প্রেয়সী পর্ব ৪+৫

প্রেয়সী
প্রেয়সী

৪|
আমার পিকনিক যাওয়া হলোনা । অথচ সুমনা সেই সেজেগুজে পিকনিক অ্যাটেন্ড করলো। যাওয়ার আগের দিন বাড়ি আসলো,
–‘ ক্যামেরা নিচ্ছি। সব ফিল্ম করে নিয়ে আসব। ‘
মনে হলো, সুমনা আমার কাঁটা দাগে লবণ ছুঁড়ে মেরে চলে গেলো।
যাক। দিন আমারও আসবে।
দু’দিন ছুটি আছে। ভাবলাম নানু বাড়ি ঘুরে আসবো। সাথে রুবি আপুকে নিয়ে যাবো। রুবি আপুর রুমে পৌঁছালাম। সে দিব্বি ধীর গলায় কথা বলছেন। আমাকে দেখতেই ফোন রেখে দিলেন।
–‘ আয়। বস। ‘
–‘ ভাবছিলাম নানু বাড়ি যেতাম। তুমি যাবে? ‘
রুবি আপু আলমারি থেকে কামিজ পছন্দ করতে ব্যস্ত। কয়েকটা কামিজ বিছানায় রেখে বললেন,
–‘ আজ বাহিরে ডিনার হবে। পুরো পরিবার। ‘
বাহিরে ডিনার হবে। ওয়াও। এতো এতো খারাপ সংবাদের
মাঝে , ভালো এক সংবাদ আসলো তাহলে। আনন্দে বুকটা নিমিষেই ঠান্ডা। স্রোতের সাথে একদফা ভাসতে ইচ্ছে করছে। খুশিতে গদগদ হয়ে উত্তর দিলাম,
–‘ সত্যি ? কোনটা পড়বে? ‘
–‘ তুই বলতো। ‘
–‘ পার্পল’টা? এটার সেইম আছে আমার। সাথে কানের দুল, হিলস ম্যাচ করা। ‘
রুবি আপু মানলেন।
–‘ তাহলে এটাই। ‘
আমার আর রুবি আপুর অনেক ড্রেস একই। চাচ্চু বা ভাইয়ারা কিছু আনলে একই এনেদেন প্রায়। সদা না। মানে মাঝেমধ্যে।
আবার আমি আর রুবি আপু যেচেও একই বানিয়ে ফেলি।

বিকেলে দীপ্ত আসলো রুমে। অসহায় চোখে আমার দিক
তাকালো। আমি হেসে ফেললাম। চুলগুলো খোঁপা করতে
বললাম,
— ‘ কী হয়েছে জনাব? ‘
দীপ্ত ফিসফিসিয়ে বলল,
–‘ তন্ময় ভাইয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ‘
আমি অবাক হলাম সাথে হাসিও পাচ্ছিলো। ছেলের জন্য বাড়িতে প্রস্তাব? নিশ্চয়ই কোনো গাঁধি মেয়ে দেওয়ানী হয়েছে।
–‘ নতুন কি। তা এবার কে নিয়ে এসেছে? ‘
দীপ্ত অসহায় ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
–‘ পুলিশ অফিসার আশিকুর রহমানের একমাত্র মেয়ে নিশির
জন্য। আশিকুর রহমান এবং তার বড় ভাইও এসেছিলেন। কি পরে এসেছেন জানো? ‘
আমি দ্রুত দীপ্তর পাশে বসলাম। আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
–‘ কি পরে? ‘
–‘ লুঙ্গি রে বাবা। সাদা লুঙ্গির নিচে লাল জাঙিয়া । ‘
দীপ্ত হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তারপর হঠাৎ নিজেকে সিরিয়াস করে উঠে বসলো,
–‘ এমন পরিবারে ভাই বিয়ে দিব না। দেখা যাবে আমার ভাইয়াকেও সাদা লুঙ্গির নিচে লাল জাঙিয়া পড়িয়ে দিবে। ‘
অনেক কষ্ট করে হাসি থামাতে পারলাম না। তন্ময় ভাই আর লুঙ্গি, জাঙিয়া?
–‘ বতারপর? চাচ্চুরা কি বললেন? ‘
–‘ এতো এক্সাইটেড যে? তন্ময় ভাই রাজি হবেন না। ‘
–‘ তুই বল চাচ্চুরা কী বলেছেন? ‘
–‘ বলেছেন তন্ময়ের সাথে কথা বলে জানাবেন। ‘
ইশ। নিশি আপু সেই সুন্দরী। মাঝে মাঝে দেখা যায় গাড়ি করে ভার্সিটি যাচ্ছেন। উফ, ওয়েস্টার্ন পরে যখন বেরোয় না। মাশাল্লাহ। এতো সুন্দর মেয়েটাও তন্ময় ভাইকে পছন্দ করেন? আমার বেশ অবাক লাগছে। কি এমন দেখতে সে? সবাই এমন আহ্লাদী কেন তার ব্যাপারে?
অবশ্য তন্ময় ভাই রাজি হলে খাপে খাপ একদম। এমন ভাবী পেলে তো কপাল খুলে যাবে।
দীপ্ত দ্রুত পায়ে যেতে যেতে বলল,
–‘ যাচ্ছি আমি। হোমওয়ার্ক এখনই শেষ করতে হবে। সন্ধ্যায় তো যেতে হবে। ‘

