________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
______ #পর্বঃ১০(শেষ পর্ব)______
রমজান ডনের আস্তানায় আসার পর, কাশেমকে আন্টি সাজিয়ে নিয়ে গেলাম ডনের সামনে। ডন তাকে দেখে আন্টি ভেবে লজ্জা পেতে শুরু করলো। আমি তখন বললাম, ‘রমজান ভাই কি খুব লজ্জা পাচ্ছেন আন্টিকে?’
রমজান ভাই আরো বেশি লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেললো। হাতের শাহাদাত আঙুলের মাথাটা আলতো করে কামড়ে ধরে ডন বললো, ‘যাহ, কী বলো তুমি ওর সামনে?’
-বুঝেছি, লজ্জা পেয়েছেন আপনি। এখন কথা বলুন আপনার জানুর সাথে।’
-ও কি আমাকে ভালোবাসে?
-হ্যাঁ ভালোবাসে। রফিক সাহেবকে ছেড়ে আপনার জন্য চলে এসেছে একেবারে।
-আর মোটকু?
-কোনো মোটকু/তোটকুকে ভালোবাসে না আন্টি, শুধু আপনাকে বাসে।’
-সত্যি?
-সত্যি, কথা বলেই দেখুন।’
রমজান ভাই কাশেমের সামনে গিয়ে বললো, ‘ওগো ও যা বলছে তা কি সত্যি?’
কাশেম আন্টির কণ্ঠ নকল করে বললো, ‘হ্যাঁ গো, সত্যি….’
পাশে রশি দিয়ে মোটকুকে বাঁধা হয়েছিলো। কাশেমের কথা শুনে সে বাচ্চার মতো ব্যা ব্যা কান্না শুরু করে দিলো। রমজান ভাই তার সামনে গিয়ে পেটে কয়েকটা ঘুষি মারতে গিয়ে থেমে গেলো। হয়তো আগের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেছে তার। আবার যদি সে দূরে পড়ে যায়! তাই আমাকে কাছে ডাকলো রমজান ভাই। বললো, ‘তুমি ওরে একটু চড়, থাপ্পড় মেরে থামাও তো, আমি মারলে আবার ও মরে যেতে পারে।’
-হুমমমম ঠিক বলছেন রমজান ভাই, আপনার মার ও হজম করতে পারবে না। আপনি আন্টির কাছে যান, এই মোটকুকে আমি দেখছি।’ বলেই আর থামলাম না, মোটকুর দুই গালে এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড় বসালাম কয়েকটা। কান্না থেমে গেলো তার। একদম শান্ত বাচ্চার মতো চুপ হয়ে রইলো।
ওদিকে রমজান ভাই কাশেমের সামনে মুখটা নিচু করে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো, ‘ওগো আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি?’ বলেই আর অপেক্ষা করলো না, কাশেমকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরতে গেলো। কাশেম একপাশে সরে গিয়ে বললো, ‘ছিঃ ছিঃ বেশরম! আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি।’
-ও তাইতো? স্যরি…. আচ্ছা তোমার মুখ থেকে ঘোমটাটা একটু সরাও না?’
-না গো, বিয়ের আগে আমি মুখ দেখাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে বিয়ে হোক, তারপর….
-ওহ, তাইলে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে।
-কিন্তু আমার বর্তমান স্বামী, ওর কী হবে? ওর সাথে তো ডিভোর্স হয়নি…..’
-ওর ডিভোর্স লেটার আনার ব্যবস্থা করতেছি….
-কিন্তু কীভাবে? তুমি তো ওর সামনে যেতে ভয় পাও?
-কী বললা তুমি? আমি ভয় পাই? এই রমজান ডন ভয় পাই? দাঁড়াও, আমার লোকেরা ওর হাত থেকে ডিভোর্স লেটার নিয়ে আসবে।’ বলেই রমজান ডন আমার কাছে আসলো। অতিরিক্ত বেটে হওয়ায় ও একটা চেয়ার টেনে ওটার উপর দাঁড়ালো, তারপর আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো, ‘রানা, তুমি আমার জানুকে আমার কাছে নিয়ে এসেছো, এবার ডিভোর্স লেটারটাও এনে দাও। আমার মনে হয় তুমি পারবে।”
আমি ইচ্ছে করেই গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে, ডিভোর্স…..’
কথাটা শেষ করতে পারলাম না, রমজান ডন আমার মুখটা চেপে ধরে বললো, ‘আস্তে বলো, আস্তে….. ও শুনে ফেলবে তো তোমাকে দিয়ে কাজটা করাচ্ছি আমি।’
আমি নিজেকে সামলিয়ে রমজান ভাই এর কানেকানে বললাম, ‘ঠিক আছে রমজান ভাই, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আমি যাচ্ছি ডিভোর্স লেটার নিয়ে আসতে। কিন্তু একটা শর্তে…..’
