিয়ে আসবে। স্রোতের মতো।
দীপ্ত বিছানায় বসে। গেইম খেলছে। ছেলেটা মারাত্মক খেলতে পারে। আমিতো শুরু করতেই শেষ।
অবশেষে আমার প্যাকিং কমপ্লিট। দীপ্ত’র আমার জিনিসপত্র একসাথে প্যাক করেছি৷
ও আঁড়চোখে তাকালো,
‘ এবারেও হাঈস্কোর। ‘
‘ বাহ। ‘
‘ দেখতে হবেনা কে খেলছে। ‘
‘ কে খেলছে? ‘
‘ শাহজাহান দীপ্ত। ‘
‘ মা’গো। ‘
কথা দেখেছ ছেলের? বয়স হিসেবে বেশি বুঝে এবং জানে। পাকা ধান একদম।
রুবি আপু পরপরই তার ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে হাজির। সানগ্লাস মাথায় স্যাট করে বলল,
‘ চল। তন্ময় দাঁড়িয়ে। ‘
‘ দাঁড়াতে দাও। ‘
‘ এহ। দাঁড়াতে দাও। পরে দেখা যাবে, ও আর যাবেই না নিয়ে। ‘
‘ তাতে কী? ইব্রাহিম ভাইয়ের সাথে যাবা। ‘
রুবি আপু থমকে গেলেন। নিশ্চয়ই কালকের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করছেন। হি হি হি।
রুবি আপু আঁড়চোখে তাকাল,
‘ পাজি। দ্রুত কর। ‘
হেসে ফেললাম শব্দ করে। এখন লজ্জা পাচ্ছে। আর আমার সাথে কীসব আজেবাজে কথা বলেন, তখন লজ্জা করে না।

যাবার সময়, বড় মা খাবার প্যাক করে দিবেন বলে, নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছেন আমাদের৷ তার উৎসুক দৃষ্টি তন্ময় ভাইয়ের উপর।
‘ ছেলেটা আমার বাহিরের খাবার একদম খেতে পারেনা। গ্যাস্টিক উঠে যায়। তোরা নিশ্চয়ই এই দু’দিন রেস্টুরেন্টের খাবার খাবি। ‘
ইব্রাহিম ভাই জানালেন,
‘ টেনশন নিয়েন না । উম, তন্ময় ক্যান হ্যান্ডেল। তাই না তন্ময়? ‘
তন্ময় ভাই বড়দের মতো বড় মা’র মাথায় হাত বোলালেন। আদূরে ভাবে বড়’মার মাথা চেপে বললেন,
‘ সমস্যা হবেনা। আসছি। ‘
বড় মা গলে গেলেন। এবং আমাদের নানান জাতীয় স্ন্যাকস প্যাক করে দিলেন। তন্ময় ভাইয়ের জন্য ফ্ল্যাক্সে চা দিতেও ভুললেন না।

ইব্রাহিম ভাইও নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছেন। যেহেতু মাত্র পাঁচজন ট্রিপে যাচ্ছি, দুটো গাড়ি নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তো সকলে যাব তন্ময় ভাইয়ের গাড়ি করে। তারা পুরুষ দুজন সামনে বসেছে।
আর আমরা তিনজন পেছনে। আমি জানালার সাইডে। মাঝে দীপ্ত আর অপর সাইডে রুবি আপু। দীপ্তর নজর গেমসের দিক চলে গেলো। রুবি আপু আঁড়চোখে ইব্রাহিম ভাই’কে দেখতে ব্যস্ত। আর আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে। সুন্দর দৃষ্য। গাড়ি করে বেরোলে নজর সদা বাহিরে থাকে আমার। দ্রুত গতিতে অতিক্রম করা পথযাত্রা দেখতে বেশ লাগে। একদম নেশায় তলিয়ে যাওয়ার মতো। হঠাৎ তন্ময় ভাই ধমকালেন,
‘ হাত ভেতরে নে। ‘
এইতো শুরু। আমায় এঞ্জয় করতে দিবেনা সেটার কসম কেটে এসেছেন । জানালা’ই বন্ধ করে দিলাম। যা দেখব না বাহিরে। তাতে কী।
তন্ময় ভাই কর্নারের আয়না দিয়ে আমাকে চোখা রাঙালেন,
‘ হাত বাহিরে দিতে না করেছি। উইন্ডো বন্ধ করতে বলিনি।
খোল। ‘
‘ আমার পাশের জানালা। আমি খুলবা নাকি খুলবো না, সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। ‘