সন্ধ্যা হওয়ার আগে বড় মা চেঁচামেচি করতে লাগলেন। বারবার করে বলছেন,
–‘ সাত’টায় বেরোতে হবে। এখনই তৈরি হয়ে নে যা। ‘
অথচ রুবি আপু আর আমি দিব্বি সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত। আমি আগ্রহী গলায় বললাম,
–‘ আজ মনে হয় প্রপোজ’টা করেই ফেলবে। ‘
–‘ এমন হিরো পেলে তো একদ…’
মা টিভি বন্ধ করে দিলেন।
–‘ দীপ্ত’কে দেখ। কি সুন্দর তৈরি হয়ে সোফায় বসে। তোদের তৈরি হতে লাগবে সারাদিন। যা এখনই। ‘
–‘ প্রপোজাল চলছে মা। আরেকটু। ‘
মা রিমোর্ট নিয়ে চলে যাচ্ছেন। রুবি আপু বললেন,
–‘ দেখে ফেলবোনি নেটে। ‘
–‘ ধুর! এই ধকধক ফিলিং টা কি তখন হবে? ইশ।’
রুমে পৌঁছে ঘড়ি দেখলাম। পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ। তন্ময় ভাই বলেছেন সাত’টায় বেরোবেন। তার মানে একদম সাতটা। নড়চড় হওয়া যাবেনা। ফ্রেস হয়ে আমি ফেইস প্যাক লাগালাম। গুনগুন করতে করতে রুমের বাহিরে, উঁকি দিতেই দেখলাম তন্ময় ভাই এসেছেন। শার্ট খুলতে খুলতে রুমে ঢুকছেন। এসেছে নায়ক আলী। জঙ্গল। আমি দ্রুত ভিতরে ঢুকে গেলাম।

হাতে হিলস নিয়ে রুবি আপু রুমে আসলেন। বিছানায় বসে হিলস পরতে নিয়ে, অসহায় গলায় বলছেন,
–‘ অরু। আমার এক চোখের আইলাইনার একটু বাঁকা হয়েছে। ‘
চুল স্ট্রেইট করতে গিয়ে জবাব দিলাম,
–‘ বোঝা যাচ্ছেনা। ‘
–‘ আজ আমি হেয়ার কার্ল করেছি। কেমন দেখাচ্ছে? মেকআপ ঠিকাছে? ‘
–‘ মাশাল্লাহ। ‘
–‘ দ্রুত কর মা চেঁচাচ্ছেন। ‘
আমি ঘুরতেই রুবি আপু চেঁচালেন।
–‘ দ্রুত। ‘
এই হচ্ছে এক জ্বালা। ইনার দ্রুত হলে আমার মাথা খেয়ে দিবে। আররে আমারও তো হতে হবে। হিলস পরতে গিয়ে মনে পড়লো, আমার পায়ে ব্যাথা। এখন? থাক। তাও হিলস পরতে হবে। হিলস না পরলে আমাকে লাগবে একটু। আমার চোদ্দগুষ্টি লম্বাচওড়া। আমিই হয়েছি শর্ট৷ রুবি আপু ফাইভ’ সিক্স। আর আমি ফাইভ’থ্রি। হিলস না পরলে আমাকে দেখা যাবে? অবশ্য গাড়িতে যাবো আসবো। এতটা ব্যাথা পাওয়ার কথা না।
নিচে নেমে দেখলাম তন্ময় ভাই দাঁড়িয়ে। আমার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাহিরে চলে যাচ্ছেন। যা, জাহান্নাম চলে যা।
রবিন ভাই, দীপ্ত, চাচ্চুরা তৈরি হয়ে সোফাত বসে। এখন শুধু চাচীরা আসা বাকি। রুবি আপুও সোফায় বসলেন,
–‘ আমাদের সাথে ঘ্যানঘ্যান করে, এখন নিজেদেরই দেরি। বাহ। কি চমৎকার। ‘
পরপরই উঠে বাহিরে চলে যাচ্ছেন। আমি সোফায় বসলাম। শয়তান বাহিরে। যাওয়া যাবেনা। বড়দের সাথে যাবো। চাচীরা আসলেন আরও কিছুক্ষণ পর।
বড় মা শাড়ি পরেছেন। হিজাবের পিন লাগাতে লাগাতে বললেন,
–‘ চল চল। ‘
পরপর মা আর ছোট চাচীও হাজির।

