প্রেয়সী পর্ব ১৮+১৯

প্রেয়সী

১৮|
রুবি আপু আমাকে সাজাচ্ছেন। চমৎকার একটি তাঁতের শাড়ি পরিয়েছেন। সিম্পল সাজে, চুলগুলো খোঁপা করেছেন। সামনের দুপাশে কিছু চুল ছেড়েছেন। নিজেকে যখন আয়নায় দেখলাম প্রচন্ড অবাক হলাম। আয়নার সামনে এক নতুন আমি। একদম ভিন্ন। টানা কাজলে চোখ গুলো নিস্পাপ। খোঁপায় রয়েছে ফুলের মালা। স্বচ্ছল সেই মালায় কালো ঘন চুল ৷ রুবি আপুর ধাক্কায়,
রুম থেকে বেরিয়ে নিচের দিকে যাচ্ছি। অনুভূতির পাহাড় বুকে চেপে আছি। প্রত্যেকটি পদক্ষেপ জানান দিচ্ছে, কতটা ব্যকুলতা আমার বুকে। তাকে দেখার জন্য। তাকে অনুভব করার জন্য।
এইতো, সে দাঁড়িয়ে। সিঁড়ির শেষের দিক সে দাঁড়িয়ে। পড়নে অপরিসীম সুন্দর এক পার্পল পাঞ্জাবি। ভয়ানক সুন্দরে রুপান্তরিত আজ সে। চোখ ফেরানো দায়। তাও আমি চোখ ফোরালাম। তার সেই শান্ত চাহনি কেমন অদ্ভুত নেশাময়। কখনও সক্ষম হবোনা সেখানে তাকানোর। ধীরে নামছি। শেষের দিক আসতেই, সে তার ডান হাত আমার দিক এগিয়ে দিলেন। অস্থিরতা রেখে ধীরে তার হাতে নিজের হাত রাখলাম। সে আমার হাতে তার ঠোঁট ছোঁয়ালেন।
ধীর কন্ঠে জানালেন,
‘ আমার স্বপ্নের প্রেয়সী আজ বাস্তবে । ‘
চোখ শক্ত করে বন্ধ করে নিলাম। এই অনুভূতি খুব যন্ত্রণাদায়ক। শ্বাস আটকে আসছে। তীব্র হার্টবিট নিয়ে আবেগী চোখে তার পানে চেয়ে। মধুময় এই সময় যেন থমকে যায়। সারাজীবনের জন্য থমকে যায়। সে শক্ত করে হাত ধরলেন। পাশাপাশি হেঁটে বেরোচ্ছি দু’জন। বাইকে উঠার সময়, সে কোমরে স্পর্শ করে উঠতে সাহায্য করলেন৷ আদুরে ভাবে চোখ বন্ধ করে ফেললাম । তারপর ধীরে পেছন হতে দু’হাত তার দু’পাশে ছোঁয়ালাম। সে বাইক স্টার্ট দিলেন। বাইক চলছে। দুজন বেরিয়ে পড়লাম অজানা উদ্দেশ্যে।
নির্জন এক স্থানে পৌঁছেছি। প্রকৃতির অপরিসীম ছোঁয়া চারপাশে। সে ঘুরে আমাকে ছুঁয়ে দিলেন। অনুভূতির জ্বালে, চোখ বন্ধ করে ফেললাম। অনুভব করলাম তার ঠোঁট ক্রমশ আমার ঠোঁট বরাবর আসছে। এইতো ছুঁই ছুঁই। শাড়ি শক্ত করে চেপে ধরলাম।
তার হুসকি ভয়েস,
‘ ভালবাসি। ‘
চোখ বন্ধ করে আমি তার স্পর্শের অপেক্ষায়। হঠাৎ,
‘ অরু? দ্রুত উঠ। কাজ আছে। ‘
লাফ মেরে উঠে বসলাম। বুকের তীব্র ধুকপুক চলছে। পেটে অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে। এখনও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আমি। চারপাশ ঘোলাটে লাগছে। আবারও চোখে ভাসছে তন্ময় ভাইয়ের পাঞ্জাবি পড়া মুখ। ইশ। স্বপ্ন দেখছিলাম? সব স্বপ্ন ছিলো? তাহলে তার স্পর্শের সেই অনুভূতি, এখনও এমন তাজা কেন? মনে হচ্ছে সে আমাকে ছুঁয়েছে। অদ্ভুত ভাবে।
রুবি আপু অবাক কন্ঠে বললেন,
‘ কী’রে? হয়েছে কী? ‘
