বাইজি কন্যা পর্ব ১৭+১৮

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_১৭
[২৪]
পরেরদিন প্রাতঃকালে নাস্তা নিয়ে শাহিনুরের কাছে হাজির হলো শারমিন বাইজি৷ বন্ধ দরজা খুলতেই আচমকা কক্ষের ভিতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সঙ্গে সঙ্গে থমকিত ভঙ্গিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো সে। তার
দীপ্তিমান দৃষ্টিজোড়ায় নিমিষেই কিঞ্চিৎ ভয় জেঁকে বসলো। অন্তঃকোণে জমলো মেঘ। রোজকার মতো আজ শাহিনুর গায়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে না। রোজকার মতো আজ আর শাহিনুরে’র ঘুম ভাঙানোর জন্য বিশেষ বিশেষ কায়দা খাটানোরও প্রয়োজন পড়বে না। রোজকার মতো ঘুমন্ত মেয়ের ললাটে অতিসন্তর্পণে চুম্বন এঁকে দেওয়ারও সুযোগ পেলো না শারমিন৷ ক্ষণকাল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো সে। কক্ষের ভিতরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বিধ্বস্ত রূপে বসে আছে শাহিনুর। কাল রাতে জমিদার বাড়ির সকলের সঙ্গে সময় কাটানোর পর রঙ্গন যখন তাকে পৌঁছে দিতে এলো,তখন থেকেই স্তব্ধ হয়ে আছে শাহিনুর৷ মস্তিষ্কে কিলবিল করছে কেবল প্রণয়ের বলা কথাগুলো, মনে তীব্র অস্বস্তি হচ্ছে এতোদিন যাবৎ মা’য়ের চোখে ফাঁকি দেওয়াতে৷ ফেরার পথে রঙ্গনের সঙ্গে একটি শব্দ বিনিময়ও সে করেনি। রঙ্গন যখন তার হাতে স্পর্শ করেছিলো, মই দিয়ে জানালার পাটাতনে ওঠতে সহায়তা করতে চেয়েছিলো কোনটাই শাহিনুর গ্রহণ করেনি। আচমকা শাহিনুরের এমন আচরণে অবাক না হয়ে পারেনি রঙ্গন৷ তাই প্রশ্ন করেছিলো,
-‘ নুর, তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছো! ‘
রঙ্গনের এমন প্রশ্নে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলো শাহিনুর৷ বলেছিলো,
-‘ আমি আমার আম্মা’কে খুব ভালোবাসি বাঁশিওয়ালা। আমি আমার আম্মা’কে ঠকিয়ে খুব অন্যায় করছি৷ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও বাঁশিওয়ালা,আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমার আম্মা’কে আর ঠকাতে চাইনা। ‘
শাহিনুরের কথার পাল্টা কোন জবাব দিতে পারেনি রঙ্গন৷ কিন্তু জোরপূর্বক শাহিনুরের একটি হাত টেনে নিজের দু’হাতে মুঠোবন্দি করে নিয়ে বলেছিলো,
-‘ তোমার আম্মা’কে যাতে আর না ঠকাতে হয় সেই ব্যবস্থা আমি করবো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, আসছি। আমাদের আবার দেখা হবে। ‘
রঙ্গন চলে যাবার পর মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো শাহিনুর৷ মনে করলো প্রণয়ের বলা শেষ বাক্যটি,
-‘ যদি কখনো এমন ভুল করো মা’কে বলে ক্ষমা চেয়ে নিও। ‘
দু’হাতে মুখ চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে শাহিনুর ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে,
-‘ আম্মা তুমি আমাকে ক্ষমা করবাতো? ‘
সেই রাত থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখজোড়া শুষ্ক হয়ে গেছে শাহিনুরের৷ তবুও মনে চলা অপরাধবোধ একটুও কাটেনি। বিধ্বস্ত মুখে কক্ষের এক কোণে ঘাবটি মেরে বসে আছে৷ সকাল সকাল মেয়ের কাছে এসে মেয়ে’কে এইরূপে দেখে পুরো পৃথিবীই যেনো থমকে গেলো শারমিনের৷ আকস্মিক ধাক্কাটা সামলেও নিলো। কিঞ্চিৎ ত্বরান্বিত হয়ে চরণদ্বয় এগিয়ে মেয়ের সম্মুখে বসে পড়লো৷ পাশে হাতে থাকা নাস্তা, পানি রেখে বিস্ময়ান্বিত কন্ঠে ডাকলো,
-‘ নুর! ‘
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে মা’কে এক পলক দেখলো শাহিনুর। তারপর হুহু করে কেঁদে ওঠে জাবটে ধরলো মা’কে। শারমিনের বক্ষঃস্থলে অসহনীয় ব্যথা অনুভব হলো৷ কলিজায় কেমন যেনো ছ্যাঁৎ করেও ওঠলো৷ হাজার হোক মা তো…
প্রায় ঘন্টাখানেক সময় ধরে শারমিন শাহিনুরের কান্না থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু না কিছুতেই থামাতে পারলো না মেয়ে’কে৷ আদর করলো, কপালে,গালে,হাতে স্নেহময় চুম্বন এঁকেও দিলো। বিনিময়ে শুধু উত্তর চাইলো, কেন কাঁদছে সে? কি এমন দুঃখ চেপেছে তার মনে? কিন্তু কোন উত্তরই দিতে পারলো না শাহিনুর। যতোবার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে ততোবার বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। শারমিন বিচক্ষণ মানুষ। সে বুঝলো নুরের বুক ফাটছে কিন্তু মুখ ফুটে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারছেনা। শারমিন এটাও লক্ষ করলো, নুর ভীষণ একটা অপরাধবোধে ভুগছে। তার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটা মারাত্মক আকারে কোন অপরাধটি করলো? কি এমন করেছে যেটা’কে সে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এইরূপ দুঃখ পাচ্ছে? যে মেয়ে মাথা উঁচু করে নিজের মায়ের সঙ্গেই কথা বলতে পারে না। সহজে যে মেয়ের কন্ঠস্বর শোনাও ভীষণ কষ্টদায়ক, যে মেয়ের হাঁটা চলাতেও থাকে জড়তার স্পর্শ সেই মেয়ে করবে অপরাধ! আর ভাবতে পারলো না শারমিন। শুধু সময় দিলো শাহিনুর’কে। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে চোখ,মুখ শক্ত করে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ নুর তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও, আমি জানি। আমিও শুনতে চাই। তুমি সময় নাও, স্বাভাবিক হও। তারপর নিঃসংকোচে মনের সমস্ত কথা,সমস্ত ব্যথা, সমস্ত দুঃখগুলো প্রকাশ করো। এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কে আছে তোমার ? আমাকে ভয় নয় ভরসা করো, আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছি, আমি তোমার মা, এ পৃথিবী’তে শ্রেষ্ঠ বন্ধু আমি তোমার। ‘
ক্রন্দনধ্বনি থেমে গেলো। ভেজা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো শাহিনুর৷ শারমিন নিজের আঁচল দ্বারা তার কপোলদ্বয় মুছে দিলো৷ ললাটে গাঢ় একটি চুমুও খেলো। তারপর বললো,
-‘ উহুম এখন কিছুই শুনতে চাইনা। তুমি সময় নিয়ে সবটা বলবে আমাকে আমি অপেক্ষা করবো। ‘
মুখে এসব বললেও মনে মনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লো শারমিন৷ কোন দুঃখে ব্যথিত হলো তার নুর? ছোটবেলা শাহিনুর অসংখ্য বার তাকে প্রশ্ন করেছে,
-‘ আম্মা আমার দাদা,দাদি নাই, ও আম্মা আমার যেমন তুমি আছো, তোমারও তো আম্মা আছে তাইনা? আচ্ছা আম্মা আমার কি আব্বা নাই? ‘
এসব প্রশ্নের মোকাবিলা করতে করতে যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়লো তখন থেকেই শাহিনুরও গুমিয়ে গেলো৷ কি কারণে থেমে গেলো শাহিনুর জানা নেই।
মেয়েটা আর প্রশ্ন করলো না,
-‘ আম্মা আমার কি আব্বা নাই? আম্মা তোমার কি স্বামী নাই? আমরা এখানে কেন থাকি আম্মা? ‘ শারমিনও যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। শিশু বয়স ছেড়ে কিশোরী হলো মেয়েটা। আল্লাহর তরফ থেকেই হঠাৎই নিজের মা, মান্নাত বুবু সহ সকল বাইজিদের জীবনরীতির অনেকাংশ বুঝেও গেলো৷ হারিয়েও গেলো তার করা প্রশ্নগুলো৷ শারমিনের ভয় হলো – আজ আবার সেসব প্রশ্নগুলোরই কিঞ্চিৎ প্রশ্ন জাগেনিতো মনে? হাজার হোক শাহিনুর এখন বড়ো হচ্ছে, মানব জীবন সম্পর্কে বোঝশক্তিও আপনাআপনি তৈরি হচ্ছে।
প্রণয়ের কোয়ার্টারে সকাল থেকে ব্যস্ততায় কেটেছে অঙ্গন,রঙ্গন দু-ভাইয়েরই। ড্রয়িংরুম চমকপ্রদ পুষ্পসজ্জায় সজ্জিত করেছে। দেয়ালে শুভ জন্মদিনের ব্যানার টাঙানো থেকে শুরু করে, বেলুন,জন্মদিনের কেক, মোমবাতি সমস্ত আয়োজনই সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করলো রঙ্গন৷ কিন্তু ফোনটি ধরলো তার বড়ো ভাইয়ের বউ জেবা। ওপাশ থেকে অতি উৎসাহী কন্ঠ ভেসে এলো,
-‘ হ্যালো আপনি ফোন করলেন তবে, কবে ফিরবেন আপনি? শুনুন না এবার কিন্তু আমার দু’টো তাঁতের শাড়ি, দু’টো খয়েরী রঙের লিপস্টিক,আর দু’টো…’
বাকি কথা বলার পূর্বেই রঙ্গন বললো,
-‘ আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ চাই ভাবি, আপনার শাড়ি,লিপস্টিক কোনটাই আমি কিনতে পারবোনা! ‘
এটুকু বলে চোখ খিঁচে ফিসফিস করে অঙ্গন’কে বললো,
-‘ ভাই এই এক পিসের জন্য কবে না হার্ট এট্যাক করি সব ভাই মিলে। ‘
অঙ্গন বুঝলো ফোনটা তার বড়ো ভাই’য়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ধরেছে তাই মুখ টিপে হাসলো। রঙ্গন চোখ রাঙিয়ে জেবার উদ্দেশ্যে বললো,
-‘ ভাবি দয়া করে রোমানা আপা’কে ডাকা যাবে? ‘
ওপাশ থেকে মলিন কন্ঠে জেবা বললো,
-‘ ওও তুমি, আমি ভাবলাম তোমার বড়ো ভাই। জানো তিনি গতকাল গেছেন অথচ এখন অবদি একটা ফোনও দেননি। ‘
রঙ্গন দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
-‘ ওও এখন জানলাম আহারে… তা ভাবি আপাকে একটু ডাকবেন? ‘
জেবা রোমানা’কে ডেকে আনলো। রোমানাও রঙ্গনকে জানালো সে প্রণয়’কে নিয়ে সন্ধ্যার পর পরই কোয়ার্টারে পৌঁছে যাবে। রোমানার সঙ্গে কথা বলে শেষ করে রঙ্গন অঙ্গন’কে চোখ টিপ মেরে বললো,
-‘ ভাই আজ’কে কিন্তু ওটা হবে। ‘
ম্লান হেসে সায় দিলো অঙ্গন। জমিদার বাড়ির ছেলে তারা। মদের সঙ্গে পরিচয় সেই ছোট্টবেলা থেকেই। যদিও প্রতিদিনকার অভ্যেস হিসেবে গড়ে তুলেনি। তবুও মাঝে মাঝে গলাটা ভেজানো হয়। কিন্তু চিন্তা হলো রোমানা’কে নিয়ে। তার সামনে এসব খাওয়া যাবে না। তাছাড়া প্রণয় এসব থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে। যদিও দু’একবার আড্ডায় বসে সেও গলা ভিজিয়েছিলো। তবে আর চারজন থেকে যথেষ্ট কমই খায়। যতোই হোক ডাক্তার বলে কথা। শারীরিক সুস্থতা, মানসিক সুস্থতা সব দিকেই বিশেষ নজর তার৷ মন’টা ভীষণ আহত লাগছে অঙ্গনের৷ কেন লাগছে, কি কারণে লাগছে সেসব অজানা নয়৷ তবুও মনের এই ব্যথাটুকু লুকোনোর চেষ্টা করলো৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রঙ্গন’কে বললো,