তন্ময় ভাই জানালেন সেই গাড়ি নিবেননা। বাইক ব্যবহার করবেন । এভাবে কিন্তু সে বছরেও বাইক ব্যবহার করেন না। আজ নবাবজাদা’র অন্য প্ল্যান। আমি গাড়িতে উঠতে যাবো, তখন রুবি আপু বললেন,
–‘ তন্ময়ের সাথে যা। ‘
আমি আকাশ থেকে পরলাম। মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাথর আমার মাথায় ফালানো হলো।
–‘ আশ্চর্য, কেন? না আমি গাড়িতে যাবো। ‘
বড় আব্বু রাজি হলেন,
–‘ আচ্ছা, থাক। দীপ্ত যাক তন্ময়ের সাথে। ‘
গাড়িতে উঠছি না দেখে রুবি আপু তাড়া লাগালেন,
–‘ অরু গাড়িতে যাবেনা মনে হচ্ছে। ‘
এদিকে পেছন হতে হাত চেপে তন্ময় ভাই। নাহলে কখন বসে পরতাম। শরীর শিরশির করে উঠছে। দ্রুত শ্বাস নিতে হচ্ছে। ভয় পাচ্ছি না না হার্টএট্যাক করবো? সাহস নিয়ে তার দিক ফিরতেই
আমাকে ‘ খেয়ে ফেলবো ‘ লুক দিচ্ছেন। গাড়িতে উঠছি না দেখে দীপ্ত বলল,
–‘ আপু বাইকে যাবে। ‘
ব্যস। রবিন ভাই গাড়ি স্টার্ট দিলেন,
–‘ দ্রুত চলে আয় তন্ময়। ‘
তারা চলে যাচ্ছেন। আমাকে রেখে গেলেন শয়তানের সাথে। ভয়ে আমার হার্টবিট দীর্ঘ গতিতে চলছে। নিজেকে শান্ত করা খুব মুশকিল। আজ হাইট স্পষ্ট মাপা গেল। আমি উঁচু জুতা পরে তন্ময় ভাইয়ের বুক পর্যন্ত পড়ি। দারোয়ান কাকা এগিয়ে আসলেন,
–‘ আজ হঠাৎ বাইক? ‘
সে আমার দিক তাকালেন।
–‘ মনে রঙ লাগছে। ‘
বলতে বলতে সিগারেট ধরালেন। মূহুর্তে আমার চোখমুখ কুঁচকে গেলো। দারোয়ান কাকা হাসছেন,
–‘ এই রঙ তো তুমাগো লাইজ্ঞা। আমাগো ও তো ছিলো। সেগুলো ছিলো রঙিন দিন। তা কে লাগাইলো মনে রঙ? ‘
আমার মাথাটা ধরে গেলো। এইসব নষ্ট কথা আমার সামনে।
নানা আমার দিকা তাকালেন,
–‘ সুন্দর লাগতাছে মহামুনি। ‘
আমি হাসলাম,
–‘ ধন্যবাদ কাকা। ‘
–‘ দেরি হহইতাছে। যাও যাও। ‘
বলতে বলতে কাকা চলে যাচ্ছেন। তন্ময় ভাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন। এ কেমন লোক? এর সমস্যা কি? উফ। বললাম,
–‘ আমাকে দিয়ে আসুন। তারপর যেটা ইচ্ছে সেটা করুন। ‘
কথা কানেই নিলো না যেমন। আমি কড়াকড়ি চোখে তার দিক তাকিয়ে। অথচ সে তাকাতেই অন্যদিক ফিরে গেলাম।
কি আর করার দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। রাস্তার হেডলাইট আর মেইন গেইটের আলোয় আশপাশ রঙিন। আমাদের বাড়ির আশেপাশে দোকান নেই। একদম ফাঁকা। শুধু সামনে বাড়ি। আর আমাদের বাড়ির পেছনে। এভাবে কলেজের সামনে যাবার পথে অনেক দোকান পড়ে। নানান স্টল এবং হাবিজাবি।