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। রুবি আপু না ডাকলে, চুমুটা। উঁহু। বালিশে মুখ চেপে নিলাম। ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে। এমন অদ্ভুত স্বপ্ন আমি দেখছিলাম। মুখ দেখানোর ও যায়গা নেই এখন। এ কী হচ্ছে আমার। কী হচ্ছে আমার সাথে। মাথা উঁচু করে,
ছলছল নয়নে আপুর দিক তাকালাম। রুবি আপু কপালে হাত ছোঁয়ালেন,
‘ জ্বর এসেছে নাকি? নাতো নেই। অসুস্থ লাগছে নাকি? পিরিয়ড হয়েছে? ‘
বিরক্তিকর স্বরে বললাম,
‘ ধুর, না। ‘
‘ তাহলে এমন সাইকো-সাইকো বিহেভিয়ার কেন? ‘
তাজ্জব বনে গেলাম।
‘ সাইকো বিহেভিয়ার? আমার এগুলো সাইকো বিহেভিয়ার
লাগছে? ‘
‘ তো? পাগলের মতো গুনগুন করছিস। বালিশ চেপে আছিস।
একটু একটু হাসছিস। আবার লজ্জায় লাল ও হচ্ছিস।
সাইকো’ই তো লাগছে। ‘
হঠাৎ আমার কাছাকাছি আসলেন। অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
‘ কী’রে তন্ময়’কে নিয়ে আবার খারাপ স্বপ্ন দেখিস নি তো? ‘
‘ ছিইইইইইইইইইইই। গেইট আউট। ‘
আপু হাসছেন। দ্রুত ওয়াশরুমে দৌঁড়ালাম। কি একটা অবস্থা।

ওয়াশরুম হতে বেরিয়ে দেখলাম, দীপ্ত বিছানায় বসে। হাতে চকলেট কোণ।
‘ কে এনেছে? ‘
চাপা স্বরে বলল,
‘ তন্ময় ভাই। ‘
জোরে চেঁচালাম,
‘ কে? ‘
কান দু’হাতে চেপে জবাব দিলো,
‘ বাড়িতে কয়টা তন্ময় ভাই? ‘
আমার দৌঁড় আর কে দেখে। দৌঁড়ে তার রুমে উঁকি দিলাম। নেই সে। আবারও ঘুরে নিচে নামলাম। সেখানেও নেই। আশপাশে খুঁজলাম, নেই তো। রেগে রুমে গেলাম। দিলাম দীপ্তর মাথায়
থাপ্পড়। রাগী কন্ঠে বললাম,
‘ একদম এই বিষয় নিয়ে ফাজলামো করবি’না। কখনও না। ‘
এতো প্রত্যাশা নিমিষেই ভেঙে গেল। এ যে কতটা কষ্ট, তা যদি দীপ্ত বুঝতে পারতো।
দীপ্ত চোখ কুঁচকে ফেলল,
‘ ইনফরমেশনও দেব না তোমায় আর। গেলাম। ‘
ওর গেঞ্জি টেনে ধরলাম। আবারও প্রত্যাশাময় চোখ দুটো দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম,
‘ মিথ্যে কেন বললি? ‘
বিরক্তি নিয়ে জবাব দিল,
‘ উফ। তুমি পুরো কথা শুনলে কই? ‘
অস্থির গলায় বললাম,
‘ আচ্ছা। শুনছি, বল। ‘
‘ ভাই মেইনগেইটের সামনে। দারোয়ান নানা’র সঙ্গে কথা বলছেন।’
আবারও দৌঁড় লাগালাম। পেছন থেকে দীপ্ত চেঁচাচ্ছে,
‘ এভাবে যেও না, তার বন্ধুরা এসেছে সাথে। তোমাকে ভাই আস্ত গিলে ফেলবে। ‘
না থেমে আমি রাস্তা বদলালাম। ছাঁদে চললাম। ওখান থেকে তো আর দেখবে না। গিয়ে দেখলাম রুবি আপুও দাঁড়িয়ে। মিষ্টি হেসে তাকিয়ে। ওহ। তারমানে ইব্রাহিম ভাইও এসেছেন?বাব্বাহ। আমিও পাশে দাঁড়ালাম। ওইতো সে দাঁড়িয়ে। সকালের স্বপ্নের লোক। স্বপ্নে আমাকে হেনস্তা করে, কত সুন্দর করে দাঁড়িয়ে। সে এতো সুন্দর কেন? রুবি আপু চমকে উঠলেন,
‘ কখন এলি? ‘
‘ মাত্র। তুমি জানতে ইব্রাহিম ভাই আসবে?’
