#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৯
,
,
খুব ভোরে বাইরে বেরিয়ে একটু হেটে এলো অপু।
কাল রাতে তার ঘুম হয়নি।
মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো তার।
ভাইকে কল দিয়োছিলো অনেকবার কিন্তু ভাই রিসিভ করেনি।
কল ব্যাক করেছিলো যখন অপু নোমানের ঘরে ছিলো।রুম থেকে বাইরে এসে অনেকবার ট্রাই করেছে অপু কিন্তু ফোন বন্ধ পেয়েছে সে।
কিচেনে ঢুকে সবার চা,কফি বানালো অপু।
রুজি হাই ছাড়তে ছাড়তে কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখে অপু কিচেনে।
রুজি বললো,
—তুমি এতো ভোরে এইখানে কেন মা?
—চা আর কফি বানাই।
—আমিই তো আইতাছিলাম।তুমি কষ্ট করলা কেন?
—কষ্ট কোথায় রুজি খালা?এতটুকু কাজে কারও কষ্ট হয় নাকি?
চা আর কফি কাপে ঢেলে ট্রে তে তুলতে তুলতে বললো,
—এগুলো যার যার রুমে পৌছে দিতে পারবে খালা?
রুজি এগিয়ে এসে ট্রে হাতে নিলো।
—পারমু না কেন?অহনি যাইতাছি।
অপু তারাতাড়ি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে জামা বদলালো।
কিছু টাকা আর ফোনটা ব্যাগে পুরে বের হলো রুম থেকে।
আরমান খানের রুমে গিয়ে দেখে নোমান দাঁড়িয়ে আছে।
সেও পুরো সুট বুট পরে রেডি।
হয়তো নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
অপু নোমানকে দেখে রুমের একটু কোনায় গিয়ে দাড়ালো।
ততক্ষণে নোমান আর আরমান খানের নজর অপুর উপর পরেছে।
দুজন কথা বলছিলো এতক্ষণ যাবত।অপুকে দেখে আরমান খান বললেন,
—এতো সকালে কোথায় যাচ্ছিস মা?ভার্সিটিতে?
অপু মাথা নাড়লো।
বললো,
—একটু মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো বাবা?
আরমান খান হাসলেন।
—পাগলী মেয়ে,তোর মায়ের সাথে যখন ইচ্ছে হবে তখন দেখা করতে যাবি একথা আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে।
একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
—কিন্তু এতো সকালে?কিছু হয়েছে?সব ঠিক আছে তো?
—কাল রাতে মায়ের অপারেশন হয়েছে।
—ওহ,তাই নাকি?আচ্ছা যা।
অপু আরমান খানের সাথে আর কথা বাড়ালো না।নোমানের সামনে বেশি কথা বলতে পারেনা অপু।
কেমন অসস্থি হয় তার।
ঘুরে দাড়াতেই আরমান খান আবার বললেন,
—একটু দাড়া না মা।
অপু দাড়ালো।আরমান খান নোমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—তুমিও তো এখন চলে যাচ্ছো নোমান।
তোমার যাওয়ার পথেই অপু যাচ্ছে। তো সেখানে যদি একটু ওকে নামিয়ে দিতে।
আরমান খান আমতাআমতা করলেন।
কথাটা বলা ঠিক হয়েছে কিনা তিনি বুঝতে পারলেন না।
নোমান যে অপুকে সাথে নেবেনা সেটা তিনি জানেন তারপরও যে কেনো বলতে গেলেন।
এখন নোমানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে সেটা আরমান খান জানেন।হয়তো বাবার উপর রেগে যাবে।রাগারাগি করবে।
তবুও তো।
আরমান খান যে চায় মরার আগে দুজনকে একসাথে দেখে যেতে।
ভাবনার মাঝে নোমানের গম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেলো।
—ওকে।
নোমানের কথা শুনে অপু এবং আরমান খান দুজনেই বিস্ফোরিত নয়নে নোমানের মুখের দিকে তাকালো।
নোমান ব্যাপারটা লক্ষ করে বললো,
—হোয়াট?