‘ গাড়ি আমার। ‘
কত্তবড় বেশরম।
‘ তাহলে আমি যাব না। গাড়ি থামান। আমি বাড়ি যাব। ‘
রুবি আপু হাসছেন,
‘ কী সাংঘাতিক। এদের নিয়ে ট্রিপে গিয়েও শান্তি নেই। মাবুদ। ‘
তন্ময় ভাই মাঝপথে গাড়ি থামালেন। এবং ঠিকঠাক আমার পাশে এসে জানালা খুলে আবার গাড়ি স্টার্ট করে দিলেন। রাগবো না হাসবো ভুলে গেলাম। এমন শয়তান আমি আমার এতবছরের জীবনে দুটো দেখিনি। আমিও কম না। এই জানালা’র দিক আর তাকাব না। রুবি আপুকে বললাম,
‘ এ’পাশে বস তো। ‘
তন্ময় ভাই না করে দিলেন,
‘ রুবি উঠবি না। ‘
দজ্জাল একটা।
‘ উঠবে না মানে? আপনার কথায়? ‘
তার জবাব নেই। রাগে আমি দীপ্তর দিক ফিরলাম। তখনই দীপ্ত কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা মেরে দিল,
‘ তন্ময় ভাই। অরু আপু তোমাকে আনরোম্যাক্টিক গাধা বলেছে, রুবে আপুর রুমে বসে। ‘
হায়রে আল্লাহ। এটা কোন জালিয়াতিদের সাথে আমি। জোরসে চেঁচালাম,
‘ না। মিথ্যে। এমন ক..কথা আমি কখনও বলিনি। গাধা আমি বলিনি। দীপ্তর বাচ্চা। ‘
ইব্রাহিম ভাই হাসছেন,
‘ তার মানে আনরোম্যান্টিক বলেছ? ‘
আমার আওয়াজ বেরে গেলো,
‘ না সেটাও বলিনি। সত্যি। ‘
পরপর দীপ্তর গলা চেপে ধরলাম। এই জাহিল পুচকে। এটা সব নষ্টের গোড়া। এবার আমার কান্না পাচ্ছে। জানতাম, এই ট্রিপে শুধু অত্যাচার হতে এসেছি।
ইব্রাহিম ভাই শান্ত গলায় বললেন,
‘ অরু, তোমাকে এক কাহিনি বলি। শোন। আমি আর তন্ময় কিন্তু একই স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটি থেকে। তো তোমাকে ভার্সিটি লাইফের এক ইন্সিডেন্ট বলি। আমাদের ব্যাচের ছেলেমেয়ে একেকটা হাঈসোসাইটি থেকে ছিল। সেখানে একটা মেয়ে ছিলো। নাম ঠিক মনে নেই। সেই মেয়ের বাবা মন্ত্রী ছিলেন। মেয়ের পাওয়ারে ভার্সিটি কাঁপে। ওই মেয়ে তন্ময়’কে দেখে ফিদা। ফ্রেন্ড একটা’কে পাঠিয়েছে প্রস্তাব নিয়ে। তন্ময়’কে তো চিনো। একঘেয়ে। ও তো জবাবই দেয়নি। এটা নিয়ে পুরো ভার্সিটি’তে সমালোচনা। নিউজ ছড়িয়ে পড়লো, তন্ময় মিনিস্টারের মেয়ে’কে রিজেক্ট করে দিছে।
তারপর দিন ওই মেয়ে সামনে হাজির। নানান তর্কাতর্কি আমাদের সাথে। তন্ময়ের পাত্তা না পেয়ে, আমাদের বলেছিল। তখন আমি কুয়েশ্চন করেছিলাম,
‘ ওকে তোমরা মেয়েরা এতো পছন্দ কেন কর বলোতো? ও তো একদম আনরোমান্টিক পারসন। মেয়েদের হ্যান্ডেল করতে জানে না। কখনও ঠিকভাবে কথা বলেনা। মেয়ের জবাব কী ছিলো, জানো? ‘
দীপ্তর উৎসুক কন্ঠ,
‘ কী? ‘
‘ বলেছিল, তন্ময় যেভাবে তাকায় সেটা দিয়ে একটা রোমান্টিক ইনটেন্স মুভি বানানো যাবে। আর হঠাৎ ওর চোখে চোখ পড়লে তার দ্বারা প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট পেয়ে যাবে। মেয়েদের জাতীয় ক্রাশ, সেই তন্ময়’কে তুমি আনরোমান্টিক বলো? ভাবা যায়? ‘
কান দুটো গরম হয়ে উঠলো। ছিঃ। রুবি আপু চোখ রাঙাল। ইব্রাহিম ভাইকে ধমকে দিল,
‘ চুপ থাক তুমি। ‘
