________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
__________ #পর্বঃ০৪ ___________
বাইরে চাঁদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। আমরা বন্ধুরা মিলে খুঁজতে লাগলাম কাশেম এবং স্নেহার আম্মুকে। খুঁজে পেলাম ওদের একটা গাছের নিচে। দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করতেছে। আমরা চুপিচাপি গেলাম ওদের পেছনে। হঠাৎ উপর থেকে ওদের দুজনের উপর পানি পড়ায়, কাশেম বলে উঠলো, ‘আমাদের প্রেমের মিলনে মনে হয় উপর থেকে বৃষ্টি পড়তেছে।’
স্নেহার আম্মু হেসে বললো, ‘হুমমম, আমাদের প্রেম তো খাটি তাই…’
-কিন্তু বৃষ্টির পানি এমন নোনতা নোনতা কেন?’ কাশেমের কণ্ঠে বিস্ময়।
-কী জানি। বৃষ্টিতে মনে হয় লবণ মেশানো হয়ছে।’
-আরে বৃষ্টি থেমে গেলো কেন? এত কম বৃষ্টি? বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তোমার সাথে প্রেম করতে ভালো লাগছিলো।’
এবার পেছন থেকে আমি বললাম, ‘বাবা কাশেম, কী করা হচ্ছে এখানে?’
ওরা দুইজন চমকে তাকালো আমাদের দিকে। কাশেম হেসে বললো, ‘ও তোমরাও এসেছো? আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে চাঁদের আলোতে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রেমের গল্প করতেছি।’
-ও তাই বুঝি? উপরে একবার তাকাও। দেখো কোথা থেকে বৃষ্টি নেমেছে তোমাদের উপর।’
কাশেম এবং স্নেহার আম্মু একসাথে উপরে তাকালো। ওখানে একটা বানর ছিলো। বানরটা ওদের দুজনের উপর বৃষ্টিপাত করেছে এতক্ষণ বুঝতে পেরে কাশেম রেগে গিয়ে বানরটাকে তাড়া করলো। বানরটা একগাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে চলে যেতে লাগলো। কাশেমও ছাড়ার পাত্র না। আজ বানরের একদিন কী তার দশ থেকে বারো দিন, যা লাগে লাগুক। সেও দৌঁড় দিলো পেছন পেছন। আর স্নেহার আম্মু? উনিও কেন বসে থাকবেন? ‘ওগো আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছো তুমি?’ বলে উনিও দৌঁড় দিলেন কাশেমের পিছুপিছু। আমরাও দৌঁড়ালাম ওদের আটকানোর জন্য। মধ্যরাতে এই জঙ্গল এলাকায় যেন একটা ছোটোখাটো দৌঁড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
.
.
বানরটা হঠাৎ থেমে গেলো একটা গাছে। তারপর কাশেমের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙাতে লাগলো। কাশেমের রাগ আরো বেড়ে গেলো। একটা ঢিল মারলো বানরটার দিকে সে। কিন্তু বানরটাও কম না। এককালে মনে হয় ক্রিকেট খেলতো সে। সাঙ্গাকারার মতো ডাইভ দিয়ে ঢিলটা ক্যাচ ধরলো মি.বানর। তারপর ওটা আবার ছুড়ে মারলো কাশেমের দিকে, এবং আউট! ঢিলটা এসে পড়লো কাশেমের কপালে, আর কাশেম গিয়ে পড়লো স্নেহার আম্মুর গায়ে। সাথে সাথে দুইজন আবার অজ্ঞান! উপর থেকে বানরটা নাচতে লাগলো কোমর দুলিয়ে।
.
.
এবার আমাদের পালা। আমরা ওদের অচেতন দেহকে ধরাধরি করে আবার বাংলোতে নিয়ে এলাম। আন্টির রুমে বাহির থেকে লক করলাম, আর কাশেমের হাতপা বেঁধে আমাদের সাথে রাখলাম, যাতে জ্ঞান ফেরার পর দ্বিতীয়বার একই কান্ড ঘটাতে না পারে…….
.
.
সকালে ঘুম ভাঙলো কাশেমের চিৎকারে। আমি রেগে উঠে বললাম, ‘কী ব্যাপার? এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?’
কাশেম বললো, ‘চেঁচাবো নাতো কী করবো? আমার হাতপা এভাবে ষাঁড়ের মতো বেঁধে রাখা হয়েছে কেন?’
-কারণ তুমি ষাঁড় তাই।’ পাশ থেকে চোখ মুছতে মুছতে বললো কামাল।
সুজন উঠে গিয়ে তার বাধন খুলতে খুলতে বললো, ‘ভাই সারারাত কী যুদ্ধটাই না গেলো তোমাকে নিয়ে!’