‘ না৷ দীপ্ত জানালো। ‘
তারপর আমার দিক ফিরলেন। সামনে গিয়ে দোলনায় বসলেন। আমি তখনও তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকিয়ে।
‘ তন্ময় জানলে খুবই রাগবে। ‘
জিজ্ঞেস করলাম,
‘ কোন বিষয়ে? ‘
‘ এইযে সুমনা ব্যাপার। ‘
আমিও সহমত। সে পূর্ব হতেই সুমনা’কে তেমন পছন্দ করেন না।
এখন যদি, এগুলো শুনেন। এবার রাগবে না। বোমা ফাটাবে বাড়িতে।

তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তন্ময় ভাই আগে তার রুমে আসবেন। এসে ফ্রেস হবেন৷ কাজ শেষ করে, নিচে নামবেন। তার আরেকটি ভালদিক হচ্ছে, সে রুমে মানুষ আনেন না। মানুষ বলতে, তার বন্ধু বা ভাই-ব্রাদার। তারা আসলে ড্রয়িংরুমে বা ছাঁদ। ছাঁদে তাদের নিলে সে আগেই বলে যাবে, কেউ যেন ছাঁদে না উঠে। এইদিক গুলো বড্ড কিউট। দেখলাম সে আসছে। দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। ওড়না ঠিক ভাবে ছড়িয়ে নিলাম। সে আমাকে লক্ষ্য করে, ভ্রু উঁচু
করলেন। আমতাআমতা করে বললাম,
‘ নিচে নামছিলাম। ‘
‘ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, নিচে নামছিলি? ‘
‘ হ্যাঁ। মানে, আপনাকে দেখে দাঁড়ালাম। কিছু লাগবে আপনার? ‘
সে আমাকে টপকে ভেতরে ঢুকলেন। সাহস জুগিয়ে পেছন-পেছন আমিও ঢুকলাম। কি সুন্দর গোছানো রুমটি। এখানে যে একজন ব্যক্তি বসবাস করেন, তা অবিশ্বাস্য মনে হবে। একটু ময়লা নেই। ক্লিন একদম। এতো সুন্দর ভাবে ক্লিন তো আমার রুমও নেই। এদিকসেদিক কাপড় পরে আছে হয়তো। ঘুম থেকে উঠে বিছানাও গুঁছিয়ে আসিনি। হাহ। সে তার হাতের ব্যাগ ড্রেসিংএ রাখলেন। একেএকে হাত ঘড়িও খুলছেন। বললেন,
‘ আপাতত কফি খাওয়াতে পারিস। ‘
একটুও রোমান্টিক না। ধুর। কোথায় একটু মিষ্টি কথা বলবে।
‘ কফি? ‘
‘ হু। ‘
আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। কফি কেন? মধু আনি।
তন্ময় ভাই আমার দিক ফিরলেন।
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ না, যাচ্ছি। ‘
সে পিছু ডাকলেন,
‘ ওড়না ঠিক ভাবে নে। চুল বেঁধে যা। নিচে মেহমান আছেন। ‘
হু। এগুলো মনে থাকে?

