প্রেয়সী – ২৭
বাবা শক্ত গলায় দারোয়ান নানাকে আদেশ দিলেন,
– আজ থেকে ও বাড়ির কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিবেনা।
কড়াকড়ি নির্দেশে এরপর যতবার মামারা এসেছেন ঢুকতে দেওয়া হলোনা। আমিও চোখ-কানা হয়ে রইলাম। তাদের কল বা ইঙ্গিত কানে নিলাম না। কেন নিতে যাব? তাদের ইঙ্গিত হচ্ছে, আমি রাস্তা করে দিতাম তার মেয়েকে এ বাড়ির বউ করার জন্য। অদ্ভুত।
তারা কী তন্ময় ভাইকে চিনেন না? হয়তো। নাহলে কখনও ভাবতেন না। সে হচ্ছে পৃথীবির সবচেয়ে বড় ঘাড়ত্যাড়া লোক। পৃথীবি এক যায়গায় আর সে এক যায়গায়। তার উপর কথা চাপানো অসম্ভব। সেখানে বিয়ের মতো একটা বিষয়। তাও আবার সুমনা। যা’কে তিনি আগে থেকে পছন্দ করেন না। নেহাতি আমার জন্য ঠেলত। এখন তো তাও নেই। একদম চুটকি দিয়ে সুটকি করে দিবে।
আজকে শুক্রবার। সকাল আটটায় তন্ময় ভাই বাড়ি ফিরেছেন। গত পুরো মাস তিনি ঢাকা ছিলেন। তার ফিরে আসার কারণও রয়েছে। কারণ হচ্ছে, আজ বড় চাচ্চু আর বড় আম্মুর এনিভার্সিরি। যেহেতু আগের বার চাচ্চুর ইলেকশন ছিলো, সে সময় ব্যস্ততায় এনিভার্সিরি পালন করা হয়নি। তো এবার পালন করা হবে৷ টেবিল গোছাচ্ছিলাম তখনই রুবি আপু রুমে আসল। মুখ গোমড়া। নির্ঘাত লেগেছে ইব্রাহিম ভাইয়ের সাথে।
আমি বললাম,
– আবার লেগেছ?
তার শক্ত গলার জবাবা,
– আমি লাগি? ওইতো লাগে। লাগালাগি বাদ। আর কথা হবেনা। বাবাকে বলব, বিয়ে ক্যান্সেল। সব ক্যান্সেল।
হাসলাম। এ নিয়ে হাজার বার বিয়ে ক্যান্সেলের কথা বলেছে। অথচ প্রত্যেকবারই সর্ট আউট হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ তার কথা আমরা ব্যিলিভ করিনা। বললাম,
– ছাঁদে যাবে?
রাজি হয়ে গেলো। ছাঁদে গিয়ে পড়লাম বিপাকে। তন্ময় ভাই পুশআপ করছে। দীপ্ত টানটান উত্তেজনা নিয়ে গুনছে। শুকনো গলায় বারবার প্রশংসা করে যাচ্ছে,
– বাহ, বাহ। চমৎকার। কী শক্তি। ইশ। আমি কবে পারবো।
চলে যাবো? লজ্জা করছে প্রচন্ড। উদোম শরীরে তাকে দেখার অভিজ্ঞতা একদম নেই। আঁড়চোখে একবার দেখে দ্রুত অন্যদিক ফিরলাম। বুকের স্রোত তীব্রতায় বয়ে চলছে। রুবি আপু টিটকারি মারলেন,
– ওহ। এই কারণে ছাঁদে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ববললেই হতো। আমরা সব বুঝি।
ছাই বুঝে। মুখে বললাম৷
– না। বিশ্বাস করো। আমি জানতাম না তিনি এগুলো করছেন।
লজ্জয় গাল লাল হচ্ছে। আমাকে খেয়াল করতেই তিনি থামলেন।
উঠে দীপ্ত’কে ইশারা করলেন পানির বোতল টা দিতে। চোরা চোখে তাকালাম। তিনিও তাকিয়ে। কী সাংঘাতিক লাগছে। ঘামে ভিজে আছেন। কপাল হতে টুপটুপ ঘাম ঝরছে। ফরসা শরীর ঘাম বেয়ে চলেছে। আমি রুবি আপুর পেছনে চলে এলাম। দীপ্ত বোতল নিয়ে নিচে চলে যাচ্ছে। তন্ময় ভাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে। রুবি আপু হটাৎ দৌঁড় লাগালো। আহাম্মকের মতো তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে। এটা কী হলো? এমন কেন করলো? করলো’র উত্তর পেলাম তন্ময় ভাইয়ের কাছে। তিনি দিব্বি তার ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আমাকে চেপে ধরলেন। অনুভূতির ভূমিকম্প বুঝি একে বলে? কাঁপা শরীর আর কন্ঠ নিয়ে বললাম,
– সরুন।
তার ঠোঁট কান বরাবর আনলেন।
– সরুন, সরুন। কোথায় সরব?
