#বস_বর (পর্ব-১৯ ও ২০)
পর্ব-১৯
Writer : Eti Chowdhury
.
– কেন?
– আমি ডান্স করব।
রোদ হেসে দিলো তার পাগলীর কথা শুনে। হেসে দিয়ে রোদ ইতির হাত ধরে ওকে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো রোদ ইতিকে। অনেক্ষণ ইতিকে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে রেখে ডান্স করল রোদ। ইতি রোদের বুকে মাথা দিয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে তাই রোদ আলত করে ইতির মাথাটা তুলতেই দেখে মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে বুকে মাথা দিয়ে। রোদ ইতিকে কোলে তুলে নিলো। কোলে নিয়ে ইতিকে বিছানায় শুয়ে দিলো। ইতিকে শুয়ে দিয়ে উঠে আসার সময় আলতো করে ইতির কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো রোদ। ইতি ঘুমের মাঝেই রোদকে জরিয়ে ধরলো। ঘুমের মাঝেই আবোল তাবোল বলতে লাগলো মেয়েটা। কিন্তু কথা কিছু বুঝা যাচ্ছে না খুব ধীরে ধীরে বলছে। তাই রোদ নিজের কানটা ইতির মুখের কাছে নিলো কি বলছে তা শুনার জন্য। ইতি বলছে,
– আদি পচা শুধু আমাকে জানপাখি জানপাখি বলে উফফ.. অসহ্য ও কেনো আমাকে জানপাখি ডাকবে।
রোদ ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করে,
– তাহলে কে ডাকবে?
– আপনি ডাকবেন। আপনি আমাকে সব ডাকবেন।
– কি কি ডাকবো?
– জানপাখি, ময়নাপাখি, সোনামণি, কলিজা, বাবু, বাচ্চা, বেবি,ডার্লিং, সুইটহার্ট সব সব সব…….
– কেন গো আমি তোমার কে?
– ইসস…আমার লজ্জা লাগে তো।
– বলো না প্লিজ।
ইতি ফিস ফিস করে বলল,
– আপনি আমার বর, আমার স্বামী, আপনি আমার সব।
কথাটা বলেই ঘুমের ঘোরে ইতি রোদের কানে একটা চুমু খেলো। তারপর রোদের বুকে এসে মুখ লুকালো। রোদ নিজেও ইতিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো। অনেক দিন পর শান্তি লাগছে রোদের। মনে হচ্ছে না তার কোন দুঃখ আছে। ইতি তার বুকে থাকলে রোদ কেবল শান্তি অনুভব করে।
ইতির সকালে ঘুম ভাংঙ্গতেই নিজেকে সে রোদের বুকে আবিষ্কার করে। নিজেকে রোদের বুকে দেখে ইতির চোখ কপালে উঠে যায়। মনে মনে বলে,
– ইসস…. উনি দেখে ফেললে কি সর্বনাশ টাই না হয়ে যাবে।
আলতো করে ইতি উঠে যাচ্ছিলো কিন্তু রোদ ইতির হাত ধরে আটকে ফেলল সাথে সাথে একটানে ইতিকে নিজের বুকে নিয়ে নিলো রোদ। আর বলল,
– যাও কোই আমাকে রেখে। কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আপনার।
রোদ ইতিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। ইতিও আর বাঁধা দিলো না। পরে কি হবে তা ইতি জানে না আর আপাততো জানতেও চায় না। বাকি যে কয়টা দিন আছে ইতি আর নিজেকে রোদের থেকে দূরে রাখতে যায় না। ইতিও রোদের বুকে মাথা রাখলো। রোদের বুকে কান পেতে তার হৃদ স্পন্দন শুনতে লাগলো ইতি। ইতির মনে হচ্ছে তার সবটা জুড়ে শুধু সে নিজে। রোদ ঘুমিয়ে পরলে ইতিকে হালকা ছেড়ে দিলো। ইতি সাথে সাথে উঠে পরলো। কিন্তু উঠে বসতেই ইতির মাথাটা ঝিমাতে লাগলো। মাথা ভাড় হয়ে আছে। ইতির মনে পরে গেলো গত রাতের কথা উল্টা পাল্টা খেয়ে এই অবস্থা। ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে ইতি খেলো আরেকটা ধাক্কা। রোদ ইতির জন্য লেবুর সরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতি বেড়িয়ে আসতেই লেবুর সরবতটা এগিয়ে দিলো রোদ। দিয়ে বলল,
– নাও এটা খাও মাথা ভাড় কমে যাবে রোমার।
ইতি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তা দেখে রোদ বলে,
– রাগে তো মাথা ঠিক থাকে না এখন আবার লজ্জায় লাল হওয়া হচ্ছে।
ইতি নিজের গাল নিজেই হাত দিয়ে ধরে ডেকে রাখলো। আর মনে মনে ভাবছে, “উনি কিভাবে বুঝলো আমি লজ্জা পেয়েছি সত্যি কি আমার গাল লাল হয়ে গেছে”।
রোদ ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে ডাইনিংয়ে এসে চমকে যায় ইতির কান্ড দেখে। বলে,
– এতো কিছু কেনো?
ইতি বাচ্চাদের একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আপনার জন্য। আপনি খাবেন তাই।
– আমি? এতো কিছু একা খাবো?
বড় বড় চোখ করে ইতির দিকে তাকালো রোদ। রাগে নয় বিস্ময় নিয়ে। কারণ এতো খাবার রোদের পক্ষে খাওয়া অসম্ভব। ইতি মুখটা ছোট করে নিয়ে বলল,
– আপনি খাবেন না?
আহারে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে তা দেখে রোদের মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেলো,
– কে বলেছে খাবো না। আমি সব খাবো।
বলেই রোদ বসে পরলো খেতে। রোদ খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, “সত্যি আমার বউটা মাশাল্লাহ অনেজ মজা করে রান্না করে” রান্না এতো ভালো হয়েছে যে রোদ অনেকটা খেয়ে নিলো। খাবারগুলো খুব মজা হয়েছে। কত দিন ধরে বউয়ের রান্না খায়না রোদ। আজ অনেক দিন পর তৃপ্তি করে খেলো।
রোদ খাচ্ছে আর ইতি অপলক তাকে দেখছে। রোদ বাচ্চাদের মতো করে হালুম হালুম করে খাচ্ছে। নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে ইতির এই মানুষটাকে সে কত গুলো দিন শুধু জ্যাম আর পারুটি দিয়েছে খেতে। অথচ ইতির রান্না কত আনন্দের সাথে খায় সে। এসব ভেবে নিজেই বকছে ইতি।
রোদ খেতে খেতে বলে,
– আর নিজেকে বকতে হবে না।
রোদের কথা শুনে ইতি হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে রইলো। রোদ কিভাবে ইতির মনের কথা বুঝলো।
– আপনি…..