-কী শর্ত?
-স্নেহাকে নিয়ে যেতে দিতে হবে আমার সাথে।
-আরে নিয়ে যাও, স্নেহাকে নিয়ে যাও, মোটকুকে নিয়ে যাও, সবাইকে নিয়ে যাও, আমার আর কাউকে চাইনা। আমি আমার জানুকে পেয়ে গেছি। তুমি এখন ডিভোর্স লেটারটা এনে দাও।’
-আচ্ছা, আগে স্নেহাকে নিয়ে আসুন সামনে…..’
রমজান ভাই তার লোককে আদেশ দিলো স্নেহাকে নিয়ে আসতে। একটু পর স্নেহাকে নিয়ে আসা হলো। স্নেহা আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বললো, ‘চলো এখান থেকে….’
-হ্যাঁ চলো…..’
মোটকুর রশি খুলে দেয়া হলো। তাকেও বললাম আমাদের সাথে যেতে। কিন্তু ও যেতে চাইলো না আন্টিকে ফেলে, সে তো আর জানেনা যে ওটা কাশেম। তাই তার কানেকানে বললাম, ‘মোটকু, ওটা তোমার জানপাখি না, ওটা কাশেম, শাড়ি পরিয়ে ওকে নিয়ে এসেছি।’
মোটকু তখন হাশেমকে দেখিয়ে বললো, ‘ওটা কাশেম হলে এটা কে? ফাজলামি করো আমার সাথে?’
মোটকুর কথা শেষ হতেই রমজান ভাই গিয়ে কাশেমের ঘোমটা সরালো। সাথে সাথে চিল্লায় উঠলো সে।
আমরা আর অপেক্ষা না করে পালাতে শুরু করলাম। পেছন থেকে রমজান ডনের লোক আমাদের তাড়া করতে শুরু করলো। মোটকু তার পেটের কারণে দৌড়াতে পারেনি। তাই ওকে ধরে ফেললো রমজান ডনের লোক। ওকে আর কাশেমকে ওরা মারতে লাগলো। হঠাৎ দেখলাম অন্যদিক থেকো রফিক সাহেবের লোক এসে আমাদের ঘিরে ফেলেছে। আমাদের মারতে এলো ওরা। স্নেহা তার বাবার সামনে গিয়ে বললো, ‘বাবা, ওদের কোনো দোষ নেই। ওরা আমাকে তুলে নিয়ে যায়নি, আমাকে তুলে নিয়ে গেছে ঐ রমজান ডনের লোক, আর ওরা আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
স্নেহার কথায় এ যাত্রায় আমরা বেঁচে গেলাম। রফিক সাহেবের সব লোক তখন রমজান ডনের লোকদের মারতে গেলো। কিন্তু মার খাওয়ার আগেই রমজান ডন রফিক সাহেবের পায়ে পড়ে মাফ চাইলো। বললো, ‘গুরু, আপনি আমার গুরু, আপনি আমার বাবারও গুরু, প্রয়োজনে আমার দাদারও গুরু। আমাকে এবং আমার সৈন্যদের মাফ করে দিন গুরু।’
রফিক সাহেব কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিয়ে মাফ করে দিলেন রমজান এবং তার দলকে। তারপর রমজান তার দলবল নিয়ে চলে গেলো মনের দুঃখে। এবার আন্টি হাশেমকে দেখিয়ে স্বামীকে বললো, ‘এই হারামজাদাই আমাকে তুলে নিয়ে গেছিলো।’
স্ত্রীর কথা শুনে আর থামলেন না রফিক সাহেব। হাশেমের জামার কলার ধরে চড় থেরাপি চালালেন কিছুক্ষণ।
চড় খাওয়ার পর বেচারা হাশেমের চোখ বেয়ে জল বেরিয়ে এলো দুঃখে। মনে মনে হয়তো কাশেমকে গালি দিচ্ছে সে। ওর মতো চেহারা নিয়ে জন্ম নেয়াটা তার একমাত্র দুঃখ। সে কেঁদে কেঁদে বললো, ‘আপনি আমাকে মারছেন কেন? যাকে ভেবে আমাকে মারছেন সে আমি না, ঐ যে রমজান ডনের মার খেয়ে পড়ে আছে আমার ভাই কাশেম, আর আমি হাশেম।’
রফিক সাহেব কাশেমের কাছে গিয়ে দেখলো হাশেম ঠিক কথায় বলেছে। কিন্তু কাশেমকে আর মারলেন না তিনি। ইতোমধ্যে তাকে এবং মোটকুকে রমজান ডনের লোকেরা আলুভর্তা বানিয়ে ছেড়েছে।
.
.
