গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক:Ninika Jaman Noor
পর্ব:১১
ছাদে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।ইতু,অনু আর অনুর কিছু ছোট ছোট কাজিন ছাদে দৌড়াদৌড়ি করছে।আবির ছাদের রেলিং এ ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে।মামার সাথে কথা বলার পাশাপাশি আড়চোখে ইতুকে দেখছে।সদ্য ঘুম থেকে ওঠা ইতুকে দেখে আবিরের বুক ধকধক করছে।এলোমেলো অবাধ্য চুলগুলো কোনোরকম হাত খোপা করে আটকে রাখার চেষ্টা করছে।
“তো আবির এইবার কি করবি বলে ঠিক করেছিস?পড়ালিখা তো শেষের পথে।”
মামার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আবিরের।
“বাবার বিজনেস জয়েন করবো।ওটা যদি আমি না দেখি তাহলে কে দেখবে বলো।এতো বছর এতো কষ্ট করে বিজনেসটা দাড় করিয়েছে এখন যদি আমি না দেখি পুরো কষ্টটাই মাটি।”
“গুড! ভালো ডিসিশন নিয়েছিস।তোর থেকে এটাই আশা করছিলাম।”কণা আফরোজের ডাকে সবাই ছাদ থেকে চলে যাচ্ছিলো।
ইতু দরজার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আবির সবার আডালে তাকে টেনে নিয়ে গেলো।ছাদের চিলে কোঠায়।কেউ ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও অনুর মামার চোখে পড়লো।ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিচে চলে গেলেন।
আবির ইতুর মুখে হাত দিয়ে দেয়াল এর সাথে চেপে ধরলো।
ইতু চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আবির এমন কিছু করবে তা ধারণার বাইরে ছিলো।
আবির গভীর দৃষ্টিতে ইতুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইতু আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে জমে গেলো।আবিরের চোখে নেশা দেখতে পারছে।
আবির ইতুর মুখের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,”কেনো বার বার পাগল করছিস আমায়?কেনো তোর নেশায় ফেলেছিস আমাকে?তোকে এইভাবে দেখে বুকের মাঝে তোলপাড় হয় বুঝিস সেটা?”
আবিরের কথা শুনে শরীরে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।বুকের মধ্যে কাঁপন ধরেছে।আবিরের এতো কাছাকাছি আসা ইতুর ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে।
আবির গাঢ় গলায় বললো,”আমাকে কি মাফ করা যায় না ভাবুকরাণী?ভুল তো সবাই করে।আমাকে একটা সুযোগ দে।”
এতোক্ষন ভালোলাগা কাজ করলেও এই কথাগুলো ইতুর পুরোনো ক্ষতকে তাজা করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।রাগ,অভিমান ভীড় করলো চোখে।ছলছল নয়নে আবিরের দিকে তাকিয়ে মোচড়ামোচড়ি করতে লাগলো।
ইতুকে নড়াচড়া করতে দেখে আবির হাত সরালো।
ইতু রেগে ফেটে পড়লো।
“আপনি পেয়েছেন কি আমাকে? খেলার পুতুল? আপনার যখন ভালোলাগবে কাছে রাখবেন তারপর আবার দূরে ঠেলে দিবেন।
একটা কথা ভালো করে শুনে রাখুন মি.আবির রায়হান, দুই বছর আগের ইতু আপনাকে হয়তো ভালোবাসতো। মন প্রাণ উঝাড় করে ভালোবাসতো।রাতে বিরাতে আপনার এক ডাকে ছুটে আসতো।আপনার জন্য সব করতে রাজি ছিলো।কিন্তু দুই বছর আগের কথা আপনার ভুলের কারণ সে ইতু মরে গেছে।
এই ইতুর মনে আপনার জন্য তিল পরিমাণ জায়গা নেই।তাই এইসব করে কোনো লাভ হবে না।আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।আপনার আশেপাশে থাকাও আমার কাছে বিষ মনে হয়।যখন আমাকে বুঝা উচিত ছিলো তখন আমার ভালোবাসাকে আপনি দাম দেন নি।যখন তখন বাঝে ব্যবহার করেছেন।এখন এসেছেন এইসব বলতে? সে ইতুর আত্মসম্মান বোধ না থাকলেও আমার আছে।আর কখনো এইসব কথা বলতে আমার কাছে আসবেন না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