– এতো জোরে জোরে মনে চিন্তা করলে তো শুনাই যাবে। আমার কি দোষ।
বলেই আবার খাওয়ায় মনযোগ দিলো রোদ। খেতে খেতে হুট করেই ইতির দিকে খাবার তুলে ধরলো ইতি।
রোদ ইতির সামনে খাবার ধরতে তা যে কি খুশি লাগছে। ইতি নিজের দু হাত দিয়ে রোদের হাতটা ধরে তৃপ্তির সাথে খাবারটা মুখে নিলো। আজ রোদ ইতিকে খাইয়ে দিলো। যতবার রোদ ইতির মুখে খাবার দিয়েছে ঠিক ততোবার ইতি রোদের হাতটা ধরেছে।
আজ যেন রোদের খুশির সীমা থাকছে না। কিন্তু কোন ভুল করছে না তো সে। ভুল হলে হবে। পরে দেখা যাবে আর একটুও কষ্ট দিতে চায় না রোদ ইতিকে। ইতি চলে যাইতে চেলে যাবে এখন তো তার কাছে আছে তাই এখন নিজের মতো করেই রাখবে রোদ ইতিকে। অনেক ভালো রাখবে অনেক অনেক ভালো।
দুজন খেয়েই রেডি হয়ে নিলো অফিসের জন্য।
রোদ আগে আগে যাচ্ছে আর ইতি পিছনে পিছনে। রোদ দরজা দিয়ে বের হতে নিয়েও আবার পিছনে ফিরে এলো। এসে বলল,
– একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ বাকি।
বলে ইতির মুখটা দু হাত দিয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু খেলো রোড। তারপর আবার বেরিয়ে গেলো। রোদ ঠিক করেছে এখন থেকে বাকি কয়টা দিন প্রত্যেক দিন এটাই করবে রোদ এতে যদি ইতি আপত্তিও করে তাও এটাই করবে রোদ।
রোদের আচমকাই ফিরে এসে কপালে চুমু খাওয়াতে থ হয়ে যায় ইতি। মনে মনে ভাবে, “ইসস….এতো সুখ”। ইতির মনে হচ্ছে কোন স্বপ্নে আছে সে। একটু পরেই ঘুম ভেংগে যাবে তার। কিন্তু ইতি এই ঘুম থেকে উঠতে চায় না। এতো সুখের স্বপ্ন ইতি শেষ করতে চায় না। এই স্বপ্ন অনন্তকাল চলতে থাকুক। রোদ নিচে চলে গেলো। ইতি নিজেকে সামলে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। নিচে নামতেই ইতি দেখে রোদ গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে আজ আর সে গাড়ির দরজা খুলে দাড়াননি। ইতি রোদের কাছাকাছি যেতেই রোদ গাড়ির দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়। ইতি একটা হাসি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে নিজেই বসে পরলো।
– ইয়েস।
রোদ খুশির চটে ইয়েসটা একটু বেশি জোরেই বলে ফেলল। ইতি মনে মনে বলে, “পাগল একটা”।
ওরা অফিসে যাচ্ছিলো । এমন সময় হুট করে ইতি বলে,
– গাড়ি থামান। গাড়ি থামান জলদি।
ইতির চিৎকারে গাড়ি কোন রকমে ব্রেক করল রোদ,
– কি হয়েছে?
– আপনি বসেন আমি আসছি।
ইতি গাড়ি থেকে নেমে পাশের একটা একটা শপে ডুকলো। আবার ৫মিনিটেই বেরিয়ে এলো ইতি কিছু একটা নিয়ে। ইতি ফিয়ে আসতেই রোদ বলে,
– কি হলো এমনভাবে বললে আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আগে বললেই হতো কিছু কিনবে।
– সরি।
বলেই একটা হাসি দিলো। ইতি জানে তার হাসি দেখলেই রোদ গলে যাবে।
রোদ মনে মনে ভাবে, “ব্যাস মেডাম হাসি দিয়ে দিয়েছে আর চাইলেও রাগ করতে পারব না”।
।।
।।
অফিসে চলে গেলো ওরা।
আদি ইতির কেবিনে এসে বলে,
-কি এসে আমার সাথে দেখা করলে না যে?
হঠ্যাৎ আদিকে দেখে ইতি চমকে গেলো। এতক্ষণ ইতি আদির কথা ভুলেই গিয়ে ছিলো। এখন ইতির ঘুমটা মনে হয় ভেংগে গেলো সাথে স্বপ্নটাও। এমন সময়ই ইন্টারকমে ফোন এলো। ইতি রিসিভ করে,
– হ্যালো।
রোদ বলে,
– ক্রিসেন্টের ফাইল নিয়ে আমার কেবিনে আসো, নাও।
– আসছি।
আদিকে পরে কথা বলছি বলেই ফাইলটা নিয়ে রোদের কেবিনে চলে গেলো ইতি।
– আসবো?
– বসো
ইতি রোদের সামনে বসে রইলো। ইতি বসে আছে অনেক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু রোদ কিছু বলছে না। তাই ইতি বলল,
– আমি কি আপাততো চলে যাবো? পরে আসবো?
– আমি কি বলেছি যেতে?
– নাহ, বাট আপনি তো বিজি আর…
– আর টারের প্রয়োজন নেই চুপচাই বসে থাকো। তবে একটা কাজ করতে পারো।
– কি?
