বাসন্তী প্রেম পর্ব ১০

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান
#দশম_পর্ব

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে বাইরে বের হতেই কড়া রোদের একাংশ মুখের উপর আছড়ে পড়লো সিরাতের। মুখের মধ্যে তীব্র তাপ অনুভব হতেই হাত দিয়ে তা প্রশমিত করার বৃথা চেষ্টা চালায় সে। বিন্দু বিন্দু ঘামে জর্জরিত চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে।
সকাল সকাল ডক্টর রূপের কথা অনুযায়ী বাদবাকি সব রিপোর্ট নিয়ে চন্দ্রিকার সাথে হসপিটালে চলে যায় সিরাত‌। মেডিকেল রিপোর্ট গুলো পুনরায় চেকআপ সহ সিরাতের চোখের অপারেশনের চান্সবিলিটি পরীক্ষা করার জন্যই মূলত হসপিটালে যাওয়া সিরাতের। তিন চারটে টেস্ট করার পর ডক্টর রূপের সাথে দেখা করে হসপিটালের বাইরে বেরিয়ে আসে সে।
– ” এক মিনিট সিরাত! ”
চন্দ্রিকার কথা শুনে থমকে দাঁড়ায় সিরাত। পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
– ” কি হয়েছে চন্দ্রিকা আপু?”
– ” আমার ফোনটা বোধহয় ডক্টর রূপের কেবিনেই ফেলে এসেছি। ব্যাগের মধ্যে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আচ্ছা তুই ঠিক এখানটায় ই দাঁড়িয়ে থাক, আমি বরং দ্রুত গিয়ে ডক্টর রূপের কেবিন থেকে আমার ফোনটা নিয়ে আসছি!”
বলেই উল্টো পথে আবারো হসপিটালের ভেতরের দিকে পা বাড়ালো চন্দ্রিকা। আর সিরাত ও সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।

– ” মে আই কাম ইন, ডক্টর রূপ?”
চন্দ্রিকার গলার কন্ঠস্বর শুনতেই ফাইল থেকে চোখ তুলে তাকালো রূপ। সদর দরজার সামনে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির হয়েছে চন্দ্রিকা। পার্পেল সিল্কের শাড়ির আঁচলের এক কোণ হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে রূপের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে সে। এদিকে রূপের কোনো হেলদোল না দেখে পুনরায় দরজায় কড়া নেড়ে বলে উঠলো,

– ” মে আই কাম ইন ডক্টর রূপ!!”
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে রূপ। তড়িঘড়ি করে বলে উঠে,
– ” ইয়েস মিস চন্দ্রিকা। ভেতরে আসুন। আর তোমাকে কতবার বলেছি এক কথা যে আমার কেবিনে প্রবেশ করার জন্য তোমার অনুমতি চাইতে হবে না।
তারপরও একই কাজ কেন করো বলো তো!”

– ” ইটস ইউর অফিশিয়াল কেবিন ডক্টর রূপ! এটা কোনো ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডাখানা নয় যে নিয়ম কানুন না মেনেই চলা যাবে। এখানে বাকি মানুষ ও যেমন নিয়ম মেনে আপনার কেবিনে প্রবেশ করে আমিও ঠিক তার ব্যতিক্রম হবো না।”
কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে চন্দ্রিকা।
– ” তুমি আজও আগের মতোই রয়ে গেলে মিস চন্দ্রিকা। একটুখানিও তফাৎ নেই।”
ঠোঁট গুলো কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে বিড়বিড় করে বললো রূপ।
– ” আ’ম সরি একচুয়ালি আমার ফোনটা কেবিনে ভুলবশত রেখে গিয়েছিলাম। সেটার জন্যই আবার ব্যাক করতে হলো। আশা করি আপনার বেশি একটা কাজে ডিস্টার্ব করি নি।”
মুখে যথেষ্ট হাসি বজায় রেখে রূপকে উদ্দেশ্য করে বললো চন্দ্রিকা।

– ” মিস সিরাত?”
পেছন থেকে ফাইয়াজের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে হালকা চমকে উঠে সিরাত। ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায় সে।
– ” মিস সিরাত, আপনি এখানে হসপিটালে কি করছেন?”
পেছনে ফিরতেই পুনরায় জিজ্ঞেস করে উঠে ফাইয়াজ।
– ” এইতো হসপিটালে একটু চেকআপের‌ জন্য এসেছিলাম। আর কয়েকটা টেষ্ট করাও প্রয়োজন ছিল, তাই হসপিটালে আসা!
কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন‌ রকস্টার সাহেব?”
নিজের নামের বদলে রকস্টার সাহেব ডাক শুনে খানিকটা হাসলো ফাইয়াজ।
– ” আমি এসেছিলাম কোনো একটা কাজে। তবে একটা কথা বলুন তো মিস সিরাত, আজকাল আমাদের দেখাটা বারবার হয়ে যাচ্ছে কেন জানি, তাইনা?”
ফাইয়াজের প্রশ্নে স্বল্প সময়ের জন্য বিব্রত হয় সিরাত। তবুও মুখের কোণে যথেষ্ট হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করে বলে উঠে,
– ” হ্যাঁ, তবে সেটা বোধহয় ইচ্ছাকৃত নয়। কেননা আপনি আর আমি দুজনেই এক শহরেই অনেকটা কাছাকাছি থাকি। যার ফলস্বরূপ না চাইলেও হুটহাট আপনার সাথে দেখা হয়ে যায়।”
– ” হুম মন্দ বলেন নি। তবে এভাবে তীব্র রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো বিশেষ কারণ?”
– ” না তেমন বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে চন্দ্রিকা আপু তার ফোন রূপ ভাইয়ার কেবিনে ফেলে এসেছে তাই দাঁড়িয়ে,,,”
পুরো বাক্য পূর্ণ করার পূর্বেই পেছন থেকে চন্দ্রিকার গলার আওয়াজ কানে ভেসে আসে।
– ” সিরাত?”
কয়েক পা সামনে এগোতেই ফাইয়াজকে চোখে পড়ে চন্দ্রিকার।
– ” আরে মিস্টার মুগ্ধ? আপনি এখানে?”
– ” হ্যাঁ আসলে আমিও এদিকটায় একটা কাজে এসেছিলাম। রাস্তায় মিস সিরাতের সাথে দেখা হয়ে গেল।”