আবির দুই সাইডে হাত রেখে বাঁকা হেসে বললো,”এই আবিরকে হুমকি দিচ্ছিস?তুই কি ভেবেছিস আমাকে দূরে থাকতে বললেই আমি দূরে থাকবো?আবির কখনো কারো কথা শুনে চলে না।”
আবির ইতুর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ইতু থম ধরে দাড়িয়ে আছে।আবির এটা কি করলো? আর কি বলে গেলো এইসব।
ইতু কপালে চুমুর জায়গাটা স্পর্শ করলো হাত দিয়ে।অজানা অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠলো ইতুর।
______________________
ওই ঘটনার ইতু আবিরকে আর একবারের জন্য ও দেখেনি।আবিরকে না দেখতে পেরে মনটা খচখচ করছিলো ঠিক কিন্তু মুখে প্রকাশ করছিলো না।
সন্ধ্যায় সবাই রেডি হতে লাগলো।অনুর সাথে অহনা,রুপু,ইশা আর তার ফুফু গেলো।
অর্পিতা আর ইতু বাসায় সাজবে। ইতু একটা লেহেঙ্গা বের করলো।আজ বিয়েতে এটা পড়বে বলে ঠিক করেছে।
অর্পিতাও মেচিং করে লেহেঙ্গা পড়বে।
ইতু ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।কণা আফরোজ এসে অর্পিতাকে ডেকে নিয়ে গেলো তাদের খোপা করে দিতে।
ইতু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো আবির বেডে বসে পা নাচাচ্ছে। আবিরকে এইসময় এখানে দেখে ইতু চমকে উঠলো।ভিতু চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা লক করা।
ইতু ভয় পেয়ে বললো,”তু…মি এ…খানে কি করছো আবির ভাই?”
আবির মুচকি হেসে বললো,”তোর জন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি।”
ইতু রেগে বললো,”আমার কিছুই লাগবে না।তোমার থেকে কিছু নিবোই না।তুমি কোন সাহসে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েছো?বের হও এখনই।”
আবির ইতুকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
“এতো কথা শিখেছিস কবে?আর এতো রাগ দেখাচ্ছিস কার সাথে?যা বলবো চুপচাপ করবি।বেশী কথা বা তেডিংবেডিং করলে তোর এই লেহেঙ্গাটায় আগুন লাগিয়ে দিবো।অনেক শখ করে মামনির সাথে ঝগড়া করে কিনিছিলি তাই না?”
ইতু আত্কে উঠে বললো,”না।তুমি এমন কেনো করছো?ছাড় আমাকে।তুমি এমন কিছুই করবে না।”
“তুই আমাকে ভালো করেই চিনিস।আমি যেটা বলি সেটাই করি।”
“আবির ভাই ভালো হচ্ছে না কিন্তু।ছাড়ো আমাকে।”
“ছেড়ে দিবো এক শর্তে।আমি তোর জন্য একটা ড্রেস এনেছি এটা আজকে তোকে পড়তে হবে।”
ইতু অবাক হয়ে বললো,”মানে কি? আমি পড়বো না।”
আবির আরো চেপে ধরে বললো,”শিউর?এরপর যা হবে তার জন্য আমি দায়ি থাকবো না।”
ইতু ভয় পেয়ে বললো,”ঠিক আছে আমি পড়বো।”
আবির বাঁকা হেসে ইতুকে ছেড়ে দিলো।একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো।ইতু ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মারলো।রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে।আবিরের এইসব একদমই পছন্দ হচ্ছে না ইতুর।অর্পিতা এসে বললো,”কি করে এখনো রেডি হলি না যে?কয়টা বাজে তার খেয়াল আছে?”
ইতুর হাতে লেহেঙ্গাটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,”যা চেন্জ করে আয়।”
ইতু মিনমিন করে বললো,”আমি এটা পড়বো না।”
অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,”কেনো? আমরা না সবাই মেচিং করে লেহেঙ্গা পড়ার কথা?ইতু তুই যদি এখন মাইন্ড চেন্জ করেছি তাহলে সবাই তোর খবর নিয়ে ছাড়বে।”
ইতু ক্ষেপে উঠে বললো,”সবাই আমাকে কি পেয়েছে বলতো?আবির ভাই এসে বললো তার দেয়া ড্রেস পড়তে না পড়লে এই লেহেঙ্গাটা পুড়িয়ে ফেলবে।এখন তুই বলছিস এইসব।ভাল্লাগেনা,আমি যাবোই না।”
অর্পিতা ভ্রু কুঁচকে বললো,”আবির ভাই কোথায় থেকে আসলো?কাহিনি কি?ঝেড়ে কাশ।”
ইতু আমতা আমতা করতে লাগলো।অর্পিতা চেপে ধরাতে সব কিছু খুলে বললো।
মুখ হাত দিয়ে বসে পড়লো অর্পিতা।
“কি বলছিস এইসব?তারমানে আবির ভাই ভালোবাসে তোকে?”