– আমার জন্য এক কাপ কফি করতে পারো তাও এখানে বসেই বাইরে যাওয়া চলবে না। ওখানে সব রাখা আছে।
ইতি চেয়ার থেকে উঠে বাহিরের দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে রোদ বলে,
– বললাম না সব এখানেই আছে।
– কফি এখানে আছে তবে আসল জিনিসটাই এখানে নেই। ১ মিনিট আসছি।
ইতি নিজের কেবিনে গিয়ে আবার ১ মিনিটের মাথায় ফিরে আসে। এসে রোদের জন্য কফি রেডি করে তার সামনে দেয়। ইতির বানানো কফির ঘ্রাণ নাকে যেতেই রোদ ফাইল থেকে মাথা তুলে তাকাতেই খুশি হয়ে যায়। কফির মগ থেকে চোখ তুলে ইতির দিকে তাকায় সে। রোদের মুখে হাসি দেখে ইতি নিজেও মুচকি মুচকি হাসছে। এই মুহুর্তে রোদের ইতিকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা যে এতো কিছু কিভাবে পারে তা ভেবে পায় না রোদ। রোদের প্রিয় মগটা যেটা ইতির সাথে রাগ করেই ভেঙে ফেলেছিলো সে। সেই মগটা থেকেই ধোঁয়া উড়ছে। অবাক হয়ে রোদ জিজ্ঞেস করে,
– এটা কোথায় পেলে?
– অফিস আসার সময় শপটায় চোখ পরতেই আপনার মগটার কথা মনে পরে গেলো। হুবহু এক। তাই দেখার সাথে সাথে নিয়ে নিলাম তখন। এইটা যে পাবো ভাবতেই পারিনি।
রোদ কফিটা নিয়ে মুখে দিতে তার শান্তি। রোদের কফি এখন ইতি ছাড়া কেউ বানাতে পারে না। রোদের তো মনে হয় সে নিজেও ভুলে গেছে কিভাবে বানাতো।
রোদ কফির মগে চুমুক দিতেই ইতি আবার আগের জায়গায় বসে পরে। রোদ হাত থেকে মগটা রাখতেই ইতি নিজের অজান্তেই রোদের কফির মগটা নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে দেয়। মুখ তুলে তাকাতেই দেখে রোদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ইতি হালকা লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে মগটা রোদের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রোদ ইতির হাত থেকে মগটা নিয়ে ঠিক যে জায়গাটায় ইতির লিপস্টিকের রেখা ছিলো সেখানেই মুখ দিলো। এটা দেখে ইতির ভেতরেটা কামড়ে উঠল। যেন রোদ কফির মগে নয় ইতির ঠোঁট জোড়াকে কামড়ে ধরেছে। লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। রোদ আবার কাজ করতে লাগলো। ইতি অহেতুক রোদের সামনে বসে রইলো। লাঞ্চের সময় একেবারে মিটিং ছিলো শেষ করে ইতি নিজের কেবিনে ফিরে গেলো। ইতি কেবিনে আসতেই তার পিছনে পিছনে আদিও চলে এলো। আদি পিছন থেকেই বলে,
– আজ খুব বিজি?
– হুম।
– লাঞ্চ করেছো? না করে থাকলে চলো একসাথে করি।
– ওহ… আই ওয়াজ মিসিং ইউ।
ইতি আদির দিকে তাকিয়ে আছে তাকে কি বলবে বা এই মুহুর্তে কি বলা উচিত তা ইতিবুঝতে পারছে না। কিছুই মাথায় আসছে না ইতির। তার কেবল রোদের কথাই মনে পরছে। আবার ইতির ইন্টারকমে কল এলো। রোদ ফোন করেছে,
– রেসলির ফাইল নিয়ে আসো, নাও।
– জি,
ফোন রেখেই ইতি আদির দিকে তাকায় কিছু একটা বলতে কিন্তু ইতি কিছু বলার আগেই আদি বলে,
– আবার ডাকছে ফাইল নিয়ে তাই না?
– হুম।
– আচ্ছা যাও।
ইতি আবার রোদের কেবনে চলে গেলো। গিয়ে আগের মতো রোদের সামনে বসে পরল। রোদ কাজ করছে আর ইতি তাকে দেখছে। হুট করেই ইতির মনে হলো রোদ সকালেও এমন করেছে আবার করছে এটা কি বাই চান্স সে ইচ্ছে করে করছে ভেবেই ইতি জিজ্ঞেস করে,
– আপনি আমাকে ইচ্ছে করে আটকে রেখেছেন যেন আদি আমার সাথে কথা না বলতে পারে তাই না?
হুট করে ইতির এমন কথায় রোদ অবাক হয়ে তাকায় মনে মনে ভাবে ও বুঝল কিভাবে কিন্তু ইতিকে বুঝতে না দিয়ে রোদ বলে,
– নো।
– ইয়েস।
– আই সেইড নো।
– ওকে ফাইন। তাহলে আমি যাই অনেক্ষণ হয়ে গেলো গিয়ে আদির সাথে কথা বলি একটু বেচারা অপেক্ষা করছে।
বলেই উঠে ইতি হাটা শুরু করলো। রোদ বিদ্যুৎ এর গতিতে উঠে এসে ইতির হাত ধরে একটা টান দিয়ে ওকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো আর বলে,
– কই যাবা তুমি?
– আপনাকে কেন বলবো?
– জি, না মেডাম আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। চুপচাপ এখানে বসে থাকো। একদম নড়বা না। নড়লে পা ভেঙে দিবো।
– সেকি পা ভাঙলে আমি হাটবো কিভাবে?
– তোমার হাটতে হবে না। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরবো।
ইতি চেয়ার থেকে উঠে রোদের খানিকটা কাছে গিয়ে তার চোখে চোখে রেখে বলে,
– সত্যি?
এই মেয়েটার চোখে গভীর একটা ফাঁদ আছে। মায়ার ফাঁদ। রোদ তার চোখে চোখলেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। নিজের মাঝে আর থাকে না সে। যেমন এখন আর নেই।
– সরি আমি কিছু দেখিনি।
সবসময় এই টাইমিং গুলোতেই রাফসানটাকে আসতে হয়। রোদ ইতির কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। বলে,
– ইটস ওকে রাফসান এসো।
– আমি না হয় পরে আসি?