আমি আলগোছে অন্যদিকে ফিরে গেলাম। কী লজ্জাজনক পরিস্থিতি। আজীব। একটা বিষয় নিয়ে, কী সাংঘাতিক ফিল্ম বানিয়ে ফেলল একেকজন। আনরোমান্টিক বলে, পাপ করে ফেলেছি যেমন। হাজার বার বলব,
‘ আনরোমান্টিক, আনরোমান্টিক, আনরোমান্টিক। হু। ‘
আমিতো আনরোমান্টিক বলি কারণ, তিনি ভালভাবে কথা বলেন না। ফ্রেন্ডসদের বয়ফ্রেন্ডদের দেখি কী মোহাব্বত নিয়ে কথা বলে। আর তিনি কল দিয়ে একমিনিট পর কেটে দেন। তাই না আনরোমান্টিক বলি।
আবারও জানালার বাহিরে নজর দিলাম। অনেকটা দূরে চলে এসেছি। চারপাশে সবুজ রঙের পরিবেশ। চমৎকার বাতাসে চুল আওলে আসছে। আমার চোখ লেগে আসছে। এই এক যন্ত্রণা। অতিরিক্ত ভাললাগায় চোখ বুঝে আসে। ঘুম পায়।

ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝি। শরীরের কাপড় শক্ত করে ধরে গোঙালাম। ঠান্ডা লাগছে কিছুটা। আবছা ভাবে চোখ মেললাম। এখনও গাড়িতে। অথচ, গাড়ি চলছে না। সামনের দিকে কেউ নেই। পাশে তাকাতেই দ্রুত উঠে বসলাম। পাশে তন্ময় ভাই। আমি তার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম। ভাবা যায়? রুবি, দীপ্ত এরা কই? আঁড়চোখে তার দিক তাকালাম। তিনি এখনও আমার দিক তাকিয়ে। হঠাৎ প্রশ্ন করলেন,
‘ আমি আনরোমান্টিক? ‘
কলিজার পানি সব শুকিয়ে গেল। এটা কোনো কথা? এই একটা অযুক্তিযুক্ত কথা এখনও কেন মনে রেখেছে লোকটা? ‘
দ্রুত বললাম,
‘ স..সসত্যিই বলিনি। ‘
ওদিকে কত যায়গা। অথচ আমার সাথে লেগে বসে। সমস্যা কী?
তৎক্ষণাৎ তিনি আমার কোমরে চেপে নিজের কোলে বসালেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমি চেঁচালাম,
‘ তন্ময় ভা..। ‘
জামার ফালির ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে কোমর স্পর্শ করলেন। নামার চেষ্টা করতেই তিনি শক্ত করে চুল ধরলেন। মাথাটা তার দিক এগিয়ে নিলেন।
‘ সারাজীবন তন্ময় ভাইয়া বলে বেরিয়েছিস ৷ এখন তোর সেই তন্ময় ভাইয়া যদি হঠাৎ তোকে স্পর্শ করে। তোর হয়তো খারাপ লাগবে। ব্যাপারটা হজম হবেনা। আমাকে ক্যারেক্টরল্যাস ভাবতে পারিস। বিদায় নিজেকে এতো কন্ট্রোল করা। কিন্তু সেই নিজেকে কন্ট্রোল রাখার দেখছি কোনো প্রয়োজন নেই। ‘
এমন আক্রমণে আমি ঠিক নেই। নির্ঘাত মরে যাব। তার বেগতিক হাত চেপে ধরলাম।
‘ প্লিজ। ‘
তার আমার কথায় মনোযোগ নেই। তিনি কথার অমান্য করে, গলায় মুখ ডোবালেন। রুহ উড়ে যেতো যদি না রুবি আপু আসতো। রুবি আপুর আওয়াজ শুনে আমাকে ছেড়ে দিলেন। জীবনে মনে হয়, এমন ভয় আর অনুভূতি পায়নি। দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নামলাম।
রুবি আপুকে আমাকে দেখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালেন। আমি আপুর হাত চেপে ধরলাম। শরীর এখনও কাঁপছে। দাঁড়াতেও শক্তি পাচ্ছি না। আপু হাসলেন।
‘ আয়। ‘
আর সাহস করলাম না তার দিক তাকানোর।
প্রেয়সী

২১|
ডানপাশের চওড়া বিল্ডিং ফেলে যাচ্ছে আমাদের গাড়ি। পরপর