তন্ময় ভাই বাইক স্টার্ট দিলেন, সিগারেট শেষ করে।
–‘ উঠ। ‘
সাবধানে উঠে বসলাম। না চাইতেও হাত দুটো তার ঘাড়ে রাখলাম। তার শরীরের থেকে পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। এই পারফিউমের ঘ্রাণ আমার খুব পছন্দের। আর সে সদা এটাই ব্যবহার করেন। বাহ। আমি আরও কয়েক একাধারে শ্বাস নিলাম।
খেয়াল করলাম, তন্ময় ভাই কেমন ধ্যান মেরে বসে।
–‘ শক্ত করে বস। ওড়না ভালভাবে পেঁচিয়ে নে। ‘
আমি ওড়না চুলসহ মাথায় পেঁচিয়ে ফেললাম।
–‘ নিয়েছি। ‘
বাইক চলছে। ঠান্ডা বাতাসে শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। চারপাশ কেমন নিমিষে পিছনে চলে যাচ্ছে। হেডলাইটের আলোয় পরিবেশ হলদে। চোখ লেগে আসছে। তন্ময় ভাইয়ের শান্ত আওয়াজ,
–‘ সমস্যা হচ্ছে? ‘
–‘ উঁহু। ‘
এমন সুন্দর ভাবে কথা বলছে কেন? তন্ময় ভাইয়ের এমন শান্ত আওয়াজ আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। আমি ঠিক তার শান্ত কন্ঠ এবং ভালো ব্যবহার, প্রচন্ড ভয় পাই। প্রচন্ড।
গাড়ির স্পিডের পরিনতি হচ্ছে, আমার বেসামাল ব্যালেন্স। কেমন বারবার তার উপর পড়ছি। লজ্জায় আমার মুখ গরম হয়ে উঠলো। হাত দুটো তার পিঠে রাখলাম। বাইক কী আরেকটু সুন্দর ভাবে চালানো যায়না?

গাড়ি পার্ক করে, তন্ময় ভাই আগে আমাকে নামতে সাহায্য করলেন। ভেতরে গিয়ে দেখা হলো, তন্ময় ভাইয়ের পরিচিত এক বন্ধুর সাথে যাকে আমি চিনিনা৷ লোকটা আমার দিক তাকিয়ে হাসলো। ধীরে বলল,
–‘ তুর প্রেয়সী নাকি? ‘
আমি হতবাক। আরও হতবাক তন্ময় ভাইয়ের জবাব না দেয়ায়। সে বেশ বলল,
–‘ পরে কথা হচ্ছে। ‘
আমার দিক তাকালেন,
–‘ আয়। ‘
আমি লোকটার দিক আঁড়চোখে তাকিয়ে, তন্ময় ভাইয়ের পিছু চললাম। টেবিল দোতলায় বুক করা হয়েছে। আরও হাঁটতে হবে। আমার পা আসলেই ব্যাথা করছে। আমার ধীর হাঁটা দেখে, সেও থেমে গেলেন। পরপর হাত ধরে তার সাথে নিয়ে চললেন। আজ কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার। লজ্জাবোধ। আর অদ্ভুত অনুভূতি। আমি আঁড়চোখে আমাদের হাতের দিক তাকিয়ে।
হচ্ছে কি আমার?

চলবে

® নাবিলা ইষ্ক
৫|
এই রেস্টুরেন্টের ছাঁদ’টা খুবই আকর্ষণীয়। মনোরঞ্জনের সঠিক স্থান। মুহুর্তে মন ফুরফুরে হওয়ার টনিক। রুবি আপুর জন্মদিনে আসা হয়েছিলো। সাধারণত রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারীর সাথে বড় চাচ্চুর ভালো সম্পর্ক। চাচ্চু মেয়রের পদ পাওয়ায়, বাড়িতে অনুষ্ঠান ধার্য্য করা হয়েছিলো। সেদিন স্বত্বাধিকারী বাড়ি আসেন, বউ আর মেয়ে নিয়ে। তারা দেখতে মাশাল্লাহ। সেদিনই তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠে সকলের। আমাকে তো সেবা’র জন্মদিনের গিফট ও পাঠিয়েছেন। মা, মা ছাড়া একটা সেন্টেন্সও শেষ করেন না।
তাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে, ইনভাইটেশন সহ সে চলে আসেন।
এভাবে তার ব্যবহার খুবই ভদ্র। এইযে আপাতত সে বড় চাচ্চুর সাথে কথা বলছে। তো আবার ছোট চাচ্চুর সাথে। তন্ময় ভাইয়ের সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছে।