“যানি না।মুখ ফুটে বলেনি।কিন্তু তার কথায় আর কাজে এটাই মনে হচ্ছে।”
“কি করবি এখন?আবির ভাই যদি প্রপোজ করে রাজি হয়ে যাবি?”
ইতু রেগে বললো,”কখনো না।আমাকে যে অপমানটা করেছে সেটা আমি ভুলতে পারবো না।সব থেকে বড় কথা তার জন্য আমার মনে কোনো জায়গা নেই।”
অর্পিতা উঠে এসে ইতুর সামনে দাড়িয়ে বললো,”সত্যি কি তাই? কিন্তু তোর চোখ যে অন্য কথা বলছে।”
ইতু চোখ নামিয়ে বললো,”আমার চোখ কিছুই বলছে না।বাদ দে এইসব কথা।”
অর্পিতা হেসে বেডে পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে একটা গাউন বের করলো। অপহোয়াই কালারের মধ্যে গোলন্ডেন কালারের জরির কাজ করা।জামা দেখেই অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,”কি সুন্দর ড্রেসটা।সবার মাঝে এই রং টাই ফুটে উঠবে।তার থেকে বড় কথা এই রং এর ড্রেসে তোকে কতো সুন্দর লাগবে যানিস?আবির ভাই তোর জন্য আসলেই বেস্ট একটা ড্রেস এনেছে। তুই এটাই পড়।”
ইতু মুখ ফুলিয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ড্রেস পড়ে বের হতেই অর্পিতা চোখ কপালে তুলে বললো,”তোকে কি সুন্দর লাগছে ইতু! সাজলে না জানি আজ আবির ভাই হার্টফেল করে বসে।”
চলবে।গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: ১২
অনুর বিয়েটা হচ্ছে বাড়ির কাছেই একটা ক্লাবে।
বর অনুর বাবার বন্ধুর ছেলে কুয়াশা আহমেদ।মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে ভালো পদে চাকরি করে।ছেলে দেখতেও সুদর্শন।
অনু দেখতে এসে ওদের আলাদা কথা বলতে ছাদে পাঠিয়ে দিলো।
দুজনেই প্রথম চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো।
নিরবতা ভেঙ্গে অনু বললো,”আপনার নাম কুয়াশা কেনো।”
কুয়াশা মুচকি হেসে বললো,”হাড় কাঁপানো শীতের সকালে আমার জন্ম হয়।চারদিকে তখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা।দাদি তাই শখ করে নাম রেখেছে কুয়াশা।”
অনু “ওও” বলে চুপ হয়ে গেলো।
“আমার নাম কুয়াশা হলেও কোনো এক অদ্ভুদ কারণে শীতকালে আমার ঠান্ডা লাগে না। হাড় কাপানো শীতেও আমি একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারি।মাঝে মাঝে এসিও অন করে দি।”
অনু ভ্রু কুঁচকে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো,”জ্বীনে ধরেছে নাকি?”
শীত না লাগার সাথে জ্বীনে ধরার মধ্যে কি সম্পর্ক কুয়াশা না বুঝলেও অনুর কথার ধরণে শরীর কাঁপিয়ে হাসলো।
কুয়াশার সে হাসি দেখেই অনুর বুক ধক করে উঠে।
কুয়াশা হাসি থামিয়ে দিলে অনু নিজের অজান্তেই বলে উঠলো,”আরেকবার আপনার হাসিটা দেখতে চাই।”
অনুর কথা শুনে কুয়াশা মুচকি হেসে অনুর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,”আমার হাসি কারণ হয়ে যাও।”
“এইভাবে তো এই হাসি দেখতে পারবেন না মেম।একান্ত আমার হয়ে তারপর দেখতে হবে।”
কুয়াশার কথায় অনু লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো।
অনুর চিবুকে হাত দিয়ে কুয়াশা মুখটা উঁচু করে ধরলো।
কুয়াশার গভীর চোখ দেখে অনু চোখ বুঝলো।
“এই কুয়াশা আহমেদকে বিয়ে করতে রাজি আছো?”