এক বড় বাজার সামনে আসল। মানুষে গিজগিজ করছে। চারপাশে হৈচৈ। মাছ বিক্রেতাদের হাতে বড়বড় মাছ। সবজি ভর্তি ভ্যান দাঁড়িয়ে, ঠিক গাড়ির পাশে। বোরকা, কামিজ, শাড়ি পরিহিত নারীদের কোমর বেঁধে বাজার করার এক যুদ্ধ চলছে। দৃশ্য’টি আঁকতে সক্ষম হলে, খুবই সুন্দর এক ছবিতে রুপান্তরিত হতে পারতো। দীপ্ত কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছে। ওর ঝাকড়া চুলগুলো গুঁছিয়ে দিলাম। ছেলেটা আমাকে বিপাকে ফেলে। তারপরও রেগে থাকতে পারিনা। অফুরন্ত আদর করতে ইচ্ছে হয় যে। ওর ছোটছোট
চোখের গ্লাস খুলে দিলাম। এই বয়সে ওর চশমার প্রয়োজন।
খালি চশমায় সবকিছু আবছা দেখে। সমস্যা’টা জন্মগত।
ইব্রাহিম ভাইয়া ধীর কন্ঠে বললেন,
‘ অরু তোমাদের কিছু লাগবে? এই বাজারের পর আর বাজার বা দোকান পাওয়া যাবেনা তেমন। পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকবো। ‘
বড় মা তো খাবার প্যাক করে দিয়েছেন। আর কী লাগবে? আমি রুবি আপুর দিক তাকালাম। রুবি আপু জবাব দিলেন,
‘ দীপ্তর জন্য, কিছু চিপস নিয়ে রাখ। তাতেই হবে। ‘
হ্যাঁ, এটা ঠিক। ইব্রাহিম ভাই দোকানের দিক যাচ্ছেন। আমি আবারও দূরবর্তী বাজারের দিক ধ্যান দিলাম। আঁড়চোখে সামনেও তাকালাম। তন্ময় ভাই ফোন টিপছেন। আজকে যা ভয় দেখিয়েছেন আমায়, মনে হয়না আমি আর তার আশপাশ থাকতে প্রস্তুত।
উফ। কী এক শব্দের জন্য হেনস্তা করলো। আমি আর ওই শব্দ জীবনে উচ্চারণ করব না। একদম করবো না।
ইব্রাহিম ফিরতে গাড়ি আবারও চলতে শুরু করেছে। চিকন সরু রাস্তা। আশেপাশে ফাঁকা। শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশ। দোকানঘর পেছনে চলে যাচ্ছে। সামনে আর দেখা যাচ্ছে না।
হাত বের করতে গিয়েও দ্রুত ঢুকিয়ে ফেললাম। নাহলে শয়তান’টা আবার চেঁচাবে। রুবি আপু ইশারা করলেন,
‘ তোর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট কই? ‘
আঁড়চোখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। আমি কী বলে দিব যে, তন্ময় ভাই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছিলেন? বলেই দিব।
নালিশ ও দিব। না থাক। এভাবেই তা’কে দেখলেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জবাব না পেয়ে রুবি আপু ফোনে মনোযোগী হলো।
হঠাৎ ইব্রাহিম ভাইয়া আমাকে দিয়ে রুবি আপুকে ইঙ্গিত করছেন,
‘ এখনও ব্লক খুলছে না। আজকাল মানুষদের মায়াদয়া কমে যাচ্ছে। একদম পাথরে পরিনত হচ্ছে। ‘
হাসি পাচ্ছে। রুবি আপু পারেও বটে। কী সুন্দর ভাবে ইব্রাহিম ভাই মানানোর চেষ্টা করছেন। ইশ, কিউট। এই কাহিনি যদি আমার আর তন্ময় ভাইয়ের মাঝে হতো। তাহলে সর্বপ্রথম তিনি এসে আমাকে এক থাপ্পড় দিতেন, তারপর ব্লক খুলে, ধমকে রফাদফা হতেন।
ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল। আমার কপালে কেন ইনাকে পরতে হলো। হাহ।

রাতের আঁধার নেমে এসেছে। পাহাড়ি এলাকায় আমরা পৌঁছে গেছি। রাতের গভীরে হালকা ভাবে পাহাড়ের চড় দেখা যাচ্ছে। ওপাশে। এখনও দূর। এখানে হোটেলের জন্য আসা। এখানে