– না না এসো। বলো কি বলবে।
রাফসান রোদকে কিছু ফাইল দেখালো আর রোদের কিছু স্বাক্ষর নিলো। তারপর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইতির দিকে তাকাতেই রাফসান আর ইতির চোখা-চোখি হয়। কিন্তু আজ রাফসানের ইতির দিকে তাকানোটা অন্য রকম ছিলো। কেমন ছিলো তা ইতি নিজেও বুঝতে পারছে না। রাফসান ইতিকে কিছুই বলল না চলে গেলো।
।
অফিস টাইম শেষ কিন্তু রোদ কাজ করেই যাচ্ছে বাসায় যাওয়ার নামই নেই।
পুরো অফিস খালি হওয়ার পর রোদ নিজের কেবন থেকে বের হয় ইতিকে নিয়ে।
।।
বাসায়।
ইতি ডিনার রেডি করে বসে আছে রোদের জন্য। রোদ আসতেই তাকে খারাব বেরে দিলো ইতি রোদ খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ইতি শুরু করে যাবে আর তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোন হাতে নিতেই দেখে রাফসান তাই ইতি রোদকে বলে,
– আপনি খান আমি এখনি আসছি।
ইতি ডাইনিং থেকে উঠে নিজের বেড রুমের বারান্দায় চলে যায়।
– হ্যালো।
– তুমি কি স্যারকে সব বলে দিয়েছো?
– আমি আসলে…
– কি করছো কি তুমি এসব ইতি?
ইতি চুপ হয়ে গেলো। রাফসান অনেক রেগে আছে তা ইতি বুঝতে পারছে। রাফসান বলতে থাকে,
– কেন করছো? তুমি কি কিছু বুঝতে পারছো? আজ সারাদিন আমি দেখেছি আদিটাকে ছটফট করতে তোমার জন্য। একটু পর পর যাচ্ছিলো দেখতে তুমি স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়েছো কিনা দেখতে। শুধুমাত্র তোমাকে একটু দেখবে, একটু কথা বলবে বলে। কেন করছো এমন? তিন তিনটে জীবন ইতি। কেন এভাবে নষ্ট করে দিচ্ছো? কেন জীবনটাকে নিজের জন্য, স্যারের জন্য, আদির জন্য জাহান্নাম বানাচ্ছো? কেন ইতি?
ইতি চুপ করে রইল। এই মুহুর্তে তার বলার আসলেই কিছু নেই। কারণ রাফসান কিছু ভুল বলছে না।
– তুমি স্যারকে নিজের মনের কথা বলছো না। স্যার তো তোমার কাছে এমনিতেই ঋণি তুমি তার এতো বড় উপকার করছো বলে। তাহলে কি তুমি পারতে না বলতে যাবে না তুমি। তুমি তার সাথেই থাকতে চাও। কেনো বলছো না। আর ওই দিকে আদি ছেলেটা কত এক্সাইটেড তোমাদের বিয়ে নিয়ে। একবার ভেবেছো তুমি? এই তো গেলো তাদের দুজনের কথা সবচাইতে বড় অন্যায়টা তো তুমি নিজের সাথে করছো। আদিকে যদি বিয়ে কর তাহলে পারবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে রেখে অন্য জনের সাথে ভালো থাকতে। বলো পারবে? চুপ করে আছো কেনো? কথা বলো? এখন তো আর এটাও বলতে পারছি না ইতি সময় আছে বলে দাও কারণ অলরেডি তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছো আর তাও যদি বলিও তোমাকে আমি চিনি সময় থাকলেও তুমি বলবে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে ইতি আর জীবনটা ছেলে খেলা নয়। এভাবে আর খেলো না প্লিজ আমি রিকুয়েস্ট করছি প্লিজ।
রাফসান নিজের কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়। ইতির থেকে কোন জবাব শুনার জন্য অপেক্ষা করে না।
“আসলেই তো জীবনটা তো ছেলে খেলা নয়। এখন আমি কি করবো”। সেখানেই দাড়িয়ে রইল ইতি আর ভাবতে লাগলো। ধীরে ধীরে কিছু ভাবার মতো চিন্তা শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে ইতি। হঠ্যাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। পিছনে ফিরতেই দেখে রোদ।
– কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? খেতে এলে না যে?
– আমার খুদা নেই।
– তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কিছু কি হয়েছে?
– নাহ, আমি ঠিক আছি।
ইতি আর কোন কথা বললো না। রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। রাফসানের বলা কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে মেয়েটাকে।
ইতি হয়নি বলে চলে গেলেও রোদ তা মানতে পারছে না। রোদ নিজেও এসে ইতির পাশে বসে আছে। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে কিন্তু রোদের মন বলছে সে ঘুমায়নি। ঘুমিয়ে পরার ভান করছে তাও রোদ ডাকল না ইতিকে। কি হয়েছে হুট করে মেয়েটার। ইতির জন্য অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছে রোদের। একটু আগেও সে ঠিক ছিলো। ইতিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রোদ নিজেই ঘুমিয়ে পরে।
রোদের ধারণাই ঠিক ছিলো ইতি ঘুমায়। রোদ যদি আবার জানতে চায় কি হয়েছে তার তাই সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। সারারাত ইতি দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি। সারারাত ছটফট করেই গেলো তার। মস্তিষ্ক খালি হয়ে আছে তার কিছু ভাবতে পারছে না। রাফসানের বলা কথাগুলোই বার বার ইতির মস্তিষ্কে গোলপাক খাচ্ছে।
।।
।।
সকালে।
রোদ খুলতেই দেখে ইতি পাশে নেই। এতো সকাল সকাল মেয়েটা কোথায় গেলো। রোদ বিছানা ছেড়ে উঠে বসতেই দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রোদ উঠে গিয়ে পিছন থেকে ইতিকে জড়িয়ে বলে,
– গুড মর্নিং।
ইতি কিছু না বলে হুট করে পিছন ঘুড়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে। রোদ নিজেও কিছু বলে না। ইতিকে নিজের বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রোদ বলে,
– অফিস যেতে হবে তো এখন তো ছাড়ো।
ইতি কিছু না বলেই রোদকে ছেড়ে দেয়। রোদ ফ্রেস হয়ে আসার আগেই ইতি তার জন্য নাস্তা রেডি করে ফেলে। রোদ ডাইনিংয়ে এসে ইতিকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– সেকি তুমি রেডি হও নি যে?
– আআ…আমি
– কিছু বলবে?
– আমি আজ অফিস যাবো না।
– কেন শরীর খারাপ লাগছে?