কুয়াশার প্রত্যেকটা কথার সাথে নিঃশ্বাস এসে অনুর চোখে মুখে বারি খাচ্ছে।
অনু কাঁপা কাঁপা গলায় নিচু স্বরে বললো,”রাজি।”
কুয়াশা মুচকি হেসে টুপ করে অনু ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে নিচে চলে গেলো।
অনু চোখ বড় বড় কুয়াশার যাওয়ার পাণে চেয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।বুকের মাঝে জোরেজোর হাতুড়ি পেটাচ্ছে কেউ এমন মনে হচ্ছে।শিহরণে শরীরে শীতল স্রো বয়ে গেলো। কাঁপা হাতে ঠোঁটে ছুঁতেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করলো। কুয়াশকে দেখে যথেষ্ট ভদ্র লেগেছে তার।ফরমাল ড্রেসআপে তাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলো।বড়দের সাথে ডিসন্টলি কথা বলছিলো।কিন্তু তার সাথে যে এমন একটা কান্ড করে বসবে ভাবতেই পারেনি অনু।
বিদায়ের বেলায় কুয়াশা সবার আড়ালে চোখ টিপে মেরে ফ্লায়িং দিলো।অনুর মনে হয়েছিলো চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে।ছেলে উপরে উপরে ভাজা মাছ উল্টে খেতে না পারলেও ভিতরে ভিতরে পুরো গোটা মাছ গিলে খেতে পারে তা অনু সেদিন বুঝে গেছে।সেদিনই বিয়ের কথা পাকা হয়ে যায়।কুয়াশা তার ভাবিকে দিয়ে কৌশলে অনুর নাম্বারটা নিয়ে নেয়।কিন্তু তাকে আর কল দেয়নি। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার একটা ছোট মেসেজ পাঠিয়ে দেয়।
“অপেক্ষায় আছি সরলতা।”
_____________
আবির বার বার গেটের দিকে দেখছে।ইতু এখনো কেনো এলো না বুঝতে পারছেনা।ইতুর জন্য যে ড্রেসটা পছন্দ করেছে সেটা পরে তার ভাবুকরানীকে কেমন দেখাবে তা ভেবেই মনটা ছটপট করছে।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইতু গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।আবির স্থির চোখে ইতুর দিকে তাকিয়ে রইলো।বুকের মাঝে চিনচিন করছে আবিরের।
ইতু মুচকি হেসে আবিরের পাশ দিয়ে অনুর কাছে চলে গেলো।
ইতুকে দেখে অনু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
“দোস্ত বাঁচা আমাকে।শাকচুন্নিগুলা আমাকে একা রেখে ছবি তুলতে চলে গেছে।ক্যামরাম্যানেরা তো জ্বালিয়ে মারছে।এতো পোজ তো আমি আমার অর্ধেক জীবনেও দি নি।বিয়েতে যে কনেদের এতো প্যারা খেতে হয় যানলে শালা জীবনে বিয়েই করতাম।”
ইতু সিরিয়াস মুখ করে বললো,”এখন কি করবি?পালাবি এখান থেকে?এমন কোনো ইচ্ছা থাকলে আমাকে বলতে পারিস সবরকম সাহায্য করতে রাজি।”
অনু অসহায় মুখ করে বললো,”মজা নিচ্ছিস?”