ইব্রাহিম ভাইকে সেই খাতির করা হচ্ছে। বড় মা পরপর যা আছে বাড়িতে সব সার্ভ করছেন। আমাকে দেখতেই পাশে বসতে ইশারা করলেন। আমি বসলাম। ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
‘ আমার উনি কই? ‘
দুষ্টু স্বরে বললাম,
‘ আপু আপনাকে অলরেডি দেখেছে। ‘
‘ সত্যি? কীভাবে? ‘
‘ ছাঁদে দাঁড়িয়ে একধ্যানে শুধু আপনাকেই দেখেছে। ‘
বড় হাসি তার ঠোঁটে ঝুলে।
‘ ওয়াও। ডেকে আনো না। প্লিজ। ‘
‘ কী পাব আনলে? ‘
‘ যা চাইবে। ‘
‘ ইশ। মিথ্যুক। ‘
‘ সত্যি। ‘
‘ ঘুরতে নিতে হবে আমাদের। ‘
‘ ওয়াও। এটা তো আরও উত্তম। অবশ্যই। ‘
দীপ্ত’কে ইব্রাহিম ভাই নিজের কাছে বসালেন। বাড়ির সম্পর্কে ওর পড়ালেখা নিয়ে সকল প্রশ্ন করছেন। তেমনি দীপ্ত উত্তর দিচ্ছে। বাহ। দীপ্ত জিজু পেয়ে গেল।
রান্নাঘরে হাজির হলাম। কাউকে না পেয়ে নিজের মাতব্বরি শুরু করলাম। গরম পানি মগে ঢালতে গিয়ে, হাতে ফেলেছি। সাথে সাথে জ্বলে উঠলো। আরেকটু হলেই হাত পুড়ে যাচ্ছিলো প্রায়। কোথা থেকে মা দ্রুত আসলেন। হাত ধরে পানিতে চুবিয়ে দিলেন। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে, হাতে ঢালছেন। সে অতপর আমাকে বকছেন,
‘ এতো বড় হয়েছে, এখনও ঠিক ভাবে একটা কাজ করতে পারেনা।
পাতিল হতে পানি হাতে কেমনে পড়ে? হ্যাঁ? ‘
আমি আদুরে চোখে তার দিক তাকিয়ে। মা তো মা’ই হোন।
ছোট চাচী মলম আনলেন পোড়ার। হাতে লাগিয়ে দিলেন।
‘ হায়রে অরু। তোর কপাল ভালো। নাহলে অন্য বাড়ি বিয়ে হলে,
শ্বাশুড়ি দ্বিতীয় দিন ফেরত পাঠাতো। ভাগ্যিস বেঁচে গেলি।’
আমি লজ্জা পেলাম। আবারও পানি ধরতে যেতেই, মা ধমকে দিলেন,
‘ কী করবি? ‘
‘ কফি। তন্ময় ভাইয়ার জন্য। ‘
মা হাসছেন। আঁড়চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘ আমি বানিয়ে দিচ্ছি। ‘
পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমার একটু রাগী।
ভাইদের অনেকটা ভালবাসেন। তাতে কী? মা তো আমার? দিন শেষে সেই ভালো তো আমাকেই বাসেন।
প্রেয়সী

১৯|
বন্ধুদের রেখে রুমে গিয়ে বসে? ড্রয়িংরুমে বসেও তো কফি খাওয়া যাচ্ছে, তাই না? ওহ হ্যাঁ। তাঁর তো আবার রোগ রয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার। বাহির থেকে এসেছেন যে ৷ আপাতত গোসল করবেন। তারপর বেরোবেন । কত কাহিনি। আমি কফি দিয়ে রফাদফা হয়ে যাব। এমন আনরোমান্টিক লোকের সাথে থাকব না। একটু হেসে মিষ্টি করে কথা বললেই হচ্ছে। সেটাও করেনা। উনি নাকি আবার আমাকে পছন্দ করেন। ইশ, ছাঁই করেন৷ তাঁর কোন অঙ্গভঙ্গী’তে মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করেন? মুখে তো কিছু বলেই না। আর ইশারা তো আরও আগে না। ওই একটু আধটু তাকিয়ে থাকেন। ব্যস। হয়ে গেলো তাঁর। অদ্ভুত ।
আপাতত তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে। ভাবছি, পারমিশন ছাড়া যাবো নাকি? পারমিশন লাগবে কেন? তাঁর আছে’টা কী? আমি ঢুকলাম। তন্ময় ভাই নেই৷ গোসলে। আমি ধীরে তাঁর রুমে পায়চারী শুরু করলাম।
টেবিলে বড়বড় বুকস পড়ে৷ এভাবেই কী তাকে ব্রিলিয়ান্ট বলা হয়৷
এগুলো’ই পড়েন বুঝি। বইয়ের মাঝে মাঝে ট্যাগ লাগানো ‘ ইউ হ্যাভ টু ফিনিশ ইট তন্ময় ‘। আমি হেসে ফেললাম। পারেও বটে।
কিছু স্কেচ পেলাম। বাড়ি,ঘর, দালান হাবিজাবি আর্ট করা। আমার কাছে তো হাবিজাবিই লাগছে। হয়তো তার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট ।