খাওয়া শেষ হতেই রবিন ভাইকে ধীরে বললাম,
–‘ ভাইয়া। চলো ছাঁদে যাই । ‘
ভাইয়া রাজি হলেন। সাথে রুবি আপু আর দীপ্তও আসলো। পূর্ববর্তীর তুলনায় এবার আরও আকর্ষণীয় ছাঁদটি। হরেকরকমের লাইটিংস দ্বারা ঝলমলে। বসার জন্য নানান ধরনের ডিজিটাল সিটিং বস্তু। উজ্জ্বলতম চাঁদের সম্পুর্ন অপরুপ দৃশ্য। ঘন্টার পর ঘন্টা এই চাঁদের দৃশ্যে, নিখোঁজ হওয়া যাবে।
রুবি আপু ঝুলন্ত সোফায় বসে, সেলফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
–‘ কয়েকটি ছবি তুল। সুন্দর ভাবে। ‘
দু’তিন ভাবে তুলতেই, দীপ্ত বলল,
–‘ সবাই মিলে তুলি? ‘
যথাযথ সময় তন্ময় ভাই হাজির। সাথে তার সেই ভদ্রলোক বন্ধু। ভদ্রলোক এসে সবাইকে সালাম জানালেন। রবিন ভাইয়ের সাথে বেশ কথা বললেন। মনে হলো তারা পরিচিত। এবং তার নামও জানালেন, ইব্রাহিম হোসেন।
আমি আঁড়চোখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। সে কথা বলতে ব্যস্ত। এভাবে কখনও তাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কারণ ইচ্ছেই জাগেনি। আমাকে এতটা জ্বালায় যে তাকে অসহ্য লাগে। তার ভালো দিক গুলো দেখেও যেমন দেখিনা। নিষ্ঠুরতার চুরান্ত সে। ভাবতে ভাবতে, চোখ গেলো রুবি আপুর উপর। তার পরিস্থিতি তেমন ঠিক লাগছেনা। অদ্ভুত ভাবে এতক্ষণের চঞ্চল মেয়েটি একদম শান্ত। আঁড়চোখে মাত্র আসা ভদ্রলোকটির দিক তাকাচ্ছেন। ভদ্রলোকও তাকাচ্ছেন। সন্দেহ হচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই একে অপরকে জানেন। দুজনের চোখে চোখে কথা বলা, ধরা পড়ছে।
আমি আরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। গন্ডগোল তো রয়েছে এখানে।
আমার গোয়েন্দাগিরি বন্ধ হলো দীপ্তর জন্য। বদমাইশটা সেই ভদ্রলোকের হাতে সেলফোন ধরিয়ে দিলেন,
–‘ আমাদের একটা গ্রুপ ফোটো তুলে দিন প্লিজ। ‘
ভদ্রলোক হেসে ফেলল,
–‘ শিয়র। ‘
দীপ্ত সামনে। আমি আর রুবি আপু দীপ্তর দু’পাশে। আমার পেছনে তন্ময় ভাই দাঁড়ালেন। রুবি আপুর পেছনে রবিন ভাই। রবিন ভাই রুবি আপুর কান টেনেও ছুবি তুললেন। অথচ, আমি ভয়ে এক ভাবেই দাঁড়িয়ে। বলতে ইচ্ছে হয়না, তাও না বলে উপায় নেই। সত্যি বলতে, আমি তন্ময় ভাইকে প্রচুর ভয় পাই। তার চোখে চোখ রেখে কখনও কথা বলেছি বলে মনে হয়না। সামনাসামনি খুবই সাহস দেখাই, কিন্তু আড়ালে আমি এক ভয়ংকর ভীতু। খেয়াল করলাম
ভদ্রলোক, তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকিয়ে ছবি তুলেই যাচ্ছেন।
কেমন বৈচিত্রময়। ধুর, ভাবলাম আর তুলবো না।
তখনই কোমরে স্পর্শ পেলাম। শ্বাস আটঁকে, আমি হতবাক চোখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। সে যথাযথ পূর্ব হতেই আমার দিক তাকিয়ে। সরতে চাইলে সে শক্ত ভাবে ধরলেন। ভয়ে আশপাশে চোখ বুলালাম। রবিন ভাই, রুবি আপু, দীপ্ত ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমার শরীর কাঁপছে। শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য নিতেই ভুলে গিয়েছি মনে হলো। কপাল হতে ঘাম ছুটছে।
রুবি আপু এদিকে আসতেই সে ছেড়ে দিলেন। এবং তার বন্ধুর দিক চলে গেলেন। আমার এমতাবস্থা দেখে রুবি আপু প্রশ্ন করলেন,
–‘ কী হয়েছে?’
কোনোভাবে জবাব দিলাম,
–‘ কিছু না। ‘
আমার আর সাহস আসলো না একা দাঁড়ানোর। দ্রুত দীপ্তর কাছে চলে আসলাম। যতক্ষণ ছাঁদে ছিলাম, দীপ্তর হাত ধরে ঘুরেছি। একপর্যায়ে মনে আসলো, যাবার পথে কি আবারও তার সাথে যেতে হবে? না না। আমি গাড়িতে যাবো। এবার ভেবে রেখেছি দ্রুত গাড়িতে উঠে বসব। কারও কথা শুনবো না।

আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। আলোকিত চাঁদ’টি লুকিয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হবে নাকি? তখনই ছোট চাচ্চু আসলেন। এবং তাড়া লাগালেন,
–‘ আকাশ ভালো না। বৃষ্টি হতে পারে। বাড়ি ফিরবো। ‘
যথাযথ সবাই নেমে গেলাম। যেকোনো মুহুর্তে বৃষ্টি হবে।
এভাবে আমার বৃষ্টি অনেক পছন্দের। অন্যরকম পছন্দের অনুভূতি রয়েছে বৃষ্টিতে। ভাবলাম বাড়ি ফিরতে হবে দ্রুত। গোসল’টা বৃষ্টিতে করা যাবে তাহলে।
গাড়িতে আগে উঠা হলোনা। কারণ, তন্ময় ভাই আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন,
–‘ উঠবি না। ‘
গড়িতে বসে, দীপ্ত আমার দিক তাকিয়ে হেসেই চলেছে। এ এভাবে হাসছে কেন? রুবি আপু বললেন,
–‘ অরু। রোমান্টিক ওয়েদার কিন্তু। অনুভব করতে করতে আয়। ‘
কীসব বেক্কল কথাবার্তা। রোমান্টিক ওয়েদার উপভোগ করতাম? তাও আবার জঙ্গলের সাথে? আমার উত্তরের পূর্বে দীপ্ত আবারও বলল,
–‘ ভাইয়া এটাকে বেঁচে দিয়ে আসবা। যত পাবা ফিফটি ফিফটি। ‘
তন্ময় ভাইয়ের জবাব নেই। অথচ, ওরা গাড়িতে বসে আমাকে নিয়ে মজা করছে। দিন কী আমার আসবে না? আসবে।
বড় চাচ্চু যাবার আগে বলে গেলেন,
–‘ দ্রুত আয়, বৃষ্টি হবে। ‘
গাড়ি চলে যাচ্ছে। আমি অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলাম। কী হচ্ছে আমার সাথে? দীপ্ত বেশ হাত নাড়াচ্ছে।
পরপর সেই ভদ্রলোকও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাবার পথে বলে গেলেন,
–‘ আবার দেখা হবে। আসি। ‘
বাহ। আচরণ তো ভালো। এখন লোকটা ভালো হলেই হচ্ছে।