রোদ ইতির কাছে এসে কপালে হাত রাখে।
– জ্বর তো নেই।
– না না শরীর ঠিক আছে। এমনি যেতে মন চাইছে না। ভালো লাগছে না তাই।
– আচ্ছা ভালো না লাগলে অফিস যেতে হবে না। তুমি বাসায় থেকেই রেস্ট নাও। আমি আসি।
রোদ ইতির কপালে একটা চুম খেয়ে বেরিয়ে গেলো। ইতি ডাইনিংয়েই বসে রইল। কি করবে সে এখন তাই ভাবছে।
।।
।।
অফিসে।
আদি সকাল থেকে ইতিকে দেখছে না। ফোন দিয়েছিলো কিন্তু সে ধরেনি। ইতির কথা ভাবতে ভাবতেই আদি করিডরের একপাশ থেকে অন্য পাশে যাচ্ছিলো আর তখনি রোদ তার সামনে এসে পরে। তাকে দেখে আদি জিজ্ঞেস করে,
– স্যার ইতি আসেনি?
– ইতির ভালো লাগছিলো না তাই আসেনি।
– কি হয়েছে? শরীর খারাপ নাকি? আমি যাই ওকে দেখে আসি।
– না আদি তার প্রয়োজন নেই। ও ঠিক আছে। তোমার যেতে হবে না ওর একটু রেস্ট দরকার।
বলেই চলে রোদ চলে গেলো।
আদি ভাবে আবার ফোন দিয়ে কথা বলে নিবে তাই ইতিকে আবার ফোন দেয়। রিং হচ্ছে কিন্তু ইতি ধরছে না। অনেকগুলো ফোন দিলো আদি কিন্তু ইতি ধরছেই না। আদি আরেকবার কল দেয় আর মনে মনে ঠিক করে এটাঈ লাস্ট এখন না ধরলে চলে যাবে সে ইতিকে দেখতে।
ইতি ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে অনেক্ষণ ধরে। আদি সেই কখন থেকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। তাই এবার বাধ্য হয়েই ফোনটা ধরলো ইতি,
– হ্যালো।
– এখন ফোনটা না ধরলে আমি চলেই যেতাম তোমাকে দেখতে।
– না আসতে হবে না। বলো কি বলবে।
– কি হয়েছে তোমার?
– কিছু না আমি ঠিক আছি। শুধু একটু রেস্ট নিতে চাচ্ছি।
– আচ্ছা রেস্ট নাও। কিছু লাগলে আমাকে জানিও। কেমন? আমি হাজির হয়ে যাবো সাথে সাথে।
– হুম, ঠিক আছে রাখছি।
বলেই ইতি ফোন রেখে দিলো।
আজ তিন দিন ধরে ইতি অফিস যায় না। নিজেকে সময় দিয়ে অনেক কিছু ভাবলো ইতি। কোন ভাবেই কিছু করতে পারছে না সে। শেষমেষ একটা ডিসিশন নিতেই হলো ইতিকে। হ্যাঁ, ইতি যা ভেবেছে তাই করবে সে।
তিনদিন পর আজ অফিসে এলো ইতি। কাল রোদ আর ইতির সাইনিং সেই সাথে তাদের শেষ দিন।
.
.
চলবে…….
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-২০
Writer : Eti Chowdhury
.
আজ তিন দিন ধরে ইতি অফিস যায় না। নিজেকে সময় দিয়ে অনেক কিছু ভাবলো ইতি। কোন ভাবেই কিছু করতে পারছে না সে। শেষমেষ একটা ডিসিশন নিতেই হলো ইতিকে। হ্যাঁ, ইতি যা ভেবেছে তাই করবে সে।
তিনদিন পর আজ অফিসে এলো ইতি। কাল রোদ আর ইতির সাইনিং সেই সাথে তাদের শেষ দিন।
কালকের পর হয়ত সব বদলে যাবে।
।
অফিসে।
আদি ইতি এসেছে শুনে তার সাথে দেখা করতে আসে,
– এখন কেমন আছো?
– ভালো।
– তুমি কি কোন কারণে আপসেট?
– নাহ চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি।
আদি চলে গেলো। ইতি কিছু জরুরী কাজ সেরে নিলো। সব পেনডিং কাজ গুলোর কিছু কিছু কাজ শেষ করে ফেলল ইতি। কিছু কাজ হাফডান করা ওগুলো সব রেডি করে নিলো। অফিসের যেসব কাজ, কাগজপত্র ইতির দায়িত্বে আছে তা সব ফাইল, পেপার নিয়ে রাফসানের কেবিনে গেলো।
– আসবো?
রাফসান তাকিয়ে দেখে ইতি।
– তুমি আবার কবে থেকে আমার পারমিশন নিতে শুরু করলে?
ইতি একটা হাসি দিলো। সামনে গিয়ে ফাইলগুলো এগিয়ে দিলো রাফসানকে। এতো ফাইল থেকে রাফসান জিজ্ঞেস করে,
– এগুলো কি?
– কিছু কাজ পেনডিং আছে এগুলো এখনি শেষ করা যাবে না তাই তোমাকে দিচ্ছি। এগুলো এখন থেকে তোমার রিসপোনস্লিব্রিটি।
রাফসান অবাক হয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে,
– এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি কোথায়ও চলে যাচ্ছো।
– হু নোস ওয়াট হেপেন্স নেক্সট।
বলেই ফাইলগুলো রাফসানের টেবিলে রেখে দিয়ে ইতি বেরিয়ে যাবো কিন্তু আবার ফিরে এলো। তা দেখে রাফসান বলে,
– কি হলো?
ফ্রেন্ডরা যেভাবে হাগ করে ইতি রাফসানকে হাগ করলো। ইতির স্কুল, কলেজ এমনকি ভার্সিটি লাইফেও তেমন কোন ভালো বন্ধু ছিলো না তাই রাফসান অনেক অনেক স্পেশিয়াল ছিলো ইতির জন্য। শুধু বন্ধ নয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের মতো ইতির পাশে থেকেছে ছেলেটা। সব সময় ইতির ভালোটাই চেয়েছে। ইতির কর্মকান্ড দেখে রাফসান বলে,
– তোমার কি কিছু হয়েছে?
– নাহ।
ইতি বেরিয়ে গেলো রাফসানের কেবিন থেকে। রাফসান যে বিশ্বাস করবে না তা ইতি জানে। তাই কথা বাড়ালো না। ইতি নিজের কেবিনে বসে আছি। রিমি আসলো,
– ম্যাম আসি?
– এসো রিমি।
রিমি আসতেই ইতি উঠে গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে পানি চলে এলো ইতির। ইতিকে এভাবে দেখে রিমি বলে,
– ম্যাম কি হয়েছে আপনার?