আরমান খান আর অপু দুজনেই রোবটের মতো না সূচক মাথা নাড়লো।
এই মূহুর্তে তারা অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে গেছে।
নোমান আরমান খানকে বললো,
—আসছি।নিজের যত্ন নিও।
অপুর দিকে তাকিয়ে অপুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—আর তুমি?
আমার সাথে এসো।
—-
গাড়িতে উঠে অপু রোবটের মতো বসে আছে।
না হেলছে না দুলছে।একটু নড়নচড়ন তো দুর মুখ থেকে টু শব্দ ও বের করছেনা।
গাড়ির কাচ বন্ধ থাকায় অপুর কেমন হাস ফাঁস লাগছে।
মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরে রেখেছে।
অপু জানালার দিকে তাকিয়ে নোমানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।
নোমান গাড়ি চালানোর ফাকে ফাঁকে অপুর দিকে তাকাচ্ছিলো।
অপু তাকাতেই দুজনার চোখাচোখি হলো।
নোমান এতক্ষণ যাবত অপুর হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছিলো।
এই প্রথম নোমানের কোন মেয়েকে বুঝতে ইচ্ছে করছে।
তাকে খুশি রাখতে ইচ্ছে করছে। তার সাথে মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
অপুর এভাবে তাকানো দেখে কেন যেনো নোমানের মনে হলো হয়তো মেয়েটা কাচ খুলতে চাইছে।
কিন্তু নোমানের ভয়ে বলতে পারছেনা।
নোমান হালকা ঝুকে কাচ নামিয়ে দিলো।
অপু সেদিকে দেখে বড় করে হাফ ছাড়লো।
জানালার কাছে মুখ নিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।
নোমান তা দেখে নিজের মনেই হাসলো।
যাক সে তাহলে মেয়েটাকে বুঝতে শুরু করেছে তাহলে?
কিছুদুর যেতে না যেতে জ্যামে আটকা পরলো তারা।
নোমান কপাল কুঁচকালো।
এই জ্যাম ট্যাম নোমানের খুবই বিরক্ত লাগে।
ফোন বের করে কিছুক্ষণ ফোন টিপলো সে।
তারপরও জ্যাম ছাড়ার কোন নামগন্ধ নেই।
পাশে তাকিয়ে দেখলো অপু জানালা দিয়ে একদৃষ্টিতে কিছু দেখছে।
কিন্তু কি দেখছে?
নোমান পাশ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলো।
তারপরও হাল ছাড়লো না।
আবার চেষ্টা করলো।
অবশেষে দেখতে সক্ষম হলো।
সেই ছোট্ট মেয়েটা। যে বেলিফুলের মালা বিক্রি করে বেড়ায় সে।
তার দিকে এভাবে তাকিয়ে কি দেখে মেয়েটা?
খাবার খাওয়াবে নাকি একেও?
নাকি অন্যকিছু?
নিজের মনেই বিরবির করে বুঝার চেষ্টা করলো নোমান।
অপুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—বাইরে কি দেখো?
অপু আকস্মিক নোমানের কথায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।
পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
—না মানে,বেলিফুল!
—বেলিফুল পছন্দ?
অপু দ্রুততার সাথে মাথা নাড়লো।
নোমান সেদিকে দেখে বাইরে মেয়েটার উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে ডাকলো।
কয়েকটা বেলিফুলের মালা কিনে অপুর হাতে দিলো।
অপু কিছুটা অবাক হয়ে নোমানকে দেখলো।
বিয়ের পরের নোমান আর এখনকার নোমান তার কাছে আলাদা লাগছে।
মনে হচ্ছে এ যেনো অন্য কেউ।
যাকে দেখলে ভয় হয়না,আস্থা জাগে।
ভরসা করতে ইচ্ছে হয়।
এদিকে সামান্য বেলিফুল পেয়ে অপুর উচ্ছাস, তার খুশি মাখা মুখ দেখে বারংবার নোমান মুগ্ধ হলো।
তাকে হাজারওবার এমন খুশি দেওয়ার ইচ্ছে জাগলো।
,
,
চলবে……