বাধনমুক্ত হয়ে কাশেম চিৎকার করে বললো, ‘কী যুদ্ধ গেলো আমাকে নিয়ে হে? কী যুদ্ধ গেলো? জানো তোমরা কার সাথে কথা বলছো?’
সাদ্দাম কাশেমের পাশে গিয়ে তার শার্টের কলার ধরে বললো, ‘আমরা বিশিষ্ট কিডন্যাপার কাশেমের সাথে কথা বলতেছি।’
এবার বিজয় গিয়ে তার থুতনিটা একহাতে চেপে ধরে বললো, ‘তোর কিডন্যাপ সম্পর্কে অলরেডি ধারণা হয়ে গেছে।’
বিজয়ের কথা শেষ হতেই পাশের রুমে আন্টির চিল্লাচিল্লি শুরু হলো। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আন্টি বললো, ‘কে আছো? আমাকে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে কেন? দরজা খুলো, আমাকে যেতে দাও।’
আন্টির কথা শুনে মনে হলো উনি স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। পাগলামি করবেননা মনে হয় আর। কাশেমও আর উল্টাপাল্টা বকতেছেনা। তারমানে স্প্রের নেশা কেটে গেছে দুজনের। এখন যদি আন্টির সামনে যায় তাহলে চিনে ফেলবে আমাকে আর বিজয়কে। সুজন, কামাল আর সাদ্দাম আন্টির অপরিচিত, তাই আন্টিকে সামলানোর জন্য ওদেরকে পাঠালাম। ওরা গিয়ে দরজা খুলতেই আন্টি বেরিয়ে আসলো, তারপর বাংলো থেকে বেরিয়ে পড়তে চাইলো, কিন্তু তার নজর এসে পড়লো এইরুমে, মানে আমি যেখানে আছি। আমাকে আর বিজয়কে দেখেই উনি থমকে দাঁড়ালেন। তারপর ধীরপায়ে হেটে এলেন আমাদের দিকে। আমরা অপরাধীর মতো নিচু হয়ে রইলাম। আন্টি এসে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন, ‘একি রানা তুমি এখানে?’
আমি কিছু বলার আগেই কাশেম বাহাদুরের মতো বললো, ‘সব এই বিখ্যাত কাশেম কিডন্যাপারের কারসাজি হা হা। আমিই আপনাকে তুলে এনেছি বাসা থেকে।’ শেষের কথাটা সে শার্টের কলার হালকা করে তুলে এমনভাবে বললো, যেন বিরাট কিছু একটা করে ফেলেছে সে। তার কথা শেষ হতেই স্নেহার আম্মুর মাথায় আগুন ধরে গেলো। উনি কাশেমকে ধরে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগলেন। কিকটাও বাদ রাখলেননা। মনে হয় উনি কাশেমকে একটা ফুটবলের মতো দেখছেন, এবং ফাঁকা মাঠে গোল করতেছেন। উনার শেষ কিকটা কাশেমের মেইন পয়েন্টে গিয়ে পড়লো, আর কাশেম হাতচেপে ধরে বসে পড়লো, সাথে সাথে গোল!
বেচারা কাশেম! সিংহের মতো নিজের বীরত্ব দেখাতে গিয়ে ইঁদুরের মতো বসে পড়লো! আমি তার সামনে হাটুগেড়ে বসে কিছুটা মায়া দেখিয়ে বললাম, ‘বাবা কাশেম, খুব লাগলো বুঝি?’
কাশেম মুখটা ফ্যাকাশে করে অস্ফুটে শব্দ করে বললো, ‘হুমমম….’
ওদিকে স্নেহার আম্মুর রাগ তখনো কমেনি। ‘হারামজাদা তুই আমার কতো বড় ক্ষতি করেছিস, জানিস?’ বলেই উনি ঝাপিয়ে পড়লেন আবার কাশেমের উপর। তারপর রেসলিং খেলতে লাগলেন রোমান রেইন্সের মতো। কাশেম বসা থেকে শুয়ে পড়লো ‘ওমাগো’ বলে। আর আমি ফ্লোরের উপর এক, দুই, তিন…. এভাবে দশটা বাড়ি মারলাম। তারপর স্নেহার আম্মুকে বললাম, ‘আন্টি আপনি জিতে গেছেন, এবার উঠে দাঁড়ান।’
আন্টি হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়ালেন কাশেমকে ছেড়ে দিয়ে। বেচারা কাশেমের অবস্থা আর নাই বা প্রকাশ করলাম ভাষায়!
.
.
(চলবে…..)
.
.