– কিছুনা। শুনো রিমি সব সময় রাফসানের পাশে থাকবে। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
– জি আচ্ছা।
রিমি যা বলতে এসে ছিলো তা না বলেই চলে গেলো। কিছু একটা তো হয়েছে তা রিমিও বুঝতে পারছে।
ইতির সব কাজ শেষ এখন সবচাইতে জরুরী কাজ দুটো করবে সে। তখনি ফোন আসলো রোদের।
– হ্যালো।
– আমি একটু বাইরে যাচ্ছি আমার ফিরতে দেড়ি হয়ে যাবে । গাড়ী আছে তুমি বাসায় চলে যেও কেমন?
– আচ্ছা।
রোদ ফোন রেখে দিলো। ইতি খামটা হাত থেকে টেবিলে রেখে দিলো। অনেক্ষণ খামটার দিকে তাকিয়ে রইলো। খামটা ব্যাগে রেখে দিলো ইতি। এখন শেষ কাজটা করবে সে। একটা ছোট্ট বক্স নিয়ে উঠে গেলো ইতি।
ইতিকে হঠাৎ নিজের ডেস্কে দেখে অবাক হয় আদি। বলে,
– তুমি হঠাৎ?
ইতি বক্সটা আদির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– এটা তোমার জন্য।
– আমার জন্য?
– হুম।
আদি বক্সটা নিয়ে খুলতে নেয় কিন্তু ইতি বাধা দিয়ে বলে,
– আজ দেখো না প্লিজ।
– কেনো?
– প্লিজ। কাল দেখো।
– কেনো?
– প্লিজ। আই রিকুয়েস্ট।
– আচ্ছা বাবা দেখবো না।
বলেই ইতির কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো আদি। ইতি বাঁধা দিলো না। আদির গালে আলতো করে হাত দিয়ে ইতি বলল,
– ভালো থেকো।
বলেই ঘুরতে যাবে ইতি তখনি আদি ইতির হাতটা ধরে ফেলে বলে,
– এমন ভাবে বললে যেন আর কখনও দেখা হবে না। এভাবে বললে কেন?
– এমনি কখনও তো তোমাকে ভালো থাকার কথা বলা হয়নি তাই বললাম।
– কি হয়েছে তোমার?
– কিছু হয় নি।
নিজের কেবিনে চলে এলো। সব কিছু দেখে নিলো মন ভরে। এই দেখাই শেষ দেখা। আর দেখা হবে না ইতির। আর বসা হবে না। সব হারিয়ে যাবে। সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে ইতিকে।
উঠে পরলাম ইতি। অফিস শেষ হতে সময় আছে তাও সে বেরিয়ে গেলো। ইতির যে আরো একটা জরুরী কাজ রয়ে গেছে তা যে শেষ করতে হবে তাকে।
।।
।।
বাসায়।
ইতি বাসায় এসেই শাওয়ারের নিচে অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। অনেকটা সময় নিয়ে ভিজলো। শুধু ভিজলোই না চোখের পানিও যে শাওয়ারের পানির সাথে পাল্লা দিয়ে পরতে লাগলো ইতির।
রোদের মিটিং টায় যে এতো লেট হয়ে যাবে বুঝতেই পারেনি সে। ইতিও বাসায় একা ফোনটাও ধরল না টেক্স দিলো বাসায় আছে তার জন্য অপেক্ষা করছে। ফোনটা ধরলে কি হতো মেয়েটার। এখন যে কতক্ষণে বাসায় যাবে রোদ তার আর তরসইছে না।
প্রায় ১ ঘন্টা লেগে গেলো রদের বাসায় পৌছাতে। ৯ টার বেশি বেজে গেছে পাগলীটা খেপেছে কিনা কে জানে। তাই আর কনিংবেল দেবার সাহস হলো না রোদের। নিজের চাবিটা দিয়েই গেইটটা খুলল। বাসাটা ঠান্ডা লাগছে। ধীরে ধীরে রুমের দিকে পা বাড়ালো রোদ যেন ইতি বুঝতে না পারে রোদ এসেছে। রুমের দরজা টাচ করতেই খুলে গেলো। রুমে হিমেল শীতল বাতাস বইছে। লাইট ওফ করা। তাও বারান্দায় যে হালকা আলো আছে সে আলোতে ইতিকে বেস দেখা যাচ্ছে মিররের সামনে দাড়িয়ে আছে সে কিন্তু ওকে অন্য রকম লাগছে। রোদ ইতির কাছে এগিয়ে গেলো। রুমের চারিদিকে নানারকম মোমবাতি ঝলছে। একদম রোমান্টিক একটা মুড তৈরি হয়ে রয়েছে রুমে। রোদ ইতিকে ডাকে,
– ইতি এই ইতি…
কিন্তু নাহ মেয়েটা কোন সাড়া দিচ্ছে না রোদের ডাকের। রোদের কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। তার সহ্য হচ্ছে না। তাই রোদ রুমের লাইট অন করে দিলো। লাইট অন করে পিছনে ফিরে তাকাতেই রোদের চোখ থমকে গেলো, পা থমকে গেলো, নিঃশ্বাস থমকে গেলো, রোদের যেন এখনি দমবন্ধ হয়ে যাবে। এটা সে কি দেখছে। রোদের বউটা আজ সত্যি সত্যি বউ সেজেছে। লাল একটা শাড়ি পরেছে ইতি। সাথে হালকা সাজ। শাড়িটা দেখে রোদের মনে যায় এই শাড়িটা অনেক আগে সে ইতির জন্য এনেছিলো কিন্তু দেয়া হয়নি কখনো কারণ পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো। রোদ থমকে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো অপলক ইতিকে দেখছে সে। শাড়িটায় ইতিকে যা মানিয়েছে বলে ভুজানো সম্ভব নয়। শাড়িটা কিছুটা পাতলা হওয়ায় ইতির শরীরের অংশবিশেষ বুঝা যাচ্ছে। ইতির পেটটা বেস দেখতে পাচ্ছে রোদ। মনে মনে রোদ বলে,
– উফফ…. মেয়েটা মনে হয় আমায় উন্মাদ করেই তবে থামবে। এখন কিভাবে থাকি আমি ওর থেকে দূরে।
ইতি রোদের কাছে আসছে লাগে। এক পা করে আগাচ্ছে। রোদ ঠায় দাড়িয়ে আছে। আজ মনে হচ্ছে রোদ নিজেই জমে গেছে। ইতি রোদের কাছাকাছি এসেই মুখ খুলল,
– একটা জিনিস চাইবো দিবেন?