আমার নড়াচড়া আটকাতে আরও চেপে ধরল। ধীর কন্ঠে আবেদন করলো,
– আজকে শাড়ি পড়বি। যেটা দিয়েছিলাম।
– অসম্ভব।
শাড়ি আর আমি? আমার দ্বারা শাড়ি পড়া অসম্ভব। একদম মেইনটেইন করতে পারব না। দেখা যাবে শাড়ি ওখানে আমি এখানে।
কানের লতিতে কামড়ে বললেন,
– অসম্ভব?
– হু।
– মাইর খাইছস? থাপড়ে দাঁত ফালাই দিব। সুন্দর ভাবে তৈরি হবি শাড়ি পরে।
– পড়ব না।
– আচ্ছা? দেখা যাবে।
আমি কথা বলব তার পূর্বে বড় মা’র গলা। তিনি উপরে আসছেন।
পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগলাম। বড় মা দেখলে মানইজ্জত সব যাবে। একদম যাবে। তন্ময় ভাই কিছুক্ষণের বাদে নিজে ছাড়লেন। তারপর ছাঁদের দরজার সামনে মাত্র আসা বড় মা’র হাতে তাওয়াল ধরিয়ে দিলেন। পরপর বড়বড় পা ফেলে চলে গেলেন। লজ্জা নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বড় মা’র সামনে।সবসময় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যায়। উফ।
ড্রয়িং রুমে বসে দেখছি, ছাঁদে জিনিসপত্র ট্রান্সফার হচ্ছে। নিশ্চয়ই সাজানোর জন্য। রবিন আর ইব্রাহিম ভাইয়া নিচ্ছেন। সাথে আছে তন্ময় ভাইয়ের কতগুলো চেলা। এভাবে শুনেছি আরিফ আর আইরিন আসবে। তন্ময় ভাইয়ের মামাতো ভাই বোন দুটা। দেরি করে আসবে। সারপ্রাইজ দিবে যে। হ্যাঁ, ওরা আসলে বড় মা খুশি হবে প্রচন্ড। ও বাড়ির বাচ্চাদের মাঝে, আরিফ আর আইরিন’কে বড় মা প্রচন্ড ভালবাসেন। আজ শুধু তার রিয়েকশন দেখার জন্য এক্সাইটেড আমি। দীপ্ত ছাঁদে উঠবার সময় ডাকছে,
– আপু। সাথে আসো, তন্ময় ভাই ডাকে।
ইশ, মানইজ্জত শেষ করার জন্য ডাকছে? জবাব দিলাম,
– যাবো না৷
– ওখেই।
বেশ ভাব নিয়ে বলে চলে গেলো। রুবি আপু কিছুক্ষণের মাঝে এসে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে বলল,
– ধর, এই হাদার সাথে কথা বল।
তারপর টিভি ওন করে সিরিয়াল দেখয়ে বসলো। কাসাম তেরি প্যায়ার কী। ওপাশে ভাইয়া চেঁচাচ্ছে। একটু কেশে কথা বলতে শুরু করলাম,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। তা একই বাড়িতে থেকে, কল কেন করতে হচ্ছে?
ভাইয়া নিশ্চয়ই চমকেছেন? পরপর নালিশ শুরু করলেন,
– অরু, আর বলিও না। ও আমায় পাগল করে ছাড়বে। কতক্ষণ যাবত একটু ছাঁদে আসতে বলছি। আসছেই না। এমন কেন?
