—এই মেয়ে ওঠ,ওঠ বলছি।ওঠ আমার বেড থেকে।
কথাটা শুনতেই লাফিয়ে খাট থেকে নামলো অপু।
অন্ধকারে সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার মুখটা ঠিকমতো দৃষ্টিগোচর হলোনা তার।
কিন্তু এটুকু বুঝতে পারলো লোকটা তার স্বামী।একটু আগেই তিনকবুল পড়ে এই লোকটার সাথে অপুর বিয়ে হয়েছে।
সে এমুহূর্তে বসে ছিলো ফুল দিয়ে সাজানো এক খাটের ওপর।
আজ তাদের ফুলসজ্জা।
সেই উপলক্ষেই মুলত খাটটা সাজানো হয়েছে।তাছাড়া রুমটাও বেশ সাজানো গোছানো।দামী দামী আসবাবপত্র ভরা রুমটা।তাকালেই চোখ ঝলসে যায় যেনো।
অপু কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে তার সদ্য বিয়ে করা স্বামীর দিকে তাকালো।কিন্তু কিছুতেই মুখ দেখতে পেলোনা।শুধু দেখলো এক লম্বা চওড়া পুরুষ অবয়ব।
লোকটা তাকে খাট থেকে নামতে কেনো বলছে?তাও এমন রাগী কন্ঠে?
ঘোর কাটলো লোকটার ঝাঁঝালো কণ্ঠে,
,
—ড্যাবড্যাব করে কি দেখছিস হ্যা?ছোটলোক কোথাকার,বড়লোক ছেলে জিবনে দেখিসনি?
অপুর কথাগুলো শুনে খুব রাগ হলো,সাথে অভিমানও হলো।নতুন বউয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
মিনমিন করে বললো,
—এভাবে কথা বলছেন কেনো?
—তো কিভাবে কথা বলবো তোর সাথে বল?আপনি আপনি করবো?নাকি মাথায় নিয়ে নাচবো?
—আমি কি তাই বলেছি নাকি?
—আবার কথা বলিস?আবার?বড়লোকের ছেলে দেখে গলায় ঝুলে পরে আবার মুখে এতো বড় বড় কথা?
অপুর এবার বেশ রাগ হলো।সে তেজ দেখিয়ে বললো,
—মুখ সামলে কথা বলুন?নইলে কিন্তু…..
মুখের কথা শেষ করতে পারলোনা অপু।তার আগেই লোকটা আবার বললো,
—-নইলে কি হ্যা?নইলে কি?
ইচ্ছে তো করছে দেই এক চড়।দেবো? দেবো চড়?
শক্ত পোক্ত হাতটা অপুর উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতেই অপু আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
চোখ মেলে দেখলো চারদিকে অন্ধকার, ঘুটঘুটে অন্ধকার।
অপু আশেপাশে কিচ্ছু খুজে পেলোনা।হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা উঠিয়ে টর্চ জালালো।একি কোথায় সে?কোথায় তার সেই রাগী বদমেজাজি বর?যে কিনা বাসর রাতেই বউকে তুই তোকারি করে?হাত তুলতে যায়?
কোথায় সে?
কোথায় সেই ফুলে ঘেরা খাট?সেই রুম?
কোথায়?
অপু তো তার নিজের ঘরে শুয়ে আছে?
তাহলে এতোক্ষণ কি সে সপ্ন দেখছিলো?
সপ্ন? না না এটা সপ্ন হতে পারেনা কিছুতেই।এটা তো দুঃসপ্ন,ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।
,
,
ওড়না নিয়ে কপাল গলা মুছে নিলো অপু।ভয়ে ঘাম ছুটে গেছে তার।
খাট থেকে উঠে লাইটটা জালিয়ে নিলো সে।আর ঘুম হবে না আজ রাতে।
সপ্নের রেশটা তারা করে বেরাবে সারা রাত।
প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। আচ্ছা ভোরের সপ্ন নাকি সত্যি হয়?এটাও কি সত্যি হবে?
না না কিছুতেই না?এমন সপ্ন সত্যি হতেই পারেনা।
আজান দিতেই অজু করে নামাজ পরে নিলো অপু।
তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।সকালের নাস্তা বানাতে হবে তাকে।
ভাল নাম তার অপরুপা,ডাক নাম অপু।এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। মফস্বল এলাকার মেয়ে সে।পড়ালেখায় খুব ভাল এবং তারচেয়েও বেশি ভাল সে স্বভাবে।
,
,
🌼🌼
,
—স্যার,বড় স্যার আবার অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
—কিহ,কবে?কিভাবে? কখন?
—আসলে স্যার,আরও দুইদিন আগে থেকেই তিনি অসুস্থ।
—দুইদিন ধরে অসুস্থ বাবা,আর আজ আপনি আমায় জানাচ্ছেন?
ঝাঁঝালো গলার কথাগুলো শুনে লোকটা আমতা আমতা করে,মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।এই মুহুর্তে কিছু বলা মানেই বাঘের মুখে হাত ঢোকানো।নোমান খানের এমনিতেই মেজাজ চড়া থাকে তারউপর এতোবড় কথা শুনে মেজাজ তো চড়া হবেই।
উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করে নোমান,
—কি হলো কথা বলুন,
কথা বলুন।
চিৎকার শুনে লোকটার হাটু কাপে।মাথা চুলকে বলে,
—ভুল হয়ে গেছে স্যার।
—ভুল হয়ে গেছে?হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ভুল হয়ে গেছে?বাবা আমার জন্য কি সেটা আপনারা জানেন না?
এমন ভুল কিভাবে হয় আপনাদের?
লোকটা আবারও চুপ থাকে।
নোমান রাগে নিজের চুল টেনে ধরে।চোখ লাল থেকে ভয়ংকর লালে পরিনত হয়।চিৎকার করে বলে ওঠে,
—হা করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?আউট, আউট ফ্রম হেয়ার ইডিয়ট।
লোকটা দৌড়ে পালায়।
নোমান খানের রাগ সম্পর্কে তাদের ধারনা আছে।খুনও করে ফেলতে পারে রাগলে।তারউপর যদি হয় বাবার ব্যাপার তাহলে কথাই নেই।
লোকটা বেরিয়ে যেতেই নোমান তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়।গটগট করে সিড়ি বেয়ে নামে।আলিসান এই বিলাস বহুল বাড়িতে সে আর কিছু চাকর বাকর ছাড়া আর কেউ নেই।কেউ না।
যদিও তার বাবা আছে,তবে সে আলাদা বাড়িতে থাকে।আলাদা ঘর সংসার নিয়ে।নোমানকে থাকতে বলেছিলো অনেকবার।কিন্তু সে থাকেনি।এমনকি বাবার বিজনেসেও সে বসেনি।নিজের পরিশ্রমে নিজের বিজনেস দাড় করিয়েছে সে।
,
,
,
গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
পর্বঃ১
,
,
চলবে…..