রাত্রে বেরোনো সাংঘাতিক ভয়ংকর ব্যাপার। ডাকাত আরও হাবিজাবি থাকে নাকি। রাতে না বেরোনো’ই উত্তম। দুটো রুম
বুক করা হয়েছে। একটা’য় আমি আর রুবি আপু। দ্বিতীয়’টা পুরুষ তিনজনের। চাবি দ্বারা রুম খুলে দিয়ে ইব্রাহিম ভাই বললেন,
‘ যারতার আওয়াজে রুম খুলবে না। ‘
রুবি আপুর জবাব,
‘ বাচ্চা না আমরা। যাও নিজের কাজে। ‘
মাথা ধরেছে আমার। ভেতরে ঢুকে এলাম। এই দুজনের ঝগড়া অকারণে লাগে। কী সাফ দিলকে ইব্রাহিম ভাই। তার সাথে কেন লাগে আপু? হু। পরপর আপুও এলেন। বললাম,
‘ তুমি ভাইয়ার সাথে শুধু শুধু লেগে থাক। নেহাতি তিনি তোমাকে
প্রচন্ড ভালবাসেন। নাহলে দেখতে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যেত।’
রুবি আপু ভেঙালেন।
‘ কচু। তুই তো ওটাকে এখনও চিনতে পারিস নি। আর চিনবিও না। বাদ দে। যা ফ্রেস হ। ‘
হ্যাঁ, এটাও ঠিক অবশ্য। কে কোন মসিবতে রয়েছে, তা নিজে ছাড়া আর কেউ জানবে না। তাই না? ফ্রেস হয়ে আমি বিছানায় ঝাপিয়ে পড়লাম। ক্লান্ত লাগছে। মারাত্মক ডিজিটাল রুমটা। থাই গ্লাসটা সরালেই সুন্দর বাহিরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ে পাহাড়ের অবাস্তবিক সংমিশ্রণের দৃশ্য। রাতের আঁধারে সম্পুর্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছে না। সকালে উপভোগ করা যাবে।
আপাতত ঘুমানো প্রয়োজন। যখন ঘুমানোর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, আপু অবাক স্বরে বললেন,
‘ তুই আবারও ঘুমোবি? ‘
‘ তো কি করব? ‘
‘ উঠ। ওদের ডাকি। আড্ডা দি। বা খেলি। মজা হবে। ‘
‘ ইশ। এতো জার্নি করে আসলাম। আপাতত ঠান্ডা এক ঘুম।
তারপর সব কিছু। ‘
দরজায় নক। রুবি আপু দেখে খুলল। দীপ্ত এসেছে।
‘ ফ্রেস হব। কাপড় দাও। ‘
আপু বের করে দিলেন। দীপ্ত লাফাতে লাফাতে চলে গেল। এবার ঘুমানো যাবে। আরামসে।

দরজার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। আবছা চোখে দেখলাম, ইব্রাহিম ভাই আপুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আপু ধীরে চেঁচাচ্ছেন,
‘ অরু একা। ধুর। ‘
‘ তন্ময় আছে। ‘
‘ হাত ছাড়। নাহলে..! ‘
‘ তুমি কী চাচ্ছ? কোলে তুলবো? ‘
‘ এই না। খবরদার। একদম তোমার গলা কেটে দিব। ‘
‘ আচ্ছা, দিও। ‘
ঘুমের মাঝেই হাসলাম। ঝাসিকি রানী। ভাইকেও ছাড় দিচ্ছেনা। বাহিরে নিতে চাচ্ছে হয়তো। রাতের ভিউ খুবই সুন্দর। ভেতরে আসার পূর্বে দেখেছিলাম। সেটাই দেখাতে নিচ্ছেন। আমি শুয়েই রইলাম। উঠতে ভালো লাগছে না। বেড-শিট চেপে আবারও চোখ বুঝলাম। কাল ঘুড়া যাবে। এক্সাইটেড। তখনই শব্দ। চলে আসল আপু? এতো দ্রুত? আমি ফিরলাম। চোখ কপালে তুলে বললাম,
‘ আপনি? ‘
তন্ময় ভাইয়ের জবাব নেই। বেশ শব্দ করে পাশে শুয়ে পরলেন। শুধু শুয়ে পড়লেন না, বিচ্ছিরিভাবে হাত-পা আমার উপর মেলে দিলেন।
শ্বাস আটকে আসছে। দ্রুত উঠে গেলাম। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে দূরে দাঁড়ালাম। একটা কথার জন্য তার এই রূপ? আগেই তো ভালো ছিলো। পরিবর্তন কেন হতে গেলো?