বাইক চলছে। এবার বাইকের গতি মাঝামাঝি। বেশিও না আবার কমও না। হালকা ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো দুলছে। আকাশ ডাকছে। সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ৷ হলদে হেডলাইটের আলোয় বৃষ্টি এক অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়েছে জেন। চারপাশ আবেদনময়ী বৈচিত্র্যে ঘিরে ফেলেছে। বৃষ্টির ফোঁটায় আশপাশের গাছগাছালি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আলোয় বৃষ্টির একেক ফোঁটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কেমন ধীরে শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। আবার নিমিষেই শরীরে মিশে যাচ্ছে।
আমি ধীরে এক হাত মেলে দিলাম। হাতের তালুতে বৃষ্টির ফোঁটা জমা হচ্ছে। সে কী সুন্দর দৃশ্য। সে কী অদ্ভুত সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য সদা ছুঁতে ইচ্ছে হয়, প্রাণ ভরে দেখতে ইচ্ছে হয়।
ছাতা হাতে মানুষজন চলে যাচ্ছে। গাড়ি চলাফেরা কমে আসছে। রাস্তা শুন্যে পরিনত হচ্ছে। হঠাৎ কয়েকজন দেখা যাচ্ছে, স্টলের পাশে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে।
তন্ময় ভাইয়ের শার্ট অনেকাংশে ভিজে আছে। আমার তুলনায় সে বেশি ভিজেছে। বৃষ্টি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। শরীরে বৃষ্টির স্পর্শও তীব্র হচ্ছে। চোখ আদুরে ভাবে নিভে আসছে আমার।
ঁক আরও কিছুটা যেতেই, এক বন্ধ হোটেলের সামনে বাইক থামালেন।
ইশারা করলেন হোটেলের সামনে দাঁড়াতে। আমি যেতে নিয়েও থামলাম। তার সেলফোন, ওয়ালেট, ওয়াচ ভিজে যাচ্ছে। নষ্ট না হয়ে যাবে? আমার ব্যাগে রাখলে সুরক্ষিত থাকতো। সাহস সঞ্চয় করলাম,
–‘ সেলফোন, ওয়ালেট ভিজে যাচ্ছে না? আমাকে দিতে পারেন। ব্যাগে রাখা যাবে। ‘
সে আমার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে, সত্যিই দিয়ে দিলেন। সে দিবে তার আসা আমি একদমই রাখিনি। সেলফোন ব্যাগে রাখতে রাখতে প্রশ্ন করলাম,
–‘ হ্যান্ড ওয়াচ? ‘
তার জবাব,
–‘ ওয়াটারপ্রুফ। ‘
তাহলে আর কী। দ্রুত গিয়ে হোটেলের নিচে দাঁড়ালাম। ঠান্ডা লাগতে শুরু করেছে। কামিজ শরীরে মিশে আছে। আমি ওড়না মেলে পুরো শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম। উফ। এই বৃষ্টির মাঝে সুন্দর এক ছবি তোলা যেতো। রুবি আপু থাকলে ভালো হতো।
বাইক রেখে সেও এসে দাঁড়ালেন। দু’হাতে চুল ঠিক করলেন। এবং পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ আমি চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকালাম।
রাস্তা নির্জন প্রায়। ছাতা হাতে কয়েকজন যাচ্ছে। আমি কিছুটা এগিয়ে হাত বৃষ্টি’তে দিলাম। হাতে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে। একেকটা ফোঁটা এবার বরফ মনে হচ্ছে। কী সাংঘাতিক ঠান্ডা।
মন শীতে দিশেহারা হয়ে আছে। এই সময়ে হাতে কফি নিয়ে, বারান্দায় বসে থাকাটাও মজার। খেয়াল করলাম তন্ময় ভাই আমার দিক তাকিয়ে। আমি সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠছে এই ঠান্ডা’তেও। সাধারণত এই লজ্জাবোধ আমার আগে আসেনি। ইদানীং কেমন জেন হয়ে যাচ্ছি।
তন্ময় ভাই একদম আমার পাশে দাঁড়িয়ে। মনেই হচ্ছে না সে বৃষ্টিতে আটকে। বরং সে খুবই সৌখিনতায় দাঁড়িয়ে। এদিকে আমি উশখুশ করছি। বাড়িতে ভিজতে পারলে, বেশি মজা হতো। রুবি আপু ভিজতো তারপর দীপ্ত। ইশ।