অবশ্য আর্ট করতে তিনি খুব ভালো পারেন। দীপ্ত, রুবি আপুর এসাইনমেন্টে আগে তন্ময় ভাই সাহায্য করতেন। কোনো কিছু আর্ট করতে হলে, তার কাছেই আসা হয়। আমি আসতাম না বাবা।
তাকে আমার যা অপছন্দ ছিলো, আসার প্রশ্নই উঠত না৷
লাস্ট স্কেচটি’তে নজর আটকালো। পৃথিবীর সকল আকর্ষণ আসলো স্কেচটি’র উপর। একটি মেয়ের স্ট্র‍্যাকচার আর্ট করা। উপরের কর্নারে ছোটছোট অক্ষরে লিখা ‘ প্রেয়সী ‘। ভালভাবে
নজর বোলালাম। কামিজে রয়েছে মেয়েটি। ওড়নার কোণা নিচে ছুঁয়ে। ঠিকঠিক যায়গায় কয়েকটা ছোটছোট তিল ব্যবহার করেছেন। যেমন কানের লতিতে। থুতনির নিচে। অদ্ভুত লাগলো গলার বিশেষ কিছুটা নিচের তিল দেখে। এমন ভাবে নজর রেখে আর্ট করেছে? লোকটা কোন মেয়ের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। হঠাৎ, দ্রুত স্কেচ নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালাম। গলার জামাটা একটু নিচে করলাম। গলাটা শুঁকিয়ে আসছে। ঠিক ডান পাশে তিলটা। স্কেচেও তা। পরপর বাকি তিলগুলো ঠিকঠাক পেয়ে গেলাম। নিজের শরীরে এতো যায়গায় তিল তা আমি নিজেও জানি না। লজ্জায় শ্বাস আটকে আসছে। এ কেমন অদ্ভুত আচরণ? ছি। লোকটা তো বড্ড লুচ্চা। এটা যেখানে ছিলো, সেখানে রাখা’ই উত্তম। এটা নিয়ে তাঁর সামনে পড়ার মানে নেই কোনো। দৌঁড়ে যেতে গিয়ে স্কেচ হাতে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। আমার চেঁচানো শুনে সে তৎক্ষণাৎ বেরিয়েছেন। তার পায়ের সামনে স্কেচটি৷ কী মারাত্মক অসুন্দর পরিস্থিতি। দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। স্কেচ ধরার আগে তন্ময় ভাই তা ওঠালেন । সেটার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। হাতে স্কেচ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, তিনি চুল মুছতে ব্যস্ত৷ উনি কী এটার এক্সপ্লেইন ও করবেন না? এতবড় কান্ড করে ভাব নিচ্ছে কিছুই হয়নি। তার তো উচিৎ ছিলো একটু তোতলানো’র। তার সিক্রেট ফাঁস হয়ে গেলো। সেদিকে কোনো ধ্যান’ই নেই। আজকে তো তাকে আমি খেয়ে ফেলব। সংযত কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
‘ এটা কে? ‘
তিনি আমার দিক ঘুরলেন,
‘ তোর ভাবী। সুন্দর না? ‘
চোখ বড়সড় করে তাকালাম। ভাবী? কে কার ভাবী? আমি আমার নিজের ভাবী? এটা তো আমার স্ট্র‍্যাকচার। চোখ পিটপিট করে জবাব দিলাম,
‘ সুন্দর না। একদম না। এর থেকে সুন্দর মেয়ে আছে। আমার স্কুলের মেয়েগুলো তো আরও.. ‘
হাত তুলে ইশারা করলেন থামতে। মাঝ সেন্টেন্সে কেউ আমাকে থামায়’না। অথচ, এই লোক সেটাও করে ফেলল। তারপর ড্রেসিং থেকে ফোন নিয়ে, একটু টিপে আমার সামনে ধরলেন। মেসেঞ্জার এটা। চ্যাট ওপেন করেছেন কারও। প্রোফাইলে বোঝা যাচ্ছে, ওই পুলিশ অফিসারের মেয়েটা। প্রপোজ করেছে অলরেডি। তন্ময় ভাই রিপ্লাই দেননি। না চাইতেও মনে ঝর বয়ে যাচ্ছে। সে ফোন বিছানায় ফেলে বললেন,
‘ এ সুন্দর? এটা চলবে? করব প্রেম এর সাথে? নাহলে আরও
আছে সুন্দর! ‘
চোখ গুলো ছলছল করছে। আমি নাহলে এভাবেই বলেছিলাম। তাই বলে এমন কঠোর হবে? এভাবে বলতে পারলো? নির্দয় লোক।
একবুক সাহস সঞ্চয় করে, ধীর কন্ঠে জানালাম,
‘ আ..আমিও পারবো প্রেম করতে। আমিও করব। ‘
সে আমার দিক শান্ত চোখে তাকালেন। কিছুটা কাছে এসে বললেন,
‘ তাই? প্রেম করতে পেরেছিস কখনও? ‘
বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। আসলেই তো। এতবছরের জীবনে একটা প্রেম নিবেদন বিনেদন কিছুই নেই?