“মজা কেনো করবো?তোর যখন এতো কষ্ট হচ্ছে চল যাই।”
“কুয়াশা প্রথম তোকে গুলি করবে তারপর আমাকে।”
ইতু ফিক করে হেসে দিলো।
স্টেজে বসেই ক্যামরাম্যানদের বললো,”এইবার একটু রেস্ট করুন।কনের পিক আর তুলতে হবে না।আপনার গেস্টদের ছবি তুলুন।কিছু ক্যান্ডিট ছবি চাই।বিয়ে বাড়িতে সুন্দর মোমেন্টের অভাব নেই।সে প্রত্যেকটা মোমেন্টের ছবি চাই।”
ইতুর কথা শুনে তারা চলে গেলো ক্যান্ডিট পিক তুলতে।
কিছুক্ষন পরেই বর এলো বর এলো বলে হইচই লেগে গেলো।
ইতু আর তার দল দাড়িয়ে গেলো গেটে মালা নিয়ে।আবির ও এসে দাড়ালো ইতু ঠিক পিছনে।বরপক্ষের সাথে একঝাঁক ছেলে এসেছে।ওদের দেখেই আবিরের চোখ সরু হয়ে গেলো।কয়েকজন ছেলে ইতুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ওদের নজর দেখেই আবির চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
ইতুরা অনেক তর্ক বির্তক করে বর থেকে বিশ হাজার টাকা খশিয়ে নিলো।
হই হুল্লোড় করে বরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।আর প্রতিটা সময় আবির ইতুকে পিছন থেকে প্রোটেকশন দিচ্ছিলো।পুরো বিয়েতে আবির এক মুহুর্তের জন্যও তাকে কাছ ছাড়া করেনি।ইতু বিরক্ত হয়ে কয়েকবার কথা শুনালো আবির পাত্তা না দিয়ে তার পিছন পিছন ঘুরেছে।এটাই যেনো তার একমাত্র কাজ।
ব্যাপারটা অনেকেই চোখে বিঁধেছে।আবিরের ফুপু কণা আফরোজে এই ব্যাপারে কথা শুনাতে গেলে মেয়ের বিয়ে ব্যস্ত আছি বলে সরে গেলো।
ইশা অনেকবার আবিরের সাথে কথা বলতে চাইছিলো কিন্তু আবিরের পুরো ধ্যান ইতুর উপর দেখে রাগ করে বিয়ে থেকেই চলে গেলো।
বিদায়েবেলায় অনুকে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে দেখে ইতু বললো,”যাচ্ছিস তো হোটেলে।একসপ্তাহ পর এমনিতেই চলে আসবি।শ্বশুড়বাড়ি যাবি আরো তিনমাস পর এখন কেনো এতো কাঁদছিস।”
ইতুর ঝাঁঝালো কথাশুনে অনু নড়চড়ে বললো,”না কাঁদলে সবাই কি ভাববে তাই অনেক কষ্টে চোখে পানি এনেছিলাম।না হলে বেহায়া মনে করবে না?”
অনুর কথা শুনে হাসির রোল পড়লো।অনুর শ্বশুড়বাড়ি নতুন করে করা হচ্ছে।কুয়াশারা আপাতত থাকে একটা ভাড়া বাসায়।
অনুর শ্বাশুড়ি কোনোমতেই নতুন বউ ভাড়া বাসায় তুলবেন না।তাই তিনমাস অনুকে তার বাবার বাসায় রাখবে।
বিয়ে শেষে সবাই বাসায় ফিরলো।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অনুকে ভিষণ মিস করতে লাগলো ইতু।অর্পিতা,রুপু আর অহনা এসে ইতুর পাশে শুয়ে পড়লো।তাদের ও একি অবস্থা।
অর্পিতা মুখ কুঁচকে বললো,”এই মেয়েটা অল্প কয়েকদিনের জন্য দূরে গেলো অথচ দেখ কেমন শূণ্য শূণ্য লাগছে।”
রুপু উঠে বসে বললো,”ধ্যাত ভাল্লাগছেনা।”
হঠাত্ পাশ থেকে অনুর গলা শুনে সবাই লাফিয়ে উঠলো।
অহনা ভিডিও কলে অনুকে রেখেছে।
“তোরা আমাকে এতোটা মিস করবি যানলে তোদের ও প্যাকেট করে নিয়ে আসতাম।”
রুপু সেন্টি খেয়ে বললো,”দোস্ত চলে আয়।তোর আর বাসর করা লাগবে না।তোর জায়গায় অহনাকে প্রক্সি করতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওর এমনিতেও বাসর করার খুব শখ।”
অহনা পা দিয়ে জোরে একটা লাথি দিলো।
রুপু,ইতু আর অর্পিতা শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো।
অনুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে থুতনি রাখলো কুয়াশা।
“মাননীয় শালীরা,আমার বউটাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে নাকি?”