বললাম,
– তুলে নিয়ে যান।
পাশ থেকে আপু চোখ রাঙাল। দ্রুত ফোন নিয়ে কেটে দিল।
রুবি আপু চমৎকার এক তাঁতের শাড়ি পড়েছে। আমি শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। শাড়ি পরে তন্ময় ভাইয়ের সামনে যাব? আমি আজ লজ্জায় মরে যাব। কেন যেন শাড়ি আর তিনি ভাবতেই শরীরর রক্ত দ্বিগুণ বেগে চলতে শুরু করেছে। বড় একবার এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– কীরে, কোথায় যাবি?
আপু বেশ আরামসে জবাব দিল,
– সিক্রেট। বলা যাবে না।
অথচ তখনও আমি শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। এতো বুক কাঁপছে কেন? একটা শাড়িই তো? কিচ্ছু হবে না। তারপরও মন শান্ত হচ্ছে না।
আপু কী সুন্দর তৈরি হয়েছেন। আমায় শাড়ি পরতে না দেখে বলল,
– আচ্ছা, পড়তে হবে না শাড়ি। যা কামিজ পড়।
ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। শাড়ি পড়াটা আজ বাধ্যতামূলক। নাহলে আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। সাহস সঞ্চয় করলাম। বললাম,
– পড়িয়ে দাও।
আপু মাথায় ফুল গেঁথে আমায় পড়াতে সাহায্য করলেন।
অস্থির মন নিয়ে শাড়ি পরেছি। ঠিকঠাক সামলাতে পারলেই হয়। একবার আপুকে বলেও দিলাম,
– বেশি করে সেফটি পিন ব্যবহার করিও।
– আরে শান্ত হ। কিচ্ছু হবে না।
নাহলে ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। শাড়ি পরিয়ে আপু কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো,
– মাশাল্লাহ অরু। তোকে ত শাড়ি’তে দারুণ দেখতে লাগছে। তন্ময় পাগল নাহলেই হয়।
এইতো আমার বুকের স্রোত বাড়িয়ে দিল। যাও নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম নিমিষেই সেটার সমাপ্তি ঘটলো । দুর্বল কন্ঠে বললাম,
– চুপ থাক। প্লিজ।
আপুর হাসি আর কে দেখে।
সম্পুর্ন তৈরি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। চুল ভাজেভাজে কোমড়ে দুলে। সিল্কি শাড়ি’টা বেশ সুন্দ। অথচ অনুভূতি আমার ভিন্ন। কিছুক্ষন আমাকে ডেকে আপু নিজেই চলে গেলেন, ছাঁদে।
শুধু আমিই দাঁড়িয়ে। তন্ময় ভাইয়ের সামনে দাঁড়ানো শক্তি পাচ্ছি না। তাও শাড়িতে। যেটা তার সামনে কখন পড়েছি বলে মনে হয়না।
প্রেয়সী – ২৮
ছাঁদের সিঁড়ি’তে ঝাপটি মেরে দাঁড়িয়ে। পা উঠতে চাচ্ছে না। এ কোন মসিবত। এমনটা কেন হচ্ছে? প্রতিদিনের তুলনায় আজ বেশ নেকামো করছি। কোথার থেকে আসে এই নেকামো গুলো? করবো না নেকামি। দ্রুত পায়ে চার-পাঁচ সিঁড়ি উঠে আবারও দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকের স্রোতের গতিপথ খুঁজে পাচ্ছি না। প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে। এনিহাও, আইরিন দেখে ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ আওয়াজ দিল,
– এই অরু। দ্রুত উঠো।
সকলে চলে এসেছে। তারমানে কতটা দেরি করেছি আমি সেটা আর উল্লেখ না করি। বুকের ধুকপুকানি নিয়ে ধীরে ছাঁদের দিক চললাম। সর্বপ্রথম নজরে আসলো, স্পষ্ট লাইটিং দ্বারা ছাঁদের ডেকোরেশন।
চমৎকার এক বড় ছবি ফ্রেম করা সামনে। বড় চাচ্চু আর বড় মা’র।
তারা দুজন সেই ছবিটির সামনে দাঁড়িয়ে। বড় চাচ্চুর পাঞ্জাবী ধবধবে সাদা রঙ আকর্ষণ কাড়ছে। তেমন বড় মা’য়ের টকটকে লাল রঙের বেনারসি। দুজনের চমৎকার কম্বিনেশনের ড্রেস-আপ দেখে, আশেপাশেও নজর গেল। চাচা-চাচী থেকে ধরে সকলে পাঞ্জাবী আর শাড়ি পরেছে। সেইম গোউজ ফর মিষ্টার তন্ময়। তিনিও পাঞ্জাবী পরেছেন। মেরুন রঙের। তার মুখের দিক তাকাতেই গলা শুঁকিয়ে আসলো। তার এই দৃষ্টির জন্যই তো সাজতে ইচ্ছে হয়না আজকাল। তারউপর শাড়ি পরিধান করেছি। ভাবা যায়?