আমরা মোটকুকে এবং কাশেমকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেব মোটা চশমার ফ্রেমের ফাক দিয়ে মোটকুকে কিছুক্ষণ দেখে বললো, ‘এই সাইজটাকে দুতলায় নিয়ে যাও……’
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, ‘কেন? দুইটাকেই এখানে চিকিৎসা করলে কী হয়ছে?’
ডাক্তার একটা সাইনবোর্ড দেখিয়ে বললো, ‘এখানে কী লেখা আছে পড়তে পারছো না?’
আমি সাইনবোর্ডটা পড়লাম, ওখানে লেখা আছে, ‘মোটকুদের উপরের তলায় চিকিৎসা করা হয়।’
কী আর করা। কামাল, সুজন, সাদ্দাম, হাশেম সবাই মিলে মোটকুকে উপরে নিয়ে গেলো চিকিৎসা করতে। আমি আর স্নেহা থেকে গেলাম নিচে। ডাক্তার কিছুক্ষণ পরীক্ষা করলো কাশেমকে। তারপর কী যেন ভাবতে শুরু করলো থার্মোমিটারের দিকে তাকিয়ে। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ডাক্তার সাহেব, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?’
অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো উনি বললেন, ‘সমস্যা, বড়ই সমস্যা।’
-কী সমস্যা ডাক্তার সাহেব?’
গালটা অন্যরকম করে ডাক্তার জবাব দিলো, ‘স্যরি, উনি কোনোদিন মা হতে পারবেন না…..’
-ওরে ডাক্তার, উনি কোনোদিন মা হতে পারবেন না, সেটা আমরাও জানি….’
-তাহলে আমার কাছে নিয়ে আসছেন কেন?
-আরে মার খেয়ে বেচারার কী অবস্থা দেখুন, ওকে ডাক্তারের কাছে না এনে কোথায় আনবো?’
ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন, ‘কী বললেন? বেচারা! মানে এটা মেয়ে না?’ বলেই ডাক্তার কাশেমের মুখ থেকে ঘোমটা সরালো। তারপর আবার বললো, ‘শুধু শুধু এতক্ষণ মেয়ে ভেবে ওকে যত্ন করে চিকিৎসা করছিলাম। নিয়ে যান ওকে….’ শেষের কথাটা গলায় জোর দিয়ে বললেন ডাক্তার।
-কোথায় নিয়ে যাবো?
-এটাকেও নিয়ে যান উপরের তলায়।
-কিন্তু উপরে তো শুধু মোটকুদের চিকিৎসা করা হয়।’
ডাক্তার সাইনবোর্ড নিচে ফেলে দিয়ে বললো, ‘এখন আর নাই ওটা, নিয়ে যান ওকে।’ বলেই ডাক্তার তার চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়তে শুরু করলো।
আমরা কাশেমকে উপরের তলায় নিয়ে এসে মোটকুর পাশে শুয়ে দিলাম। দুজনের চিকিৎসা চলতে লাগলো একসাথে।
.
.
মোটকু আর কাশেম সুস্থ হওয়ার পর ওদের নিয়ে চলে আসতেছিলাম। নিচে এসে দেখলাম ঐ ভন্ড ডাক্তারটা একটা মহিলার চিকিৎসা করতেছে। ইনি মনে হয় শুধু মহিলাদের চিকিৎসা করেন। আমি তার উদ্দেশ্যে বললাম, ‘কী ডাক্তার সাহেব? আপনার রোগী মনে হয় মা হতে পারবে না….’
ডাক্তার সাহেব তার রোগীর উপর থেকে চোখ সরিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। আমরা কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লাম হাসপাতাল থেকে হাসতে হাসতে…..
.
.
#পরিশিষ্ট:
এরপর স্নেহার অবশ্য আর বিয়ে হয়নি। রমজান ডনের হাত থেকে ওকে বাঁচানোর জন্য রফিক সাহেব আমার উপর সন্তুষ্ট হন। তাই আমার সাথে স্নেহার সম্পর্কটা মেনে নেন উনি।
মোটকুকে আর দেখা যায়নি সেদিন থেকে। বেচারা আবারো দুঃখ পেয়ে কোথায় যেন চলে গেলো। হাশেম চলে গেলো বিদেশে, এখানে থাকলে কাশেমের মারগুলো তাকেই হজম করতে হবে, এটা সে খুব ভালোবেই বুঝতে পেরেছে। কাশেম প্রতিদিন একটা করে ঝামেলা করবে, আর হাশেম মার হজম করবে, এটা সে হতে দিতে পারেনা, তাই হাশেম দেরি না করেই পাড়ি জমালো বিদেশে। কিন্তু কাশেম? সে তার কিডন্যাপিং চালিয়ে যেতে লাগলো, সিনা টান করে তাকে এখনো বলতে দেখা যায়, ‘আমি বিখ্যাত কাশেম কিডন্যাপার।’ অবশ্য আমার সামনে কখনো বলেনা আর…..
.
.
(সমাপ্ত)
.
.