অর্পিতা নাক উঁচু করে বললো,”ক্ষমা করবেন জাহাপনা।আপনার বউকে আপনার থেকে দূরে নিয়ে যাবো এতো বড় র্স্পধা আমাদের হয় নি। আমরা আমাদের প্রাণ প্রিয় সখীকে আমার কাছে নিয়ে আসার কথা বলছিলাম।তাকে ছাড়া আমাদের আসর ঠিক জমে উঠছে না।”
“ঠিক সাতদিন পর আপনাদের সখী আপনাদের কাছে হাজির হয়ে যাবে।ততদিন এই অসহায়কে একটু বউ এর আদর সোহাগ পেতে দিন।”
কুয়াশার এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে অনু ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে।
বাকিরা একসাথে অহহহহ বলে চেচিয়ে উঠলো।
অনু কলটা তাড়াতাড়ি কেটে দিলো।
কুয়াশা অনুকে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
মেয়েটাকে লজ্জা পেতে দেখলে কেনো যেনো বুকটা শিরশির করে উঠে।
আবির ঠোঁট দিয়ে সিগারেট চেপে ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে।এইভাবে অভিমান অভিমান খেলা খেলতে তার ভালোলাগছে না।ইতুর থেকে দূরে থাকাও দায়।
কুহুর জন্য এমন ছটপট সে কখনো করেনি।এমন অনুভূতি তার কাছে নতুন।নিজের মাঝে এমন নতুন অনুভূতি দেখে একদমই অবাক হয়নি আবির।এমন আরো নতুন অনুভুতি ইতুর জন্য ফিল করেছে।ইতুদের ছাদের দিকে তাকিয়ে আবির একটা কঠিন সিধান্ত নিলো।
সিগারেটা পায়ে তলায় পিষে ফেলে নিচে চলে গেলো।
ইতুর বাবা মা, আবিরের বাবা মা আর আবিরের ফুফু ডাইনিং এ বসে কথা বলছে।রাত তখন দুটো বাজে।বেশীর ভাগ মানুষই ঘুমোতে চলে গেছে।
আবির তাদের সামনে এসে দাড়ালো।
কণা আফরোজ ছেলেকে দেখে বললেন,”কিরে তুই এখনো ঘুমাসনি?সারাদিন কতো ধকল গেলো।যা ঘুমিয়ে পড়।””মা, আমি ইতুকে বিয়ে করবো।”
উপস্থিত সবার মাঝে মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।আবিরের ফুফুর চোখ কপালে উঠলো।তিনি হায় হায় করে উঠে বললো,”কি বলছো আবির বাবা?তোমার কি বিয়ের বয়স হইছে?আর তাছাড়া ইতুকেই কেনো?”
আবির তার কথা কানে না তুলে ইতুর বাবা মার দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি ইতুকে বিয়ে করলে তোমাদের কোনো আপত্তি আছে।”
ইতুর বাবা হেসে বললো,”আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
আবির এইবার তার বাবা মার দিকে তাকালো।
আবিরের বাবা বললেন,”আমাদের ও বিয়েতে অমত নেই।ইতুকে আমাদের আগে থেকেই পছন্দ।ওকে ঘরের বউ বানাবো বলে আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছি।”আবির একটা সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।এইদিক থেকে তাহলে কোনো বাধা নেই।
কিন্তু যে বড়সড় একটা ঝামেলা করবে তা নিশ্চিত।
আবিরের ফুফু বলে উঠলেন,”ছেলের সাথে সাথে তোরাও পাগল হয়ে গেছিস?কণা তুই তোর ছেলেকে বুঝাচ্ছিস না কেনো?”
“আপা,আমার ছেলে তাকেই বিয়ে করবে যাকে তার পছন্দ।এখানে ওকে বুঝানোর কি আছে?আর আবির তো আমাদের পছন্দের মেয়কেই বিয়ে করতে চাইছে।”
আবিরের ফুফু কথা খুঁজে পেলেন না।উঠে হনহন করে তার রুমে চলে গেলেন।
আবির বসে ইতুর ব্যাপারটা তাদের খুলে বললো।ইতুর বাবাকে অনুরোধ করলো ইতুকে বিয়েতে রাজি করাতে।তিনি আশ্বস্ত করলেন আবিরকে।
আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো।এখন শুধু বিয়ের কথাটা ইতুর কাছে পৌঁছানোর অপেক্ষা।
আবির বাঁকা হেসে আপন মনেই বললো,”তুই রাজি থাক আর না থাক তোকে আমার বউ হয়েই আসতে হবে।তারপর তোর যতো অভিমান অভিমান খেলার ইচ্ছে হবে খেলিস।তখন তোর সকল অভিমান আমি যত্ন করে ভাঙ্গাবো।তোকে হারিয়ে ফেলার ভুল আমি করতে পারবো না।”
চলবে।