বড় মা’র মুখে আনন্দতা ছুঁয়ে। জ্বলজ্বল চোখে আমার দিক তাকালেন। লজ্জিত কন্ঠে বললেন,
– দেখ, অরু। কী করেছে ছেলেটা। এতবড় ছবি কেউ ফ্রেম করে? তুই আমায় বল।
আবারও তন্ময় ভাইয়ের দিক চোখ গেল । তিনি এখনও আমার দিক চেয়ে। আজ যেন আমার শরীরের সব শক্তি সে কেঁড়ে নিচ্ছে তার চাহনি দিয়ে। লোকটা এমন কেন করছে? হালকা হেসে জবাব দিলাম,
– বাহ রে। এনিভার্সিরি বছরে একবার আসে বুঝলে। এতটুকু কিছুই না।
বড় চাচ্চু বেশ আনন্দে আছেন। কী সুন্দর ভাবে স্ত্রী আর ছেলে’কে নিয়ে দাঁড়িয়ে। তিনজন কে একসাথে চমৎকার দেখাচ্ছে। আইরিন চেঁচাচ্ছে,
– তন্ময় ভাইয়া, ক্যামেরা সামনে। অরু’কে পড়ে দেখে নিও। আপাতত ছবি তুলে যাও, আমরা তুলব।
বড়ো’রা সকলের একসাথে এখানে। কী লজ্জাজনক পরিস্থিতি।
এটা এভাবে বলার বিষয়? লজ্জায় আর মুখ তুলতে সক্ষম হলাম না। আরিফ ভাইয়া এসেছে পাশে। দুষ্টু স্বরে বলতে লাগলো,
– আমরা তো জানতামই না, আমাদের এই ছোট্ট অরু তন্ময়ের
হবু স্ত্রী। আমাদের জানালে না কেন? লুকিয়ে লুকিয়ে দুজন বেশ ছিলে, হু? ভাগ্যিস আম্মু বলেছিল। নাহলে অন্ধকারে রাখতে।
আমি কী কম লজ্জায় ছিলাম? হ্যাঁ? আর কত লজ্জায় পড়তে হবে আজ? আর কী বলতাম? আমি নিজেও জানি না ভালভাবে। আপনাদের কি বলব?