সময় চলে যাচ্ছে। তাও বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না। ঠান্ডায় আমার হাঁচি উঠছে। তন্ময় ভাই আমার দিক তাকিয়ে। লাগাতার হাঁচি দেখে সে বললেন,
–‘ ঠান্ডা লেগে যাবে। বৃষ্টি আপাতত থামবেনা। ভিজে যেতে পারবি? ‘
–‘ হু। ‘
তারপর তীব্র বৃষ্টির মাঝে আবারও, বাইক চলতে শুরু
করেছে ভেজা রাস্তায়৷ সাথে সাথে হালকা শুঁকানো শরীর, আবারও বৃষ্টির স্পর্শে ভিজে। ঠান্ডা বাতাস এবার শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে। ভয়ানক শীতে, ঠোঁট রীতিমতো কাঁপছে। শরীর কাঁটা দিয়ে উঠেছে। অনেকক্ষণ যাবত ভেজা কাপড়ে ছিলাম বিদায়, এমন ভয়ানক শীত লাগছে। অথচ তন্ময় ভাইয়ের শরীর গরম। তার কাঁধে রাখা আমার হাত দুটো ঠান্ডা অনুভব পাচ্ছে না। তার কী শীত লাগছে না? তার ছোট ছোট চুল হতে পানি পড়ছে। শার্ট ভিজে চিপচিপে। শার্ট ভেদ করে তার শরীর দেখাচ্ছে। ফরসা শরীর। এহ। কী দেখছি। আস্তাগফিরুল্লাহ। কী ভাবছি। দ্রুত আবারও রাস্তায় তাকালাম।
অনেক ঠান্ডা শীত, কিন্তু অনুভূতি গুলো খুবই নতুন। একদম বাজে অনুভূতি বলা যাবেনা। এটা জেন এক অজানা অনুভূতি। যা আগে কখনও উপভোগ করিনি। সম্পুর্ন ভিন্ন এবং অচেনা।

বাড়িতে পৌঁছাতেই সকলের চেঁচামেচি।
–‘ ভিজেছিস কেন? আশপাশে কি দাঁড়ানো যেতো না?
জ্বর বাধলে কি অঘটনটাই না হবে। ‘
বড় মা এই আমাকে ধরছে তো এই তার ছেলেকে। তন্ময় ভাই ধপধপ পা ফেলে উপরে চলে গেলেন। বড় মা চেঁচাতে চেঁচাতে রান্নাঘরে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই এখন তার জাদুর চা’টা বানিয়ে ফেলবেন। যেটা খেলে নাকি জ্বর, ঠান্ডা, কাশি এবং মাথা ব্যাথা গায়ের হয়ে যায়। সত্যি বলতে এটা বড় মা’র ধারণা। আমার না। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, গোসল দিয়ে ঘুম দিব একটা। তখনও বাহিরে তীব্র দ্বারায় বৃষ্টি চলছে। আজ বৃষ্টি থামার নয়।
গোসল সেরে বেরোতেই রিংটোনের শব্দ পাচ্ছি। হঠাৎ মনে আসলো তন্ময় ভাইয়ের, সেলফোন এবং ওয়ালেটের কথা। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে সেগুলো বের করলাম। সাহেবের ফোন বাজছে। ইশান নামের কলার। এটাই সেই ইশান যেটা আমাকে রাস্তায় পেলেই বলবে,
–‘ আপু কী কাজে যাচ্ছেন? আমায় বলুন করে দি। ‘
তারপর এটার গোয়েন্দা সভাব তো আছেই। রাস্তায় পেলেই, যখন তখন ফোন সামনে এনে বলবে,
–‘ ভাই কলে। কথা বলুন আপু। ‘
এতো মধুর হাসি দিয়ে বলবে, যেমন তার ভাই আমাকে মধুস্বর শোনাবে। অসহ্য।
কল আপনাআপনি কাঁটতেই চোখ গেলো, তার লকস্ক্রিনে। কিছুক্ষণের জন্য আমার চোখ দুটো ঝাপসা। এটা তো আজকের ছবিটি। যেখানে, আমি হতবাক চোখে তার দিক তাকিয়ে, আর সে আমার দিক। তার হাত আমার কোমরে সেটা স্পষ্ট দেখাচ্ছে।
মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। এই ছবিটি নিশ্চয়ই ওই ভদ্রলোক তুলেছেন? কি লজ্জাজনক। এমন উদ্ভট ছবি সে এভাবে দিয়ে রেখেছে? কেউ দেখলে কি ভাববে। নাউজুবিল্লাহ।
আমার চোখ আবারও ছবিটির দিক। তিনি এমন ছবি কেন রেখেছেন, তাও এভাবে? ভয়ে আমার গলা শুঁকিয়ে আসছে। বুক ধুকপুক করছে।
ফোনটা দ্রুত বিদেয় করতে হবে। দীপ্ত’কে ডেকে ওর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম, সেলফোন আর ওয়ালেট। উনার আশপাশ যাওয়া যাবেনা। কি অদ্ভুত। যদি বাড়ির কেউ দেখে ফেলে? কি হবে?
লজ্জায় আর ভয়ে আমি লাফ দিয়ে বিছানায়। বিছানায় শরীর ছুঁতেই ঘুমে চোখ বুঝে আসছে। আপাতত ঘুম বড্ড প্রয়োজন।

চলবে

® নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here