#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২৪
,
,
—এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো অপরুপা?
নোমানের কথা শুনে সেদিকে তাকায় অপু।
আবার রায়হানের দিকে তাকায়।দেখে রায়হানও তাকিয়ে আছে নোমানের দিকে।
অপু সেকথার উত্তর দেয়না।
বলে,
—আপনি এখানে?
—তোমাকে নিতে এলাম।আজ অফিসের কাজ তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেছে তাই ভাবলাম বাসায় যাওয়ার পথে তোমাকেও নিয়ে যাই।
–ওহ,আচ্ছা চলুন।আমিও বাসায়ই যাবো।
অপু এগিয়ে যায়।কিন্তু নোমান আসেনা।
অপু কিছুদুর পৌছে নোমানকে না দেখে পিছু ফিরে তাকায়। দেখে নোমান আগের জায়গায়ই দাড়িয়ে আছে।
প্যান্টের পকেটে দু হাত ঢুকিয়ে স্থীর ভাবে দাড়িয়ে আছে।তীক্ষ্ণ চোখে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।
অপু আবার ফিরে আসে।নোমানের একহাত ধরে ঝাকায়।
—কি হলো আসুন।
নোমান নড়ে না।
রায়হানের দিকে তাকিয়ে অপুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—ওনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেনা?
অপু শুকনো ঢোক গেলে।
রায়হান অপুকে কি নজরে দেখে সেটা জানলে নোমান যদি রেগে যায়?অপু আর নোমানের প্রায় ঠিক হওয়া সম্পর্ক আবার যদি এলোমেলো হয়ে যায়?
অপু সেকথা ভেবে ভয় পায়।
রায়হান নিজেই এগিয়ে আসে।হাত বাড়িয়ে দেয়।বলে,
—হাই,আমি রায়হান।
রুপার সিনিয়র।
একটু থেমে আবার বলে,
—সিনিয়র ভাই।
নোমান সেকথা শোনে কিনা ঠিক বোঝা যায়না।
ভ্রু কুঁচকে বলে,
—রুপা?রুপা কে?
—মানে অপরুপা।
আর আপনি?
নোমান এবার হাত মেলায়।বলে,
—নোমান খান,অপরুপার হাসবেন্ড।
অপু আবার নোমানকে তাড়া দেয়।বলে,
—কি হলো চলুন এবার।পরিচয় তো হলো।
—হু,চলো।
গাড়ির কাছে যেতে যেতে পেছনে বারবার তাকায় নোমান।
রায়হান তখনো আগের জায়গায় স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
বাইরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বুকের ভেতর তার তোলপাড় হয়।হ্রদয় ভাঙা প্রলংয়করী ঝর বয়ে চলে।
———
বাড়িতে ফিরে নোমান ব্যস্ত হয়ে যায় নিজের কাজে।
গোসল সেরে, ড্রেস বদলে,খাবার খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরে সে।
অপুর বিরক্ত লাগে।
এতো বড় বাড়িতে,এতোগুলো মানুষের ভেতর তার খুব একা একা লাগে।
দুপুর থেকে বিকেল অব্দি এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে কাটায় অপু।
অবশেষে আর না পেরে নোমানের রুমে ঢুকে।
রুমে এসে দেখে নোমান এখনো ল্যাপটপ নিয়েই পরে আছে।
অপু নোমানের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য বারকয়েক সামনে দিয়ে হাটাহাটি করে।
গলা খুকখুক করে।
তবুও নোমানের সেদিকে কোন হুশ নেই।
অপু বেশ চটে যায়।
নোমানের সোফার পাশে ধপ করে বসে ল্যাপটপে উঁকিঝুকি দিতে লাগে।
নোমান সেদিকে আড়চোখে তাকায়।
বলে,
—কি সমস্যা?
অপু ধরা পরে যাওয়া বলদা হাসি হাসে।
—কি সমস্যা? ককক কিছুনা।
নোমান আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দেয়।
অপু কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে নোমানের সাথে কথা বলার আশায়।
নোমানকে আর কিছু না বলতে দেখে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।
নোমান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলে,
—রায়হান নামক ছেলেটার থেকে দুরে থাকবা।
অপু চমকায়।
চোখ বড়বড় করে নোমানের দিকে তাকায়।
পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—আপনি যেরকম টা ভাবছেন আসলে কিন্তু তেমন কিছুইনা।
নোমান ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রাখে।
সোফায় গা এলিয়ে এক পায়ের উপর পা তুলে বসে।
অপুর চোখে চোখ রেখে বলে,
—কেমন ভাবছি আমি?
অপু থতমত খায়।
—না মানে….
অপুর কথার মাঝেই নোমান বলে,
—ছেলেটা তোমাকে পছন্দ করে তাইতো?
অপু হ্যা সূচক মাথা ঝাকায়।
—কেমনে বুঝলাম জানো?
অপু আবারও মাথা ঝাকায় তবে এবার না সূচক।
নোমান হাসে।
মুচকি হাসি হাসে।
তবুও কি সুন্দর দেখায়!অপু মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে।
নোমান বলে,
—ছেলেটার চোখ দেখে বুঝলাম।
—চোখ দেখে?
—হুমমম।
অপু কৌতুহলী গলায় বলে,
—চোখ দেখে মনের কথা বোঝা যায় নাকি?
নোমান আবার হাসে।
—একটা গান আছে না?চোখ যে মনের কথা বলে।
শুনেছো?
—হু।
—আমি যখন তোমার হাসবেন্ড হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছিলাম তখন ছেলেটার মুখে কালো মেঘ নেমেছিলো।
চোখ ছলছল করছিলো।
তুমি দেখোনি?