আঁড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
– তেমন কিছুনা।
– বাহ বাহ।
দেখা গেলো আরিফ ভাইয়ের সাথে আইরিন, রুবি আপু এঁরাও এক হলো। সকলে মিলে আমাকে হেনোস্তা শুরু করে দিল।
আইরিন হঠাৎ তন্ময় ভাইয়ের দিক নজর ছুঁড়ে বলল,
– আজ তো অরু গায়ি কামসে। কতক্ষণ যাবত তন্ময় ভাই শুধু অরু’র দিক তাকিয়ে।
এভাবেই বড্ড ভীতু হয়ে আছি। এদের সাথে থাকলে আমার শ্বাস আটকে আসবে। দ্রুত শাড়ির কুঁচি ধরে অন্যদিকে চললাম।
বাবা সামনে। সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। এখনও কতটা ইয়াং দেখাচ্ছে। মনেই হয়না তিনি পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। এখনও চল্লিশে আছেন মনে হচ্ছে। সে একধ্যানে সামনে তাকিয়ে। তার মন কী খারাপ? এমন দেখাচ্ছে কেন? সে কী মা’কে মিস করছেন? আমি দ্রুত বাবার এক হাত চেপে ধরলাম। বাবা হঠাৎ আমাকে দেখে হেসে ফেললেন। বাবা আজকাল খুবই নরম হয়ে গিয়েছেন। আগের তুলনায় বেশি শান্ত কন্ঠে কথা বলেন। কথা বলার সময় সর্বদা মা মা শব্দ ব্যাবহার করেন। সবসময় দেখা হলে, খেয়েছি নাকি জিজ্ঞেস করবে। কোনো সমস্যা হচ্ছে কী না। এই হয়তো বাবার মাঝে বাবা-মা দুজনের ভালবাসা। আবদার ধরলাম,
– ছবি তুলব। আসো।
তাকে একপ্রকার টেনে নিলাম। কাঁধে মাথা রেখে আমরা কয়েক ছবি তুললাম। বাবা বাচ্চাদের মতো হেসে অভিযোগ করছে,
– আমার ছবি তোলার বয়স আছে নাকি? বোকা মেয়ে।
– ইশ। এখনও কত্ত ইয়াং লাগে জানো?
– সেটাতো শুধু তোমার চোখে।
রুবি আপু আইরিন ও মতামত জানালো,
– মেয়েরা হাপুসহুপুস হয়ে আশেপাশে পরে আছে চাচ্চুর জন্য ।
সকলে হাসছে। বাবাও হাসছে। এইতো বাবার মন খারাপ চলে গেলো।
বড় চাচ্চু আর বড় মা যখন কেক কাটছিলেন আমি শক্ত করে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে। এরপর থেকে আমরা মায়ের ছবির সাথে এনিভার্সিরি পালন করব। তাও করব। স্মৃতি থেকে মুছতে দিব না।
বাবা হয়তো আমার চিন্তাভাবনা বুঝতে পেরেছেন। সে দিব্বি হেসে আমার মাথা বুলিয়ে দিলেন। এতকিছুর মাঝে আমি তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকানোর সাহস দেখালাম না। তার নজর আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তার দিক তাকানোর শক্তি পাচ্ছি না।
চাচী, বড় মা চলে যাচ্ছেন। এত শব্দে তাদের মাথা ধরেছে। আসলেই। বক্সের তীব্র আওয়াজে আমার মাথাই তো ঘুরছে।
মদ এনেছে ভাইয়ারা। কত্তবড় সাহস। ছাঁদের এক কোণায় কী সুন্দর করে টেবিল করে রেখেছে। এইসব খাবে এরা? দেখা গেলো একা শুধু উনারা না। বাবা সহ দু-চাচ্চুও খেলেন কিছুটা। কিছুটা খেয়ে বড় চাচ্চু নির্দেশ দিলেন,
– বেশি খেও না। রাত হচ্ছে। দ্রুত শেষ করো এগুলো।
চাচ্চুরা চলে যাচ্ছেন। বাবা আমাকে বললেন,
– আর থেকে কী করবে?