‘ আপনি এখানে কেন? ‘
তার জবাব নেই। ঘুমের ভান ধরেছে। এটা কী ধরনের অসভ্যতা?
বদমায়েশ লোক। আবারও প্রশ্ন করলাম,
‘ দীপ্ত কোথায়? ‘
‘ বাহিরে গিয়েছে। ‘
ওহ। তাহলে তিনজনই গিয়েছে তারা। আমাকে নিল না কেন? ডাকলেই তো হতো। অবশ্য আমি উঠতাম নাকি সন্দেহ।
‘ আপনাদের রুমে যান। ঘুমাব আমি। ‘
জবাব নেই তার।
‘ উঠুন। ‘
উঠছে না কেন?
‘ কি হলো, উঠুন। ‘
এবার তিনি উঠলেন। দু’হাতে চুল উচু করে বললেন,
‘ চল। ‘
‘ কোথায়? ‘
‘ গেলে দেখবি। ‘
ওহ। এই কথা। সাহেব হুকুম দিচ্ছেন। ভাবছিলাম না করে দিব। যাবো না বলতাম। কিন্তু একা ভয়ও করবে। অগ্যত যেতেই হবে৷

বাহিরে নিয়ে এসেছেন। সুন্দর আবহাওয়া। মৃদু বাতাস। চমৎকার অনুভূতি হচ্ছে। কিছুটা শীতও।লাগছে। ওড়না দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে নিলাম। তার প্রশ্ন,
‘ ঠান্ডা লাগছে? ‘
‘ উঁহু। হালকা। ভাললাগছে। ‘
তিনি মিষ্টি হাসলেন। আমার দিক তাকালেন। আমিও আঁড়চোখে তার দিক তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেল। দ্রুত চোখ ফোরালাম। তার হাসির শব্দ,
‘ এতো নার্ভাস হচ্ছিস কেন? ‘
বললাম,
‘ কোথায়? ‘
তিনি হেসেই যাচ্ছেন। হাসলে তাকে সুন্দর দেখায়। মায়াবী দেখায়। এই হাসি থামানো প্রয়োজন। নাহলে নির্ঘাত আমার মন গলে তলিয়ে যাবে। প্রশ্ন করলাম,
‘ আপুরা কোথায়? ‘
‘ দ্বিতীয় রুমে। ‘
‘ কিহ? আপনাদের রুমে? আপনি না বললেন বাহিরে? তাহলে দীপ্ত কোথায়? ‘
‘ ঘুমাচ্ছে। ‘
স্পিচল্যাস হয়ে গেলাম। মানুষ পারেও বটে। আগে বললে তো আমি আসতাম না। রুমেই থাকতাম। ভাবলাম তারা নিচে, দেখা হবে। তা না। এভাবে তার সাথে পাশাপাশি হাঁটার অনুভূতি অতটা খারাপ না।
ভালোই লাগছে। ধীরে তার হাতের সাথে আমার হাত স্পর্শ করছে।
কিছুটা যায়গা রাখলাম মাঝে। আঁড়চোখে তাকে দেখে নিলাম। আসলেই তিনি খুব সুন্দর। হ্যান্ডসাম।

চলবে
®নাবিলা ইষ্ক
চলবে
® নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here