—ওতো খেয়াল করিনি।
নোমান হাসি হাসি মুখটা গম্ভীর করে।
অপুর হাত ধরে টেনে পাশে বসায়,বলে,
—তুমিও কি ছেলেটাকে পছন্দ করো অপরুপা?
আমাকে নির্দিধায় বলতে পারো।
—না না সেরকম কিছুনা।
আমি ওনাকে কখনো ঐরকম নজরে দেখিইনি।
নোমান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
অপুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তবে মনের ভেতর একটু খুতখুত থেকে যায়।
কেমন সন্দেহ দানা বাধে।
——–
রাতের রান্না করার জন্য অপু কিচেনে যায়।
এসব সেফ দের হাতের তৈরি পাউরুটি জেলি খেতে খেতে অপুর মুখ পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
রুজি খালারা থাকতে তবু বাঙালি খাবার খেতে পারতো অপু কিন্তু এখানে সে উপায়ও নেই।
নোমান সারাবেলা এসব ঘাসফুস চিবায়।সাথে অপুকেও চিবাতে হয়।
সব কাজের লোকদের বের করে দিয়ে অপু চুলায় ভাত বসায়।
তরকারি কেটেকুটে রাখে।
পেছোন থেকে কেউ বলে ওঠে,
—ওমাআআআ,আপনে এইসব খাবার খান ম্যাডাম?
অপু চমকে পিছনে তাকায়।দেখে সকালে দেখে যাওয়া সেই মেয়েটি।যাকে সবার থেকে আলাদা লেগেছিলো তার।
অপু সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে কাজে মন দেয়।
বলে,
—না খাওয়ার কি আছে?
মেয়েটা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
এ বাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত একটা টু শব্দ ও করা নিষেধ।আর মালিকদের সামনে কথা বলা দুর মাথা উচু করাও নিষেধ।
সেখানে অপু তার সাথে কথা বলায় মেয়েটা বেশ খুশি হয়।
বলে,
—এ বাড়িতে কেউ তো এসব খায়না, তাই কইলাম।
—ওহ তাই?কিন্তু আমি তো ঐসব ঘাসপাতা খেতে পারিনা।
মেয়েটা আরও খুশি হয়।
বলে,
—আপনেও ঐসব খাবাররে ঘাসপাতা কন?আমিও তো কই।
অপুও খুশি হয়।
কথা বলার মতো একজন সাথী তো পেলো এই ভেবে তার বেশ ভালো লাগে।কাজ করার ফাকে ফাঁকে দুজন টুকটাক কথা বলে।
মেয়েটা হাতে হাতে সাহায্য করে।
—আচ্ছা তোমার নামটা কি?
কথার মাঝেই পেছন থেকে ডাক শোনা যায়।
কেউ বলে,
—ফুলি……..
ফুলি তাড়াহুড়ো করে বলে,
—আমারে ডাকতাছে,আমি পরে কথা কমুনে আপনের লগে।
মেয়েটা সেদিকে দৌড়ায়।
অপু নিজের কাজে মন দেয়।
,
,
খাবার টেবিলে নোমানের সামনে নোমানের খাবার সাজিয়ে ভাত তরকারি নিয়ে অপু বসে।
নোমান সেদিকে আড়চোখে বারবার তাকায়।
অপু পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খায়।
নোমান খাবার নাড়াচাড়া করে।
গলা উঁচিয়ে রুবেলকে ডাকে।
রুবেল হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসে।
নোমান বলে,
—এসব কে রান্না করেছে রুবেল?
রুবেল বলে,
—কেনো স্যার?এতোদিন যে রান্না করতো সেই রান্না করেছে।
—আজ একটুও ভালো হয়নি কেনো?কেমন বিদঘুটে গন্ধ বেরোচ্ছে।
রুবেল তীক্ষ্ণ চোখে প্লেটের খাবার দেখে।
নাকের কাছে এনে গন্ধ শোঁকে।
বলে,
—কোথায় গন্ধ স্যার?
নোমান অধৈর্য হয়।
অপুকে খেয়াল করে দেখে তার এদিকে কোন খেয়ালই নেই।নিজের মতোই খাচ্ছে সে।
কেনো খেয়াল নেই তার এদিকে?কেনো সে বললো না নোমানকে তার রান্না করা খাবার খেতে?
তার রান্না করা খাবার থেকে যে কি দারুণ সুগন্ধ বেরোচ্ছে তা কি অপু বোঝেনা?
ঐ রকম সুগন্ধ শুঁকে এইসব খাবার কি কারো গলা দিয়ে নামে?
নোমানের সব রাগ অপুর ওপর পরে।
কিন্তু প্রকাশ করতে না পেরে সব রাগ রুবেলের ওপর ঝারে।চিৎকার করে বলে,
—আমি বলেছি খাবার ভালো হয়নি মানে ভালো হয়নি।একবার বললে কানে যায়না?বুঝতে পারোনা আমার কথা?ইডিয়ট!সবগুলো ইডিয়ট পুষে রেখেছি আমি।
ভালো মতো রান্নাটা পর্যন্ত করতে পারেনা।
রুবেল হা হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
হুট করে বিনা কারনে নোমানের রেগে যাওয়ার কারনটা তার মাথার উপর দিয়ে যায়।
নোমান সেদিকে তাকিয়ে আরও ধমকায়।
—কি হলো? হাবার মতো দাড়িয়ে আছো কেনো?এক্ষুনি এই সব খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেবে।এক্ষুনি!
আর হ্যা নতুন সেফও আনবে।পুরোনো সেফকে বিদেয় করো।ঘার ধাক্কা দিয়ে বিদেয় করো।
কথাটা বলেই সিড়ি বেয়ে রুমে যায় নোমান।
অপু সেদিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে।
,
,
চলবে……