-‘ ভাইয়ার রুমের পাশেরটায় সব ব্যবস্থা করে রাখিস। ওখানে রোমানা যাওয়ার চান্স নেই। ওরা চলে গেলে দু’ভাই মিলে অনেক ক্ষণ আড্ডা দেবো। ‘

রোমানা যখন নিজেকে পরিপাটি করে প্রণয়ের সামনে উপস্থিত করলো আর বায়না ধরলো কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য । প্রণয় কিঞ্চিৎ রেগে গেলো৷ কিন্তু প্রকাশ করতে পারলো না প্রেরণার জন্য। প্রেরণা বুঝে গিয়েছিলো প্রণয় এবার রেগে গিয়ে দু’কথা বলবে রোমানা’কে তাই প্রণয়ের সামনে গিয়ে প্রেরণা বললো,
-‘ মেয়েটা তোমার জন্মদিন বলে এতো আশা নিয়ে ওখানে আয়োজন করলো, আর তুমি কিনা মেজাজ দেখাচ্ছো! ‘
মা’য়ের কড়া চোখে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাপা নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো প্রণয়। তারপর রোমানা’কে শান্ত কন্ঠে বললো,
-‘ গাড়িতে গিয়ে বসো। ‘
রোমানা আর প্রণয় কোয়ার্টারে উপস্থিত হলো। পরিকল্পনা মাফিক সমস্ত আয়োজনই সম্পন্ন হলো। কিন্তু সমস্ত বিষয়েই প্রচণ্ড বিরক্তবোধ করেছে প্রণয়। কখনো মন চেয়েছে গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে সমস্ত আয়োজন লন্ডভন্ড করে দিতে। কখনো মনে হয়েছে এক চিৎকার দিয়ে রোমানা’কে বলতে,
-‘ এই মেয়ে বিশ্বাস করো আমি আজো তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি। ‘
আবার ভেবেছে রোমানার দোষটা কথায়? এই প্রশ্ন মনে কড়া নাড়তেই রোমানার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রণয়। রোমানা’কে সে ভীষণ পছন্দ করে, রোমানার ব্যক্তিত্ব ভীষণ সুন্দর, রোমানার ভালোবাসার ধরনও সুন্দর। নিখুঁতভাবেই মেয়েটা তাকে ভালোবাসে। নিখুঁতভাবেই মেয়েটা তার জীবনসঙ্গিনী হওয়ার যোগ্য৷ কিন্তু ভালোবাসায় যোগ্যতা অযোগ্যতার প্রশ্ন বড়োই হাস্যকর। রোমানা তাকে ভালোবাসে, মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তাকে। তার প্রেমে যে মেয়েটা অন্ধ সেই মেয়ের অন্ধত্বের সুযোগ কি করে নেবে সে? যদি নেয় তাহলে কি লাভ হলো বাপ,ভাই’দের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে, অন্য পথে, অন্য জীবনে চলে? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অঙ্গন,রঙ্গনের সঙ্গে কথা বলায় মশগুল রোমানা’কে প্রণয় বললো,
-‘ রোমানা, একটু ছাদে চলো। তোমার সঙ্গে একাকী কিছু সময় কাটাতে চাই,কিছু কথা বলতে চাই। ‘
মূলত রোমানা’কে নিজের মনের সত্যিটা জানাতেই কথাটি বললো প্রণয়। কিন্তু সবাই বুঝে নিলো অন্য কিছু। রঙ্গনের চোখ,মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। বুকে আঘাত পেলেও ওষ্ঠকোণে মিথ্যে হাসির রেখাটুকু ঠিক স্পষ্ট করলো অঙ্গন৷ লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপক্রম হলো রোমানা। ক্ষীণ স্বরে বললো,
-‘ তুমি যাও আমি এক্ষুনি আসছি। ‘
একমুহূর্ত দেরি করলো না প্রণয়। ছাদে চলে গেলো। রোমানা নিঃশব্দে সোফায় গিয়ে বসলো। লজ্জায় সে মাথা উঁচু করতেও পারছেনা। কেবল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে তারপর ছাদে যাবে ভাবছে৷ এদিকে অঙ্গনের ইশারায় রঙ্গনও রুমে চলে গেলো৷ অঙ্গন জানে রোমানা অতিরিক্ত লাজুক প্রকৃতির মেয়ে৷ প্রণয় নিজ থেকে তাকে আহ্বান জানিয়েছে এতে করে তার লজ্জার পরিমাণ প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। ভিতরের রুমে গিয়ে বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেললো অঙ্গন৷ রঙ্গন অঙ্গনের অনুভূতিটুকুর আঁচ পেয়ে আবার ড্রয়িং রুমে চলে গেলো৷ ড্রয়িং রুমের একপাশে থাকা ফ্রিজ থেকে তিন গ্লাস প্রমত্তকর রস থেকে এক গ্লাস নিয়ে আবার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। রোমানা হঠাৎ প্রশ্ন করলো,
-‘ রঙ্গন ওটা কি? ‘
থতমত খেয়ে রঙ্গন বললো,
-‘ সফট ড্রিংক গলাটা বেশ শুঁকিয়ে গেছে একটু ভিজাবো আর কি। ‘
এটুকু বলে চলে গেলো রঙ্গন রোমানা খেয়াল করলো তার গলাটাও শুঁকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে গেছে। শুধু কি গলা বুকটাও কেমন শুঁকনো শুঁকনো লাগছে। প্রণয় অপেক্ষা করছে তার জন্য ইশ কেমন কেমন যেনো লাগছে৷ কোন কিছু না ভেবে ত্বরান্বিত হয়ে ওঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস প্রমত্তকর রস সেও পান করলো৷ কিন্তু কেমন একটা বিদঘুটে গন্ধ পেয়ে বমির ভণিতায় দ্রুত গ্লাস রেখে দিলো। গা গুলিয়ে ওঠলো। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে এমনভাবে গিলেছে আস্তেধীরে খেতে গেলে হয়তো এক ঢোকের বেশী দুই’ঢোক গিলতে পারতোনা৷ আর বেশী সময় নষ্ট করলো না রোমানা। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে ছাদে চলে গেলো৷ ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ছিলো প্রণয়। তাকে দেখা মাত্রই স্বস্তি পেলো রোমানা৷ গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে প্রণয়ের পাশে সেও দাঁড়ালো। রোমানার উপস্থিতি পেয়ে প্রণয় বললো,