‘ পারিনি তাতে কী? অবশ্যই পারবো এবং করবোও ৷ ‘
তার মুখ আমার কান বরাবর আনলেন। শান্ত স্বরে জানালেন,
‘ না করতে পেরেছিস, না করবি আর না আমি করতে দিব। ‘
তার উপস্থিতি চলে গিয়েছে। অথচ তখনও আমি চোখ বন্ধ করে, শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে।

রুবি আপু ঘাপটি মেরে বসে। তার রুমে যেতেই, সে খপ করে আমার হাত চেপে ধরল। টেনে নিজের পাশে বসালো।
তার অদ্ভুত আচরণ দেখে প্রশ্ন করলাম,
‘ হয়েছে কী? ইব্রাহিম ভাই তোমার অপেক্ষায় বসে। নামবে না? ‘
রুবি আপুর মুখ লালচে হয়ে আসছে। সি’জ ব্লাশিং? কিছু হয়েছে না-কি? বলবে আমায়? একটু জোর দেওয়া যাক৷ তার হাত চেপে বললাম,
‘ আমাকে বলোনা। ‘
হালকা কাশল। চোখ নিচু করে, জবাবের বদলে এক প্রশ্ন করলো, যা শুনে আমি রীতিমতো বিছানা থেকে পড়তে নিচ্ছিলাম।
‘ তন্ময় কী তোকে চুমু খেয়েছে? ‘
বড় এক চিৎকার শুনিয়ে দিলাম,
‘ কীইইইইইইইহ। ‘
‘ দেখ অরু, রাগীস না। আমরা আমরাই তো তাই না? বল। তোকে চুমু খেয়েছে? ঠোঁটে? ‘
লাগাতার মাথা নাড়ালাম। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে,
‘ এগুলো কী উদ্ভট প্রশ্ন? ‘
রুবি আপু লজ্জায় লাল। অন্যদিকে ফিরে বলল,
‘ ও কাল না আমাকে নিতে এসেছিলো। তো দুজন ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। ফি..উহু। মানে ফিরবার পথে জোরপূর্বক চুমু খায়।
এখন, আমার অনেকে লজ্জা করছে, সামনে যেতে। ‘
‘ ও মাই গড। ওমাইগড। ওয়াও। তারপর, তারপর? ‘
‘ তারপর? তারপর আর কী। বাড়িতে এসে আমি আর ওর ফোন রিসিভ করিনি তাইতো চলে এসেছে বাড়ি’তে। ‘
‘ সো রোমান্টিক। ওয়াও, এটাই তোমার প্রথম কিস? ‘
লজ্জাসংকোচ ভেঙে জবাব দিলেন,
‘ হ্যাঁ। জীবনের প্রথম। আমাদের রিলেশন তো বছরের বেশি হচ্ছে। ও কখনও আমাকে স্পর্শ করেনি। মাঝে মাঝে কপালে চুমু খেতো। বা পাশাপাশি হাঁটলে কোমরে ধরতো। কিন্তু কাল রাত্রে কী হয়েছিলো ওর কে জানে। ‘
তারপর হাসলেন। আমাকে বললেন,
‘ এখন তুই বল। কিস করেছিস? ‘
নিচুস্বরে জবাব দিলাম,
‘ না। ‘
তার অবাক কন্ঠ,
‘ কীহ? এখনও হয়নি? তন্ময় তোকে চুমু খায়নি? ও যেভাবে
তাকায় তোর দিক। আমিতো ভেবেছি, পুরো খেয়ে ফেলেছে। ‘
‘ ছিঃ। নষ্ট কথা বার্তা। ‘
‘ আচ্ছা, আচ্ছা স্যরি। বল, সত্যি তোদের কিস হয়নি?’