– কি চাই বলো?
মনে মনে রোদ বলে, “আমি নিজেই তো তোমার”।
ইতি আজ সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলেই ফেলল,
– আজকের রাতটা আমায় দিবেন প্লিজ?
রোদ অবাক হয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা বলছে কি। ইতি বলে,
– প্লিজ দিন না আজকের রাতের জন্য আমার স্বামীকে আমায়। স্ত্রীর অধিকার টুকু দিন না শুধু আজকের রাতের জন্য।
– এটা তুমি কি বলছো? এটা হয় না।
বলেই রোদ পিছনে ফিরে গেলো। ইতি বলে,
ইতি- কেনো হয় না? আমি চাই আপনাকে আজ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না। প্লিজ…
বলতে বলতে ইতি রোদের পায়ের কাছে বসে পরলো। হাত দিয়ে ইতি রোদের পা ধরলো। আর বলল,
– দিন না প্লিজ কেবল আজকের রাতটার জন্য আমায় আপন করে নিন। আপনার মাঝে নিন না প্লিজ আর কিছুই চাই না। দিন না আজ আপনাকে আমায়।
– তুমি বুঝতে পারতেছো না…
রোদ কথাটা শেষ করতে পারেনি। ইতি উঠে গিয়ে রোদের সামনে দাড়ালো। ইতি রোদের শার্টের কলার চেপে ধরলো,
– কেনো হয় না। আপনি আমার স্বামী কেন হয় না?
– তুমি বুঝার চেষ্টা কর। তোমার মাথা এখন ঠিক নেই।
– বাস…. ঠিক আছে আপনি দিবেন না তো?
ইতি রোদের সামনে দিয়ে বাথরুমে ডুকে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে গেলো। বলে,
– যতক্ষণ না আপনি আমায় আপন করে নিচ্ছেন ততক্ষণ আমি ভিজতে থাকবো। সরবো না একটুও। এতে যদি আমি মরেও যাই আমার কোন আফাসোস নেই।
– কি পাগলামী করছো প্লিজ সরে যাও।
রোদ ইতির কাছে যেতে নিলে ইতি বলে,
– একদম আমার কাছে আসবেন না। হয়ত আপনি আজ রাত আমায় আপন করে নিবেন না হয় আমি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
রোদ কোন ভাবেই ইতিকে কথা বুঝাতে পারছে না। রোদ কিভাবে ওর সাথে থাকবে না এটা হয় না। রোদ নিজেও তো ওকে চায় তবে তা এক রাতের জন্য নয় সারাজীবনের জন্য। রোদ বলে
-প্লিজ পাগলামী বন্ধ করো। প্লিজ…
ইতি হাত দিয়ে ইশারা দিলো, “নন..না আ..আস..আসবেন ননা”। ঠান্ডায় ইতি কথাও বলতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে ইতির। আসতে আসতে চোখেও গোলা দেখছে। দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। ঝুমতে লাগলো ইতি।
রোদের একদম সহ্য হচ্ছে না। ইতির কষ্ট হচ্ছে দেখে রোদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিই বা এমন চাইছে নিজের স্বামীকেই তো চাইছে আর রোদ এতোটুকুও দিতে পারছে না। রোদ ঝটকরে গিয়ে ইতিকে জড়িয়ে ধরলো। ইতির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো রোদ। পাগলের মতো ইতির ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো রোদ। ইতি রোদকে পেয়ে ঝাপটে ধরলো। রোদের সাথে তালে তাল দিয়ে চুমু খেতে লাগলো। যেনো বহু বছরের পিপাসা মিটাচ্ছে। ওভাবেই অনেক্ষণ দুজন দুজনকে আদর করলো। রোদ ইতিকে আলতো করে ছেড়ে দিয়ে ওর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে ওর গাল দুটো দুহাতে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, দুজনেই ভিজে গেছে। ইতি রোদের শার্টের বাটন গুলো খুলতে লাগলো। শার্টটা খুলে ফেলে দিলো। রোদ ইতিকে ছেড়ে দিলো। ইতি রোদের দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করেই রোদ ইতিকে কোলে তুলে নিলো।
রোদ ইতিকে কোলে তুলে নিতেই তার চোখে চোখ রেখে চেয়ে রইলো। ইতি আলতো করে রোদের গলাটা জড়িয়ে ধরলো।
রোদ ইতির চোখ থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না। ওকে নিয়ে বিছানায় গেলো। ইতিকে শুইয়ে দিলো রোদ। দুজনে ভিজে চুপ চুপ হয়ে গেছে। রোদ উঠে ফিরে দাড়ালো।
– আমি পারবো না। এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে কিভাবে তোমার কাছে যাই।
ইতি আজ আর রোদের কোন বাধাই আমি মানবে না। উঠে রোদকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রোদ ইতির উপরে অপলক তাকিয়ে আছে ইতির চোখে।
ইতির আচমকা টানে রোদ গিয়ে ওর উপর পরলো। ইতি রোদের ঠোঁটটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। রোদও আর নিজেকে বাঁধা দিলো না। ইতির মাঝে ডুব দিলো। আসতে আসতে রোদের হাত দুটো দিয়ে ইতির হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। আজ যেন দুজনেই উন্মাদ হয়ে গেছে। ইতির আঁচলটা সরিয়ে দিলো রোদ। মেয়েটা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। ওর দু চোখের পাতায় চুমু খেলো রোদ। পাগলের মতো ওকে চুমু খেতে লাগলো। ইতি কেবল শিউরে উঠছিলো। কেঁপে কেঁপে উঠছে বার বার। রোদ আর যেনো থামছেই না। ইতির চোখ থেকে গাল, গাল থেকে ঠোঁট, ঠোঁট থেকে গলা, গলা থেকে কাঁধে নামলো রোদ আর পাগলের মতো ওকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।
ইতি কোন শব্দ করতে পারছে না। মেয়েটা পাগল হয়ে যাচ্ছে। ইতি রোদকে খামচে ধরলো। রোদের চুল ছিড়তে লাগলো ইতি। রোদের পিঠের চামড়া ছিড়ে ফেলছিলো ইতি।
ইতি এতো জোরে খামছে ধরেছে কিন্তু একটুও ব্যথা পাচ্ছে না রোদ। ওর খামচিগুলো যেন রোদকে বলছে আরো আদর কর। উন্মাদের মতো আদর করতে লাগলো রোদ ইতিকে। অনেক সুখ দিতে লাগলো রোদ তার জানপাখিটাকে। ইতিকে নিয়ে সুখের মহাসমুদ্রে ডুব দিলো রোদ। আজ রাত শুধু দুটো শরীরেরই নয় দুটো আত্মার মিলনের রাত। আজ তাদের পূর্ণমিলনের রাত। যেখানে আছে ভালোবাসার সম্মতি।
.