সুযোগ ভালো। চলে যাওয়া উত্তম। কিন্তু কীভাবে যাবো? সয়তান আছে কতগুলো। আইরিন দ্রুত সামনে চলে এলো,
– আরে চাচ্চু। কেমতে? এখনও আমাদের এঞ্জয় করা বাকি।
বাবা হেসে চলে গেলেন। রয়ে গেলাম আমি এদের সাথে। তন্ময়
ভাই সমানে ড্রিংক করে যাচ্ছেন। আরিফ আর রবিন ভাইও করছেন। শুধু ইব্রাহিম ভাই দাঁড়িয়ে। তার সামনে তার নায়িকা।
রুবি আপু কাঁচা খেয়ে ফেলবে ভাইয়াকে। যদি তিনি একটুও খান।
অসহায় ভাবে আইরিন দীপ্তর ঝাকানাকা নাচ দেখছি। দুজন হাঈ বিটে মাত্রাতিরিক্ত ডান্স দিচ্ছে। চোরা চোখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। তিনি আমার দিক তাকিয়ে। যেমন অপেক্ষায় আছেন কখন বলব ‘ আপনি এই হাবিজাবি খাওয়া বন্ধ করুন। ‘।
অথচ আমি বলতে অক্ষম। হঠাৎ তার সাথে চোখাচোখি হলো। শ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ভাবলাম কেটে পড়ি। আজ তার অবস্থা ভালো না।
আবার ড্রিংক করলে তার মাথা ঠিক থাকে না। কিন্তু আইরিন রুবি আপু যেতে দিচ্ছে না।
রাত একটা বাজছে। রবিন ভাই সম্পুর্ন মাতাল। অথচ বেশ নিজেকে দমিয়ে রুমে চলে গেলেন। এদিকে আরিফ ভাইয়েরও অবস্থা একই। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে অক্ষম।
আইরিন ভালোভাবে ধরে নিচে নামাচ্ছে। আর বলছে,
– এটা কোনো কথা? গরু একটা। খায় কেন, না নিতে পারলে।
সকলের মাঝে তন্ময় ভাই দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে বোঝা দায়, তার অবস্থা কেমন। খুব নরমালি ইব্রাহিম ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। তার কি মাথায় চড়ে নি? চড়বে কীভাবে? তিনি তো এগুলো সদা খান। খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে আছেন। নেমে যাই। আজকের মতো বেঁচে গেলাম। কারণ সোজা। ভাইবোন সকলেই ছিলো একসাথে।
এমন মুহুর্তে তার উল্টাপাল্টা কথাবার্তা সাজে না।
নামতে নেবার সময়, তন্ময় ভাই মুখ খুললেন ,
– অরু। তুই থাক।
তার স্পষ্ট শব্দের কন্ঠে রুবি আপু হাসছেন। ইব্রাহিম ভাইয়ের হাত চেপে নিতে নিতে বললেন,
– আমাদের এখানে আর কাজ নেই।
এই প্রথম ওদের সাথে আমিও যেতে নিচ্ছিলাম। ভয় আর অনুভূতি’তে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আছি। পেছন হতে তন্ময় ভাই হাত চেপে ধরলেন। বহু কষ্টে তার দিক তাকালাম। সেই লাগামহীন চাহনি। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? ছাঁদ সম্পুর্ন খালি হতেই তিনি কাছাকাছি আসলেন। শুকনো কন্ঠে বললাম,
– শীত করছে। আমি যাই।
তিনি ছাড়লেন। পরপর গিয়ে সুইচ টিপলেন। সঙ্গে সঙ্গে সকল লাঈটস বন্ধ হয়ে গেলো। চাঁদের আলোয় তাকে দেখা যাচ্ছে।
এই অনুভূতির কোনো নাম আছে? হ্যাঁ। স্রোতশূন্য অবস্থান। তাকে আসতে দেখে পিছু হাঁটলাম। বারবার গলা, ঠোঁট শুকিয়ে আসছে।
পেছনে ছাঁদের শেষ সীমানার দেয়াল। নিজেকে শক্ত করলাম। কিছুটা কেশে বললাম,
– দেখুন, আমি যাই।
ভাজেভাজে থাকা শাড়ি ভেদ করে আমার কোমর ধরে, দেয়ালের সাথে স্পর্শ করালেন। পরপর নিজেও কাছাকাছি আসলেন। তার শরীর থেকে মদের তীব্র গন্ধ।
অথচ তার লাগামহীন হাতের স্পর্শে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছিনা। তার হাত সরাতে চাইলাম। তিনি শক্ত করে ধরলেন।
আমার কোমর কী কালচে করতে চাচ্ছেন? মদ খাওয়ার সাথে কী তার জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছে? ব্যথায় কিছুটা কুঁকড়ে উঠলাম।
বলতে নিচ্ছিলাম,
– ছাড়ুন, প্লি…..’
তার অধর যুগলের তীব্র স্পর্শে সম্পুর্ন কথা অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো। জীবনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে এমন অনুভূতি’তে আমি চমকে রইলাম। তিনি এমন আচরণ কখনও করেন নি। অথচ ভাবনাচিন্তা মাথায় আসছে না। তার মুখের তীব্র মদের টেস্টে কপাল কুঁচকে আসছে। আবার অনুভূতি’তে চোখ ভিজে আসছে।
চলবে
চলবে৷