ইচ্ছে করেই মিথ্যে কথাটা বললো ফাইয়াজ। মিনিট পাঁচেক আলাপচারিতার মধ্য দিয়েই সময় কেটে যায়। পরমুহূর্তে চন্দ্রিকা আর সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
– ” আচ্ছা, চলুন আপনাদের দুজনকে বাসায় ড্রপ করে দেই। দুপুর হয়ে যাচ্ছে এমনিতেই।”

– ” না না আপনার কষ্ট করতে হবে না আমরা ক্যাবে করে চলে যেতে পারবো।”

– ” আরে কোনো সমস্যা নেই। আমিও ওদিকটায় একটা ডিল সাইন করতে যাবো। তো চলুন আপনাদের ড্রপ করে চলে যাবো!”
ফাইয়াজের রিকোয়েস্টে আর না পেরে একপ্রকার বাধ্য হয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে সিরাত আর চন্দ্রিকা। আর ড্রাইভিং সিটে গিয়ে ফাইয়াজ গাড়ি স্টার্ট‌ করার সাথে সাথেই গাড়ি চলা শুরু করে তার আপন গতিতে।

————————–
– ” এবার রিয়া বিডিতে ব্যাক করলে মুগ্ধের সাথে এনগেজমেন্টটা করিয়েই ফেলি, কি বলো সাবিনা?”
টেবিলের উপর হাতে থাকা ফোনটা রাখতে রাখতে বলে উঠলেন জাফর সাহেব।
পাশেই চেয়ারে বসে মুখের মধ্যে আপেলের এক টুকরো পুড়েছিল সবেমাত্র ফারিহা। বাবার কথা শুনতেই মুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল তার।
– ” কিন্তু এনগেজমেন্ট করানোর আগে একবার ফাইয়াজ এবং রিয়ার মতামত জানা জরুরী নয় কি?”
চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন সাবিনা বেগম।

– ” আমি রিয়াজ ভাইয়ের ( রিয়ার বাবা) সাথে কথা বলেছি। কথা বলে যা মনে হলো রিয়া রাজী আর রইলো বাদবাকি মুগ্ধের কথা। মুগ্ধ আর রিয়া একবার চট্টগ্রাম থেকে ব্যাক করুক তারপর না হয় ওর কাছ থেকে শোনা যাবে। আর আমি বিশ্বাস করি মুগ্ধ এনগেজমন্টের জন্য রাজী হয়ে যাবে।”

– ” আমি জানি ভাইয়া রাজী হবে না এই এনগেজমেন্টে‌।”
নিচের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো ফারিহা। আর ফারিহার কথা শুনে জাফর সাহেব আর সাবিনা বেগম দুজনেই কপাল কুঁচকে ফেললেন।

– ” কেন? তোমার এমন কেন মনে হলো যে মুগ্ধ এই এনগেজমেন্টটা নাকোচ করে দিবে, ফারিহা?”
সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জাফর সাহেব।
– ” কেন আবার? রিয়া আপুর ভাইয়াকে নিয়ে ওভার পসিজিবনেস আর ড্রামা আমার কিংবা ভাইয়ার কারো রি পছন্দ না। আর সেখানে ভাইয়ুর সাথে রিয়া আপুর বিয়ে! ইম্পসিবল। ভাইয়া এটা কখনোই একসেপ্ট করবে না, আই ড্যাম শিওর।”
কথা না ঘুরিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলে দিল ফারিহা। আর সেটা কর্ণপাত হতেই জাফর সাহেব সহ সাবিনা বেগম ও হতভম্ব।

– ” ফারিহা!! এসব কি ধরনের ম্যানারস্? রিয়া তোমার চেয়ে বড়। এভাবে রিয়ার ব্যাপারে বলাটা মোটেও ঠিক হয় নি, ফারিহা। নেক্সট টাইম থেকে যেন আবারো এটা রিপিট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখো।”
জাফর সাহেবের কঠোর কথায় মুখ ফুলিয়ে নিল ফারিহা। মুখে থাকা আপেলের টুকরো টুকু খাওয়া শেষ করেই চেয়ার থেকে উঠে গটগট করে বাইরের দিকে হাঁটা দিল সে। মিসেস সাবিনা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। রিয়াকে নিয়ে বাবা মেয়ের এমন দ্বন্দ্ব তাকে বেশ চিন্তিত করে তুলছে।

শো এর জন্য একটা কন্ট্রাক্ট সাইন করতেই আজীজুর সাহেব পাশ থেকে ফাইয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– ” স্যার ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আপনার কাছে একটা আবদার আছে।”
মাঝবয়সী ভদ্রলোকের কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো ফাইয়াজ। মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে বলে উঠল,
– ” জি অবশ্যই আঙ্কেল। বলুন কি বলবেন।”
ফাইয়াজের অনুমতি পেয়ে আজীজুর সাহেব তার বক্তব্য তুলে ধরতেই ফাইয়াজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।………..

#চলবে 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here