-‘ এতো সময় লাগে আসতে? ‘
উত্তরে রোমানা কিছু বলতে গিয়েও পারলোনা। কেমন যেনো মাথা ঘোরাচ্ছে তার,শরীর’টা গরম হয়ে ওঠছে, গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। রোমানার থেকে উত্তর না পেয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে রোমানার দিকে তাকালো প্রণয়৷ জোৎস্নার রাত্রিতে সাদা জর্জেট শাড়ি পরিহিত রোমানা’কে দেখতে মন্দ লাগছে না। মেয়েটা তাকে কতো ভালোবাসে,কতো গুরুত্ব দেয় তার পছন্দ, অপছন্দ’কে। অথচ সে মন দিয়ে বসলো… আর ভাবতে পারলো না। আচমকা চোখ বুজে লম্বা একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। তারপর দৃঢ় দৃষ্টিজোড়া রোমানা’র দিকে নিক্ষেপ করে বললো,
-‘ তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো রোমানা,আমি জানি। তুমি আমার বাগদত্তা, তোমাকে সম্মান করি আমি, আমার ভীষণ পছন্দীয় মানুষদের তালিকায় তুমিও একজন। আমি জানি কথাটা এর আগেও তোমাকে বলেছিলাম, আজ আবারো বলবো তবে এখানে আজ একটি কিন্তু রয়েছে…’
প্রণয়’কে পুরো কথাটা শেষ করতে না দিয়েই উদভ্রান্তের মতো রোমানা বললো,
-‘ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। দু’বছর আগে শুধু তোমার পছন্দের তালিকায় থাকলেও আজ আমি তোমার ভালোবাসা’কে ঠিক জয় করে নিয়েছি। ‘
অকস্মাৎ প্রণয়ের দু’পা মৃদু কেঁপে ওঠলো। রোমানার দিকে দু’কদম এগিয়ে দু’হাতে রোমানার দু’কাঁধ দৃঢ় হস্তে চেপে ধরলো। লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে আবার ছেড়েও দিলো৷ মারাত্মক ক্রোধান্বিত হয়ে ঠাশিয়ে রোমানার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো প্রণয়৷ হুংকার ছেড়ে বললো,
-‘ হাউ ডেয়ার ইউ? ‘
গালে হাত দিয়ে উদভ্রান্তের মতোই রোমানা চেয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে৷ কয়েক পল সময় নিয়ে নাকি সুরে কেঁদেও ওঠলো। বললো,
-‘ তুমি আমায় কেন মারলে প্রণয়, জানো আমার শরীর কতো খারাপ লাগছে? ‘
ক্রোধে শরীর কাঁপছে প্রণয়ের। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আরেকটা চড় বসালো রোমানার গালে। চিৎকার করে বললো,
-‘ তোমার সাহস কি করে হয় নেশা করার? তুমি কে, তুমি কে জানো? ‘
এটুকু বলে আবারো রোমানার দু’কাঁধ নিজের শক্ত হাতে চেপে ধরলো বললো,
-‘ তুমি প্রণয় চৌধুরী’র বাগদত্তা, আর তুমি কিনা ছিঃ ভাবতেও পারছিনা। এই মূহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবে এই মূহুর্তে। ‘
প্রণয়ের এমন হিংস্র রূপের সম্মুখীন হয়ে ভয়ে আত্মা কেঁপে ওঠলো রোমানার৷ কিন্তু হঠাৎ এমন আচরণ কেন করলো প্রণয়,কেন মারলো তাকে? নেশায় বুঁদ হয়ে অ-জ্ঞানে করা নিজের ভুলটুকু টের পেলো না রোমানা। তাই একরাশ অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে, ঢুলতে ঢুলতে নিচে নেমে গেলো৷ নিচে গিয়ে প্রথমে প্রণয়ের ঘরে তারপর পাশের ঘরে ঢুকলো রোমানা। দেখতে পেলো চিৎ হয়ে শুয়ে আছে অঙ্গন৷ বিধ্বস্ত রূপে ঠোঁট উল্টে কাঁদতে কাঁদতে অঙ্গনের পাশে গিয়ে বসলো রোমানা। কিন্তু অঙ্গন ওঠলো না৷ ওঠবে কি করে মাত্রাতিরিক্ত নেশা করার ফলে সেও বুঁদ হয়ে গেছে। তাই বেশ শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো রোমানা৷ ঢুলো ঢুলো চোখ দু’টি মেলে তাকালো অঙ্গন। রোমানা’কে দেখামাত্রই ওঠে বসলো সে। কপাল কুঁচকে বললো,
-‘ কাঁদছো কেন? ‘
-‘ তোমার ভাইটা আমাকে একটুও ভালোবাসে না। এই দেখো আমাকে মেরেছে। ‘
গাল এগিয়ে দিতেই অঙ্গন সে গালে স্পর্শ করলো। ব্যথিত হয়ে বললো,
-‘ এতোবড়ো সাহস ওর ও আমার কলিজা’কে মেরেছে৷ খুন করে ফেলবো ওকে আমি। ‘
উন্মাদীয় কন্ঠে কথাটি বলতেই রোমানা ঢুলে পড়লো অঙ্গনের বুকে। অঙ্গন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-‘ কেঁদো না সোনা এইতো আদর করে দিচ্ছি। ‘
রোমানা ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো,
-‘ তোমার খারাপ ভাইটা আমাকে একটুও ভালোবাসে না অঙ্গন, একটুও না। ‘
অঙ্গন এবার একটু সিরিয়াস হলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
-‘ ওর ভালোবাসার জন্য তুমি আর পাগলামি করবেনা রোমানা। এই দেখো আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি একটু এখানে কান পেতে শোনো। ‘
অঙ্গন নিজের বুকে রোমানার মাথা চেপে ধরতেই কিছু সময় থম মেরে রইলো রোমানা৷ তারপর কি যেনো হলো দু’জনেরই৷ অঙ্গন মাতাল করা সুরে রোমানার কানে কানে বললো,
-‘ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রোমানা। ‘
