বউ কিডন্যাপ পর্ব ৫

________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
__________ #পর্বঃ০৫ ___________

আন্টি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘রানা, তুমি এখানে কেন বলো?’
আমি ইতস্তত করো বললাম, ‘ইয়ে মানে আন্টি, আমি চেয়েছিলাম আপনার মেয়ে স্নেহাকে তুলে আনতে, ওকে আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু এই বেটা কাশেম ওকে তুলে আনতে গিয়ে আপনাকে তুলে আনলো।’
-তা একপ্রকার ভালোই হয়েছে। আমিও চেয়েছিলাম পালানোর জন্য।
-মানে? কী বলেন আন্টি এসব?
-সত্যি বলছি। স্নেহার আব্বুর সংসারে আমি মোটেও ভালো ছিলাম না। স্নেহার নিজের মায়ের মৃত্যুর পর ওর বাবা আমাকে একপ্রকার জোর করে বিয়ে করেছিলো ক্ষমতার বলে। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম খুব, তার সাথে শেষ দেখাটাও করতে দিলো না। বিয়ের পর থেকে সেলিমের সাথে আমার আর দেখাও হয়নি। কোথায় যেন হারিয়ে যায় সে।’
-আপনার সেই প্রেমিকের নাম বুঝি সেলিম ছিলো?
-হ্যাঁ… কয়েকদিন আগে হঠাৎ ওর সাথে আমার দেখা হয় শপিং মার্কেটে, যখন স্নেহার বিয়ের শপিং করতে গেছিলাম। অনেক কথা হয় ওর সাথে। তারপর আমার কষ্টের কথা শুনে ও বললো, আমাকে তুলে নিয়ে পালিয়ে যাবে সে। গতরাতে আমাকে নিয়ে পালানোর কথা ছিলো তার। তাই আমি সেজেগোজে রেডি ছিলাম। কিন্তুু এই কাসেম আমাকে আর আমার প্রেমিকের সাথে মিলতে দিলো না।’ বলেই আবার কাশেমকে মারতে গেলো আন্টি। কাশেম ফ্লোর থেকে তাড়াতাড়ি উঠে আমার পেছনে নিজেকে আড়াল করতে চাইলো, যেন সে বলতে চাইছে ‘আমি আর রেসলিং খেলবোনা, খেলার আগে আপনাকে বিজয়ী ঘোষণা করলাম।’
আমি আন্টিকে থামিয়ে বললাম, ‘আন্টি, স্নেহাকেও কারা যেন উঠিয়ে নিয়ে গেছে। মনে হয় আপনার সেই প্রেমিক ওকে নিয়ে গেছে।’
-ও কেন স্নেহাকে তুলে নিয়ে যাবে?
-কাশেম যেমন ভুল করে আপনাকে তুলে আনছে, তেমনি হতে পারেনা উনিও ভুল করে স্নেহাকে তুলে নিয়ে গেছে? আপনার কাছে উনার এড্রেস আছে?’
-নাহ, শুধু একটা ফোন নাম্বার ছিলো আমার মোবাইলে সেভ করা।’