সকালবেলা।
সূর্যের আলো এসে চোখে পরতেই ঘুম কিছুটা ভেংগে গেলো রোদের। চোখ মেলতেই পাগলীটাকে নিজের বুকের উপর দেখে সুখ আর তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো রোদের মুখে। ইতির কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে গেলো রোদ। পাগলীটার জন্য আজ অনেক স্পেশিয়াল একটা দিন। ইতিকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো রোদ কিছু কাজ সারতে।
ইতি ঘুমের মাঝেই পাশে হাত দিতেই অনুভব করলো রোদ নেই। চোখ মেলে দেখলো আসলেই রোদ নেই। লজ্জায় ইতি লাল হয়ে যাচ্ছে রাতের কথা ভেবে। এতো সাহস যে তখন সে কোথায় পেলো আল্লাহই জানে। কিন্তু তখন ওইটুকু সাহস না করলে যে রোদকে নিজের করে পাওয়া হত না ইতির। যা পেয়েছে তাতেই ইতি খুশি। উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো। কিন্তু রোদ কোথায় গেলো। রোদকে ফোন দিবে কিনা ভাবছে ইতি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। ইতই ভাবে হয় রোদ এসেছে। দরজা খুলল,
– আপনি কে?
– আমি এডভোকেট মিজানুর রহমানের অফিস থেকে এসেছি।
ইতির বুকের ভেতর ধুক করে উঠল। আঙ্কেলের অফিস থেকে লোক এসেছে। লোকটা বলল,
– এই পারসেলটা দিয়ে যেতে বলল রোদ চৌধুরীকে।
বলে একটা খাম এগিয়ে দিলো ইতির দিকে। ইতির হাত পা কাপতে লাগলো। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তাও কাঁপা কাঁপা গলায় আর কাঁপা হাতটা এগিয়ে দিয়ে ইতি বলল,
– আমি উনার স্ত্রী আমাকে দিন।
– এই নিন।
ইতি দরজা লাগিয়ে রুমে চলে গেলো খামটা নিয়ে। ইতির গলা শুকিয়ে আসছে। খামটার দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে। এখনও ইতি কাঁপছে। তাও খামটা খুলল ইতি। কিছু পেপার হ্যাঁ ইতি জানে এগুলো কিসের কাগজ। কিন্তু এখানে দুটো পেপার। একটি সম্পত্তির পেপার আর অন্যটি ইতি আর রোদের ডির্ভোস পেপার। হ্যাঁ, ইতি আর রোদের ডির্ভোস পেপার। ইতির চোখ দুটো ঘোলা হয়ে গেলো অনেক। পানি টলটল করছে এই বুঝি পরে যাবে। সামনে তাকালো ইতি টেবিলেই কলমটা রাখা। শুধু দু কদমের ব্যাপার। আজ দুটো কদমও ইতির কাছে অনেক বেশি মনে হচ্ছে পা যেন এগোতেই চাচ্ছে না। কলমটা হাতে নিলো ইতি।
।।
।।
১২টা বেজে গেলো। রোদ ভেবে ছিলো তার পাগলীটার সাথেই নাস্তা করবে কিন্তু তা আর হলো না। পাগলীটা খেয়েছে কিনা কে জানে। এখন যত যলদি সম্ভব ইতির কাছে ছুটে যেতে মন চাইছে রোদের। মন চাইছে উড়ে চলে যেতে। রাস্তায় এতো জ্যাম যে রোদ ভাবে, “দূর আর থাকবোই না বাংলাদেশে। আমার পাগলীটাকে নিয়ে অন্য কোথাও পারি জমাবো”। ইতির কথা ভাবতে ভাবতেই বাসায় পৌছে গেলো রোদ। বেল দিলো কিন্তু রোদের তরসইছে না তাই বেল দিতেই থাকলো। কিন্তু ইতি দরজা খুলছে না। দরজায় বারি দিলো রোদ সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো। রোদের বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। দরজা খোলা ইতির কোন বিপদ হয়নি তো। তাড়াতাড়ি ভিতরে গেলো সে। ভিতরে প্রবেশ করেই ইতিকে ডাকতে লাগল,
– ইতি ইতি এই ইতি কোথায় তুমি?
ইতিকে ডাকছে রোদ কিন্তু মেয়েটা কোন সাড়া দিচ্ছে না। ইতির কোন সাড়া না পেয়ে রোদ রুমে চলে গেলো। কিন্তু না ইতিকে দেখা যাচ্ছে না। বারান্দায় দেখলো কিন্তু ইতি নেই। কিচেনে গেলো সেখানেও নেই। সারা বাসায় খুজলো কিন্তু কোথাও নেই। গেলো কই মেয়েটা। এসে খাটের উপর বসে পরলো রোড। অফিসে যায়নি তো এটা ভেবেই উঠে দাড়ালো রোদ আর তখনি চোখ পরল সামনের টি টেবিলে রাখা পেপার গুলো উপর। সামনে এগিয়ে পেপারগুলো দেখলো রোদ। প্রপার্টি পেপার আর তাদের ডির্ভোস পেপার।
– সিট আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আংঙ্কেলকে বলতে এই পেপারের আর দরকার নেই।
রোদের চোখ আটকে গেলো পাশে রাখা ভাজ করা একটা খাম আর কাগজে। মনের ভিতর অজানা একটা ভয় কাজ করতে লাগল রোদের। সামন্য একটা কাগজ তাও খুলতে রোদের এতো ভয় লাগছে। কাগজটা খুলতেই একটা শব্দে তার চোখ আটকে গেলো।
চিঠি,
অনেক ভালোবাসি আপনাকে তাই চলে যাচ্ছি বহুদূরে চিরতরে…..
.
.
চলবে………