‘ উঁহু, না। ‘
‘ কী করেছে তাহলে? ‘
আঁড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
‘ কিছুই করেনি? ‘
‘ সত্যি? ‘
‘ হ্যাঁ, বাবাহ। ‘
মন খারাপ করে আবারও বললাম,
‘ সেতো কিউট ভাবে সহজে কথাও বলেনা। কিছু করার কথার
প্রশ্নই আসেনা। আনরোমান্টিক লোক। ‘
অথচ এ কিন্তু এক বড় লুচ্চা। সেটার প্রমাণ তো পেলামই আজ। আমার মানইজ্জত নিয়ে টানাটানি লেগে গেছে।
রুবি আপু দুষ্টু হাসলেন।
‘ হয়তো তোকে সময় দিচ্ছে। তুই তো আর বাইরের মেয়ে না। ওর নিজের প্রিয়। অবশ্যই তোর কথা প্রচন্ড ভাবে। নাহলে, ও খুবই বউ প্রিয় মানুষ। দেখবি, বিয়ের প্রথম তিন-চারদিন তোকে রুম থেকেই বেরোতে দিবেনা। ‘
বলেই রুবি আপু হাসতে লাগলেন। ছি। কী লাগামহীন কথা। রুবি আপুটা বড্ড আধুনিক। অথচ ইব্রাহিম ভাইয়ের এক চুমু’তে ঘায়েল। হিহিহি।
হঠাৎ দীপ্ত হাজির। অধিক বয়স্কদের আওয়াজ টেনে বলল,
‘ এইযে, সুন টু বি ব্রাইড। জিজু এসেছে। ‘
আমি দীপ্ত’র দিক তাকালাম। ছেলেটা এতো এডভ্যানস কেন?
সব বুঝে এবং বলেও ফেলে। এই ছেলে বড় হলে এর মাঝে লাজলজ্জা নামক বস্তু থাকবে বলে, মনে হয়না। রুবি আপুর জবাব,
‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না। ‘
‘ যাচ্ছিনা মানে? আলবাত যাবে। জিজু তোমার অপেক্ষায়। আমার জিজুকে অপেক্ষা করানো যাবে না। ‘
রুবি আপু অবাক চোখে আমার দিক তাকালেন,
‘ দেখেছিস অরু? এখনই জিজু জিজু করছে এই ছেলে। ‘
আমি রুবি আপুর হাত ধরে তাকে ওঠালাম বিছানা হতে।
‘ চলো তো। ‘
আমি আর দীপ্ত তাকে এক প্রকার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছি।

দীপ্তর আবদারে ডিসিশন নেওয়া হলো, ঘুরতে যাওয়া হবে।
পাহাড়ের চড়ে। যেখানে আমার পিকনিক যাওয়ার কথা ছিলো।
বড় চাচ্চুও সহমত হলেন না। বললেন,
‘ মাস খানিক বাকি ওঁদের বিয়ের। এই সময় যাওয়াটা? ‘
ছোট চাচ্চু নিচু স্বরে বললেন,
‘ যাক ভাইয়া। তন্ময় তো থাকবে সাথে। ‘
দীপ্তর চেঁচামেচি’তে বড়রা মানতে বাদ্ধ প্রায়। এভাবে কেউ চাচ্ছিলেন না, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের একসাথে যাওয়ার ব্যাপারটা ।
বড় মা উতলা কন্ঠে আর্জি করলেন,
‘ দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে যাস। দ্রুত চলে আসিস আবার। ‘
ইব্রাহিম ভাই’ উঠতে নিচ্ছিলেন, ছোট চাচী থামিয়ে দিলেন,
‘ কোথায় যাচ্ছ বাবা? ‘
‘ ড্রেস কিছু প্যাক করতে হবেনা? ‘
আব্বু বললেন,
‘ ড্রাইভার পাঠিয়ে দাও? ‘
‘ উঁহু। পারসোনালি নিলে ব্যাটার হয়। আর টুকটাক কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে। ‘
‘ ঠিকাছে৷ ‘
ইব্রাহিম ভাই চলে যাচ্ছেন। তন্ময় ভাই ফোনে কথা বলছেন।
রুবি আপু প্যাকিং করতে দৌঁড়। দীপ্ত কী কী নিবে ভাবছে। আররে মাত্র দু’দিনের ব্যাপার। এতো প্যাকিং করে হবে কী?

চলবে
চলবে
নাবিলা ইষ্ক

1 COMMENT

  1. এই বার নিয়ে চার বার পড়েছি এই গল্পটা,অসম্ভব সুন্দর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here