অঙ্গনের ঠোঁটের উষ্ণতা কানে লাগতেই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো রোমানার। আবেদনীয় দৃষ্টিতে অঙ্গনের দৃষ্টিতে তাকালো। অঙ্গনও নিবিড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিবিড় একটি চুমু খেলো রোমানার গালে৷ মূহুর্তেই কি যেনো হয়ে গেলো দু’জনের৷ কেবল একে,অপরকে পাওয়ার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ইশ নিয়তি কতোই না নিষ্ঠুর। অজান্তে, অজ্ঞানে, দু’টো মানব- মানবী একে অপরের দেহের তৃষ্ণা মেটাতে উদগ্রীব হয়ে ওঠলো। সেই উদগ্রীব, উত্তেজনা থেকে একে,অপরের উষ্ণতায় লেপ্টে যেতে যেতে কখন যে দু’জনে এক হয়ে গেলো নিজেরাও টের পেলো না। দু’টো দেহের এক হয়ে যাওয়া,দু’টো কন্ঠের উন্মাদীয় সুরে পুরো ঘর মুখরিত হয়ে ওঠলো। ইশ অজান্তেই না জানি কোন বিধ্বংসী খেলায় মেতে ওঠলো দু’জনে। রঙ্গন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফ্রিজ থেকে আরেক গ্লাস মদ নিয়ে অঙ্গনের কাছে আসার জন্য যেই ঘরের দরজা অবদি প্রবেশ করলো,অমনি তার মাথা থেকে পুরো মুখ ঢেকে গেলো রোমানার পরিহিত সাদা জর্জেট শাড়িটি৷ আচমকা চমকে গিয়ে এক হাতে শাড়ি ধরে চোখের ওপর থেকে সরাতেই চোখ দু’টো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো রঙ্গনের। সম্মুখের বিছানায় চোখ পড়তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,
-‘ ও মাই গড!’
সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে দাঁড়ালো রঙ্গন। হতভম্ব হয়ে রুম ত্যাগ করে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো। অঙ্গন নেশা করেছে কিন্তু রোমানা? মাথা কাজ করলো না রঙ্গনের। শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে তার। কপাল চুইয়ে ঘাম চোয়াল বেয়ে পড়ছে। প্রচণ্ড অস্থির লাগছে, প্রণয় কোথায় কি হচ্ছে এসব। হাত,পা কাঁপতে শুরু করলো রঙ্গনের। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো৷ কি করবে না করবে কিচ্ছু ভেবে না পেয়ে ত্বরান্বিত হয়ে কোয়ার্টার ত্যাগ করলো সে। তার আত্মায় ইতিমধ্যে জানান দিয়েছে মহাপ্রলয় ঘটবে।
#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_১৮
রোমানা মেয়েটাকে চিনতে ভুল করেনি প্রণয়৷ ভুল করেনি তার ভালোবাসাময় ঐ চোখের ভাষাটুকু বুঝতে৷ যে ভাষায় ভালোবাসা না হোক সম্মান দিয়েছে সে। নিজের ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী হিসেবে যার স্থান দিয়েছে সে এই রোমানাই। হয়তো ভালোবাসা নামক অনুভূতিটুকু রোমানা জীবনে আসার অনেক পর অন্যকারো প্রতি জন্মেছে। তাই বলে সে তার দায়িত্ব-কর্তব্য,প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়নি৷ এতোগুলো বছর ধরে যে মেয়েটা’কে চোখের সামনে বড়ো হতে দেখেছে। এতোগুলা বছর ধরে যে মেয়েটা মন,প্রাণ উজার করে তাকে ভালোবেসে আসছে, তার ভালোবাসা কামনা করছে সে মেয়েটা কখনোই এতো বড়ো স্পর্ধা দেখাতে পারে না৷ এছাড়া রোমানা এতো বছরে প্রণয়ের পছন্দ, অপছন্দ সম্পর্কে বেশ অবগত হয়েছে। সেই সাথে প্রণয়’কে সে খুব মানেও। তাই নেশা করে মাতাল হয়ে প্রণয়ের সামনে যাওয়া তো দূরের কথা, নেশা করার কথা ভাবতেও রোমানার রুহ কেঁপে ওঠবে৷ এটুকু স্মরণে আসতেই রাগ কিছুটা কমে গেলো প্রণয়ের৷ মাত্র কয়েকদিন আগে যে মেয়েটার সাথে বাগ্দান সেরেছে সেই মেয়েটার প্রতি এতো সহজে অবিশ্বাস আনতে পারলো না। তাই পুরো ঘটনা কি ঘটেছে সেটা বোঝার জন্য ত্বরান্বিত হয়ে ছাদ থেকে নিচে গেলো। ড্রয়িংরুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাকান্বিত ভঙ্গিতে ধীরেধীরে নিজের রুম চেক করলো। চারপাশ কেমন শুনশান নীরবতা। কিছু সেকেণ্ডের মধ্যে সেই নীরবতা ভেঙে কেমন যেনো কন্ঠস্বর ভেসে এলো। কেমন অস্পষ্ট ধ্বনি। সে ধ্বনি নিশানা করে তার বিব্রত চরণদ্বয় পাশের রুমের দ্বারের সম্মুখে গিয়েই থেমে গেলো। আচমকা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। এক নিমিষেই যেনো তার সমস্ত পৃথিবী ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। সমস্ত শরীর ঘাম ছেড়ে শিরায় শিরায় অগ্নি জ্বলে ওঠলো৷ এই শরীর অবশ অনুভূত হলো, এই শরীরের রক্ত টগবগিয়ে ওঠলো। ক্রোধে শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো। ছোট ছোট তীক্ষ্ণ দৃষ্টিজোড়া অকস্মাৎ ভয়াবহ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো৷ ক্রমাগত চোয়ালজোড়া দৃঢ় থেকেও দৃঢ়তর হলো। ক্রোধে,ঘৃণায় কোনক্রমে নিজের বিশাল দেহটি সরিয়ে নিলো। কিন্তু বারংবার বজ্রপাতের ন্যায় দু’চোখে ভাসতে থাকলো ছোট ভাইয়ের সঙ্গে নিজের বাগদত্তার মিলিত হওয়ার দৃশ্যটুকু৷ ড্রয়িংরুমের সোফায় নিস্পন্দ হয়ে কতোসময় পাড় করলো জানা নেই। কিন্তু যখন ওঠে দাঁড়ালো তখন চেনা সেই প্রণয় চৌধুরী ছিলোনা। সে এক অন্য প্রণয় চৌধুরী। যার প্রখর দৃষ্টির দিকে একবার তাকালে কারো সচল হৃদপিণ্ডও মূহুর্তে অচল হয়ে যাবে! বিশাল দেহটিকে সটান করে দাঁড় করালো। তারপর দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে গেলো নিজের বেডরুমে। কয়েক পল থমকে দাঁড়িয়ে ফিরে গেলো বহুবছর পূর্বে। তার পিতামহ আজহার চৌধুরী’র দেওয়া তাকে প্রথম এবং শেষ উপহারটুকুর মুখ্য ব্যবহারের সময় এসেছে আজ। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো প্রণয়ের। মারাত্মক ক্রোধে আবিষ্ট হয়ে পরিহিত কালো ব্লেজার একটানে খুলে মেঝেতে আছড়ে ফেললো। বড়ো বড়ো দম ফেলে কয়েক কদম পায়চারি করলো রুমজুড়ে। একেক জনের বৈশিষ্ট্য যেমন একেক রকম তেমনি রাগান্বিত অবস্থায় একেকজন একেক ভাবেও তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ঠিক তেমনি প্রণয়ও করলো। পুরো রুমজুড়ে এলোমেলো ঘুরাঘুরি করে পরিহিত শার্টটাও একসময় টেনেটুনে খুলে মেঝেতে ফেলে দিলো৷ বলিষ্ঠ দেহের শেষ সম্বল রইলো একটি সেন্ডো গেঞ্জি এবং প্যান্ট। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসৃত হওয়ার ফলে সুঠাম বুক,পিঠে গেঞ্জি লেপ্টে রয়েছে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামও এবার টপাটপ ঝড়তে শুরু করেছে। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমাগত ভারী হচ্ছে। রাতের প্রায় পুরোটাই এমন বিক্ষিপ্তভাবে পাড় করলো প্রণয়৷ কিন্তু চারদিক থেকে যখন ফজরের আজান ধ্বনি ভেসে এলো ধাতস্থ হয়ে হাঁটু গেড়ে বিছানার সম্মুখে বসে পড়লো৷ খাট থেকে কিঞ্চিৎ মাথা নিচু করে বলিষ্ঠ হাতটা বাড়িয়ে দিলো খাটের তলার গভীরে। বেশ পুরানো একটি সুটকেস টেনে বের করে কপাট খুলে পুরোনো কাপড়চোপড় সরিয়ে ভিতর থেকে নিমিষেই একটি তলোয়ার বের করে আনলো। তারপর ত্বরিতবেগে সুটকেস লাগিয়ে আবার যথাস্থানে রেখে ওঠে দাঁড়ালো। ডানহাতের শক্ত মুঠোয় তলোয়ারটি ধরে এপাশ,ওপাশ কাত করে ভালোভাবে দৃষ্টি বুলালো। মূহর্তেই আবার ভয়াবহ হিংস্ররূপ ধারণ করে বাম দিক ডান দিক কৌশলে ঘাড় বাঁকিয়ে, চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে, ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
-‘ আমার সম্মানে আঘাতকারী একটা প্রাণী’কেও বাঁচিয়ে রাখবো না। স্বয়ং নিজের ভাই’কেও না! ‘
নিজের হিংস্ররূপটা নিয়ে আবার ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলো প্রণয়৷ অপেক্ষায় থাকলো তার চোখে দেখা সবচেয়ে নিকৃষ্ট দু’টি প্রাণের জন্য।

চারদিকের ঘন অন্ধকার ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। ধরণীর বুকে সূর্য তার সকল উজ্জ্বলতা নিয়ে ঝলমলিয়ে পদার্পণ করলো। দু’টি দেহ একে অপরের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বিভোর ঘুমে অচেতন হয়ে ছিলো। রাতের আধাঁরে করা পাপগুলো দিনের আলোয় সূর্যের তীর্যক আলোকরশ্মিতে উন্মোচিত হলো। বদ্ধ চোখে সূর্যের আলো পড়তেই চোখ কুঁচকে কিঞ্চিৎ নড়ার চেষ্টা করলো রোমানা। চৈতন্য ফিরতেই অনুভব করলো তার ওপর ভারী কোন বস্তু রয়েছে। শুধু তাই নয় কারো গভীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, কারো শরীরের নিবিড় উষ্ণতার পুরোটুকুই মিশে যাচ্ছে তার শরীরে। সহসা ভীতিগ্রস্ত হয়ে চোখ খুলে তাকালো রোমানা। নিজের ওপর ঘুমন্ত, পরিশ্রান্ত অঙ্গন’কে দেখে আর্তচিৎকার দিয়ে ওঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে গেলো অঙ্গনের। জোর পূর্বক চোখ টেনে তুলতেই ভেসে ওঠলো রোমানার ভীতিগ্রস্ত ক্রন্দনরত মুখশ্রী। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত সরে গেলো অঙ্গন৷ রোমানার নগ্ন বুকে দৃষ্টি পড়তেই মস্তিষ্কে মারাত্মক চাপ পড়লো। পুরো শরীর ভয়ে শিউরে ওঠলো,দৃষ্টিজোড়া আবদ্ধ করে ফেললো নিমিষেই। লজ্জায়,ঘৃণায় মূর্ছা ধরে গায়ে চাদর টেনে মুখ লুকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো রোমানা।
অঙ্গনের মাথাটা ঝিম ধরে গেলো, কন্ঠরোধ হয়ে নিঃশ্বাসও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। অনেকটা সময় হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর অঙ্গন চাপা একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মনে করার চেষ্টা করলো গতরাতের কথা। ঝাপসা কিছু কিছু মনে পড়তেই নিরুপায় হয়ে মেঝেতে ধপাস করে বসে পড়লো। নির্বাক হয়ে আশপাশে কাতর দৃষ্টি বলালো। চিৎকার করে ডাকার চেষ্টা করলো ছোট ভাই রঙ্গন’কে, বড়ো ভাই প্রণয়’কে। কিন্তু পারলো না। আকস্মিক বিপর্যয়ের গন্ধ পেতেই কেমন যেনো মিইয়ে গেলো। নিশ্চল দৃষ্টি মেলে একবার বিছানায় তাকালো পরোক্ষণেই মাথা নিচু করে বিরবির করে বললো,
-‘ ছিঃ। ‘
আবার ভয়ে সংবিৎ ফিরে পাওয়ার ভণিতায় বললো,
-‘ আমি এতো নিকৃষ্ট, এতো জঘন্য, এতো বড়ো অন্যায়, এতো বড়ো পাপ কি করে করলাম আমি! ‘
কোন মুখে রোমানার সামনে দাঁড়াবে, কোন মুখে প্রণয়ের সামনে দাঁড়াবে সে। নিজের মন’কেই বা আজকের পর থেকে কি করে স্বান্তনা দেবে? রোমানা’কে সে প্রচণ্ড ভালোবেসেছিলো কিন্তু কখনো ভোগ করার কথা ভাবতেও পারেনি। জোর করে পাওয়ার প্রত্যাশাও করেনি তবে এ’কি হয়ে গেলো!