-নাম্বারটা দিন…..
-কিন্তু আমার মোবাইল কই? আমাকে তুলে আনার সময় তো ওটা ঘরে থেকে গেছে…..
-শীট! এখন কীভাবে যোগাযোগ করবো উনার সাথে?
-আমিও বুঝতেছি না।’ আন্টির মুখটাও ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আমরা ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। পরে কামাল, সুজন, সাদ্দামকে এলাকায় পাঠালাম স্নেহার খোঁজে, যদি তাকে আবার রেখে যায়।
আমি, বিজয়, আন্টি আর কাশেম এখানেই রয়ে গেলাম। কিন্তু আন্টির হঠাৎ খুব খিদে পাওয়াই কাশেমকে পাঠালাম খাবার কিনে আনতে সবার জন্য, আমাদেরও খিদে পেয়েছে।
.
.
অনেক্ষণ পেরিয়ে গেলো, কাশেমের খাবার নিয়ে ফেরার কোনো নামগন্ধ নেই। এদিকে আন্টি একটা মরিয়া হয়ে গেছে খিদার জালায়। বেটা কাশেম খাবারের টাকাগুলো নিয়ে পালালো নাতো?
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, আমাদের খিদেও বেড়ে গেছে খুব। আর থাকতে না পেরে আমিই বেরিয়ে পড়লাম খাবারের জন্য। বিজয়কে বাংলোতেই রেখে এলাম আন্টির দেখাশুনা করার জন্য।
.
.
একটা হোটেলে ঢুকে খাবার কিনলাম। তারপর বেরিয়ে আসার সময় একটা লোক আমার পথ আটকালো। লোকটার বয়স ৪৫ থেকে ৫০ এর মাঝামাঝি হবে। দেখতে খাটো ধরণের। কিন্তু বিশাল একটা পেটের মালিক সে। তার পেটের সাইজটা যেন ছোটোখাটো একটা পর্বত। প্যান্টের ভেতর শার্ট ঢুকিয়ে পরার কারণে পেটটা বেরিয়ে এসেছে আরো। আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কী ব্যাপার মোটু, পেট দিয়ে রাস্তা অবরোধ করছো নাকি?’
লোকটা বললো, ‘আমি তোমাকে দেখেছি…..’
-আমাকে দেখেছো? কোথায় দেখেছো?’
-রফিক সাহেবের বাড়ির সামনে গতরাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরঘুর করতে।’
সর্বনাশ! লোকটা সব জানে নাতো? দেখে ফেলেনি তো আমরা স্নেহার আম্মুকে তুলে নিয়ে এসেছি? নিজেকে সামলিয়ে বললাম, ‘কী ভুলভাল বকছো মোটু ভাই? রাতের বেলায় কী দেখতে কী দেখেছো কে জানে?’ বলেই আমি সাইড কেটে চলে যেতে চাইলাম, কিন্তু মোটকু বেটা পেট উঁচিয়ে আমাকে রেড সিগন্যাল দিলো থামার জন্য। বেটা যেন নাছোড়বান্দা। সে বললো, ‘নাহ, আমি মোটেও ভুল দেখিনি, তোমরা গাড়ি নিয়ে বাইরে ছিলে।’
-কী আজব! সরেন তো সামনে থেকে।’ বলেই সামনে থেকে সরিয়ে দিলাম মোটকুকে। যদিও একটু কষ্ট হয়ছে বিশাল সাইজটা সরাতে। তারপর কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চলে এলাম বাংলোতে।
.
.
খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ আমার দৃষ্টি গেলো বাইরে। দেখলাম মোটকু তার পেট উঁচিয়ে এদিকেই আসতেছে। বেটা দেখি পিছু ছাড়বেনা, এখানেও এসে হাজির। তাকে আসতে দেখে আমি আন্টিকে বললাম, ‘আন্টি, আপনাকে লুকাতে হবে। ঐ মোটা লোকটা হয়তো রফিক আঙ্কেলের গুপ্তচর।

আমার কথা শুনে আন্টি বাইরে তাকালো। তারপর কোনোকিছু না ভেবেই দৌঁড় দিলো মোটকুর দিকে। আমি আর বিজয়ও বের হলাম কাহিনী কোনদিকে মোড় নেয় দেখার জন্য। আন্টিকে দৌঁড়ে যেতে দেখে, ওদিক থেকে মোটকুও দৌঁড়ে আসতে লাগলো, কিন্তু বেচারার কাহিল অবস্থা, পর্বতসহ ঠিকমতো দৌড়াতে পারছে না। এদিকে আন্টি তুখোড় দৌড়বিদের মতো দৌড়ে গিয়ে মোটকুকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো, কিন্তু বেচারা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো নিচে। আন্টিও গিয়ে পড়লো তার উপর। তারপর দুজনের চোখে চোখে কথা হতে লাগলো। আমরাও ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। যেন বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্য দেখতেছি। আন্টি মোটকুর মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, ‘সেলিম, আমার সেলিম! তুমি এসেছো?’
মোটকু বললো, ‘হ্যাঁ জানু, তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি।’
পাশ থেকে আমি টাসকি খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আন্টি এই সাইজটাই তাহলে আপনার সেই প্রেমিক?’
.
.
(চলবে….)
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here