কীভাবে কি হলো? রোমানা কি করে তার কাছে এলো? এতো বড়ো অঘটন কি করে ঘটলো? রঙ্গন কোথায়, কোথায় বড়ো ভাই প্রণয়? সবশেষে একটু আশার আলো নিয়ে বের হলো অঙ্গন। সঙ্গে সঙ্গে প্রণয়কে বিক্ষিপ্তভাবে নজরে পড়লো তার। দু-চোখ ভরে অশ্রুপাত শুরু হলো অঙ্গনের। নিজের প্রতি রাগে,ঘৃণায় ত্বরিতগতিতে প্রণয়ের সম্মুখে বসে প্রণয়ের ডানহাতটা চেপে ধরে নিজ গণ্ডস্থলে তলোয়ার ঠেকালো অঙ্গন। বললো,
-‘ ভাই এই মূহুর্তে আমার প্রাণ নিয়ে তুমি আমাকে মুক্তি দাও। ‘
হিংস্রতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েও নিভে গেলো প্রণয়। এক ধাক্কায় অঙ্গনকে সরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ ডেন্ট টাচ মি অঙ্গন। ‘
-‘ আমি এতোবড়ো অন্যায় কি করে করলাম ভাই? রোমানা কি করে আমার কাছে এলো কি থেকে কি হয়ে গেলো। ‘
দু’হাতে নিজের চুল খামচে ধরে চিৎকার করে কথাগুলো বললো অঙ্গন। এ পর্যায়ে প্রণয় বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ তুই কাল নেশা করেছিলি? ‘
অঙ্গন মাথা নিচু করেই হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়ালো। অকস্মাৎ চোখ বুজে অধর কামড়ে ধরলো প্রণয়। এবার যেনো পুরোটাই সুস্পষ্ট তার কাছে। যা ঘটেছে ইচ্ছে কৃত নয় কিন্তু প্রশ্ন তো রয়েই গেছে… প্রণয় বললো,
-‘ রোমানা’কে ড্রিংক করিয়েছে কে? ‘
অঙ্গন চমকে ওঠলে এক পলক প্রণয়’কে দেখলো। আবারো মাথা নিচু করে বললো,
-‘ আমি জানি না ভাই। ‘
এবার প্রণয় বললো,
-‘ আমার সামনে থেকে যা। ‘
প্রণয়ের আদেশ পেয়ে অত্যন্ত লজ্জিত মুখে চলে গেলো অঙ্গন। কোথায় যাবে, আজকের পর কোথায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সে? সবচেয়ে বড়ো কথা রোমানা। এ জীবনে হয়তো রোমানার সামনে এসে দাঁড়াতে পারবেনা। এ জীবনে হয়তো রোমানা আর তার সুখ,দুঃখের গল্প বলতে অঙ্গন’কে খুঁজবে না। হাসির ছলে,কথার ছলে বলবেনা ‘ তোমার মতো বন্ধুটি পাশে থাকলে আমার সব স্বপ্ন পূরণ না হয়ে পারে? ‘

অঙ্গন বেরিয়ে যাওয়ার পর আরেকদফা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রণয়৷ অপেক্ষা করতে লাগলো রোমানার জন্য৷ যা ঘটেছে খুব খারাপ ঘটেছে। এটাই যদি ঘটার ছিলো, কপালে যদি এটাই লিখা ছিলো তাহলে সেদিন তাদের বাগ্দান কেন হলো? এতো বছর ধরে যে মেয়েটা তার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য চাতক পাখির মতো বসে ছিলো চোখের পলকেই সে মেয়ে তার ভাইকে সমস্তটা বিলিয়ে কি করে দিলো। ইচ্ছেয় হোক অনিচ্ছেয় হোক যা ঘটেছে তা তো বদলানো সম্ভব নয়৷ তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বসে বসে এসবই ভাবছে প্রণয়। ঘরের ভিতর থেকে শুনতে পাচ্ছে রোমানার গগনবিদারী চিৎকার। কি করবে, কি বলবে, কি করা উচিৎ বোধগম্য হলো না প্রণয়ের৷ তবুও একটা সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হবে। মেঝেতে পড়ে থাকা তলোয়ারের দিকে দৃষ্টি পড়তেই সেটা তুলে যথা স্থানে রেখে এলো। তারপর ড্রয়িংরুম থেকেই হাঁক ছাড়লো,
-‘ রোমানা আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। ‘
প্রণয়ের ডাক শোনার পর প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বিক্ষিপ্ত চেহেরায় বেরিয়ে এলো রোমানা৷ পরনের শাড়িটাও ঠিকঠাক ভাবে পরতে পারেনি। এলোমেলো চুল,রক্তিম বর্ণ চোখ ঠোঁটের এক কোণায় রক্তজমাট চিহ্ন সব মিলিয়ে বিধ্বস্ত রোমানা’কে দেখে আবারো দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করলো প্রণয়৷ বললো,
-‘ আমি জানি গতরাতে যা ঘটেছে পুরোটাই একটা এক্সিডেন্ট। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তুমি কেন ড্রিংক করলে। ‘
ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো রোমানা। ভয়ে,লজ্জায়,ঘৃণায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিলো,
-‘ সফট ড্রিংক মনে করে খেয়েছিলাম আমি জানতাম না ওটা মদ ছিলো। ‘
নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করে প্রণয় বললো,
-‘ আমি অতোটা দয়ালু নই যতোটা দয়ালু হলে এ মূহুর্তে তোমাকে কিছু স্বান্তনা বাণী শোনানো যায়। আমি অতোটা নির্মল প্রকৃতির মানুষ নই যতোটা নির্মল হলে তোমার চোখের ভারী বর্ষণ দেখে ব্যথিত হওয়া যায়। আমি অতোটাও শুদ্ধ পুরুষ নই যে এ মূহর্তে, এমন পরিস্থিতিতে বলবো – তুমি অন্য পুরুষ দ্বারা তোমার সতীত্ব হারিয়েছো এতে আমার জায় আসে না! রোমানা, যা কিছু ঘটেছে এতে তোমার হাত নেই আবার আছেও কিন্তু যা হয়েছে এর জন্য আমি ভুক্তভোগী হতে পারিনা৷ যেহেতু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা নেই সেহেতু আমি তোমাকে একটি সাজেশন দিতে চাই – তুমি অঙ্গন’কে বিয়ে করে নাও। যা হয়েছে এরপর এর থেকে সঠিক আর কোন পথই নেই। আর যদি তুমি অঙ্গন’কে গ্রহন করতে না পারো তবে আমার স্ত্রী’র মর্যাদা পাবে কিন্তু আমাকে পাওয়ার সম্ভাবনা কাল অবদি থাকলেও আজ আর নেই! ‘
[২৫]
প্রণয়ের ড্রাইভার মেরাজুল হক রোমানা’কে পাঁচফোড়ন গৃহে পৌঁছে দিয়ে আবার কোয়ার্টারে ফিরে এসেছে৷ রোমানা বাড়ি ফিরে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ির একটি কাকপক্ষীও টের পায়নি রোমানা ফিরেছে। দুপুর পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সকাল থেকে প্রেরণা উন্মুখ হয়ে বসে আছে প্রণয়,অঙ্গন, রঙ্গন আর রোমানার জন্য। যখন সূর্য অস্তমান হলো চারদিক থেকে ভেসে এলো আজান ধ্বনি তখনি চৈতন্য ফিরলো প্রেরণার। বড়ো বউ বলে এক হাঁক ছাড়লো। শবনম রান্না ঘর থেকে ছুটে শাশুড়ির রুমে প্রবেশ করলো৷ প্রেরণা তাকে আদেশ করলো প্রণয়’কে ফোন করতে আর খবর নিতে তারা কখন বাড়ি ফিরবে৷ যদি তারা ফিরতে না চায় অন্তত রোমানা’কে যেনো রেখে যায়। শাশুড়ির আদেশ পেয়ে শবনম প্রণয়’কে ফোন করে জানতে পারলো সবাই বাড়ি ফিরে গেছে। তবুও শবনমের কল পেয়ে প্রণয় কিছুটা বিচলিত হয়ে বললো,
-‘ আপনি রোমানার ঘরে গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন৷ বাকিদের আমি দেখছি। ‘
শবনম কথা শেষ করে ভাবলো জেবা’কে রোমানার কক্ষে পাঠিয়ে দেবে। আর সে গিয়ে শাশুড়ি’কে শান্ত করবে বলবে রোমানা ফিরেছে। শবনম জেবাকে রোমানার কক্ষে পাঠিয়ে শাশুড়ি’র কাছে গেলো। এদিকে জেবা তার লম্বা বিনুনির শেষপ্রান্ত একহাতে নাড়াতে নাড়াতে হেলিয়েদুলিয়ে পা বাড়ালো রোমানার কক্ষে। কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় দশমিনিটের মতো রোমানা’কে ডাকলো জেবা। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেলো না৷ তাই বললো,
-‘ কি গো ননদিনী ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে আমার দেবরের সোহাগ নিচ্ছো? যেমনটা আমি তোমার বড়ো ভাই’য়ের স্বপ্ন সোহাগ নেই। ‘
শেষটুকু কিঞ্চিৎ লাজুক ভঙ্গিতেই বললো জেবা। তখনি পাশ থেকে মুনতাহা বললো,
-‘ ছোটো ভাবি, আপনাকে বড়ো ভাবি কি জন্য পাঠিয়েছে আর আপনি কি করছেন? ‘
-‘ দেখোনা ননদিনী ডাকছি কিন্তু দরজা খুলছেই না। ‘
-‘ হয়তো ঘুমাচ্ছে তাই বলে এতো ডাকতে হবে? আপনার ডাকে আমি কক্ষে থাকতে পারলাম না। ‘
এটুকু বলে থমকে গেলো রোমানা। কপালে ভাঁজ পড়লো তার মনে মনে ভাবলো,
-‘ কি ব্যাপার ছোটো ভাবির ডাকে অতোদূরের কক্ষ থেকে আমি বেরিয়ে এলাম অথচ রোমানা আপা বের হলোনা৷ কি করে আপা ঘুমায় নাকি…’
এটুকু ভেবে মুনতাহা ধীর পায়ে কিছুটা এগিয়ে রোমানার কক্ষের জানালার সামনে দাঁড়ালো। জানালা লাগানো নাকি খোলা বোঝার জন্য মৃদু ধাক্কা দিতেই জানালা খুলে গেলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মুনতাহা ঘাড় এগিয়ে কক্ষে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সঙ্গে সঙ্গে অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো তার৷ চোখজোড়া বড়ো বড়ো করে বুকে হাত চেপে, রোমানা আপা বলে এক চিৎকার দিলো। মূহুর্তেই মাথা ঘুরে জ্ঞানও হারালো মুনতাহা। জেবা দৌড়ে এসে জানালা দিয়ে কক্ষে তাকাতেই দেখলো, ফ্যানের সাথে শাড়ি ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে রোমানা। পরনে শুধুমাত্র ব্লাউজ,পেটিকোট। খোলা চুলে এক জিব বেরিয়ে দু’টো চোখ উল্টে আছে তার। এহেন দৃশ্য দেখে ভয়ে ‘ওমাগো’ বলে ধপ করে বসে বমি করে দিলো জেবা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here